শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৬

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৬
সুমাইয়া সুলতানা

গরমের সকাল বিশেষ একটি সৌন্দর্যে ভরা থাকে, যেখানে প্রকৃতির প্রতিটি কোণে এক নতুন জীবন ধরা দেয়। সারা রাতের শান্তির পর সূর্যের প্রথম রশ্মি যখন আকাশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন চারপাশে এক ভিন্ন ধরনের উজ্জ্বলতা দেখা যায়। জনপ্রাণী নিজ নিজ আবাসস্থল থেকে বেরিয়ে নিজেদের নিত্তনৈমিত্তিক সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। প্রকৃতির নিয়মের এই কালচক্র বহমান মানুষ থেকে পশুপাখি পর্যন্ত।

আগুনের ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে সে। মোমের বাবা-মা, বোন নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে আগুনের ফ্ল্যাটে এসে মোমের সাথে দেখা করে গিয়েছেন। মোমের বাবার গাড়ি ভাড়া করার কোনো প্রয়োজন হয়নি। রাশেদ তাদের বাড়ির গাড়ি করেই মোমের বাবা-মা, বোনকে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আগুন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতঘড়ি পড়ে নেয়। গায়ে পারফিউম দিয়ে, চুল ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ফুল-হাতার শার্ট কনুই পর্যন্ত গোটাতে গোটাতে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মোম ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। আগুন গিয়ে মোম’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। শক্তপোক্ত হাত দু’টি মোমের পেটে বিচরণ করছে। মোম চমকে ওঠে। পরিচিত পুরুষালী মিষ্টি ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতেই বুঝতে পারলো, এটা তার মাস্টার মশাই। মোম কিঞ্চিৎ রাগী লুক নিয়ে আগুনের দিকে তাকায়। আগুনের কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না। মোম’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মোমের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আগুনের উষ্ণ গরম নিঃশ্বাস মোমের ঘাড়ে আঁচড়ে পড়ছে, এতে মোমের শরীর মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। মোম মিহি কন্ঠে বলল,

” দূরে সরুন। ”
” না। ”
” দেখছেন না, কাজ করছি। ”
” করো কাজ। আমি কি তোমাকে কাজ করতে নিষেধ করেছি? ”
” এভাবে জাপটে ধরে থাকলে কাজ করবো কিভাবে? ”
” সেটা তোমার ব্যাপার। ”
” কলেজের জন্য দেরি হচ্ছে না? যান গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসুন। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। ”
” যাবো না। এখানে, এভাবেই থাকবো। ”

মোম লম্বা শ্বাস টানলো। আর কিছু বলল না। বলেও লাভ নেই। আগুন যখন বলেছে যাবে না, তারমানে যাবেই না। ব্রেকফাস্ট বানিয়ে হাতের টুকটাক কাজ করা পর্যন্ত পুরো সময়টা আগুন এভাবেই মোম’কে জড়িয়ে ধরে ছিল। শুধু জড়িয়ে ধরেই ক্ষান্ত হয়নি, মেয়েটাকে জ্বালিয়েছে প্রচুর! কখনো কাঁধে ঠোঁট চেপে ধরছে, কখনো কানে ফু দিচ্ছে, কখনো গালে চুমু খাচ্ছে। আগুনের এসব দুষ্টু মিষ্টি উৎপীড়ন সহ্য করে মোম তার হাতের কাজ সম্পন্ন করল।
ব্রেকফাস্ট করে আগুন ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখছে। মোম ওড়নায় ভেজা হাত মুছে ড্রয়িংরুমে আসে। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকে আগুনের দিকে। চঞ্চল পায়ে হেঁটে গিয়ে আগুনের পাশে বসলো। আগুন, মোম’কে এক পলক দেখে টিভিতে মনোনিবেশ করল। দুঃশ্চিন্তায় মোমের ললাটে প্রগাঢ় ভাঁজ পড়ল। সাবলীলভাবে জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” কলেজে যাবেন না? ”
আগুনের ভরাট স্বর,
” যাবো। ”
” বসে আছেন যে? ”
আগুন তাকায়। চাউনী শিথিল, মুখবিবর স্বাভাবিক। শান্ত কন্ঠে বলল,
” তোমার সকল কাজ কমপ্লিট? ”
” জ্বি, কিছুক্ষণ পর দুপুরের রান্নার জন্য জোগাড় আত্তি করবো। ”
” আজ রান্না করতে হবে না। ”
মোম অবাক হয়ে জানতে চাইল,
” কেন? ”

