আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৫

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৫
Raiha Zubair Ripti

পনেরো দিন পাড় হয়ে গেছে। রাতের আইইএলটিস এক্সামের রেজাল্ট দিয়েছে এর মধ্যে । এবং সে উত্তীর্ণ ও হয়েছে। বাহিরের যাওয়ার সব প্রসেস কমপ্লিট। তার ফ্লাইট পরশু নাইটে। এখন স্বপ্ন পূরণের পালা। এই পনেরো দিন কনার সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নি। কনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের প্রস্তুতি নাকি জোর কদমে চলছে। সন্ধ্যার মুখে শুনেছিল। এই তো কাল গায়ে হলুদ। গতকাল রাতে কনা একটা মেসেজে দিয়ে রাত কে আসার অনুরোধ করলো। মেসেজটি পড়েই রাত স্থির হয়ে গিয়েছিল। কোনো উত্তর দেয়নি, এমনকি ডিলিটও করেনি। শুধু মেসেজটি সীন করেই রেখে দিয়েছিল। সন্ধ্যা বসার রুমে বসে ভাবছে কনাকে নিয়ে। আষাঢ় হসপিটালে গেছে। কাল যাবে তারা রাজশাহী। রাত কে রুম থেকে বের হতে দেখে সন্ধ্যা ডেকে উঠলো। রাত সন্ধ্যার দিকে তাকালো। এগিয়ে এসে বলল-

-“ বলুন।
-“ আপনি যাবেন না বিয়েতে?
-“ হয়তো যাওয়া হবে না। আসলে পরশু তো আমার ফ্লাইট। গোছগাছ ও তো করতে হবে।
-“ হ্যাঁ সেটাও তো কথা। কনা আমাকে বারবার বলে দিয়েছে আপনি যেনো একটু হলেও যান।
-“ আমার যাওয়া না যাওয়ায় তো বিয়ে আটকে থাকবে না সন্ধ্যা..সরি ভাবি। তাছাড়া হয়তো সময়ই হবে না আমার। তবুও চেষ্টা করবো।
-“ কত দিনের জন্য যাবেন?
-“ গুনি নি। যতদিন ইচ্ছে হয় ততদিন।
-“ কনা টাও বাহিরে পড়ার জন্য কোর্স করলো। অথচ বিয়ের জন্য এক্সাম টা দিতে পারলো না।
-“ নেক্সট টাইম দিবে সমস্যা তো নেই তাতে।
-„ হু। ব্রেকফাস্ট করেছেন?
-“ না।
-“ আচ্ছা। ব্রেকফাস্ট আনছি আমি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সন্ধ্যা উঠে চলে গেলো খাবার আনতে।রাত খাবার টেবিলে বসলো। সন্ধ্যা খাবার এনে দিলো। রাত খেলো। খাওয়ার শেষে রাত বাহিরে চলে গেলো। কিছু কাজ আছে যা শেষ করতে হবে।
রাত বের হবার পর পরই সন্ধ্যা বের হলো শাশুড়ির সাথে। পাশের মলে গেলো কিছু কেনাকাটা করার জন্য। কেনাকাটা করে মল থেকে বের হতেই দেখা হলো নিখিলের সাথে। সন্ধ্যা স্থির হয়ে গিয়েছিলো। চোখাচোখি হলো দু’জনের। আমেনা বেগম ডেকে উঠলো নিখিল কে। নিখিল এগিয়ে আসলো। সালাম দিলো। আমেনা বেগম সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-“ কেমন আছো নিখিল?
নিখিল মৃদু হেসে বলল-
-“ জ্বি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
-“ এই তো আল্লাহর রহমতে আছি ভালোই।
-“ তা এখানে কেনো?
-“ একটু কেনাকাটা করার জন্য এসেছি।
-“ থাকো কোথায় এখন?
-“ শাহবাগ।
-“ ওহ্ বউ কোথায়?
-“ বউ?
-“ হু বউ। তুমি না বিয়ে করছো শুনলাম। ছবিও তো দেখলাম।
-“ ও হ্যাঁ.. আমি তো বিয়ে করছি। বউ বাসায়। আজ আসি আন্টি।
নিখিল আমেনা বেগম কে পাশ কাটিয়ে সন্ধ্যা কে ক্রস করার সময় নিখিল ফিসফিস করে বলল-
-“ পৃথিবীর সব সুখ তোর জীবনে এসে ধরা দিক। ভালো থাকিস।

