প্রণয়ের সুর পর্ব ৪১
মহুয়া আমরিন বিন্দু
গাড়ি ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে তবুও জেরিনের কাছে মনে হচ্ছে গাড়িতি পিঁপড়ার গতিতে চলছে!শহর থেকে দুই ঘন্টার দুরত্বে রিসোর্ট টা প্রকৃতির নানান সাজে সজ্জিত। গাড়ি এসে থামলো সেখানে,জেরিন এক প্রকার লাফিয়ে গাড়ি থেকে নামলো রিসোর্টে আগে এসেছে সাব্বির।নিখিলের সাথে আসবে নেহা, নিখিল তার বউকে একা কিছুতেই আসতে দিবে না।সাহিলের আসার কথা থাকলেও সে বলেছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে আসবে।বড়রা আসবে দুপুরের পর। জেরিন দিক বেদিক খুঁজে বেড়ালো সাব্বির কে রৌফ কে সামনে পেয়েই জিজ্ঞেস করলো
–,,সাব্বির কোথায়?
রৌফ হাতের ইশারা করতেই একটা কটেজে দিক দৌড় লাগালো জেরিন,পেছনে গাড়িতে হেলান দিয়ে হেসে চলেছে মিহির আর বৃষ্টি। মাঝখানে একবার হাই ফাই দিয়েছে নিজেদের মধ্যে রৌফ এগিয়ে এসে বললো–,,কি হলো বুঝলাম না তোমরা হাসছো আর আপু তো ভাইয়ার সাথে যু’দ্ধ ঘোষণা করেছে তাহলে এখন এমন ভাবে খুঁজছে কেনো?
মিহির বলে উঠলো–,,বুঝলি রৌফ তোর ভাই আর বোন এবার তোর ভাই আর ভাবি হতে যাচ্ছে!মানে ওদের মাঝে প্রেম টেম হবে এবার।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রৌফ বুঝদারের মতো মাথা নাড়লো,যতই হোক একই বংশের কিনা!
জেরিন দরজা ভেজানো ঘরটার দিকে ছুটে গিয়ে দরজা টা ধাক্কা দিয়ে খুললো,সাব্বির উল্টো দিক হয়ে দাড়ানো কানে মোবাইল কারো সাথে কথা বলছে।জেরিন এক ছুটে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
আকষ্মিক ঘটনায় ভরকে গেলো সাব্বির ফোনে কথা বলা বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করলো কি হয়েছে।জেরিন এসেছে বুঝেই কিছু বললো না চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো নিজেও,সাব্বির আজকে নিজে থেকে কিছু বলবে না, আর না কিছু করবে জেরিন যদি আদো তার জন্য কিছু অনুভব করে তো সে নিজ মুখে বলুক।কিন্তু মেয়েটা এভাবে ছুটে আসলো কেনো?কি হয়েছে ওর!
জেরিন নিজ থেকে সামনে চলে আসলো সাব্বিরের হাতে মুখে হাত বুলিয়ে দেখলো কোথাও কোনো আঘা’ত লেগেছে কিনা!জেরিনের অশ্রু সিক্ত ভেজা চোখ দেখলো সাব্বির,মেয়েটা ভীষণ রকম ভয় পেয়েছে।
জেরিন কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,, তোর কোথাও লাগেনি তো?রৌফ বললো তোর নাকি এক্সি”ডেন্ট হয়েছে!
সাব্বির বুঝে গেলো ভালো করেই এসব কিছু তার ভাই বোনদেরই চাল কিন্তু বোকা জেরিন টা বুঝলোই না!এতোটা উতলা কেনো হলো মেয়েটা?তবে কি সত্যি জেরিন ভালোবাসে সাব্বির কে?এক অজানা ভালোলাগায় পুলকিত হলো সাব্বিরের মন।
নিজেকে যথাসম্ভব কঠোর রেখে বললো–,,আমার যা খুশি হোক,ম’রি বাঁচি তাতে তোর কি?আমার কোনো কিছুতেই তো তোর কিছু যায় আসে না।আমি ম’রে গেলে তুই বেঁচে যাবি,মুক্তি পেয়ে যাবি শান্তি পাবি!
