উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৩
আফিয়া আফরোজ আহি
সময় গড়াতে লাগলো তার নিজ গতিতে। কলেজ, পড়াশোনা, মাঝে মাঝে কাজিনরা মিলে আড্ডা এই নিয়ে বেশ চলছে দিন। সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে তাঁদের নিজস্ব কাজে। আমি আর ইভা পরীক্ষা নিয়ে, ঈশিতা আপু প্রেজেন্টশন, অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে, রোশনি পড়াশোনায় আর ভাবি বাড়ির কাজে। ইভান ভাই এসেই ব্যাস্ত হয়ে গেছে। সারাদিনে তাকে বাড়িতে পাওয়াই যায়না। কি যে করে আল্লাহ মালুম। সময় গুলো যেন কতো তাড়াতাড়ি চলে গেল। এইতো এখনো মনে হচ্ছে ইভান ভাই সেই দিন এলো। কিন্তু দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ মাস হতে চলল। ইভান ভাই আসার পর দাদুমনির অবস্থা ভালো। আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে বলা যায়। হতে তো হবেই তার প্রিয় নাতি এসেছে বলে কথা। সুস্থ না হলে হবে? ইভান ভাই এসেই ব্যাস্ত হয়ে গেছেন কাজে। সারাদিন বাসার বাইরেই টই টই করেন। কি যে করেন আল্লাহ মালুম। কিছু জিজ্ঞেস করলে নিরুত্তর থাকেন।
তপ্ত দুপুরে টই টই করে পুরো ছাদ জুড়ে হাটাহাটি করছি। ছাদে থাকা ফুলগুলো ছুঁইয়ে দিচ্ছি। মন মাতানো সুবাস আসছে ফুল থেকে। বিষয়টা মজাই লাগছে। এই নিয়ে মোট চারবার পুরো ছাদে চক্কর কাঁটা শেষ। টুক টুক পায়ে এগিয়ে যেতে নিলাম এমন সময় কেউ সামনে এসে দাঁড়ালো। মাথা উঁচু করে তার দিকে তাকালাম। সামনে শুভ ভাই দাঁড়ানো। কানে তার ফোন গুঁজে রাখা। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। শুভ ভাই হয়তো আমায় খেয়াল করেনি। মাথায় দুস্টু বুদ্ধি চেপে বসলো। পিছন থেকে “ভাউ” করে উঠলাম। শুভ ভাই ভয় পাওয়া তো দূর একটু চমকানও নি। ফোন কেটে দিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“কিরে পাখি? এই ভর দুপুর বেলা তু্ই ছাদে কি করিস?”
“ভুত গুণী। গুনবে? আসো একসাথে গুণী”
“পরীক্ষার প্রেসারে কি মাথা টাও গেছে?”
“ঠিক বলেছো। পরীক্ষার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পা*গলী হয়ে গেছি। তাই এখন পা*গলামি শুরু করেছি”
“নিচে যা না হয় পে*ত্নীরা তাঁদের সাগরেদ ভেবে তোকেও ওদের সাথে নিয়ে যাবে”
“শুভ ভাই”
“কি?”
“আমি তোমাকে ভয় দেখালাম কিন্তু তুমি ভয় পেলে না কেন?”
