তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১২
তানিশা সুলতানা
অহনার বাবুর নাম রাখা হয়েছে আহির। নামটা রেখেছে অহনার স্বামী হিমেল। এই মুহুর্তে বাবুকে কোলে নিয়ে তিনি বসে আছে ড্রয়িং রুমের এক কোণায়। ছেলের থেকে চোখ ফেরাচ্ছে না। আদ্রিতা এ্যানিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হিমেলের পাশে। ও মূলত গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে হিমেলকে।
আদ্রিতা জেনেছে হিমেল সুইজারল্যান্ড এ থাকতো। এখানেই তার পরিবার। অবশ্য তার জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের রংপুর জেলায়। বাবা চাকরির খোঁজে পাড়ি জমিয়েছিলো এই অদ্ভুত কান্ট্রিতে। তারপর ছেলে এবং বউকেও নিয়ে এসেছে।
অহনা কেনো এই লোকটিকে বিয়ে করলো?
হাজার হাজার মাইল দুরত্ব, আগে কখনোই কেউ কাউকে দেখে নি। তারপরও এই লোকটির জন্য ঘর ছেড়েছিলো। একা একাই পাড়ি দিয়েছে সুইজারল্যান্ড।
একবারও কি তার ভয় করে নি? যদি লোকটা ভালো না হতো? যদি অহনাকে মেরে দিতো?
একবার সময় করে অহনাকে জিজ্ঞেস করবে। জানতে চাইবে তাদের প্রেমের কাহিনি।
“আরেহহ আদ্রিতা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? এসো এসো কেক সাজাবে
আমান কথা বলতে বলতে আদ্রিতার ডান হাত খানা মুঠোয় পুরে নেয়। আদ্রিতার বক্তব্য না শুনেই তাড়াহুড়োয় টেনে নিয়ে যেতে থাকে তাকে।
কেক ডেকোরেশন করছে সিয়াম। তাকে বলে বলে দিচ্ছে আহাদ। ইভান ভিডিও করতে ব্যস্ত। বরাবরই ভিডিও ভালোই করে ইভান।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আমান ভাই হাত ছাড়ুন।
খানিকটা শক্ত গলায় বলে আদ্রিতা। কথা খানা আমানের কর্ণকুহুরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই হাত ছেড়ে দেয়। অনুসূচনা বোধ ফুটে ওঠে মুখশ্রীতে। মজা করে ঠিক আছে কিন্তু সে মানে আদ্রিতা তার বন্ধুর বউ।
“স..স্যরি আদ্রিতা। ক..কিছু মনে করো না। আমি তোমাকে বোনের চোখে দেখি।
” ইটস ওকে ভাইয়া। আমি কিছু মনে করি নি। চলুন।
আমানকে এড়িয়ে এক প্রকার দৌড়েই সিয়ামের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আদ্রিতা৷ এ্যানিকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। বেশি মানুষ একদমই পছন্দ নয় এ্যানির। তাই আদ্রিতার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও দৌড়ে এদিক সেদিক যায় না। ঘাপটি মেরে বসে থাকে মালিকের পায়ের কাছে।
কেক এ নাম লেখা নিয়ে বাঁধে বিপত্তি। সিয়াম লিখেছে সেটা একদমই ভালো হয় নি। হ্যান্ডরাইটিং ভালো নয় তার। গোটা কেকের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছে নামখানা। সকলেই বিরক্ত সিয়ামের প্রতি। আহাদ চোখ পাকিয়ে তাকায়
“বা**ল লিখছোস শালা। লেখা তুল। আমি লিখমু।
ইভান ক্যামেরা ফেলে দিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে আহাদ এর পা। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
” মাপ কইরা দে ভাই। তুই লিখিস না। তোর হাতের লেখা জঘন্যতম আলট্রা পো ম্যাক্স।
কিটকিটিয়ে হেসে ওঠি সিয়াম। আহাদ দাঁতে দাঁত চেপে লাথি মারে ইভানকে। ছিটকে ক্যামেরার কাছে গিয়ে পড়ে সে।
আমান বলে
“নামটা আদ্রিতা লিখুক। শুনেছি সুন্দরী মেয়েদের হাতের লেখা সুন্দর হয়৷
খুশিতে গদগদ হয়ে ওঠে আদ্রিতা। মুহুর্তেই সিয়ামের হাত থেকে নিয়ে নেয় লেখার যন্ত। এবং ফটাফট লিখে ফেলে “শুভ জন্মদিন আবরার তাসনিন”
ইচ্ছে ছিলো হাতির বাচ্চা লেখার কিন্তু আতিয়া বেগম সামনেই দাঁড়িয়ে আছে বিধায় লিখতে পারে না।
সবাই আদ্রিতার লেখার বেশ প্রশংসা করে।
সমস্ত ডেকোরেশন শেষ হওয়ার পর মুহুর্তেই আবির্ভাব ঘটে আবরার তাসনিন এর। গম্ভীর মুখশ্রী তার। যেনো হাসলেই জরিমানা হয়ে যাবে। আতিয়া বেগম কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। নিজের মুখ লুকাতে ব্যস্ত যেনো। এই বুঝি আবরার সব কিছু তছনছ করে দিবে। উচ্চস্বরে চিল্লিয়ে বলে উঠবে “এসব কে করেছে? আমার পছন্দ নয় জানো না তোমরা?”
