মেহেরজান পর্ব ২৫
লেখনীতে- সোহা
সিলেটকে কেন প্রকৃতির কন্যা বলা হয় এটা হয়তো রাউশি আজই বেশি বুঝতে পারলো। ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেছে রাউশি আজ।শীত শীত একটা ভাব এসে গেছে প্রকৃতিতে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূর দূরান্ত মুগ্ধ চোখে দেখছে রাউশি।বহুদূরে পিপীলিকার মতো পাহাড় দেখা যাচ্ছে।সারি সারি ক্ষেত আর হালকা কুয়াশাতে দেখতে যে কতটা ভালো লাগছে রাউশি এখন মুখে বলেও বর্ণনা করতে পারবে না।প্রকৃতির এই রূপ খুব কমই দেখেছে রাউশি।আজ খুব ভোরে উঠেছে মন খারাপ বিধায়।সারারাতও যে খুব একটা ঘুম হয়েছে তা নয়।বরং সারারাত কেটেছে তার এপাশ ওপাশ করতে করতে।
তাই ভোর ছয়টায় অনায়াসে উঠতে পেরেছে। ভেবেছে একবার মেহরানের রুমে গিয়ে মানুষটাকে দেখে আসবে।কিন্তু এসব এখন সমীচীন হবে না ভেবে নিজেকে সংযত রেখেছে।তবে আজ রাতে রাউশি বেশ ভয় পেয়েছে।মেহরান গভীর রাতে একবার এসেছিলো দরজা লক করতে বলতে। রাউশি মেহরানের কথা মতো তার রুমের দরজা লক করে ঘুমিয়ে পড়ে।তার রুমের সামনের খালি জায়গাটায় লাইট লাগানো। যা সারারাত জ্বলে।রাউশি এপাশ ওপাশ করার সময় বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করেছে তার রুমের সামনে কেউ হয়তো দাঁড়িয়ে আছে।ছায়াটা একদম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাউশি মেহরানকেই সন্দেহ করে।ভেবেছে ঘুম থেকে উঠলে জিজ্ঞাসা করবে আজ।এটা নিয়েও সারারাত ঘুম হয় নি।তাই এতো ভোরে উঠে বারান্দায় পাতানো বেতের চেয়ারে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছে।এতো স্নিগ্ধ সচ্ছ প্রকৃতি দেখেও মনটা তার ভীষণ খারাপ।মন চাইছে মেহরানকে গিয়ে বলতে ‘আমিও যাব আপনার সাথে।’ কিন্তু এটা ঠিক কতটা শোভনীয় হবে এটাই বড় কথা।রাউশি উঠে দাড়ালো।আজ হুট করে বাম চোখটা যেন লাফাচ্ছে তার।বড়দের থেকে শোনা বাম চোখ বেশি লাফালে নাকি আবার খারাপ কিছু হয়।রাউশি এসব কুসংস্কারে খুব একটা বিশ্বাসী না হলেও তার মনটা অনেক খচখচ করছে আজ।
রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো কেউ নেই।তবে নিচে থেকে কথার আওয়াজ আসছে। হয়তোবা বাড়ির গিন্নিরা জেগেছে আর সকালের নাশতার ব্যবস্থা করছে।রাউশি পা টিপে টিপে মেহরানের রুমের সামনে গেলো। মেহরানের রুমের দরজা খোলা আছে। রাউশি উঁকি মারলো।কিন্তু রুমে কাউকে দেখতে পেলো না।রাউশি কিছুক্ষণ এদিক ওদিক উঁকি মেরে চলে যাবে সেই সময় পেছন থেকে ডাক এলো।
“রাউশি দাঁড়া!”
রাউশিও দাঁড়িয়ে গেলো।পেছনে ফিরে তাকিয়ে মেহরানকে দেখতে পেলো রাউশির দিকে তাকিয়ে আছে।রাউশি হাসার চেষ্টা করলো।
“ভেতরে আয়।”
রাউশি পুনরায় পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলো।মেহরান রাউশিকে এভাবে হাঁটতে দেখে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছে তোর?চোরের মতো হাঁটছিস কেন?”
