প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ১৬

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ১৬
মুসতারিন মুসাররাত

সময়টা ছিলো দুপুর দু’টো বেজে পঞ্চান্ন মিনিট। লাঞ্চের পরের ক্লাসটা ছিলো আজকের শেষ ক্লাস। ক্লাস শেষ করে তনুজা করিডোর দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় একটা সিনিয়র ছেলে তনুজাকে উদ্দেশ্য করে এক হাত উঁচিয়ে ডেকে উঠল,
-” হেই হোয়াইট ড্রেস পরিহিতা?”

বাক্যটা কর্ণকুহুরে পৌঁছাতেই তনুজার পা দু’টো থেমে যায়। একপল অদূরে দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে ডাকা ছেলেটার পানে তাকাল। পরপর তনুজা নিজের কালো মিচমিচে মণি এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চাইল। আশপাশ তাকিয়ে শিওর হয়, এখানে হোয়াইট রঙের থ্রি পিস শুধু তার পরনেই। তারমানে ছেলেটা তাকেই ডাকছে। তবে ছেলেটির এহেন সম্বোধনে তনুজা হকচকায়; সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। ছেলেটি কয়েক কদম এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
-” হে ইউ! তোমাকেই বলছি।”
বিস্ময়ে তনুজার চিকন ভ্রুদ্বয় গুটিয়ে যায়। জ্বিভ দিয়ে নিম্নোষ্ঠ ভিজিয়ে শুধোয়,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আ-আমি? ইয়ে মানে আমাকে কী দরকার?”
-” আমার যদি ভুল না হয়; ইউ ফারিশতা নূর তনুজা?”
-” ইয়াহ।”
ছেলেটি সৌজন্যমূলক হেসে বলল,
-” মাইকোলজি নিউ মিস তৃষা ম্যাম তোমাকে ডেকেছেন। ম্যামের চেম্বারে একবার দেখা করতে বলেছেন।”
-” কেনো?”
বিস্ময়ে তনুজা চট করে প্রশ্নটা করেই ফেলল। ছেলেটা কাঁধ নাড়িয়ে বলল,
-” আমি জানি না। তুমি গিয়েই জেনে নিও। ম্যামের কাছে দরকারে গিয়েছিলাম। সেই সময় ম্যাম আমার উপর ছোট্ট এই কাজটা দেন। আমার কাজ ছিলো তোমাকে বলা। বাকিটা আমার অজানা।”

ছেলেটা শুকনো একটা হাসি দিয়ে আর বাক্য ব্যয় না করে চলে যায়। তনুজার ইচ্ছে হচ্ছে না তৃষার সাথে দেখা করতে। আবার কলেজের মিস ডেকেছেন না গেলেও কেমন হয়। রুপা আজ আসেনি, বাকী ফ্রেন্ডদের থেকে বিদায় নিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তনুজা যায়। তৃষার রুমের দোরগোড়ায় দাঁড়াতেই ভেতর থেকে মেয়েলি চিকন স্বর আসলো,
-” এসো..এসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
তনুজা ভিতরে যায়। চোখমুখে স্পষ্ট বিরক্তি তার। তবে যথাযথ কার্টেসি মেইনটেইন করে তনুজা। মৃদুস্বরে সালাম দেয়। তৃষা ফিচেল হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,

-” বসো।”
তনুজা অপ্রস্তুত কণ্ঠে তাড়া দিয়ে বলল,
-” নো থ্যাংকস। এভাবেই ঠিক আছি। কাইন্ডলি যদি বলতেন, কীজন্য__”
তৃষা চেয়ারের হাতলে হাত দু’টো রাখে। চোখেমুখে শ°য়°তানি হাসি নিয়ে ঠোঁট চেপে বলল,
-” বলব বলব। তার আগে বসে, একটু রিল্যাক্স করো।”
তনুজা কাঁধের ব্যাগের ফিতা চেপে ধরে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে বসল। তনুজার সামনে টেবিল তারপর তৃষা মুখোমুখি চেয়ারে। পেপার ওয়েট একহাতে ঘুরাতে থাকে তৃষা। পরপর তনুজার দিকে স্থির চাউনিতে চেয়ে বলে উঠল,

