পাতা বাহার পর্ব ৫৫
বেলা শেখ
গোধূলি পেরিয়ে ধরনী রাতের কবলে! অন্ধকার ধরনী কৃত্রিম আলোয় আলোকিত। বিকেল থেকেই ধোঁয়ার ন্যায় কুন্ডুলি পাকিয়ে কুয়াশার আবির্ভাব শুরু হয়েছে। বেলা যতো গড়িয়েছে তাঁর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ধরনী যেন কুয়াশার চাদরে মুড়ে নিয়েছে নিজেকে। পাতার ছোট্ট সংসারে হাসির মেলা বসেছে যেন। ড্রয়িংরুমে সবাই লুডু খেলায় মেতে উঠেছে। অনুপস্থিত শুধু অরুণ সরকার। সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়েছে সন্ধ্যার পরপরই! বাড়িতে লতা, পাতা, লাবনী আক্তার রুম্পা ও ভোর। সবাই ড্রয়িংরুমে লুডু খেলছে। রুম্পা তাঁর নানীর কোলে। একটু আগে অবশ্য পাতার কাছে ছিলো। ভোরের ভালো লাগে নি। সে সকলের অগোচরে কৌশলে রুম্পাকে কাঁদিয়ে পাতার কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে, নিজে তাঁর জায়গা দখল করেছে। এখন সে পাতার পাশে তাঁরই উষ্ণ শালে মুড়ে আছে! ভোর ছক্কা ঘটঘট করে নিজের চাল দেয়। পাতা তাঁর গুটি টানে। এরপর লতা চাল দিয়ে বলে,
-” ভোরের পাকা গুটি খেয়ে দিই?”
ভোর পিটপিট করে একবার লতার দিকে চায় তো একবার পাতার দিকে! লতা বিজয়ী হেসে ভোরের গুটি খেয়ে দেয়! ভোর মন খারাপ করে বলে,
-” আমি তোমার সব গুটি ঘরে পাঠিয়ে দিবো দেখে নিও!”
লতা হেসে দেয়! লাবনী আক্তার চাল দেয়! হঠাৎ ক্ষীণ স্বরে কারো ফোনের রিংটোনের আওয়াজ ভেসে ওঠে। লাবনী আক্তার বলে,
-” কার ফোন বাজে?”
-” আমার! তোমরা খেলতে থাকো আমি নিয়ে আসছি!”
পাতা আলগোছে উঠে দাঁড়ালো। লাবনী আক্তার বাঁধা দেয় সে আনছে! পাতা মানা করে নিজেই চলে গেল। বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার তাও বিদেশি! বিদেশ থেকে কে আবার তাকে কল করবে। পাতা ফোন কেটে দিল। ফোন নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে নিবে একই নম্বর থেকে আবার কল আসে। পাতা মুখ বাঁকিয়ে রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে এক মহিলা কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
-” হ্যালো বরুণ?”
আওয়াজটা পাতার চেনা না হলেও বরুণ সম্মোধনটা পাতার শ্বাস আটকে দিতে সক্ষম হয়! এ ভোরের মা বর্ষা? তাকে কেন কল দিলো? তাঁর নম্বরটাই বা পেল কিভাবে? পাতা অনুভূতিহীন গলায় বলে,
-“স্যরি রঙ নম্বর! বরুণ বলতে এখানে কেউ নেই!”
পাতা কল কেটে দেওয়ার জন্য উদ্যত হয়। কিন্তু বর্ষার পরবর্তী কথায় কাটতে পারে না।
-” রঙ নম্বর না। তুমি বরুণের টিচার কি যেন নাম? ভুলে গেলাম!”
-” আমি ভোরের মা মিসেস পাতা অরুণ সরকার! আশা করি ভুলবেন না।”
থমথমে গলায় জবাব দেয় পাতা। অসহ্য রাগে পাতা কাঁপতে থাকে। বর্ষা শব্দ করে হেসে হেঁয়ালিপূর্ণ গলায় বলে,
-” আমি কি তাহলে ওর খালা? শোন মিসেস পাতা অরুণ সরকার? আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। কল কাটবে না!”
পাতা কাট কাট গলায় বলল,
-” আমি চাই না!”
