আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২১
Raiha Zubair Ripti
আষাঢ় আর সন্ধ্যা কে বসানো হয়েছে পাশাপাশি। আষাঢ়ের শরীরে অফ হোয়াইট কালারের শেরওয়ানি। দারুন মানিয়েছে দু’জনকে। তাদের সামনেই বসে আছে সন্ধ্যার মা। ঝাপ্সা চোখে দেখছে মেয়েকে। কাজি আষাঢ় কে কবুল বলতে বললো। আষাঢ় সন্ধ্যার দিকে তাকালো। সন্ধ্যার মাথা নত করা। সন্ধ্যার দিকে চেয়েই আষাঢ় কবুল বলে দিলো। এবার যখন কাজি সন্ধ্যা কে কবুল বলতে বললো তখন সন্ধ্যার বুক ধক করে উঠলো৷ কবুল বলবে! কবুল বলে দিলেই তো পরিচয় বদলে যাবে। শুধু সন্ধ্যা থেকে মিসেস আহমেদ হয়ে যাবে।
কাজি তাড়া দিলো। আষাঢ় সন্ধ্যার বা হাত মুঠোয় নিলো। চোখের ইশারায় ভরসা দিলো। সন্ধ্যা খানিকটা ভরসা পেলো। মুঠোয় বন্দী হাতের দিকে তাকিয়ে কবুল বলে দিলো। আষাঢ়ের দেহ জুড়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। ফাইনালি ফাইনালি তার মনের মানুষটা এখন কেবল একান্ত তারই। মুখে ফুটলো এক চিলতে হাসি। হাসিটা ছিলো প্রাপ্তির হাসি। সূদুরে দাঁড়িয়ে আছে রাত। যে তাকিয়ে রয়েছে সদ্য বিবাহিত দুই নব দম্পত্তির দিকে। মন থেকে বলে উঠল- সারাজীবন খুশি থাকুক এই দম্পত্তি। কারো নজর না লাগুক। আর আমার নজরটাও সীমার ভেতর থাকুক।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নজরুল ইসলাম কনাকে বললেন ওদের এবার রুমের ভেতরে নিয়ে যেতে। কনা সন্ধ্যাকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো। রাতের নজর এবার কনার দিকে গেলো। একদম সাদামাটা লাগছে৷ জামাটা পুরোনো নাকি নতুন ঠাওর করতে পারলো না। চুলগুলো হাত খোপা করা। মুখে হয়তো পাউডার ও লাগায় নি। গতকাল বলা কথাটা কি ভীষণ রুড ছিলো? হয়তো৷ মস্তিষ্ক টা বেঁকে গিয়েছি। রাহুল কেনো তার কাছে সাহায্য চাইবে? যাকে বিয়ে করবে সরাসরি তাকে গিয়েই বলবে।
কনা সন্ধ্যা কে তার রুমে বসিয়ে চলে আসতে নিলে সন্ধ্যা হাত টেনে ধরে। কনা পেছন ফিরে তাকায়। চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো- কি?
সন্ধ্যা কনাকে বিছানায় বসিয়ে বলল-
-„ কি হয়েছে আমাকে বলবি না কনা?
কনা হাসার চেষ্টা করে বলল-
-“ ক..কিছু হয় নি সন্ধ্যা। কি হবে?
-„ তোকে আমার মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না।
-“ অস্বাভাবিক লাগার কারন কি?
-“ এই যে কেমন লাগছে তোকে। বাউণ্ডুলে মেয়ে টা হঠাৎ কেমন স্থির হয়ে গেলো।
-“ সব সময় কি মানুষ এক থাকে? এই যে দেখে পৃথিবীটা সেটা কি সবসময় এমন রোদে পরিপূর্ণ থাকে? কখনও তো শীতল,আবার কখনও প্রচন্ড ঝড়ে তছনছ করে ফেলে। মানুষই এমনই। সে যাি হোক আমাকে নিয়ে ভাবিস না। আমি ঠিক আছি। আজ তোর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন তাই অযথা আমাকে নিয়ে ভেবে দিন টাকে মাটি করিস না। ভাইয়া আসলো বলে। এরপর তোদের কতো ছবি তোলা হবে জানিস?
