আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৭

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৭
Raiha Zubair Ripti

সকালে,,,,
সন্ধ্যা ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ হাতে নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। বসার ঘরে আসতেই দেখতে পেলো আষাঢ় বসে আছে নিখিলের সাথে। কিছু একটা নিয়ে ডিসকাশন হচ্ছে। এরমধ্যে চোখাচোখি হলো আষাঢ় আর সন্ধ্যার। সন্ধ্যা চোখ সরিয়ে নিলো। তবে আষাঢ় সরালো না চোখ। চোখ তো বেহায়া একটা অঙ্গ। এটা কথা না শুনলে আষাঢ়ের কি করার থাকতে পারে?

নিখিল একটা ফাইল আনতে রুমে চলে গেলো। যাওয়ার পথে অবশ্য সন্ধ্যার সাথে চোখাচোখি হয়েছিল। কেনো যেনো যখন তার আর সন্ধ্যার চোখাচোখি হয় তখনই নিখিল দেখতে পায় সন্ধ্যার কঠোর চাহনি। তখন ভেতর থেকে নিখিলের চাপা একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।
ইশ মেয়েটা তার অপ্রাপ্তির ঝুলিতে থেকে গেলো৷ সন্ধ্যা কে না পাওয়ার থেকেই শুরু হলো অপ্রাপ্তির ঝুলি পূর্ণ হওয়ার। এতো অপূর্ণতা… ঝুলিটাও তো ভরে আসলো। এরপর? এরপর কি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে নিখিল?
সন্ধ্যা মুখ ধুয়ে রুমের দিকে আসতে নিলে রাত ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ এ্যাই মিস সন্ধ্যাতারা দাঁড়ান..!
সন্ধ্যা পেছন ফিরে তাকালো। রাত এগিয়ে আসছে। আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সন্ধ্যা একবার আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে রাতের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কি সন্ধ্যাতারা? আমার নাম সন্ধ্যাতারা? আমার নামটাকে পাইছেন কি আপনারা ভাই? একজন নামের শেষে তারা লাগান তো আরেকজন বতী। আমার নাম সন্ধ্যা নট বতী ওর নট তারা। নাম যেটা সেটায় ডাকুন।
আষাঢ় বাঁকা হাসলো। রাত ভেবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
-“ আপনাকে বতী ডাকে কে আবার?
সন্ধ্যা আষাঢ়ের দিকে তাকালে আষাঢ় গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-

-“ তুই এখানে কেনো রাত?
রাত পেছন তাকালো। এতক্ষণ ভাইকে তো সে দেখেই নি। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে একটু গুটিয়ে নিলো নিজেকে।
-“ এমনি আসলাম ভাইয়া। কিন্তু তুমি এখানে যে? হসপিটালে যাও নি যে?
-“ আজ রাতে ডিউটি সেজন্য।
-“ ওহ্ তাহলে তো আজ সারাদিন ফ্রী আছো৷ ঘুরতে যাওয়াই যায় তাহলে। মিস সন্ধ্যাবতী.. ওপ্স সরি আমি ও বতী বলে ফেলছি। সন্ধ্যাতারা যাবেন আমাদের সাথে ঘুরতে? শ্রেয়া নিখিল ভাই,আমি ভাইয়া আপনি গেলে দারুন মজা হবে।
সন্ধ্যা রুমে যেতে যেতে বলে যায়-

-“ অ্যাম নট ইন্টারেস্টেড।
রাত সন্ধ্যার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আষাঢ়ের পাশে বসলো। তারপর ভাবুক হয়ে বলল-
-“ ভাই সন্ধ্যাতারা কেমন যেনো আজীব প্রাণি। সবসময় গম্ভীর, হয়ে থাকে। মেয়ে মানুষ এমন হয় নাকি?
আষাঢ় গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ তুই আজকাল একটু বেশিই সন্ধ্যা তারা সন্ধ্যা তারা করছিস না? পড়াশোনা করতে দেখা যায় না কেনো? আর ওর নাম সন্ধ্যা সো ও কে সন্ধ্যা বলে ডাক..তারা লাগাবি না আর বতী তো দুরস্ত।
রাত হকচকিয়ে গেলো৷ তার ভাইয়ের কি সমস্যা তারা বলে ডাকলে? মাথায় আসলো না রাতের। এরমধ্যে নিখিল চলে আসলো ফাইল নিয়ে৷ আষাঢ় ফাইল টা দেখে নিয়ে বলল-