শুভ ভাই থুতনিতে হাত রেখে বলল,
“আমায় ভয় পেতে হতো বুঝি”
“হ্যাঁ। কিন্তু তুমি ভয় পাওয়া তো দূর একটু অবাক ও হও নি”
“আমি উল্টো হয়ে দাঁড়াচ্ছি তু্ই আবার কর। আবার সত্যিই ভয় পাবো”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ”
শুভ ভাই উল্টো দিকে ঘুরে তাকালেন। “ভাউ” করলে শুভ ভাই ভয় পাওয়ার ভান করলেন। অতঃপর দুজনই হো হো করে হেসে দিলাম। আমার ভাই বোন গুলোও হয়েছে আমার মতো। আমি পাগলামো করি আর তারা আমার পাগলামো সহ্য করে। তালে তাল মিলায়। শুভ ভাই বাকি সবার কাছে গম্ভীর হলেও আমার ক্ষেত্রে সে বরাবরই আলাদা। আমার সাথে তার গম্ভীরতা চলে না। দুই ভাই-বোন হাসছি। সামনের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
“পা*গলী”
হাসতে হাসতে শুভ ভাই চলে গেল। তিনি দাঁড়ালে তো! যেভাবে ভুতের মতো টুপ্ করে এসেছিলেন ঠিক সেভাবেই চলে গেলেন। আমি তার যাওয়ার দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে চক্কর পুরো করায় লেগে পড়লাম।
এমনই একদিন বিকেলে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আমরা লুডু খেলছি। আম্মুরা তাঁদের কাজে ব্যাস্ত। আমি, ইভা, ঈশিতা আপু, রোশনি মিলে জোড়া জোড়া খেলছি। আমি আর ইভা এক দলে, ঈশিতা আপু আর রোশনি একদলে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে দু দলের মাঝে। কারা কাঁদের হারায় এই নিয়ে হই হুল্লোড় চলছে। কেউ হেরে যেতে রাজি নই। প্রিয়ম ভাবি ড্রয়িং রুম পেরিয়ে যেতে নিলে ডাক দিলাম।
“ভাবি এসো লুডু খেলবো”
“তোমরা খেলো আমি দাদুমনিকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে আসি”
ভাবি চলে গেল। আমরা ফের খেলায় মন দিলাম। হটাৎ প্রিয়ম ভাবির চি*ৎকারের শব্দ। সবাই ছুটলাম দাদুমনির ঘরে। ঈশিতা আপু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে ভাবি? এভাবে চিৎকার দিলে কেন?”
ভাবি ভীতু কণ্ঠে বলে উঠলো,
“দেখো দাদুমনি যেন কেমন করছে”
খেয়াল করে দেখলাম দাদুমনি অস্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিচ্ছে। এর মাঝেই আম্মুরা এসে হাজির হলো। সবাই বোঝার চেষ্টা করছে কি হলো। কিন্তু কেউই যেন বুঝতে পারলো না। দাদুমনির অবস্থা খারাপ হচ্ছে। শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। বুক চেপে ধরে রেখেছে। দেখে মনে হচ্ছে বুকে ব্যাথা করছে। বড় আম্মু জিজ্ঞেস করলেন,
“আম্মা বুকে ব্যাথা করছে? শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে?”
দাদুমনি কোনো মতে মাথা নেড়ে সায় জানালো। কি করবো বুঝতে পারছি না। বাড়িতে কোনো ছেলে নেই। সবাই কাজে বাহিরে। আব্বুরা অফিসে, অভ্র ভাইও সেখানে। শুভ ভাই মেডিকেলে, ইভান ভাই বাড়ি নেই দুদিন। কাজে বেরিয়েছে আজকে রাতে আসার কথা। রিসাব ভাই হোস্টেলে। ভাবি অভ্র ভাইকে ফোনে ট্রাই করছে। আম্মু চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারি করতে করতে বলল,
“এমন একটা সময়ে একটা ছেলেও বাড়িতে নেই। এদিকে মায়ের এই অবস্থা। কি যে করবো?”
