শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩৯
সুমাইয়া সুলতানা
দুপুরের জেদি আপসহীন দীপ্তিমান সূর্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সূর্যের আলো পুরো গ্রামটাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে, অথচ ভোরবেলা হালকা কুয়াশায় চারপাশে মোড়ানো থাকে। পথে পাশে ফসলের জমিগুলোতে সকালে শিশির জমে ছিল, যা এখন নেই। সূর্যের প্রথম আলো শিশিরের ফোঁটাগুলোর ওপর পড়লে, মনে হয় সেগুলো যেন ছোট ছোট রূপোর মতো ঝিলমিল করে উঠছে। পথের পাশে রয়েছে বড়ো বড়ো তালগাছ, নারকেল গাছ, আর নানা ধরনের ছোটখাটো ঝোপঝাড়। দূরে কোথাও কোথাও গ্রামের মানুষ ক্ষেতে কাজ করছে। তাদের হাতে কোদাল আর মাথায় বাঁশের ঝুড়ি। হাঁস-মুরগি, গরু-বাছুরেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তার ধারে। মাঝে মাঝে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে, আর ছোট ছোট ঝর্ণার মতো পানির শব্দ যেন পুরো পরিবেশকে সজীব করে তুলেছে। গ্রামাঞ্চলে ঘরের পাশের আমগাছ, পুকুরের পাশে দাঁড়ানো বাঁশের ঝাড়, আর উঠোনের মাঝখানে লালমাটির পথ সবই যেন নতুন করে জীবন পেয়েছে।
কাঠখোট্টা রোদে গ্রামের পথ ধরে মোম এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ছোট্ট গ্রামের বাড়ির দিকে। গাছপালার সবুজে ঢাকা রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখ মেলে দেখে চারপাশের নান্দনিক সৌন্দর্য। মোমের আর কোনো পরীক্ষা অবশিষ্ট নেই। আজকে লাস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। তেমন চাপ ছিল না, আইসিটি ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল। মোমের সাথে ওর কয়েকজন বান্ধবী রয়েছে। মোম যখন বান্ধবীদের সঙ্গে কথায় মত্ত, তখন মোমের চাচাতো ভাই এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। ছেলেটার নজর খারাপ! বয়স কম। মোমের উপর তার অনেক আগে থেকেই কুনজর পড়েছিল। মাঝখানে বিয়ে করে শহুরে পাড়ি জমিয়ে ছিল বলে দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। বাড়িতে আসার পর বারকয়েক দেখেছে, তবে গঞ্জের কাজের চাপে কথাবার্তা বলা হয়ে উঠেনি। এবং বড়োলোক বাড়ীর বউ বলে হাত বাড়ানোর সাহস পায়নি। এখন রাস্তার এই মোড়ে দেখে পুরোনো কামুকতা জেগে উঠেছে। চাচাতো ভাই’কে দেখে মোম কিছুটা ঘাবড়ে যায়। আটঘাট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মাথা নিচু করে চলে যেতে উদ্যত হতেই চাচাতো ভাইয়ের অশ্লীল অশ্রাব্য বাক্য কর্ণকুহরে পৌঁছালো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” বড়োলোক বাড়ীর বউ হয়ে তো দেখছি ভালোই তরতাজা হয়ে গিয়েছিস! শারীরিক গঠন গুলো নজরকাঁড়া লাগছে! ”
মোম দাঁতে দাঁত পিষে নাকের পাটাতন ফুলিয়ে ঝাঁঝ নিয়ে বলে উঠলো,
” নিজের সীমারেখা অতিক্রম করবেন না কামাল ভাই! নিজের বোনকে এসব বলতে লজ্জা করছে না? ”
কামাল দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে কুটিল হেসে বলল,
” ভুল বললি! তুই আমার নিজের মায়ের পেটের বোন না, চাচাতো বোন। তাই তোকে এসব কথা বলতেই পারি। ”
মোম দ্বিগুণ তেজ ফুটিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
” না পারেন না! আমি এখন বিবাহিত। অন্যের স্ত্রী। কিছু বলার আগে ভেবে বলা উচিত। আপনার নজর ঠিক করুন, নয়তো এর পরিণাম আপনার জন্য সুখকর বয়ে আনবে না! ”
” স্বামী বড়োলোক বলে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলা শিখে গিয়েছিস? তোর এই ক্ষুদ্র শরীরের অমায়িক তেজ দমিয়ে দেওয়ার বহুদিনের সখ আমার। আজ যদি সেটা করি মন্দ হয় না, কি বলিস? ”