আগুন উঠে মোমের হাত ধরে বেডরুমে যেতে যেতে গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল,
” আশানুর ইনভাইট করেছে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য। ওর বউ আফিফা তোমাকে দেখতে চেয়েছে। ব্যস্ততায় টেস্টের রিপোর্ট গুলো আনতে যেতে পারিনি আর আশানুর নিজেও দিয়ে যেতে পারেনি। তাছাড়া, তোমার বাবা-মা যাওয়ার পর থেকে কেমন মনমরা হয়ে থাকো। একটু ঘুরে আসলে ভালো লাগবে। ”
মোম চনমনে কন্ঠে শুধাল,
” দাওয়াত তো দুপুরের জন্য। এখন গিয়ে কি করবো? আপনি কি আমার সাথে থাকবেন? কলেজে যাবেন না? ”
” যাবো না কেন? তোমাকে ওদের বাসায় দিয়ে আমি কলেজে চলে যাবো। কলেজ থেকে ডিরেক্টলি আশানুরের বাসায় যাবো। আর দাওয়াত শুধু দুপুরে জন্য না! আশানুর বলেছে সকাল সকাল চলে যেতে। আজকে ওদের বাসায় থাকতেও বলেছে। ”

” থাকবেন? ”
আগুন ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কি মনে হয় তোমার? ”
বিনিময়ে মোম মৃদু হাসল। আগুন শপিংমল থেকে আনা শাড়িটা মোমের হাতে তুলে দিল। নিরেট স্বরে বলল,
” এই শাড়িটা পড়ো। ”
মোম শাড়িটা হাতে নিয়ে শুধাল,
” আপনার কলেজের দেরি হয়ে যাবে না? ”
” ফাস্ট ক্লাস এগারোটা বাজে। প্রবলেম নেই। তুমি দ্রুত রেডি হও। ”

মোম আর কথা বাড়াল না। শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। শাড়িটা কোনোরকম গায়ের সাথে প্যাঁচিয়ে বেরিয়ে এসেছে। আগুন ভ্রু কুঁচকে ফেলল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” তুমি তো এখন শাড়ি পড়তে পারো, তাহলে এভাবে পড়েছো কেন? ”
মোম গোমড়া মুখে উত্তর দিল,
” ওয়াশরুমে ঠিক ভাবে শাড়ি পড়তে পারছিলাম না। ফ্লোরে পানি থাকায় শাড়ি ভিজে যাচ্ছিলো। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না। ”

” তাড়াতাড়ি রেডি হও। ”
মোম আমতা আমতা করে বলল,
” আপনি রুম থেকে চলে যান। ”
আগুন ভ্রু যুগল কুঁচকে চওড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো,
” আমি থাকলে কি সমস্যা? ”
মোম মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলল,
” আমি আপনার সামনে শাড়ি পড়তে পারবো না। ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। মোমের কোমর টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। এক হাতে চোয়াল চেপে ধরল। চোখে চোখ রেখে, গমগমে গলায় বলে উঠলো,
” তোমার সবকিছুই আমার দেখা শেষ। নতুন করে দেখার মতো কিছুই নেই। ঢং না করে দ্রুত রেডি হও। লেট হচ্ছে আমার। ”

