ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪১
Arishan Nur
আজকের সকালটা অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু অন্যরকম। শৈত্যপ্রবাহ চলছে জন্য কেমন শীত-শীত। ট্যাপের পানিও ঠাণ্ডা। হাত দেয়ামাত্র সরিয়ে নিতে মন চাইবে। শায়লা চৌধুরী ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন।খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছে কিন্তু সে কিছুই খেলো না৷
ফাহাদ সাহেব একটু পর এলেন, তাকে দেখে মুখ-চোখ শক্ত করে একপ্রকার কটাক্ষ করে বলেই দিলেন, ” তুমি যাও নি এখনো এ’বাসা ছেড়ে? কাল রাতে না তোমাকে সাফ বলেছিলাম চলে যাওয়ার জন্য? ”
শায়লা ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সে ভাবতেও পারছে না কি উত্তর দিবে। ফাহাদকে কীভাবে সামলাবে সে? ফাহাদের রাগের সাথে সে পরিচিত নয়। এই প্রথম ওকে এতো রাগতে দেখলো। সকালবেলায় উঠেও ভাবছিলো ফাহাদ বুঝি রাতে রাগের বশে বলা কথাগুলো ভুলে গেছে৷ পরবর্তীতে ঠাণ্ডা মাথায় তাকে সব বুঝাবে৷ দরকার বলে ক্ষমাও চাইবে তবুও ঝামেলা আর বাড়াতে চায় না৷ কিন্তু সকাল-সকাল ফাহাদের মুখে এমন অপমানসূচক কথা শুনে সে ভীষণ হতভম্ব হয়৷ তবে চুপ থাকে৷ দুই পক্ষকেই মাথা গরম রাখলে সমস্যা বাড়ে৷
ফাহাদ সাহেব নাস্তা না করে একপ্রকার কড়া গলায় বলে, ” আমি চাই না, তুমি আর আমার জীবনে থাকো। হাসপাতাল থেকে আসার পর তোমায় যেনো আর না দেখি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফাহাদ সাহেবের চিৎকারে হামিলা বুয়া বেরিয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। শ্বাশুড়ি সালেহা বানুও রুম ছেড়ে বের হয়। শায়লার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসে। অপমানে মুখ থমথমে হয়ে যায়। অপলক নয়নে চেয়ে থাকে স্বামীর দিকে৷
ফাহাদের উচিত তাকে আরেক’টা বার সুযোগ দেওয়া। সে তো অনুতপ্ত। আয়নার সঙ্গে যা হচ্ছে এটা সে কোনোদিন চায় নি।
চঞ্চল দুপুর। মৃদ্যু বাতাসে নভেম্বরের আবহাওয়ায় যেনো শীতের আগমনী আমেজ। হসপিটালের কোমল, সফেদ বেডে আয়না ছোট্ট বাচ্চার মতো গুটিসুটি মেরে শু’য়ে আছে। চুল গুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরে আছে বালিশের উপর। ও আধো আধো করে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু ঘুমের ডোজ বডিতে বেশ কাজ করছে। চোখ খুলে রাখতে পারছে না। সমুদ্র পাশে বসেই ক্লান্ত চোখে ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘুমানোর আগ মুহুর্তেও আয়না সমুদ্রের শার্টের কলার ধরে বলে, “আমি ঘুমায় গেলেও কোথাও যাবা না। আর মরে গেলেও কোথাও যাবা না।”
সমুদ্র ক্ষণেই ওর এমন বেখাপ্পা কথা শুনে চমকে উঠে। কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ” আমি কোথাও যাবো না, আয়ু। তুমি আরাম করো৷ আমি পাশেই বসে আছি।”
আয়না ঘুমের ঘোরেই বলে উঠে, ” আমি মরে গেলে ভুলেও অন্য কাউকে বিয়ে করবা না বাবার মতো।”
সমুদ্র কথা বলার সুযোগ দেয় না। জোরপূর্বক চোখের পাতা বন্ধ করিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ায়। আয়না ঘুমিয়ে যায় দ্রুত। ও এখন যতো ঘুমাবে, ততো দ্রুত সুস্থ হবে। আয়নার বাসার সবাই দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে৷ কিন্তু হসপিটাল থেকে এলাউ করছে না এতোজনকে একবারে কেবিনে যেতে৷ বেলা বারোটা বাজে। দুপুরে আয়না কচু ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে চেয়েছে। এছাড়া নাকি আর কিছু খাবে না। স্ন্যাক্সের বনরুটি-কলাও খায় নি।
