প্রেমসুধা পর্ব ৫১
সাইয়্যারা খান
— তুমি কিছু লুকাচুরি করছো হানি?
গায়ে টিশার্ট জড়াতে গিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করে তৌসিফ। হঠাৎ প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো পৌষ৷ পেছন থেকে তৌসিফে’র টিশার্ট টেনে নামিয়ে দিয়ে নিজেকে সামলে পাল্টা প্রশ্ন করে,
— আমাকে চোর মনে হয় আপনার?
— হওয়ার কি আছে। চুন্নি ই তো তুমি।
দুই কদম পেছনে সরে পৌষ। অবাক স্বরে বলে,
— আপনার সংসার থেকে কয় পয়সা হাতিয়ে বাপের বাড়ী পাঠালাম আমি যে এই কথা বলছেন? কখন দেখেছেন কিছু ধরতে? ভালোই হলো কথাটা বলে দিলেন। আজ থেকে সাবধান থাকব।
ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে কথাগুলো বললেও তৌসিফ ভ্রু কুঁচকালো৷ ভালো লাগে নি তার কথাগুলো। ফাইজলামি করে বললেও ভালো লাগে নি। এটা কেমন কথা? পৌষ’র পিছনে হাত দিয়ে মাথায় করা ঝুটিটা ধরে তৌসিফ। আলতো হাতে চাপ দিয়ে নিজের কাছে এনে মুখটা নামিয়ে বলে,
— চোরকে চোর বলেছি তাতে এত রাগ কিসের?
পৌষ ঢোক গিললো। তৌসিফে’র মেজাজ বিগড়েছে এটা বুঝতে তার সময় লাগে নি৷ পৌষ ঠোঁটটা চওড়া করে হাসতে চাইলো কিন্তু তার আগেই তৌসিফ বলে উঠলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— আমার ভালোবাসা চুরি করেছো তুমি।
পৌষ আড় চোখে তাকাতেই তৌসিফ বললো,
— এভাবে চোখের ইশারা দিয়ে আর কত মা’রবে আমাকে হু?
পৌষ মাথাটা নিচু করে হালকা স্বরে বলে,
— আমি কি আপনার মেজাজ খারাপ করে দিলাম?
— তোমার কি মনে হয়?
— হ্যাঁ মনে হয়।
— কথা বলার সময় বুঝে বলা উচিত। এই যে কথা দিয়ে আঘাত দিলে কতটা ব্যথা পেলাম। কোনদিন বলেছি কিছুতে হাত দিও না বা কোন জিনিস তোমার না? বলি নি। এ-র মানে আমার সবটাই তোমার পৌষরাত।
— আমি কিন্তু….
— তুমি সেভাবে না বললেও ইট ডাজেন্ট সাউন্ড গুড হানি।
— আচ্ছা। মাফ চাইছি। খুবই দুঃখীত।
— এত সোজা?
ঠোঁট উল্টে পৌষ জিজ্ঞেস করে,
— কি করতে হবে?
— দাঁড়াও সোজা হয়ে দেখাচ্ছি আমি।
মাথা নিচু করে রুম ত্যাগ করে পৌষ। ভালোই লজ্জা পেলো সে। তৌসিফ পেছন থেকে হাতে একটা শাল দিয়ে এলো। বাইরে এখন ভালোই ঠান্ডা। কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারপাশ। তায়েফা’কে বিদায় জানিয়ে ওরা বেরিয়ে এলো। উদ্দেশ্য তৌসিফে’র শশুর বাড়ী। বউয়ের আবদার ফেলতে না পেরে এই যাত্রা নাহয় ও বাড়ীতে নিজের পায়ের ধুলা দিতে কোন ভাবেই রাজি না তৌসিফ। পৌষ’র চাচারা যে স্বার্থপর তা ঢের জানা আছে তার।
এজন্যই তৌসিফ পৌষ’র দূরত্ব বাড়িয়েছে ও বাড়ী থেকে। যদিও এতে পৌষ’র মন খারাবি তার নজরে পরে কিন্তু করার কিছুই নেই। ভাই-বোনদের সাথে পৌষ ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বললেও তৌসিফ না করে না কিন্তু ঐ যে, সরাসরি দেখা সেটও করতে দেয় না থাকাতো পরের কথা।
গাড়িতে উঠেই পৌষ জিজ্ঞেস করলো,
— আমি সোজা ওখানে যাচ্ছি তাই না?