জেরিন চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো–,,সাব্বির!
সাব্বির বলে উঠলো–,,চেঁচাচ্ছিস কেনো?সত্যি কথা শুনতে পারছিস না কেনো।
জেরিন ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো।কোনো কথা না বলে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে মেয়েটি।জেরিন ছুটে চলে যেতে চাইলো সাব্বির এভাবে বলতে পারলো?সে তার মৃ’ত্যু কামনা করে!
সাব্বির জেরিনের হাত ধরে ফেললো পেছন থেকে জেরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঁদছে। জেরিন কে টেনে নিলো সাব্বির শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই জেরিন আবার কেঁদে উঠলো।
সাব্বির জড়িয়ে ধরে রেখেই মাথায় থুঁতনি ঠেকিয়ে বললো–,,কি ব্যপার মহারানী আমার জন্য হঠাৎ এতো দরদ, এতোটা অস্থি’রতা প্রেমে টেমে পড়ে গেছো নাকি?
জেরিনের কান্না বন্ধ হলেও কোনো কথা বললো না,সাব্বিরের বুকে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে রইলো।সাব্বিরের কিছু হলে সে এলোমেলো হয়ে যাবে, তার সুন্দর গোছানো জীবনের কর্ণ’ধার তো সাব্বির নিজেই জেরিন যে বড্ড অগোছালো সাব্বির ছাড়া তাকে গুছানোর মতো কেউ নেই।জেরিনের কেমন দ’ম বন্ধ লাগে এই ছেলেটাকে ছাড়া!ছেলেটার কিছু হলে তার কি হবে?কিভাবে থাকবে ভেবেই নিজের ভিতরটা ধুম’রে মুচ’ড়ে উঠে জেরিনের।
সাব্বির নিঃশব্দে হাসলো জেরিন কে রাগাতে বললো–,,ওইদিন তো বললি আমার মতো মানুষ কে চাই না তোর, আমাকে নাকি ভালো লাগে না আর, আমি নাকি বেশি জ্বা’লাই তোকে!এখন আমাকে জড়িয়ে আছিস কেনো ছাড়।তুই তো বললি যাতে বুকের মধ্যে জড়িয়ে অন্য কাউকে রাখি তুই থাকতে চাস না এখানে,তবে কেনো এসেছিস জেরিন?কিসের টানে কোন অধিকারে!
জেরিন জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে, কি বলবে বুঝতে পারছে না।দু রাত ধরে এক ফোঁটা ও ঘুমাতে পারেনি,এক মুহুর্তের জন্য ও শান্তিতে ছিলো না, সাব্বির তার সবচেয়ে প্রিয় ব’দ অভ্যাস!যেটা সে কিছুতেই ছাড়তে চায় না,সাব্বির কে অভ্যস্ত হতে না করে সে নিজেই জড়িয়ে গেছে সাব্বিরের সাথে।এখন যে পিছু ফেরার কোনো পথ নেই।
সাব্বির বলে উঠলো–,,ঘসেটিবেগম! ডু ইউ লাভ মি?
জেরিন এক হাতে নিজের শাড়ি খামচে ধরে দাড়িয়ে, আজ উত্তর দেওয়া দরকার সে জানে তবুও কণ্ঠনালি ভেদ করে কোনো শব্দ বের হতে চাচ্ছে না।
সাব্বির অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত কথাটা শোনার কিন্তু জেরিন চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে।কিছু বলতে পারছে না।বেশ কিছু সময় পর সাব্বির চলে যেতে নিলেই জেরিন চেপে ধরে সাব্বিরের শার্ট, সাব্বির পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় জেরিনের দিকে মেয়েটার চোখের পাতা অনবরত কাঁপছে, ঠোঁট বার বার ভেজাচ্ছে। এদিক সেদিন দেখছে,সাব্বিরের ঠোঁটের কোনো হাসি।জেরিন সাব্বিরের দু গালে হাত রেখে একটানে তার মাথাটা নিজের মুখ বরাবর আনলো কপালে গভীর চুম্বন আঁকলো।গলা জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো–,,ভালোবাসি মির’জাফর!