সমুদ্র ফাহাদ সাহেবকে কল লাগায়৷ ফাহাদ সাহেব হাসপাতালের লবিতে ওয়েটিং জোনে আছেন। মেয়ের জন্য অপেক্ষায় আছেন উনি।
সমুদ্র খুব নিম্নস্বরে বলে উঠে, ” বাবা, আয়ু শায়লা আন্টির হাতের কচু ভর্তা খেতে চাচ্ছে। আপনি ম্যানেজ করেন। আমি হসপিটাল অথোরিটির সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। ওনারা সমস্যা করবে না তাহলে।”
ফাহাদ সাহেব তব্দা খেয়ে বলে, ” আয়ু কচু ভর্তা খেতে চাচ্ছে? ও তো এসব অপছন্দ করে। ও এসব খায় না। ”
–” এখন এটাই লাগবে ওর। নাহলে আরোও হাইপার হবে। এরচেয়ে আপনি শায়লা আন্টিকে রান্না করে এনে দিতে বলেন।আয়ু শায়লা আন্টির সাথে দেখা করতে চাইছে। ঘুম থেকে উঠলেই হুলুস্থুল শুরু করবে। রাখছি।”
সমুদ্র ফোন কেটে বিশাল কাঁচের জানালাটার দিকে চেয়ে থাকে। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। বিশাল বড় বট গাছটায় একটা পাখি কিচিরমিচির করছে। একটু এগিয়ে জানালার দিকে গিয়ে দাঁড়ালো।
হঠাৎ আয়নার কণ্ঠস্বর শুনে ও অবাক হলো। পেছনে তাকাতেই দেখে আয়না উঠে বসেছে। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তোমার না আমার পাশে বসে থাকার কথা? ওখানে কেনো? ”
সমুদ্র দ্রুত বেগে একপ্রকার দৌঁড়ে আয়নার দিকে ছুটে। মেয়েটা ঘড়ি ধরে বিশ মিনিটও ঘুমালো না। ওকে দৌঁড়ে আসতে দেখে আয়না আজকে হাসলো। ভালোই শব্দ করে হাসলো যেন মজার দৃশ্য চলছে। সমুদ্র একপল থমকে ওর হাসি দেখে। আহা কী মায়াবী হাসি!
সমুদ্র বলে, ” ঘুম থেকে উঠে গেলে যে? এসো আবার একটু রেস্ট নাও।”
–” না। আমি এখন তোমার সাথে গল্প করবো।”
আয়না একেক সময় একেক আচরণ করছে। গতকাল অব্দি সে কাউকে চিনতে পারছিলো না। আর আজকে অনবরত বকবক করেই যাচ্ছে। অনেক দ্রুত অনেককিছুই বলে ফেলছে৷ তবে ওর মনে হয় মিসক্যারেজের কথা এই মুহূর্তে স্মরণ নেই।
সমুদ্র সোফায় বসলে, আয়না বেড থেকে নেমে ওর পাশে বসে। এরপর গল্প করা শুরু করে। নিজেই আপন-মনে বলতে থাকে। কথার এক পর্যায়ে বলে উঠে, ” তুমি আমার জন্মদিনের তারিখ জানো না কেনো?”
সমুদ্র পিলে চমকে উঠে। ওর এটাও এই মুহূর্তে মনে আছে যে সমুদ্র ওর জন্মদিন ভুলে গিয়েছিল। আহারে, হয়তো ওইদিন ও অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলো, যেটা মস্তিষ্কের স্মৃতির পাতায় লেখা আছে এখনো।
সমুদ্র ওকে বলে উঠে, ” তোমার জন্মদিন ১২ সেপ্টেম্বর। আমার মনে আছে।”
আয়না যেনো এতেই খুব খুশি হলো। আবার হাসলো যেন সমুদ্রের ওর জন্ম তারিখ মনে রাখা অনেক বড় কোনো বিষয়। সমুদ্রের খুব মায়া হলো। মন চাইলো, টাইম ট্রাভেল করে গত হওয়া আয়ুর জন্মদিনে চলে যেতে, তাহলে নিশ্চয়ই ওর জন্য দারুণ কিছু করত যেন মেয়েটা কষ্ট না পায়৷
আয়না নিজ থেকে ওর বুকে মাথা রেখে বললো,” তুমি অফিস থেকে এতো দেরিতে কেন ফিরো? আমি কত অপেক্ষা করি তোমার জন্য । সন্ধ্যা থেকে তোমার আসার অপেক্ষা করি। লেবুর শরবত বানায় রাখি। কিন্তু তুমি আসো না। কতো মন খারাপ হয় আমার? সেটা কী জানো মিষ্টার ওশেন?”
