তোমার জন্য সব পর্ব ২৬
রেহানা পুতুল
হঠাৎ তার হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ এলো। সে মেসেজটি পড়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো। আবার সেই উটকো ঝামেলা? তার দৃষ্টিভ্রম হলো নাকি। সে মেসেজটি পুনরায় পড়লো বোঝার জন্য।
“স্যার খেয়াকে নিয়ে আসা হয়েছে দেশে। সে এখন ভালোর দিকে আছে। আপনি কি খেয়াকে বিয়ে করবেন?
এটা ক্লিয়ার করে জানান। আমার স্বশুর বলেছে আপনি খেয়াকে বিয়ে করলে তাদের বাড়ির একটা ফ্ল্যাট আপনার নামে লিখে দিবে।”
মাহমুদ বুঝলো এই মেসেজ খেয়ার ভাবি দিয়েছে। এবং মনে মনে আওড়ালো,তারমানে এই মেয়ের মাথা থেকে এখনো আমার ভূত যায়নি। মাহমুদ সঙ্গে সঙ্গেই সেই মেসেজের রিপ্লাই দিলো।
“সরি। আমি আমার মায়ের পছন্দের এক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছি।বউ এখন আমার পাশেই আছে। খেয়ার জন্য শুভকামনা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেসেজ সেন্ড হয়ে গেলো। মাহমুদ খেয়াল করলো তার মেসেজের আর কোন রিপ্লাই এলোনা।
সকালে কলির আগেই মাহমুদ ঘুম থেকে জেগে গেলো। মাহমুদ কলির দিকে কাত হয়ে ঝুঁকলো। কপালে,ঘাড়ে হাত রাখলো। দেখলো কলির গায়ে এখন জ্বর নেই। কলি উঁহু বলে কুঁকিয়ে উঠলো। মাহমুদ হেসে বলল,
“কপালে হাত রাখলেও ব্যথা পান আপনি? তো হাত কোথায় রাখবো বলে দেন?”
কলি নিরুত্তর। মাহমুদ কলির চোখের সামনে সেই মেসেজটি ওপেন করে ধরলো। কলি পিটপিট করে চেয়ে মেসেজ দুটো পড়লো। পরক্ষণেই চোখ বড় করে ফেলল। মোবাইলটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। ভালো করে পড়লো। চোখে মুখে কাঠিন্যতা ভর করলো। অভিমানে মুখ গোঁজ করে ফেলল। মাহমুদ লুকানো চোখে কলির অভিব্যক্তি পরখ করে দেখলো। এবং মনে মনে বলল,
“এইতো কাজ হচ্ছে। তোমার ভিতরে আমাকে নিয়ে এই জেলাসিভাব হোক এটাই ত আমি চাই। তুমি কবে থেকে যেচে আমাকে একটু ভালোবাসা বিলাবে? নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করবে? ”
মাহমুদ কলির মুখকে নিজের বুকের সান্নিধ্যে নিয়ে এলো। দু’ গালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যথা আছে এখনো? ব্যথা না কমলে মেডিসিন চেঞ্জ করতে হবে।”
কলি সংকোচপূর্ণ নিচু স্বরে বলল,
“এ কথা আর জিজ্ঞেস করবেন না আমাকে।”
“এটা স্বামী হিসেবে আমার কর্তব্য কলি। কর্তব্য পালনে বাধা দিচ্ছেন কেন?”
কলি শুয়ে রইলো। মুখে আর কিছুই বলল না। মাহমুদ বলল,
“উঠতে পারবেন? আমি ধরবো? ওয়াশরুমে যাবেন?”
“লাগবে না। আপনি উঠে যান।”
“কেন?আমার ওমে সুখ পাচ্ছেন না কলি?”