-” কেমন চলছে তোমার সংসার জীবন? কেমন চলছে প্রেমিকের বড় ভাইয়ের সাথে দিনকাল।”
শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তো নয়ই; বরং বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য করে বলে তৃষা। শ্রবণেন্দ্রিয়ে কথাগুলো পৌঁছাতেই শান্ত কোমল তনুজার চিত্ত সেকেন্ডেই কঠিন হয়ে আসে। রাগে সমস্ত কায়া ঘিনঘিন করে ওঠে। সাথে চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়। পরপর তনুজা চোখ তুলে তাকিয়ে বলে উঠল,
-” আমি যদি সজ্ঞানে থাকি, তাহলে আমার ভুল হবে না; আমি এখন কলেজে আছি। আর আমার ডিপার্টমেন্টের একজন টিচারের সামনে আছি। বেয়াদবি না নিলে বলি, আমার সংসার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার যায়গা এটা না। পড়াশোনার কোনো টপিক নিয়ে বলার হলে বলতে পারেন। আমার স্বামী সংসার নিয়ে আপনাকে কিছু বলতে আমি আগ্রহী নই। সো কাইন্ডলি টপিকটা চেঞ্জ করুন।”

বোকা, সহজ-সরল কাঁদামাটির মতো নরম তনুজার কঠিন চিত্ত দেখে তৃষা বেশ অবাক হয়। ঠান্ডা গলার কঠিন কথাগুলো হজম করতে কষ্ট হচ্ছে তৃষার। তৃষার শুভ্র সুন্দর মুখশ্রী থমথমে হয়ে যায়। ভেতরে প্রতিহিংসার আ’গু’ন দপ করে জ্বলে উঠল তার। তৃষা ক’দিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিলো তনুজার সাথে কথা বলার জন্য। সে তনুজার সাথে কথা বলে ইভান-তনুজার সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে তা জানতে আগ্রহী ছিলো। কথা বলে কোন ফাঁকফোকর পাওয়া যায় কী না! আর সেদিনকার ইভানের আচরণ দেখে সে তো হিং”সায় জ্বলে। তনুজার উপর সমস্ত রাগ, হিংসা তরতরিয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এখন তনুজাকে অপদস্থ করলে যেন একটু প্রশান্তি মিলবে তার অন্তরাত্মায়। তনুজার থেকে এরুপ প্রত্যুত্তর কস্মিনকালেও আশা করেনি তৃষা। রাগে-ক্ষোভে ফর্সা মুখটা কালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

-” আমার স্বামী! আমার স্বামী যে জোরসে গলায় বলছো, তুমি কী জানো! তোমার স্বামী একসময় আমার হবু স্বামী ছিলো। আমি তার ফ্রিয়ন্সে ছিলাম। সে আমায় ভালোবাসতো।”
তৃষা তার বাম হাতটা তনুজার সামনে মেলে ধরে। ভ্রু বাঁকিয়ে দেখিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
-” এইযে রিং টা দেখছো না। এটা তোমার বর ভালোবেসে নিজ হাতে আমার ফিঙারে পড়িয়েছিলো।”
চিকন লম্বা ধবধবে সাদা অনামিকা আঙুলে হিরের আংটিটা জ্বলজ্বল করছে। আংটিটা যেনো পুরো হাতটার সৌন্দর্য বর্ধন করেছে। আচমকা তনুজার ভেতরটা ধ্বক করে উঠল। পরপর কিছু ভেবে মনকে প্রবোধ দেয় সে। তারপর প্রগাঢ় কণ্ঠে বলে ওঠে,

-” স্যরি আপনার একটু ভুল হয়ে গেলো। মোটেই আমার বর আপনাকে রিং পড়াইনি।”
তৃষার মসৃণ কপালে খাঁজ পড়ল। তৃষা বোকা বনে যায়। তিরিক্ষি গলায় শুধায়,
-” অ্যাই! অ্যাই তুমি জানো না। জানো না আমার আর ইভানের বাগদান সম্পন্ন হয়েছিলো। নাকি না জানার অ্যাক্টিং করছো, হ্যা!”
তনুজা আলতো হেসে বলল,