সমুদ্র চুপ বনে যায়। আসলেই সে জানে না। সে জানতো না, তার আয়ু তাকে এতোটা ভালোবাসে! সমুদ্র এতো ভালোবাসা বিনা খরচায় পেয়ে গিয়েছিলো বিধায় মূল্য দেয় নি। আসলে সে আয়ুর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না। চোখের কোণে কোনো কারণ ছাড়া-ই পানি এসে জমলো। আয়নাকে তা বুঝতে দিতে চায় না সে। মুখ ফিরিয়ে নিলে সঙ্গে সঙ্গে আয়না ওর হাত দিয়ে সমুদ্রের মুখে হাত রেখে ওরদিকে মুখ ফিরিয়ে এনে বলে, ” তুমি কী কাঁদছিলে নাকি?”
–” না তো।”
–” আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?”
–” করো। যা ইচ্ছা বলো। তোমার সব কথাই শুনবো। ইনফ্যাক্ট প্রশ্ন করার আগে জিজ্ঞাসা করতেও হবে না আয়ু।”
–” তুমি আমাকে ভালোবাসো?”
আয়না এখন যে কন্ডিশনে আছে,এ’অবস্থায় এ-ধরনের সূক্ষ্ম প্রশ্ন করায় সমুদ্র নিজেই হচকচিয়ে উঠে। পরে মনে পরে, আয়না প্রায়শই তাকে জিজ্ঞেস করত, কোনোদিন সমুদ্র মুখ ফুটে ভালোবাসি বলে নি। আজ সে আয়নার দু’গালে তার হাত দুটো আলতো করে রেখে বলে, ” হ্যাঁ, ভালোবাসি আয়ু। তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাও৷ আমরা বাসায় যাবো।”
আয়না বলে, ” সমু, আমার কি হয়েছে?”
সমুদ্র চিন্তা করে কি উত্তর দিবে তাকে। কুণ্ঠিতবোধ করে সে। এর আগেই আয়না ওর বুকে মাথা রেখে সমুদ্রের বুকের ধুকপুক, হৃদপিণ্ডের ওঠা-নামা অনুভব করে বলে উঠে, ” আমার কিছু হলে তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করে ফেলবে?”
–” না, কক্ষনো না।”
–” আমাকে ফেলেই অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে তাই না? আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবা না আমি জানি।”
সমুদ্র থমকালো, বিগত কয়েক মাসের সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর সবটা ওর মস্তিষ্কে খুব বাজেভাবে প্রভাব হেনেছে, প্রতিটি ঘটনায় ও আহত হতো,তবে মনের মধ্যে চেপে রাখতে রাখতে মানসিক আঘাত পেয়েছে যার জের ধরে ও এখন এসব অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। নিজের মনের মধ্যে যেসব ভয় বা কষ্ট লুকিয়ে ছিলো সবটা প্রকাশ করছে৷ আয়ু হয়তো ভাবতো, সমুদ্র তাকে ছেড়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়ে ইউশার সঙ্গে জড়াবে!
সমুদ্র ওকে ঝাপ্টে ধরে বলে, ” আমি তোমার সঙ্গে ঘর বেঁধেছি। ইউ আর মাই হোম। আমি যতোদূরই যাই না কেনো তোমার কাছেই আসবো ফিরে৷ তুমি সঙ্গে থাকলেই আমি ঘর পাবো। তুমি ছাড়া তো আমি হোমলেস।”
আয়না চোখ বন্ধ করে রাখে। ওর মধ্যে এখন বোধশক্তি কম। নিজের মতো বকে গেলো কিছুক্ষণ, এরপর বলে ফেলে, ” বাবা কেনো দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য এতো উদ্বিগ্ন হলো?”
