রেড রোজ পর্ব ৩৬
ফারহানা নিঝুম
“আপনি এখানে কেন এসেছেন? প্রবলেম কী আপনার?”
সকাল সকাল কলেজের জন্য বের হয়েছে উৎসা,আজ সিরাত আসেনি।কিছুটা দূরে আসতেই ঐশ্বর্যের গাড়ি সহ ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। বরাবরের মতই ঐশ্বর্য কে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। উৎসা গুরুত্ব দিলো না,সে নিজের মতো রাস্তা পাড় করে যেতে নিলো। তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য এসে উৎসার সামনাসামনি দাঁড়ালো,চোখে থাকা সানগ্লাস খুলে বলে।
“হেই সুইটহার্ট।”
উৎসা যেনো শুনেও শুনলো না, ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার হাত টেনে ধরে। হেঁচকা টানে ভয় পেয়ে গেল উৎসা।
ঐশ্বর্য এখানে কেন জিজ্ঞেস করতেই বাঁকা হাসলো।
“কেয়ারটেকার ছাড়া ভালো লাগছেনা না,দ্যান আমিই চলে এলাম।”
উৎসা দু হাত ভাঁজ করে নেয়।
“আচ্ছা নতুন কেয়ারটেকার?তা ওখানে না গিয়ে আমাকে ফলো করছেন কোন দুঃখে শুনি?”
ঐশ্বর্য বুকে হাত রেখে বলল।
“ইশ্ ইটস্ হার্ট রেড রোজ, দুঃখে কেন হবে?বলো সুখে।”
উৎসা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য উৎসার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো।উৎসা কিছুটা বিব্রত বোধ করছে।
“আমার পথ ছাড়ুন।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দাঁতে দাঁত পিষে বললো উৎসা, ঐশ্বর্য হাসলো।
“তাহলে আমার বাড়ির কাজ কে করবে?”
উৎসা ঐশ্বর্যের কোনো কথাই বুঝতে পারছে না।
“মানে?”
“মানে এটাই যে তুমি এই সময় আমার বাড়িতে যাবে,ভুলে গেলে কী করে সুইটহার্ট তুমি তো আমার কেয়ারটেকার!”
উৎসা চরম পর্যায়ে রেগে গিয়ে বলল।
“ফা লতু কথা একদম বলতে আসবেন না। আমি আপনার কোনো কেয়ারটেকার নই বুঝেছেন? আমার সঙ্গে একদম…..
উৎসা চুপ করে গেল, ঐশ্বর্য ওর সামনে একটি পেপার ধরে। উৎসা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো এটাতে তার সাইন করা।
“এটা?কী এসব?”
ঐশ্বর্য পড়তে শুরু করে।
“এখানে সুন্দর করে লেখা আছে তুমি আমার কেয়ারটেকার,আর আগামী তিন বছর আমার বাড়িতে কাজ করবে।আর যদি তুমি কাজ না করো তাহলে জ রিমানা হিসেবে ৫ কোটি টাকা দিতে হবে।”
উৎসা তম্বা খেয়ে গেল কোন বুদ্ধিমান লোক এমন ফা লতু কাজ করে? এটা কেমন কাজ কর্ম?
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“এই জন্যই কাল এটাতে সাইন করিয়েছেন?”
ঐশ্বর্য মাথা দুলালো,উৎসার প্রচন্ড রকম রাগ লাগছে।কী যে করবে সে?
“দেখুন মিস্টার চৌধুরী আমি আপনার মুখ তো দূরের কথা আপনার আশেপাশে পর্যন্ত থাকতে চাই না। তাহলে আপনি ঠিক কী করে ভাবলেন আমি আপনার কেয়ারটেকার হবো?”
ঐশ্বর্য হাত সামনে ধরে।
“তাহলে পাঁচ কোটি দাও।”
উৎসা ভাবনায় পড়ে গেল এত টাকা কোথা থেকে দেবে সে? ঐশ্বর্য চায় কী?
“আপনি কি চান?”
“তোমাকে।”
ঐশ্বর্যের সহজ স্বীকারোক্তি,উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“হাস্যকর, আমাকে দিয়ে কী হবে?”
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।
“তোমাকে দিয়েই হবে, তুমি না থাকলে কাকে দিয়ে হবে! আফটার অল আমার বেবির মাম্মা তুমি । তুমি আমার হার্ট, তোমাকে ছাড়া চলছে না সত্যি!”
উৎসা শব্দ করে হেসে উঠলো।
“রিয়েলি? আপনি অন্তত শ’য়তা’ন একটা মানুষ।এত কিছু করার পর কী করে ভাবলেন আমি আবার আমাকে আপনার হাতে তুলে দেব?”
