আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৬
Raiha Zubair Ripti
কোচিং শেষ করে রাস্তার সামনে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে কনা। রাত পাশ দিয়েই যাচ্ছিল। কনা কিছু একটা ভেবে রাতকে ডাক দিয়ে বলল-
-“ ঐ শুনুন।
রাত দাঁড়িয়ে গেলো। পেছন ফিরে বলল-
-“ আমাকে বললেন?
-“ হ্যাঁ। এদিকে আসুন।
ভ্রু কুঁচকে রাত বলল-
-“ কেনো?
-“ কথা আছে একটা।
-“ আপনার সাথে ফালতু আলাপ করা জন্য তো সময় আমার হাতে নেই মিস।
-“ আচ্ছা আপনার আসতে হবে না আমিই আসতেছি।
কথাটা বলে কনা এগিয়ে গেলো। রাতের সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে বলল-
-“ আপনি এতো অসভ্য কেনো বলুন তো
রাতের কপালে দু ভাজ পড়লো। কনা সেটা দেখে রাতের চোখে থাকা সানগ্লাস টা সরিয়ে বুকের শার্টে বেঁধে দিলে। রাত কনার হাত চেপে দাঁত কামড়ে বলল-
-“ হোয়াট! আমাকে অসভ্য বলছেন কেনো? অসভ্য আমি নাকি আপনি?
-“ আমাকে ক্লাসে বেয়াদব কেনো বলেছেন? ক্লাসে স্যার থাকায় তখন বলতে পারি নি। বলতে পারিনি দেখে আমি পুরো ক্লাস টা মনোযোগ দিতে পারি নি। এখন কথাটা ফেরত দিয়ে না বললে আমার রাতে ঘুমই আসতো না।
-“ ননসেন্স। কথাটা বলে রাত চলে গেলো। কনা ভেঙচি কেটে বিরবির করে বলল-
-“ ননসেন্স তো আপনি বেয়াদব ছেলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সন্ধ্যা কে বিকেলের দিকে আষাঢ় বাসার সামনে নামিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ভেবেছিল আষাঢ় ও বোধহয় তার সাথে বাসায় আসবে। কিন্তু আষাঢ় আসে নি। সন্ধ্যা ভেবেছিল একবার বলবে – বাসায় আসবেন না? কেনো যেনো সাহস করে বলতে পারে নি।
অগ্যতা আষাঢ় চলে গেলে সন্ধ্যা কিছুক্ষণ নিচেই দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়িটা দৃষ্টি সীমার বাহিরে যেতেই সন্ধ্যা বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে বসার ঘরে আসতেই দেখতে পেলো শ্রেয়া আর কনা কে। দুজন গল্প করতেছে। কনা সন্ধ্যাকে দেখেই এগিয়ে এসে বলল-
-“ বাপ্রে এতক্ষণ ধরে ঘুরলি তার সাথে যাকে তুই ভা….
সন্ধ্যা থামিয়ে দিলো। শ্রেয়া তাকিয়ে আছে। কনা চুপ হয়ে গেলো। সন্ধ্যা রুমে আসলো পেছন পেছন কনা ও।
-“ মুখে কিছু আটকায় না? যখন যার সামনে যা তা বলে ফেলিস।
কনা বিছানায় বসতে বসতে বলল-
-“ আমি ভুলেই গেছিলাম শ্রেয়া কে। আচ্ছা একটা কথা বলতো।
-“ কি?
-“ আর কতদিন বোনের সাথে বিরোধ রাখবি?
-“ যতদিন বেঁচে রব ততদিন।
-“ নিখিল কে তোর বোন কেঁড়ে নিয়েছিল বলেই আষাঢ়ের মতো সঠিক মানুষ তোর জীবনে এসেছে সন্ধ্যা। নিখিল কেমন বের হলো দেখলিই তো।
-“ সব দেখেছি আমি। আষাঢ় আমার লাইফে এসেছে বলে আমি সব ভুলে যাব না। কেমন ভাবে দিন কাটিয়েছি আমি তা ভোলার মতো না। শ্রেয়া যদি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষদের মধ্যে হয়ে আমার সামনে আসে তবুও সে আমার সেই আগের ভরসার,ভালোবাসার জায়গাটা পাবে না। কারন সে সেটা চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলেছে।
-“ উফ তোর আত্মসম্মান অনেক।
-“ মানুষ হিসেবে এটা সকলেরই থাকা উচিত।
-“ আত্মসম্মান ধুয়ে ধুয়ে পানি খা। এখন বল কই ই গেছিলি ঘুরতে?