মোম আঁতকে উঠে দু পা পিছিয়ে গেল। পাশ ফিরে চেয়ে দেখল বান্ধবীরা নেই। তারা অনেকক্ষণ আগে চলে গিয়েছে। ভয়ে মোমের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। হাতেপায়ে নামল নিগোড় কম্পন! মোমের আতঙ্কিত মুখবিবর দেখে কামাল মজা পেলো। এগিয়ে আসতেই মোম হাতে থাকা ফাইল শক্ত করে ধরে দৌড় লাগালো। কামালও ছুটল তার পিছু। কিছুদূর যেতেই বড়সড় প্রাইভেট গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেলো মোম। ড্রাইভার সময় মতো ব্রেক না কষলে বড়ো রকমের এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভবনা ছিল। মোম হাতের কনুই আর কপালে ঠোকা লেগে ব্যথা পেয়েছে। চোখমুখ কুঁচকে দুরুদুরু বুকে সম্মুখে দৃষ্টি তাক করল। ড্রাইভার সিট বেল্ট খুলে হন্তদন্ত হয়ে মোমের নিকট আসলো। মানুষটিকে দেখে মোমের ভীতিকর নয়ন জোড়া খুশিতে চকচক করে উঠল। তার মাস্টার মশাই এসেছে। আগুন কাছে এসে মোমের শরীর চেক করে উদ্বিগ্ন সমেত জানতে চাইল,
” কোথায় লেগেছে? কোথায় ব্যথা পেয়েছো? ”
মোম প্রতিত্তোর না করে হামলে পড়ল ব্যক্তিগত পুরুষটির চওড়া বুকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হু হু শব্দ তুলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আগুন বলিষ্ঠ হাতে আগলে নিলো তার কোমলমতি’কে। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে শুধাল,
” বেশি ব্যথা পেয়েছো? দৌড়াচ্ছিলে কেন? আর তুমি এই রাস্তায় কি করছো? স্কুল থেকে তোমাদের বাড়িতে ফেরার রাস্তা তো এটা নয়! ”
সময় নিয়ে মোম শান্ত হলো। ছলছল চোখে আগুন’কে দেখে ঠোঁট ভেঙে আবার কেঁদে উঠল। ভাঙা গলায় অভিযোগ জানালো,
” এতদিন পর আমার কথা মনে পড়েছে? শুধু ফোনে কথা বললে হয় নাকি? আমার বুঝি আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করে না? ছুঁতে ইচ্ছে করে না? ”
আগুন কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বলল,
” আমি তোমাকে যেটা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও। ”
” পরীক্ষা শেষে বান্ধবীদের সঙ্গে নদীর তীরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ফিরে আসার সময় কামাল ভাই পথ রোধ করে দাঁড়ায়। বাজে কথা বলে, সেজন্য ওনার থেকে পালিয়ে এদিকের রাস্তায় ঢুকে পড়েছি। ”
আগুন ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কামাল কে? ”
” আমার চাচাতো ভাই। ”
ওদের কথার মাঝে কামাল সামনে এসে দাঁড়ায়। মোম আঙুল উঁচিয়ে তাকে দেখায়। আগুন চোয়াল শক্ত করে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তার উপর। শৈলপ্রান্ত গোটানো, চাউনী তীর্যক! কুন্ঠায় শীতলক্ষ্যা স্রোত ঢেলে অথচ নিরবে নিভৃতে হুমকি স্বরুপ জানালো,
” নিজের ভালো চাও তো এক্ষুনি আমার সামনে থেকে চলে যাও। ”
কামাল শুষ্ক ঢোক গিলল। ব্যস্ত কদমে নিজের গন্তব্যে প্রস্থান করল।
আগুন’কে নিয়ে যখন মোম তাদের গ্রামের বাড়ির উঠানে এসে পৌঁছায়, তখন খলিল আগুন’কে দেখে অবাক হয়ে যান। পরপরই অধরে হাসি ফুটিয়ে চনমনে কন্ঠে বললেন,
” আগুন বাবা? আজকে আসবে ভাবতেই পারিনি। তা এবার কিছুদিন থাকবে তো? ”
আগুন মুচকি হেসে জবাব দিল,
” না, এবারেও সম্ভব হবে না। তবে রাতে থাকবো। সকালে মোম’কে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। ”
খলিল এতটুকুতেই খুশি হলেন। আগুন’কে নিয়ে মোম ঘরে চলে গেল। খলিল স্ত্রী’কে জামাই এসেছে খবরটা দিতে চলে যান। আতিফা চটজলদি লেবুর শরবত বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। খলিল স্ত্রী’কে বলে বাজারে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন। সেবার তাড়াহুড়ায় তেমন খাতিরযত্ন করতে পারেন নি। রাতে যখন থাকবে বলেছে, তখন হাতে অনেকটা সময় আছে জামাই আদর করার। সেটা হাত ছাড়া করলে হবে?
