Love Triangle part 22

Love Triangle part 22
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

‘ এত রেগে যাচ্ছিস কেনো?কি হয়েছে?’
‘ কিছু না।’
ঐশী চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিলো। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে এরপর শান্ত মেজাজে বললো,
‘ ভাইয়ার ট্রেনিং শেষ হবে কবে?’
‘ খুব সম্ভবত এক মাস চলবে।’
‘ আর এই একমাস তুই বাসায় থাকবি? আন্টির কাছে?’
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।ও কারণ জিজ্ঞেস করলে বললাম,
‘ উনার বাবা-মা আমাকে মেনে নেয়নি ঐশী। আমাকে উনাদের পছন্দ হয়নি।বিয়েটা শুধুমাত্র আমার পরিবার,নানু বাড়ির লোকজনের উপস্থিতিতে হয়েছে।’
ঐশী কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর কি যেন ভেবে বললো,
‘ তার মানে এখন তুই তোর মা আর নানা বাড়ির লোকজনের সাথেই থাকবি। তোদের বাসায় আর কি আর ওরা তো যোগাযোগ রাখবেই।তাই না?’

‘ হু।’
ঐশী সাথে সাথে বললো,
‘ আমি থাকব তোর সাথে। তোদের বাসায়।’
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।এই মেয়ে বলে কি?যে নিজের রুম আর বেড ছাড়া অনর কোথাও এক মুহূর্ত ও থাকতে পারে না সে নাকি আমাদের বাসায় থাকবে! আমি অবাক হয়েই বললাম,
‘ তুই? আমাদের বাসায়?’
‘ হ।কেন কোনো সমস্যা আছে?নাকি নতুন বিবাহ করিয়াছেন বলে আমাকে আপনার সাথে থাকিতে দিবেন না?’
‘ আরে কি বলিস।থাকবি। সমস্যা নেই। আন্টির থেকে পারমিশন নে,ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে আয়।’
‘ প্যারা নাই। আম্মু আমাকে কিছু বলবে না।আর ব্যাগ আম্মু কে বললে ভাইয়া কে দিয়ে পাঠিয়ে দিবে। রুটিন জেনে চল তোদের বাসায় যাবো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কফি এখনও আসেনি।ও উঠে পড়লো।ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে কি বলে আসলো।এসে বললো চল।ঐশী রগচটা ধরনের মেয়ে।ওকে ঘাটিয়ে লাভ নেই। আমি অগত্যা চুপচাপ ওর সাথে চললাম।
চারটা বাজে।বাসায় এসেছি দশ মিনিট হচ্ছে। আরো দুই মাস পর পরীক্ষা।এটা জানার পর দুজনেই এখানে ওখানে ঘুরা ঘুরি করে বাসায় আসলাম।মা আমাদের দুজনকে দেখে খুব খুশিই হলেন।ঐশী কে ওর বার্থডের সময় থেকে চিনেন। কল দিলে ঘন্টার আগে ওদের কথাবার্তা ফুরায় না।সেই ঐশী এখন আমাদের সাথে বাসায় দীর্ঘদিন থাকবে। এতে মা ও কোনো আপত্তি করলো না। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়েছি।ঐশী ও শুয়েছে। দুপুরে একটা রেস্টুরেন্টে খেয়েছি সেজন্য খাওয়ার ঝামেলা নেই। আমার ফোনটা ঐশীর হাতে।সে ক্যাপ্টেন সাহেবের ছবি দেখছিল।আর প্রশংসা করছিলো। কিছুক্ষণ পর ফোন আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললো,

‘ ভাইয়া দেখতে দারুণ কিন্তু। আর্মি অফিসার রা এত হ্যান্ডসাম হয় কেন রে?’
‘ আমি কি জানি?তুই গিয়ে জিজ্ঞেস কর।’
‘ করব।সময় হোক।’
আমি চুপ করে রইলাম।ঐশী নিজে নিজেই কিছুক্ষণ পর বললো,
‘ আমি তোর সাথে এই পুরো এক মাস থাকব। আমি যেভাবে বলব সেভাবেই চলবি, যা বলব তাই করবি। নাহলে ভাইয়ার গু/লি দিয়ে তোকে উড়িয়ে দিব এই বলে রাখছি।’
আমি ওর দিকে তাকালাম।ও আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে কথাগুলো বলেছে।বেচারি সিরিয়াস মুডে আছে। আমি অমত না করে বললাম,
‘ ঠিক আছে মেরি মা।তোর কথা অনুযায়ী ই চলব। আচ্ছা?ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে কতক্ষন লাগে রে? ক্যাপ্টেন সাহেব এখনও কল দিলেন না তো।’
‘ আরে এইরকম সময়ই লাগে। সেখানে গিয়ে একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে না?সব গুছিয়ে নিক এরপর হয়ত ফ্রি টাইমে কল দিবে।এত প্যারা নিস না।তুই তো আবার বিয়েই করতে চাইছিলি না। তাহলে এত চিন্তা হচ্ছে কেন?’
আমি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম,
‘ ঐশী!’