-“ আমি ডক্টর আনিশা কে রিপোর্ট টা পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর উনি কিছু বললে আমি জানাবো। আর হুটহাট কোনো ডিসিশন নিস না নিখিল। সময় নে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিখিল সোফায় বসলো। রাত ফাইলের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কিসের রিপোর্ট ভাই এটা? আর নিখিল ভাই কোন ডিসিশন নিছেন?
-“ কোনো ডিসিশন নেয় নি নিখিল। আমি যাচ্ছি তুই ও আয়।
আষাঢ় চলে গেলো। রাত নিখিলের দিকে তাকালো। মুখ জুড়ে তার অমাবস্যা ঘিরে আছে। রাত নিখিলের হাতের উপর হাত রেখে বলল-

-“ আর ইউ ওকে নিখিল ভাই?
নিখিল স্মিত হেঁসে বলল-
-“ ইয়াহ্ অ্যাম ওকে।
নিখিল উঠে চলে গেলো। রাত ও উঠে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে শ্রেয়া ডেকে উঠলো রাত কে। রাত দাঁড়িয়ে গেলো। শ্রেয়া কাছে এসে বলল-
-“ তোমার ভাই আর নিখিল কি নিয়ে কথা বলছিলো রাত?
-“ আমি তো জানি না শ্রেয়া। কোনো একটা ডিসিশন নিয়ে কথা বলছিলো নিখিল ভাইয়ের। বলল ভুলভাল ডিসিশন না নিতে।
শ্রেয়ার মুখ কঠোর হয়ে আসলো। রাতের সামনে থেকে সরে রুমে আসলো। দেখলো নিখিল কপালে হাত ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। শ্রেয়া নিখিলের পাশে দাঁড়িয়ে কঠোর গলায় বলল-

-“ তুমি কোন ডিসিশন নিতে চাইছো নিখিল?
নিখিল জবাব দিলো না। শ্রেয়া এবার নিখিলের হাত কপাল থেকে সরিয়ে বলল-
-“ চুপ করে আছো কেনো? বলো? কোন ডিসিশন নিতে চাইছো তুমি হুমম?
নিখিল ঝাড়া দিয়ে শ্রেয়ার হাত সরিয়ে দিলো। শোয়া থেকে উঠে বসে বলল-
-“ তুমি মনে মনে যা ভাবছো সেটারই ডিসিশন নিতে চাচ্ছি।
শ্রেয়া অবাক হলো। থতমত চেহারায় বলল-

-“ মানে তুমি কি আমায় বাই এনি চান্স ডিভো…..
-“ হ্যাঁ সেটাই দিতে চাচ্ছি। কারন তোমার সাথে আমার আর থাকা পসিবল হচ্ছে না শ্রেয়া। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড আমি এতো অপূর্ণতা নিয়ে থাকতে চাই না।
-“ তুমি কি সন্ধ্যা কে দেখে আবার উইক হয়ে পড়ছো? তুমি কি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে সন্ধ্যাকে বিয়ে করতে চাইছো? মেয়েটা এতো বছর পর এসেও শান্তি দিলো না!
নিখিল তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-

-“ তার সুখ শান্তি কেঁড়ে নিয়ে বলছো সে তোমার সুখ শান্তি কেঁড়ে নিয়েছে! আমি খুবই অবাক হই একই মায়ের পেটের দুই বোন কি করে দুই ভিন্ন গ্রহের হতে পারে? একজন মাটি তো আরেকজন অহংকারে আকাশের চাঁদ হতে চায়। সে যাই হোক.. আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো তোমার তা পূরণ হয়েছে। সেই টুকু নিয়েই হ্যাপি থাকো। আমি চেয়েছিলাম বিশ্বাস করো তোমাকে মানিয়ে নিয়ে চলতে। তবে আমি অপারগ.. পরিশেষে তোমার সাথে আমার পথ চলা দীর্ঘ হবে না।
শ্রেয়ার বক্ষস্থল কেঁপে উঠলো। যাকে পাওয়ার জন্য এতো কিছু করলো সেই যদি তাকে ছেড়ে দেয় তাহলে পেয়ে কি লাভ হলো। শ্রেয়া এবার নিখিলের হাত চেপে ধরে বলল-