সন্ধ্যা ততক্ষনাৎই নিখিলের দিকে ফিরলো। নিখিল চলে গেলো। সন্ধ্যা যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। আশ্চর্য লোকটা এমন টা বললো কেনো। আমেনা বেগম সন্ধ্যা কে ডাকলো। সন্ধ্যা শাশুড়ির সাথে হাঁটা ধরলো
কনা ফোনে কথা বলছে রাহুলের সাথে। সেদিন রাতের সাথে কথা বলার পরই কনা তার বাবা কে জানিয়েছে সে বিয়েতে রাজি। সেটা রাহুল শোনা মাত্রই সে কি খুশি। রোজ নিয়ম করে তিন বেলা ফোন দেয়। খোঁজ খবর নেয়। মাঝে একদিন রাজশাহী চলে এসেছিল কনা কে দেখার জন্য। কনার বাড়ির নিচে এসেছিলো। কনা তখন বেলকনিতে ছিলো। রাহুল কিয়ৎ ক্ষন কনাকে নিচ থেকে দেখেই চলে যায়।
রাহুল ছেলেটা ভালোই। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হিসাবে সব মেয়ে তো এমনই স্বামী চায়। রাহুল কেয়ারিং একটা পার্সন।

-“ কনা শুনছো?
-“ হু বলুন।
-“ আমরা দুজন কিন্তু এক সাথে বাহিরে যাব কেমন? আমি তোমাকে তোমার ফ্রিডম দিব। তোমার সব স্বপ্ন পূরণের পথিক হয়ে পাশে থাকবো। তোমাকে উৎসাহ দিব। বাঁধা অন্তত কখনই দিব না। আমি একদম তোমার মনের মতো স্বামী হবার আগে বন্ধু হয়ে দেখাবো। তার বিনিময়ে কি তুমি সারাজীবন আমায় তোমার পাশে রাখবে কনা?
-“ আমি বিয়ে একটা তেই বিশ্বাসী রাহুল। আপনার সাথে আমার বিয়ে হওয়া মানে ধরে রাখুন মৃত্যুর আগ অব্দি আমি আপনার বউ হয়েই আপনার পাশে থাকবো।
-“ আমরা আজ রাতে আসতেছি রাজশাহী। সোজা হোটেলে কমিউনিটি সেন্টারে উঠবো।
-“ সাবধানে আসবেন।

রাতে আষাঢ় বাসায় ফিরতেই দেখে সন্ধ্যা বিছানায় আধশোয়া হয়ে কিছু ভাবছে। আষাঢ় পোশাক পাল্টে নিলো। কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে রইলো অথচ সন্ধ্যার খেয়ালে আসলো না। আষাঢ় এবার সন্ধ্যার বাহুতে হাত দিয়ে বলল-
-“ এ্যাই কি ভাবছো?
সন্ধ্যা চমকালো। ধরফরিয়ে উঠে বলল-
-“ ভয় পেলাম তো।
-“ ভয় কেনো পেলে? কি ভাবছো?
-“ আজ মলে গিয়েছিলাম।
-„ হু তো?
-“ নিখিলের সাথে দেখা হলো।
-“ ওহ্ তারপর?
-“ একটুও অনুতপ্ত নেই।
-“ অনুতপ্ত কেনো থাকবে? সে কি করেছে?
-“ সে সেকেন্ড বিয়ে করে সুখী আছে।
-“ কেনো তার অসুখী থাকার কথা ছিলো?
-“ আপনি কি তার হয়ে কথা বলছেন?
-“ না তো।
-“ সেটাই তো মনে হচ্ছে।

-“ শুনো সন্ধ্যা বাহির থেকে কাউকেই জাজ করা উচিত না। আর নিখিলের কোনো অন্যায় আমি তেমন দেখি না। শ্রেয়ার সাথে এটা আরো অনেক আগেই হতো। আমি নিখিল কে বলেছি মানিয়ে নিতে ধৈর্য ধরে। তবে শ্রেয়া তো শ্রেয়াই। আর তাছাড়া আমি বলবো নিখিল দারুন একটা মানুষ।
-“ আপনার কথার টোন ভালো লাগছে না। নিখিল ভাই কেমন সেটা আমার থেকে আপনি ভালো জানেন?
-“ হয়তো কিছুটা ভালো জানি। আর নিখিল কিন্তু বিয়ে করে নি।
সন্ধ্যার ভ্রু কুঁচকে আসলো।

