রেড রোজ পর্ব ৩৪
ফারহানা নিঝুম
বিয়ে বাড়ির পরিবেশ,সব কিছু জমজমাট।আজ নাকি উৎসা আর ঐশ্বর্যের বিয়ে,বাবা যায়?
সত্যি ভাবনার বিষয়, যে ছেলে মেয়েদের জাস্ট টিস্যুর মতো ইউজ করতো,সে নাকি বিয়ে করছে।
গায়ে হলুদ শুরু হয়েছে একটু আগেই, হলুদ রঙের শাড়ি পরে রেডি হয়ে উৎসা। ছোট্ট কিশোরী মনে হাজারো স্বপ্ন সাজাচ্ছে সে।
ঐশ্বর্য নিজের রুমে বসে আছে, শরীর মন দুটোই ব্যস্ত।শরীরে বয়ে যাচ্ছে ঝড়,হ্যা পৌরুষ জেগে উঠেছে। তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে। ঐশ্বর্য চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
“অপেক্ষা মাই ফুট,এই রেড রোজ কে টাচ করতে চাই।বাট হাউ?”
ঐশ্বর্য পাগল পাগল হয়ে উঠছে, ইচ্ছে করছে উৎসা কে গিয়ে পিষে ফেলতে।
“আহহহ।”
ঐশ্বর্য নিজের চুল খামচে ধরে, ইয়েস মেয়েদের কাছাকাছি যাওয়া তার বেড হ্যাভিট। উৎসার প্রতিও তার ফিলিংস এমন। সে তার ফিলিংস নিয়ে কনফিউজড, যার জন্য এই এত সব করতে হচ্ছে তাকে। ব্যস উৎসা কে ছুঁতে চায়, একবারের জন্য। ভালোবাসা মাই ফুট, চাই না কারো ভালোবাসা। আচ্ছা সে কী উৎসা কে ভালোবাসে? ঐশ্বর্য কনফিউজড , কিছু বুঝতে পারছে না।
গায়ে হলুদ শেষ হতেই পার্লার থেকে লোক এলো উৎসা কে সাজাতে। বিয়ের জন্যেই উৎসা সাজগোজ করছে, না হলে এসব আটা ময়দা জীবনেও লাগাতো না।
বউ বেসে বসে আছে উৎসা,আজ তার বিয়ে।ভাবা যায় তার বিয়ে?তাও একটা অস’ভ্য রিক চৌধুরীল সঙ্গে। কথাটা ভেবে ফিক করে হেসে উঠলো উৎসা।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ওদিকে রুদ্র আর জিসান মিলে ঐশ্বর্য কছ শেরোয়ানি পড়িয়ে রেডি করলো।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে কাজী সাহেব চলে এলো। বিয়ের আসরে উৎসা কে নিয়ে গেলো, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ঐশ্বর্য থমকালো চমকালোও,সে তো শুধু উৎসার সঙ্গে ইন্টিম… হওয়ার জন্য বিয়েটা করছিল। ঐশ্বর্যের বুক টিপ টিপ করছে, উৎসা কে দেখে হৃদয় স্পন্দন বাড়ছে।
ঐশ্বর্য অনুভূতি নিয়ে অপ্রস্তুত হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে তার।
বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে, ঐশ্বর্য বললৈ।কাজীর বলা অনুযায়ী তিনটি শব্দ বললো। কবুল কবুল কবুল,উৎসাও বললো। দুজনের আবারো রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ হয়।
বিয়ের পর পর আনন্দ উ’ল্লাস লেগে আছে, নিকি, রুদ্র, জিসান,কেয়া,মিহি আরো অনেক আত্মীয় স্বজন মিলে মজা করছে।
জিসান উপরের দিকে যেতে লাগলো, তৎক্ষণাৎ আফসানা পাটোয়ারীর সম্মুখীন হয়।
“হ্যালো রিকের মিসেস মহিলা, দেখলেন দু’টো লাভ বার্ডস এক হয়ে গেছে!”
আফসানা তাচ্ছিল্য করে বলে।
“আচ্ছা তাই বুঝি? একটা কথা বলো জিসান তোমার ফ্রেন্ড আদেও কি উৎসা কে ভালোবাসে?”
জিসান কিছুটা অবাক হল।
“মানে?”
“মানে এটাই যে ঐশ্বর্য উৎসা কে ভালোবাসে না,আর এটা আমি জানি। তুমি চাইলে জিজ্ঞেস করতে পারো।”
আফসানা পাটোয়ারী জিসানের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে চলে গেল। জিসান ভাবনায় পড়ে গেলো, সত্যি কী ঐশ্বর্য মিস বাংলাদেশী কে ভালোবাসে না?
