Love Triangle part 3

Love Triangle part 3
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।তার চোখের ও পলক পরছে না। আমি উনাকে দেখে অবাক হলেও খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বললাম,
‘ স্যার!আসবো?’
ডাক্তার ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী নিজেকে একটু সামলে নিলেন। এরপর হালকা কেশে বললেন,
‘ হ্যা আসুন আসুন।’
আমি অনুমতি পেয়ে ভিতরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসলাম ঠিক উনার সামনে। মুখোমুখি দুজন বসা।মাঝখানে উনার ডেস্ক।আমি চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে বসে আছি। মনে হচ্ছে ডাক্তার ও খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরেছেন আমাকে দেখে।হবার কথাই তো।উনি কিছু বলছেন ও না।কতক্ষন এভাবে চুপচাপ কাটলো কে জানে।কারোর মুখে কোন কথা নেই। কিছুক্ষণ পর উনি ধীরে ধীরে বললেন,

‘ বাসায় আর কোন সমস্যা হয়েছিল?’
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। এরপর উনার দিকে তাকালাম।উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। শান্ত দৃষ্টিতে তার চেয়েও শান্ত গলায় বললাম,
‘ গত পরশু দিনের জের ধরে কালকেও বাবার রাগ হজম করেছি। এখন পুরো শরীরে অসহ্য রকমের ব্যথা।ফেনাক প্লাস ছিলো বাসায়।দুটো খেয়েছি।কাজে দিচ্ছে না। আমাকে কিছু ওষুধ দিন।’
আমার কথা শুনে ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। কি বলবেন তা সাজিয়ে নিচ্ছেন হয়ত। মিনিট দুয়েক পর আস্তে আস্তে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ আমার জন্য আপনাকে অনেক মা’র হজম করতে হলো!তাই না?’
আমি পূর্বের মত উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।মুখে কিছু বললাম না।উনি ‘ জ্বর আছে আপনার? একটু থার্মোমিটার টা মুখে দিন তো।দেখে নিই!’ এইটুকু বলে থার্মোমিটার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার বের করে বেসিন থেকে ধুয়ে এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন,
‘ মুখে দিয়ে এক মিনিট মত রাখুন।’

আমি হাত বাড়িয়ে থার্মোমিটার নিলাম।মুখে নিয়ে চুপ করে বসে থাকলাম এক মিনিট মত।দেয়াল ঘড়ি ধরে পাক্কা এক মিনিট পর মুখ থেকে বের করে দিলাম।উনি চেয়ারে বসে আমাকেই দেখছিলেন। থার্মোমিটার দেওয়ার পর চেক করলেন।পারদ স্কেল ১০৩° ফারেনহাইট।দেখে মুখে বললেন,
‘ আপনার জ্বর তো অনেক।নাপা খেয়েছিলেন কি?’
আমি মাথা নাড়ালাম।যার অর্থ না।খাইনি।উনি প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে খসখস শব্দে ওষুধ লিখতে শুরু করলেন।লেখা শেষ করে আমার দিকে তাকালেন।কি দেখলেন কে জানে! আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি দেখে বললেন,
‘ এখানে চারটা ওষুধের নাম লিখে দিয়েছি।একটা খাওয়ার আগে বাকি তিনটা খাওয়ার পর।তিন বেলাই খাবেন।’
‘ ঠিক আছে।’

‘ আর!একটু রেস্ট করবেন। বাসায় গিয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে কপাল আর গা মুছে ওষুধ গুলো খেয়ে নিয়েন।যদি সম্ভব হয় ডাবের পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন একটু। জ্বরের জন্য ডিহাইড্রেশন না হয় যেন আবার।’
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। প্রেসক্রিপশন বুক থেকে আমার জন্য লেখা প্রেসক্রিপশন টা খুলে ফাইলে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিলেন। আমি ফাইল টা নিয়ে ‘ আচ্ছা। আমি আসছি তাহলে। থ্যাংকস!’ এই বলে উঠে যাচ্ছি উনি বলে উঠলেন,

‘ একটু বসুন না!’
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতে উনি অনুনয় করে বললেন,
‘ একটু বসুন।প্লিজ!’
আমি ফের বসে পড়লাম। ওষুধ নেওয়া শেষ।কি বলবে আর?মুখে বললাম,’ কিছু বলবেন কি?’
ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী মাথা নাড়লেন। এরপর ধীরে ধীরে বললেন,
‘ আমার জন্য আপনি অযথাই কতগুলো মা’র খেয়েছেন। আমি কোন মুখে ক্ষমা চাইব বুঝতে পারছি না। সেদিন চাইলেও কিছু বলা বা করার সুযোগ হয়নি। আপনার বাবা যেভাবে রেগে ছিলেন। উপরন্তু আমার ও অনেক সম্মানহানি হয়েছে সবার সামনে। এভাবে একটা ভুল বুঝাবুঝি হবে জানলে আমি……!’
আমি কথার এ পর্যায়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ বাদ দিন।যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। আমি সবার সামনে চরিত্রহীনা হয়ে গেছিই তো।এখন আর এসব বলে কোন লাভ আছে কি?’

