Love Triangle part 19
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা
নয়টার দিকে মা রুমের দরজায় শব্দ করলো। আমি জেগেই ছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
‘ কে?’
মা রুমে ঢুকলো। আমি এখনও উপুড় হয়েই শুয়ে আছি। নিজেকে মানসিকভাবে খুব ক্লান্ত লাগছে।মা আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
‘ খাবি না?’
‘ খাবো। নিয়ে আসো এখানে।’
‘ নিচে চল। বিয়ের দিন একা একা খাওয়া টা ঠিক না।সবার সাথে একটু সময় দে।’
আমি মায়ের কথা শুনে উঠে বসলাম।একটু দুরত্বে বসে মায়ের দিকে তাকালাম। বললাম,
‘ আমি আজকে বিয়েটা করছি না মা।’
মা অবাক হলো।অনেকটাই। বললো,
‘ বিয়ে করছিস না?কেন?’
‘ আমি মানসিকভাবে ঠিক নেই মা। আমি ক্লান্ত। এতকিছু আর নিতে পারছি না। আমার একটু সময় লাগবে। তুমি এখনই কাউকে বলো না কথাটা। আমি সবাইকে বলব।উনি আসলে উনাকে ও বলব।’
মা আর কথা বললো না। আমাকে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।চুলে আলতো করে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ আমি তোর এমন হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্তে খুশি না হলেও রাগ করিনি। তুই অন্তত তো আমার মত নিজের চেয়ে কম স্ট্যাটাসের কাউকে বিয়ে করছিস না। জানিস? আমার যখন তোর বাবার সাথে প্রেম ছিলো,তোর নানার কাছে কত মা’র খেয়েছি।তোর বাবা কেও লোক লাগিয়ে অনেক মা’র খাইয়েছে।রুম বন্দী করে রেখেছিল। সবকিছু ছাপিয়ে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তোর বাবাকে বিয়ে করি। প্রথম বছর মেনে নিলো না। দ্বিতীয় বছর নিজে লোক পাঠিয়ে নিয়ে আসলো আমাকে।আগের মতই ভালোবাসা পেলাম কিন্তু স্বীকৃতি পেল না তোর বাবা।আজ এত বছর পর তোর বাবার শেষ বয়সে এসে তা-ও রিমির এমন কান্ড! এর জন্য মেনে নিয়েছে।
আমি তো আমার বাবাকে চিনি। আমি খুব ভুল না হলে আজ তুই ওই ছেলেটাকে বিয়ে করলে তোর সাথেও এইটাই করতো। দুজনের কাউকে মেনে নিত না।জীবনে অনেক কষ্ট পাইছি রে মা।আর পেতে চাই না।তুই যা ভালো বুঝিস কর।সময় নিতে চাইলে নে। কিন্তু সময় নিতে গিয়ে আবেগের বশে আর কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিস না।যদি সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয় আমাকে বলবি। আমি তোর মা।তোর খারাপ আমি কখনও চাইবো না।তোর বাবা কেও বলবি।সে ও তোর খারাপ চায় না।এই কাল থেকে অনেক আফসোস করছে নিজের রাগের জন্য। মানুষ টা শুধু একটু রাগী ই।আর কোন খারাপ দিক নেই।তোর যদি কোনো সমস্যা হয়, দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাস আমাদের দুজনকে বলবি। আমরা তোকে সাহায্য করব। কিন্তু মা,
এই বাড়ির কারোর কাছে তুই নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত গুলো নিতে সাহায্য চাইবি না।এটা আমার বাবার বাড়ি।আমি এদের রক্ত চিনি। সেদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে না গেলে বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হত অঢেল টাকা থাকত কিন্তু যেই শান্তি ওই বাড়িতে আছে তা আমার জীবনে আসত না।’
আমি মা’কে জড়িয়ে ধরে চুপটি করে সব কথা শুনে গেলাম।একটা টু শব্দ ও করলাম না।আজ এসব নতুন জানছি,শিখছি মায়ের কাছে।আগে কখনো এভাবে বলেনি। সবসময় বাবার বাড়ি বলতে অজ্ঞান ছিল।এখন! কিছুক্ষণ পর মা আমাকে উঠিয়ে দিয়ে বললো,
‘ চল এখন। খাবি।না খেয়ে খেয়ে শরীরের অবস্থা খারাপ করে ফেলছিস।’
আমি কথা বাড়ালাম না আর। চুপচাপ মায়ের সাথে নিচে নেমে এলাম।নিচে তখন সবাই বসে।বাড়ির বেশিরভাগই বসে কি যেন আলোচনা করছে। নানা উপস্থিত নেই। আমাদের দেখে নানু বললো,