জিসান কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল, দ্রুত পায়ে ঐশ্বর্যের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ঐশ্বর্য ওখানেই ছিলো,ডিভানের উপর বসে এক পা সেন্টার টেবিলের উপর রেখেছে।আই প্যাড নিয়ে পড়ে আছে সে, জিসান হুড়মুড়িয়ে ঢুকে গেল।
“রিক সত্যি করে বল তুই মিস বাংলাদেশী কে ভালোবাসিস?”
ঐশ্বর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
জিসান অস্থির কন্ঠে বলে।
“আগে বল তুই সত্যি ভালোবাসিস?”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“না বাসি না ভালো। এখন বল কী হয়েছে?”
জিসান চমকে উঠে, ঐশ্বর্যের বাহু ধরে বলে।
“মানে কী?তুই কী বলেছিস এসব? ভালোবাসলে বিয়ে?”
“চিল ইয়ার,কী এমন হয়েছে বল তো?তুই কি আমাকে চিনিস না?”
ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে ফের ডিভানের উপর বসে পড়ল।
জিসান রাগে গজগজ করতে করতে বলে।
“মানে টা কী?”
“মানে এটাই আমিই শুধু ইন্টিমে…. হতে চাইছিলাম,দ্যাটস এনাফ।”
জিসান নিশ্চুপ,এই ছেলে কী করলো?মিস বাংলাদেশী কত ভালোবাসে।আর ও নাকি ওসব নিয়ে পড়ে আছে?
“রিক আমি আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি তুই খুব বড় ভুল করছিস। আমি সত্যি….
জিসান কথা শেষ করতে পারলো না।তার পূর্বেই কানে আওয়াজ এলো কিছু পড়ে যাওয়ার। ঐশ্বর্য আর জিসান দু’জনেই ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো।নিকি,উৎসা,কেয়া দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে, মূলতঃ ওরা উৎসা কে ঐশ্বর্যের রুমে রেখে যেতে এসেছিল। কিন্তু উৎসা যা শুনলো তাতে ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
তাহলে কি এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ব্যবহার করলো?
উৎসার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, হঠাৎ অনুভব করলো তার বুকের বা পাশে বেশ য’ন্ত্র’না হচ্ছে।
ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে রইল,ঘাড় বাঁকিয়ে মুখের ভাবান্তর বদলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
ঐশ্বর্য এমন কিছু করবে তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। উৎসা দূর্বল শরীর টা টেনে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেল। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, জিসানের মনে খুব রাগ হচ্ছে।মন চাচ্ছে ঐশ্বর্যের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করে দিতে।
বিয়ে বাড়ীতে নেমে এলো অদ্ভুত নিরবতা।পুরো বাড়িতে ছেয়ে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে উৎসা, বারংবার নিজেকে দেখছে। আচ্ছা সে কেমন হ্যা?তাকে কী ভালোবাসা যায় না? শুধু কি কা’মনা’র চোখে দেখতে হবে? আচ্ছা একটু ভালোবাসার চোখে দেখলে কী হতো?সে তো রিক চৌধুরী কে ভালোবেসে ফেলেছে, কিন্তু রিক চৌধুরী কেন তাকে ঠকালো?
হাজার প্রশ্নে মনে ভিড় জমেছে উৎসার,সে তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ।
আয়নায় ঐশ্বর্যের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো উৎসা, সে তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। ঐশ্বর্য ভেতরে প্রবেশ করলো,উৎসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল।
“সুইটহার্ট লিসেন আমি তোমাকে ভালোবাসি কী না জানি না, ট্রাস্ট মি এটা সত্যি। আমি আমার ফিলিংস নিয়ে….
উৎসা নিজের জিনিস গুলো খুলতে লাগলো,সব গয়না খুলে টেবিলের উপর রাখলো। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাতে থাকা ডায়মন্ড রিং খুলে ঐশ্বর্যের হাতে তুলে দিল।
“আমি আপনার মত ক্যারেক্টারলেস নই, জানি না তবুও কেন সবাই আমাকে এমন নজরে দেখে। আমি সত্যি ভুল করেছি আপনার মত চিপ মাইন্ডের মানুষ কে ভালোবেসে। আপনার এই মুখ থেকে আমি আর কিছু শুনতে চাই না। চলে যান।”
ঐশ্বর্য কিছুটা অদ্ভুত ভাবে এদিক সেদিক ঘাড় দোলালো। উৎসার মুখ পানে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে।
“বেইবি সামথিং নিডস্।”
উৎসার ইচ্ছে করছে ঐশ্বর্যের মুখে সপাটে থা’প্প’ড় বসাতে।হাত তুলতেই ঐশ্বর্য পিছমোড়া করে বেঁধে নিল।
“এই ভুলটা একদম না।অ্যাম ক্র্যাজি ম্যান।একে বারে জান খেয়ে ফেলব।”
উৎসা ঐশ্বর্যের স্পর্শ নিতে পারছে না।
“ছুঁবেন না আমাকে, আমি আপনাকে ঘৃ’ণা করি।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“ইটস্ হার্ট, ইটস্ হার্ট। উফ্ এভাবে বলে না সুইটি।”
উৎসা বেজায় রেখে গেল, টেবিলের উপর থাকা ফুলদানি তুলে ছুড়ে ফেলল।
“আমাকে ঠকালেন কেন?কী করেছিলাম? বলুন!”