-“ বিয়ে করে নি মানে? সেদিন যে ছবি দেখলাম।
-“ ওটা নিখিলের বউ না। নিখিলের বন্ধুর বউ। ওদেরই বিয়ে হয়েছে। নিখিল সাক্ষী হিসেবে গিয়েছিলো। সেখানেই একজন ছবি তুলে শ্রেয়াকে পাঠিয়ে বলেছিলো নিখিল বিয়ে করে নিছে। আসল কথা হলো নিখিল নিখিলের মতো আছে।
-“ তো ওসব করার কি মানে?
-“ নিখিল তো করে নি। করেছে ওর কলিগ। যার সাথে শ্রেয়ার ভাব ছিলো।
-“ ওহ্ আচ্ছা.. বাদ দেই এই টপিক। খেতে আসুন।
আষাঢ় সন্ধ্যার পেছন পেছন গেলো।
রাত আগেই খেয়ে নিজের রুমের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের আকাশে মেঘ জমেছে। দূরে কোথাও বিদ্যুতের চমক দেখা যাচ্ছে। ভালো লাগছে এমন আবহাওয়া। এই তো আর কয়টা দিন। তারপর চলে যাবে।

নতুন দিনের সূচনা… কনাকে সাজানো হয়েছে। আজ যে গায়ে হলুদ। কনা আয়নায় নিজেকে দেখছে। তাজাফ ফুল হলুদ শাড়ি দারুন লাগছে। এতো দারুন লেগেও তো পেলো না রাত কে। কি এমন হতো রাত কে পেয়ে গেলে? বিশ্বে কি যুদ্ধ লেগে যেত একটা মানুষ কে পাওয়ার ফলে?
কনা বিছানা থেকে ফোনটা নিলো। সন্ধ্যাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো কতদূর তারা। সন্ধ্যা জানালো প্রায় কাছেই। কনা ইনিয়েবিনিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাত আসছে কি না। সন্ধ্যা জানালো রাত আসবে না। কাল ফ্লাইট তার। তার পক্ষে সম্ভব না আসার।

কাল তার ফ্লাইট, কথা টা শুনেই বুক অসার হয়ে আসলো কনার। ইশ লোকটা তাহলে চলেই যাচ্ছে! শেষ বারের জন্য কি একটুও দেখা হবে না তাদের? লোকটাকে কি একটুও ছুঁইয়ে দিতে পারবে না?
কনা ফোন টা কেটে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখলো রাহুল এসেছে। পড়নে হোয়াইট পাঞ্জাবি। রাহুল কনার রুমের জানালার দিকে তাকালো। তার মনে হয়েছিল কনা আছে জানালার ধারে। হলোও তাই। চোখাচোখি হলো দু’জনের। রাহুল মৃদু হেসে ফোনে মেসেজ পাঠালো-
-“ মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।
কনা জাস্ট দেখলো মেসেজ টা। রিপ্লাই দিলো না।

রাহুল কে নিয়ে বসানো হলো স্টেজে। সন্ধ্যা আর আষাঢ় ও চলে এসেছে। সন্ধ্যাকে সামনাসামনি দেখে কেনো যেনো কনার বুক ফেটে কান্নারা বেরিয়ে আসতে চাইলো। কামরুল হাসান কনা কে নিয়ে আসতে বললো। সন্ধ্যা কনাকে দু চোখ ভরে দেখলো৷ থুতনিতে হাত রেখে বলল-
-“ খুব সুন্দর লাগছে তোকে কনা।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৩

কনা মৃদু হাসলো। সেই হাসিতে প্রাণের স্পন্দন ছিলো না। শুধু সন্ধ্যাকে জড়িয়ে বলল-
-“ খুব ইচ্ছে ছিলো তোর জা হবার। কিন্তু আফসোস হতে পারলাম না।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৬