কনা চলে গেলো। আরাফাত আষাঢ় কে নিয়ে বসিয়ে দিলো। সবাই এক এক করে ছবি তুললো। ছবির শেষে আষাঢ় আর সন্ধ্যা কে খেতে দিলো।
খাওয়াদাওয়া শেষে সন্ধ্যা হতেই বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসলো। সন্ধ্যা তার মা’কেই শুধু জড়িয়ে ধরলো। পাশেই নজরুল ইসলাম দাঁড়িয়ে ছিলেন। আশা করেছিল আজকের দিনে হয়তো মেয়েটা তার বুকে এসে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু নাহ্ করলো না। সন্ধ্যা আসার পথে কেবল তার বাবাকে বলল-
-“ মায়ের খেয়াল রাখবেন. সাথে নিজেরও।
ব্যাস শেষ।
আমেনা বেগম সন্ধ্যা কে আষাঢ়ের রুমে বসিয়ে এসেছে। আরাফাত আষাঢ়ের হাতে একটা প্যাকেট গুঁজে দিলো। আষাঢ় তাকানোর সাথে সাথে হাত গুটিয়ে নিলো। কড়া চোখে তাকালো আরাফাতের দিকে। আরাফাত চোখ টিপ দিয়ে বলল-
-“ এনজয় ইউর নাইট আষাঢ়। তবে গতিসীমা ৪০ এর বেশি নয়। আর সেফটি ১০০% সাথে নিয়ে রেখো। কারন জনসংখ্যা এবার দেশে ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে সো বি কেয়ার ফুল।
শরিফা হেসে ফেললো। আরাফাত খেয়ালই করে নি শরিফা কে। খেয়ালে আসতেই শরিফার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল-
-“ পিচ্চি মেয়ে বড়দের কথা শুনে ফেললে?
শরিফা আরাফাতের কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল-
-“ আমি মোটেও পিচ্চি নই মহাশয়। এক বাচ্চা সামলানোর বয়স চলছে। অথচ বিয়ে হচ্ছে না।
-“ বিয়ে করতে চাও?
-“ অবশ্যই।
-„ বিয়ে হলে কত কাজ করতে হয় জানো? আস্ত একটা সংসার।
-“ সব সামলাতে পারবো। আর রাত হলে আপনাকেও সামলাতে পারবো। ডোন্ট ওয়ারি।
আরাফাত শরিফার কান টেনে ধরে বলল-
-“ বিচ্ছু মেয়ে একটা।
সন্ধ্যা পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। ফুল দিয়ে সাজানো সিম্পল সাজ রুমটার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ রুমটাকে মাতোয়ারা করে তুলছে।
এসব ভাবনার মাঝেই আষাঢ় আসলো। সন্ধ্যা গুটিয়ে গেলো। আষাঢ় দরজাটার সিটকানি লাগিয়ে এগিয়ে আসলো। সন্ধ্যার সামনা-সামনি বসে আলতো হাতে ঘুমটা টা তুলে দিলো। সন্ধ্যা আষাঢ়ের চোখের দিকে তাকালো। আষাঢ় স্মিত হেসে বলল-
-“ ভেবেছি তুমি লজ্জায় মাথা নত করে রাখবে।
-“ আচ্ছা তাহলে মাথা নত করে রাখছি।
-“ এই না। তাকিয়েই থাকো। ভালো লাগছে। একটা জিনিস আছে তোমার জন্য।
-“ কি?
-“ দেনমোহরের টাকাটা আগে বুঝিয়ে দেই।
আষাঢ় শেরওয়ানির পকেট থেকে টাকাটা বের সন্ধ্যার হাতে দিলো। সন্ধ্যা উল্টেপাল্টে দেখে বলল-
-“ উমম কি করা যায় বলুন তো টাকাটা দিয়ে?
-“ তোমার যা ইচ্ছে হয় করবে।
-“ আচ্ছা আপাতত ভাবছি না কি করা যায়। আপনার কাছেই রেখে দিন। কখনও লাগলে দিয়েন।
-“ যদি তখন না থাকে টাকা তখন?
-“ আমি কি বলেছি ভেঙে ফেলতে টাকা? বলেছি রাখতে। আমার পার্সোনাল ব্যাংক তো আপনই।
আষাঢ় এক গাল হেঁসে টাকাটা আলমারি তে রেখে দিলো। তারপর সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলল-
-“ ওজু করে আসতে পারবে?
-“ নামজ পড়বেন?
-“ হু।
-“ আচ্ছা আসতেছি।
সন্ধ্যা বেনারসি পড়েই সাজসজ্জা মুছে ওজু করে আসলো। সন্ধ্যা বের হতেই আষাঢ় ওজুতে ঢুকলো। সন্ধ্যা এদিক ওদিক তাকিয়ে জায়নামাজ খুঁজলো। পেলো না। আষাঢ় ওয়াশরুম থেকে এসে আলমারি থেকে জায়নামাজ বের করে আগপিছ করে বিছালো। তারপর দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিলো দুজন। আষাঢ় জায়নামাজে বসেই সন্ধ্যার দিকে ফিরে কিছু বিরবির করে উচ্চারণ করে সন্ধ্যার শরীরে ফু দিলো। তারপর বসা থেকে উঠে জায়নামাজ গুলো আগের জায়গায় রেখে সন্ধ্যাকে নিয়ে বিছানায় বসলো।
-“ ঘুমাবে এখন?