মনে পড়লো রুদ্র ভাইয়া তো বাসায় আছে। ঘন্টা দুই আগে এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়েছে। আমি ছুটলাম ভাইয়ার রুমে। ভাই আমার ঘুমিয়ে কাঁদা। ওকে টেনে তুলে নিয়ে এলাম। তাড়াহুড়ো করে দাদুমনিকে নিয়ে ছুটলো হসপিটালে। বড় আম্মু, আম্মু, রুদ্র ভাইয়া আর ভাবি চলে গেলেন। আমরা ছোটরা রয়ে গেলাম। টেনশন হচ্ছে খুব। হুট্ করে কি এমন হলো যে দাদুমনি এতটা অসুস্থ হয়ে গেলেন? ওখানে কি হচ্ছে কিছুই জানি না! টেনশনে ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছি। সবার মুখে চিন্তার ছাপ।
দাদুমনি মানুষটা আমার অনেক প্ৰিয়। ছোটো বেলায় আমার বেশির ভাগ সময়ই দাদুমনির সাথেই কাটতো। ইভান ভাইয়ের পড়ে কেউ যদি দাদুমনির কাছের হয় সেটা ছিলাম আমি। আমায় খাইয়ে দেওয়া থেকে আমার চুল আঁচড়ে দেওয়া, গল্প করা সবই দাদুমনি করতেন। কাছে ডেকে গল্প শুনাতেন। দাদুমনি যেখানেই যেতেন তার পিছু পিছু আমিও যেতাম। মানুষটা আমার বড্ড ভালোবাসার।
সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আম্মু, ভাবি আর আব্বু ফিরে এলো। তাঁদের বর্ণনা মতে দাদুমনি হার্ট অ্যাটাক করেছে। অবস্থা বেশি ভালো না। এর আগে একবার হার্ট অ্যাটাক করেছে। দাদুমনিকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। আম্মুরা চলে এসেছে আমাদের জন্য। খাবার নিয়ে একটু পর আবার যাবে। আম্মুরা যাওয়ার সময় আমি আর ইভা বায়না ধরলাম আমরাও যাবো। হসপিটালের করিডরে হাঁটতে হাঁটতে হুট্ করে মাথায় এলো আচ্ছা ইভান ভাই কি এসেছেন? নাকি এখনো উনি কাজে ব্যাস্ত? অবশ্যই আসার কথা। কেবিনে ঢুকতেই চোখ পড়লো অক্সিজেন মাস্ক পড়ানো দাদুমনির ওপর। ঘুমিয়ে আছেন তিনি। তার পাশেই বসে আছে ইভান ভাই। তাই জন্যই তো বলি দাদুমনি অসুস্থ হবেন আর ইভান ভাই আসবেন না এটা হতেই পারে না। দাদুমনির কাছে কিছুক্ষন থেকে চলে এলাম।
কেটে গেল সপ্তাহ খানেক সময়। দাদুমনিকে গতকাল বাসায় নিয়ে এসেছে। সন্ধ্যার পর পর দাদুমনির রুমে বড় আব্বু, বড় আম্মু, আমার আব্বু-আম্মু এদের মিটিং চলছে। কি নিয়ে কথা হচ্ছে আমাদের জানা নেই! আমরা আমাদের মতো আছি। হটাৎ আম্মু এসে ডেকে নিয়ে গেলেন আমায়। রুমে সবার মুখে গম্ভীর ভাব। রুমে নীরবতা বিরাজ করছে। কারো মুখে কোনো রা নেই। দাদুমনি ইশারায় আমায় তার কাছে ডাকলেন। পাশে যেয়ে বসে কুশল বিনিময় করলাম। হুট্ করে দাদুমনি আমার হাত তার হাতের মাঝে নিয়ে নিলেন। আকুল কণ্ঠে সুধালেন,
“রোদ সোনা আজ দাদুমনি তোর কাছে কিছু চাইলে দিবি?”
দাদুমনি আমার কাছে কি চাইতে পারে? আমার কাছে দেওয়ার মতো তো তেমন কিছুই নেই। তাহলে? এক বার সবার দিকে তাকালাম।
“তুমি বলো আমার সাধ্যের মাঝে থাকলে আমি অবশ্যই তোমায় দিবো”
“আমি চাই তু্ই ইভান দাদুভাইকে বিয়ে কর। আমি আর কতদিন দিন বাঁচবো তা জানি না! কিন্তু আমি মরার আগে তোদের দুজনকে একসাথে দেখে যেতে চাই। তোরা দুজন আমার দুই চোখের মনি। আমি চাই তোরা একে অপরের সাথে সারাজীবন থাক, সুখে থাক”
দাদুমনির কথা শুনে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। এটা কিভাবে সম্ভব? লাট সাহেব আর আমি? উনি রাজি হবেন তো? সব চেয়ে বড় কথা বাড়ির সবাই? আমি কিছু বলছি না। ‘থ” মেরে বসে রয়েছি।
“কিছু বলছিস না যে?”