সাব্বির দু হাতে আগলে নিলো তাকে।কানের পাশটায় চুমু খেয়ে বলে উঠলো–,,ভালোবাসি!
জেরিন কে সাব্বির কোলে তুলে নিতেই জেরিন তার গলা জড়িয়ে ধরে আবার মুখ গুঁজলো ঘাড়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো–,,দুই দিন ধরে ঘুমাতে পারিনি আমি তুই বড্ড পাষা’ণ সাব্বির,আমাকে দিয়ে ভালোবাসি বলানোর জন্য দূরে গিয়ে বসে রইলি?তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমার চলে না।খাওয়া ঘুম থেকে শুরু করে সব কিছুতে আমার তোকে চাই।ভালোবাসি মুখেই বলতে হলো আমাকে, কেনো তুই কি বাচ্চা বুঝে নিতে পারিসনি তোর ঘসেটিবেগমের শুধু তোকে চাই।তার সব কিছু তোকে ঘিরে,তার সকল অনুভূতি তে মিশে তুই আছিস।তোর বুকে মাথা রাখার অধিকার শুধু তার।শুধু মুখের কথা শুনে তুই আমাকে ছেড়ে যেতে চাইবি!একটু ঘুমিয়ে শক্তি করে নেই পরে এটা নিয়ে তোর সাথে আমি আবার ঝ’গড়া করবো বলে দিলাম!
সাব্বির হেসে উঠলো বললো–,,কিছু কিছু জিনিস বুঝে নিয়েও না বুঝার ভান ধরতে হয় জানিস না।তোর মুখ থেকে শুনতে পাওয়ার মতো শান্তি আর কি আছে বলতো?
–,,ঢং করবি না একদম!
–,,বউ কার জন্য সাজা হয়েছে মেডাম?
জেরিন তো বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সে শাড়ি পড়েছে।
–,,আমার জামাইয়ের জন্য, মোটেও তোর জন্য না!
সাব্বির হাসলো কন্ঠে আদর মিশিয়ে বললো–,,শুনছিস?ঘসেটিবেগম!
–,,হুম!
–,,আমার এখনো বাসর করা হয়নি জানিস?
–,,হুম।এখন কি তোর বউকে রাজি করাতে হবে?
–,,না!
–,, তাহলে বলছিস কেনো?
–,,তুই রাজি হ,আমি বাসর করবো, এতো সুন্দর লাল টুকটুক বউ সেজে এসেছিস আমার ভীষণ রকম আদর আদর পাচ্ছে!
জেরিন মুখ উঠিয়ে সাব্বির কে চোখ রাঙানি দিলো।সাব্বির জেরিনের মুখে ফু দিয়ে বললো–,,কি? এমন ভাবে তাকাস না বউ মনের ভিতর কেমন কেমন জানি করে।
জেরিন সাব্বিরের বুকে একটা মে’রে বললো–,,ধুর!
খাটের উপর জেরিন কে নামাতেই সাব্বির কে টেনে বসালো জেরিন পরে সাব্বিরের কোলে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,ঘুমাবো একদম নড়চড় করবি না বুঝলি?
–,,হুম রাতের ঘুমটা সহ ঘুমিয়ে নে,আজকে রাতে তোকে ছাড়বো না আমি!
–,,এখন ঘুমাতে দে।
–,,দিবো, তবে আগে কথা দে রাতে আমার যা চাই তাই দিবি!
–,,তুই নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস সাব্বির!
সাব্বির হেসে বললো–,,ঘুমা!
এই মেয়ে তুমি আমাকে ইগনোর করছো কেনো?
কতো গুলো ফোন করেছি দেখতে পাওনি নাকি?
সোহানা শান্ত ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো–,,আমি আপনার অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী স্যার কাজের বাহিরে কোনো কথা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।আর রইলো ইগনোর করার কথা,সেটা কখন করলাম?আপনি আপনার মতো আমি আমার মতো।অফিস টাইমে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়ার দেই এর বাহিরে আমার থেকে কিছু আশা করবেন না!
