আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩১
Raiha Zubair Ripti
রাত আজ শপিং মলে এসেছে কনার জন্য জামাকাপড় কিনতে। তার হাত খরচের বিশ হাজার টাকার মধ্যে থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছে। মলে গিয়ে বাজেটের মধ্যে কয়েকটি থ্রি-পিস বেছে নিল কনার জন্য। মল থেকে বের হতে গিয়ে চোখ পড়ল পাশের চটপটির স্টলের দিকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কি যেন মনে করে চটপটি নিয়ে নিলো। তারপর বাসার পথে রওনা দিল।
বসার ঘরে ঢুকতেই রাত দেখল, কনা সোফায় চুপচাপ বসে আছে। হাতে শপিংয়ের প্যাকেটগুলো ধরে কনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“এই নাও।”
কনা প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে একটু অবাক হলো। বুঝল, মহাশয় তার জন্য জামা নিয়ে এসেছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে কেবল মাথা নিচু করে প্যাকেট নিয়ে চলে যেতে নিলে রাত আবার ডেকে বলল,
“এই, এটাও নিয়ে যাও।”
কনা ফিরে তাকাল। নীল পলিথিনের একটা ছোট ব্যাগ ধরে আছে রাত। কিছুটা কৌতূহল নিয়ে বলল,
“এটাতে আবার কি?”
রাত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
“চটপটি।”
কনার চোখে অবাক দৃষ্টি ফুটে উঠল।
“কার জন্য?”
রাত বিরক্তি মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“জানি না। নেওয়ার হলে নাও, নাহলে এখানেই রেখে গেলাম।”
কনার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। কিছু না বলে চটপটি নিয়ে গেল। রান্নাঘরে গিয়ে দুটি বাটিতে চটপটি ঢেলে নিলো।
রাত রুমে চলে গিয়েছিল। কনা চটপটি নিয়ে রুমে ঢুকল। রাত তখন ওয়াশরুমে ছিল। কনা বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে লাগল।
রাত ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কনা এক বাটি চটপটি এগিয়ে দিয়ে বলল,
“নিন।”
রাত একবার বাটির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমি এসব খাই না।”
কনা চমকে উঠে বলল,
“রিয়েলি?”
রাত ভ্রু কুঁচকে বলল,
“হুম।”
কনা হেসে বলল,
“আমি তো জানতাম আপনি এসব খান।”
রাত কিছুটা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” জানলে কিভাবে?”
কনা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
” তারমানে আপনার পছন্দ এসব তাই তো?
“ আমি কখন সেটা বললাম?
“ এই যে বললেন জানলাম কিভাবে। এখন বকবক বাদ দিয়ে খান। একা একা খেতে আনইজি লাগে।
রাত খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর কনার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চটপটির বাটি হাতে নিল। সোফায় বসে খেতে লাগলো। কনা খাওয়ার সময় আড়চোখে দেখলো রাত কে। রাত খেতে খেতেই বলল-
“ আড়চোখে দেখার কি আছে এতো?
“ তাহলো কি সোজা চোখে দেখবো?
“ সারাদিন ই তো দেখো।
-“ আপনি তো দেখেন না।
-“ কি দেখি না।
-“ আমাকে।
-“ তোমাকে দেখার কি আছে?
-“ অনেক কিছুই তো আছে।
-“ যেমন?
“ আমার চোখ,আমার ঠোঁট, আমার ফেস,আমার হাত,পা, গলা..
-“ ইস্টুপিট শাট-আপ। তোমার এসব দেখে আমি কি করবো?
-“ গুগল করেন। দেখেন কি বলে। কেনো বউয়ের এসব দেখতে হয়।
-“ আচ্ছা এখন বাটি টা নিয়ে যাও। আমি কাজে বসবো।
-“ কিসের কাজে বসবেন?
-“ দেখি কিসের কাজে বসা যায়। খাওয়া পড়ার জন্য তো টাকা লাগবে তাই না?
কনা বাটি নিয়ে চলে গেলো।
আষাঢ় হসপিটালে এসে নতুন ডক্টর হিসাবে শাম্মি কে দেখে একটু চমকালোই। সবার সাথে একএক করে পরিচিত হচ্ছে। আষাঢ়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ হাই ডক্টর আষাঢ় আহমেদ। হাউ আর ইউ?
আষাঢ় হাত না বাড়িয়েই বলল-
-“ অ্যা’ম ফাইন।
শাম্মি হাত নামিয়ে নিলো। বাকি ডক্টর দের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেঁসে বলল-
-“ আমাকে চিনতে অসুবিধা হয় নি তো মিস্টার আষাঢ় আহমেদ?
