আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৮

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৮
Raiha Zubair Ripti

রাত প্রায় দশটা বাজে..আকস্মিক এই রাতে বাহিরে প্রবল ঝড়োমেঘ বইছে। আকাশ পাতল এক করে দিয়ে বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি নামছে। কারেন্ট চলে গেছে। সন্ধ্যা রুমের সব জানালা বন্ধ করে বিছানায় কাঁথা শরীরে নিয়ে বসে আছে। পাশেই কনা কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কনা শোয়ার জন্য উদ্যত হতে নিলে আকস্মিক ফোনটা বেজে উঠে। সন্ধ্যা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আষাঢ় ফোন করেছে। সন্ধ্যা ফোন রিসিভ করলো। আষাঢ় ওপাশ থেকে বলে উঠল-

-“ নেট অন করো।
সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কারেন্ট নেই তো।
-“ ওহ্ ডাটা নেই?
-“ না।
-“ আচ্ছা এক মিনিট ওয়েট করো।
আষাঢ় ফোনটা কেটে মলের বাহিরে এসে ফেক্সিলোড এর দোকান থেকে সন্ধ্যার ফোনে ডাটা পাঠালো। সন্ধ্যা মেসেজের শব্দ পেতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ডাটার মেসেজ এসেছে। ৫০ জিবি পাঠিয়েছে। সন্ধ্যা তড়িঘড়ি করে ফোনের ডাটা অন করলো। সাথে সাথে আষাঢ়ের ভিডিও কল আসলো। সন্ধ্যা দেখতে পেলো লোকটা মলের ভেতর।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ আপনি মলে এখন!
আষাঢ় ভিজে যাওয়া চুল গুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলল-
-“ হ্যাঁ বললাম না আসবো।
-“ ঝড় হচ্ছে না বাহিরে?
-“ হু তাতে কি?
-“ তাতে কি মানে? এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আপনি গাড়ি ড্রাইভ করে মলে এসেছেন?
-“ হ্যাঁ.. আচ্ছা বাদ দাও ওসব কথা। দেখো কোনটা পছন্দ হয়।
সন্ধ্যা শাড়ি গুলোর দিকে তাকালো। প্রায় অনেকগুলো শাড়ি। ব্লু,হোয়াইট,রেড,পার্পল, মিষ্টি, মেরুন, ব্লাক। চোখ সরিয়ে বলল-

-“ আপনি পছন্দ করে নিয়ে আসুন একটা।
-“ পছন্দ হয় এগুলো?
-“ হ্যাঁ হয়েছে।
আষাঢ় দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ সব গুলো প্যাক করে দিন।
সন্ধ্যা বড় বড় করে তাকালো।
-“ সব মানে?
-“ সব মানে সব।
-“ কার জন্য এতো শাড়ি?
-“ আমার প্রিয় নারীর জন্য।
-“ পাগল নাকি আপনি? এনগেজমেন্ট তাই বলে এতো শাড়ি!

-“ তুমি এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? মেয়েরা তো শাড়ি,শপিং এসব পছন্দ করে। আমি শুনেছি এসব। স্বামীরা অতিষ্ঠ হয়ে যায় বউদের উপর। সেখানে আমি সেধে কিনছি আর তুমি খুশি না হয়ে উল্টে রাগ দেখাচ্ছ?
-“ অযথা কেনো এতো খরচ করবেন? ভবিষ্যৎ নেই? সঞ্চয়ী হোন।
-“ ভবিষ্যৎ! তার জন্য ভাবা আছে। তোমার হবু বর যা ইনকাম করে আলহামদুলিল্লাহ তোমার শখ পূরণ করেও এক তৃতীয়াংশ বেঁচে রবে।
-“ বাহ্ বড়লোক্স দেখি আপনি।
-“ হ্যাঁ বিলগেটস হবো কদিনপর।
-“ শাড়ি কমিয়ে নিন। দুটো নিন।
-“ প্যাক করা শেষ । এখন আর বলে লাভ নেই।
-“ আপনার জন্য কি কিনবেন?
-“ হোয়াইট পাঞ্জাবি নিয়েছি একটা।
-“ ফিরবেন কখনও বাসায়। বাহিরে তো এখনও বৃষ্টি।
-“ এই তো এখনই ফিরবো।
-“ সাবধানে ফিরবেন রাখছি।

সন্ধ্যা ফোন কেটে দিলো। আষাঢ় শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে মলের গেটের সামনে দাঁড়ালো। এখনও বৃষ্টি পড়ছে। আষাঢ় আর সময় নষ্ট করলো না। পার্কিং-এ গিয়ে গাড়িতে উঠে চলে আসলো।
সাত সকাল বেলা রাত এসেছে সন্ধ্যাদের ফ্ল্যাটে। দরজা ঠকঠক করার শব্দে কনা এগিয়ে এসেছিল দরজা খুলতে। দরজাটা খুলতেই রাত কে দেখতে পেয়ে কিঞ্চিৎ অবাক হলো। রাত হাতে থাকা শপিং ব্যাগ গুলো কনার হাতে ধরিয়ে দিলো। কনা ব্যাগ গুলোর দিকে তাকালো।