–,,আমাকে বিয়ে করবে সোহানা?
সোহানা চমকালো লোকটা কি পাগ’ল কখন কি বলে ঠিক নেই।বিয়ে!মাথা খারা’প হলো নাকি?
–,, কি সব বলছেন?
–,,যা শুনলে তাই,আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই!
–,,দয়া দেখাচ্ছেন?ভাবছেন বাবা মা নেই এতিম মেয়েটাকে বিয়ে করে সাহায্য করি,এর আগেও এরকম অনেকে করতে চেয়েছে তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু মোটেও ভালো ছিলো না, বেশির ভাগ মানুষই আমার সৌন্দর্য ভো’গ করতে চাইতো, এর থেকে বেশি কিছু না।
–,,আমি তোমাকে ভালোবাসি মেয়ে!সাহিল কাউকে দয়া দেখানোর হলে এতোটা পরিশ্রম করতো না,বার বার রিজেক্ট হওয়ার পর ও আসতাম না,আর রইলো ভো’গ করার কথা তোমাকে ভো’গ করার হলে বিয়ে করার দরকার কেনো পড়বে? আমি চাইলে যখন যা খুশি করতে পারি!ভালোবাসার উপর জোর খাটে না তাই তোমাকে সময় দিয়েছি আরো দিবো,চাইলে বিয়ের পরও সময় নিতে পারো, কিন্তু কান খুলে শুনে রাখো বিয়ে তোমাকে আমাকেই করতে হবে।সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে চামচ ব্যবহার করতে আমিও জানি!
–,,অবুঝের মতো কথা বলছেন কেনো স্যার?আমি আর আপনি!এটা কিভাবে সম্ভব আমার মতো মেয়েকে আপনি কেনো ভালোবাসতে যাবেন?
–,,একদম চুপ!কিছু বলছি না দেখে বেশ কথা ফুটেছে না মুখে?বেশি কথা বললে এই ভরা রাস্তায় টুপ করে চুমু খেয়ে ফেলবো আমি তখন দো’ষ দিতে পারবে না!আটাশ বছর ধরে সিঙ্গেল এমনি এমনি থাকি নি পুরোপুরি বউয়ের হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছি।ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে যাও না হয় আগে বাসর করবো পরে বিয়ে!
সোহানা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কি নির্ল’জ্জের মতো কথা বার্তা!এ কোন পাগ’লের পাল্লায় পড়লো শেষ মেষ!
–,,দেখুন,,!
সাহিল দুকদম এগিয়ে এসে বললো–,,বিয়ে না হওয়ার আগেই দেখাতে চাচ্ছো?
–,,নাউজুবিল্লাহ!
–,,মাশাআল্লাহ!
সোহানা অবাক হয়ে বললো–,,,এখানে মাশাআল্লাহ বলার কি আছে?
সাহিল এগিয়ে গিয়ে বললো –,,তোমাকে বলিনি আমার শালিকা কে বলেছি,ওইতো আমার বোনটা তৈরি হয়ে চলে এসেছে।
রাহা এগিয়ে এসে বললো–,,কেমন আছো ভাইয়া?
–,,অনেক ভালো তবে চলো যাওয়া যাক?
সোহানা অবাক হয়ে বললো–,,কোথায়?
রাহা বলে উঠলো–,,তুই জানিস না ভাইয়া তো আমাদের দুজন কে নিতে এসেছে ঘুরতে যাচ্ছি!
–,,তুই উনাকে আগে থেকে চিনিস?
–,,হুম!তুই বলিস নি তো কি হয়েছে ভাইয়া তো সব বলেছে আমাকে, আর আমার কিন্তু দুলাভাই অনেক পছন্দ হয়েছে।তোদের বিয়ে তো আর দশদিন পর!
সোহানা হা হয়ে তাকিয়ে, কিসের মধ্যে কি কিসের বিয়ে!
সাহিল বললো–,,রাহা যাও গাড়িতে বসো তোমার আপু কে আমি নিয়ে আসছি!
