Love Triangle part 2

Love Triangle part 2
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

বাবা বাসায় ফিরল দশ মিনিটের মধ্যে। সোলেমান চাচা ই কল করে ডেকেছে বাবাকে। বাসায় ফিরে সব শুনে সবার সামনে ই আমাকে থাপ্পড় মা’র’লেন। এরপর কোথা থেকে যেন একটা লাঠি খুঁজে এনে তার যথাযথ ব্যবহার করলেন।প্রচুর মা’র’ধ’র করলেন বাবা।সবার সামনেই।আর জঘন্য গা’লি!ওই ছেলেটা অপ্রস্তুত চোখে অসহায়ের মত আমার দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু।তাকেও মা’র’ত হয়ত কিন্তু পরের ছেলের গায়ে হাত তুলবে না এই নীতিতে বিশ্বাসী বাবা। সেজন্য তার গায়ে হাত তুললেন না।এলাকার মানুষ ছিঃ ছিঃ করে একগাদা কথা শুনিয়ে ফিরে গেল বাসায়। ভেবেছিলাম সেখানেই ঘটনা থেমে যাবে বুঝি! কিন্তু জানিনা সকাল হতেই এই ঘটনা পুরো মহল্লায় কিভাবে ছড়িয়ে গেল। আস্তে আস্তে টিউশনি যেখানে করাই, মিসেস শায়লা রহমানের কান অব্দি। স্বাভাবিকভাবেই কোনো গার্ডিয়ান তার সন্তানের জন্য চরিত্রহীন কোন টিউটর রাখবেন না।তিনিও তাই করলেন। চুক্তি অনুযায়ী দু মাসের বেতন এডভান্স দিয়ে বিদেয় করলেন আমাকে।

হঠাৎ মুনের কোঁকানোর শব্দে ধ্যান ভাঙল। ঘুমের মধ্যে ই শব্দ করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আজকের সন্ধ্যায় যা হলো এরপর এতক্ষণ ধরে কালকের সবকিছুই মনে পড়ছিলো।আমি আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমিয়ে গেলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হেমন্তের সুন্দর সকাল।জানালা গলে সূর্যের আলো ঢুকছে ঘরের মধ্যে। আমার ঘুম ভাঙল সকাল আটটার দিকে।শরীর ব্যথায় মরার মত ঘুমিয়েছি।রাতে পেইন কিলার খেয়েও কাজ হয়নি কোনো।ব্যথা কমেনি।সারা শরীরে অসহ্য রকমের ব্যথা।চোখ খুলে দেখি মুন নেই।জানালা খোলা। আম্মু এসেছিল হয়ত। মুন কে ঘুম থেকে তুলে প্রাইভেটে পাঠিয়েছেন। গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলাম।উঠতে ইচ্ছে করছে না ব্যথার জন্য। কিছুক্ষণ পর মা এলেন।আমি কাথা মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি।তাকে ঢুকতে দেখে এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ দেয়ালের দিকে নিলাম।মা আমার মাথার পাশে বসে মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ উঠ মা।একটু ডাক্তারের কাছে যা।

রান্না শেষ।গরম গরম খেয়ে হাসপাতালে যা। ডাক্তার কে বলে ওষুধ কিনে আন।তোর আব্বা কোথায় জানি গেছে। সন্ধ্যার আগে আসবে না। চিন্তা করিস না। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসিস।আর!তোর টিউশনের কি অবস্থা?আছে ওটা?’
আমি মাথা নাড়লাম।নেই।মা চুপ করে গেলেন।উনি আন্দাজ করেছিলেন হয়ত এমন কিছু একটা। আমি মনে মনে ভাবলাম,শানের চাচ্চু না এলে কি আমার মত লোকমুখে প্রচলিত চরিত্রহীন টিউটর রাখতেন শায়লা আপা?
কি মনে হতেই আবার কান্না পাচ্ছে।ভাবনা বাদ দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার শুয়ে রইলাম।মা আদর করে আমাকে বিছানা থেকে তুলে মুখ ধুতে পাঠালেন।পা দুটো বাদে হাত পিঠ সবই প্রচন্ড ব্যথা করছে।ওয়াশ রুমে ঢুকে আয়নায় নিজেকে দেখলাম।এই চেহারা দেখে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে আপনা আপনিই।কোন পাপের শাস্তি যে পাচ্ছি আমি আল্লাহ ভালো জানেন!

এগারোটার দিকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম।সময় নিয়ে গোসল করে এরপর বের হয়েছিলাম ওয়াশ রুম থেকে।মা হাতে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন। চুল শুকানোর পর নিজে বেণী ও করে দিলেন।কালো রঙের জর্জেট থ্রি পিস পরেছি একটা। হাতে ব্যাগ।সাথে কোনো ফোন নেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই সময়ে এসেও আমার নিজস্ব একটা ফোন নেই। আম্মুর ফোন দিয়ে সবার সাথে যোগাযোগ করি।আজকে বেতনের সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে বের হয়েছি বাসা থেকে। ডাক্তার দেখিয়ে আর ওষুধ কেনার পর যদি পর্যাপ্ত টাকা থাকে তাহলে একটা ফোন কিনব। শহরের একটা সুনাম ধন্য প্রাইভেট হাসপাতালের উদ্দেশ্যে সিএনজি তে উঠে বসলাম।দশ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে গেল সিএনজি।নেমে ভাড়া দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। হাসপাতালের করিডোরে মানুষের ভিড় অনেক। ভালো হাসপাতাল বলে কথা। রিসেপশনে দুটো সুন্দরী মেয়ে হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলছে। আমি উনাদের কাছে যেতেই মিষ্টি গলায় একজন জিজ্ঞেস করলো,