— হ্যাঁ।
পৌষ নজর ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখলো। সামনে ড্রাইভার। আগে পরে কোন প্যাকেট তো দূর পানির বোতল বাদে কিছুই নেই। অল্প লজ্জা পেলো পৌষ। ইনি, মিনির জন্য অন্তত চিপস নেয়া যেতো। বাবুর হাতেই বা কি দিবে পৌষ? তৌসিফ তো কিছুই বললো না। হঠাৎ নিজের গলায় হাত যেতেই মনটা উৎফুল্ল হলো। পাতলা একটা সোনার চেইন। এটা পৌষ’র নিজের। গলা থেকে খুশি হাসিমুখে এটাই দিবে পৌষ। চেইনটা তার খুবই প্রিয়, মায়ের কি না। পৌষ ভাবলো হাসিমুখে দিতে দিতে বানিয়ে ছানিয়ে কিছু বলে দিবে। কেউ বুঝবে না। কাজটা অবশ্য তৌসিফে’র অগোচরে করা দরকার। যদি বুঝে আবার মাইন্ড করে। পৌষ অবশ্য আশা রাখে না তাই হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে অতি সূক্ষ্ম এক আশা তো ছিলো যে তৌসিফ নতুন বাবুকে ফুপা হিসেবে কিছু দিবে।
আলতো হাতে নিজের কাছে টানলো তৌসিফ। পৌষ মাথাটা কাঁধে রাখতেই তৌফিক জিজ্ঞেস করলো,
— তখন বললে না কি লুকাচ্ছিলে?
পৌষ যেন মহা বেকায়দায় পরলো। এই লোক এত চতুর। তায়েফা’কে বলে পৌষ কাল ডেট নিয়েছে। ডাক্তার দেখাবে। তার মনটা কু ডাকছে। মনে হচ্ছে নিশ্চিত কোন সমস্যা আছে তার।
তৌসিফে’র শক্ত হাতের মাঝে নিজের ছোট হাত রাখে পৌষ। ছোট্ট করে বলে,
— একটা তুলতুলে হাত দরকার মাঝখানে।
— হুম।
— আপনার বাবু অনেক পছন্দ।
— অনেক।
— আমাদের বাবু আসলে আমার আদর কম পরবে না তো?
— প্রশ্নই উঠে না। উল্টো বাবু তোমাকে আদর করবে। ভালোবাসবে।
পৌষ ক্ষুদ্র শ্বাস ফেললো। তার ভেতরটা চুপসে যাচ্ছে বারংবার।
গেটের সামনে গাড়ি থামতে না থামতেই হুরমুর করে বাচ্চাগুলো ছুটে এলো। আপা ডাকের বন্যা বয়িয়ে দিয়ে তারা একসাথে জড়িয়ে ধরলো আদরের বোনকে। নিখাঁদ এক ভালোবাসা এদের। পৌষ কেন জানি কেঁদে ফেললো। ওর বুকটা হু করে উঠলো। হাজার স্বামী ভালোবাসুক কিন্তু এদের ভালোবাসা তো ভিন্ন। ছোট থেকে এখনে বড় হলো পৌষ অথচ এখন দিনের পর দিন এদের দেখা মিলে না। চাইলেও তৌসিফ করতে দেয় না।
ইনি, মিনিকে একসাথে কোলে তুলে তৌসিফ। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে চাচিরা সহ হেমন্ত বেরিয়ে এলো। বাড়ীতে ভালোই আয়োজন হচ্ছে। পৌষ অবাকই হলো। মুখে এখনও কিছু বলতে পারলো না ও। কেন জানি মুখ দিয়ে কথা বেরুয় না।
পিহা ওকে জড়িয়ে ধরেই আছে। কান্নারত গলায় ডাকে,
— আপা?
— হু।
— তোমার কাছে কত যেতে চাইলাম কেউ নিলো না আপা। জৈষ্ঠ্য ভাই দুই দিন খায় নি। চৈত্র ভাইকে গালিগালাজ করেছে চাচা।
পৌষ চাপা স্বরে বলে,
— কেন?
— তোমার কাছে যেতে চাইছিলো বলে।
পৌষ’র গলা ধরে আসে। জৈষ্ঠ্য গম্ভীর অথচ বোনের হাতটা ধরে আছে। চাচিরা হাসিমুখে ভেতরে নিতেই পৌষ বসলো না বরং হেমন্তকে জিজ্ঞেস করলো,
— ভাবী তোমার রুমে?