সোহানা রাগে কটমট করে তাকিয়ে বললো–,,কোন ধরনের অস’ভ্যতা এগুলো আমার বোন কে কেনো মিথ্যা বললেন আপনি?কে আপনাকে বিয়ে করবে।আপনার সাথে কোথাও যাবো না আমি।
সাহিল সোহানার হাত টেনে ধরে বললো–,,চুমু খাবে নাকি যাবে?
সাহিল মুখ এগিয়ে আনতেই ঘাব’ড়ে গেলো সোহানা,চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো–,,যাবো!কিন্তু কাজটা মোটেও ঠিক করছেন না আপনি।
–,,ঠিক বেঠিক না ভেবে, আমি ভালোবেসে যাবো এভাবে!পারলো আটকে দেখাও।
সোহানা বিরক্তি নিয়ে গাড়িতে উঠলো।এ লোকটা কেনো যে তার জীবনে আসলো,ভালোই তো ছিলো সব কিছু বিয়ে করতে চায় না সোহানা তাকে ছাড়া তার বোনটার কেউ নেই।মেয়েটা একা একা কিভাবে থাকবে?ওকে ছাড়া থেকেছে কোনো দিন?এতোটা স্বার্থ”পর হতে পারবে না সোহানা!দরকার পড়লে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাবে তবুও বিয়ে করবে না।
নেহা কে কোলে করে নিয়ে ঘুরছে নিখিল মাটিতে পা ফেলতে দিচ্ছে না একদম।নেহা বিরক্ত হচ্ছে এখনই এরকম করছে পরবর্তী তে কি করবে এই লোক?
রিসোর্টে সবাই এসেছে কিছু ক্ষন হলো, সাহিলের গাড়ি এসে থামলো তখনই।
সোহানা, রাহা নামলো গাড়ি থেকে সোহানা সবাইকে দেখে অস্ব”স্তি তে পড়লো না জানি কি ভাববে মানুষ গুলো,ছেঁ’চড়া ভাবলেও ভুল হবে না।মানুষ টা এমন কেনো?নিজের ফ্যামিলির মাঝখানে নিয়ে আসার কি মানে?
সোহানা ধীর কন্ঠে বললো–,,স্যার আপনার পরিবারের সবাই কি ভাববে বলুন তো?একজন অপরিচিত মানুষ কে ধরে নিয়ে আসলেন আপনি। যাকে তাকে সব জায়গায় মানায় না!
–,,যাকে তাকে মানে কি? হ্যাঁ তোমার কি ভালো থাকতে ভালো লাগে না, আমাকে রাগিয়ে দিতে এতো টা ভালো লাগে তোমার?একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, তুমি আমার হবু স্ত্রী তাই এখানে থাকার তোমার সম্পুর্ন অধিকার আছে যতোটা আছে আমার!যদি তাও কোনো অসুবিধে থাকে তো চলো কাজি অফিস বিয়ে করে আসি এক্ষুনি!
সোহানা চুপসে গেলো,রাহা ইতিমধ্যে সবার সাথে কথা বলছে, সাহিল তাকে আগেই একবার বাড়ির সবার সথে পরিচয় করিয়েছে,সাহিল ভালো করেই জানে সোহানা বোনের বাহানা দিবে তাই ঠিক বুঝে শুনে শালিকা কে আগে নিজের দলে এনেছে এবার কোথায় যায় দেখবে!
সোহানা কে দেখে বাড়ির সবাই ভীষণ খুশি, সাহিল সরাসরি বলে দিয়েছে সে মিহির আর নিখিলের রিসিপশনের দিন বিয়ে করবে তাও সোহানা কে।না হয় সব সময়ের মতো বিয়ে করা বাদ!
কথা শুনে সবাই হেসে ছিলো, বংশের বাকি গুলাও এক বিয়ে একটাও স্বাভাবিক না, হুট করে বিয়ে করে ফেললো। ছেলে মেয়ে গুলা যা হলো না একদম বাঁধিয়ে রাখার মতো!