তখন কি হবে?
আতিয়াই বুঝি দোষী। আবরার ভাববে তার মা এতসব কিছুর আয়োজন করেছে। এখানে মেয়ের জামাই রয়েছে। আবরার যদি সকলের সামনেই আতিয়াকে দুটো কথা শুনিয়ে দেয়। তখন কি করে সহ্য করবে তিনি?
তার এতোসব ভাবনার মাঝেই শুনতে পায় সকলের উচ্চস্বরে বলা “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে ডেয়ার আবরার” স্লোগানটি।
শুকনো ঢোক গিলে আতিয়া। ভয়ার্তক দৃষ্টিতে তাকায় ছেলের মুখ পানে।
আবরার চরম বিরক্ত৷ কপাল কুঁচকে ধীর গতিতে এগিয়ে যায়।
আদ্রিতা ভেংচি কাটে। সব কিছুতেই লোকটার বাড়াবাড়ি। এতো সুন্দর আয়োজন করেছে তারা। ইয়া বড় কেক। এসব দেখে তো খুশি হওয়ার কথা।
আদ্রিতার জন্মদিন কখনোই সেলিব্রেট করা হয় নি। বার্থডে উপলক্ষে এক টুকরো কেক আদ্রিতা কোনোদিনও চোখে দেখে নি।
যখন মা বেঁচে ছিলো। তখন মা বলতো “সামনে বছর তোর বাবা বাড়ি আসলে বড় করে জন্মদিন সেলিব্রেট করবো।”
আর মা মারা যাওয়ার পরে বাবা প্রতি বছর জন্মদিনে কল দিয়ে বলে “সামনে বছর তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করবো”
আজ ওবদি সামনে বছর আর আসলো না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিতা। এক পা দু পা করে আবরারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ফিসফিস করে বলে
“আমার মাকে কষ্ট দিয়ে একটা বাক্যও উচ্চরণ করবেন না। মন চাইলে কেক কাটুন নাহলে মুখ বন্ধ রেখেই কেটে পড়ুন এখান থেকে।
ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেলে আবরার। বাঁকা নয়নে এক পলক তাকায় আদ্রিতার পানে। পরপরই গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে
“আমি জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে অষ্টম আশ্চর্য জনক কিছু হয় নি৷ সো আমার বার্থডে এতো ধুমধাম করে সেলিব্রেট করার কিছু নেই।
ব্যাসস বক্তব্য শেষ করে বড় বড় পা ফেলে কেটে পড়ে ড্রয়িং রুম থেকে। কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না। হতাশ হয় আহাদ, আমান সিয়াম এবং ইভান। তারা প্রতি বছরও কোনো না কোনো সারপ্রাইজ প্ল্যানিং করে। আর তাদের প্ল্যানিং ভেস্তে দেয় আবরার তাসনিন।
এক্কেবারে নিজ কক্ষের পদচারণ করে দরজা আটকে দেয় বিকট শব্দে আবরার। কেঁপে ওঠে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সকলেই।
