রেড রোজ পর্ব ৩৫

রেড রোজ পর্ব ৩৫
ফারহানা নিঝুম

সকাল সকাল কলিং বেল বেজে উঠল,মিস মুনা গিয়ে মেইন ডোর খুলে দিলো। মিস্টার রাজেশ চৌধুরী ভেতরে প্রবেশ করে।
মিস মুনা ঐশ্বর্যের রুমে গিয়ে ন’ক করলো।
“স্যার? স্যার মিস্টার চৌধুরী এসেছেন।”
ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো চোখে উঠে বাইরে গেল। মিস মুনা কিচেনের দিকে চলে গেলেন।
শর্ট প্যান্ট তার উপর একটা ট্রি শার্ট জড়িয়ে বাইরে এলো ঐশ্বর্য।

“হ্যালো আঙ্কেল।”
ঐশ্বর্য কে দেখে মিহি হাসলেন রাজেশ চৌধুরী।
“রিক মাই বয় কাম।”
ঐশ্বর্য গিয়ে রাজেশের পাশে বসলো।
“রিক তুমি নাকি বিয়ে করেছো?”
ঐশ্বর্য মাত্র পানির গ্লাস মুখে নিয়েছে, রাজেশের কথায় থেমে গেল।
“তোমাকে কে বললো আঙ্কেল?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলল রাজেশ চৌধুরী। কাল রাতে জিসান তাকে সব কিছু বলে দিয়েছে, প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিল রাজেশ চৌধুরী। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো কি হবে ঐশ্বর্যের?যদি রাজেশ না থাকে তাহলে ঐশ্বর্য সবসময়ের জন্য একা হয়ে যাবে।এর থেকে ভালো ওর একজন জীবন সঙ্গী হোক।
“এক্সুয়েলি আঙ্কেল আমি…
“কাম অন মাই বয় বিয়ে করেছো তাতে প্রবলেম টা কোথায়?এনি ওয়ে ছবি দেখাও কুইনের।”
ঐশ্বর্য আমতা আমতা করে ফোন বের করলো, উৎসার বিয়ের সাজে তোলা কয়েকটি ছবি দেখায়।রাজেশ চৌধুরী অধর বাঁকিয়ে হাসলো।
“বিউটিফুল, তোমার জন্য একদম পারফেক্ট।”
ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার ছবির দিকে। মেয়েটা অতিরিক্ত সুন্দর, ছুঁতে মন চায়। ধুর বাবা ভালো লাগে না তার ইচ্ছা করছে এখুনি গিয়ে তুলে নিয়ে আসতে।

“হ্যা সিরাত বলো!”
“উৎসা তুমি কী আর জার্মানি ফিরবে না? কয়দিন পরেই তো তোমার সেমিস্টার।”
পিলে চমকে উঠে উৎসার,সে তো সব কিছু ভাবতে গিয়ে নিজের পড়াশোনার কথা ভুলেই গিয়েছে।একজন পুরুষের জন্য কি সে তার ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেবে? মোটেও না।
“সিরাত আমি তোমাকে কালকেই জানাচ্ছি।”
“ওকে, বাট উৎসা তুমি কিন্তু ফিরে এসোই। তুমি খুফ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, তোমার সামনে অনেক কিছু আছে।’
উৎসা মিহি হাসলো,জীবন যে তাকে কোথায় নিয়ে এসেছে তা শুধু সে-ই জানে।
আচমকা নিকি ভেতরে এলো।

“এই শুন রুদ্র ভাইয়া তোর ফ্লাইটের টিকিট রেডি করে দিয়েছে দু দিন পর ফ্লাইট।”
নিকির কথা কিছুই বুঝতে পারলো না উৎসা।
“মানে?কী বলছো আপু? আমি আবার কোথায় যাচ্ছি?”
নিকি এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো,কিয়ৎক্ষণ ভেবে বলে।
“আরে তুই কী আবার ভাইয়ের কাছে ফিরবি নাকি?তোকে তো পড়তে হবে।তাই ভাইয়া আর আমি ঠিক করেছি তুই জার্মানি ব্যাক করবি।”
উৎসা নিশ্চুপ,সে যদি জার্মানি যায় তাহলে কোনো না কোনো ভাবে অবশ্যই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর সঙ্গে তার দেখা হবেই!
নিকি উৎসার দিকে তাকিয়ে তার ভাবান্তর বোঝার চেষ্টা করলো।যে করেই হোক কোনো ভাবে উৎসা কে আবার জার্মানি পাঠাতেই হবে।

“আমি….
“তুই এদিকে আয়।”
উৎসা কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু নিকি বলতে দেয়নি। বরং সে বলতে শুরু করে।
“দেখ উৎসা যে কারো জন্য তুই কি নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করবি? তোর তো উচিত দেখিয়ে দেওয়া, আমি হেরে যাওয়ার মেয়ে নই।”
উৎসা ভাবনায় পড়ে গেল। নিকি ফের বললো।
“তুই আবার পড়াশোনা কর, এরপর দেখিয়ে দে তোর কারো সাহায্য সা’পো’র্ট লাগবে না।”
উৎসা বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নেয়, সত্যি তো তার পরোয়া কেউ করেনি। তাহলে কেন সে সবার ওদের পরোয়া করবে? উৎসা যাবে জার্মানি,আবারো পড়বে।কে দেখলো না দেখলো তাতে কিছু যায় আসে না।