বিকেলের চনমনে চিত্তে সময়টাতে আয়মান ও আনিকা শহরের একটি পার্কে হাত ধরে হাঁটছে। আনিকা অবশ্য হাত ধরতে দিতে নারাজ ছিল। কিন্তু আয়মান জবরদস্তি হাত ধরে রেখেছে। আনিকার নাকি সকলের সামনে হাত ধরে হাঁটতে অস্বস্তি লাগছে। আয়মান তার কথায় পাত্তা দিল না। ঘুরতে এসে আনিকার ভালোই লাগছে। সূর্য তখন ডুবে আসছিল, আর পার্কের চারপাশে একটি সোনালী আলো ছড়িয়ে পড়ছিল। আনিকার হাসিমুখ দেখে আয়মানের হৃদয় দ্রুত ধড়ফড় করতে লাগলো। আয়মান হঠাৎ বলে উঠলো,
” আনিকা, তুমি জানো? তুমি যখন হাসো, তখন পুরো পৃথিবী উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বলার সময় মুখটা অমন পাঙশুটে করে রাখো কেন? তোমাকে আমি সত্যি বুঝতে পারছি না! ”
আনিকা ঠোঁট চেপে কিঞ্চিৎ হাসল। লজ্জা পেয়ে নিচে তাকাল। কিছু বলল না। কিন্তু আয়মান তাকে আস্তে করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
” আরও বেশি হাসো, কারণ আমি তোমার হাসিতে একেবারে মুগ্ধ। ”
আয়মানের এই কথায় আনিকার চোখে আনন্দের ছাপ পড়ল। অজান্তেই অক্ষিপট জলে ভরে উঠল। আয়মান পুনরায় একই ভঙ্গিতে স্লেজ স্বরে আওড়াল,
” তুমি সত্যিই চঞ্চলতা মিষ্টি এক কিশোরী। ”
বাক্যের ইতি টেনে আয়মান ধরে রাখা আনিকার হাতগুলোতে তার ঠোঁট ছোঁয়ালো। এ যেন একটি চুমুর প্রস্তাব! আনিকা শিহরিত হয়ে পড়ল, কিন্তু সে থামল না। আনিকার চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বলল,
” পড়াশোনার চাপে সপ্তাহ খানেকের মতো তোমার সাথে দেখা করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে হয়েছে, তাই পিছু হটতে পারিনি। ভীষণ মিস করেছিলাম তোমাকে। হয়তো আমার কথা তোমার স্মরণ হয়নি। বাট ট্রাস্ট মী জান! আই রিয়্যালি মিস ইউ সৌ মাচ্! ”
আনিকা হাত ছাড়িয়ে নেয়। আয়মানের বাহু আঁকড়ে ধরে চোখে চোখ মিলিয়ে সুগভীর স্পষ্ট দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। মুচকি হেসে পীবর ঠোঁট নেড়ে নেড়ে বলল,
” মুখে স্বীকার করলেই কি প্রমাণিত হয় যে কেউ কাউকে মিস করছিল? মোটেই না! কিছু মানুষ আছে, যারা সঠিকভাবে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম হয় না! হয়তো আমিও সে সকল মানুষের কাতারে। ”
” তুমি আমাকে মিস করেছিলে? ”
আনিকা নিরুত্তর। লম্বা শ্বাস টেনে চুপচাপ হাঁটছে। একটা সিমেন্টের তৈরী বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ল। আশেপাশে কয়েক জোড়া কাপল নজরে আসছে। তারা নিজেদের মতো প্রিয়জনকে নিয়ে সময় কাটাতে ব্যস্ত। আয়মান এসে আনিকার পাশে বসলো। দুজনের মাঝে পিনপিনে নীরবতা। নিরবতা ভেঙে আয়মান আচমকা আবদার ছুড়ল,
” একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। তুমি কি অনুমতি দেবে? ”