‘ আমরা আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?’
আমি কিছুক্ষণ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে রইলাম কি বলব ওদের। কোন ডাক্তারের নাম ও জানি না।টাকা আছে, হুজুগেই চলে এসেছি। কোনোরকমে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ মেডিসিন বিভাগের কোনো ডাক্তার আছেন? আমি উনাকে দেখাতে চাই।’
‘ ইয়েস ম্যাম।আছেন।মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের তিনজন ডাক্তার এখন হাসপাতালে ই আছেন।নিয়াজ মোর্শেদ স্যার, সাহানা সিদ্দিকী ম্যাম এবং ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী স্যার।আজকে সবচেয়ে বেশি রোগী ফাইয়াজ স্যার কেই দেখাচ্ছে।আপনি কাকে দেখাবেন?’

ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী!নামটা নতুন আমার কাছে। কি ভেবে আমি উনার সিরিয়ালই কাটলাম।৭০০ টাকা ভিজিট।সিরিয়াল নাম্বার ৩৭! এখন সবে মাত্র ১১ চলতেছে। আমার মাথায় হাত পড়ল। অনেকক্ষণ লাগবে তাহলে। এতক্ষণ হাসপাতালে সময় দিলে আবার কোনো না কোনো সমস্যা হবে। আমি রিসেপশনিস্ট কে রিকুয়েস্ট করতে শুরু করলাম যেন আমাকে এর পরেই ডেকে পাঠায়। আর্জেন্ট লাগবে আমার।উনারা কিছুতেই মানবেন না।আর এত এত রোগীদের কেও মানানো টাফ!বাধ্য হয়ে নিজের সমস্যার কথা বললাম একজন কে।বাবা জানতে পারলে খুব ঝামেলা করবে এইসবই বললাম।উনি সহানুভূতিশীল হলেন বোধহয়। বললেন,

‘ আপনি আমার সাথে আসুন। কিন্তু মুখ খুলবেন না। আমি দেখছি কিছু করতে পারি কি-না।’
আমি বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে উনার সাথে গেলাম। লিফটে করে তিন তলায় উঠে এলাম মেয়েটার সাথে।এখানেই ডাক্তারের চেম্বার।এসে দেখি ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরীর চেম্বারের সামনে অনেকেই বসে আছে। আনাগোনা একটু বেশিই। আমাকে রিসেপশনিস্ট মেয়েটা দরজার সামনে নিয়ে গেলেন।দরজায় নক করতেই একটা ছেলে ভিতর থেকে উঁকি দিলো।মুখে বললো,
‘ কিছু বলবেন?’
‘ স্যারের সাথে আর্জেন্ট দরকার আছে। ভিতরে আসতে দিন আমাদের।’
‘ কিন্তু উনি তো রোগী দেখছেন!’

রিসেপশনিস্ট মেয়েটা অনুনয়ের দৃষ্টিতে তাকালো।একটু হেসে আমাদের ভিতরে ঢুকতে দিল ছেলেটা।আমরা ঢুকার পর ফের দরজা লাগিয়ে দিল ভিতর থেকে। ডাক্তারের চেম্বার টা বেশ বড়।বেড আছে। ধবধবে সাদা রঙের পর্দা টানানো এক কোণে।মনে হচ্ছে ডাক্তার সেখানেই বসেছেন। এদিকে আরো কি কি মেশিন বসানো।হবে হয়ত কোন সাধারণ চেকআপের জন্য।আমরা ঢুকে দাঁড়ানোর দু মিনিট পর কোণ থেকে একটা মহিলা বের হয়ে এলেন।ছেলেটা উনাকে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে দিল।উনি বের হওয়ার পর পরবর্তী রোগী কে ডাকবে তার আগেই রিসেপশনিস্ট মেয়েটা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ একটু পর ডাকবেন প্লিজ।আমার সাথে যাকে দেখতে পাচ্ছেন উনি একটু সমস্যায় আছেন।দশ মিনিটের মধ্যে স্যার কে দেখিয়ে চলে যাবে। ততক্ষণ কাউকে ডাকবেন না।আমি চলে যাচ্ছি।স্যার উনাকে দেখুক।’
ছেলেটা অবাক হলেও কিছু বললো না।মাথা নাড়িয়ে আমাকে পর্দা টানানো কোণটার দিকে যেতে বলল। আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম।এক হাতে পর্দা সরিয়ে ভিতরে আসার অনুমতি নিতে বললাম,
‘আসব স্যার?’

Love Triangle part 1

ডাক্তার ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী গালে হাত দিয়ে বসে ফোনে কি যেন দেখছেন। আমার ডাক শুনে মাথা তুলে তাকালেন আমার দিকে।উনাকে দেখার পর আমার মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গেছে।আমার দিকে তাকিয়ে উনি যতটা না অবাক হয়েছেন তার থেকে বেশি অবাক হলাম আমি!এটা কিভাবে সম্ভব?নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম,
‘ আপনি???’

Love Triangle part 3