-” ভোর কাল কল করে ছিলো আমাকে।”
পাতা কি ঠিক শুনলো? ভোর কল করেছিলো মানে? ভোর কেন ওই মহিলাকে কল করবে? পাতার অবাকতার সীমার অন্ত থাকে না। সে ভাবে ফোন কেটে দিবে। নিশ্চয়ই মহিলা তাদের হাসিখুশি সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে! কিন্তু পাতা কল কাটতে পারে না। বর্ষা ওপাশ থেকে বলতে থাকে,
-” অবাক হচ্ছো? ভোর প্রায়ই কল করে আমায়। হয়তো তোমাদের থেকে লুকিয়ে। নাড়ির টান আছে না? থাক ওসব কথা। মূল কথায় আসি। পাতা সবাই সব বিষয়ে পারদর্শী নয়। ভোর ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসে তাতেই ফোকাস করতে চায়। পড়াশোনাও জরুরি, করবে! বাট তুমি মনে হয় খুব চাপ দিচ্ছো! ওতটা প্রেসার দেবে না। কাল বাচ্চটা মন খারাপ করে বললো আমাকে। অরুণের সাথে কথা বলেছি এ বিষয়ে। ভালো হলো তোমার সাথেও হয়ে গেলো। আমাকে ভুল বুঝিও না।কোনো ক্রিকেট একাডেমি ভর্তি করিয়ে দিবে ভোরকে…”
আর শোনা যায় না কথা! কিছু ভাঙার আওয়াজ আসে। সিরিয়ালের মতো পাতার হাত থেকে ফোন পড়ে যায় নি! পাতা ফোনটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলেছে। আর কিছুই শুনতে চায় না সে! সবাই তাঁকে পেয়েছে টাকি! যে যার মতো ব্যবহার করবে? যা তা ব্যবহার করবে? বিড়াল নামক পাতাবাহারটি বেলকনিতে ছিলো। খুটুর মুটুর শব্দে দৌড়ে ঘরে আসে। ফ্লোরে ভাঙা ফোনটা উল্টে পাল্টে দেখে পাতার পায়ের কাছে গিয়ে মিও মিও করে ডাকে! পাতা ঘন ঘন শ্বাস টানে। দেয়াল হাতরে হাতরে বিছানায় গিয়ে বসে। পেটে চিনচিনে ব্যথা হয়! পাতা নাক টেনে ফোপায়। কাঁদতে পারে না সে! অনুভব করে সে এক মাঝ সমুদ্রে বৈঠা বিহীন তরীতে বসে আছে। চারপাশে অথৈ পানির গর্জন।
উপরে খোলা নীল দীগন্ত! শুধু শূন্যতা আর শূন্যতা! এই ক্ষুদ্র জীবনে সব কিছুই তাঁর অপ্রাপ্তির ঝুলিতে! ছোট ভোর তাঁর সাথে এরকমটা করতে পারলো? সে এতো দিন যাকে নিখাদ ভালোবাসা ভেবেছে আদোতে তা খাদে পরিপূর্ণ! তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় কি কোন কমতি ছিলো? ছিলো তো! ওই বর্ষা মহিলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো! তাঁর এই সস্তা ভালোবাসার চেয়ে নাড়ির টানে বেশি জোর! তাই তো চুপিসারে ফোনালাপ! নালিশ করা! কি এমন করেছে সে? এক্সাম তাই খেলতে যেতে দেয় নি। এতেই তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে? পাতার মাথা কেমন আওলিয়ে যায়! হাবিজাবি চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। সেই বৃদ্ধার কথা স্মরণে আসে।
ভনভন করে মাথার ভেতর! কানে ঝি ঝি শব্দে পাতার এলোমেলো লাগে। আবার হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে যায়। ভোর তো অবুঝ শিশু। তাঁর কাজে কষ্ট পেয়েছিল তাই কল করেছে। মা’য়ের কথা মনে পড়ে তাই কথা বলে। যতই হোক ভোরের গর্ভধারিনী! খারাপ হোক ভালো হোক মা তো! দোষটি তাঁর। সে ভালোবাসা, স্নেহে ডুবে একটু বেশিই আশা করেছে। তাই কষ্ট হচ্ছে! আচ্ছা ভোরের বাবার সাথেও ওই মহিলার কথা হয়? পাতার খেয়াল হয় কাল বাবা ছেলের রহস্যময় আচরণ। তাঁর কাছে সব খোলাসা হয়! সে এতো করে জিজ্ঞেস করলো; কেউই বলল না। না ভোর না অরুণ সরকার। আলগোছে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিলো। তাকে বলার প্রয়োজন নেই তো। সে কি আপন কেউ? সে কি প্রিয়জন? সে তো প্রয়োজন। রুমে নিজে, পাতাবাহার ব্যতীত তৃতীয় কোনো ব্যাক্তির অস্তিত্ব বুঝতে পেরে পাতা মাথা তুলে চায়। সামনে দন্ডায়মান ব্যাক্তিকে দেখে পাতার অধর জোড়া ভেঙে ভেঙে আসে।
-” আরেকটু সময় থাক? সবে তো সারে আটটা! বাড়ি ফেরার এতো জলদি কিসের? তোর পাতাবাহার অধীর আগ্রহে ওয়েট করছে বুঝি? ফিরলে এই ঠান্ডা ঠান্ডা রোমান্টিক ওয়েদারে.. হুম হুম?”