” কিসের জন্য? ”
আয়মান, আনিকার ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে দিল। বুঝতে পেরে আনিকা মৃদু কেঁপে ওঠে। গলাটা শুকিয়ে আসছে। হৃদয় তখন প্রচণ্ড গতিতে ধড়ফড় করছে। সে চোখ বুঁজে মাথা নাড়াল। সম্মতি পেয়ে আয়মান হেসে তাকে কাছে টেনে নিয়ে আসলো। ক্ষনিকের সময়ে আনিকার ওষ্ঠদ্বয়ে নিজ ওষ্ঠ স্পর্শ করল। সেখানেই সৃষ্টি হলো এক অসাধারণ ওষ্ঠ চুম্বন মুহূর্ত। যা আনিকা’কে আয়মানের পাগলামোতে তীব্র আকর্ষণ করে। তাদের চারপাশে যেন সময় থেমে গেয়েছে, আর সব কিছু ধূসর হয়ে ধরা দিচ্ছে।
গভীর রাতে গ্রামে যখন চাঁদের আলো ধরিত্রীতে চিকচিক করছিল, তখন আগুন বসে ছিল মোমের সঙ্গে বদ্ধ কক্ষে জানালর পাশে। সুন্দর রাতের ঝলকানিতে মোমের দিকে তাকিয়ে থাকল অনিমেষ। তার চোখে প্রেমের উন্মাদনা। মোম, তার কোমল হাসি নিয়ে আগুনের দিকে এগিয়ে এসে গা ঘেঁষে বসে। তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দীর্ঘ সময়ের, যেন বাতাসে স্নিগ্ধতা। কিছু মনে পড়তেই মোমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঠোঁট উল্টে গোমড়া মুখে বলে উঠলো,
” গত দুইদিন আপনি আমাকে ফোন করেননি কেন? আমি কল দিলেও বারংবার কেটে দিয়েছিলেন। এমনটা কেন করেছিলেন? ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। বাইরে ঘোলাটে দৃশ্যপটে নজর রেখে শান্ত কন্ঠে বলল,
” যতবার ফোন দিয়ে কথা বলি, ততবার তুমি কান্না করো। পরীক্ষার সময় সকালে ফোনে তোমাকে সাহস সঞ্চিত করার জন্য যা বলি, তুমি কান্না করে সেটা উগড়ে দেও। আমার নির্দেশনা কতটুকু আমলে নিয়েছো, পরীক্ষা কেমন দিয়েছো তুমি ভালো জানো। পরীক্ষা দিতে যেতে হয় ফুরফুরে মনে, আর তুমি যেতে হতাশ হয়ে! বিষয়টাতে আমি চরম বিরক্ত! ইংরেজি পরীক্ষার দিন জানালে, পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে। মোটামুটি কেন হবে? আমি প্রশ্ন দেখেছি। প্রশ্ন সহজ হয়েছে। যদিও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র কিছুটা হার্ড হয়েছিল, তবে প্রথম পত্র আশির উপরে নাম্বার পাওয়ার মতো ভালো মানের প্রশ্ন হয়েছে। সেখানে তুমি ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষার দিন বললে, মোটামুটি ভালো হয়েছে! কেন? কনফিডেন্স সমেত বলতে পারোনি, যে আমার পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। সেজন্য ইচ্ছে করে পরবর্তী টানা দুইদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলাম! পড়াশোনা নিয়ে হেঁয়ালিপূর্ণ আমি পছন্দ করি না। ”
” চিন্তা করছেন কেন? দেখবেন ভালো ফলাফল আসবে। ”
” দেখা যাবে। ”
ছোট করে উত্তর দিয়ে আগুন চুপ হয়ে গেল। জানালা বন্ধ করে দিয়ে, বালিশ ঠিক করে কাত হয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। মোম হা হয়ে তাকিয়ে থাকল কিয়ৎপরিমাণ। গাল ফুলিয়ে ব্যগ্র গলায় বলে ওঠে,
