Love Triangle part 8
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা
‘ আহি!কি করছো এখানে?’
পরিচিত গলার আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকালাম।দেখি আরিফিন ভাইয়া।পাতলা একটা ব্লু টি শার্ট আর ব্লাক ট্রাউজার পরা। অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে ঘুরে বললাম,
‘ ওই যে নীল আকাশ!সেটাই দেখছিলাম।’
আরিফিন ভাইয়া ও আমার পাশে এসে দাঁড়াল। রেলিংয়ের ওপর হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আকাশ দেখছো?’
‘ হু। সুন্দর না?’
‘ সুন্দর তো বটেই।একদম তোমার মত।’
আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ‘ কি বললে?’
ভাইয়া কাঁচুমাচু মুখে বললো,
‘ আরে, তুমি সুন্দর আকাশ ও সুন্দর।তাই বললাম যে তোমার মতই সুন্দর।’
আমি সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ভাইয়া চুপচাপ আমার পাশে দাড়িয়ে আছে কতক্ষন জানিনা। আমি সামনে তাকিয়ে ধ্যান ধরেছি। হঠাৎ করে একটা প্রশ্নে ধ্যান ভাঙল।
‘ আহি, তুমি কি কারো সাথে রিলেশনশিপে আছো?’
আরিফিন ভাইয়া ই প্রশ্ন করেছে। এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি।সময় নিলাম কি বলব তা ভাবতে।আমাদের বাসার পরিবেশ আর কেউ না জানলেও ভাইয়া খুব ভালো করেই জানে। মায়ের সবচেয়ে বেশি আদরের ভাতিজা বলে কথা।সব কিছুই বলে মা তাকে। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বললাম,
‘এইরকম একটা অসুস্থ পরিবেশে আমি বেঁচে আছি এইটাই তো অনেক না?আবার রিলেশনশিপে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন দেখব কেন বলো?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভাইয়া চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ পর বললো,
‘ ভয় হয় তো।’
‘ কিসের ভয়?’
‘ না তেমন কিছু না।আহি! তুমি অন্য কারো সাথে রিলেশনশিপে যেয়ো না।এই নিয়ে কেউ কিছু বললে শুধু আমাকে বলবা। কেমন?’
এইটুকু বলে ভাইয়া যত দ্রুত সম্ভব পা চালিয়ে নিচে নেমে গেল। আমি কথাগুলো বুঝে উঠার আগেই সে উধাও। আমি আর রিলেশনশিপে?মজার কথা বলে গেল তো। আমি এভাবেও তো রিলেশনশিপে যাব না। এভাবে বলার কি আছে?
মুন এতক্ষণ হয়ে গেল এখনও আসছে না দেখে আমিও নিচে নেমে এলাম।কার্ডিগান খুলে এরপর নিচে গিয়ে দেখতে হবে বা’ন্দ’র টা গেছে কই।সেই উদ্দেশ্যে আপুর রুমের দিকে যাচ্ছি।আরিফিন ভাইয়ার রুম ও দোতলায়।তার রুমের সামনে দিয়ে রিমি আপুর রুমে যেতে হয়।আরিফিন ভাইয়ার রুমের দরজা খোলা। চোখ গেল সেদিকে।চোখ পড়তেই পা থেমে গেল। রুমের ভিতর ঢুকলাম।ভাইয়া রুমে নেই। ডেস্কের উপর আমার প্রেসক্রিপশন টা রাখা।বুকটা ধক করে উঠল কেন জানি। উল্টে পাল্টে দেখি যা ভেবেছি তাই। ভাইয়া প্রেসক্রিপশন দেখেছে, নাম্বার নোট করে এরপর কলম দিয়ে কেটে দিয়েছে।
এখন বুঝতে পারছি কেন আমাকে তখন ওইভাবে বললো।ভেবে নিয়েছে আমি ডাক্তারের সাথে রিলেশনশিপে! উফ্! মাথায় হাত দিলাম। মা কে যদি এসব বলে দেয়। আর ভুল করেও বাবার কানে গেলে আমাকে মেরেই ফেলবে। প্রচন্ড ভয় লাগতে শুরু করলো।হাত পা রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছে। কোনোরকমে ভাইয়ার রুম থেকে বের হলাম।ভাইয়া এইদিকে ই আসছিলো। আমাকে রুম থেকে বের হতে দেখে মেবি বুঝল কিছু একটা। আমি শরীরে এতটুকু ও শক্তি পাচ্ছি না।দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম।ভাইয়া দ্রুত পায়ে আমার কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুমি ঠিক আছো?কি হয়েছে?’
আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।কথাও আসছে না মুখে।কপাল হাত পা ঘামছে।ভয়ে কান্না পাচ্ছে খুব। কোনোরকমে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ তুমি কি মা’কে, বাবাকে বলে দিয়েছো?ভাইয়া বিশ্বাস করো। আমি কোনো রিলেশনশিপে নেই।উনার জন্য বাসায় সমস্যা হয়েছিল।সেটাই মিটমাট করতে কল করতে বলেছিল। এতটুকুই ব্যস।আর কিচ্ছু না। বিশ্বাস করো।’
এটুকু বলেই কান্না থামাতে পারলাম না আর।ভাইয়ার হাত ধরে কান্না শুরু করলাম।ভয়, কষ্ট দুটো ই হচ্ছে। এতক্ষণে যদি বলে দেয় আমার অবস্থা খারাপ করে দিবে বাবা। এবার হয়ত মে’রে ই ফেলবে।ভাইয়া আমাকে সামলাতে বললো,
‘ আহি। শান্ত হও। আমি বলিনি তো কিছু। ফুপুর সাথে আমার কথাও হয়নি আজ। কান্না করে না। আমি বিশ্বাস করেছি তো।’
আমার কান্না থামছে না।হাত ও ছাড়ি নি। এমন সময় রিমি আপুর গলার আওয়াজ পেলাম।’ কি হয়েছে আহির’ বলে দ্রুত পায়ে আমাদের দিকে এলো। ভাইয়া আপুকে বললো,
‘ ওকে একটু সামলা তো।আমি আসছি।’
ভাইয়া আমার থেকে পালিয়ে গেল একরকম।আপু আমাকে বুকে টেনে নিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
‘ কি হয়েছে পাখি? কান্না করছিস কেন?ভাইয়া কিছু বলেছে?আয় রুমে আয় তো আমার সাথে।’
রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিল আপু। এরপর বেডে বসিয়ে আমার চোখ মুছে দিল। আমার চোখ দিয়ে ননস্টপ পানি গড়িয়ে পড়ছে। কান্না থামাতে ই পারছি না।
আপুর কোলে শুয়ে মাথা রেখে শুয়ে আছি।আপু কিছু জিজ্ঞেস করেনি আর।দুজনই চুপ। অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে এখন চুপচাপ আমি।আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি নিজেই কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে বললাম,
‘ যেখানে ডাক্তার তার ফোন নাম্বার লিখে দিয়েছিল না?ওইটা ভাইয়া দেখে ফেলেছে। আমার ভয় হচ্ছে, যদি বাবাকে বলে দেয়। আমাকে বাবা মেরে ফেলবে আপু।’
আপু কিছু বললো না।আগের মতই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমি রেসপন্স না পেয়ে চুপ করে গেলাম।অনেক্ষণ পর আপু বললো,
‘ একটু পরেই ক্যাপ্টেন আসবে আমাকে আর তোকে নিতে। রেডি হ যা।’
আমি কোল থেকে মাথা তুলে বসলাম। আপুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ দুলাভাই? এখন কেন আসবে?আর আমাকে কেন?’
‘ এখনও বিয়েই তো হলো না।তার আগেই দুলাভাই বলে আমাকে লজ্জা পাইয়ে দিস না তো।আর,ওই কিছু কেনাকাটা করার আছে নাকি তার।বললো আমার পছন্দে কিনবে। এখনও বিয়ে হয়নি। সেজন্য আমি একা তো তার সাথে যেতে পারিনা তাই না?তাই ভাবলাম তোকেও নিয়ে যাব।বলেওছি উনাকে।উনি বললেন ঠিক আছে। দুজনকেই নিয়ে যাবে।এখন যা গোসল করে রেডি হ দ্রুত।’
আপু কথা শেষ করেই তাড়া দিল আমাকে। আমি বসেই রইলাম।আপু আমার দিকে একবার কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেই উঠে আলমারি খুলে ড্রেস বের করতে লাগল। আমি নিজের শোক ভুলে গেছি।আপুর কথাগুলো ভাবনায় ফেলে দিয়েছে আমাকে।সকালেই না চুপিচুপি দেখা করলো।এখন আবার আনুষ্ঠানিক ভাবে দেখা করবে? আবার দুলাভাই ও বলব না।কেননননন?মাথা চুলকাতে চুলকাতে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ তাহলে কি বলে ডাকব?’
আপু আলমারিতে শাড়ি দেখতে দেখতেই জিজ্ঞেস করলো,
‘ কাকে?’
‘ ওই যে, তোমার ক্যাপ্টেন কে!’
‘ ক্যাপ্টেন বলেই ডাকবি। বিয়ের পর কি বলে ডাকবি তা আমি জানিনা। কিন্তু বিয়ের আগ অব্দি ক্যাপ্টেন।অন্য কিছু ডাকার দরকার নাই।’
আপু কালো রঙের হাফ সিল্ক শাড়ি বের করে আনলো একটা। এরপর আমার গায়ে দিয়ে দেখে বললো,
‘ মানিয়েছে।’
আমি কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আমি কি এখন শাড়ি পরব?’
‘ তো আর কি করবি?জামাই কে পটাতে হলে শাড়িই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে ঝগড়া ঘন ঘন শাড়ি পরবি। তাহলে দেখবি,আর রাগ করে থাকতে পারছে না। দোষ তুই করলেও ও বেচারা ক্ষমা চেয়ে নিবে।’
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। মুখে বললাম,
‘ বস।একটু থামুন।আজকে আপনার জামাই আসবে আর জামাইয়ের সাথে আপনি দেখা করবেন। আমি না।পটানো দরকার আপনার। তাহলে মহিলা
এই টিপস্ টা তোমার কাজে লাগবে।আমাকে ক্যান দিচ্ছ?বিয়ে তুমি করছো বস। আমি বরঞ্চ এই টিপস্ টা তোমাকে কপি পেস্ট করে দিই হ্যাঁ?’
Love Triangle part 7
‘ বলদ মহিলা।আগেই ফ্রিতে একটা টিপস্ দিলাম।নোট করে রাখ। ম্যাজিক দেখবি শুধু বিয়ের পর।এখন আপনি দয়া করে গোসল করে আসুন আপা, অপরিষ্কার হয়ে আমি আপনাকে সাথে নিয়ে যাব না।’
‘ আপু!’
আমি ব্লাউজ আর পেটিকোট আপুর থেকে নিয়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। যতক্ষণ থাকব ততক্ষণ জ্বালিয়ে মা’র’বে।তার যেগুলো এপ্লাই করা দরকার সেগুলো আমাকে শিখাবে।বিয়ে হয়ে যাচ্ছে দেখে লজ্জা শরম সব উবে গেছে এই মহিলার!