-“ এমন টা কেনো বলছো নিখিল? আমি তোমাকে ভালোবাসি..প্লিজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলো না। আমি তো ডক্টর দেখাচ্ছি.. নিশ্চয়ই কোনো সলিউশন পাবো আমরা।
-“ তাহলে সেটা তোমার জন্যই মঙ্গল। তবে আমি কিন্তু কোনো কম্প্রোমাইজ করতে পারবো না তোমার জন্য।
বিকেলে সন্ধ্যা বাসা থেকে বের হলো শরিফার সাথে। কারন তারা ফুচকা খেতে যাচ্ছে। শরিফাই ডেকে নিয়ে এসেছে সন্ধ্যা কে। রাত নিচেই পোলাপানের সাথে ক্রিকেট খেলছিলো। সন্ধ্যা আর শরিফা কে দেখে দৌড়ে এগিয়ে এসে বলল-

-“ কিরে সরিষা কোথায় যাচ্ছিস? আমাকেও নিয়ে যা।
আকস্মিক রাতের কন্ঠ শুনে চমকে গেলো শরিফা। পাশে তাকিয়ে রাত কে দেখে বলল-
-“ মেয়েদের মধ্যে আপনি গিয়ে কি করবেন?
-“ তোদের পাহারা দিতে। দিনকাল ভালো না যদু তোদের ধরে নিয়ে চলে যায় কেউ?
-“ আমরা বাচ্চা নই।
-“ বড়ও তে নস৷ মিস সন্ধ্যাতারা আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?
-“ ফুচকা খেতে।
-“ ওয়াও আমারও পছন্দ ফুচকা। চলুন চলুন আজ আমি আপনাদের ট্রিট দিব।
সন্ধ্যা সরু চোখে তাকালো। ছেলে মানুষের ও ফুচকা এতো পছন্দ! সন্ধ্যার মোটেও মেয়েলি স্বভাবের ছেলে তেমন একটা পছন্দ না।
অতঃপর তারা চলে আসলো ফুচকার দোকানে। দোকানদার কে তিন প্লেট ফুচকা দিতে বলল। দোকানদার ফুচকা দিলো। তিনজনে খাওয়া শুরু করলো। পাশ দিয়েই আষাঢ় আর আরাফাত যাচ্ছিলো। আরাফাত তিনজন কে এক সাথে দেখে আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ কিরে ওরা এখানে কেনো?
আষাঢ় না তাকিয়েই বলল-
-“ কারা?
-“ ঐ দেখ..তোর ভাই শ্রেয়ার বোন,আর শরিফা।
আষাঢ় পাশ ফিরে তাকালো। আষাঢ আরাফাতে বাসা থেকে আসছিলো। সন্ধ্যাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। তার সামনে রাত কে দেখে পকেট থেকে ফোনটা বের করে রাত কে ফোন করলো। রাত ফুচকা খেতে খেতে ফোনটা রিসিভ করতেই বলল-

-“ হ্যালো ভাইয়া বলো।
-“ তুই কোথায়?
-“ এই তো বাহিরে আসছি একটু।
-“ একা?
-“ নাহ্ সাথে সন্ধ্যাতার,আর সরিষা আছে।
-“ আচ্ছা।
আষাঢ় ফোন কেটে দিলো। আরাফাত এগিয়ে যেতে নিলে আষাঢ় বলে উঠে –
-“ তুই কোথায় যাচ্ছিস?
-“ কোথায় যাচ্ছি মানে! দেখছিস না সামনে কে?