অরুণ তাঁর পিঠে শক্ত করে একটা কিল বসিয়ে দিলো। এই হাড়কাঁপানো শীতে শক্ত হাতের থাবায় রাসেল পিঠ বাঁকিয়ে ব্যাথাতুর মুখে বলে,
-” *** তুই জীবনেও ভালো হলি না। ক্ষ্যাপা ষাঁড়! ভালো কথা বললাম ভালো লাগলো না দেখবি বাড়ি গিয়ে বউয়ের চুমুর বদলে ঝাড়ি পড়বে!”
শুভ হেসে বলে,
-” ওঁর কপালটা সোনায় মোড়ানো যে পাতার মতো বউ পেয়েছে! নইলে ওঁর যা হাবভাব রিনা খানের মতো বউ ডিসার্ভ করে শা*লা!”
অরুণ আর এক সেকেন্ড দাঁড়ালো না সেখানে। হুডির পকেটে হাত ঢুকিয়ে গটগট পায়ে চলে গেল। অরুণের বন্ধুরা নিজেদের মাঝে আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
বাড়ি ফিরে অরুণ শাশুড়ির হাতে দুটো পিৎজার প্যাকেট দিয়ে পাতার খোঁজ করে।তিনি জানান,
-“ভোরের ঘরে! সবকটা কম্বল মুড়িয়ে সিনেমা দেখছে তোমার ল্যাপটপে! আমি কান ধরে আনছি সব কটাকে। তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো খাবার রেডি করি।”
অরুণ একটা চকলেট বক্স ও টেডি তাঁর হাতে ধরিয়ে বলে ‘রুম্পার জন্য’। লাবনী আক্তার সেগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলে,
-” তুমি এনেছো তুমিই দিও!”
বলে সে চলে যায় কিচেনে। অরুণ টেডিটার নাকে একটা কামড় দিয়ে রুমে চলে যায়। ভাবতে থাকে তাঁর আলাভোলা বউটার কানে না জানি কত স্বামী বিরোধী মন্ত্র পাঠ করা হয়েছে লতার তরফ থেকে! লতা মেয়েটা যে তাকে সহ্যই করতে পারেনা! অরুণ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সবাই ডাইনিংয়ে বসে পিৎজা খাচ্ছে। ভোর বাবাকে দেখে ‘আব্বু’ বলে ডাকে। অরুণ এগিয়ে গেলে তাঁর হাতে টেডিটার দিকে ইশারা করে লতার কোলে থাকা ছোট রুম্পা আধো আধো বুলিতে বলে,
-” উতা আমাই দিবে?”
-” দিবো আমার কোলে আসবে?”
মুচকি হেসে বলে অরুণ! রুম্পা হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়। অরুণ কোলে তুলে নিয়ে চুমু দেয় তাঁর গালে। রুম্পা টেডি জড়িয়ে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে। লতার চোখ মুখের আদল দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে স্পষ্ট নারাজির ছাপ! অরুণও লক্ষ্য করলেও আমলে নেয় না। অরুণ একটা চকলেট ছিঁড়ে রুম্পার মুখে দিলে বাচ্চাটা খুশি হয়ে অরুণের গালে চুমু দিয়ে গাল পুরে চকলেট খায়! ভোর নাকের পাটা ফুলিয়ে সবটা লক্ষ্য করে। হাতটা তাঁর নিশপিশ করে! পাতা খেয়াল করে ভোরের হাবভাব। কিছু না বলে তাঁর মুখে লোকমা তুলে দেয়। অরুণ রুম্পাকে লতার কোলে দিয়ে পাতার পাশে চেয়ার টেনে বসে বলে,
-” ওকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুমি খেয়ে নাও!”
ভোর বাবার কোলে এসে বসে। রুম্পা যে গালে চুমু দিয়েছিল সেখানে হাত দিয়ে ঘষে দেয়। অরুণ তাঁর নাকের ডগায় চুমু দিয়ে ভাবে। এ ছেলে এতো হিংসুটে স্বভাব কার থেকে পেলো?
খাওয়ার মাঝে হঠাৎ লতা অতি স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে,
-” আমাদের এখানে রেওয়াজ আছে মেয়ে কনসিভের আট/নয় মাসে তাকে মায়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় ডেলিভারির জন্য! আমি ওকে নিতেই এসেছি! কাল আব্বু, ভাই আর রাতুল আসবে। কাল বিকেলেই রওনা দেবো আমরা!”