উৎসা ঐশ্বর্যের কলার চেপে ধরে, ঐশ্বর্য নিশ্চুপ।সে উৎসার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“উফ্ সুইটহার্ট চোখ ব্যথা করবে।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বাহু দুটো ঘুষি দেয়।
“আই হেইট ইউ, অস’ভ্য রিক চৌধুরী। কোনো দিন ভালো হবে না আপনার!”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত দুটো পিছমোড়া করে চেপে ধরে।
“কিপ কুয়াইট সুইটহার্ট।”
উৎসার চোখ দুটো ফুলে উঠেছে। বাইরে জিসান,নিকি রুদ্র, আর কেয়া। ঐশ্বর্য বললো।
“জিসান আমরা জার্মানি ব্যাক করব আজকেই।”
জিসান তম্বা খেয়ে গেল, সত্যি চলে যাবে?
উৎসা অসহায় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে।এত পাষাণ?তাকে এভাবে ফেলে চলে যাবে? ঐশ্বর্য উৎসার চোখে চোখ রাখলো, দুজনেই তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। আচমকা ঐশ্বর্য উৎসার ললাটে চুমু খেলো,বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই থতমত খেয়ে গেল। ঐশ্বর্য অপেক্ষা করলো না, বেরিয়ে গেল,উৎসা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
আবহাওয়া খুব একটা ভালো না, বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার পাশে বসে আছে উৎসা, ভাগ্যের উপর আকাশ সম অভিযোগ তার।তার সঙ্গে যা হলো আদেও কী সব ঠিক? অবশ্যই ভুল, আচ্ছা কেউ কী করে এত নিখুঁত অভিনয় করতে পারে?
মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো উৎসা।মিহি দাঁড়িয়ে আছে,চোখে মুখে তার চিন্তার ছাপ।
“আপু।”
“বনু তোকে আগেই বলেছিলাম যা করবি ভেবে চিন্তে করবি।দেখলি অতিরিক্ত বিশ্বাসের ফলাফল!”
উৎসা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো, সত্যি নিজের উপর হাসি পাচ্ছে তার।
“আমি ভাবতে পারছি না আপু, আমার সঙ্গে এমন হয়েছে।”
মিহি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“তুই চিন্তা করিস না,আমরা সবাই তোর পাশে আছি।তুই একদম ভেঙে পরবি না।”
মলিন হাসলো উৎসা,আর যাই হোক কাউকে বুঝতে দিলে চলবে না সে কষ্টে আছে। সবাই যে তাকে নিয়ে চিন্তা করে!
“আমি ঠিক আছি আপু। তোমরা প্লিজ চিন্তা করো না,যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। অন্তত মিথ্যে নিয়ে থাকতে হয়নি।”
আবারও দীর্ঘ শ্বাস ফেলল মিহি।
উৎসা একই রকম ভাবে বসে রইল।
বার্গহাইন নাইট ক্লাবে বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।হাতে তার হু’ইস্কির বোতল,একের পর এক গ্লাস শেষ করছে সে।
কিয়ৎক্ষণ পর একটি মেয়ের কাছাকাছি গেল, ঐশ্বর্য ডেস্পারেটলি ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটি ঐশ্বর্য কে কাছে টানছে, আচমকা ঐশ্বর্য কে ছেড়ে অদ্ভুত হাসলো। ভেতরে যেতে লাগলো,একটা রুমে গিয়ে দু’জনে থামলো। মেয়েটি ঐশ্বর্য কে কাছে টানে, মরিয়া হয়ে উঠে ঐশ্বর্য কে কিস করতে। ঐশ্বর্য উন্মা’তা দেখালো, কিন্তু তা কিয়ৎক্ষণের জন্য। মেয়েটির কাছাকাছি যেতেই উৎসার স্নিগ্ধ মুখশ্রী ভেসে উঠে। ঐশ্বর্য ছিটকে দূরে সরে গেল, অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটি।
রেড রোজ পর্ব ৩৩
“হোয়াট হ্যাপেন্ড রিক?”
ঐশ্বর্য শুকনো ঢোক গিললো।
“নাথিং।”
ঐশ্বর্য বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেল, ভীষণ বাজে ফিলিং হচ্ছে তার। উফ্ রেড রোজ তাকে ম্যাড বানিয়ে ছাড়বে।
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।
“আই সয়ার রেড রোজ আমাকে পাগল বানানোর শাস্তি পাবে।জান খেয়ে ফেলব তোমার,আই মিন ইট।”