-“ ঐ তো একটা নদীর ধারে।
-“ কি কি করলি?
-“ নৌকায় ঘুরলাম,আইসক্রিম খেলাম আর..
-“ আর কি?হাতে হাত বাহুর সাথে বাহু লাগিয়ে পা ভিজিয়েছিস?
-“ না,তবে হাত ধরে হাঁটা হয়েছে।
-“ তুই ভীষণ আনরোমান্টিক রে সন্ধ্যা। আমি থাকলে সব করে ফেলতাম।
-“ সেজন্য ই এখনও তুমি সিঙ্গেল বাবু।
-“ অপমান করিস না। তোর কোনো দেবর আছে নাকি সন্ধ্যা?
-“ হ্যাঁ আছে তো।
-“ প্লিজ তার সাথে আমার সেটিং করায় দিস। ট্রাস্ট মি তোর দেবরের লক্ষী বউ হয়ে থাকবো। সুন্দর সুন্দর রান্না করে খাওয়াবো।
-“ তাই? চোখ বড় করে বলল সন্ধ্যা।
-“ হু।
-“ ওকে আই উইল ট্রাই।
-“ হ্যান্ডসাম তো তোর দেবর?
সন্ধ্যা হেঁসে বলল-
-“ ভীষণ।
-“ ওয়াও তাহলে তো হয়েই গেলো। বাই দ্যা ওয়ে,,তুই কি আষাঢ় কে বিয়ে করতে যাচ্ছিস?
-“ এটা বলছিস কেনো?
-“ না দেবর বললাম যে। সে তো আষাঢ়েরই ভাই হবে তাই না?
-“ আষাঢ় কে কি আমার বিয়ে করা উচিত?
-“ অবশ্যই উচিত। বিয়ে তো একসময় করবি ই। তাহলে আষাঢ় কেই করে নে। শুনলাম বেচারার ফ্লাইট ও সামনে। যেতে দিস না। বিয়ে করে ফেল। দেশেই থাকুক।
-“ তো আমি বলবো কিভাবে? আমার ওমন খুল্লাম খুল্ললাম কথা আসে না।
-“ আমি শিখায় দিব। বলবি,,ওগো আষাঢ় তুমি যেওনা আমেরিকা। আই লাভ ইউ,,আমি তোমাকে ভালোবাসি,,আমাকে বিয়ে করতে চাইলে বিদেশে যেতে পারবে না।
-“ সর নটাঙ্কি ড্রামাবাজ।
-“ তোর দেবর কে এসব করেই পটাবো দেখে নিস।
-“ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসি থাক।
এদিকে,,দিন যায় আর আষাঢ়ের ফ্লাইটের দিন ঘনিয়ে আসে। অথচ আষাঢ় ব্যাটার মন মস্তিষ্ক জুড়ে সন্ধ্যা সন্ধ্যা করছে। সে অপেক্ষা করতেছে সন্ধ্যা কখন না করবে আর আষাঢ় গাট্টি বোচকা নিয়ে বাসায় চলে আসবে।
রাতের দিকে সন্ধ্যা রুমে বসে চিন্তা করতে থাকে, তার উচিত মনে হচ্ছে আষাঢ় কে গ্রহন করা। কেনোনা আষাঢ় ভীষণ ভালো একটা ছেলে। যতদিন কথা বলেছে মিশেছে নেগেটিভ কিছু পায় নি। তারচেয়ে বড় কথা আষাঢ় তাকে ভালোবাসে। কিন্তু কিভাবে আষাঢ়ে কে বলবে সেটা বুঝতেছে না। সে অনুভব করে, আষাঢ় তার জীবনে এক নতুন অধ্যায় নিয়ে এসেছে। সময়ের সাথে সাথে তার অনুভূতিগুলো আরো গভীর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস যেন তার ভিতরে কোথাও আটকে আছে।
এর পরের দিন, যখন কনা ও শ্রেয়া তাদের নিজেদের নিয়ে আলোচনা করছিল, তখন সন্ধ্যা হঠাৎ তাদের কথায় হস্তক্ষেপ করলো। কনাকে ডেকে বলল-
-“ রুমে আয় একটু।
কনা উঠে রুমে আসলো। দেখলো সন্ধ্যা রুম জুড়ে পায়চারি করছে।
-“ কিছু বলবি?