পাতে থাকা অরুণের হাত থেমে যায়! লতার সম্মোধনহীন কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে বুঝতে অসুবিধা হয় নি। সে আড়চোখে একবার থমথমে মুখের লতাকে দেখে নিয়ে পাতার দিকে তাকিয়ে বলে,
-” আমাদের এখানে এমন রেওয়াজ নেই! ওরা আসছে আসুক। ক’টা দিন থেকে যাবে। আমি সর্বোচ্চ আপ্যায়ন করার চেষ্টা করবো! পাতা কোথাও যাচ্ছেনা!”
স্পষ্টতই মিথ্যে কথা। রেওয়াজ তো তাদের এখানেও আছে! কিন্তু সে চায়না পাতা যাক! লতা কটমট করে অরুণের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” ওতশত বুঝি না।পাতারও সম্পূর্ণ সম্মতি আছে সে যেতে চায়। তাই পাতাকে নিয়ে যাচ্ছি! দ্যাটস ইট!”
-” তোমার সম্মতি আছে? যাবে?”
শান্ত অথচ ধারালো গলায় অরুণ প্রশ্ন করে পাতাকে। যেন কথাতেই বলে দিচ্ছে না বলার জন্য। পাতা লতার দিকে একপল চেয়ে উত্তর দেয়,
-” হুম! যাবো!”
-” আমি চাই না তুমি যাও…”
অরুণকে থামিয়ে দিয়ে লতা হেসে বলল,
-” কিন্তু পাতা চায়! আর যাবে। সবসময় নিজের হুকুম তামিল করবেন না ওর উপরে ! ও তো কোনো পুতুল নয়। ওরও ইমোশন আছে। আশা করি অমত করবেন না!”
অরুণ আর ট্যু শব্দ অবধি করে না। ভোঁতা মুখে খাবার গলাধঃকরণ করে। লাবনী আক্তার বড় মেয়ের দিকে কড়া চাহনি নিক্ষেপ করে অরুণকে বুঝিয়ে বলে। অরুণ ভদ্রতাবোধ রক্ষার্থে ‘হুম’ বলে উঠে যায় ভোরকে নিয়ে। ভোর বাবার গলা জড়িয়ে মলিন সুরে বলে,
-” ওরা আম্মুকে নিয়ে যাবে? ভোর তাহলে একা থাকবে কিভাবে? তুমি ওদেরকে বলো না আমাকেও নিতে। আমি একটুও দুষ্টুমি করবো না।”
অরুণ জবাব দেয় না তাঁর কথায়। ভোর মলিন মুখে বিছানায় বসে থাকে।
খাওয়া দাওয়া শেষে লতা পাতাকে বলে তাঁরা তিন মা বোন একসাথে থাকবে গল্পগুজব করবে। কিন্তু বাঁধ সাধলো অরুণ! সে গম্ভীর সুরে পাতাকে রুমে যেতে বলে। বাহানা স্বরূপ জবাবদিহিতা করে ফ্ল্যাটে দুটোই বেড রুম! ভোরের রুমের বেড ছোট। তিনজনের অসুবিধা হবে। আর এমনিতেও পাতার ঘুমানোর অভ্যাস করুন! কারো আর কিছুই বলার থাকে না। পাতা রুমে ঢুকে চুপচাপ ভোরের ওপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ভোর গুটিসুটি মেরে উষ্ণ কম্বলের ভেতরে আরেকটু মাতৃ উষ্ণতার খোঁজে পাতার কাছ ঘেঁষে ডাকে,
-” ও আম্মু? তুমি চলে যাবে? তাহলে আমি কিভাবে থাকবো? আমার এক্সাম তো কালকেই শেষ হবে; আমাকে সাথে নিবে? আমি একটুও দুষ্টুমি করবো না। সত্যি বলছি!”
