আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২৫
অবন্তিকা তৃপ্তি
ধ্রুবর জ্ঞান ফিরেছে; এখন টুকটাক কথাও বলতে পারছে। অদিতি এতক্ষণ ধ্রুবর ওই রুমটার সামনে চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল; জানালার ওপাশে বেডে বিরক্ত ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা ওই ছেলেকে একনজর দেখার জন্যে। এখন এক পা অবধি নড়েনি জায়গা থেকে। ধ্রুবর জ্ঞান ফিরতেই থ্রি-ইডিয়েটসের গ্যাং দৌড়ে ধ্রুবর রুমে ঢুকে পরেছে। ধ্রুব আর ওদের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা চলছে, যা জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছে অদিতি। ধ্রুবর কপালে ব্যান্ডেজ; ওর মুখ-চোখ ভয়াবহ গম্ভীর। বন্ধুদের কোনো কথার বিপরীতে ধ্রুব শুধু ‘হু-হা’ তে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। অদিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে; এত বড় এক্সিডেন্ট করেও এই ছেলের মাথাভর্তি রাগ এখনও থেকে গেছে; নড়চড় হয়নি একটুও।
সৌরভ ইয়ামিন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন। মূলত তিনি সবার আগেই ধ্রুবর রুমে ঢুকতে চেয়েছেন; কিন্তু সাহস হয়নি। ছেলে আবার হাসপাতালে ভর্তি মানুষের সামনে অপমান করে বসলে? লজ্জায় মাথাটা কাটা যাবে তার। সৌরভ ইয়ামিন ওপাশে আসতেই; অদিতি ওড়নার আড়ালে মুখ লুকিয়ে ফেললো। উনি চোখের আড়াল হতেই; মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে অদিতি ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো; জানালা দিয়েই যতটুকু ধ্রুবকে দেখা যাচ্ছিল সেটুকু দেখেই যেন তার তৃষ্ণা নিবারণ হচ্ছিল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ধ্রুব কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ করে জানালার বাইরে তাকাল; অদূরে অদিতিকে দেখে ও বিস্ময় নিয়ে আবারও ভালোভাবে তাকাল। ওটা…ওটা অদিতিই তো! ও…ও এখানে কী করছে? রাজন সেই কখন থেকে বকবক করছে———-‘ভাই, আমার মনে হচ্ছে এই এক্সিডেন্ট প্ল্যানমাফিক হইছে। আপনি একবার জাস্ট বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখতাসি ব্যাপা——’
‘অদিতি এখানে কী করছে?’ —— ধ্রুব হাত উঁচিয়ে রাজনকে থামিয়ে দিয়ে জানালার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।
রাজন, সুমন, ইমন ধ্রুবর দেখাদেখি জানালার দিকে তাকাল; অদিতি ওদের তাকানো দেখে চমকে উঠে দ্রুত মুখ লুকিয়ে অন্যপাশে তাকাল। ধ্রুব যেভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, যেকোনো মুহূর্তে খেয়ে ফেলবে যেন। ইমন চোখ সরালো; ধ্রুবর দিকে ফিরে অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বরে বললো——-—‘আমি এনেছি।’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেলল; ইমনের ছেলেমানুষিতে চুড়ান্ত বিরক্ত হয়ে বললো—-—‘ওকে কেন ডেকেছিস? জানিস ওর পরিবারের কথা; তারপরেও ডেকে আনলি। ওরা যদি কিছু সন্দেহ করে?’
ইমন ধ্রুবর এখনো অদিতির প্রতি এত আহ্লাদিপনায় রেগে গেল; চেতে উঠে বললো——‘করলে করবে। তোর এত চিন্তা কেন? অদিতিকে এনেছি; ভালোয় ভালোয় নিজেদের মধ্যের ঝামেলা মিটিয়ে নে। অনেক হয়েছে স্যাক্রিফাইস-ব্যাক্রিফাইস। ন্যাকামো না করে দু’জনে মিলমিশ কর। আমরা বাইরে যাচ্ছি; ওকে পাঠাচ্ছি রুমে।’
ধ্রুব চোখ উল্টে হতাশ শ্বাস ফেলল; ঘাড় সামান্য কাত করে ইমনের দিকে চেয়ে ফ্যাক্ট বোঝানোর চেষ্টা করলো ——‘এসব এত সহজ না, ওর পরিবার——’
ইমন এবার রেগে গেল। ধ্রুবর হতাশ-হতাশ মুখের দিকে যারপরনাই অতিষ্ট হয়ে বললো——‘বা/লের পরিবার আমার। আমরা কি বেজন্মা নাকি? ওর এক পরিবারের অজুহাত আছে; তোর ফিলিংস; তোর আবেগ; তোর সবকিছুই ওর কাছে কিছু না?’