“ইভান ভাই রাজি?”
“ইভান দাদুভাইকে নিয়ে এখনই ভাবতে শুরু করে দিয়েছিস? ওকে নিয়ে এখন ভাবতে হবে না। ওর মতামত ও দিয়েছে, তু্ই তোর টা বল”
আমি কিছু বলছি না চুপ করে আছি। দাদুমনি ফের বললেন,
“দাদুমনির কথা রাখবি না?”
কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছি না। মিন মিনে স্বরে বললাম,
“আমি তোমায় পড়ে জানাচ্ছি”
কথাtটা বলে উঠে চলে এলাম। পিছন থেকে ওদের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। ছোটো আম্মু বলল,
“বেচারি লজ্জা পেয়েছে”
রাতের খাওয়া শেষে আব্বু আম্মু রুমে এলেন। আমি টেবিলে বসে পড়ছি। যদিও এটাকে পড়া বলে না। বই খুলে বইয়ের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। এই অবধি একটা লাইনও পড়া হয়নি। দুজনকে একসাথে দেখে অবাক হলাম।
“কিছু বলবে?”
“এদিকে আয়”
টেবিল থেকে উঠে যেয়ে বিছানায় বসলাম। আমার এক পাশ আব্বু আরেক পাশে আম্মু। আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“দেখে রোদ মা বাবা-মা হিসেবে কখনোই তোর ওপর এই পর্যন্ত কিছু চাপিয়ে দেই নি, আজও দিবো না। তোর সম্পূর্ণ অধিকার আছে মতামত দেওয়ার। কিন্ত একটা কথা কি জানিস তোর দাদুমনির অবস্থা বেশি ভালো না। ডক্টর তাকে টেনশন করতে বারণ করেছেন। মা চায় তার কিছু হয়ে যাওয়ার আগে তোর আর ইভানের বিয়েটা দেখে যেতে। এখন তোর কি মতামত?”
আমি হাত মোচড়া মুচরি করছি। অস্বস্থি হচ্ছে কিছু বলতে।
“আসলে আব্বু আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইনা”
“এখন তোদের বিয়ে হবে না শুধু আকদ হবে। তোর অনার্স কমপ্লিট হলে ততদিনে ইভান নিজেকে গুছিয়ে নিবে তখন অনুষ্ঠান করে তোমাদের বিয়ে দেওয়া হবে। আকদের পর তু্ই তোর মতো পড়াশোনা করবি ইভান ওর মতো ওর কাজ করবে। কিন্তু তোর দাদুমনির ইচ্ছে তোদের বিয়েটা দেখার”
কি করবো বা বলবো ভেবে পাচ্ছি না। বেশি ভাবলাম না। ভাবতে গেলে মাথা ধরে আসছে। মাথা নিচু করে মৃদু কণ্ঠে বললাম,
“তোমাদের যা মনে হয় তাই করো”
“তু্ই আর ইভান এক সাথে সুখেই থাকবি দেখে নিস”
আব্বু আম্মু খুশি মনে রুম থেকে চলে গেলেন। দুজনের মুখে হাসি লেগে আছে। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে জীবনে আর কি চাই? কিন্তু আমার মনে এখনো চিন্তার রেশ রয়েই গেল। ইভান ভাই কি রাজি হবে? নাকি মানা করে দিবে? আচ্ছা উনি কি অন্য কাউকে ভালোবাসে? বই খাতা গুছিয়ে রেখে ব্যালকনির দিকে হাঁটা দিলাম। এখন আর যাই হোক পড়াশোনা হবে না।
রাতের নিস্তব্ধতা শহর। যানজট পূর্ণ শহর নিস্তব্ধতার চাদরে ঢেকে আছে। আকাশের পেজো মেঘদের ভেলা। আকাশ পানে তাকিয়ে আছি হটাৎ খেয়াল হলো পাশের ব্যালকনিতে। ব্যালকনিটা ফাঁকা পড়ে আছে। আমার রুমের একপাশে ইভান ভাইয়ের রুম অন্য পাশে ইভার রুম। এদের দুই ভাই-বোনের মাঝে আমি ফেঁসে গেছি। ইভান ভাইয়ের রুমে তার অবস্থান নেই বিগত দুই দিন থেকে। লাট সাহেব ফের কোথায় যেন গেছেন। অকস্মাৎ সেদিন কথা মনে পড়ে গেল। পড়া শেষে ভালো লাগছিলো না। তাই ব্যালকনিতে এসেছিলাম। চোখ পড়লো কালো টিশার্ট পরিহিত ইভান ভাইয়ের ওপর। ডিভানে বসে ল্যাপটপে কি যেন করছেন। ব্যাস্ত ভঙ্গিতে কি-বোর্ডের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছেন। মুখে লেগে আছে রাজ্যের বিরক্তি। এতেও ওনাকে সুন্দর লাগছে। তাকিয়ে আছি এমন সময় ইভান ভাই বলে উঠলেন,
“এতো রাতে কি করছিস? ঘুমাস নি কেন?”