তাঁর অনুনয় মিশ্রিত বাক্য শুনে পাতার বুকটা কেমন খাঁ খাঁ করে উঠলো। সে ভোরের দিকে একটু কাত হয়ে শান্ত চোখে চায়। এই মায়ায় ভরা মুখখানি দেখে অভিমান করা যায়? কি জানি পাতা তো পারলো না অভিমান ধরে রাখতে। ভোর আবার ‘প্লিজ প্লিজ’ বলে অনুরোধ করে। পাতা ভোরকে বুকে টেনে মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
-” নিয়ে যাবো তো। তোমাকে ছাড়া তো আমার একটুও ভালো লাগবেনা।”
ভোর খুশি হয়ে যায়। পাতার বুক থেকে মুখটা তুলে গালে টপাটপ আদর করে আবার মুখ লুকিয়ে নেয়। অরুণ ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসে খালি গায়ে। টি টেবিলের উপর রাখা জার তুলে বিছানায় উঠতে উঠতে বলে,
-” শোন পাতাবাহার? তোমার বোন যতই হম্বিতম্বি করুক পাঠাচ্ছি না আমি তোমাকে। একদন্ড চোখের আড়ালে রাখলেই জান পাখি তরপাতে তরপাতে কাহিল অবস্থা!! সেখানে ও বাড়ি রাখার প্রশ্নই আসে না। শশুর বাড়িতে দিনের পর দিন পড়ে থাকাও জামাই হিসেবে দৃষ্টি কটু লাগবে! তাই মিষ্টি মেয়ের মতো মানা করে দিবে ঠিকাছে? বাবু এলে ঘুরিয়ে আনবো।”
পাতা হু হা কিছুই বলে না। চোখ বুজে চুপটি করে শুয়ে থাকে।ভোর বাবার দিকে চায়। তাহলে যাওয়া হচ্ছে না তাদের? অরুণ বালিশে মাথা রেখে ছেলের কপালে চুমু দিয়ে পাতার গালে জার’টা ঘষে বলে,
-” এই রাগিনী পাতাবাহার! তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য রাসেলের থেকে আমের আচার চেয়ে এনেছি! কতটা ছোঁচামো কাজ ভাবতে পারো? নাও আর রেগে থেকো না তো কলিজার আম্মু! এই অর্পার আম্মু?”
পাতা চোখ বন্ধ রাখতে পারে না অরুণের কান্ডে। লোকটা বৈয়াম দিয়ে পাতার নাক মুখ ঘষে দিচ্ছে। পাতা বৈয়ামটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ওপাশে রাখে। ভোর হা করে চেয়ে আছে দুজনের দিকে। পাতা তাঁর মুখটা বন্ধ করে দিয়ে ছোট্ট করে বলল,
-” ঘুমাও ভোর!”
ভোর ‘গুড নাইট’ বলে চোখ বুজে কম্বলের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। অরুণ লাইট বন্ধ করে দিলো তবে ড্রিম লাইট জ্বালায় নি। যখন বুঝতে পারলো ভোর গভীর ঘুমে তখন আস্তে করে তাকে এপাশে রেখে সে মাঝখানে আসে। অন্ধকারে পাতার গালে চুমু দিয়ে ডাকে,
-” এই পাতাবাহার? ঘুমিয়েছো?”
পাতা ঘুমোয় নি। তবে চোখ খোলে না। ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকলো। অরুণ বুঝতে পেরে মুচকি হেসে অধরে অধর ছুঁয়ে দেয়। অধরের অতি নিকটে অধরজোড় রেখে ফিসফিসিয়ে বললো,
-” এই পাতাবাহার? আমি জানি তুমি জেগে আছো! সাথে রেগেও আছো! তুমি গেলে আমি কিভাবে থাকবো? অহেতুক কারণে তুমি রেগে বাপের বাড়ি যাবে আমি অরুণ সেটা হতে দেবো না।”
পাতা চোখ খুলে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-” অহেতুক রাগ?”
অরুণ বিজয়ী হাসে। কনুইয়ে ভর দিয়ে পাতার চোখে চোখ রেখে বলল,
-” তা নয়তো কি? কাল সব মিটমাট হলো তো! তোমার উপর জেদ দেখিয়ে ভোরকে বকবো আমি; মারবো? এইসব আজগুবি ভাবনা কিভাবে এলো মাথায়? হুম? কিছুই হয়নি পাগলি।”
-” কিছুই হয়নি না? তাহলে বাবা ছেলে বন্ধ ঘরে কি করছিলেন?”
-” আরে কি বোঝাবো এই পাগল…”
-” ভোর কেন তাকে কল করলো? ওই মহিলা কল করেছিলো কেন আপনাকে?”
অরুণের কথা থেমে যায় পাতার প্রশ্নে! মেয়েটা কি জেনে গেছে? ভোর বলেছে কি? সে পাতার গালে হাত রেখে বলে,
-” এই কারণে রাগ মহারানীর? তুমি কষ্ট পাবে তাই বলি নি! ভোর অবুঝ ছোট বাচ্চা। ওর উপর রেগে থেকো না। বড় হলে নিজের কাজে আফসোস করবে। আমি বুঝিয়েছি!”
-” মা তো মা’ই! নাড়ির টান। আমি তো সৎ..”