‘ না নেই। জানি আমি। তারপরও বলছি।কারণ আমি খুব বেশি গিল্টি ফিল করছি এজন্য। আপনাদের বাসা থেকে ফেরার পর আমি এক মুহূর্ত ও শান্তি পাইনি। ডিউটিতে ও আসিনি কাল। আজকে হসপিটাল আর রোগীদের চাপের মুখে, অসংখ্যবার ফোনকলের জন্য শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করতে এসেছিলাম।অন্যের সেবা করতে পেরে আমি যেই আনন্দ পেতাম আজকে সেটা পাচ্ছিলাম না। আমি খুব বেশি অপরাধবোধে ভুগছি। ভেবেছিলাম আজকে ডিউটি শেষে আপনার বাসায় যাব। আপনার বাবার কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আসব। আপনার কাছেও। আমি আজকে মনের বিরুদ্ধেই ডিউটিতে এসেছি। এতক্ষণ খুব কষ্ট করে মনোযোগ দিতে হয়েছে রোগীদের কাছে।যদিও জোর করে এসে খুব ভালোই করেছি আজ। নাহলে আপনার দেখা পেতাম না আমি।’

আমি চুপ করে শুধু ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরীর কথা শুনে গেলাম।কি বলব বুঝে উঠতে পারছিনা। কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে উনি আবার বললেন,
‘ আপনি কি আমার বিরুদ্ধে মনে রাগ জমিয়ে রেখেছেন?’
আমি মাথা তুলে তাকালাম উনার দিকে।রাগ! আমার উনাকে নিয়ে ভাবার সময়ই হয়নি।যেই পরিমান যন্ত্রণা পেয়েছি সবটাই নিজের ভাগ্যের জোরে। উনাকে দোষ দেওয়ার অবকাশ ও পাইনি।মুখে বললাম,
‘ নাহ।’

‘ আমাকে নিয়ে রাগ জমাবেন না প্লিজ। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি এত বড় ঝামেলা হবে আমার জন্য।’
আমি হাসলাম। বললাম,
‘ রাগ নেই আপনার প্রতি। অকারণেই গিল্টি ফিল করবেন না।সবটাই আমার ভাগ্য। নাহলে নিজের জন্মদাতা পিতা কি এভাবে অবিশ্বাস করতো নিজ মেয়েকে? এতদিনের পরিচয় যাদের সাথে।তারাই ছিঃ ছিঃ করলো মিনিট মত একটা দৃশ্য দেখে।বাদ দিন এসব।গিল্টি ফ্রি হয়ে কাজ করুন। আমি ঠিক আছি। আচ্ছা, ওষুধ গুলো কাজ করবে তো?’

ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। এরপর বললেন ‘হ্যাঁ,কাজ করবে।’
আমি ‘এবার আসি তাহলে!’ বলে উঠে এলাম ফাইল টা নিয়ে। রুম থেকে বের হয়ে দেখি রোগীদের চোখমুখে বিরক্তির ছাপ।হয়ত বুঝে গেছে ওরা।আমি পরে এসে ভিতরে ঢুকেছি।এসবে পাত্তা না দিয়ে আমি বের হয়ে এলাম হসপিটাল থেকে। হসপিটালের সামনে রাস্তার অপজিটে ফার্মেসি। অনেকগুলো ই।এই এরিয়াটা হসপিটাল এরিয়া। অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি হসপিটাল, ক্লিনিক, প্রাইভেট চেম্বার।ওয়ান ওয়ে রোড।পার হয়ে অপজিটে একটা ফার্মেসির দোকানে গেলাম। প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বললাম ওষুধ দিতে। পাঁচ দিনের ডোজ দিয়েছে। ওষুধ নিতেই এক হাজার টাকা চলে গেল।ব্যাগে গুনে দেখি টাকা আছে আর ১৪ হাজার। ফোন নিব কি-না ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিলাম নিব না। বাসায় ফিরতে হবে। প্রেসক্রিপশন ফেরত নিতে ফার্মেসির লোকটা যিনি ওষুধ দিয়েছেন আমাকে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিভাবে যেন। আমি বললাম,

‘ কিছু বলবেন?’
লোকটা একটু ইতস্তত করে বললো,
‘ কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতাম আপা।’
‘ হ্যা করুন।’
‘ ফাইয়াজ স্যার কি আপনার কিছু হয়?’
আমি বিরক্ত হলাম কিছুটা।এ কেমন প্রশ্ন?উনি ডাক্তার আমি রোগী।দেখিয়েছি, ওষুধ দিয়েছেন। স্বাভাবিক ব্যাপার।এতে উনি আমার কিছু হওয়ার কি আছে? আমি বিপরীতে কিছু জিজ্ঞেস করব তার আগেই উনি প্রেসক্রিপশনের উল্টোদিকে একটা লেখা দেখিয়ে বললেন বললেন,

Love Triangle part 2

‘ এই যে এটার জন্য। আমি লেখার দাগ দেখে উল্টাতে গিয়ে দেখলাম তো।এটার জন্য কিছু মনে করবেন না।’
আমি কিছুটা অবাক হয়েই প্রেসক্রিপশন হাতে নিলাম।গোটা গোটা বাংলা অক্ষরে লেখা। ভীষণ অপ্রস্তুত লাগছে নিজেকে।লোকটাকে কিছু না বলে ওষুধ আর ফাইল নিয়ে যত দ্রুত পারলাম সিএনজি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

Love Triangle part 4