ঐশ্বর্য মাথা দুলিয়ে বলে।
“তুলে দিতে হবে না সুইটহার্ট,রিক ছি’নিয়ে নিতে পারে।”
উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল।
“একদম আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবেন না।”
উৎসার বলতে দেরী, ঐশ্বর্যের তার কাছাকাছি এসে দাঁড়াতে দেরী হলো না।
“বিউটিফুল লেডিদের এত রাগ করতে নেই। চলো লেইট হচ্ছে।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরতেই চেঁচিয়ে উঠলো সে।
“ডোন্ট টাচ।”
“টাচ,টাচ টাচ।”
ঐশ্বর্য হাত বারংবার স্পর্শ করছে,উৎসা ফোঁস করে উঠলো।রাগে শরীর রি রি করছে তার!
“আমি কিন্তু এখন…..
উৎসা কে কিছু বলতেই দিচ্ছে না ঐশ্বর্য,তার আগেই গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে লক করে দিলো।দক্ষ হাতে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে। ঐশ্বর্য রাগে ঐশ্বর্যের ঘাড়ে অনেক শক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। হঠাৎ আ’ক্র’মণে কিছুটা ব্যথা পায় ঐশ্বর্য, কিন্তু তবুও নড়লো না।
আধঘন্টা পর বাড়িতে এসে গাড়ি থামালো ঐশ্বর্য।উৎসা মনে মনে ভেবে রেখেছে ঐশ্বর্য গাড়ি থেকে নামলেই উৎসা দৌড় দেবে।
কিন্তু তা আর হলো না, ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরেই নামলো।উৎসা কে এক প্রকার টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল উৎসা।
“আমি এবার সত্যি সত্যি…
“ভালোবেসে ফেলেছি, সত্যি সত্যি।”
উৎসার কথার মাঝখানে বলে উঠে ঐশ্বর্য। উৎসা থমকালো চমকালোও, কিন্তু তা মোটেও বুঝতে দেয় না ঐশ্বর্য কে।
“তো? আপনি ভালোবাসেন না বাসেন আমার কিছু যায় আসে না।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে কাউচের উপর বসালো, ফোঁস করে নিঃশ্বাস টেনে বলে।
“অ্যাম স্যরি সুইটি।আই লাভ ইউ, আমার তুমি ছাড়া চলবে না সত্যি।”
ঐশ্বর্য উৎসার গালে আলতো হাত ছুঁয়ে দেয়,উৎসা হাত সরিয়ে নেয়।
“আমার সঙ্গে এত বড় অন্যায় করে আপনি কী ভাবছেন আমি ক্ষমা করে দেব?”
ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে হাসলো।
“আমার উপর রাগ হচ্ছে?রাগ মিটিয়ে নাও, মা’রো আই ডোন্ট মাইন্ড।বাট প্লিজ একবার সুযোগ দাও!”
উৎসা মুখ ফিরিয়ে নেয়,এই ছল পুরুষের ছ’লনায় একদম কান দেবে না উৎসা। ঐশ্বর্য উৎসার পায়ের কাছে বসে পড়লো।
“অ্যাম স্যরি,আই প্রমিজ আর কখনও কষ্ট দেবো না।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরতে চাইলো কিন্তু উৎসা ফের হাত সরিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। আচমকা উৎসার গালে চুমু খায়।
“স্যরি সুইটহার্ট, বিকেলে মান ভাঙাতে আসবো আপাতত অফিসের লেইট হচ্ছে।”
ঐশ্বর্য বাইরে থেকে দরজা লক করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। উৎসার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, এভাবে তাকে বোকা বানিয়ে চলে গেল? অস’ভ্য রিক চৌধুরী।
একদম ভালো না।
“আই লাভ ইউ।”
রুদ্রর মুখে আই লাভ ইউ শুনে চুপ করে গেল কেয়া।
সত্যি মিস্টার হ্যান্ডসাম তাকে ভালোবাসে?
“সত্যি?”
কেয়া কে অবাক হতে দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো রুদ্র।
“ইয়েস ম্যাডাম। সিনিয়র আপা পছন্দ হয়েছে,তাই ভাবলাম প্রপোজ টা করেই ফেলি।”
কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো, কিন্তু পরক্ষণেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে আসছে।
“কিন্তু আপনার ফ্যামিলি?”
রুদ্র ফের হাসলো।
“আমি আছি তো, এবার তুমি আর ঐশ্বর্য ভাইয়া চলে এসো। এরপর একে বারে আমার করে নেব।”
কেয়া ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি টের পেলো, অতঃপর তারও কেউ আছে যে এত ভালোবাসে। ফ্যামিলি বলতে রিক, জিসান আর গ্রে মা ছাড়া কেউ নেই কেয়ার। এখন এই ফ্যামিলিতে আরো একজন এসেছে।
কাবার্ডের পেছনে লুকিয়ে আছে উৎসা, একদম ঐশ্বর্যের সামনে যাবে না। এদিকে ঐশ্বর্য বাড়িতে এসে উৎসা কে দেখতে না পেয়ে কেমন হাঁসফাঁস করছে!