-” ডোন্ট সে দোস ওয়ার্ড! তুমিই ওর মা। আমার ওয়াইফ। বুঝলে পাতাবাহার?”
পাতাকে থামিয়ে শক্ত গলায় বলে অরুণ। পাতা শব্দহীন হেসে বলে,
-” আমি তো আপনাদের প্রয়োজন! আপন বা প্রিয়জন নই।”
অরুণ পাতাকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। খানিক আদুরে গলায় বলে,
-” কি বলছো পাতাবাহার? আমাদের বাবা ছেলের জান তুমি! কষ্ট পেয়েছো? আ’ম স্যরি!”
পাতা ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। ভঙ্গুর স্বরে বলল,
-” কাল কতবার জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? চুপ ছিলেন! আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেন নি। শুধু কাল কেন? আপনি কখনই আমাকে কিছুই বলেন না। আমি জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে যান। মনে হয় আমি কেউ না এই সংসারে! গল্পটা শুধু আপনাদের বাবা ছেলের। আমি পাতা কোনো পার্শ্ব চরিত্রে। যাকে দরকারে ব্যবহার করা হয়! সবাই প্রয়োজনে ব্যবহার করে প্রয়োজন ফুরোলে টিস্যুর ন্যায় ছুঁড়ে ফেলে। খুবই সস্তা কিনা আমি; আমার ভালোবাসা। যে কেউ অল্প পরিশ্রমেই পেয়ে যায়। আবার ফেলেও দেয়।”
বড় বড় শ্বাস টানে পাতা। কান্না গলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসতে চায়। তবুও কাঁদে না। হয়তোবা চোখের জলেরও পাতার প্রয়োজনীয়তা ফুরে গেছে । অরুণ লাইট অন করে পাশে ছেলের দিকে একবার চেয়ে পাতাকে বলে,
-” ছোট্ট একটা বিষয় কেন টেনে বড় করছো পাতাবাহার? ছোট ছেলে ভুল করেছে। আমি ক্ষমা চাইছি ভোরও চাইবে। প্লিজ তুমি শান্ত হও!”
পাতার গলা এবার উঁচু হয় খানিক,
-” ছোট্ট বিষয়? হ্যাঁ তাই তো! আমি পাতা খুবই নগন্য তুচ্ছ ব্যাক্তি। যার নূন্যতম আত্মসম্মান বোধ নেই। এক ভঙ্গুর অসহায় অবলা! যার একূল নেই ওকূলও নেই।”
-” আস্তে কথা বলো! ভোরের ঘুম ভেঙ্গে যাবে!”
-” ভাঙ্গুক। শুনুক সেও! এতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর সহ্য হচ্ছে না। সেবার হসপিটালে বলেছিলেন আর মানিয়ে নিতে হবেনা আমাকে; আপনি মানিয়ে নিবেন! কই আমি একটা বিষয়ও দেখলাম না মানিয়ে নিতে। ঘুরে ফিরে এই আমাকেই মানিয়ে নিতে হয়! আমি পাতা আপনার প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। আপনি যেভাবে বলেন আমি সেভাবেই চলি। আমার স্বকীয়তা আমি খুঁজে পাই না। পাগলের মত ভালোবাসি আপনাকে অথচ এই আমি যদি এখন ভোরের সাথে একটু রুড বিহেভ করি; আপনি আমাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করতে দু’বার ভাববেন না!”
পাতা বলতে বলতে কেমন যেন হয়ে যায়। চোখ মুখ কেমন রক্তিম হয়ে উঠেছে। হাপানী রোগীর ন্যায় শ্বাস টানতে থাকে। অরুণ তড়িঘড়ি বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে পাতাকে খাইয়ে দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত হতে বলে! পাতা শান্ত হয়ে গেলে অরুণ গম্ভীর মুখে বলতে শুরু করে,
-” পাতাবাহার? ভালোবাসি আমি তোমাকে। হয়তোবা তোমার মতো করে নয় কিন্তু নিজের মতো করে ভালোবাসি। তুমি কতটা উপলব্ধি করতে পারো জানি না। কারণ হয়তোবা আমি সেভাবে প্রকাশ করতে পারি না। প্রেমিক পুরুষের ন্যায় হাঁটু গেড়ে গলা ফাটিয়ে বলি নি মানে এই না ভালোবাসি না। তুমি এমন ভাবে বলছো যেন আমি টিপিক্যাল হাসবেন্ডের ন্যায় তোমার সবেতে হুকুম জারি করি। হ্যাঁ আমি কিছুটা শাসন করি কারণ আমি ভাবতাম তুমি আমার শাসন বারণ করাটা পছন্দ করো! আমার ধারণা ভুল। আচ্ছা তুমি যতটা ফ্রিডম চাও দেবো! আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য মোটেও করি না। আমার কাছে ভোরের পরেই তুমি ম্যাটার করো! আমি তোমার সংসারটাকে ফুলে সাজাতে চেয়েছি তাই কাঁটা থেকে দূরে রাখি।তাই যা শুনলে তুমি কষ্ট পাবে, চিন্তা করবে তা বলি না; তাঁর মানে এই না কিছুই জানাই না। ভোর তাঁর সাথে কথা বলে লুকিয়ে চুরিয়ে আমি জানতাম না। কাল সে ফোন করে অনেক কথাই শুনিয়েছে। তুমি জানলে কষ্ট পাবে তাই বলি নি।আমার, ভোরের কোন কাজে তোমার মনে হয়, আমরা ব্যবহার করছি তোমাকে; তুমি প্লিজ জানিও আমরা সুধরে নিবো! আর আমাদের ভালোবাসাকে যদি ব্যবহার করা মনে করো তাহলে কি বলবো?”