ধ্রুব ভ্রু বাকিয়ে; জানালার দিকে একবার চেয়ে নরম কণ্ঠে বলল——‘আমি ওকে বুঝি ইমন। ও মুখে বলে না ঠিকই; কিন্তু ওর মনটা আমি চিনি।’
ইমন ব্যঙ্গ করে; খিঁচিয়ে-খিঁচিয়ে বললো—-—‘হ্যাঁ, খুব চিনে ফেলেছ ওর মন; ন্যাকামোটা না এবার দুজনেই বাদ দে। ওকে রুমে পাঠাচ্ছি; কথা বল।এন্ড আজকেই মিটমাট কর সব।’
ধ্রুব কিছু বলবে, তার আগেই ইমন আর ওর কথা শোনার ধৈর্য্য রাখলো না। বাকিদের নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। অদিতি ওদের রুম থেকে বেরুতে দেখে এগিয়ে গেল। ইমন বাকিদের ইশারা করল দূরে গিয়ে দাঁড়াতে। অদিতি ইমনের দিকে চেয়ে ব্যাকুল গলায় বলল——‘সে ঠিক আছে ভাইয়া? কোনো কমপ্লিকেশন আছে এখন আর?’
ইমন অদিতির ব্যাকুল গলা দেখে মনেমনে না চাইতেও হেসে ফেলল! ধ্রুব ঠিকই বলে; এই মেয়ের মন চেনা যে কারো পক্ষেই সম্ভব! কি সুইট; সরল-সোজা একটা মেয়ে। অথচ এর ভাগ্যে জুটে গেছে; ধ্রুবর ন্যায় রাগি-বদমেজাজি এক ছেলে। আর যাই বলুক না কেন; এই মেয়ের কপালে দুঃখ আছে সামনে।
তবুও দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করতে; মাঝখানে মধ্যম লোক হিসেবে ইমন কাজ করলো; বলল——‘শোনো অদিতি। আজ ধ্রুবর বন্ধু হয়ে নয়; বরং তোমার ভাই হিসেবে একটা পরামর্শ দিতে চাইছি। দুজন দুজনকে অনেক জ্বালিয়ে খেয়েছো। এবার এসব শেষ করো। ধ্রুব জীবনে কোনোদিন ভালোবাসা পায়নি; একা একা থেকেছে সারাজীবন। কাউকে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে আমরা ওকে কখনো দেখিনি। কিন্তু তুমি আসার পর ধ্রুব বদলেছে। বলবো না, ভালো হয়ে গেছে। তবে আমাদের চোখে ও অনেকটা বদলেছে। যে ছেলে কোনোদিন কাউকে নিজের চাওয়াটুকু খুলে বলেনি; সে তোমার সামনে নিজেকে জাহির করেছে; খোলা বই হিসেবে মেলে দিয়েছে নিজেকে। তো তোমার কি উচিত না, এই ছেলেটাকে আগলে রাখা? পরিবারকে দোহাই দিও না; তোমার পরিবারকে আমরা বিয়ের সময় সবাই মানিয়ে নেব; চিল! তোমার বাবার সম্মান সেইফ থাকবে; চিন্তা করো না এটা নিয়ে।’
অদিতি শুনে গেল কথাগুলো; ইমন ওর ওর চিন্তিত মুখটার শিকে চেয়ে সামান্য হাসল! কাজ কিছুটা হয়ে গেছে! ইমন মুখ আবার গম্ভীর করে বললো———‘এখন যাও; ধ্রুবর সঙ্গে কথা বল। ওর সঙ্গে নিজের ফিলিংস শেয়ার করো। ছেলেটাকে আল্লাহর ওয়াস্তে এবার একটু শান্তি দাও; অদিতি।’