— হ্যাঁ।
পৌষ তৌসিফে’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— আপনি একটু বসুন আমি দেখে……
–আমিও দেখব।
পৌষ ঢোক গিললো। তৌসিফ গেলে গলার চেইনটা কিভাবে দিবে ও? না দিলেও তো খারাপ দেখায়।
ঠোঁট কামড়ে এগিয়ে গেলো পৌষ। শ্রেয়া ওকে দেখা মাত্রই হাত বাড়ালো। বাড়ন্ত হাতটা ধরে পৌষ। ছলছল চোখে দু’জন কথা বলে কিন্তু কণ্ঠনালী ভেদ করে কথা আসে না। হেমন্ত বুঝে। তৌসিফ’কে বসতে দিয়ে বলে,
— আমার ছেলে দেখবি না?
পৌষ মাথা নাড়ে। পাশ থেকে ঘুমন্ত ছোট একটা জানকে কোলে তুলে হেমন্ত। পৌষ’র শরীরটা শিউরে উঠে। অতি নরম, ছোট্ট একটা দেহ। পৌষ হাত বাড়াতেই হেমন্ত দিয়ে দিলো। পৌষ মাশা আল্লাহ বলেই বললো,
— এত তোমার মতো হলো হেমু ভাই।
হেমন্ত মাথা নাড়ে। শ্রেয়া বলে,
— নাকটা তোর মতো।
তৌসিফ উঠে এলো। আগ্রহ নিয়ে বললো,
— আমার কাছে দাও।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে তৌসিফ কোলে তুলে চুমু দিলো কপালে। নরম সুরে নানান কথা বললো ছোট্ট ঘুমন্ত এক বাচ্চার সাথে। পৌষ’র বুক কামড়ে উঠে। যদি ওর বাচ্চা নাহয় তাহলে তৌসিফ কি করবে? ওকে ছেড়ে দিবে? দিতেই বা কি? যার টাকা আছে তার কি বউয়ের অভাব হয়? পৌষ’র মাথা ভনভন করছে। ও শ্রেয়ার পাশে বসে পরলো। মনে মনে বললো, “উনি তোকে ভালোবাসে। বাবুর জন্য ছাড়বে না”।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের করে তৌসিফ যার ভেতরে ছোট্ট একটা চেইন জাতীয় কিছু। তৌসিফ দিতে দিতে বললো,
— ছেলেদের তো স্বর্ণ নিষিদ্ধ তাই প্লাটিনাম দিলাম। নিয়ম তো মুখ দেখে স্বর্ন দেয়া। তবে সেটা তোলা রইলো। ছেলের বউকে দিয়ে পুষিয়ে দিব।
বাচ্চাটাকে পুনরায় বুকে জড়ালো তৌসিফ। তাকে এই প্রথম এত কথা বলতে দেখলো হেমন্ত আর শ্রেয়া।
হাজারো বায়না, মুখ গোমড়া বা আবদার কোনটাই কাজে লাগলো না। চাচারা সহ অনুরোধ করলো থাকতে কিন্তু তৌসিফ অনড়। তার বউ অসুস্থ। কিছুতেই রেখে যাবে না আর না ই এখানে সে নিজে থাকবে।
পৌষ ভাই-বোনকে জড়িয়ে আদর করে বেরিয়ে গেলো। তৌসিফে’র দিকে তাকালো না অব্দি। পেছনে তৌসিফ বিদায় জানিয়ে নিজেও উঠলো। গাড়িতে বসা মাত্রই পৌষ একটু দূরে সরে বসে। তৌসিফ জানে রেগে ফুলে আছে তার বউ। এখন একে ঘটাতে গেলেই উল্টো তৌসিফ’কে ঘেটে দিবে। না জানি ড্রাইভারের সামনেই কি বলে ফেলে। ভরসা নেই তার বউকে।
তবুও তার ভালো লাগলো না দূরত্ব। নিজে কাছে যেতেই পৌষ আর নড়ে না৷ তৌসিফ আলগোছে পৌষ’র মাথাটা নিজের বুকে নিলো। আলতো হাত বুলালো গালে। কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— আবার এসো।
— তার আর প্রায়জন হবে না।
ঠান্ডা স্বর। বড়ই ঠান্ডা যেন বরফ। তৌসিফ ভাবুক হলো। বউটা কি তাহলে বেশিই রেগে আছে? তার রাগ প্রকাশের মাধ্যম তো চিল্লাপাল্লা করা এভাবে ঠান্ডা হওয়া না৷ শালটা দিয়ে ভালো মতো পৌষ’কে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। পৌষ চুপ একদম। কথা বললো না। তৌসিফ বেশিই হাশফাশ করছে। একবার গালে হাত বুলাচ্ছে তো একবার মাথায়। তোতাপাখিদের তো চুপ থাকতে নেই। তারা বুলি ছড়াবে। সারাক্ষণ কথা বলবে।
সোহা শাশুড়ী’র খাবারটা রুমে এনে দিতেই তিনি বললেন,
— স্বামী স্ত্রী ঝগরা লাগবেই। সেখানে শোনা যাবে একজনের গলা। দু’জন চিল্লাপাল্লা করলে আশেপাশের মানুষ কি বলবে?