রাউশি সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।প্রত্যুত্তর করলো না।মেহরানও আর কিছুই বললো না।মেহরান বারান্দার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রাউশিকে বসতেও বললো না।সারারাত ঘুমায় নি সে নিজেও।বারান্দায় বসে সিগারেট খেয়ে খেয়ে রাত কাঁটিয়েছে।শেষ রাতের দিকে একবার বেরিয়েছিলো রুম থেকে।তখনই চোখে পড়ে এক ছায়া।যা হুট করে চলে গেছে অন্যত্র।তবে মানুষটা যে রাউশির রুমের সামনে ছিলো সেটা বুঝেছে মেহরান।কিন্তু মানুষটা কে এটা জানতে পারে নি।রাউশিকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত মেহরান।ভাবছে মেয়েটাকে সাথে নিয়ে যাবে? নাকি এখানে রেখে যাবে? সাথে নিয়ে গেলে অবিবাহিত দুজন এক বাড়িতে থাকবে এটা ভীষণ খারাপ দেখায়।আবার এই বাড়িতে রাউশিকে রেখে যেতেও মন মানছে না।এদিকে হুটহাট করে বিয়ে করে নিলেও বাবা মনক্ষুণ্ণ হবে।সব দিক থেকেই বিপদ।
“আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?”
রাউশির কথা শুনে সৎবিৎ ফিরে পেলো মেহরান।এতটাই চিন্তায় মগ্ন ছিলো মেয়েটা যে তার রুমে এসেছে এটাও ভুলে বসেছে।
“এদিকে আয় তো রাউশি।”
রাউশি মেহরানের কথা মতো এগোলো। মেহরান রাউশির দিকে ঘুরলো।রাউশি মেহরানের মুখোমুখি দাঁড়াতেই মেহরান রাউশির দিকে ঝুঁকে রাউশির কোমল দুগালে দুহাত রেখে নরম স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
“আজ আমার সাথে ঢাকা যাবি?”
রাউশি এমন প্রশ্নের সাথে মুখোমুখি হবে ভাবতে পারে নি।যাওয়ার ইচ্ছে তারও রয়েছে।কিন্তু সেটা যে মোটেও শোভনীয় নয় এটা নিয়েই তো বিরাট সমস্যা।রাউশি সময় নিলো উত্তর দিতে।ততক্ষণ মেহরান নির্নিমেষ রাউশির দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকলো।
“আমরা তো এখনও অবিবাহিত।মন চাইলেও তো যেতে পারবো না।”
মেহরান ঠোঁট ফুলিয়ে একটা শ্বাস ছাড়লো। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রাউশির গাল থেকে হাত সড়িয়ে মাথায় একটা হাত রেখে বললো,
“এজন্যই আগে থেকে আমাদের বিয়ে করা উচিত ছিলো।”
রাউশি লজ্জা পেলো।তবে মুখে সেটা প্রকাশ করলো না।স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চার মতো মেহরানের বলিষ্ঠ হাতের নিচে দাঁড়িয়ে রইলো।মেহরান আবারও রাউশির দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞাসা করলো,
“চল আমরা আজই বিয়ে করি।পরিবারকে আমি ম্যানেজ করে নেবো।”
রাউশি পছন্দ হলো না।বিয়ে নিয়ে তার স্বপ্ন ছিলো।যেটা কিনা তিন বছর আগে ভেঙ্গে গেলেও আবার নতুন করে স্বপ্নের আশা জাগতে শুরু করেছে মনে।কিন্তু হুটহাট এভাবে বিয়ে নিজেরও কেমন লাগলো।তাই মাথা দুদিকে নাড়িয়ে বললো,
“না বিয়ে নিয়ে আমার স্বপ্ন আছে অনেক।”
“রাউশি ট্রাই টু আন্ডারস্টান্ড মি, ইয়্যু আ নট সেইফ হেয়ার।”
রাউশি চমকালো।ঠোঁট দুটো আপনা-আপনি ফাঁক হয়ে গেলো।পরমুহুর্তে জিজ্ঞাসা করলো,
“হঠাৎ এই কথা বলছেন যে?”