ফাহাদ সাহেব ফোন হাতে নিয়ে হসপিটালের ওয়েটিং জোনে বসে আছেন। তিনি বেশ দ্বিধায় পরে গেছেন। শায়লাকে সকালে যা বলে এসেছে, এরপরও আয়ুর জন্য কিছু করবে ও? শায়লাকে যতোদূর চেনে সে, ও খুব আত্ম-নির্ভরশীল মহিলা। কারো অপমান সহ্য করার মতো মহিলা নয় সে। বছর পাঁচেক আগে থেকে চেনে। আয়নার মা মারা যাওয়ার পরপরই তার বাড়ির সবাই দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চাপ দিত, কিন্তু কেনো যেন সে সেকেন্ড ম্যারেজে আগ্রহ পাননি। একাকী থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তবে হুট করে একদা মাথায় ভূত চাপলো, ব্যবসা করবে। এক কলিগকে নিয়ে শুরু করে রেন্ট কারের ব্যবসা, কিন্তু ব্যবসায় কয়েক মাসের মধ্যে বিপুল লস হয়, তারা দুজনেই অনাভিজ্ঞ ছিলো। তাদের থার্ড পার্টি হয়ে ডিল এনে দিতো শায়লার কোম্পানি। তখনো শায়লা এতোবেশি উন্নতি করেনি। মোটামুটি চলছে ওর ব্যবসা।
বিশাল পরিমাণ লস হওয়ার পর, লোন শোধ করতে পারছিলো না৷ লোন ক্লিয়ার না করলে আরোও বিশাল বিপদ। একে তো বড় পদের সরকারি কর্মকর্তা, কিন্তু কোনোধরনের দল সমার্থক না সে। বিধায় সাহায্যও পাবে না কারো কাছ থেকে, উলটা তাকে জেল-জরিমানা করলে বিপদ। রেপুটেশন খারাপ হবে। অসম্মানিত হতে চান। ভেবেছিলো গ্রামের সব জমি বেচে দিবেন কিন্তু কাগজ-পত্রের ঘাটাঘাটি করর দেখা গেলো, তার নিজের ভাই তার অংশ অনেক বড় একটা অংশ জালিয়াতি করে জমি আত্মসাৎ করেছে৷
ওইরকম ভয়ংকর বিপদে শায়লা তাকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে৷ কথা হয়েছিলো ফাহাদ সাহেবের বিপদ কেটে গেলে, সময় মতো কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করবে৷ মাস অন্তর কিস্তি পরিশোধ করার সঙ্গে শায়লার সাথে যোগাযোগ বেড়ে যায়। পরে শায়লা নিজে থেকে প্রস্তাব দেয়। সে কেনো জানি, হয়তো কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে হলেও প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। তবে ধারকৃত টাকা শোধ করেছে সে।
শায়লাকে ফোন লাগালো। দু’বার রিং হতেই শায়লা ফোন রিসিভ করে বলে, ” আয়ু এখন কেমন আছে?”
–” ও তোমার হাতের রান্না খেতে চাচ্ছে। তোমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। আসতে পারবে?”