সোহানা কথা কম বলছে মেয়েটা এমনিতেই শান্ত কিন্তু রাহা চঞ্চল। সবার সাথে ভাব হলেও রৌফের সাথে হলো না ঘটনা সূত্রে জানা গেলো তারা কলেজ কম্পিটিশনে দুজন দুজনের প্রতি’দ্বন্দি।দুজনই মেধাবী কেউ কাউকে ছাড় দেয় না।বেশির ভাগ সময় ই দুজনের স্কোর হয় সমান না হয় এক দুই নম্বরের পার্থক্য!
সামনেই ছেলেমেয়েদের অনুষ্ঠান সবাই ব্যস্ত থাকবে তাই এই একটা দিন সবাই মিলে নিজেদের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে।রাতে থেকে সকালে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাবে।
রাতে রান্না চড়িয়েছে মাহফুজ চৌধুরী, আজ ছেলে গুলো রান্না করবে,মেয়েদের ছুটি দিয়েছে, খিচুড়ি রান্না হচ্ছে এক হাঁড়িতে, এক পাশে বসেছে গানের আসর ছোট বড় সবাই গান গাচ্ছে রান্না ফাঁকে পুরুষরাও তাল মিলাচ্ছে আনন্দময় একটা পরিবেশ।রাতে আড্ডা দেওয়ার পরই বরাদ্দ কৃত ঘরগুলো তে গিয়ে ঢুকলো সবাই।
সাহিল সোহানাকে ডেকে বললো–,,তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,আশা করি কিছুটা টা সময় নিজ ইচ্ছেতে আমার নামে করবে!
সোহানা এরকম ভাবে বলতে কখনো দেখেনি সাহিল কে কি বলতে চায় মানুষ টা তার কি মন খারা’প?
সে পিছনে হাঁটা দিলো সাহিলের পুকুরের মতো ঘাট বাঁধানো অংশটায় বসলো দুজন রঙ বেরঙের বাতিতে সেজেছে আশপাশ, পানিতে ভেসে উঠেছে তার প্রতিচ্ছবি!
সাহিল বলতে শুরু করলো তার ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত সব কিছু।সাহিল বলা শেষ করতেই কারো কান্নার শব্দে থমকে গেলো।
সোহানা কেঁদেই চলেছে,সাহিল কি বলবে বুঝতে পারলো না মেয়েটা এতো নাজুক কেনো?এতো ছোঁয়ার আগেই গলে যায়!কেনো যে বলতে গেছিলো কাঁদার কথা ওর নিজের কিন্তু কাঁদছে কিনা মেয়েটা!
শান্ত করার জন্য সোহানার মাথায় হাত রাখলে সাহিল।সোহানা এসে জড়িয়ে ধরলো সাহিল কে বেচারা তো ভেবা’চেকা খেয়ে গেলো,নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম মেয়েটা এতো কাছে কেনো আসলো, সাহিল নিজেকে বহু কষ্টে সামলে বলে উঠলো–,,কি হচ্ছে কি সোহানা?এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেনো তুমি?তুমি আমান জীবন সঙ্গী হবে সব কিছু জানানো আমার উচিত ছিলো তাই বলেছি এ সব কিছুই অতীত, বর্তমান টা সুন্দর তোমাকে পেয়ে গেলে ভবিষ্যত টাও সুন্দর হবে বিশ্বাস করি!
সোহানা শান্ত হলো সাহিলের থেকে দূরে গিয়ে নাক টেনে বললো–,,স্যরি!আপনার কথা গুলো শুনে কষ্ট লাগলো তাই কেঁদে ফেলেছি।
সাহিল সোহানা কে নিজের দিক ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো–,,আমার কষ্টে কাঁদার জন্য নিজের জীবনে আনছি না তোমায়।নিজের সুখের ভাগিদার বানাতে আনছি আমার সব ভালো তোমার হোক! তোমাকে ছোঁয়ার আগেই তোমার দুঃখ,কষ্ট সব আমার হোক।সাথে তোমার ভালোবাসাও একান্তই আমার হোক!