অদিতি পুরো কথাটা শুনে মাথা নামিয়ে ফেলল। ওকে কেন সবাই দোষ দিচ্ছে? অদিতি কি করেছে? সে বলেছে ধ্রুবকে তার পেছনে ছুটতে? বরং কখনো ধ্রুবকে পজিটিভ ইঙ্গিত দেয়নি ও। তারপরও সবার সকল কথা মাথা পেতে নিচ্ছে ও। কারণ হচ্ছে আজকে যা ঘটেছে ধ্রুবর সঙ্গে, তার কিছুটা দায়ভার অদিতিরও! ও ছোট করে উত্তর দিল——‘আমি ভেবে দেখছি ভাইয়া।’
ইমন শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তার। শেষ মুহূর্তে এই মেয়ে তাদের এক সকল চেষ্টাই ভেস্তে দিতে পারে; বলা যায় না। ইমন বলল——‘আংকেল এখানে নেই। আমি উনাকে আধা ঘণ্টা আটকে রাখছি। তুমি যাও কথা বলো ওর সঙ্গে।’
অদিতি মাথাটা হালকা নাড়িয়ে সায় দিল। ইমন ধ্রুবর রুমের দরজা খুলে অদিতির ভেতরে যাওয়ার ইশারা করে। অদিতি রুমের সামনে কম্পিত পায়ে এসে দাঁড়াল। মাথাটা নামানো ওর; ধ্রুব তীক্ষ্ণ চোখে বিছানায় শুয়ে অদিতিকে দেখে যাচ্ছে। সরল ওই মুখটা আজ বড্ড বিচলিত; দ্বিধান্বিত। ধ্রুব সেভাবেই বসে থাকল; ইমন অদিতিকে ভেতরে ঢুকিয়ে ধ্রুবকে পেছন থেকে ইশারায় বলল——‘অল দ্য বেস্ট!’
ধ্রুব ইমনের থেকে চোখ সরিয়ে আবার অদিতির দিকে তাকাল। অদিতি ধীর পায়ে রুমে ঢুকল। ততক্ষণে ইমন দরজা লাগিয়ে বেরিয়ে গেছে।
অদিতি আশেপাশে চেয়ে দেখল; ভুলেও ধ্রুবর দিকে তাকাচ্ছে না।নাহলে আজ ধ্রুবর এহেন করুন অবস্থা দেখে অদিতি এখানেই কেঁদে ফেলবে। ও আস্তে করে হেঁটে ধ্রুবর পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ধ্রুব কোনো কথা বলল না; বরং দেখতে লাগল কিভাবে ধীরে ধীরে অদিতি একটু একটু করে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে আসছে। অদিতি ধ্রুবর থেকে বেশ দূরে এসে থামল; ধ্রুবর দিকে এতক্ষণে মাথা তুলে চেয়ে ওর ব্যান্ডেজটা একবার কাতর চোখে দেখল। ব্যান্ডেজ দেখতে দেখতে তারপর ধীর গলায় প্রশ্ন করলো —‘ব্যথা আছে এখনো ?’
ধ্রুব ওর আতঙ্কভরা; ব্যথাতুর মুখের দিকে চেয়ে ঠান্ডা গলায় উত্তর দিল——‘ভীষণ পেইন হচ্ছে।’
অদিতি সঙ্গে সঙ্গে থমকে গেল। মাথা তুলে ব্যাকুল হয়ে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে গেল; অস্থির হয়ে উঠল জেন মুহূর্তেই—-—‘ডাক্তার ডাকব? ডাক্তারের নাম কি? কোন ফ্লোরে গেলে পাব?’