“পড়ছিলাম তাই”
গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“রাত জাগা ভালো না। ঘুমিয়ে যা”
কথার পৃষ্ঠে কিছু বলতে পারলাম না। একগোছে রুমে চলে এলাম।
ছোটো বেলা থেকেই ইভান ভাই মানুষটা আমার পছন্দের। হয়তো সেটা তার সৌন্দর্যের জন্য। এছাড়া তাকে পছন্দ করার মতো তেমন কোনো কারণ নেই। না তার সাথে আমার সুসম্পর্ক, আর না কখনো সেভাবে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। বরাবরই তার সাথে আমার দূরত্ব ছিলো। একে তো তার ব্যবহার করল্লার জুসের মতো, তার ওপর তার রাগের কথা যতো কম বলবো ততই কম হবে। ঘাড় তেড়া মানুষ একটা। কোনো কালেই তার সাথে আমার ভালো ভাবে কথা হয়নি। যা হয়েছে তা হলো কখনো উনি আমায় রাগ দেখিয়েছে তো কখনো শাসন,বারণ করছে। তাও কেন যেন তাকে ভালো লাগে।
পরের দিন সকালে টেবিলে বসে খাচ্ছি। পাশের চেয়ারে বসা ইভা বলে উঠলো,
“কিরে বোন থেকে এখন ভাবি হয়ে যাবি দেখছি”
রোশনি গাল ফুলিয়ে বলল,
“আপু পটাতে বলেছি বলে একেবারে বিয়েই করে নিবে?”
খেতে খেতে বললাম,
“আমি রাজি হয়েছি মানে ইভান ভাইও যে রাজি হবেন তার তো কোনো কারণ নেই। হতেও তো পারে উনি মানা করে দিবেন”
“সেগুড়ে বালি। ভাইয়া রাজি। এখন শুধু ডাকা বাকি কাজী”
ইভার কথা শুনে থমকে গেলাম। ও কি বলছে? ওর মাথা ঠিক আছে তো? চমকিত কণ্ঠে বলে জিজ্ঞেস করে বসলাম,
“সত্যিই ইভান ভাই রাজি?”
উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ২
“হ্যাঁ। আর আগামী শুক্রবার আপনাদের আকদ ম্যাডাম। রেডি হো বনু থেকে ভাবি হওয়ার জন্য”
“মোটেও না আমি তোর বোন আর বোনই থাকবো”
খাওয়ায় মন দিতে চাইলেও মন বসছে না। মনে ভাবনা এলো, তবে কি ইভান ভাইয়া আগে থেকেই পছন্দ করতেন আমায়? তাই জন্যই কি এতো শাসন, বারণ? কিন্তু পছন্দ করলে তো আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলতেন। যেটা উনি কখনোই আমার সাথে করেন নি। তাহলে তার রাগের পিছনে লুকানো ছিলো তার ভালোবাসা! যেটা আমি বুঝতে পারিনি!