জিজ্ঞেস করলো আষাঢ়।
-“ আপনার সমস্যা না হলে ঘুমাবো?
-“ নাহ্ নেই সমস্যা। তুমি বরং ঘুমাও। আমি বাতি নিভিয়ে দিচ্ছি।
-“ আচ্ছা।
আষাঢ় বাতি নিভিয়ে দিলো। প্রথম রাতেই ওসব না থাক। সময় নিক কিছুটা। আষাঢ় সন্ধ্যার পাশে এসে শুলো। সন্ধ্যা ফট করে চোখ মেলে তাকালো। আষাঢ় বলল-
-“ বুকে এসে ঘুমাবে? ইচ্ছে ছিলো খুব তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবো।
সন্ধ্যা এগিয়ে আসলো। আষাঢ়ের বুকে মাথা রাখলো। আষাঢ় জড়িয়ে ধরে কপালে গাঢ চুম্বন একে দিয়ে বলল- শুভরাত্রি বউ।
সকালে,,,
সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় কনার। সন্ধ্যা এখন এ বাসায় নেই। কনার ও আর থাকা উচিত নয় এই বাসায়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে হবে। কোচিং আছে আজ। দুপুরে আবার রিসিপশন সন্ধ্যার। কনা তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে যায়। মাঝরাস্তায় এসে রাতের সাথে দেখা। রাত দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো। কনা কোচিং সেন্টারে আসতেই রাহুল এসে দাঁড়ায় সামনে। কনা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কিছু বলবেন?
-“ হুম।
-“ কি?
-“ আপনাকে আজ একজন দেখতে আসবে৷ প্লিজ দাঁড়াবেন ছুটির শেষে?
-“ কে আসবে?
-„ আসলেই দেখতে পাবেন। প্লিজ দাঁড়াবেন কিন্তু।
কনা উত্তর না দিয়েই চলে গেলো। প্রায় ২ ঘন্টা কোচিং শেষে বের হতেই রাহুল ডেকে উঠে কনাকে৷ কনা পেছন ফিরতেই দেখে রাহুল এক মহিলা কে নিয়ে এগিয়ে আসতেছে। সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ মা এ হচ্ছে কনা।
মহিলাটা কনার দিকে তাকিয়ে রইলো। থুতনিতে চুমু খেয়ে বলল-
-“ মাশা-আল্লাহ তুমি তো খুব মিষ্টি দেখতে।
কনা ইতস্তত বোদ করলো। তবে বুঝতে দিলো না। মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল-
-“ ধন্যবাদ আন্টি।
-“ তোমার বাবা মায়ের নাম কি?
-“ আমার বাবার নাম কামরুল হাসান।
-„ আর মায়ের নাম?
-“ রুনা বেগম।
-“ বাবা মা কি করে?
-“ জ্বি আমার বাবা ব্যাংকে জব করে। আর মা উনি বছর সাত হলো নেই।
-“ কোথায় গেছে?.
-“ আল্লাহ নিয়ে নিছে তার কাছে।
কথাটা বলার সময় কনার চোখ টলমল করছিলো। রাহুলের নজরে আসে। রাহুলের মা কনার মাথায় হাত রেখে বলল-
-“ আমি তো আছি মা৷ তোমার বাবার নম্বর টা দাও তো৷ একটু কথা ছিলো।
-“ কি কথা আন্টি?
-“ সেটা না হয় পরেই জেনে নিও। আপাতত নম্বর টা দাও।
-“ জ্বি ০১৯*******। এবার যেতে পারি? আসলে ফ্রেন্ডের আজ রিসিপশনের অনুষ্ঠান আছে। সেখানে যেতে হবে।
-“ হ্যাঁ যাও মা সাবধানে।
সন্ধ্যা রিসিপশনের জন্য একাই সেজেছে। আষাঢ় হেল্প করেছে শাড়ি পড়ার সময়৷ লোকটা কি সুন্দর শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে পারে। সন্ধ্যা জিজ্ঞেস করেছিলো এত সুন্দর করে কিভাবে শাড়ি পড়াডে পারলো৷ প্রতিত্তোরে আষাঢ় জানালো ছোট থেকেই মায়ের শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিত সেখান থেকেই শেখা। চুলটাও আষাঢ় বেঁধে তাতে বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিয়েছিল। দারুন কম্বিনেশনের লোকটা। একের ভেতর সব না হলেি একের ভেতর চলে। মানানসই। আষাঢ়ের রেডি হওয়া শেষ হলে আষাঢ় সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে-
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২০
-“ হয়েছে ম্যাডাম যাওয়া যাক।
সন্ধ্যা ডান হাত এগিয়ে দিয়ে বলল-
-“ জ্বি হয়ে গেছে চলুন।