অদিতির চিন্তা-গুলো আজও ধ্রুবকে শান্তি দিচ্ছে ভীষণ! ধ্রুব ওর দিকে চেয়ে হালকা স্বরে বলল——‘দূরে থেকে দেখলে ব্যথা ফিল করা যায় না; অদিতি। তার জন্যে কাছে এসে বসা লাগে, আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া লাগে; এন্ড চোখ চোখ রেখে কথা বলা লাগে।’
অদিতি তাকিয়ে রইলো; গলা কাঁপছে প্রায়। ও ধ্রুবর কথামতো আস্তে করে ওর পাশে বিছানায় বসল। ধ্রুব অদিতির দিকে চেয়ে রইল। অদিতি দোনোমনা করছে ভীষণ। ধ্রুব দেখল; ওর হাত কাঁপছে। অনবরত ঘষছে নিজের দুহাত; ঘামছে ভীষণ। ধ্রুব সেটা নজরে রাখলো; স্বাভাবিক গলায় বলল——‘যা বলার আছে বলে ফেলো; আমি শুনব।’
অদিতি উত্তর দিল না।; অনেকক্ষণ হলো। ধ্রুব চোখ উল্টে এ পর্যায়ে হতাশ শ্বাস ফেলল। সব আশার উপর এই মেয়ে বারবার পানি ফেলে দিচ্ছে।সে চোখ-দুটো অদিতির দিকে সরিয়ে অন্যপাশে চেয়ে বিরক্ত-ভঙ্গিতে নড়েচড়ে বলল——‘বাদ দাও; বলা লাগবে না। ডাক্তার ডাকো, আমার পেইন হচ্ছে মাথায়।’
অদিতি অসহায় চোখে তাকালো ধ্রুবর দিকে চাইল। ও তো বলতে চায়; যা ধ্রুব কের মুখে শুনতে চায়। কিন্তু জীবনে এসব কথা অদিতির কাউকে বলেনি; না বলতে শুনেছে।কিভাবে তুলে এসব কথা; ও জানেনা। ধ্রুব সেদিন এই কথা-গুলো এত স্পষ্ট-সরাসরি কিভাবে বলে ফেলেছিল?ও কেন পারছে না বলতে?
ধ্রুব অদিতির বিচলিত এলোমেলো চাহনি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল——‘তুমি নিজে যেদিন চাইবে এসব; সেদিন বলো। কারোর প্রেশারে এসে বলাটা জাস্ট ইউজলেস। আমি কিছু মনে করছি না; তুমি সময় নাও; থাকো নিজের মতো।’
অদিতি এবার অস্থির হয়ে; ব্যাকুল গলায় হঠাৎ বলে ফেললো——‘আমি চাইছি।’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকালো; বললো ——‘কি চাইছো?’
অদিতি নিচু গলায় উত্তর দিল——‘আপনি যা চাইছেন।’
ধ্রুব এতক্ষণে মনের ভেতর স্বস্তি পেলো যেন; মজা নিচ্ছে অদিতির এসব কাজে। তবুও মুখে গম্ভীর-রাগী ভাব ধরে রেখে জিজ্ঞেস করল——‘আমি কি চাইছি?’
অদিতি ভ্রু কুঁচকে; অধৈর্য হয়ে বলল——‘জানেন না আপনি? এতদিন কি চাইছিলেন?’
ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে, ঠোঁটে হালকা হাসি রেখে অবুঝের মতো করে বলল——‘কি চেয়েছি আমি এতদিন?’
অদিতি এ যাত্রায় বিরক্ত হলো ভীষণ; ইচ্ছে করে এগুলা করছে ওর সঙ্গে! ও চুড়ান্ত বিরক্ত হয়ে বলতে চাইল——‘কি চেয়েছেন জানেন না আপনি?’
ধ্রুব মিটমিট হেসে ফেলল অদিতির আচরণে। পরপর অদিতি ওর দিকে তাকাতেই মুখটা আবার গম্ভীর করে, বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে বলল——‘উঁহু; অ্যাই ডোন্ট নো তুমি কিসের কথা বলছো! তুমি মুখে বলো; কি চেয়েছি আমি?’
অদিতি এবার চূড়ান্ত বিরক্ত হয়ে উঠল।এমনিতেই এসব কথা মুখে বলার মতো না; তারউপর ধ্রুব এভাবে মজা নিচ্ছে? ও মুখটা অন্যপাশে সরিয়ে ত্যাড়া গলায় বলল——‘লাগবে না বলা। বাদ দিন।’
ধ্রুব এবার সিরিয়াস হল। অদিতির ঘুরিয়ে রাখা মুখটার দিকে অপলক চেয়ে ডাকল——‘অদিতি।’
অদিতি ওর দিকে তাকাল; চোখ-গুলো টলমল করছিল ওর। ধ্রুব এবার শান্ত গলায় বললো———-‘আমি সেদিন যা বলেছি; আমি সেসব স্পষ্ট গলায় সরাসরি বলেছি। যেন তুমি বুঝতে পারো, আমি যা বলছি সেটা নিয়ে আমি সিরিয়াস। তাই আজ আমিও চাইব, আমি যাকে নিজের জীবনের সিরিয়াস কথা-গুলো বলেছি, ও তার জীবনের কথাগুলো সিরিয়াসভাবেই আমাকে বলুক; রাইট?’