আরাফাত এগিয়ে আসলো৷
-“ তোমাকে কি আর ভুলা যায় বলো শাম্মি? কলেজ লাইফে যা ছ্যাচড়া ছিলে তুমি। তোমাকে ভুলা তো ইম্পসিবল।
শাম্মি বোধহয় একটু অপমানিত বোধ করলো।
-“ তোমার অভ্যাস টা ঠিক সেই আগের মতই আছে আরাফাত। আগ বাড়িয়ে এসে আষাঢ়ের হয়ে কথা বলা।
-“ ফ্রেন্ড আমার তার কথা আমি না বলে কি বাহির থেকে আরেকজন এসে বলবে? তাছাড়া দেশে আর কোনো হসপিটাল পেলে না? এই হসপিটালে এসেই উঠতে হলো? জেনেশুনে আসলে নাকি অজান্তেই আসলে কোনটা? তুমি তো আবার সব প্ল্যান মাফিক করো৷ ইচ্ছাকৃত ভাবে।
-“ তুমি যেটা ভাববে সেটাই।
-“ হুমম বুঝলাম। কিন্তু আষাঢ় কিন্তু বিবাহিত বুঝলে আগেই বলে দিলাম। আবার পুরোনো ছ্যাচড়ামি শুরু করে গায়ে পড়ো না কেমন? এখন নিজের কেবিনে গিয়ে কাজে মনোযোগ দাও। কাজে লাগবে সাথে স্যালারিও পাবে। চল আষাঢ়। বিয়ের প্ল্যান করবো আমরা।
আষাঢ় ভ্রু কুঁচকালো। কিসের বিয়ের প্ল্যান? আরাফাত আষাঢ় কে নিয়ে কেবিনে আসলো। আষাঢ় চেয়ারে বসে বলল-
-“ কিসের বিয়ে?
আরাফাত কলম দিয়ে আঁকাআকি করতে করতে বলল-
-“ ধূর কিসের বিয়ে। এমনি ওখান থেকে আসার জন্য বললাম।
-“ তুই এখনও শাম্মি কে অপছন্দ করিস!
-“ তো করবো না? বেয়াদব গায়ে পড়া মশা ওপ্স সরি মাছি একটা। কিভাবে তোর পেছন পেছন ঘুরতো। আবার তোকে ফাসানোর জন্য কি প্ল্যান টাই না করেছিল! সেদিন তোর জায়গায় আমি থাকলে দুটোর জায়গায় ডাবল চ’ড় মে’রে চুলের মুঠি ধরে কলেজের করিডর থেকে নিচে ফেলে দিতাম।
-“ আচ্ছা বাদ দে। ওর সাথে তো আমাদের কথা বলার দরকার নেই। ও ওর মতো থাকবে আমরা আমাদের মতো।
-“ সেটা ভেবে থাকলেই হয়। এবার কোনো গন্ডগোল পাকালে ট্রাস্ট মি ওর ফর্সা চেহারায় এমন চ’ড় মারবো যে বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো হয়ে যাবে।
-“ সাথে আমিও দিব কেমন?
-“ হু। আমি আগে দিব। তারপর তুই।
কথাটা শুনতেই আষাঢ় হেঁসে ফেললো। বাচ্চাদের মতো আচারণ করতেছে তারা।
রাতে আষাঢ় বাসায় ফিরলো। খাবার টেবিলে সবাই খাবার খাওয়ার সময় হুট করে রাতের বাহিরে যাওয়ার কথা উঠলো। আষাঢ় জিজ্ঞেস করলো-
-“ যাচ্ছিস কবে তাহলে?
রাত খেতে খেতে জবাব দিলো-
-“ যাচ্ছি না আর বাহিরে। দেশেই থাকবো। জব করবো।
আষাঢ় চমকালো। সাথে কনাও।
-“ দেশেই জব করবি মানে? তোর তো স্বপ্ন ছিলো বাহিরে যাওয়ার।
-“ সব স্বপ্ন পূরণ হয় না ভাইয়া।
-“ এটা তো তোর পূরণ হতে যাওয়া স্বপ্ন ই তাহলে?
-“ আমি বাহিরে চলে গেলে কনা কে দেখবে কে? আর তাছাড়া কনার রেসপন্সিবিলিটি এখন আমার। এখন শুধু নিজের স্বপ্নের কথা ভাবলে তো আর হবে না।
কনা চুপচাপ খেতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো। তার জন্য ই কি তাহলে রাত নিজের স্বপ্ন কে কুরবানি করতেছে? নাহ্ কথা বলতে হবে রাতের সাথে।
-“ দেশে কি করবি তাহলে?
-“ একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে জবের এপ্লাই করেছি। দেখি কোন ফিডব্যাক তারা দেয়।
-“ আচ্ছা যেটা ভালো বুঝিস।
আষাঢ়, সন্ধ্যা খেয়ে রুমে চলে আসলো। সন্ধ্যার শরীর টা আজ ভালো নেই। কেমন জ্বরজ্বর ভাব। সন্ধ্যা কে রুমে এসে শুয়ে পড়তে দেখে আষাঢ় বলল-
-“ শরীর ঠিক আছে?