-“ এগুলোতে কি আছে?
-“ শাড়ি।
-“ সরি আমি শাড়ি পড়ি না। নিয়ে যেতে পারেন এগুলো।
রাতে বুকে দু হাত গুঁজে বলল-
-“ ও হ্যালো মিস কনা এগুলো আপনার কে বলল?
-“ এই যে আপনি আমাকে দিলেন।
-“ এগুলো আপনার না। এগুলো সন্ধ্যার ভাইয়া পাঠিয়েছে।
কনা বোকা চাহনি নিয়ে হেঁসে বলল-
-“ আরে আমি তো মজা করছিলাম। এগুলো সন্ধ্যার আমি জানি তো।
-“ আসছি।

রাত চলে গেলো। কনা দরজাটা আঁটকে রুমে আসলো। সন্ধ্যা বিছানায় বসে ফোন স্ক্রোল করছিলো। কনার হাতে প্যাকেট দেখে বলল-
-“ কে দিয়ে গেলো?
-„ তোর দেবর। ধর নে।
সন্ধ্যা শাড়ি গুলো এক-এক করে খুলে দেখলো। তারপর আষাঢ় কে মেসে পাঠালো-
-“ পড়বো কোনটা এনগেজমেন্টের দিন?
আষাঢ় ফিরতি মেসেজ পাঠালো-
-“ মেরুন রঙের টা পড়িও।

এনগেজমেন্টের দিন,,
আষাঢ়ের বলা অনুযায়ী সন্ধ্যা আজ মেরুন রঙের শাড়ি পড়েছে। সাজার শেষে আষাঢ় কে ছবি পাঠাতে ভুললো না। ছবির নিচে লিখে দিলো-
-“ ভালো লাগছে?
আষাঢ় পাঞ্জাবির বোতাম লাগাচ্ছিলো। সন্ধ্যার ছবি দেখে বিরবির করে মাশা-আল্লাহ উচ্চারণ করলো। টাইপ করলো-

-“ সুন্দর লাগছে।
-“ শুধুই সুন্দর ?
-“ না মারাত্মক সুন্দর লাগছে।
-“ ধন্যবাদ জনাব। আপনি রেডি?
-“ ইয়েস।
-“ আসবেন কখনও?
-“ এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমার বাসা তোমার বাসা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে।
-“ না ৫ সেকেন্ডের দূরত্ব জাস্ট।
-“ আসতেছি অপেক্ষা করো।
-“ সেটাই তো করতেছি।

সন্ধ্যার দিকে আষাঢ়, রাত, আমেনা বেগম আর আরাফাত আসে সন্ধ্যা দের ফ্ল্যাটে। নজরুল ইসলাম তাদের সোফায় বসতে দিয়ে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আষাঢ় এদিক ওদিক তাকিয়ে বারবার দেখছে সন্ধ্যা কখন আসবে। ফোনে ছবি দেখে মন ভরে নি।
কনা আষাঢ় কে বারবার এদিক ওদিক তাকাতে দেখে বলল-
-“ সন্ধ্যা কে খুঁজছেন?
আষাঢ় ফিসফিস করে বলল-
-“ নিয়ে আসছো না কেনো বান্ধবী কে হু?
-“ আনবো আনবো অপেক্ষা করুন।
-“ সেটাই তো করতে পারতেছি না। তাড়াতাড়ি আনো।
রাত ভাইয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে নজরুল ইসলামের উদ্দেশ্যে বলল-

-“ আঙ্কেল খাওয়া দাওয়া পরে হবে। আগে সন্ধ্যা না ভাবি কে নিয়ে আসুন। এনগেজমেন্ট টা হোক আগে।
নজরুল ইসলাম কনাকে বলল সন্ধ্যা কে নিয়ে আসতে।কনা রুমে গিয়ে সন্ধ্যা কে জানালো আষাঢ় চলে এসেছে।
কনা সন্ধ্যাকে বলতেই সন্ধ্যা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিল। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো কনার সাথে। আষাঢ় থমকানো চোখে চেয়ে রইলো। আষাঢ়ের চোখে যেন আশেপাশের অন্য কিছুই আর ধরা পড়ছে না। সন্ধ্যা যেন সমস্ত ভালোবাসার প্রতিমূর্তি হয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে।
আষাঢ় গভীর মুগ্ধতায় তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

-“ মেরুন শাড়িতে তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে সন্ধ্যাবতী। আমি ব্যতিত আর কারো নজরে না আসুক তোমার সৌন্দর্য
কনা সন্ধান কে আষাঢ়ের পাশে বসিয়ে দিলো। রাত একবার তাকালো। পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। আমেনা বেগম আংটি এগিয়ে দিলেন। আষাঢ় সেটা নিয়ে সন্ধ্যার হাতে পরিয়ে দিলেন। শ্রেয়া আষাঢ়ের জন্য বানানো আংটি টা এগিয়ে দেয়। সন্ধ্যা পড়িয়ে দেয় আষাঢ়ের হাতে। বর বিরবির করে বলে-
-“ অর্ধেক আপনাকে নিজের দখলে নিয়ে নিলাম ডক্টর আষাঢ় আহমেদ।
আষাঢ় মুচকি হেঁসে বলল-