“ভোর রাতে তোর রুমের দরজার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে ছিলো।আমি অবয়ব দেখেছি তবে মানুষটাকে দেখতে পায় নি।”
রাউশিও এবার চিন্তিত হয়ে পড়লো।মেহরান আবারও বললো,
“আমার সাথেই চল তুই।বাকিটা আমিই ম্যানেজ করে নেব নাহয়।”
বিকেল চারটা বেজে পচিশ মিনিট।
মেহরান গাড়িতে চড়ে বসলো।রাউশির চোখে অশ্রু টলমল করছে।সেও যেতে চেয়েছে তবে মাহতাব খান মানা করে দিয়েছেন।রাউশির সুরক্ষিত থাকার দায়িত্বও নিয়েছেন।মেহরানও আর কিছু বলতে পারে নি।মেহরান রাউশির দিকে তাকালো।
“রাউ সাবধানে থাকবি।বাবাকে বলেছি তাড়াতাড়ি ঢাকা ব্যাক করতে।”
রাউশি হেঁচকি তুলে কাঁদছে।কেমন বাচ্চামো করছে রাউশি।ভাগ্যিস এখানে কেউ নেই। সবাইকে ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছে মেহরান। মেহরান গাড়ির দরজা খুলে দিলো।রাউশির হাত টেনে গাড়ির ভেতরে নিয়ে নিজের কোলে বসালো।আকস্মিক ঘটনায় রাউশি মুখ থুবড়ে পড়লো মেহরান বুকের মাঝে। মুখ তুলে লাল চোখজোড়া মেহরানের দিকে পড়লো।মেহরান দরজা বন্ধ করে দিয়ে গ্লাস উঠিয়ে দিলো।একহাতে রাউশির কোমড় জড়িয়ে অন্য হাতে রাউশির চোখের জল মুছে দিলো।রাউশি হেঁচকি তুলছে।তার কষ্ট হচ্ছে খুব।মেহরানকে ছাড়া থাকতে পারবে না সে।যতই একসাথে না থাকুক তবে দিনে তো অনেকবার দেখা হয়।এই ঢের তার কাছে।কিন্তু মেহরান আজ চলে যাচ্ছে এতে যেন রাউশির মন খচখচ করছে।মনে হচ্ছে মেহরান তাকে ছেড়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছে একেবারের জন্য।রাউশির বাম চোখ দুপুরে অনেকবার লাফিয়েছে।সেই থেকে চাইছে না মেহরান চলে যাক।আল্লাহ না করুক যদি খারাপ কিছু হয়।আর ভাবতে পারলো না রাউশি।আবারও চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।মেহরান আবারও মুছে দিলো তা।রাউশির লাল ঠোঁটজোড়া কাঁপছে কান্নার বেগে।মেহরান সেখান থেকে চোখ সড়িয়ে রাউশির কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দিয়ে রাউশির কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে আওড়ালো,
“হুশশ কাঁদবি না।নয়তো কান্না, হেঁচকি আর ঠোঁটজোড়া কাঁপাকাঁপি থামানোর জন্য ভুল কিছু করে বসবো।”
রাউশি এমন সময়েও ভীষণ লজ্জা পেলো। বাম হাতে একটা কিল বসিয়ে দিলো মেহরানের।মেহরান রাউশির নাকে নাক ঘষে আবারও ফিসফিস করে বলল,
“ভালোবাসি রাউশি।অনেক বেশি ভালোবাসি।আমাদের দুজনের এক হওয়ার আর বেশিদিন নেই জান।”
রাউশির বুক কেঁপে উঠলো।মেহরানের গলা জড়িয়ে ধরে গলার কাছে মুখ লুকালো মেহরান হেসে উঠলো। রাউশির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“ফুল প্রস্তুতি নিয়ে থাকবি।আর মাত্র কিছুদিন।”
রাউশিদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এক সপ্তাহ পর।রাউশির কাছে অনেক তাড়াতাড়ি হলেও মেহরান রেগে গিয়েছিলো এত দেরিতে হওয়ার কারণে।বড়রা অনেক্ষণ হেসেছে মেহরানের এহেন আচরণে।মেহরান পরবর্তীতে নিজের করা আচরণে লজ্জা পেলেও মুখে তার একটুও ছাপ ছিলো না।
রাউশি মেহরানের কথায় লজ্জা পেলো কিন্তু কথা ঘুরিয়ে বলল,
“খুব সাবধানে যাবেন।”
মেহরান রাউশির মুখ নিজের সামনে এনে গালে নাক ঘষেই জবাব দিলো,
“খুব সাবধানেই যাবো।”
“আমি খুব তাড়াতাড়িই ফিরবো।”
“ফিরে?”