” আপনার সাথে কথা বলতে না পেরে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। আপনার শূন্যতা আমাকে পুড়িয়ে ছিল ক্ষণে ক্ষণে। চাতক পাখির ন্যায় প্রহর গুনছিলাম কখন পরীক্ষা শেষ হবে, আর আপনার কাছে যেতে পারবো। এখন আপনি উল্টো আমার উপর রাগ ঝারছেন? ”
আগুন ঘুরে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে গমগমে গলায় প্রশ্ন করলো,
” তোমাকে শাসন করার অধিকার কি আমার নেই? ”
” নেই কখন বললাম? বলেছি আপনি শুধুশুধু রাগ করছেন। রীয়ারেঞ্জ সেনট্যান্স টা কমন হওয়া সত্ত্বেও ভালো ভাবে মিলাতে পারিনি। তাই বলেছিলাম পরীক্ষা মুটামুটি হয়েছে। পরীক্ষা খারাপ হয়েছে সেটা তো বলিনি। ”
মোম’কে কাছে টেনে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ল আগুন। মোম এটুকুতেই অভিমান ভুলে আহলাদে আপ্লুত হয়ে আগুনের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। লম্বা শ্বাস টেনে নাসারন্ধ্রে টেনে নিলো চিরচেনা পুরুষালী মাতাল করা ঘ্রাণ। আগুন মৃদু হাসল। মোমের চুলের ভাঁজে আঙুল গুঁজে দিল। শান্ত কন্ঠে বলল,
” তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার জীবনের সেরা সময় কোমলমতি। তোমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আমি নিজেও পুড়েছিলাম দহনে! ক্লাসে মন বসাতে পারিনি। ”
মোমের ক্ষুদ্র সত্তা পুলকিত হলো। ঠোঁটের কোণে একটি মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলল,
” আপনার সাথে আমার প্রতিটি মুহূর্ত এমনই বিশেষ ছিল বলে সেরা লেগেছে আপনার কাছে। ”
আগুন হঠাৎ মোমকে আরও কাছে টেনে নিয়ে এসে তার ঠোঁটে এক চুমু খায়। যা চাঁদের আলোতে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মধুময় প্রীতি। ললাটে প্রগাঢ় চুমু বসিয়ে শীতল গলায় বলল,
” সকালে সবকিছু গুছিয়ে নিও। কালকে বাড়িতে ফিরে যাবো। মা তোমাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে। বাড়ির বউ বাড়িতে না থাকলে নাকি তার ভালো লাগে না। আনিকা কিছুদিন এসে থেকে গিয়েছে। সে তার বাবা’কে রেখে আসতে চায়নি। মায়ের জোরাজুরিতে আসতে বাধ্য হয়েছিল। তাই তুমি গেলে মা ভীষণ খুশি হবে। ”
” আমারও ওনাদের সকলের কথা মনে পড়তো। মায়ায় আটকে গিয়েছি তাদের। আমি সব গুছিয়ে নিবো। আপনাকে ভাবতে হবে না। ”
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩৮
আগুন হাতের বন্ধন দৃঢ় করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। দুজনের ভারিক্কি তপ্ত শ্বাস মুগ্ধতা ছড়ায় বদ্ধ কক্ষের চারপাশ। মোম ব্যক্তিগত পুরুষটির বুকে মুখ লুকিয়ে আবেশে চোখ বুঁজলো।