বাক্য শেষ করে মোম’কে ছেড়ে দিল। আগুনের লাগামহীন কথায় মোম লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। গাল ফুলিয়ে আগুনের সামনে তৈরী হতে লাগলো। আগুন আড় চোখে মোমের দিকে তাকায়। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মোমের মুখশ্রী সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে। আগুনের চোখ আটকে যায় মোমের উন্মুক্ত পেটে। ধবধবে ফর্সা মসৃণ পেট আগুনের চোখ ধাদিয়ে দিচ্ছে। নজর ফেরানো বড়ো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। নিষিদ্ধ ইচ্ছা গুলো কড়া নাড়তে শুরু করেছে ঝড়ের গতিতে। মোম ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। মোমের চাউনীতে আগুন অস্বস্তিতে পড়ে যায়। চটজলদি নজর ফিরিয়ে নেয়। মোম শাড়ি পড়ে চুল গুলো খোঁপা করে নিলো। সম্পূর্ণ তৈরী হয়ে আগুনের সামনে এসে দাঁড়ায়। আগুন, মোম’কে এক পলক দেখে হাত ধরে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।

লাউ শাকপাতা হাতে করে বাড়িতে প্রবেশ করতেই আনিকার চোখ ছানবড়া হয়ে গেল। বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে। আনিকার বাবা আয়মানের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। আনিকার মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। শিরা, উপশিরায় রাগ যেন তরতর করে বেড়ে চলেছে। শাকপাতা রান্নাঘরে রেখে ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে যায় তাদের নিকট। কোমরে হাত রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
” আপনি আমাদের বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন? ”

আয়মান যেন ওর কথা শুনতে পেলো না। আনিকার দিকে তাকাল না পর্যন্ত। আনিকার গা জ্বলে উঠল। আনিকার রাগ মিশ্রিত কন্ঠস্বর শুনে আনিকার বাবা উচ্ছ্বসিত হয়ে শান্ত কন্ঠে মেয়েকে বললেন,
” ছেলেটাকে চিন্তে পারছিস? তুই নাকি ওকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলি? আমি জানি তো, আমার মেয়ে পরোপকারী মানুষ। ছেলেটা কত ভদ্র। কৃতজ্ঞতা জানাতে বাড়িতে চলে এসেছে। আজকাল উপকার করলে ক’জন মনে রাখে? ছেলেটা ভারী মিষ্টি। ”
আনিকা বিড়বিড় করে বলল,

” মিষ্টি না, হাড়বজ্জাত! ”
আয়মান মুচকি হেসে বলল,
” আমি তো আর অকৃতজ্ঞ না, সহজে কোনোকিছু ভুলি না। যাকগে, আপনাকে যেটা বলালম আশাকরি মনে রাখবেন। ভুলে যাবেন না কিন্তু!
আনিকার বাবা সানাউল্লাহ ভরসা স্বরূপ বলে উঠলেন,
” মনে থাকবে বাবা। এমন সোনার টুকরো ছেলের কথা কেউ ভুলে যায়? ”
আয়মান ঠোঁট কামড়ে হাসে। সানাউল্লাহর গাল টিপে দিয়ে বলল,
” সেজন্যই তো আপনাকে আমার এত্তো ভালো লাগে। ”
সানাউল্লাহ থমথমে খায়। রাশভারী কন্ঠে বললেন,
” আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড না যে গাল টিপাটিপি করবে। পরবর্তীতে বিষয়টি খেয়াল রাখবে। ”
আয়মান জিভ কাটলো। মেকি হেসে বলল,
” জ্বি, আচ্ছা। আমি এখন আসি আঙ্কেল। ”
” তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। সময় পেলে আবার এসো। ”
আয়মান, আনিকার দিকে চেয়ে দুষ্টু হেসে জানায়,
” তা তো অবশ্যই। একমাত্র মেয়ের হবু জামাই বলে কথা। আমি আসবো না তো কে আসবে? ”
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আনিকা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় বাবার দিকে। নাকের পাটাতন ফুলিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,

” বাবা, ওই ছেলেটার ওইসব ফালতু কথা শুনে তুমি ওকে কিছু বললে না কেন? ”
সানাউল্লাহ ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিল,
” কি বলবো? ভুল কি বলেছে ছেলেটা? তোরা দুজন দুজনকে পছন্দ করিস, আমাকে বললে আমি কি তোদের সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করতাম? আমি ওইসব বাবাদের মতো না। মেয়ের ইচ্ছার মূল্য আমার কাছে সবার আগে। তবে আমার রাগ হচ্ছে তোর উপর। তুই ছেলেটাকে ভালোবাসিস সে কথা আমাকে কেন বললি না? ওই ছেলে কেন বলল? আমাকে জানাতে ভয় পাচ্ছিলি? যদি তোদের সম্পর্ক মেনে না নেই, সেজন্য? ”

