Love Triangle part 7

Love Triangle part 7
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

আপু আমাকেই খেয়াল করছিল এতক্ষন ধরে। আমাকে এমন করতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? আমি চুপ করে রইলাম কিছুক্ষণ। কি বাচ্চার মত রাগ হচ্ছে মনের মধ্যে। কিছুক্ষণ পর নিজেকে শান্ত করে বললাম,
‘ এই নাম্বার টাই তো উনার নাম্বার। তোমার ফোনে কিভাবে এলো এটা?’
আপু আমার প্রশ্ন শুনে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে ই বললো,
‘ এইটুকুর জন্য তোর মুখ এত শুকিয়ে গেছে।আরে এটা আমার মেডিকেলের সিনিয়র।বলদ মহিলা।’
আপু যখন বললো তার সিনিয়র তখন মনটা শান্ত হলো।হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,
‘ আচ্ছা! আমি তো কি না কি ভাবতে যাচ্ছিলাম!’

‘ ধূর বোকা।এইইইই এক মিনিট আহি! সিনিয়রই কি তোকে পছন্দ করে?উনাকে নিয়েই কি ঝামেলা হয়েছে নাকি?’
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।আপু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আপুর পরিচিত উনি। খোঁজ খবর নিতে সুবিধা হবে আবার ভয় ও লাগছে কেন জানি। লজ্জা লাগছে কেন জানি। আপুর দিকে তাকাতে পারছি না।আপু মিনিট দুয়েক পর বললো,
‘ কল কর তাহলে।এত লজ্জা পাচ্ছেন কেন?দে আমিই কল করে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।’
আপু আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ডায়াল করলো ওই নাম্বার এ। একবার রিং হতেই কেটে দিল।আপু আর কল না দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ ব্যস্ত হয়ত।পরে কল ব্যাক করলে কথা বলিয়ে দিবো।ওক্কে পাখি?’
আমি মাথা দুলিয়ে সায় দিলাম।আপু বলল,এখন চলেন ওইদিকে যাই।পরে অনেক কিছু মিস করে ফেলব। আমি আর দ্বিমত করলাম না।আপুর পিছু পিছু সেদিকে এগিয়ে গেলাম।

পরদিন সকাল সাতটার দিকে ঘুম ভাঙল।আপু জানালা খুলে দিয়েছে।জানালা গলে সূর্যের আলো ঢুকছে রুমের মধ্যে। চোখে লাগতেই ঘুম ভাঙল। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম।ঠান্ডা লাগছে ভীষণ।বেড থেকে অলস পায়ে নেমে আপুর আলমারি খুলে একটা কার্ডিগান বের করে গায়ে দিলাম। এরপর ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলাম।ব্রাশ করে, মুখ ধুয়ে বাইরে বের হয়ে দেখি মুন বসে আছে বেডের উপরে। আমাকে দেখেই এক রাশ অভিমানের গলায় বললো,
‘ আমাকে ভুলে গেছো তুমি।’
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
‘ আমি ভুলে গেছি না তুই ভুলে গেছিস? কালকে আসার পর থেকে তোকে খুঁজে পাইছি আমি?’
‘ হুহ।’

আমি মুখ মুছে হাত বাড়িয়ে ডাকলাম কোলে আসতে।মুন সাথে সাথে পাখির মত উড়ে এলো একরকম।ওকে কোলে নিয়েই নিচে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কিছু খাইছে কি-না।ও যা বললো তাতে বুঝলাম এক রাউন্ড খাওয়া শেষ ওর।সবার আদরের ভাগ্নে।নিচে নেমে কোল থেকে নামিয়ে দিলাম।আজকেও ডেকোরেশন এর লোকজন এসেছে।কালকে মেহেদি অনুষ্ঠান। এজন্য আজকের মধ্যে সব সাজানো শেষ করবে।রিমি আপুকে দেখলাম আমাদের দিকেই আসছে।আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এখানে সিঁড়ি সাজানো দেখছিলাম।আপু এসেই বললো,
‘ পার্লারে যাবি?’

‘ আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কেন।আপু বললো,
‘ কালকে তো মেহেদি অনুষ্ঠান।একটু পেডিকিওর মেনিকিওর করাবো ভাবছি।যাবি নাকি?’
‘ অ্যাহ কি বলো। আরো দুদিন পর না?’
আপু ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে। এরপর বললো,
‘ বিয়ের ডেইট তিনদিন এগিয়ে এসেছে তুই জানিস না?’
‘ আসলেই?’