” থ্যাংক ইউ সো মাচ নিকি।তুই না থাকলে সুইটহার্ট আসতো না!”
নিকি হাসলো, ঐশ্বর্য বলেছে উৎসা কে পাঠিয়ে দিতে।যদি ঐশ্বর্য তাকে নিতে চায় সে কখনও আসবে না। অন্তত একটু বুঝে গেছে উৎসা প্রচন্ড জে’দি একটা মেয়ে। ঐশ্বর্যের ভেতর টা পু’ড়ছে,তার উৎসা কে লাগবেই।
“ভাইয়া দেখো আমি তোমার ভরসায় কিন্তু উৎসা কে পাঠাচ্ছি, তুমি প্লিজ ওর খেয়াল রেখো।”
ঐশ্বর্য মিহি হাসলো।
“আই প্রমিজ এই বারে আর উৎসা কোনো কষ্ট পাবে না।ওর সব দায়িত্ব আমার।”

নিকি খানিকটা স্বস্তি পেলো।সে এটুকু জানে তার ভাইয়ের মনটা খারাপ নয়। জিসানের থেকে যতটুকু বুঝেছে ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে। কিন্তু ঐশ্বর্য নিজের ফিলিংস নিয়ে কনফিউজড।
ঐশ্বর্য ফোন রেখে ডিভানের উপর গিয়ে বসলো।দু আঙ্গুল কপালে ঠেকিয়ে বলে বিড়বিড় করে আওড়াল।
“সুইটহার্ট সুইটহার্ট, আমাকে ম্যাড বানিয়ে তুমি হ্যাপি থাকবে ভেবেছো?নো ওয়ে, অন্তত ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী যত দিন আছে এটা তো হবে না!”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো,ডিভানের মাথা হেলিয়ে ছাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ফের বললো।
“রেড রোজ মিসড ইউ ,সো মাচ প্রীটি গার্ল। একবার এসো গড প্রমিজ জান খেয়ে ফেলব।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,হাসিটা এই বন্ধ চার দেয়ালের ভেতরে অন্য রকম ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে।

আবারও জার্মানি, আশ্চর্যের ব্যাপার যেখান থেকে ওদের গল্প শুরু হয়েছিল আবারো সেখানে এসে থামলো।
উৎসা ফের হোস্টেলে উঠেছে, অনেক কষ্ট করে ম্যানেজ দিয়েছে সবটা।সিরাত উৎসা কে দেখে আনন্দে জাপটে ধরেছে। উৎসার এই বিষয়টা বেশ ভালো লাগলো, অন্তত একটা মেয়ে এখানে নিঃস্বার্থ ভাবে উৎসা কে হেল্প করে গিয়েছে। উৎসা ভেবে নিয়েছে এখন থেকে পড়তে হবে, অন্তত নিজেকে তৈরি করতে হবে। রাতের শেষ প্রহর, এখনো জেগে আছে উৎসা। পর্দা সরিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করলো, অবশ্য জানালা খুললো না। গার্ড আবার চেঁচামেচি করবে।

“রিক মিস বাংলাদেশী জার্মানি ব্যাক করেছে?”
জিসানের চমকে যাওয়া ফেইস দেখে হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো ঐশ্বর্য।
“ইয়া,বাট অবাক হওয়ার কী আছে?”
জিসান কনফিউজড, ঐশ্বর্য কে বুঝতে পারছে না একদম।
“ঠিক আছে ও ফিরতেই পারে,বাট নিকি বললো তুই বলেছিস এখানে….
“ইয়েস, আমি ছাড়া কে বলবে? অভ্যিয়েসলি আমি বলেছি।”
ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে কিচেন থেকে কফি কাপ নিয়ে এলো। জিসান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, প্রচন্ড রাগ হলো ঐশ্বর্যের উপর।

“রিক তুই কী বলবি ঠিক কী চাইছিস?”
ঐশ্বর্য স্বভাব সুলভ হাসলো,সে তো এক রহস্য তাকে বোঝা এত সহজ?
“লিসেন জিসান রেড রোজ আমার ওয়াইফ। অবশ্যই তার আমার সঙ্গে থাকা উচিত, এখন তাকে চলে বলে কৌশলে আনতে হোক বা….
“বা কী?”
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাস করে জিসান। ঐশ্বর্য কফি কাপে চুমুক দিয়ে বলে।
“সামথিং সামথিং।”