“রেড রোজ? সুইটহার্ট? ওয়ার আর ইউ?”
উৎসা শ্বাস প্রশ্বাস পর্যন্ত থামিয়ে দিয়েছে, ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয়। অতঃপর আই প্যাড নিয়ে রুমের সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে লাগল। ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,আই প্যাড রেখে বেড রুমে গেল।উৎসা কাবার্ডের পেছনে আছে, ঐশ্বর্য খপ করে গিয়ে ধরে ফেলল।উৎসা কেঁপে উঠল, ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে দেয়। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো,উৎসা ভয়ে চুপসে গেছে।
“উফ্ ষ্টুপিড রেড রোজ ভুলে গেলে সি সি ক্যামেরা?”
উৎসা চোখ বুজে বিরক্ত প্রকাশ করে। সত্যি সে ভুলে গেছে ক্যামেরার কথা।উৎসা শুকনো ঢোক গিললো, ঐশ্বর্য আচমকা উৎসা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
“সুইটহার্ট আই লাভ ইউ।”
উৎসা ভয় পাচ্ছে,তার উচিত হয়নি এখানে আসা। জার্মানি আসাই সবচেয়ে বড় ভুল, এখন এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ভয় দেখাচ্ছে।
“দদেখুন আমি…
“হিস ডোন্ট…
ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল ছুঁয়ে দেয়। দৃষ্টি তার ঠোঁটের দিকে, ঐশ্বর্য অসহায় চোখে তাকায়।
“পারছি না থাকতে, সত্যি।অ্যাম…হেই সুইটহার্ট আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।আই লাভ ইউ, পারব না থাকতে তুমি ছাড়া।”
উৎসার কান্না পাচ্ছে, কিন্তু সে চাইছে না কাঁদতে।চোখ তো আর কথা শুনে না, কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা অশ্রু।
“আপনি অনেক খারাপ মানুষ, আপনি শুধু আমার সঙ্গে…. শুধু এসবেরই জন্য আমার সাথে নাটক করেছেন এত দিন?”
ঐশ্বর্য উৎসার চোখের পাতায় চুমু খেল আশ্লেষে চুষে নিল নোনা জল।
“আই সয়ার সব নাটক ছিল না, আমি ফিলিংস নিয়ে কনফিউজড ছিলাম। আমার কাছে শুধু তোমার আ’স’ক্তি কাজ করতো। আমি পারব না আর তুমি ছাড়া থাকতে রোজ।আই কান্ট… প্লিজ।”
উৎসা শুনলো না,সরতে চাইলো। ঐশ্বর্য হাতে চুমু খেল।
“অ্যাম স্যরি।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাতে কা’ম’ড় বসিয়ে দেয়।
“আই হেইট ইউ অস’ভ্য রিক চৌধুরী। আপনি প্রচন্ড বাজে মানুষ, আপনার সঙ্গে,, আমি থাকব না।”
ঐশ্বর্য মিহি হাসলো,উৎসা কে কোলে তুলে নেয় আলতো ভাবে।উৎসা ছটপট করতে লাগলো।
“ছাড়ুন আমি আপনাকে ঘৃ’ণা করি।”
“বাট আই লাভ ইউ।”
“হেইট ইউ।”
“লাভ ইউ।”
“আই…
“লাভ ইউ।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে ঘু’ষি দেয়,তাকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না এই লোকটা।
রেড রোজ পর্ব ৩৫
ঐশ্বর্য উৎসার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে, উৎসা থমকে যায়। অদ্ভুত মানুষ,কখন কী করে কিছু বোঝা যায় না।এই দেখা গেল একটু পরে আবার উৎসা কে ব্যবহার করে ছুটে ফেলে দিচ্ছে।উৎসা ঐশ্বর্যের ঘুমানোর অপেক্ষা করছে। ঐশ্বর্য ঘুমাতেই উৎসা পা টিপে টিপে মেইন ডোরের দিকে গেল।কী অদ্ভুত দরজা লক করা, পাসওয়ার্ড সিস্টেম।উৎসা রাগে ফুঁসছে, এখন যাবে কী করে?উৎসা কিছুই ভাবতে পারছে না, কিন্তু ঐশ্বর্যের কাছাকাছি থাকবে না। দরজার সামনে বসে রইল উৎসা, অস’ভ্য রিক চৌধুরী কী কখনও সভ্য হবে না? হওয়া উচিত ছিল,এই মানুষটি হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত মানুষ।