আনিকা হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ময়ে ওর অক্ষি কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। ও আয়মান’কে পছন্দ করে? ভালোবাসে? কবে থেকে? আনিকা সময় নষ্ট করল না। চঞ্চল পায়ে ঝড়ের গতিতে ছুটে চলল। আয়মান ওদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে চলে গিয়েছে। আনিকা দৌড়ে আয়মানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়মান থেমে যায়। মুখে তার ক্রুর হাসি। আনিকা রেগে বলে উঠলো,
” আপনি আমার বাবাকে ওসব আজেবাজে কথা বলেছেন কেন? কি কানপড়া দিয়ে বশিভূত করলেন তাকে? ”
আয়মান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
” কোথায়, কি বলেছি? কিছু তো বলিনি। ”
” আমি আপনাকে ভালোবাসি, পছন্দ করি এসব কথা কেন বলেছেন? যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ”
আয়মান জবাব দিল না। আনিকা পুনরায় বলল,

” আপনি জানেন? আপনার এই মিথ্যার জন্য আমি বাবার কাছে ছোট হয়ে গিয়েছি? আমার বাবার চোখে একরাশ হতাশা দেখেছি আমার প্রতি। সেটা শুধু আপনার জন্য। আপনি আমার নামে কেস করতে চাইলে করতে পারেন। এখানে আর আসবেন না। কেন এসেছেন এখানে? লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার থেকে দূরে থাকবেন। নয়তো এর ফলাফল খুব খারাপ হবে। ”
আয়মান শান্ত কন্ঠে বলল,
” প্রথমত, তোমার বাবার কাছে তুমি ছোট হওনি। তিনি তোমার উপর কিঞ্চিৎ অভিমান প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়ত, তোমার থেকে দূরে থাকা সম্ভব না, উল্টো কাছে আনার দ্রুত ব্যবস্থা করছি। অপেক্ষা করো। ”
আনিকা তেজি গলায় শুধায়,

” কি করবেন আপনি? উল্টো পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করলে, এবার মাথা দুভাগ করে ফেলবো। ”
আয়মান কিঞ্চিৎ ঝুঁকে আনিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,
” তাহলে ট্রিটমেন্ট তোমার হাতেই করবো। মাথা ফাটানো তো শুধু বাহানা। বুঝিনা আমি? সত্যি বলতে তুমি আমার রুপ দেখে হিংসায় জ্বলেপুড়ে মরো। সেজন্য অযুহাত দিয়ে যখন তখন আমাকে ছুঁতে চাও। ”
বলেই লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলল। আনিকা রাগী লুক নিয়ে তাকায়। আয়মান ঠোঁট কামড়ে হাসে। গা দুলিয়ে হেঁটে চলে যায়।

আশানুরের বাড়িতে মোম’কে রেখে আগুন কলেজে চলে গিয়েছিল। আশানুরের বাবা-মা বাড়িতে নেই। বাড়িতে শুধু আফিফা ও আশানুর ছিল। ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আগুন নিশ্চিন্তে কলেজে চলে যায়। ইতোমধ্যে আফিফার সাথে মোম অনেকটা ফ্রী হয়ে গিয়েছে। মোম’কে ছোট বোনের মতো স্নেহ করে। আফিফা রান্না করছে আর মোম তার পাশে দাঁড়িয়ে হেল্প করছে। মোম লম্বা নিঃশ্বাস টেনে চনমনে কন্ঠে বলল,
” কোরমার দারুণ ঘ্রাণ বেরিয়ে আপু। না জানি খেতে কত মজা হবে। ”
আফিফা মুচকি হেসে বলে,