কলি চোখ বুঁজে ফেলল লজ্জায়। মাহমুদ উঠে গিয়ে ফ্রেস হলো।রুমে এসে দেখে তার মোবাইলে মেসেজ এলো।
“এই ওয়াশরুমে স্যাভলন নেই। ব্যাথা করছে।”
কলি ওপাশ ফিরে আছে। মাহমুদ আড়চোখে কলির পিঠের দিকে চাইলো। মুচকি হাসলো। কমন ওয়াশরুম থেকে স্যাভলনের বোতল এনে তাদের ওয়াশরুমে রাখলো। কলির গালের উপর ঝুঁকে বলল,
“স্যাভলন এনে রেখেছি ফুলকলি। হট ওয়াটারের সঙ্গে বেশি করে ইউজ করবেন। শেষ হলে আবার আনবো। তবুও ব্যথা দ্রুত দূর হওয়া চাই।”
কলি ঠোঁট কামড়ে ধরলো নিজের। মাহমুদ নাস্তা খেয়ে এসে রুমে প্যান্ট শার্ট পরে নিলো। রেডি হয়ে কলিকে বলল,
“থাকেন। নাস্তা খেয়ে নিবেন। সন্ধ্যায় এসে শ্বশুর বাড়ি যাবো।”
মাহমুদ চলে গেলে কলি আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। বেশ সময় নিয়ে স্যাভলন ইউজ করলো।তারপরে ফ্রেস হলো। নিজের হাতে বিছানা পরিপাটি করে গোছালো। মাহমুদের ভেজা তাওয়েলটা নিয়ে ব্যালকনিতে রোদে দিলো। ক্ষুধাটা পেটের ভিতর চনমনিয়ে উঠলো। বের হতে যাবে,অমনি বাতাসী নাস্তার ট্রে নিয়ে রুমে এলো।
“ভাবিসাব। নাস্তা খেয়ে লন। রঙ চা আইনা দিতাছি।”
“বাতাসী, মা,বাবা,নানু, আপু সবাই নাস্তা খেয়েছে?”
“হ খাইছে সবাই। কব্বেই।”
“তুমি খেয়েছো নাস্তা?”
“ওরেহ! আমি খাই সবার আগে। রাজত্ব ত আমার হাতে ভাবি। সবকিছু বানাই আর খাই। ”
“হুম। আচ্ছা চা মগ ভরে নিয়ে এসো।”
কলি মাহমুদের টেবিলে বসে নাস্তা খেয়ে নিলো। পরে বাতাসী চা বিস্কুট নিয়ে দিলো।নাস্তা খাওয়ার পর কলি বারান্দায় গিয়ে রোদে বসলো। দরজার টোকা মেয়ে আনুশকা ও তার নানু কলির রুমে চলে গেলো। অনেকক্ষন তারা গল্পগুজব করলো। কলি আনুশকার বর ও বরের পরিবারের কথা জানতে চাইলো।
আনুশকা বলল,
“ভাবি জাহিদদের নিজের বাড়ি বংশাল। তার ছোট দুবোন। বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা মা আছে। বাসা ভাড়া দিতে হয় না তাদের। উপরন্তু পায়। আর জাহিদ ত ক্যাশ পাঠাচ্ছেই। সে কানাড়ায় থাকে। ইঞ্জিনিয়ার। ছয়মাস হয় দেশ থেকে গেলো। রোজই ভিড়িও ফোনে কথা হয়। সব মিলিয়ে বিন্দাস লাইফ। আমি চাইলেই কোন জব করতে পারি। কিন্তু প্রয়োজন নেই। তারাও চায়না। আরেহ ভাবি শোন,আমার ভাই মানে তোমার জামাই ত অনেক ভদ্র আছে। আমারটা তো লুইচ্চা নাম্বার গ্রেট ওয়ান। তাদের বাসায় আমার ওয়াশরুমে বাথটাব আছে। তো শাওয়ারের সময় সেই বাথটাবে সব খুলে শুয়ে তাকে ভিড়িও কলে দেখাতে হয়। বুঝো এবার।”
কলি হতবুদ্ধির মতো হা হয়ে গোলগোল চোখে আনুশকার দিকে চেয়ে রইলো। আনুশকার নানু কলির দিকে চেয়ে বলল,
“অমন চাইয়া থাইকা লাভ নাই বইন। ব্যাডার মন যুগায়া চলতে হয়। নইলে হে অন্য মাইয়ার শরীর দেখতে চাইবো। ব্যাডার জাতটাই অমন। স্বামী কিছু দেখতে চাইলে বাধা দিও না। স্বামীরা এসবেই দিলে শান্তি পায়!”