-“ হু।
-“ বল।
“শুন, আমি ভাবছি আষাঢ় কে কিছু বলবো।
কনা চমকে উঠে বলল,
“- কি বলবি? আষাঢ়ের যাওয়া নিয়ে কি কিছু ?”
সন্ধ্যা বলল, -“হ্যাঁ, আমি ভাবছি তাকে বলবো যে, আমি হয়তো তাকে ভালোবেসে ফেলছি। কিন্তু কিভাবে বলবো সেটাই তো বড় সমস্যা। আমার হাত পা কাঁপছে গলা শুকিয়ে আসছে এটা ভাবলেই।
কনা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
-“এটা তো অনেক সহজ। তুই শুধু তোর অনুভূতি প্রকাশ করবি চোখ বন্ধ করে, আষাঢ় ভাই নিজে থেকে বুঝে নেবে।
-“ ভয় করছে ইয়ার।
-“ ডারনা মাত,,তু মেরা বেস্ট ফ্রেন্ড, তুঝে এ কারনা হি পারেগা। দোস্ত শোন দরকার পড়লে তুই কানে ব্লুটুথ রাখবি আমি ফোনে থাকবো। শিখায় দিব তুই বলি।
-“ মজা নিচ্ছিস।
-“ একদমই না। সাহস সঞ্চয় কর বোইন।
সন্ধ্যা সাহস পেলো না তবে মন বারবার বলল যেকোনো উপায়ে আষাঢ়কে বলতেই হবে।
রাত তখন গভীর হয়ে এসেছে। সন্ধ্যা প্রস্তুতি নিচ্ছে কিভাবে আষাঢ়কে জানাবে তার অনুভূতি। আষাঢ় যে তাকে ফেরাবে না কোনো মতে এটা জানে তবুও ভয় আড়ষ্ট জড়িয়ে ধরছে।
সন্ধ্যা ঘুমাতে যায়, কিন্তু ঘুম আসে না। তার মনে কেবল আষাঢ়ের কথা ঘুরে ফিরে। সে ভাবে, “কাল আমি বলব, আমার অনুভূতি প্রকাশ করব।আবার ভাবে এখন ফোন করে জানিয়ে দিক ফোনে।
সন্ধ্যা প্রস্তুতি নিয়ে উঠে বসে। সে ঠিক করে নিয়েছে, আজকের দিনটি তার জন্য বিশেষ হবে।
রাতে, আষাঢ় যখন ফোনের স্ক্রীনে দেখতে পেলো, সন্ধ্যা কল করছে, তখন তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো। মনে হলো, আজকের দিনটি বিশেষ কিছু হতে চলেছে। সে ফোনটি তুললো।
ওপাশ থেকে আষাঢ় বললো-
-“ হ্যালো সন্ধ্যাবতী।
সন্ধ্যা কেঁপে উঠলো নাম টা শুনে। সন্ধ্যা কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। মনে কথা সাজাচ্ছে কি কি বলবে। এদিকে আষাঢ় সন্ধ্যার আওয়াজ না শুনে বলল-
-“ হোয়াট হ্যাপেন্ড? সব ঠিক আছে তো?
-“ হ.. হ্যাঁ হ্যাঁ সব ঠিক আছে।
-” কিছু বলার জন্য ফোন করেছো?
-“ হু।
-“ বলো।
-“ আসলে..
-“ হু আসলে কি?
-“ আসলে.. আপনি কেমন আছেন?
কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সন্ধ্যা। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললো। আষাঢ় ভরকে গেলো।
-“ আমি ভালো আছি।
-“ আপনার ফ্লাইট কবে?
-“ আগামীকাল রাতে। তুমি এটা জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন দিয়েছো? পানসেচোখে জিজ্ঞেস করলো আষাঢ়।
-“ না
-“ তাহলে?