” কোরমা খেতে পছন্দ করো? ”
” হ্যাঁ। ”
” একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? ”
” জ্বি, অবশ্যই। ”
আফিফা চুলা বন্ধ করে দেয়। কোরমা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মোম’কে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আশানুর ড্রয়িংরুমে বসে হসপিটালের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফাইল চেক করছে। আফিফা মোম’কে নিয়ে বেডরুমে চলে আসে। মোম’কে বসতে বলে ঝটপট গোসল করতে চলে যায়। গোসল শেষে মোমের পাশে বসলো। মোম মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে,

” আপু, তখন কি যেন জানতে চাচ্ছিলেন? ”
” বলছি। ”
আফিফা ভালো করে মোমের মুখশ্রী অবলোকন করল। মেয়েটার চোখেমুখে জানতে চাওয়ার উদ্বেগ। বারবার ঢোক গিলছে আর পলক ঝাপটাচ্ছে। মোমের উদ্বেগ দেখে আফিফা ঠোঁট এলিয়ে হাসল। মোম তার হাসির কারণ বুঝতে পারলো না। আফিফা, মোমের থুতনিতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
” আ রে, রিলাক্স। এত হাইপার হচ্ছো কেন? ”
মোম জিহ্বার সাহায্যে ঠোঁট ভিজিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,

” আপনি বলুন। ”
আফিফা সিরিয়াস ভঙ্গিতে জানতে চাইল,
” আগুনের সাথে তোমার সবকিছু ঠিক আছে? ”
মোম বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো,
” জ্বি, কিসের কথা বলছেন? ”
” না মানে, তুমি তো খুব ছোট। সংসারের হালচাল বুঝতে পারছো কি না? আগুনের সাথে তোমার বৈবাহিক সম্পর্ক কেমন? সেটাই জানতে চাচ্ছি। ”
মোম ছোট করে উত্তর দিল,
” জ্বি, সব ঠিক আছে। ”
মোমের ঘাড়ের দিকে নজর পড়তেই আফিফা, মোমের কথার মাহাত্ম্য বুঝতে পারলো। মোমের গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বলল,

” সুখে থেকো তোমরা। আগুন খুব ভালো ছেলে। হাইস্কুল লাইফ থেকে পরিচয় ওর সাথে। একটু উগ্রমেজাজী, তবে মনটা স্বচ্ছ পানির মতো। ওর মন যুগিয়ে চলতে পারলে তোমাকে আকাশ সমান ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে। ”
মোম মনোযোগ সহকারে শুনলো। আফিফা পুনরায় বলল,
” যতদ্রুত সম্ভব বাচ্চা নিয়ে নিও। অনেক সময় দেখা যায়, বয়সের দরুন কনসীভ করতে সমস্যা দেখা দেয়। আমাকে দেখো, বিয়ের দুই বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে অথচ একটা সন্তান দিতে পারছি না। ”
শেষের কথাটা হতাশ কন্ঠে বলল। আফিফার কথায় মোমের লজ্জা লাগছে। তবে তার একটা সন্তানের জন্য হাহাকার শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মোম সহসা আফিফা’কে জড়িয়ে ধরল। ভরসা স্বরূপ বাক্য আওড়ায়,
” হতাশ হবেন না, আপু। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

আফিফা নিজেও মোম’কে আগলে নিলো। স্মিথ হেসে বলল,
” আমি যা বলেছি সেটা কিন্তু আগুন’কে বলো না। শুনলে ও ভীষণ রাগ করবে। আর দ্রুত বলেছি বলে এখনই বাচ্চা নিতে বলিনি। বছর ঘুরুক, তারপর। ”
মোম লাজুক হাসল। দুপুরে আগুন আসার পর সবাই এক সাথে খাবার খেল। লাঞ্চ করে ড্রয়িংরুমে বসে আছে চারজন। কিছু একটা মনে পড়তেই থমথমে মুখে আশানুর উঠে যায়। বেডরুমে গিয়ে আগুনের টেস্টের রিপোর্ট এনে আগুনের হাতে দিল। মোম ঝট করে রিপোর্ট টা ছিনিয়ে নিলো। আশানুর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। আগুন ঠোঁট কামড়ে হাসে। আফিফা শুধাল,
” কার রিপোর্ট এটা? ”
আশানুর ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাব দেয়,

