Love Triangle part 20
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা
রাত দশটা ছুঁই ছুঁই করছে।গাড়ি সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে। ক্যাপ্টেন সাহেব ড্রাইভ করছেন। আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে। পিছনে ক্যাপ্টেন সাহেবের এক বন্ধু। গাড়িতে তিন জন মানুষ। তিনজনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। শুধু ক্যাপ্টেন সাহেব রাগে ফোঁস ফোঁস করছেন। আমার এই মুহূর্তে ক্যাপ্টেন সাহেব কে ভয় লাগছে।উনি আজকে যেই রূপ দেখালেন আমাকে! আমি সহ নানা বাড়িতে উপস্থিত সকলেই ভয় পেয়েছে। উনাকে হেনস্থা করার অপরাধে কি কি করবেন তা শুধু শোনালেন সবাইকে।নানা কে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন। আমাকে বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে কথা বললেন ওদের সাথে।কি বলেছেন জানি না।শুনতে দেওয়া হয়নি আমাকে। কিন্তু এরপরই সবার আচরণ বদলে গেল।
ইফাদ ভাইয়া কে আড়ালে ডেকে নিয়ে কি বলেছিলেন জানিনা, কিন্তু যেই ইফাদ ভাইয়া আমাকে সকালে এতকিছু বুঝিয়ে ক্যাপ্টেন সাহেব কে বিয়ে করতে না করেছিল সেইই আমাকে ফোর্স করলো আজকে বিয়ে করতে।সাথে আরিফিন ভাইয়া ও।এ না আমাকে ভালোবাসে?যারা কালকে পছন্দ করছিল না আজকে তারাই বিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।কি এমন বলেছে ক্যাপ্টেন সাহেব উনাদের? আমাকে বাসায় ডেকে নিয়ে আদর করে সবাই বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি হতে বললো। কিন্তু আমি আর একটু সময় চাই বলতেই উনি হুংকার দিয়ে উঠলেন।আজ বিয়ে না হলে উনার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
গাড়ি ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ায় ঢুকলো।উনার মেসে এসেছি আমরা।মেসের সামনে গাড়ি থামলো। ক্যাপ্টেন সাহেব গাড়ি থেকে নেমে উনার ব্যাগ নিয়ে মেসের দিকে চলে গেলেন।ব্যাগ রেখে আবার ফিরে আসবেন। আমরা চুপচাপ গাড়িতে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন সাহেব ফিরে এলেন।এসে আমাদের নামতে বললেন। আমি দরজা খুলে নামলাম।এই মেস একটু ফাঁকা জায়গায়।রাতের ক্যান্টনমেন্ট বেশি সুন্দর সবসময় শুনেছি।আজ নিজ চোখে দেখছি।উনার বন্ধু আমি আর ক্যাপ্টেন সাহেব রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চে এসে বসলাম। আমার পাশে ক্যাপ্টেন সাহেব উনার পাশে উনার বন্ধু।
আমরা চুপচাপ বসে আছি। কারোর মুখে কোন কথা নেই। অনেক্ষণ পর ক্যাপ্টেন সাহেব বললেন,
‘ এভাবে বিয়ে করার জন্য আমি স্যরি।তার চেয়েও বেশি স্যরি বিয়ের পর তোমাকে আমার সময় দিতে পারব না বলে। আমার কালকেই ট্রেনিং এ যেতে হবে। এবছর হার্ড ট্রেনিং। বান্দরবানে।কি কি করা হবে তা সেখানে গিয়েই নির্ধারণ করা হবে।আহি,
আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য নিজেকে অনেক লো মেন্টালিটির একজনের মত পরিচয় দিয়েছি। এতদিন যা যা হয়েছে সবগুলো আমার তাল থেকে বের হয়ে গেছে তার জন্য আমি স্যরি। আমাকে ভুল বুঝো না। আমার লাইফস্টাইল এই ভুল ধারণা থেকে সহজ ভেবো না। আর তুমি যেই ঘোরে আছো তা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করো।আমি হেল্প করতাম যদি তোমার কাছে থাকার সুযোগ হত। কিন্তু কাল খুব সকালেই আমাকে ইউনিট এর আর সবার সাথে বের হতে হবে।সব প্রিপারেশন আমাকে রাতের মধ্যে ই নিতে হবে।তবে তুমি আমার সাথে কানেক্ট থাকবা।বলে উনি উনার পকেট থেকে একটা ফোন বের করলেন। আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
‘ এটা আমার সেকেন্ড ফোন।মেসে থাকে সবসময়। খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ছাড়া এটার নাম্বার কেউ জানেনা। আমার অফিসিয়াল নাম্বার এটাতে সেইভ আছে অর্ক নামে।কল দিয়ো,আমি দিলে রিসিভ করবে। মাঝেমধ্যে যদি আমাকে না পাও তাহলে ভেবে নিবে আমি ট্রেনিং এ বা আউট অফ নেটওয়ার্ক এলাকায়।’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললেন,
