আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৫

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৫
Raiha Zubair Ripti

সূর্য্যি মামা তার রশ্মি চারদিকে ছড়িয়ে দিতে আরম্ভ করেছে। কনা ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নেয় কোচিং-এ যাওয়ার জন্য। সন্ধ্যা সে বসে আছে সোফায়। কনার সাথেই বাসা থেকে বের হয়ে নিচে যাবে। আষাঢ় বলেছে যেতে। কনা রেডি হয়ে সন্ধ্যার কাছে আসে। জুতা পড়তে পড়তে বলে-
-“ কিরে চল।
সন্ধ্যা উঠে দাঁড়ালো। ফোনটা হাতে নিয়ে বলল-
-“ হু চল।
কনা আর সন্ধ্যা বের হলো। গেটের সামনে আসতেই সন্ধ্যা বলে উঠল-
-“ তুই চলে যা।
-“ তুই যাবি না সাথে?
-“ না।
-“ কেনো?
-“ আমি তো তোর সাথে যাওয়ার জন্য নিচে আসি নি।
-“ তাহলে?

কথাটা বলেই কনা গেটের দিকে তাকাতে দেখে আষাঢ় আর ঐ বেয়াদব ছেলে টা আসতেছে। কনা যেন বুঝতে পারে কারণ সন্ধ্যা হঠাৎ একটু অস্বস্তি অনুভব করে।
-“ ওওওওও এর জন্য তোর নিচে নামা! বাহ তলে তলে কত কি বন্ধু? আর মুখে স্বীকার করো না বাহ্!
সন্ধ্যা বিরক্তি নিয়ে বলল-
-“ শাট-আপ তেমন কিছু না।
আষাঢ় রাত এগিয়ে আসলো। রাতের কাঁধে ব্যাগ। সে কোথাও একটা যাবে। সন্ধ্যা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখো বুঝলো তার ভাই আর সন্ধ্যার ভেতর হয়তো সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। আষাঢ় এসে সন্ধ্যার পাশে দাঁড়ালো। রাত মাথা নিচু করে চলে গেলো। কনা আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন?
আষাঢ় এক গাল হেঁসে বলল-
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি?
-“ আমিও ভালো আছি। আপনি তো ভাইয়া পুরো গোল খাইয়ে দিলেন।
-„ মানে?
-“ মানে আপনি দেশের মাটিতেই আছেন। অথচ আমার হাবাগোবা বিদ্রোহী বন্ধু ভেবে বসেছিল আপনি দেশের বাহিরে। সেই সাথে আমিও। আহঃ এই কয়দিন আমার বান্ধবীর চেহারার অবস্থা করুন ছিলো। চোখ মুখের লাবন্য হারিয়ে গেছিল। এখন ফিরে পেয়েছে। দেখুন না সেজন্য কেমন গ্লো করছে মুখটা। আবার হাল্কা সেজেছেও
আষাঢ় তাকালো সন্ধ্যার মুখের দিকে। কপালে গাঢ় টিপ,চুল গুলো হাত খোঁপা, বেশ পরিপাটি।
সন্ধ্যা কনাকে তাড়া দিয়ে বলল-

-“ দেরি হচ্ছে না তোর? যা।
কনা ঘড়িতে সময় দেখে বলল-
-“ হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি। কনা আষাঢ়ের পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল- “ভাইয়া বুঝাবেন ঘাড় ত্যাড়া মেয়েটাকে। এই মেয়েটা মুখে স্বীকার না করলেও আপনাকে কিন্তু ভালোবেসে ফেলছে।
আষাঢ় প্রতিত্তোরে স্মিত হাসলো। কনা চলে যাওয়ার পর আষাঢ় সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর মৃদু গলায় বলে:
-“ বেশ লাগছে কিন্তু তোমাকে।
সন্ধ্যা এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করলো। কেমন যেনো লজ্জা লজ্জা লাগছে। আষাঢ় সন্ধ্যার মুখ টা পরখ করে বলল-