-” আপনার এসব আদুরে কথাতেই আবেগী পাতা বার বার গলে গেছে। আর দোষটা আমারই। আমিই সবার কাছে বেশি আশা রাখি! যা উচিত না মোটেও!”
পাতা বালিশে মাথা রেখে স্বাভাবিক সুরে বলে চোখ বুজে নিলো। অরুণ তাকে টেনে বুকে জড়িয়ে বলে,
-” পাতাবাহার! তুমি যেমনটা চাও তেমনটাই হবে। তুমি যেভাবে বদলাবে সেভাবেই বদলে যাবো কথা দিচ্ছি! তুমি শুধু শান্ত হও! প্রেসার বেড়ে যাবে!”
-” আমি কাল বাড়ি যাবো ওদের সাথে!”
পাতার ভনিতা হীন কথা। অরুণ মুচকি হেসে বলল,
-” তুমি আমাদের উপর রাগ করে বাপের বাড়ি পারি জমাবে সেটাতো হবে না! কোথাও যাচ্ছো না ডার্লিং!”
পাতা অরুণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁত কপাটি পিষ্ট করে বলে,
-” অনুমতি চাই নি আমি। সিদ্ধান্ত জানিয়েছি!”
-” রশি দিয়ে বেঁধে রাখবো; যেতে দেবো না।”
পাতা কিছু না বলে অরুণের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়ে। অরুণ লাইট অফ করে হামি তোলে। তার মিষ্টি বউকে ধানি লঙ্কা বানানোর পেছনে যে লতার শতভাগ অবদান তা অরুণের বুঝতে বাকি থাকেনা। তবে লতা চেনে না অরুণ সরকারকে! অরুণ পাতাকে পূণরায় জড়িয়ে মিষ্টি আদরে ভরিয়ে দিল।
পরদিন বেলা এগারোটার দিকে অরুণ ছেলেকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। সারা সকাল অরুণ পাতাকে কাছ ছাড়া করে নি। পাতা ভোরকে পড়তে বসালে অরুণও বসে থাকে। লতাকে পাতার ধারের কাছেও আসতে দেয় নি। তবে সে পাতাকে জ্বালাতন করেছে একটু আকটু। পাতা বিরক্ত হলেও চুপ থেকেছে টু শব্দটি করে নি। বের হওয়ার সময় পাতাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে গেছে। তবুও তাঁর মনের ভেতর খচখচ করে। মনটা কু ডাকে অজানা ভয়ে।
অরুণ ভোর চলে যেতেই লতা পাতাকে রুমে নিয়ে বলে,
-” কি কি সঙ্গে নিবি জলদি করে বল সময় নেই হাতে? আমি প্যাকিং করে দিচ্ছি। আব্বু ভাই এলো বলে। এলেই চলে যাবো!”
-” মানে?”
পাতা অবুঝ স্বরে বলে! লতা নিজেই লাগেজ বের করে। আলমারি খুলে পাতার কাপড়চোপড় বের করে ব্যস্ত গলায় বলে,
-” মানে এই যে আমরা আব্বু এলেই চলে যাবো তাও ওই বর্বর লোক ফেরার আগে। ওই লোকটার উপর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই। নিশ্চয়ই কোনো ফন্দি এটেছে তোকে আটকানোর! আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমার তোর উপরেই ভরসা নেই; কখন না গলে পানি হয়ে যাস! তাই হেল্প কর আমাকে!”