আষাঢ় তপ্ত শ্বাস ফেলো। আল্লাহ তাকে একটা ভাই আর একটা এমন ফ্রেন্ড দিছে যে সবসময় এখন আতঙ্কে থাকতে হয়। যদিও তাদের দ্বারা তেমন টা হওয়া সম্ভব না তবুও জেলাশ বলেও একটা কথা তো আছেই।
আরাফাত এগিয়ে গিয়ে সন্ধ্যার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ আরেহ্ আমাদের না ডেকেই একা একা খাচ্ছেন দেখি।
সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আরেহ্ মিস সন্ধ্যা চিনতে পেরেছেন আমায়? সেদিন আপনার মা’কে নিয়ে যে এসেছিলেন।
-“ হ্যাঁ চিনতে পেরেছি।
শরিফা তাকালো আরাফাতের দিকে। আরাফাত ভুলেও তাকালো না শরিফার দিকে। রাত ফুচকার প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল-

-“ নাও আরাফাত ভাই খাও। ভাইয়া আসে নি?
আরাফাত ফুচকার প্লেট থেকে একটা ফুচকা উঠিয়ে নিয়ে বলল-
-“ ঐ যে রাস্তার ওপাশে।
সন্ধ্যা ও তাকালো। রাত ভাইকে আসতে বলল। আষাঢ় এগিয়ে আসতেই রাত প্লেট টা এগিয়ে দিয়ে বলল-
-“ ভাইয়া নাও।
আষাঢ় মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলল-
-“ আই ডোন্ট লাইক দ্যিস।
রাত সরিয়ে নিলো ফুচকার প্লেট। আষাঢ় আলে গেলো। সন্ধ্যা তপ্ত শ্বাস ফেলে ফুচকার খালি প্লেট দোকানদারের দিকে এগিয়ে দিয়ে টাকা পে করতে নিলে রাত বাঁধা দিয়ে বলে-

-“ আরে টাকা দিচ্ছেন কেনো? বললাম না আমি ট্রিট দিব?
সন্ধ্যা টাকা টা দোকানদার কে দিয়ে বলল-
-“ তার দরকার নেই। ট্রিট টা না হয় আমিই দিলাম।
শরিফা চলো যাওয়া যাক।
শরিফা হাঁটা ধরলে পেছন থেকে আরাফাত বলে উঠল-
-“ বেয়াদব মেয়ে একা একা এসেছে ফুচকা খেতে।
শরিফা দাঁড়িয়ে গেলো। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ সন্ধ্যা তুমি হাঁটো আমি আসতেছি।
সন্ধ্যা হাঁটতে থাকে রাত ও সন্ধ্যার পেছন যেতে নিলে আরাফাত রাত কে ডেকে বলে-
-“ রাত একটা পানির বোতল কিনে আনো তো।
রাত দোকানের দিকে চলে যায়।
সন্ধ্যা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির মোড়ে আসতেই দেখতে পায় আষাঢ় দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। সন্ধ্যা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আষাঢ় পেছন থেকে ডেকে বলে-

-“ এই মেয়ে দাঁড়াও।
সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে বলল-
-“ আমাকে বলছেন?
আষাঢ় ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে এগিয়ে এসে বলল-
-“ এখানে মেয়ে বলতে তুমি ছাড়া আর কেউ আছে?
-“ না নেই। তা ডেকেছেন কেনো?
-“ এমনি।
সন্ধ্যা ভ্রুকুটি করে চলে যেতে নিলে আষাঢ় বলে উঠে –
-“ আরে চলে যাচ্ছো কেনো?
-“ তো বাসায় যাব না আমি? আর আপনি আমাকে গতকাল রাতে ফোন দিছিলেন কেনো?
-“ মনে আছে?
-“ মনে থাকবে না আবার? আর আপনারা দুই ভাই আমার নামের সাথে এটা ওটা লাগান কেনো?
-“ রাত কে মানা করে দিবে তারা না ডাকতে।
-“ আপনাকেও তো মানা করছি৷ আপনিও ডাকবেন না।
বুকে দু হাত গুঁজে বলল-

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৬

-“ তুমি ঠিক করে দিবে আমি কি নামে ডাকবো তোমায়?
-“ অবশ্যই।
-“ ওকে।
-“ কি ওকে?
-“ বাসায় যাও। আসছি।
আষাঢ় চলে গেলো। সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসলো।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৮