-“ লজ্জা পাচ্ছো নাকি?
সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ লজ্জা কেনো পাবো?
-“ না মানে চুপ যে।
-“ তো বিপরীতে কি আমার কিছু বলার কথা ছিলো?
-“ অবশ্যই, থ্যাংকস। যাই হোক একটা হিসাব মেলাতে পারছি না।
-“ কি?
-“ এই যে আমি একটু আসতে বললাম আর তুমি চলে আসলে! না অব্দিও করলে না। ভেরি ইন্টারেস্টিং।
-“ আ…আপনি অন্যসব ভেবে বসবেন না। এমনি এসেছি। আমার নিজের ও কিছু কেনাকাটা ছিলো সেজন্য।
আষাঢ় ঠোঁটে এক আঙ্গুল দিয়ে বলে-

-“ ওহ্ রিয়েলি?
-“ ইয়াহ।
-“ বেশ চলো তোমাকে নামিয়ে দেই।
-“ কোথায়?
-“ সেকি তুমিই তো বললে তোমাট কেনাকাটা আছে। তো মলের সামনে নামিয়ে দেই চলো।
সন্ধ্যা পড়ে গেলো বিপাকে। আরে সে তো কোনো টাকাই নিয়ে আসে নি।
-“ আ..আপনার নামিয়ে দিতে হবে না। আমি একাই চলে যেতে পারবো।
-“ সমস্যা নেই চলো।
-“ আরে না আপনি যান।
-“ কেনো চলো।
-“ আমার টাকা তুলতে হবে ব্যুথ থেকে। অনেক ঝামেলা। আপনি তো হসপিটালে যাবেন। তো যান।
-“ আজ নাইটে ডিউটি। তুমি চলো। তোমাকে নিয়ে ঘুরাও হয়ে যাবে আসো।
-“ না থাক।
-“ আহঃ চলো না একটু ঘুরতে। নেক্সট উইক তো চলেই যাব। প্লিজ।

সন্ধ্যা প্রথমে একটু দ্বিধায় পড়ে যায়। কিন্তু আষাঢ়ের চেহারার মায়াভরা চাহনি দেখে শেষমেশ রাজি হয়ে যায়। আষাঢ় সন্ধ্যাকে নিয়ে শহরের বাইরে চলে আসে। জায়গা টা অসম্ভব সুন্দর। চারদিকে সবুজ মাঠ, গাছপালার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট একটি নদী। আষাঢ় গাড়ি থেকে নেমে সন্ধ্যা কে নামতে বললো। সন্ধ্যা নামলো গাড়ি থেকে।
নরম স্নিগ্ধ হাওয়ায় সন্ধ্যার চুলগুলো খুলে গেলো। বাতাসের সাথে উড়তে লাগলো চুল গুলো। সন্ধ্যা বিরক্ত হলো। হাত খোঁপা করে চুল গুলো বাঁধতে চাইলে আষাঢ় বাঁধা দিয়ে বলল-
-“ থাকুক না খোলা চুল। ভালো লাগছে দেখতে।
সন্ধ্যার আর চুল বাঁধার সাহস হলো না। দু’জনে পায়ে পা মিলিয়ে সামনের দিকে আগায়। হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা আইসক্রিমওয়ালা কে যেতে দেখে আষাঢ় এক মুহূর্তও দেরি না করে দৌড়ে গিয়ে আইসক্রিম কিনে আনে। সন্ধ্যা চেয়ে চেয়ে দেখে। আষাঢ় আইসক্রিম টা সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে-

-“ নাও।
সন্ধ্যা আইসক্রিম টা নিয়ে বলল-
-“ হঠাৎ এটা আনতে গেলেন কেনো শুধু শুধু।
-“ তুমি তো আইসক্রিম পছন্দ করো সেজন্য।
-„ জানলেন কি করে?
-“ কিভাবে জানলাম সেটা জানা জরুরি নয়। আমি সব জানি তোমার কি পছন্দ আর কি অপছন্দ।
-“ পাঁচ বছর ধরে কি আমাকে নিয়ে স্টাডি করেছেন নাকি?
-“ সেরকমই বলতে পারো।