-” ইভান আপনাকে রিং পড়িয়েছিলো সেটা মিথ্যে নয়। আর বিষয়টা আমি জানি না; এ-ও নয়। তবে সেই সময় ইভান নাতো আমার বর ছিলো, আর নাতো আমি ওনার বউ ছিলাম। তাই আপনার কথাটা ভুল ছিলো।”
সবসময় মেপে মেপে কথা বলা মেয়েটি আজ নিজের কথায়, আর সাহসে চরম অবাক হচ্ছে নিজের উপর। তৃষার সম্মুখে একদণ্ড থাকার ইচ্ছে আর রুচি কোনটাই নেই তনুজার। নেহায়েৎই টিচার বিধায় আসছে। তবে তৃষার কুরুচিপূর্ণ কথা আর সয্য হচ্ছে না। তনুজা চোয়াল শক্ত করে চটজলদি উঠে দাঁড়ায়। কণ্ঠে নামল তীব্র ঘৃ°ণা,
-” সেদিন ওনার চোখে স্পষ্ট আপনার জন্য ঘৃ/ণা দেখেছি আমি। তাই বলছি প্লিজ এবার একটু ভালো হয়ে যান। রঙিন স্বপ্ন আর ছক কষা বাদ দিন। আর হ্যা; টাকা দিয়ে লোকের সাহায্যে জ’ঘ’ন্য কাজ করানোর শাস্তিকে একটু ভ’য় করুন। এখন ছাড় পেয়েছেন বলে যে; সবসময় পেয়ে যাবেন এমন নয়। আর প্রকৃতির বিচার তো আছেই। আপনার সাথে বেহুদা কথা বলার রুচি আর সময় কোনোটাই আমার নেই। আসছি।”

এই বলে পা বাড়ায় তনুজা। কয়েক পা যেতেই থেমে যায়। তৃষা চেয়ারের হেডে কাঁধ এলিয়ে বলতে থাকে,
-” তা এত দ্রুতই এক্সকে ভুলে গেলে! এত টান বরের প্রতি। তা তোমার বর জানে কী! তার বউয়ের এক্স যে তারই ছোট ভাই।”
তনুজার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। চারিপাশটা কেমন ঘুরছে। হঠাৎ করেই ভীষণ অস্থির লাগছে। তৃষা থেমে ফের বলতে থাকে,

-” তার বউয়েরও যে একটা অতীত আছে। এটা জানলে তোমার আর আমার মধ্যে ফারাক কী রইল? আজ আমায় ঘৃ’ণা করছে। কাল যে তোমায় ঘৃ”ণা করবে না এর গ্যারান্টি কী?”
তনুজা পিছু ঘুরে চাইল। ইভানের কী রিয়াকশন হবে তা তার অজানা। তবুও নিজের আর তৃষার ফারাক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে বলল,

-” আলবাত আপনার আর আমার মধ্যে ফারাক আছে। একজনের সাথে সম্পর্ক রেখে আমি তাকে লাফাতে লাফাতে বিয়ে করিনি। আর না তো আমি তাকে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে করেছি। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে দু’জনে বিয়েটা করি। আর এ-ও নয়, বিয়ের পর আমি আমার অতীতকে আঁকড়ে ধরে আছি। আর না তো চেয়েছি। কোনোটাই নয়। আমি কোনোভাবেই তাকে ঠকাইনি। আর আপনি তো তাকে ঠ’কিয়েছেন। সেখানে নিজের সাথে আমাকে কম্পিয়ার করেন কী করে!”

তনুজা কথা না বাড়িয়ে বড়বড় শ্বাস ফেলে প্রস্থান করে। এক টুকরো জ্বলত কয়লা যেনো তৃষার মুখে পড়ল। রাগে গজগজ করতে থাকে সে। তনুজা প্রস্থান করতেই কিছু ভেবে দাঁত কিড়মিড়িয়ে ফোনটা হাতে তুলে নেয়। কাংখিত নম্বরে ডায়াল করে। তিন বারের মাথায় রিসিভ হয়। কর্কশ স্বরে বলে,
-” কোথায় থাকিস? এতবার কল দিচ্ছি রিসিভ কেনো করছিস না!”
ওপাশ থেকে বিবশ গলায় লিমন বলে,
-” বল তুই। তোর কল তুলতে ইচ্ছে করে না। তোর জন্য আমার তিন তিনটে দাঁত খোয়াতে হয়েছে। এখন ফলস দাঁত নিয়ে চলছি। ভ’য় হয় তোর ফোন ধরে আবার জীবনডারে খোয়াই না ফেলি। তোর কথামতো কাজ করে হসটপিলাইজড হয়েছি। তোকে ডরাই বোইন। তুই একটা আতংক মাইরি! তুই মানেই এক অশনিসংকেত আমার জন্যিই।”

তৃষা ধ’ম’কের সুরে বলল,
-” বা’জে ব’কা বাদ দে! টাকা দিয়েছিলাম সেটা, সেটা তো ভালো লেগেছিলো। এমনি এমনি টাকা আসে না তারজন্য কষ্ট করতে হয়। তাই এটুকুন হজম করে নে।”
-” আমি হসটপিটালে ছিলাম তোর কাছে এটু__”
তৃষা থামিয়ে দিয়ে বলল,
-” থাম! আমি যে জন্য ফোন দিয়েছি শোন; দিব্য আর তনুজা তো রিলেশনে ছিলো। তা ওদের দু’জনের কোনো ক্লোজ ছবি টবি আছে কী?”