“আপনাকে বিয়ে করবো।”
বলেই জিব কাটলো রাউশি।মেহরান হো হো করে হাসলো।রাউশি নিজেকে সামলে বলল,
“সড়ুন সড়ুন এবার কেউ এসে যাবে।আমাকে নামতে দিন।”
মেহরান রাউশির গালে একটা চুমু দিয়ে সড়ে গেলো আর রাউশিও নেমে গেলো।রাউশি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলো।পেছনে উর্মিলা বেগম, মাহতাব খান সহ বাড়ির সবাই এলো মেহরানকে বিদায় জানাতে।রাউশির কেন জানি এখন আবারও কান্না পেলেও নিজেকে সামলে রাখলো।একে একে সবাই বিদায় জানালো।নুজাইশও গাড়িতে উঠে বসলো।নুজাইশকে দেখে রাউশির কিছুটা হলেও চিন্তা কমলো।নুজাইশও মেহরানের সাথে চলে যাবে আজ।এদিকে মেহরান শেষবারের মতো রাউশিকে দেখলো।হাত নেড়ে বিদায় জানালো।রাউশিও জানালো। গাড়িটা মুহুর্তের মাঝেই চলে গেলো।
রাউশি বাগানে বসে ছিলো।মনটা ভীষণ খারাপ।মেহরান নেই কেমন যেন একা একা লাগছে সেই তখন থেকে।সবে আধঘণ্টা পেরিয়েছে মেহরানের যাওয়ার।কিন্তু রাউশির এখনই মন চাইছে মেহরানের কাছে চলে যেতে।একটু আগে কল করেছিলো মেহরানকে।কথা বলছে কিছুক্ষণ।এখন আবারও ভাবছে কল দেবে কিনা?তখনই সেখানে আসলো বিপাশা।
“এই রাউশি আপু, তুমি এখানে কি করছো?”
রাউশি বিপাশার দিকে তাকালো।অন্যসময় হলে রাউশি মনখুলে কথা বলা শুরু করতো কিন্তু এখন তার কথা বলতে খুব একটা ইচ্ছে করছে না।তবুও হাসিমুখে উত্তর দিলো,
“কিছু না,বসে আছি শুধু।”
“চলো আপু আমরা বাইরে যায়।ঘুরে আসি ভালো লাগবে।”
রাউশি প্রথমে রাজি না হলেও বিপাশার জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে গেলো।কোত্থেকে যেন উজানও যোগ দিলো তাদের সাথে। কিন্তু উজানকে বিপাশা খুব একটা গুরুত্ব দিলো না। গেইটের বাইরে বেরোতেই উজান রাউশির মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“আমাদের আলাদা কথা বলার জন্য স্পেস দে।”
রাউশি মুখ ভেংচালো।তখনই আবার সামনে দেখা পেলো আবিরের।আবির হেঁটে কোথা থেকে যেন আসছিলো।এলোমেলো চুল, ফ্যাকাশে মুখ কেমন যেন লাগছে লোকটাকে।শ্যামলা মুখটা আরও বেশি শ্যামলা লাগছে।আবির এগিয়ে এসে সবার দিকে একবার তাকিয়ে বিপাশাকে জিজ্ঞাসা করলো,
“কোথায় যাচ্ছিলি?”
বিপাশা হেসে উত্তর দিলো,
“এইতো এদিকে ঘুরতে যাচ্ছিলাম রাউশি আপুকে নিয়ে।”
আবির রাউশির দিকে তাকালো।রাউশি অন্যদিকে তাকালো।আবির বলল,
“চল তাহলে আমিও যাব।”
উজান রাউশির পাশে পাশে হাঁটছে।তবে ধ্যান জ্ঞান বিপাশার ওপরই পড়ে রয়েছে। এদিকে আবির আবার রাউশিদের পেছন পেছন হাঁটছে।কিছুদূর গিয়ে বিপাশা তার এক বান্ধবীকে দেখতেই তার দিকে এগিয়ে গেলো।এই সুযোগে আবার রাউশিকে ভুলে উজানও পিছু পিছু গেলো।রাউশি থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকলেও পরক্ষণে সেও যেতে চাইলে আবির থামিয়ে দিলো,
“এই রাউশি আপনি কোথায় যাচ্ছেন? উজান বিপাশাকে পছন্দ করে।ওদের একটু আলাদা টাইম দেওয়া দরকার।চলুন আপনি আর আমি সামনে যায়।ওরাও আসুক আমাদের পিছু পিছু।”
রাউশি নাকোচ করে বলল,
“ঠিক আছে তবে ওরা আসুক তারপর নাহয় যাব।”
“এখানে এই রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকবেন?”