” আগুনের। ওর জ্বর আসার পর একদিন আমার হসপিটালে গিয়ে কিছু টেস্ট করিয়ে ছিল। সময় স্বল্পতার জন্য দেওয়া হয়নি। ”
মোম চিন্তিত ভঙ্গিতে উদ্বেগ নিয়ে জানতে চাইল,
” ভাইয়া রিপোর্টে কি এসেছে? সব ঠিক আছে তো? ”
আশানুর চুপ থাকল কিয়ৎপরিমাণ। মুখে গাম্ভীর্য ভাব ফুটে উঠল। মুহূর্তে মোমের চিন্তা বাড়ল। আগুন ধারাম করে আশানুরের পিঠে মারল। বড়সড় ধমক দিয়ে গমগমে গলায় বলল,
” আমার বাচ্চা বউকে টেনশন দিয়ে তোর কি লাভ? বলে দে, রিপোর্ট সব পজিটিভ। দেখ, কেমন চাতক পাখির মতো তোর একটা ছোট্ট উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। ”

আশানুর ঠোঁট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। তার মুখের ভাবভঙ্গি নিষ্প্রাণ। হতাশা আর অসহায়ের ন্যায় আগুনের দিকে তাকাল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিস্প্রভ গলায় বলে,
” আমি এখন যেটা বলতে চাচ্ছি, আশাকরি স্বাভাবিক ভাবে সবটা মেনে নিবি। আর মোম জানো তো? প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমরা কে কিভাবে মারা যাবো কেউ জানি না। আমার মনে হয়, সবটা পরিষ্কার করে বলা উচিত। মোম তুমি ধৈর্য্য সহকারে শান্ত হয়ে আমার কথা শুনবে। ওকে? ”

মোমের চোখে পানি চলে এলো। অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপছে অস্বাভাবিক গতিতে। মস্তিষ্কের গোত্রে যেন রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভয়ে হাত, পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কয়েকদিন আগে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছিল। মোম জোরে জোরে শ্বাস টানছে। এপর্যায়ে বদলে গেল আগুনের অভিব্যক্তি। এতক্ষণের হাসিটা ধপাস করে নিভে গেল। বিস্ফোরিত নয়নে সিরিয়াস হয়ে তাকায় আশানুরের দিকে। প্রকট চক্ষু জোড়া উঠে আসে ললাটে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায় সে। শান্ত কন্ঠে শুধাল,

” রিপোর্ট কি এসেছে? তুই বল। যেটাই আসুক, আমি শুনতে প্রস্তুত। ”
আশানুর মনমরা কন্ঠে বলে ওঠে,
” কিভাবে যে বলি। আমি ভাবিনি রিপোর্টে এমন কিছু আসতে পারে! ”
আগুন অধৈর্য্য সহিত আবার বলল,
” হেয়ালি করিস না। বল। ”
আশানুর মোমের দিকে তাকায়। মেয়েটার অক্ষিকোটরে পানি টলমল করছে। এইতো এক্ষুনি গড়িয়ে পড়ল বলে। রক্ত জবার মতো পাতলা অধর জোড়া কেমন শুষ্ক দেখাচ্ছে। আশানুর তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল। আফিফা চিন্তিত সমেত বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

” কি হলো, আশানুর? তুমি চুপ করে আছো কেন? তোমার নিরবতা কারো কোমল হৃদয়ে আঘাত হানছে। তুমি কি সেটা বুঝতে পারছো না।? ”
মুহূর্তে কারো চিকন কন্ঠে আর্তনাদ শুনে সেদিকে দৃষ্টি তাক করল তিনজন। মোম মৃদু আওয়াজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আতঙ্কিত গলায় কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো,
” ওনার কি কোনো বড়ো অসুখ হয়েছে? বলুন না, ভাইয়া। কিছুদিন আগে আমি একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেটা আবার সত্যি হয়ে যাবে না তো? চুপ করে থাকবেন না। দয়াকরে সবটা বলুন। ”