-“ তোমার কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেওয়ার অপেক্ষায় আছি হাফ মিসেস আহমেদ
এমন খুশির পরিবেশে তারা এনগেজমেন্টের আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলো। সবাই হাসিমুখে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল। আর আষাঢ় ও সন্ধ্যা চোখের ভাষায় যেন হাজার কথা বিনিময় করছিল। কনা আষাঢ় আর সন্ধ্যার ছবি তুলছিলো। রাত কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে দেখে বলল –
-“ আরে আপনিও গিয়ে দাঁড়ান আপনার ভাবির পাশে ছবি তুলে দেই।
রাত নো থ্যাংকস বলে চলে যেতে নিলে আরাফাত রাত কে টেনে আষাঢ়ের পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়। কনা ছবি তুলে। রাত একটা ছবি তুলেই কাঁধে হাত রেখে আষাঢ়কে বলল,
-“আজ তোমার প্রিয় একটা দিন ভাইয়া ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছ। তুমিই সত্যিকারের সুখী পুরুষ।
কথাটা বলে রাত চলে যেতে নিলে আষাঢ় বলে উঠে –

-“ কোথায় যাচ্ছিস?
-“ এই তো একটু ছাঁদে। একটু পরই চলে আসবো।
কনা ভ্রু কুঁচকালো কথাটা শুনে। আষাঢ় সন্ধ্যা কে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলো খাবার খাওয়ার জন্য। আমেনা বেগম রাতকে দেখতে না পেয়ে আষাঢ় কে জিজ্ঞেস করলো –
-“ রাত কোথায়?
-“ ছাঁদে গেছে বলল।
-“ ওহ্ ফোন করে আসতে বল।
আষাঢ় ফোন বের করে কল লাগালো। ফোন বাজছে কিন্তু রিসিভ করছে না। আমেনা বেগম নিজেই ডেকে আনার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠলে কনা বলে-

-“ আরে আন্টি আপনি বসুন আমি ডেকে আনতেছি।
চারিদিকে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে..ঠান্ডা পরিবেশ ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে রাত।এই শীতল পরিবেশ অথচ রাত ঘেমে একাকার। বুকের ভেতর টা জ্বলে পু’ড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। একটু আগেই আষাঢ় আর সন্ধ্যার এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো। রাত মন কে শক্ত করে রেখেছিলো। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলো না। কেই বা পারে প্রিয় নারী কে তার ভাইয়ের পাশে দেখতে? রাত সেই অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতি নিয়ত। কখনও পারছে আবার কখনও ভেতরে ভেঙে পড়ছে। কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। তার ভাইয়ের ও বুঝি এমনই কষ্ট হচ্ছিলো যখন সন্ধ্যা না করেছিল তাই না? ইশ ভালোবাসায় ও যে এত কষ্ট! রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে বারবার বলছে –
-“ আমাকে ধৈর্য দাও খোদা। শুধু তুমি যেনো রেখো এই অনুভূতির কথা। পৃথিবীর আর কাউকে কখনই জানতে দিও না এটা যে আমি আমার ভাইয়ের হবু স্ত্রী কে ভালোবেসে ফেলেছিলাম অজান্তেই। তাহলে পৃথিবীর মানুষ ভাববে আমি দোষী, পাপী । আমি মোটেও এটার ভাগিদার হতে চাই না। সন্ধ্যা ভালো থাকুক ভাইয়ের সাথে আমি মন থেকে চাই। আর সন্ধ্যা.. ভাগ্যিস আপনি আমার হন নাই.!

আপনি আমার হলে তো কেয়ামত হয়ে যাইতো.!
শহরে শহরে কারফিউ জারি হইতো, হরতাল ডাকতো,
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মনে হয় এবার হইয়া ই যাইতো.!
ভাগ্যিস আপনি আমার হন নাই.!
খালি আপনি আমার হইলে দেশে দুর্ভিক্ষ লাগতো সেই কবে.! দেশদ্রোহী হইতাম আপনি আর আমি.!
আকাশে চাঁদ উঠতো না, বসন্তে ফুল ফুটতো না, ফাগুনে কোকিল ডাকতো না, হেমন্তে নবান্ন হইতো না.!
কত ক্ষতি হইয়া যাইতো বলেন তো.?
ভাগ্যিস আপনি আমার হন নাই.!

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৭

খালি আপনি আমার হইলে চন্দ্রগ্রহণ লাগতো রোজ, অমাবস্যা কেটে জোৎস্না আসতো না.!
রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখতো না, শাজাহানের তাজমহল ধসে পড়ত, যুদ্ধ চলতো বারোমাস – দেশটা আর স্বাধীন হতো না.!
কত ক্ষতি হয়ে যাইতো শুধু আপনি আমার হইলে..! এত্ত এত্ত ক্ষতি কি করা যায় নাকি.? তাইতো আপনি আমার হইলেন না.!
ভালোই করছেন, ভাগ্যিস আপনি আমার হন নাই.!!! [ লেখাটা কপি ]

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ১৯