‘ আহি এখন বাসায় যাও তুমি। আমার সময় নেই বেশি একটা। আঙ্কেল আন্টি তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন। বলেছিলাম তো বেশিক্ষণ থাকবে না। নিজের খেয়াল রাখবে।একটু সবকিছু বুঝার চেষ্টা করো। বিবেক দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করো। কেউ অকারণে কারোর জন্য পাগল হয় না।বাদ দাও, তুমি ঠিকভাবে পড়াশোনা কন্টিনিউ করো।এক্সামের আর বেশি সময় নেই মেবি। ভালো করে পড়ে একটা গুড রেজাল্ট করো।আর হ্যা, তোমার নানার পরিবারের সবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকবে। কোনো রকম ইনটারেকশন করবে না।ওরা তোমার জন্য ভালো না এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে তত বেশি ভালো। আমি বিশেষ কিছু বলার মত সময় নেই এখন।যাও বাসায় যাও। সাবধানে থেকো।
আফিফ। ওকে বাসায় নামিয়ে দিবি।’
ক্যাপ্টেন সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। আমি ফোন নিয়ে গাড়ির দিকে এগোলাম।উনারা নিজেরা কিছু কথা বলে গাড়ির কাছে আসলেন। আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছি।আফিফ মানে উনার বন্ধু ড্রাইভারের সিটে বসলো। ক্যাপ্টেন সাহেব আমার এদিকের দরজা লাগিয়ে দিলেন। এরপর বললেন,
‘ আমার বউ যেন আমারই থাকে।’
গাড়ি স্টার্ট নিলো। ক্যাপ্টেন সাহেব কে আমি একবার গ্লাসের ফাঁক দিয়ে দেখলাম। এরপর সোজা হয়ে বসে রইলাম।গাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে চললো।
পুরো রাস্তায় আমাদের দুজনের একজন ও কথা বলিনি। গেইটের সামনে এসে আফিফ সাহেব হর্ন দিলেন। এরপর শুধু বললেন,
‘ আমার বন্ধু একবার ভালোবেসে ঠকেছে।এবার ওকে ঠকাইয়েন না।কেন এটা বলেছি আপনি খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন। যান, আপনার বাবা গেইট খুলে দিয়েছে।’
আমি এক পলক উনার দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। আমি নামার পর উনি চলে গেলেন।বাবা গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি কিছু না বলে শুধু ভিতরে ঢুকলাম।বাবা গেইট লাগিয়ে দিয়ে পিছু পিছু এলেন।মা বসার রুমে সোফায় হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। আমাকে দেখে উঠলেন।কাছে এসে মুখে কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ ঠিক আছিস?জামাই ক্যান্টনমেন্টে?’
আমি মায়ের দিকে তাকালাম।কত তাড়াতাড়ি জামাই বলে মেনে নিয়েছে।মাথা নাড়লাম শুধু। এরপর মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে আসলাম।আজকে মুন আমার রুমে শোয় নি। দরজা লক করে দিলাম।
দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছি অনেকক্ষন ধরে। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম রাত দুটো প্রায়। ঘুম আসছে না এত রাতেও।আসার পর ফ্রেশ হয়ে বসেছি। এখনও অমনই। শুধু এই কয়দিনে যা যা ঘটলো আমার সাথে সেসবই ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে আমার। আচ্ছা আমি কি সত্যিই এতটা নির্বোধ?প্রথমে আরিফিন ভাইয়া এরপর ইফাদ ভাইয়া আর এখন ক্যাপ্টেন সাহেব।তিনজনই আমাকে ইশারা ইঙ্গিতে নিজেকে ঠিক করতে বুঝিয়ে দিলো। আমি কি কিছুই বুঝি না আসলেই?
Love Triangle part 19
আমি তো শুধু সবার কথা শুনি। কাউকে অমান্য করিনা।এটাই কি সমস্যার মূল কারণ? আমি আর নিতে পারছি না। এতকিছু হজম হচ্ছে না।তার উপর এভাবে বিয়ে হয়ে গেল।বিয়ে তো না যেন পুতুল খেলা। আচ্ছা? আরিফিন ভাইয়া না আমাকে ভালোবাসে বলছিল? তাহলে তখন ক্যাপ্টেন সাহেব কে বিয়ে করার জন্য আমাকে এত জোর করছিল কেন? নাকি আমাকে ভালোবাসার নাটক করলো?ইফাদ ভাইয়া কি আমাকে মিথ্যা বললো আজ?এই যে এত আদর,এত কেয়ার, এতকিছু সবকিছুই কি এতটাই ঠুনকো যে একজন বাইরের মানুষ কি বললো না বললো তাতে ওদের সবকিছু হাওয়া হয়ে গেছে। এমন কেন হলো আমার সাথে?