‘ হ্যাঁ। ফুপু তো তোকে এত আগে শুধু শুধু পাঠায়নি।কাল বিকেলে ফুপু ও আসবে।এখন বল, পার্লারে যাবি?’
আমি মাথা নাড়লাম।যার অর্থ না। বোরিং লাগে পার্লার জিনিসটা। আমি এভাবেই ঠিক আছি।আপু বললো,
‘ আচ্ছা তাহলে আমি মুন কে নিয়ে যাই।একা একা যেতে ভালো লাগবে না। জামাই! চলো তুমি।’
মুন কে নিয়ে চলে গেল আপু। আমি গুটিগুটি পায়ে নানুর কাছে গেলাম। কিচেনে রান্নার কাজে ব্যস্ত নানু।মামী খালা রা ও ভীষণ ব্যস্ত। কতগুলো মানুষের রান্না।ছোট মামী এইদিকে সালাদ বানাচ্ছে। আমি কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে মামী হাসিমুখে বলল,
‘ আম্মাজান।ঘুম ভাঙছে?’
‘ হ্যা।’

‘ আজকের রান্না হতে একটু দেরি হবে। তুমি ওই যে ওখানে বয়ামে টোস্ট বিস্কুট আছে।চা বানিয়েছি। নিয়ে খাও। আমার হাতে অনেক কাজ মা। নাহলে আমিই দিতাম।’
‘ প্যারা নিয়ো না। আমি নিয়ে খাবো ক্ষণ। তুমি কাজ করো।আমি হেল্প করবো?’
মামী আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
‘ বউমা রা থাকতে শাশুড়ি কে কাজ করতে হবে বুঝি? তুমি বাবার সাথে দেখা করে আসো। কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছেন। এখনও জানেন না যে তুমি আসছো। জিজ্ঞেস করছিলেন আহি কখন আসবে।’
আমি আচ্ছা বলে চলে এলাম।এক তলায় নানুর রুম। একেবারে মাঝখানে। সেদিকেই এগোলাম।নানা‌ বাসায় থাকেন না।ব্যবসায়ী মানুষ কি-না। সারাক্ষণ এখান থেকে ওখানে এই শহর থেকে ওই শহরে আনাগোনা আছেই।আমি মাঝেমধ্যে ভাবি, নানার সাথে ঘুরে ঘুরে এসব ব্যবসায়িক কাজকর্ম শিখে নিবো। পড়াশোনার যেই হাল,এই ছাড়া অন্য কিছু আমার হবেও না।

নানার রুমের দরজা খোলা।রুম বেশ খানিকটা বড়।জানালার পাশে চেয়ার রাখা।নানা সেখানে বসে রোদ পোহাচ্ছেন। আমি ঢুকেই বললাম,
‘ আসসালামুয়ালাইকুম রহমান সাহেব।’
নানা খানিকটা বিরক্ত নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়েই খুশি হয়ে গেলেন। চেয়ার থেকে সাথে সাথে উঠে এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে উল্লসিত গলায় বললেন,
‘ গিন্নী যে।কখন আসছিস?তুই আসবি আমি শুনিনি কেন?’
‘ সারপ্রাইজ!’

‘ চল চল বাগানে। আগেরবার তুই যেই গাছগুলো লাগিয়ে গিয়েছিলি, ফুল ফুটেছে সেগুলো তে।দেখবি চল।’
রেস্ট করা বাদ দিয়ে নানা আমাকে বাগানে নিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখলাম সত্যিই।গোলাপ, বেলি, অপরাজিতা ফুলের গাছগুলো তে কি সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটেছে। বাগানের এক সাইডে আমার জন্য জায়গা রাখা।এই জায়গায় আমি নানার সাথে গাছ লাগাই। আজকে গাছ তো লাগালাম না। গাছের পরিচর্যা করলাম অনেকক্ষন ধরে।ঘাস পরিষ্কার করলাম। এরপর নানা সাথে বাগানে বসে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম। আমাদের আড্ডার বস্তু ই হচ্ছে ব্যবসায়িক কাজকর্ম নিয়ে। মাঝেমধ্যে রাজনীতি ও চলে আসে। তখন নানা এক বিস্তর ভাষণ দেন আর আমি শুনি। আমি বেশ মনোযোগী শ্রোতা। এজন্য নানার আরও বেশি পছন্দের আমি।