সোহানা তাকালো সরল ভাবে,ছেলেটার কথায় কোনো মিথ্যা নেই কি অপূর্ব সুন্দর স্বীকারোক্তি, এক মিষ্টি আবদার সোহানার মতো সামান্য দুর্বল রমনী কি পারবে তা র’ক্ষা করতে?
এখনো শাড়ি পাল্টানো হয়নি জেরিনের। ভেবেছে এখনই ফ্রেশ হবে, দরজায় শব্দ পেয়ে পিছন ঘুরে দেখলো সাব্বির এসেছে।
জেরিন হেসে বললো—,,তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?আড্ডা দেওয়া শেষ!
সাব্বির কথা বললো না নিঃশব্দে এগিয়ে আসলো।জেরিন বলে উঠলো–,,তুই বস আমি শাড়িটা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসি!
জেরিন এগোতেই শাড়ির আঁচলে টান পড়লো কোনো রকম পিন আপ করা না থাকায় আঁচল টা সরে গেলো সহসা,জেরিন নিজে সহ হেঁচকা টানে এসে পড়লো সাব্বিরের বুকে।জেরিন লজ্জা পেয়েছে অনেক, আঁচলের এক পাশ চেপে ধরে চোখ নিচের দিক রেখেছে,সাব্বিরের দিক তাকানোর সাহস পাচ্ছে না কেনো জানি!
কাঁপা কন্ঠে বললো-,,কি কর,,!
সাব্বির জেরিনের ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো–,,আজ রাতটা আমার জেরিন,, নো মোর এক্সকিউজ!
জেরিন কেঁপে উঠলো এরকম কথায়, এলোমেলো ছোঁয়ায়।সাব্বির জেরিনের কোমর জড়িয়ে ধরতেই জেরিন তাকালো সাব্বিরের চোখের দিকে, যে চোখে আজ শুধুই কোনো কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা!নে’শা তুর চোখ জোরা উপেক্ষা করার সাহস কি আছে জেরিনের?সে তো হারিয়ে যাচ্ছে সাব্বিরের সে গভীর চোখের চাহনিতে!
সাব্বিরের কাঁপা নেশা”ভরা কন্ঠ–,,ফিরিয়ে দিবি?
জেরিন এখনো তাকিয়ে –,,ছেলেটা আজ তার অধিকার চাইছে,নিজের প্রিয় মানুষের কাছে এতোটুকু চাওয়ার মাঝে কোনো অপরা’ধ নেই আছে শুধু একরাশ মুগ্ধতা!
–,,হবি না আমার জেরিন?পুরোপুরি আমার হয়ে যা প্লিজ!
—,,,ফিরিয়ে দিলে কি করবি?
জেরিনের চোখ হাসছে,তবে কন্ঠ গম্ভীর। সাব্বির ঠিক বুঝলো,মেয়েটাকে চেনা আছে তার,তাই বলে এমন মুহুর্তেও মজা করবে?
সাব্বির জেরিনের মাথার পেছনের খোঁপায় হাত রেখে এক টানে চুল গুলো খুলে ফেলে টেনে নিয়ে আসে জেরিনের মুখটা ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় জেরিনের গোলাপ রঙা ঠোঁটে! মৃদু একটা কা’মর বসিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলে-,,জোর করবো!তবুও আমার করবো!
জেরিন ঠোঁটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ঠোঁট উল্টে বললো–,,মজা করছিলাম তাই বলে কাম’র দিবি!সর তো তোর থেকে কিছু চাই না আমার!
প্রণয়ের সুর পর্ব ৪০
–,,আমার চাই!
–,,কি?
–,,আপাদ”মস্তক পুরোটাই তোকে!বিরিয়ানি টেস্ট করার সময় এসে গেছে ঘসেটিবেগম!
জেরিনের লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা পালাতে গিয়েও পারলো না।আবদ্ধ হতেই হলো নিজ ইচ্ছেতে সাব্বির নামক খাঁচায়।পূর্ণতা পেলো তাদের ভালোবাসা, সম্পর্কটা আজ নাম পেয়ে গেলো নিজের!