আবারও চোখের কোণে অশ্রু জমে আতিয়া বেগম এর। অহনা আহিরকে কোলে নিয়ে বসেছিলো স্বামীর পাশে। ভাইয়ের বিহেভিয়ার এ ভীষণ কষ্ট পায়। হিমেল হাত রাখে অহনার কাঁধে। শান্তনার বাণী আওড়ে বলে
” ইটস ওকে জান। মুড অফ করো না।
অহনা হিমেলের পানে তাকিয়ে মলিন হাসে। এই মানুষটা আছে বলেই অহনা পৃথিবীতে সুখ খুঁজে পেয়েছে। এই একটা মানুষ অহনার জীবন রাঙিয়ে দিয়েছে ভালোবাসা দ্বারা। মুছে দিয়েছে সকল গ্লানি। দুঃখ আর তাকে ছুঁতেই পারে না।
কিছু মুহুর্ত আগে আলোয় ঝলমল করা বাড়িটা এখন শুনশান নিরবতায় ছেয়ে গিয়েছে। কোথাও কোনো জনমানব খুঁজে পাওয়া দায়। অহনা তার সন্তান হিমেলের সাথে চলে গিয়েছে শশুর বাড়িতে। এখানে আর হিমেল রাখবে না ওদের।
আতিয়া বেগম গিয়েছে অহনার সাথে। মেয়েকে একা ছাড়তে মন সায় দিচ্ছে না তার। নাতনিকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকার কথাও ভাবতে পারে না।
আমান, আহাদ এবং ইভান চলে গিয়েছে যার যার বাসস্থানে।
সিয়াম শপিং মল এ গিয়েছে। যাওয়ার আগে আদ্রিতাকে বলেছিলো সাথে যেতে কিন্তু আদ্রিতা যায় নি।
বর্তমানে আদ্রিতা এবং এ্যানি বসে আছে ড্রয়িং রুমে। সামনে টিভির স্কিনে চলছে মাই ফ্লট মুভি। গভীর মনোযোগ দিয়ে মুভি খানা দেখছে আদ্রিতা।
প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছে। নিক এবং নোয়া গাড়িতে। নিক ড্রাইভ করছে এবং নোয়া পাশে বসে আছে। ইংরেজি হিন্দি কোনো ভাষাই বোঝে না আদ্রিতা। তবুও একটু একটু আন্দাজ করতে পারে।
টই মুহুর্তে নোয়া নিকোলাসের হাতের ওপর হাত রেখেছে। বিষন্ন স্বরে বলছে
“আমি তোমার সতালো বোন। আমাদের সম্পর্ক মানবে না কেউ। তোমার বাবা আমার মা কেউ মেনে নিবে না।
সাথে সাথে নিকোলাস গাড়ি থামিয়ে ফেলে। সিটবেল্ট খুলে নোয়ার গালে হাত রাখে এবং চুম্বন এঁকে দেয় ঠোঁটে।
একটু পরেই ওষ্ঠ ছেড়ে বলে
” ভালেবাসা যদি গুনাহ হয়ে থাকে তাহলে আমি গুনাহগার। পৃথিবীর সব চেয়ে বড় পাপী।
ডায়লগ শেষ করে আবারও চুম্বন এ লিপ্ত হয়। আদ্রিতা গালে হাত দিয়ে গোটা ব্যাপারখানা দেখে।
আহারে কতো ভালোবাসা। দেখেই পরাণ জুড়িয়ে যায়।
হঠাৎ করে কেউ ধপ করে বসে পড়ে আদ্রিতার পাশে। গম্ভীর স্বরে বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১১
“এসব সীন দেখে ফিলিংস আসে না?
লিপ কিস করতে মন চায়?
আদ্রিতা টিভির স্কিনে নজর রেখেই আনমনে বলে ওঠে
” আমার ড্রিম এটা। কতো স্বপ্ন দেখি আমি চুমু খাচ্ছি। ঠোঁটে চুমু খাওয়ার ফিলিংস জানার বড্ড ইচ্ছে আমার। আমি
বাকিটা শেষ করার আগেই