সন্ধ্যা কম্বল মুড়ি দিয়ে বলল-
-“ কাল অব্দি ছিলো ভালো। আজ একটু অসুস্থ।
-“ কি হয়েছে?
-“ জ্বরজ্বর ভাব মনে হচ্ছে।
আষাঢ় এগিয়ে আসলো। কপালে হাত দিয়ে দেখলো শরীর টা গরম। রাগী গলায় বলল-
-“ বলেছিলাম অবেলা করে গোসল করলে শরীর অসুস্থ হবে। বলতে না বলতেই অসুস্থ হওয়া সারা দেখলে?
-“ হু দেখলাম তো।
-“ ঔষধ খাও নি নিশ্চয়ই?
-“ না।
আষাঢ় ড্রয়ার থেকে ঔষধ বের করে সন্ধ্যা কে খাইয়ে দিলো।
-“ মাথা ব্যথা করেতেছে?
-“ আপাতত করতেছে না। রাতে করতে পারে।
-“ ব্যথার ঔষধ দেই তাহলে।
-“ যখন উঠবে তখন খেয়ে নিব নি। আপনি লাইট নিভিয়ে পাশে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরুন তো। শীত করতেছে।
আষাঢ় লাইট নিভিয়ে কম্বলের তলে এসে সন্ধ্যা কে জড়িয়ে ধরলো। সন্ধ্যা মৃদু আহ শব্দ করে বলল-
-“ ঠান্ডা শরীর আপনার। আমার ঠান্ডা লাগতেছে সরুন। আগে হাত পা গরম করে তারপর ধরবেন।
আষাঢ় সরলো না বরং ঠান্ডা হাত সন্ধ্যার কামিজ ভেদ করে পেটে স্পর্শ করলো। সন্ধ্যা খামচে ধরলো সেই হাত। পেট থেকে সরাতে সরাতে বলল-
-“ আহ হাত দিচ্ছেন কেনো? সরান হাত।
আষাঢ় কানে ফিসফিস করে বলল-
-“ উঁহু। গরম হচ্ছি তো।
কথাটা বলেই পা দুটো সন্ধ্যার পায়ের সাথে মিলিয়ে দিলো। সন্ধ্যার ইচ্ছে করলো আষাঢ়ের মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আষাঢ়ের গলায় কা’মড় বসিয়ে দিলো। আষাঢ় মৃদু চিৎকার করে উঠলো। সন্ধ্যা ছেড়ে দিলে আষাঢ় কামড় দেওয়া জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল-
-“ এভাবে কেউ কামড় দেয়..চুমু না দিয়ে ?
-“ আমি দেই।
কনা থালাবাসন ধুয়ে রুমের দিকে যাচ্ছিলো। আষাঢ় দের রুম পাড় হতেই তাদের কথোপকথন গুলো কানে আসে। কনা দাঁড়িয়ে যায়। তারপর কিছু একটা মনে পড়তেই তড়িঘড়ি করে দরজার সামনে থেকে সরে চলে যায়। রুমে এসে রাত কে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। রাত একবার তাকিয়ে ফের ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কিছু বলবে?
-“ হুম।
-“ বলো।
-“ বলছি আপনি শুধু শুধু কেনো আমার জন্য আপনার এতো দিনের স্বপ্ন কে জলাঞ্জলি দিবেন? আপনি বাহিরে চলে যান। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।
-“ আমি ব্যতিত আরো কেউ আছে নাকি তোমাকে নিয়ে ভাবার জন্য? বলে দাও কেউ থাকলে। তাহলে শুধুশুধু তোমাকে নিয়ে মাথা ঘামাবো না।
কনা ভরকে গেলো।
-“ আমি সেটা মিন করেছি নাকি। আমি আপনার ভালোর জন্য ই তো বললাম সাথে আমারি।
-“ তোমারও মানে?
-“ যাতে ইন ফিউচার আমায় কথা শুনাতে না পারেন যে আমার জন্য আপনার কোনো স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে।
-“ এতো ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে তোমার।
-“ কেনো আপনাকে নিয়ে ভাবার জন্য আরো কেউ আছে নাকি?
রাত আড়চোখে তাকালো।
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩০
-“ আমার কথা আমার উপরই এপ্লাই করছো?
-“ না তো। জিজ্ঞেস করলাম। কেউ তো নেই মনে হয়।
-“ জানা স্বত্বেও জিজ্ঞেস করলে কেনো?
-” কেউ নেই তাহলে তো আপনাকে নিয়ে আমিই ভাববো তাই না? আপনি চলে যান।
-“ আমি বাহিরে চলে গেলে তাতে তোমার কি লাভ?
-“ আমার আবার কি লাভ। লস তো আপনার।
-“ আমি তো আমার লস নিয়ে ভাবছি না তাহলে তুমি কেনো ভাবছো? লাভ লস যাই হোক না কেনো আমি দেশেই থাকছি। এখন গিয়ে ঘুমাও যাও। বকবক করে কাজে ব্যাঘাত ঘটিও না।