মোমের কান্নায় আগুনের মস্তিষ্ক অচল হয়ে গেল। তড়িৎ বেগে উঠে ওদের সামনেই মোম’কে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরল। আগুনের বুকটা কেমন ধড়াস ধড়াস করছে। আশানুর পুনরায় মুখভঙ্গি বদলে হাততালি দিয়ে হো হো করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে আফিফার গায়ের উপর ঢলে পড়ল। আফিফা বিরক্ত হয়ে দূরে সরে গেল। আগুন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আশানুর অধরের হাসি বজায় রেখে বলল,
” ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ! সকল রিপোর্ট পজিটিভ। আগুন একদম পারফেক্ট আছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে হয়তো জ্বর এসে ছিল। ”

মোম কবুতরের ছানার মতো আগুনের বুক থেকে মুখ তুলে উঁকি দিল। আগুন ঠিক আছে শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। আগুনের বুকের সঙ্গে মিশে এখনো ফুঁপিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। আগুন মোমের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চোখের পানি মুছে দিয়ে, চোয়াল শক্ত করে আশানুরের দিকে এগিয়ে যায়। আশানুর জানে, এখন আগুন ওর চেহারার গঠন বদলে দিবে। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত ছুটে বেডরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। আগুন মুষ্টি বদ্ধ করে দরজায় আঘাত করছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” পালাচ্ছিস কেন? বেরিয়ে আয় বলছি। স্বাদে কি আর তোকে ছাগল বলি? তোর সাহস কত বড়ো আমার বউ’কে কাঁদাস? ”

দরজা বন্ধরত অবস্থায় আশানুর চিৎকার করে জবাব দেয়,
” রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি তো শুধু দেখতে চেয়েছিলাম, তোর পিচ্চি বউ তোকে কতটা ভালোবাসে। ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” তাই বলে এমন জঘন্য পরিস্থিতি বানিয়ে বলবি? তোর ডাক্তার হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। ডাক্তার মানুষকে টেনশন ফ্রী করে আর তুই উল্টো টেনশন দিস। কতক্ষণ লুকিয়ে বসে থাকবি? একবার হাতের কাছে পাই, তখন মজা করার স্বাদ হারে হারে টের পাবি। অন্য কিছু বা অন্য কাউকে নিয়ে মজা করলে কিছু বলতাম না। হাসি মুখে মেনে নিতাম। কিন্তু তুই আমার কোমলমতি কে নিয়ে এত জঘন্য একটা মজা করলি! তোর কারণে, আমার বউয়ের চোখ দিয়ে যে অশ্রুকণা পড়েছে তার মূল্য তো তোকে দিতেই হবে। ”

আশানুর অসহায় গলায় বলে উঠলো,
” ভাই, এবারের মতো মাফ করে দে প্লিজ। আর কক্ষনো এমন করবো না, প্রমিস। ”
আগুন কিছু বলল না। গটগট করে ড্রয়িংরুমে চলে গেল। আফিফা স্নেহময় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মোম’কে। আগুন, মোম’কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আফিফার থেকে বিদায় নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো।

আগুন ঠিক করল, মোম’কে নিয়ে এখন বাসায় ফিরবে না। আশেপাশে কিছুক্ষণ ঘুরবে। চার চাকা আলা গাড়ি নিস্তেজ হয়ে দাঁড়িয়ে। সময়টা বিকাল চারটার কাছাকাছি। স্থির গাড়িটার ভেতর আগুনের কোলে বসে বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে মোম। মেয়েটির মুখবিবর ভার হয়ে আছে। লতানো শরীরটা কেমন নেতিয়ে পড়েছে। আগুনের কাঁধের শার্টের অংশ খামচে ধরে আছে। আগুনের মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। গরম লাগছে ওর। হাত বাড়িয়ে শার্টের বুকের কাছের দু’টো বোতাম খুলে দিল। ওদের গাড়িকে পেছনে ফেলে কতশত গাড়ি হাওয়ার বেগে নিজ গন্তব্যে প্রস্থান করছে। মোম কাঁচের ছোট্ট জানালা দিয়ে সেসব কিছু অবলোকন করল। দুজনের মধ্যে পিনপিন নিরবতা বিরাজমান। মৌনতার ইতি টেনে আগুনের শান্ত কন্ঠ ভেসে আসে,