সোহা চমকালো। শাশুড়ী তাকে পছন্দ করে না এটা তো স্পষ্টই। সোহা খাবার রেখে জিজ্ঞেস করলো,
— কিছু লাগবে আর?
— না। যাও এখন। তোমার শশুরকে খাবার দাও।
— আচ্ছা।
সোহা বেরিয়ে গেলো। টেবিলে খাবার দিতেই মেহেদীও চলে এলো। খেতে বসা মাত্রই শশুর ওকেও খেতে বলে। সোহা খায় না৷ জানায় পরে খাবে। অল্প খেয়ে মেহেদী উঠে গেলো। মায়ের কাছে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বেরিয়ে গেলো মেহেদী। সোহা এসে আবার সবটা গুছিয়ে দিলো। জানালো,
— আজ আপনার সাথে ঘুমাই আম্মা। রাতে যদি সমস্যা হয়?
— দরকার নেই। ঘরে যাও।
সোহা তবুও শাশুড়ী’র পায়ের কাছে বসলো। মন চাইলো জিজ্ঞেস করতে, তার কেন অপছন্দ সোহা’কে কিন্তু প্রশ্ন করার প্রয়োজন পরলো না। সোহার ভেতরটা চিৎকার করে বললো, ” তুই নিজে ভালো যে কেউ তোর ভালো করবে?”
শাশুড়ীর ধমকে রুমে এলো সোহা। তার মনে হলো দাপট ধরে রাখা উচিত ছিলো। ঐ যে প্রথম রাতেই স্বামীর কাছে সবটা বিসর্জন দিলো তাই তো আজ মাস না গড়াতেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে তাকে।
সোহা ভাগ্যর উপর রাগ দেখালো। মিনু ফোন দিয়ে মন খারাপ করে। তাকে এখানে আনতে হবে। সোহা’র বাচ্চার মতো মিনু।
মেহেদী খাটের ওপর বসা ছিলো। সোহা’কে আসতে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। সোহা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে খাটের এক প্রান্তে শুয়ে পরে। মেহেদী কথা বলবে ভেবেছিলো কিন্তু হলো না। সে নিজেও সোহা’র পাশে শুয়ে পরে। রাত বাড়ে সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ঠান্ডা। মেহেদী সোহা’র পিঠে হাত রাখতেই সোহা বলে উঠলো,
— শরীর ভালো না।
মেহেদী চমকালো। ওর বুকটা ধকধক করছে। ও তো তেমন কিছু ইঙ্গিত দেয় নি। সোহা তাকে ভুল ভাবছে। সে তখনকার কথা গুলো মন থেকে বলে নি। কিভাবে যেন বেরিয়ে গেলো মুখ থেকে।
মেহেদী হাতটা ধরে নিজের কাছে টানতেই সোহা এলো। স্থান পেলো বুকে অতঃপর ফুঁপিয়ে করা কান্না। এক ঝাক অভিযোগ।
বিছানার উপর বসা পৌষ। তৌসিফ ওকে নামিয়ে দিয়ে বাইরে গিয়েছিলো। ফিরলো মাত্র। পৌষ খাবার আনলো না। নিজের কাজ সে নিজে করুক। পরক্ষণেই আর টিকতে পারলো না। উঠে গিয়ে খাবার বুয়াদের দিয়ে গরম করিয়ে টেবিলে রাখালো। তায়েফা ঘুমিয়ে যাওয়াতে পৌষ’র কথা হলো না।
মনটা বড্ড খারাপ হয়ে আছে কি না। তৌসিফ অবশ্য বুঝলো বউ এর মন খারাপ কিন্তু সে মানতে নারাজ।
টেবিলে বসেই বললো,
— তুমি বসছো না কেন?
— খাব না।
— না করার সুযোগ নেই।
— আপনার ইচ্ছে মতো খেতে হবে?