সারাটা সকাল নানার সাথে ঘুরে আড্ডা দিয়ে কাটলো । নানার সাথে গল্প করতে করতেই জানলাম আপুর বিয়েটা নানার পছন্দে হচ্ছে। দুলাভাই এর বাবার সাথে নানার কেমন জানি পরিচয় আছে। ভালো সম্পর্ক।সেই সম্পর্কের জের ধরেই তাদের বিয়ে। প্রস্তাব টা অবশ্য দুলাভাই এর বাবা ই নাকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন,উনার ছেলেকে নানার নাতজামাই করে সম্পর্ক টা আরও পাকাপাকি করতে চান। নানার যোগ্য নাতনি রিমি রহমান। ক্যাপ্টেনের সাথে পড়াশোনা যোগ্যতা সবদিক দিয়েই মিলে যায়।তাই নানা ও দ্বিমত না করে বিয়ে পাকাপাকি করে ফেলেছেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,আপু কি না করেছিল?নানা জানালেন যে না।আপু ও খুব খুশি শুরু থেকেই। এজন্যই নানা এতটা নিশ্চিন্তে আছেন। গল্পের এক পর্যায়ে বললেন, এরপর তোর সিরিয়াল। রিমির বরের থেকেও সুন্দর রাজপুত্রের মত ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিব।রেডি থাকিস কিন্তু। এরপর দুজনেই হাসি।

আড্ডা শেষে খাওয়ার পর নানার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে এগারোটার দিকে ছাদে গেলাম।নানা একটু বাজারে গেছেন কি যেন দরকার।মুন আর আপু চলে এসেছে কিছুক্ষণ আগেই। আপুর সাথে দেখা করে নানা বাজারে গেছেন। আমি ছাদে এসে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শহর দেখছিলাম। এমন সময় মুন পাশে এসে দাঁড়াল। আমাকে ডাকলো,
‘ আপু জানো?’
আমি না ঘুরেই বললাম, ‘ কি?বল।’
‘ আমি না দুলাভাই এর সাথে দেখা করেছি।’

বলেই মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসতে শুরু করলো। আমি ঘুরে ওর দিকে তাকালাম। বুঝতে না পেরে বললাম,
‘ কোন দুলাভাই রে তোর?’
‘ আপুর যার সাথে বিয়ে হবে দুদিন পর।’
আমি এবার বুঝতে পারলাম রিমি আপু এত সকালে কেন পার্লারে যেতে চাচ্ছিল।হবু বরের সাথে দেখা করতে গেছিল। চুপিচুপি। ইশশশ,আমি গেলেই পারতাম। দুলাভাই এর সাথে দেখা করে আগেই পরিচিত হলে এক্সট্রা সুবিধা থাকত মজা নিতে।না যাওয়ার জন্য এখন আফসোস হচ্ছে। আমি মুন কে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ দুলাভাই টা দেখতে কেমন রে? সুন্দর?’
‘ হ্যা। অনেক সুন্দর।জানো আমাকে চকলেট কিনে দিছে অনেকগুলো।রুমে রেখে আসছি।’
‘ আমার কোই?’

‘ তুমি দাঁড়াও। আমি আনতেছি আচ্ছা?’
আমি আচ্ছা বলে ওরে চকলেট আনতে পাঠালাম। আমার আগেই মুন দেখে ফেললো দুলাভাই কে।ধ্যাৎ! কিন্তু একটা জিনিস মাথায় ঢুকছে না।আপু চাইলে তো পরে ও দেখা করতে পারত। বিকেলে।তা না করে এভাবে সকালে পার্লারের আল দিয়ে দেখা করার কি দরকার ছিল?কি জানি বাপু ক্যাপ্টেন দের কাজ কারবার। বেচারা দুলাভাই। বিয়ের পর আচ্ছা মত আমার কাছে পঁচানি খাবেন বুঝতে পারছি।

Love Triangle part 6

চুরি করে বউয়ের সাথে দেখা করা? আমি হেসে উঠলাম নিজের মনেই।রিমি আপু কি ভাগ্যবতী। সবদিক থেকেই সেরা ভাগ্য তার।ভালো মেধা, সুন্দর চেহারা,ভালো ফ্যামিলি আর শেষে ভালো একটা বর।সেই তুলনায় আমার কিছুই নেই।এসব ই ভাবতে লাগলাম দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। জানলাম ও না ছাদের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আরও দুটি চোখ অপলক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে।

Love Triangle part 8