–” হ্যাঁ। আমি রান্না-বান্না করে নিয়ে আসছি।”
ফাহাদ সাহেব কল্পনাও করেনি শায়লাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পরও একঘণ্টার মধ্যে ও আয়ুর জন্য রান্না করে সত্যি হসপিটাল এ আসবে৷ কেবল শায়লাকে কেবিনের ভেতরে ঢুকতে দিলো। শায়লাকে কেবিনে ঢুকতে দেখে আয়না অনেক সুন্দর করে হাসে যেন অনেক আপন কোনো মানুষের সঙ্গে দেখা হলো। শায়লাও হাসলো।
সমুদ্র ওকে ভাত বেড়ে খেতে দেয়৷ আয়না নিজ হাতে কচু ভর্তা দিয়ে খুব তৃপ্তি করে ভাত খায়৷ আজকে নিজেজ সুন্দর গুছিয়ে একাই ভাত খাচ্ছে৷ নোংরাও করেনি কিছু। আয়নাকে দেখে শায়লারও খারাপ লাগছে অনেক। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। তার জন্য আয়ুর এই অবস্থা। সে আয়ুর লাইফ হেল করে ফেলেছিলো৷ আসলেই কী দরকার ছিলো এমন কারো সাথে ওর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার যে নিজেই মুভ অন করতে পারেনি৷ মেয়েটা নিশ্চয়ই প্রেগন্যান্সির টাইমে কচু দিয়ে ভাত খেয়েছিলো আরাম করে, সেটিই মনে রেখেছে৷
সমুদ্র শায়লাকে আস্তে করে বলে, ” থ্যাংকস আন্টি৷ আপনার জন্য আয়ু আজকে পেট ভরে ভাত খাচ্ছে৷ সকালেও ঠিকমতো খায় নি। ”
শায়লা ভারাক্রান্ত স্বরে বলে, ” সমুদ্র, আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাদের অজান্তেই তোমাদের অনেক বড় ক্ষতি করে দিয়েছি। আমাকে হয়তো সারাজীবন অভিশাপ দিতে তোমরা।”
সমুদ্র তাকে অবাক করে দিয়ে বলে, ” আপনি সঠিক সময় না আসলে, মিসক্যারেজের টাইমে আয়ুর আরোও শারীরিক অবনতি হতে পারতো। ক্ষতিও করছেন আবার সাহায্যই করলেন। সাহায্যটা মনে রাখবো।”
শায়লা চৌধুরী পারলেন না বিয়ের সাতদিন অন্তর সমুদ্রকে বলা মিথ্যা ডিভোর্স দেওয়ার অভিযোগ গুলো। তার শিক্ষিত মন তাকে সমুদ্রের সামনে নিচে নামতে দিচ্ছে না। সে বলে, ” তুমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আয়ুকে আমরা দেখে রাখবো। তোমার একটু রেস্ট দরকার।”
সমুদ্র আয়ুর দিকে তাকিয়ে বলে, ” আয়ু, আমি একটু বাসায় যাই?”
আয়না জবাব দিলো, ” কেনো বাসায় যাবে কেনো? আমার সঙ্গে একেবারে যাবে।”
–” গোসল করবে ও।”
শায়লা আয়ুর প্রশ্নের জবাব দিলো৷ আয়না একদণ্ড ভেবে বলে, ” তুমি অন্যকোথাও যাবে নাতো?”
সমুদ্র বলে, ” না। আমি এখানেই থাকবো। যাবো না কোথাও।”
শায়লা আন্টি বলে, ” আয়ু, সমুদ্র কোথাও যেতে পারবে না তো আমি থাকলে।”
আয়না পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, ” কেনো?”
শায়লা বুদ্ধি করে জবাবে বলে, ” আমি তোমাদের বিয়ে দিয়েছি না? আমি থাকলে মানে যে বিয়ে দিয়েছে সে উপস্থিত থাকলে, যারা বিয়ে করেছে তাদেরকেও থাকতে হয়। সমুদ্র অন্যকোথাও যেতে পারবে না। ও গেলে আমি ধরে-বেঁধে এনে দিবো তোমার কাছে৷ কিন্তু ওর এখন একটু রেস্ট দরকার। ও বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হতে যেতে দাও মা।”
আয়নার বুঝি কথাগুলো ভালো লাগলো। সে সমুদ্রকে যেতে দিলো। সমুদ্র যাওয়ার পর আয়না স্বভাবত শায়লার অনেক প্রচুর কথা বললো। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। শায়লাও উত্তর দিলো। নিজ থেকে গল্প করলো। আয়না দ্বিতীয়বার ভাত নিলো। আবার নাকি ভাত খাবে।
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪০
আয়না যখন খাচ্ছিলো ফাহাদ সাহেব সাহস জুটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। বাবাকে দেখামাত্র আয়না অবাক হলো। এরপর বলে উঠে, ” বাবা তুমি এসেছো। কেমন আছো? দুপুরে ভাত খাইছো? নাহলে বসো আমার সঙ্গে। ভাত খাও।”
ফাহাদ সাহেব আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। কেদে ফেলেন শব্দ করে। তারপর মেয়েকে জড়িয়ে নিয়ে বলে, ” আমার মা। আমার মেয়ে তো আমার বড় মা।”