কলি অবাক হয়ে গেলো। কি বলে এসব। এ দেখি সব খুল্লাম খুল্লাম কাজ কারবার। তারা চলে গেলো। দুপুরে কলি গোসল করে একরকম রেডি হয়ে নিলো। কখন নিজের প্রিয়জনদের মুখখানা দেখবে। সেই প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছে। মাহমুদ কলিকে ফোন দিয়ে দুপুরে খেয়েছে কিনা খবর নিলো। মাহফুজাও কলির শারিরীক খোঁজ খবর নিলো মাথায় মাতৃস্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে।
মাহমুদ বিকেলে বাসায় এলো। সন্ধ্যায় কলি ও ছোটবোনকে নিয়ে স্বশুরের বাসায় গেলো। সেখানে সবাই মিলে আমোদ ফূর্তি করলো। রাতে জুলি ও শাশুড়ীর জোরাজোরিতে মাহমুদ ও আনুশকা রয়ে গেলো। বিয়ের পর ছেলেদের স্বশুরের বাসায় একরাত নাকি থাকতে হয়। আনুশকা জুলির রুমে ঘুমালো। রাতে বিছানায় শুয়ে মাহমুদ কলিকে বলল,
“আপনার বেডরুম সুন্দর আছে। কিন্তু আপনার বেডে আমি কখনো ঘুমাবো। এটা অকল্পনীয় ছিলো।”
কলি বলল,
“সেইম টু মি স্যার। মানুষ যা কল্পনা করে না তাই বাস্তবে প্রতিফলিত হয়।”
“আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ভয় হয়? ব্যথা পুরোপুরি গিয়েছে?”
“হাউ ফানি! যে নিজেই আমাকে ভয়ে তটস্থ করে রাখতো,সে আমাকে ভয় পায়?”
“ব্যথা গিয়েছে?”
কলি চোখ কটমট করে চাইলো মাহমুদের দিকে। মাহমুদ চুপ হয়ে গেলো। কলির পেটের উপরে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে মাহমুদ চলে গেলো নাস্তা খেয়ে নিজেদের বাসায়। বাসা থেকে ভার্সিটি যেতে হবে। তাই।
কলি আজ ক্লাসে গেলো। সে আগের মতই বাসে বা সি এন জিতে যাতায়াত করে। মাহমুদের বাইকে আসে না। যেন কেউ না বুঝতে পারে। খেয়াও ক্লাসে আজই প্রথম আসলো। কলি ও খেয়া কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না। ক্লাসের দু’চারজন স্টুডেন্ট কলির দিকে কেমন সন্দেহতীত চোখে তাকালো। মাহমুদ ক্লাসে গেলে কথা প্রসঙ্গে একজন বলল,
“স্যার কলির মনে হয় বিয়ে হয়েছে। আমাদের মিষ্টি খাওয়ানোর ভয়ে অস্বীকার করছে।”
মাহমুদ বলল,
“কলি সত্যিই বলছে উনারা?”
কলি গম্ভীর সুরে বলল,
“স্যার আমার কাবিন হয়েছে। এম.এ কমপ্লিট হলেই অনুষ্ঠান করে তাদের বাসায় তুলে নিবে।”
“ওহ তাহলে ত উনাদের ধারণা সত্যি। আচ্ছা আপনারা কিভাবে গেইস করলেন?”
“স্যার কলির দু-হাত ভর্তি মেহেদি। চেহারাতেও জেল্লা ফিরে এসেছে।”
“হুম বুঝলাম। কলি বর নিয়ে পড়ে থাকবেন না। মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিবেন উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে।”
আদেশপূর্ণ কন্ঠে শাসনের সুরে বলল মাহমুদ।
ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে গেলো। কলি মাহমুদের অফিস রুমে গেলো মাহমুদ আছে না বেরিয়ে গেলো দেখার জন্য। তাদের মধ্যে সমঝোতার একটি চুক্তি হয়েছে। ভার্সিটিতে তারা দুজন আগের মতই টিচার স্টুডেন্ট হয়ে আচরণ করবে। যেন কেউই এতটুকু ডাউট না করতে পারে।
রুমের দরজা চাপানো ভিতর থেকে। কলি চাপানো দরজা ঠেলেই ভিতরে প্রবেশ করলো। তাতে সে যা দেখলো, তক্ষুনি তার চোখদুটো কোটর হতে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সে দেখলো খেয়া মাহমুদকে চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে দু-হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে কি কি যেন বলছে। মাহমুদ হাত দিয়ে খেয়াকে ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছে।
অমনি কলি গিয়ে খেয়ার গালে কষে চড় বসিয়ে দিলো।
তোমার জন্য সব পর্ব ২৫
হোয়াট! দুই পয়সার সস্তা মেয়ে আমার গায়ে হাত তুলিস? তোর এত বড় আস্পর্ধা? বলেই উত্তেজিত হয়ে খেয়াও ফের কলির গালে চড় মারতে হাত উঠালো।
নিমিষেই মাহমুদ খেয়ার হাত ধরে ফেলল। রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,