সন্ধ্যা আইসক্রিম নিয়ে খেতে খেতে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকলো। নদীর পারে একটা নৌকা আছে। সন্ধ্যার ইচ্ছে করলো নৌকায় চড়তে। আষাঢ় সন্ধ্যার দৃষ্টি অনুসরণ করলো। তারপর সন্ধ্যার হাত চেপে ধরলো। সন্ধ্যা কেঁপে উঠলো। আষাঢ়ের তাতে হেলদোল নেই। সে সন্ধ্যার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল-
-“ মনের ভেতর চেপে রাখো কেনো কথা? যেটা ইচ্ছে হবে বলে ফেলবে,যেটা মনে চাইবে করে ফেলবে।
আষাঢ় সন্ধ্যাকে নিয়ে নৌকায় উঠে বসলো। নৌকার মাঝির দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ মামা চালানো শুরু করুন নৌকা।
মাঝি চালাতে শুরু করে। সন্ধ্যা অবাক হয়ে বলল-
-“ বুঝলেন কি করে আমার নৌকায় উঠতে ইচ্ছে করছিল?
আষাঢ় স্মিত হেঁসে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ এটা তো আমার জন্য কঠিন কিছু নয়। তোমার চোখ দেখেই গোটা উপন্যাস পড়ার ক্ষমতা আমি রাখি। সেখানে এটা বুঝবো না।
-“ বাহঃ

সন্ধ্যা মনোযোগ দিলো প্রকৃতির সৌন্দর্যে দেখতে। আর আষাঢ় মনোযোগ দিলো সন্ধ্যা দেখতে, সন্ধ্যার চোখে যেন এক অদ্ভুত মায়া। সন্ধ্যা চারিপাশে চোখ বুলচ্ছে আর ঠোঁটে কোনে হাসি ফুঠছে।
-“ সন্ধ্যা, জানো, তোমার এই হাসিটা দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় জাগতিক সব ক্লান্ত সব সমস্যা এক নিমিশে হাওয়াই মিঠাই এর মতো গায়েব হয়ে যায়।
সন্ধ্যা নরম হাসে। মাঝি থেকে থেকে তাদের দু’জনে দিকে তাকাচ্ছে।
-“ কি বলছেন, দেখুন লোকটা থেকে থেকে তাকাচ্ছে আপনার কথা শুনে।
আষাঢ় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল-
-“ তাতে কি? মামা আপনি কিছু শুনেছেন এতক্ষণ?
মাঝি মুচকি হেসে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ না বাবা কিছু শুনি নাই।
-“ শুনলে? উনি কিছু শুনে নায়।

কনা কোচিং-এ আসতে আসতে পাঁচ মিনিট লেট হয়ে যায়। ক্লাসের সামনে আসতেই দেখে টিচার অলরেডি ক্লাসে ঢুকে গেছে। কনা তড়িঘড়ি করে বলে-
-“ মে আই কামিং?
মাহমুদ শাহ কনার দিকে তাকালেন। তারপর হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললেন-
-“ এতো লেট কেনো?
-“ আসলে স্যার জ্যামে আটকে গেছিলাম।
-“ আসো ভেতরে।

কনা ভেতরে ঢুকে দেখে সব সিট ফুল হয়ে গেছে। শুধু মাত্র একটা সিট ফাঁকা। কনা গিয়ে ধারাম করে বসে পড়লো সেই সিটে। রাত আকস্মিক পাশে কাউকে ধারাম করে বসতে দেখে পাশ ফিরে তাকালো। রাত সবার লাস্টে বসেছে৷ যার জন্য কে এসেছে দেখতে পায় নি তখন। কনাকে পাশে দেখে চমকালো। তবে তা প্রকাশ না করে বলল-

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৪

-“ ভালোমতো বসতে পারো না বেয়াদব?
কনা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। রাত কে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো। এই লোকটা এখানে কেনো? আর লোকটার সাহস তো কম না তাকে বেয়াদব বলে।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৬