” ভাবছি এখন বাসায় ফিরবো না। বেরিয়েছি যখন আরেকটু চারপাশে ঘুরবো। তুমি কি বলো? ”
মোম নিরুত্তর। আগুনের বুকে মুখ ঘষল। আগুন হতাশ হলো। হাতের অঞ্জলিপুটে মোমের মুখশ্রী তুলে নিলো। যত্ন নিয়ে মোমের কপালে চুমু এঁটে দিল। মোমের নেত্র যুগল ছলছল করে উঠল। বেহায়া চক্ষু পানি কণার তর সইল না! টুপ করে গড়িয়ে পড়ল। ঠাই পেলো মোমের কিঞ্চিৎ রক্তাভাব ফর্সা গালে। মোমের এই লুকটা আগুনের কাছে দেখতে কি মিষ্টি লাগছে। টুপ করে কামড় বসাল মোমের লাল হয়ে যাওয়া উঁচু নাকে। হাত দিয়ে চোখের জল মুছল না। পুরুষালী ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে গেল সেথায়।

আজ মোম লজ্জায় আগুনের বুকে মুখ লুকাল না। স্থির হয়ে বসে। আগুনের বুঝি তা সহ্য হয়? মোমের খোঁপা করা চুল গুলো খুলে দিল অবলীলায়। মোম চকিতে তাকাল স্বামীর আদলে। আগুন মুখ ডুবিয়ে দিল মোমের ঘাড়ে। কোমরে থাকা হাতের বন্ধন দৃঢ়। মোমের বক্ষস্থল কেঁপে ওঠে। পেলব হাত চলে যায় আগুনের সিল্কি চুলে। মুহূর্তে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল মেয়েটা। আগুন তার সুক্ষ্ম তাদের জোর প্রয়োগ করল মোমের ঘাড়ের নরম চামড়ায়। মোমের ব্যথাতুর আওয়াজে কামড়ের জায়গায় আলতো চুমু দিয়ে ছেড়ে দিল। লম্বা চুলে মুখ ডুবিয়ে সেটার ঘ্রাণ লুফে নিলো। নজরে নজর মেলাল। সময় ব্যয় করল না। হুট করে আঁকড়ে ধরল বউয়ের কোমল ওষ্ঠদ্বয়। গাঢ় করে চুম্বন করল সেথায়। মোম ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছাড়ল। আগুন শীতল গলায় বলল,

” ওই ব্যাপার টা ভুলে যাও। আশানুর সবসময়ই এরকম দুষ্টুমি করতো। তবে ভাবতে পারিনি এমন সিরিয়াস বিষয়ে ছাগলটা মজা নিবে। ”
মোম নাক টেনে সরল গলায় বলে ওঠে,
” জানেন, আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমরা দুজন আলাদা হয়ে গিয়েছি। কেউ একজন আমাদের আলাদা করে দিতে চাচ্ছে আর সে তার কাজে সফলও হয়েছে। ”
আগুন, মোমের থুতনিতে চুমু খেল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিরেট স্বরে বলল,

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৫

” ভয় পেও না। কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। যতদিন বেঁচে থাকবো, আগুনের বুকে শুধু মোম থাকবে। মরার পরও এই বুক জমিনে শুধু তোমার নামটা খোদাই করা থাকবে। ”
মোম সন্তুষ্টির হাসি হাসল। এই প্রথম নিজ ইচ্ছায় আগুনের উন্মুক্ত বুকে নিজের নরম অধর ছুঁয়ে দিল। আগুন ঠোঁট কামড়ে হাসে। মোমের মাথায় চুমু দিয়ে, তাকে এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অন্য হাতে চাবি ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভিং করতে লাগলো।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৭