— অবশ্যই। চুপচাপ বসো এখানে।
তৌসিফ গম্ভীর কণ্ঠে বলায় পৌষ বসে। তৌসিফ নিজে মুখের সামনে ভাত ধরতেই পৌষ বললো,
— আমি হাত দিয়েই খাব।
— না শুনতে চাইছি না।
পৌষ মুখে দিলো যদিও বেশি খেলো না। ঘুমাতে গিয়েও তার রংঢং দেখা গেলো আজ। সে নাকি এই রুমে ঘুমাবে না। তৌসিফ ধৈর্য্যর পরিক্ষা বেশিক্ষণ দিলো না। দরজা আটকেই দিলো এক ধমক।
বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে দুই পা পিছু হটলো পৌষ। ভয় যে পেয়েছে তা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তৌসিফ এগিয়ে এসে ওর হাতটা ধরতেই অভিমানে টইটম্বুর পৌষ হুহু করে কেঁদে উঠে। তৌসিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজের কাছে নিয়ে বিছানায় বসলো। মাথায় হাত বুলালো। বুকে ঠাই দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— ওই বাড়ীতে থাকতে দিলাম না বলে এত অভিমান?
— আমার ভালো লাগে না।
— তারা স্বার্থপর।
— স্বাভাবিক।
— এমন আত্মীয় দিয়ে কি হবে পৌষ? তোমাকে আমি ভালোবাসি না? বলো বাসি না? আমার ভালোবাসা এতই কম পরলো যে একদিন থাকতে না দেয়াতে তুমি এতটা কাঁদছো?
পৌষ’র কান্না থেমে গেলো হঠাৎ। তৌসিফ ওর ভেজা গাল মুছে দিলো। পুণরায় বললো,
— শুধু আমার প্রেমে মাতোয়ারা থাকো পৌষরাত। আমার হয়ে থাকো। আমি সারাজীবন তোমায় আমার করে রেখে দিব।
পৌষ শুধু বললো,
— আমি ছোট বেলা থেকে ওখানে থেকেছি। তারাই পেলেপুষে আমাকে বড় করেছে।
— অস্বীকার করছি না। তুমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি।
— আমি কিছুদিন থাকতে চাই ওখানে। আপনি কেন এমন করছেন?
— আমার কথা অমান্য করে যেতে চাইলে যাও।
পৌষ চুপ করে গেলো। তৌসিফ জানে কিভাবে কাকে থামাতে হয়। পৌষ’র আরো কাছাকাছি আসতেই পৌষ বলে উঠলো,
— আপনার ভাইদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিন।
মুখ তুলে তৌসিফ প্রশ্ন করে,
— কারণ?
— তারাও স্বার্থপর।
— কে বললো?
— আমি বললাম। তাদের কাছে সাহায্য চেয়েও পাই নি।
তৌসিফ পৌষ’কে নিয়ে শুয়ে পরলো। কপালে চুমু দিলো। গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
— ভাই সবচাইতে বেশি সাহায্য করেছে। তারা জানতো আমি কোথায় আছি তাই তোমাকে কিছু বলে নি।
— বাহ। সবাই জানতো আমি বাদে।
— তুমি কথা এত প্যাঁচাচ্ছো হানি।
— আর বলব না।
— রেগে আছে আমার তোতাপাখি?
— না।
তৌসিফ ঐ দিকটা আর ঘাটলো না। পৌষ’র মন অন্যদিকে উদাসীন তা ভালোই টের পেয়েছে তৌসিফ। আরেক জায়গার চিন্তা ও এখানে দেখাচ্ছে।
তৌসিফ লোভী হলো। পৌষ’র পাশ ঘেঁষলো। চুলের ভাজে আঙুল চালিয়ে কানে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— প্রেমসুধা পানের অনুমতি পাব কি?
উত্তর অবশ্য আসে না। নীরবতার মাঝে তখন বাতাসের দাপটে পর্দা উড়ে। হুরমুর করে ঠান্ডা বাতাস ভেতর আসে। নভেম্বর রাতের সহনীয় ঠান্ডা কিন্তু প্রেমে মত্ত দু’জন ঠান্ডা বোঝে না। গভীর আলিঙ্গনে তারা উষ্ণতা ছড়ায়। দীর্ঘ বিরতির পরে আগমনটা অসহনীয় হয়ে উঠে। তারা ভালোবাসায় ডুব দেয়।
তৌসিফ আজও তৃপ্ত গলায় বলে,
প্রেমসুধা পর্ব ৫০
— আমার বাবু চাই পৌষরাত।
— হু।
— সত্যি ই চাই। খুব করে চাই।
আধ ঘুমে পৌষ আবারও উত্তর দিলো,
— হু।
তৌসিফ ওকে বুকে জড়ায়। তার ভেতর চাপা এক উত্তেজনা কাজ করে।