-“ আমি… আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
সন্ধ্যার কথায় এক ধরণের সংকোচ ছিল।
আষাঢ় চিন্তায় পড়ে গেলো।
-“অবশ্যই। তুমি কোথায়?”
“আমি রুমেই।
-“ কনা ও কোথায়?
-“ ও ঘুমাচ্ছে।
-“ ও আচ্ছা বলো কি বলতে চাও। আমি শুনছি।
সন্ধ্যা কিছুটা নার্ভাস হয়ে গেলো।
“ আমি আপনাকে..আপনাকে..
-“ ভালোবেসে ফেলছো?
ভ্রু কুঁচকে বলল আষাঢ়। সন্ধ্যা মাথা নুইয়ে বলল-
-“ হয়তো।
আষাঢ়ের হৃদয় জেগে উঠলো। নিজের কান কে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। আষাঢ় তো ভেবেছিল এটা বলার পর সন্ধ্যা না করে ফেলবে। শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে আষাঢ়ের। শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। কেমন গরম লাগছে তার।
-“ আল্লাহ তুমি কি বললে এটা! আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারতেছি না। এই অসম্ভব টা সম্ভব হলো কি করে বলো? আমি এক্ষুনি মসজিদে গিয়ে হুজুর কে হাজার টাকার নোট দিয়ে বলবো- আল্লাহ আমার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে।
সন্ধ্যা আড়ষ্টতা নিয়ে বলল-
-“ আহ্ থামুন। বকবক করেই চলছেন।
-“ এটা তো খুশির খবর আমাকে শান্তি মতো বকবক করতে দাও। কাল দেখা করি?
-“ ঠিক আছে। বাসায় চলে আসুন।
-“ অবশ্যই অপেক্ষা করো আসতেছি। এখন রাখছি অনেক কাজ বাকি।
আষাঢ় ফোনটা কেটে দিয়ে হোটেলের পাশে থাকা মসজিদে গেলো। ইমাম সাহেব ঘুমিয়ে ছিলেন তাকে ডেকে উঠালো। দু হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ কারন জিজ্ঞেস করবেন না হুজুর কেনো দিলাম। শুধু জেনে রাখুন আমার লাইফের বেস্ট দিনের একটা দিন আজকে।
ইমাম সাহেব মুচকি হাসলেন। আষাঢ় ওজু করে দু রাকাআত নামাজ পড়ে হোটেলে চলে আসলো। ল্যাগেজ টা গুছিয়ে বেরিয়ে আসলো বাসার উদ্দেশ্যে।
সকালে কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙে সন্ধ্যার। কনা উঠেছে কে আসছে সেটা দেখার জন্য। কনা রুম থেকে বের হতেই সন্ধ্যা ও বের হলো। বসার ঘরে আসতেই কনা সন্ধ্যা দেখতে পেলো আষাঢ় আর রাত দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাহিরে। আষাঢ়ের হাতে মিষ্টির প্যাকেট। শ্রেয়া ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ মিষ্টি হাতে নিয়ে আমাদের বাসায় যে! কোনো সুসংবাদ আছে নাকি?
রাত হাসি মুখে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল-
-“ আগে আমাদের ভেতরে তো ঢুকতে দাও শ্রেয়া। সুসংবাদ তো আছেই। আঙ্কেল কোথায়।
নজরুল ইসলাম কথাবার্তার আওয়াজ শুনে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। আষাঢ় তাকে দেখা মাত্রই তার দিকে এগিয়ে গিয়ে মিষ্টি নিয়ে বলল-
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৫
-“ আঙ্কেল হা করুন তো।
নজরুল ইসলাম হা করলেন। আষাঢ় মিষ্টি তার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। নজরুল ইসলাম মিষ্টি খেতে খেতে বললেন-
-“ কিসের মিষ্টি এটা?
রাত পেছন থেকে বলল-
-“ ছানার মিষ্টি আঙ্কেল এটা।
-“ আরে সেটা তো আমিও বুঝেছি৷ তবে মিষ্টি কি উপলক্ষে খাওয়ালে সেটা জানতে চেয়েছি।
-“ আসলে আঙ্কেল আম্মা আসতেছে। আম্মা এসেই বলবে সব। আষাঢ় কথাটা বলে শ্রেয়ার হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। এদিকে সন্ধ্যা কনা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।