‘ আহি কে খাইতে দিয়ে একটু এইদিকে আয় রুমা।’
মা কথা বললো না। আমাকে খাবার টেবিলের পাশে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিয়ে প্লেটে তরকারি নিতে লাগল। এমন সময় আবার নানু ডাকলেন।মা আমাকে খাবার দিয়ে বললো,
‘ তুই চুপচাপ খা। আমি আসছি একটু।’
মা ওদিকে এগিয়ে গেল। আমি খেতে শুরু করে কান পাতলাম কিছু শোনার আশায়। কিন্তু কথা যেই নিচু আওয়াজে বলছে তা আমার কান অব্দি এলো না। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে বাড়ির বাইরে চলে আসলাম।বাগানে।রোদ উঠেছে। মিষ্টি রোদ। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে রোদ লাগছে ভালোভাবেই। আমি জুতা খুলে ঘাসের উপর বসলাম।গায়ের চাদর টা খুলে কোলে নিয়ে ভাবতে লাগলাম।কাকে বিশ্বাস করব?কার কথা ধরবো? আমি নিজে,মা নাকি ইফাদ ভাইয়া?অনেক চিন্তার পর নিজ আর মা’কে ই সঠিক মনে হচ্ছে আমার।মা কে ছাড়া জীবনে আর কোন বিশ্বস্ত বন্ধু পাইনি আমি। নিজের মন বলছে সময় নিতে। অবশ্যই প্রভাব পড়েছে ইফাদ ভাইয়ার কথার। কিন্তু আমার আসলেই সময় নেওয়া উচিত। সবকিছুতে আমি নিজ কে হারিয়ে ফেলেছি।যাকে তাকে না বুঝেশুনে মন বিনিময় করছিলাম। ক্যাপ্টেন সাহেব কে আমার খারাপ লাগে না।
হয়ত বা তিনি চাইলেই পারতেন নিজের অবস্থান শক্ত করতে এই বাড়িতে।তা না করে বেশি উদার হতে গিয়ে সবার চোখে খারাপ হলেন। যখন রিমি আপুর সম্পর্কে জানলেন উনার তখনই উচিত ছিল বিয়েটা ভেঙে দেওয়া।হুফফফফ!একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললাম।রিমি আপু কে গতকাল থেকে দেখছি না। কোথায় লুকিয়েছে কে জানে।কই যাবে যাক।খুঁজব না আমি। আমার এত সব অধঃপতনের মূলে তো ওয়ই।ও এত জঘন্য প্ল্যান না করলে আজ আমার জীবন আমার ফিলিংস সব ঠিকঠাকই থাকত। কাউকে অসম্মানিত হতে হতো না। আমি তো শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে রিমি আপুকে ভালোবাসতাম, নিজের বোন ভাবতাম।সে আমার ভালোবাসা, বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে এত বড় ক্ষতি কেন করলো?এটার উত্তর রিমি আপু ছাড়া আর কারোর কাছে নেই। আমি আমার বর্তমান ঝামেলা থেকে একবার শুধু বের হতে পারি, আমি তার কাছে জবাব চাইব। আমার এত গুলো ক্ষতি কেন করলো তার জবাব ওকে দিতে তো হবেই।
‘ আপু,আপু!’
হুট করে এমন ডাক শুনে ধ্যান ভাঙল আমার।দেখি মৌ আর মুন দাঁড়িয়ে আছে।দুটোই একসাথে ডেকেছে আমাকে। আমি ওদের ডাকলাম,
‘ আয়। বস এখানে।রোদের চুমু নে।’
মৌ আমার পাশে এসে বসল।মুন কোলে জায়গা করে বসে পড়লো চুপচাপ। আমি মৌ কে শুধোলাম,
‘ ব্রেকফাস্ট করছিস?’
‘ হুম।’
‘ আর পড়াশোনার খবর কি তোর? কোথায় কোথায় ভর্তি হবি ভাবলি?’
‘ এখনও ঠিক করিনি কিছু।ভাবছি মিস্ট, বুয়েট আর ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি গুলোতে ট্রাই করব।’
আমি ওর দিকে তাকালাম।কপাল কুঁচকে বললাম,
‘ তুই ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চাস?’
মৌ হাসিমুখে মাথা নাড়লো। এরপর বললো,
‘ তবে আমি বিশেষ করে মিস্ট এ পড়তে চাই। দুলাভাই ও তো মিস্ট এ পড়েছে। আমি তার থেকে হেল্প পাবো অনেক।’
Love Triangle part 18
‘ কোন দুলাভাই?’
‘ ওমা! তোমার বর। ক্যাপ্টেন তৌকির হাসান।’
আমি মৌ এর দিকে এক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম সামনের দিকে। ক্যাপ্টেন সাহেব ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়েছে।জানি ও না।আর জানার কথা ও নয় আমার।উনি সম্পর্কে নগন্য জ্ঞান আমার। কিন্তু মৌ জানলো কিভাবে?রিমি আপুর থেকে শুনেছে হয়ত। বিয়ে ঠিক হয়েছিল যেহেতু। আমি সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।