-” তোর মতো সবাই নাকি! নিজের মতো সবাইকে ভাবিস কেনো! রিলেশনে গেলেই তোর মতো সবাই গা ঘেঁষে, চিপকে থাকে নাকি। আর তনুজা অমন মেয়ে না।”
-” তনুজার গুণগান বাদ দিয়ে, খোঁজ কর। ক্লোজ না থাকলেও পাশাপাশি, যেমনই হোক একটা হলেই হলো। দিব্য আর তনুজার একসাথের পিক। যে করেই হোক সংগ্রহ করে, আমার হটস অ্যাপে সেন্ট করবি। আমি তোর অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অ্যামাউন্ট পাঠিয়ে দিবো।”
-” মাফ চাই বোইন। আমি আর কিছু করতাম না। এবার দিব্য সোজা আমায় উপরে পাঠিয়ে দিবে, আমি ড্যাম শিওর।”
আর একটাও কথা না বলে খট করে কল কা’টে লিমন।

নৃত্যর ফোনকল আসার পর অমনি অফিস থেকে বাসায় ছুটে আসে ইভান। নৃত্য ফোনে বলে,
-” ভাবিমণি হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে সেন্সলেস হয়েছে। অনেকক্ষণ হলো; তারপরেও এখনো সেন্স ফেরেনি।”
কলেজ থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে গিয়ে হঠাৎ মাথাটা ঘুরে যায় তনুজার। তারপর জ্ঞান হারায়। অনেকক্ষণ পর সবে জ্ঞান ফিরল। তনুজা বিছানায় শুয়ে আছে। নুরজাহান বেগম মাথার পাশে চিন্তিত মুখশ্রীতে বসে। জ্ঞান ফেরার পর বেশ কয়েকবার মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া জানিয়েছেন। শিরিন সুলতানা বেডের পাশে দাঁড়িয়ে। জ্ঞান ফিরতেই সবাইকে নিজের রুমে দেখে তড়িঘড়ি করে দূর্বল শরীর নিয়েই ওঠে বসতে নেয় তনুজা। সেইসময় নুরজাহান এক হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

-” আহ্! উঠা লাগবে না। শুয়ে থাকো তুমি। বিশ্রাম নাও। তা নাতবউ হঠাৎ কী হয়েছিলো?”
তনুজা মিহি স্বরে জবাব দেয়,
-” তেমন কিছু নয় দিদুন। হঠাৎ মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল।”
নুরজাহানের চোখমুখে হঠাৎ খুশির ঝিলিক দেখা যায়। কণ্ঠে আমোদ ঢেলে শুধোলেন,
-” আলহামদুলিল্লাহ..আলহামদুলিল্লাহ! তা নাতবউ কতদিন হলো? পরীক্ষা-টরীক্ষা করছো কী?”
তনুজা সরল চোখে নির্বোধের মতন চেয়ে রইল। নুরজাহান তনুজার অভিব্যক্তি পরে নেয়। তারমানে তনুজা বোঝেনি তার প্রশ্ন। এবার একটু ফিসফিসিয়ে বলল,
-” আরে বুঝনি! বলছি কতদিনের পোয়াতি তুমি?”
তনুজার চোখ গোল্লা গোল্লা হয়ে যায়। সাথে মুখটা হা হয়ে আসে। তনুজা তৎক্ষণাৎ মাথা দুদিকে নাড়িয়ে বলে উঠল,

-” না না। ইয়ে মানে দিদুন ওরকম কিছু নয়।”
নুরজাহান বেগম ঠোঁট উল্টে বললেন,
-” ডাক্তার দেখাইছো? বিয়ের পর মাথা ঘোরা, এসব এমনি এমনিই হয় না। ছোট মানুষ টের পাচ্ছো না তাই। যাইহোক দাদুভাই আসুক, তারে বলি ডাক্তারের কাছে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে।”
তনুজা অপ্রস্তুত হয়। অসহায় চাহনিতে চেয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,
-” দিদুন ওরকম কিছু নয়। ওনাকে এসব বলবেন না প্লিজ। এমনিতেই মাথা ঘুরে গিয়েছিল তাই।”
শিরিন সুলতানা ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-” আহ্; মা কী বলছেন! এমনিতেই মাথা ঘুরে যেতেই পারে। আর ওদের বিয়ে মাত্র দেড় মাস পেরিয়েছে। এখনও দুই মাসও হয়নি।”
ছেলের বউকে থামিয়ে দিতে একটু মোটা গলায় বললেন,
-” তুমি থামো তো। পৌনে দুইমাস কম কোথায়? যেখানে আমার বড় খোকা আমার বিয়ের এক মাসের মধ্যেই আমার গর্ভে আসে।”
ইভান ত্রস্ত পায়ে সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠে আসে। লম্বা লম্বা কদম ফেলে রুমে ঢুকে। রুমে পা দিয়ে পরপর মামণি, দিদুন দেখে। তারপর তনুজাকে শোয়া অবস্থায় বিছানায় দেখতে পায়। লম্বা শ্বাস ফেলে ইভান। কণ্ঠে তার একরাশ উদ্বেগ প্রকাশ পায়,