রাউশি চারপাশে খেয়াল করলো সমস্তকিছু। এদিকে সামনে এগিয়ে যাওয়া উজান রাউশির কথা মনে পড়তেই পেছনে ঘুরে তাকালো।রাউশিকে দেখে বলল,
“আবির ভাইয়ের সাথে বাড়িতে চলে যাস রাউশি।”
রাউশি কিছু বলতে চাইলো তবে উজান আর সেটা শুনলো না।রাউশি অস্বস্তিবোধ করলো খানিক।আবিরের ঠোঁটে হাসি লেগে আছে। রাউশির ভালো লাগলো না।আবির কিছু বলবে তার আগেই রাউশি বলল,
“বাড়িতে চলুন তবে আমার শরীর ভালো লাগছে না।”
তারা বাড়ি থেকে বেশ কিছুদূর এগিয়ে এসেছিলো।বাড়িটা এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না।রাস্তা দুটো হওয়ায় রাউশিও আবার চেনে না রাস্তা।আবিরকে বিশ্বাসও করতে পারছে না।আবিরও হাসিমুখে বলল,
“চলুন তবে।”
দুজনে এগিয়ে গেলো সামনে।রাউশি সামনে সামনে হাঁটছে আর আবির তার পেছনে। এবার সামনে এগিয়ে রাউশি জিজ্ঞাসা করলো,
“আমি তো রাস্তা চিনি না।”
আবির সামনে গিয়ে এলো,
“আমার পিছু পিছু আসুন।”
বাড়িঘর তেমন নেই এখানে।আর মানুষজনও নেই। এই সুযোগে এবার আবির হুট করেই রাউশির হাত ধরে বসলো। রাউশি এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটছিলো।রাউশি চমকে গেলো।চেঁচিয়ে বলল,
“কি করছেন কি?”
আবির নিজের ঠোঁটে এক আঙুল চেপে বলল,
“হুশ কোনো কথা না রাইশা।তোমায় কতদিন পর পেলাম।চলো আমরা এখনই পিয়ে গিয়ে বিয়ে করি।”
রাউশি চমকে গেলো,থমকে গেলো।সাথে ভয় পেলো অনেক।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“কে রাইশা?আমি রাইশা নই।কি আজেবাজে বকছেন?ছাড়ুন আমায় ছাড়ুন বলছি।”
আবির তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।উলটো ধমকে বলল,
“চুপ থাকো।তোমায় এতদিন কাছে পেয়েও কিছু করতে পারি নি।আমি তোমায় কতবছর ধরে এতো ভালোবাসি রাইশা। বিয়ে না করি চলো বাসর করে ফেলি।”
রাউশি ভয় পেয়ে কাঁদোকাঁদো অবস্থা হলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে চেঁচাতে লাগলো। কিন্তু কোথাও কেউ নেই।রাউশিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো আবির।রাউশি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।ফোনের কথা মনে পড়তেই ফোনটা এক হাতে এবার কাউকে কল করার জন্য চাপতে লাগল। কিন্তু তা আর সফল হতে দিলো না আবির ফোন কেড়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে মারলো। রাউশিকে টেনে সামনেই এক জঙ্গলের ধারে নিয়ে যেতে লাগল।গ্রামের মানুষ এই জঙ্গলে যায় না।
সবার মতে সেখানে প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায়।রাউশি কাঁদতে লাগল।হুট করেই রাউশি আবিরের হাতে কামড় দিলো জোরে।আবির আর্তনাদ করলেও হাত ছাড়লো না। বরং অনেক জোরে চড় মেরে বসলো রাউশির গালে।এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আজানের ধ্বনি কানে এসে বাজছে। রাউশি আবিরকে সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কাতে লাগল। কিন্তু আবির সে তো কেমন উদ্ভ্রান্তের মতো রাউশিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।তখনই সামনে থেকে এগিয়ে আসলো দুজন যুবক। এগিয়ে এসে আবিরকে সাহায্য করতে লাগলো রাউশিকে টেনে নিয়ে যেতে।রাউশি জোরে জোরে কান্না শুরু করলো। কান্নাভেজা গলায় অনুনয় করে বলল,
মেহেরজান পর্ব ২৪
“আমায় ছেড়ে দিন।আমি রাইশা নই। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।”
আবির ধমকে চুপ বলল আর টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।রাউশির চোখে মেহরানের মুখ ভেসে উঠল হুট করে। মেহরানকে ডাকতে ইচ্ছে করছে রাউশির।মাথাও ঘুরছে প্রচণ্ড রকম।আবিরের শক্তির সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠছে না।শুধু একটা কথায় কানে বেজে উঠলো আজ আর হয়তো তার রক্ষা নেই।আবার হুট করেই জীবনের মোড় পালটে যাবে না তো? মুখ ফুটে বলতে ইচ্ছে করলো “মেহরান ভাই, আপনার মেহেরজানকে বাঁচান প্লিজ।”