কলেজ শেষে সিরাতের সঙ্গে কলেজ থেকে কিছুটা দূরে ক্যাফেতে গিয়ে বসলো উৎসা।
আজকে অনেক গুলো পড়া কালেক্ট করেছে উৎসা। এখনো কিছু বাকি আছে,উৎসা সে গুলো লিখছে বসে। এর মধ্যে সিরাত হাত ধুতে ওয়াশ রুমে গেল, তৎক্ষণাৎ উৎসা সম্পূর্ণ দৃষ্টি লেখাতে দিয়েছে।
ব্ল্যাক মার্সিডিজ কার এসে ক্যাফের সামনে থামলো। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য আর জিসান। অফ হোয়াইট শার্ট সাথে ব্ল্যাক প্যান্ট, হাতে ব্র্যান্ডের ওয়াচ,চোখে সানগ্লাস।বড়লোকি ভাব সাব, কিন্তু বাইরের দিকে দৃষ্টি নেই উৎসার।কে কী করছে কিছুই দেখছে না উৎসা।

ঐশ্বর্য ধীর গতিতে ক্যাফেতে ঢুকে, উৎসা কে দেখে চমকালো।পরণে মেরুর রঙের ট্রি শার্ট,তার উপর জ্যাকেট,লেগিংস।চুল গুলো লম্বা হওয়ার দরুন উঁচু করে বাঁধা।এক মনে কলম চালাচ্ছে সে। ঐশ্বর্য জিসান কে ইশারা করে, জিসান একে একে সবাই কে বের করে দিল।একটা ছেলে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু জিসান চুপ করিয়ে দেয়। পুরো ক্যাফে খালি করিয়ে দেয় ঐশ্বর্য,এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে উৎসার সামনাসামনি দাঁড়ালো।উৎসা লেখা শেষ হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,যেই উপরে চোখ তুলে তাকায় বড়সড় ধাক্কা খেলো। নিজের চোখের সামনে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী কে দেখে পিলে চমকে উঠে তার। ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে ভুবন ভোলানো হাসি হাসলো,উৎসা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে জিসান ছাড়া কেউ নেই।

“আ,, আপনি?”
ঐশ্বর্য উৎসার দিকে পা বাড়াতেই উৎসা পিছনে যেতে নেয়, আফসোস চেয়ারে পা আটকে পড়তে গেল। কিন্তু ঐশ্বর্য তার রেড রোজের হাত টেনে ধরে।
“সুইটহার্ট বি কেয়ার ফুল।”
উৎসা রিতিমত কাঁপছে।
“ছাড়ুন!”
ঐশ্বর্য ছেড়ে দিল উৎসার হাত।
“আপনি এখানে কেন সিরাত কোথায়?”
ঐশ্বর্য চেয়ার টেনে উল্টো করে বসলো।
“উফ্ সুইটহার্ট দিন দিন কিউট হচ্ছো।”
উৎসা এই মূহুর্তে ঐশ্বর্য কে একদম আশা করেনি, উল্টো ভয় লাগছে।
“দেখুন আমি কিন্তু…সিরাত কোথায় বলুন?”
ঐশ্বর্য সুযোগের সদ্ব্যবহার ভালো করেই করতে পারে। জিসান কে ইশারা করতেই সে একটা ফাইল নিয়ে এগিয়ে এলো। একটা সাদা কাগজ সামনে দেয়, ঐশ্বর্য সেটা উৎসা কে দেখিয়ে বলে।

“সুইটি এটাতে সাইন করে দাও।”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“মানে? আমি কেন সাইন করতে যাবো?”
ঐশ্বর্য হাত দিয়ে সিল্কি চুল গুলো ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দেয়।
“সিরাত চাই তো? তাহলে গুড গার্ল এর মতো সাইন করে দাও।”
উৎসা হাঁসফাঁস করছে,এই ঐশ্বর্য চাইছে কী?
“কেন এমন করছেন আপনি? প্লিজ চলে যান।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট উল্টে তাকালো।
“বেইবি আমি চলে যাবো বাট সাইনটা!লেইট হচ্ছে তো।”

ঐশ্বর্য ঘড়ি দেখলো, উৎসা তখনও নিশ্চুপ। ঐশ্বর্যের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল, আচমকা উৎসার গাল চেপে ধরে বলে।
“সাইন করো না রেড রোজ, তাহলে কিন্তু আমি সিরাত ছেড়ে দেব।ইউ নো অ্যাম নট গুড পার্সন ইয়ার।যদি কথা না শুনো সিরাত টা টা বাই বাই।”
ঐশ্বর্যের কথায় কান্না পাচ্ছে উৎসার,সে দ্রুত সাইন করে দিলো। ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো, ইশ্ ইনোসেন্ট রেড রোজ তার।

রেড রোজ পর্ব ৩৪

সে তো জানেই না কী করলো,কাল সকাল থেকে শুরু হবে তার খেলা। রেড রোজ তার কাছ থেকে চাইলেও যেতে পারবে না।দ্যা গেইম ইজ স্ট্যার্ট নাউ।

রেড রোজ পর্ব ৩৬