রাত দশটা পার হয়েছে।আমরা রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে বসেছি। এমন সময় ক্যাপ্টেন সাহেব কল দিলেন।সেই সকালের পর একবারও কল দেননি। আমি হঠাৎ কল পেয়ে কি করব ভাবতে ভাবতেই কল কেটে গেল।ঐশী ধমক দিয়ে বললো বান্দর রিসিভ করলি না কেন? আমি কিছু বলার আগেই আবার কল! তড়িঘড়ি করে রিসিভ করলাম। এক্সাইটেড হয়ে বললাম,
‘ হ্যা হ্যালো!’
‘ কেমন আছো ম্যাডাম?’
‘ ভালো।আপনি না বান্দরবান পৌঁছে ই কল দেন?কই দিলেন না যে?’
‘ আসলে হয়েছে কি!আমরা আসার পর এখানে টেন্ট আর অন্যান্য কাজ করতে গুছিয়ে নিতে সময় লেগে গেছে। মাত্র গোসল করে খেয়ে এসেছি।একটু ফ্রি হয়ে কল দিলাম তোমাকে। ব্যাপার কি?আমার কলের অপেক্ষা করছিলে বুঝি?’
‘ না। অপেক্ষা করব কেন?আসলে বলেছিলেন তো ওইজন্য ই ভাবলাম আর কি জিজ্ঞেস করি।’

‘ আচ্ছা?’
‘ হু।’
‘ তা আপনি কি করছেন ম্যাডাম?’
‘ ঐশীর সাথে বসে আছি। আপনি?’
‘ আমি টেন্টের বাইরে।ঐশী……… তোমার ফ্রেন্ড না?’
আমি একটু চুপ থেকে বললাম,
‘ হু।……আপনি জানেন কিভাবে? এই রাতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন…… ঠান্ডা লাগছে না?’
ওপাশ থেকে ক্যাপ্টেন সাহেবের হাসির শব্দ শুনলাম। কিছুক্ষণ পর বললেন,
‘ আমাদের ঠান্ডা গরমের কথা ভাবলে চলে না ম্যাডাম। আচ্ছা এখন আমি রাখি কেমন? জুনিয়র দের সাথে মিটিং আছে একটু।ওরা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।’

‘ আচ্ছা।’
আমি কল কেটে দিলাম আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।ঐশী এতক্ষণ ধরে চুপচাপ আমাদের কথাবার্তা শুনছিলো।উনার কল স্পিকারে দেওয়া তাই উনার কথাও শুনেছে।আমি কল কেটে দেওয়ার পর বললো,
‘ তোকে কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হয় তা শিখাতে হবে বুঝছিস?ভাই নিজের হাজবেন্ড এর সাথে এইভাবে ফর্মাল কথাবার্তা কে বলে? মানলাম কালকেই বিয়ে হয়েছে কিন্তু ও তোর হাজবেন্ড না?ফিল করতে হবে না সম্পর্ক টা?উনি ফর্মাল হয়ে বলছেন মানা যায় কারণ অনেক মানুষ এখন সেখানে। জুনিয়র,ব্যাচমেট আছে। ওদের সামনে লুতুপুতু প্রেম কাহিনী তো করবে না। কিন্তু তুই মহিলা বন্ধ রুমে তোর বান্ধবীর সামনে রোবটিক কথাবার্তা বলছিস।’
আমি ফোন রেখে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। এরপর কম্বল গায়ে নিতে নিতে বললাম,

‘ বিয়ে‌ হয়েছে মাত্র একদিন।আর কি কথা বলব?’
ঐশী ও শুয়েছে। কম্বল মুড়ি দিয়ে বললো,
‘ একদিন হোক বা এক ঘন্টা। অন্তত গুড নাইট,টেইক কেয়ার বলতে পারতি তুই।’
‘ এতকিছু জানিনা আমি।’
‘ সেজন্য ই ইয়া বড় বড় বা/শ খাও।খেয়ে শখ মিটেনি, আরও চাইতেছো।’
আমি নরম গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
‘ এমন করছিস কেন? এরপর থেকে শিখিয়ে দিস কিভাবে কি বলব। আর উনি তো কিছু মনে করবেন না। জানেন আমি কেমন।’

Love Triangle part 21

ঐশী কতক্ষন আর কিছু বললো না। চুপচাপ রইলো। রুমের লাইট অফ। নীরবতা বিরাজ করছে। চুপচাপ থাকতে থাকতে ঘুমে চোখ লেগে এসেছে এমন সময় ঐশীর আওয়াজ পেলাম,
‘ সবকিছু যদি নিজে যেমন ভাবছি সেরকম হতো তাহলে কি আর যার জন্য মনের গহীনে এত এত ভালোবাসা,মায়া জন্মেছে তার প্রতি কেউ কখনও বিরক্ত হতো?’

Love Triangle part 23