-” কী হয়েছে তনুজার? হঠাৎ কী করে সেন্সলেস হলো?”
কণ্ঠ শুনে তাকাতেই তনুজার দৃষ্টি মিলল ইভানের দৃষ্টিতে। ঘর্মাক্ত মুখ, কপালের উপর এলোমেলো চুল। চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। তনুজা শীতল চাউনিতে নির্নিমেষ চেয়ে রইল তারজন্য চিন্তাগ্রস্থ, উদ্বিগ্ন হয়ে কাজ ফেলে ছুটে আসা মানুষটার পানে। অদ্ভুত একটা শীতলতা বয়ে যায় তনুজার তনুমনে। শিরিন সুলতানা অমায়িক হেসে আদূরে গলায় বললেন,
-” ইভান বাবা আসছো। আমি এক্ষুনি তোমাকে ফোন দিয়ে জানাতে যাচ্ছিলাম তনুজার জ্ঞান ফিরেছে। এই তো একটু আগেই জ্ঞান ফিরেছে তনুজার। তবে আসছো ভালো হয়েছে। সময় করে তনুজাকে একবার ডক্টর দেখিয়ে আনিও।”

-” ঠিক আছে মামণি।”
নুরজাহান বেগম গমগমে স্বরে বললেন,
-” দাদুভাই! আমি বলি কী আজই নিয়ে যাও। মাথা ঘুরে যাওয়া মানে মনেহয় নাতবউ অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। ঠিকমতো খেতেও দেখি না। তাই ডাক্তার দেখিয়ে একদম নিশ্চিত হয়ে আসো। সাথে মিষ্টি নিয়ে আসো।”
ইভানের চোখ দু’টো কোটর ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসার জো হয়। বিস্ময়ে চোখ বড়বড় হয়ে যায়। অপ্রস্তুত হয়। খালি গলায়ও কেমন বেষম লাগে, সহসা খুকখুক করে কেশে উঠল ইভান। পরপর নিজেকে সামলে অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলে ফেলল,

-” হোয়াট? দিদুন কী যা তা বলছো। কী করে? ”
তনুজা লজ্জায় আর অস্বস্তিতে মাথা নুইয়ে নিল। নুরজাহান একগাল হেসে বললেন,
-” নাতবউকে প্রথম থেকেই বাচ্চা-কাচ্চা নেওয়ার কথা বলছিলাম। তোমাদের বাচ্চা নিজ চোখে দেখে যাওয়ার বড় শখ ছিলো আমার। যাজ্ঞে আল্লাহ মনেহয় সেই শখ পূরণ করতে চাইছেন।”
অবাকে, বিস্ময়ে ইভানের চক্ষু চড়কগাছ। ইভান নিস্প্রভ চাহুনিতে তনুজার দিকে চাইল। তনুজা অসহায় ফেস করে মাথাটা আলগোছে দুদিকে ঘুরায়। নীরবে জানান দেয়, ‘না না। এরকম কিছু নয়।’
শিরিন সুলতানা গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

-” ইভান আমার মনেহয় এমনিতেও তনুজাকে একবার ডক্টরের কাছে চেকাপ করতে নেওয়া জরুরী। হঠাৎ মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারানো ভালো লক্ষণ নয়।”
শিরিনের কথার মাঝেই ইভান বলল,
-” মামণি ঠিক বলেছে। তনুজা তুমি রেডি হয়ে নাও।”
নুরজাহান ফোড়ন কাটলেন,

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ১৫

-” ঐযে ছোটো বউমার বান্ধবী এক ডাক্তারনী আছে না, তার কাছে নিয়ে যাও। হ্যা সুখবর শুনলে ফোন করে সাথে সাথে জানাবা। আর আসার সময় দুহাত ভর্তি মিষ্টি আনবা।”
সুখবর শব্দটি শুনে ইভানের খবর খা”রাপ হচ্ছে। কেমন টেনশন হচ্ছে।

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ১৭