পাতার চোখে মুখে অবাকতা। সে লতাকে থামিয়ে বলে,
-” আপু? এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে যাবো না। উনি যতই ফন্দি আটুক আমি যাবোই। আর শোন ভোরও যাচ্ছে আমাদের সাথে। তাই ওরা ফিরলেই আমরা রওনা হবো!”
লতা ক্ষুদ্ধ চোখে পাতার দিকে চায়।
-” ওহ্ বরফ গলে গেছে। আমি জানতাম এমনিই হবে। তুই তো অতি আবেগে দিশেহারা হয়ে পড়েছিস! যাবি না তাই তো? তোর ইচ্ছে!”
-” আপু আমি গলি নি! কিন্তু এসবের মাঝে ভোরকে টেনো না। ও তো ছোট অবুঝ বাচ্চা। আর আমিও ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। খাঁ খাঁ করে বুকটা! ভোরকে নিয়ে যাবো!”
পাতার অসহায় কন্ঠে লতা খেকিয়ে উঠে বলে,
-” ওই বিচ্ছুটা অবুঝ, ছোট? বাপের মতোই মিচকে শয়তান। দেখে আলাভোলা লাগলেও পেটে পেটে শয়তানী। আমার মেয়েকে কাল চিমটি কেটে কাঁদিয়েছিলো। আর এতোটা হিংসুটে বাচ্চা হয়? শোন পাতা…”
-” আপু ভোরকে নিয়ে কটুক্তি করবে না।”
পাতা শক্ত গলায় বলে। লতা রাগে অষ্টরম্ভা হয়ে পাতার গালে আলতো করে চর মারে। পাতা ব্যাথা পায় না। তবে কষ্ট পায় আকাশসম। সবাই যা তা ব্যবহার কেন করে তাঁর সাথে! লতা কটমট করে পাতার থুতনি ধরে বলে,
-” আসছে ভোরের মা! এতো ভালোবাসা দরদ পায়ে ঠেলে কেন তাঁর মায়ের কাছে কল করলো? হুম? শোন পাতা তোকে নাইওর নিয়ে যাচ্ছি না। একেবারেই নিয়ে যাচ্ছি। ওই ঠ্যাঠারু ইগোয়েস্টিক লোকটা পায়ে পড়ে নত না হলে পাঠাবো না তোকে। তাই আবেগী কথাবার্তা বাদ রাখ!”
পাতা লতার হাত ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে টইটম্বুর চোখে হেসে বলে,
-” পাঠাবে না! রাখবে কোথায় শুনি? বাপের বাড়ি? আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলেছো? রাখবে ডিভোর্সী বাচ্চা সহ মেয়েকে?শুনলে যতটুকু পথ এসেছে সেখান থেকেই উল্টো পথ ধরবে। নাকি তোমার কাছে রাখবে?”
লতা শান্ত চোখে বোনের দিকে চায়!
-” নিজেকে অসহায় ভাবা বন্ধ কর পাতা! আব্বু রাখবে না আমি রাখবো খুশি?”
-” হ্যা মাস দুই না পেরোতেই সব ভালোবাসা বিষে পরিণত হবে।”
-” তুই না কথাই বলিস না। চুপ থাক! যা করার আমি করবো!”
বলে লতা নিজের কাজে মনোনিবেশ করে।
সূর্য মহাশয় পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘড়িতে বেলা তিনটা। অরুণ ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পথে। বাড়িতে অতিথি আসছে তাই টুকটাক দই মিষ্টি কিনতে একটু দেড়িই হলো! ভোর প্রশ্ন করে করে অরুণের কানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। তাঁরা কি নানুর বাড়িতে যাবে? নাকি না? অরুণ জবাবে না বলেছে। ভোর বিশ্বাস করে না। আম্মু তো বলেছে যাবে! তাহলে কারটা বিশ্বাস করবে?
পাতা বাহার পর্ব ৫৪
বাবা ছেলে লিফট করে তাদের ফ্লোরে নেমে ডান দিকে অগ্রসর হয়। পেছনে রঞ্জু যার হাতে দই মিষ্টি সাথে টুকটাক আরো কিছু সরঞ্জাম। অরুণ কলিং বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করে কেউ খোলে না। অরুণের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে তো এক্সট্রা চাবিও রাখে নি আজ। আর বাড়ি ভর্তি মানুষ অথচ কেউ শুনছে না? অরুণ একনাগাড়ে বাজাতে থাকে কলিং বেল। তবুও রেসপন্স না পেলে অরুণ ফোন বের করে কল করার জন্য। পাতার নম্বর বন্ধ বলে। অরুণের কপাল বেয়ে শ্বেদজল গড়িয়ে পড়ে। কোনো বিপদ হয় নি তো?