অদিতি ঢোক গিলল; চোখটা নামিয়ে নিয়ে বলল——‘আমার ভয় হচ্ছে ভীষণ! যদি…যদি——’
ধ্রুব থামিয়ে দিয়ে বলল——‘সমস্ত ঝড়-ঝাপটা আমরা দু’জনে একসঙ্গে ফাইট করব, অদিতি। কসম, অ্যাই উইল নেভার লিভ ই্যয়ু! অ্যাই উইল বি দেয়ার ফর ইউ; ফরএভার এন্ড ফরএভার।’
অদিতি তাকিয়ে রইল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে আবারো বলল——‘তুমি এখন নিজের মনের কথা বলার সাহস পাচ্ছো না; বাকিটা পথ তাহলে আমাদের সহজ কিভাবে হবে, অদিতি?’
অদিতি ঢোক গিলে নিল। ওদের কথা বলার মধ্যেও ডক্টর ভেতরে এলেন।ডক্টরকে দেখে অদিতি দাড়িয়ে গেল বেড থেকে: ধ্রুবও নড়েচড়ে বসলো। ডক্টর ধ্রুবর প্রেসক্রিপশন দেখতে দেখে হেসে হেসে বলল ——-‘গার্লফ্রেন্ড নাকি ধ্রুব?’
ধ্রুবও ডক্টরে মজার সঙ্গে তাল মিলিয়ে; অদিতির দিকে চেয়ে মিটমিট করে হেসে বলল ——-‘সেটারই প্রিপারেশন চলছে আংকেল।’
ডক্টর অদিতির দিকে চেয়ে দেখল; লজ্জায় মুখ অন্যপাশে সরিয়ে ফেলল ও। ডক্টর হাসল ধ্রুবর দিকে চেয়ে; বলল ———‘নাইস চয়েজ। আমার আশীর্বাদ আছে তোমার সঙ্গে, চালিয়ে যাও; সফল একদিন হবেই। বেস্ট অফ লাক।’
ধ্রুব হেসে উত্তর দিল——‘থ্যাংক ইউ আংকেল।’
ডাক্তার চলে গেল। অদিতি এবার মুখ খুললো; ধ্রুবর দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলল——‘ডাক্তারের সঙ্গে এভাবে কথা বললেন কেন? কী ভাবলেন উনি?’
ধ্রুব অদিতির হাত টেনে ওকে নিজের পাশটায় বসিয়ে দিয়ে বলল——‘যা সত্যি তাই বললাম।’
অদিতি ভ্রু কুঁচকে বলল——‘আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড?’
ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে বলল——‘নও?’
অদিতি বলল——‘হইনি এখনো।’
ধ্রুব গা-ছাড়া ভঙ্গিতে অলসভাবে বললো—-—‘হতে কতক্ষণ? এই যে, এক্ষুনি হয়ে যাবে। দেখবে কিভাবে?’
অদিতি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ওর হাত টেনে নিয়ে ওর হাতের পিঠে আলতো করে চুমু খেল;চমকে উঠল মেয়েটা। ধ্রুব ওর বড়বড় চোখ-দুখানার দিকে চেয়ে নরম স্বরে বলল——‘ভালোবাসা হয়নি এখনও?’
অদিতির গা মুচড়ে উঠল যেন; ও টেনে হাত সরিয়ে নিতে চাইল। ধ্রুব ছাড়লো না। হাতের পিঠে আরেকবার গরম-নরম চুমু খেয়ে বলল——‘হয়নি এখনো ভালোবাসা?’
অদিতি আর এবার হাত সরাল না; লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল। ধ্রুব ওর নামিয়ে রাখা চোখের দিকে চেয়ে চেয়ে হাতের পিঠে আবারো আরো একটা চুমু খেল; এবার ভীষণ গভীরভাবে। অদিতির সারা গা যেন ওই এক ছুঁটে শিউরে উঠল। চোখ-মুখ খিঁচে ফেলেছে ও। ধ্রুব এবার মারাত্মক হাস্কি গলায় জিজ্ঞেস করল——‘ভালোবাসা এখনো হচ্ছে না?’
‘ভালোবাসি ধ্রুব!’——অদিতি একদম আচমকা চোখ-মুখ কুঁচকে বলে ফেলল!
ধ্রুব অবাক হয়ে মাথা তুলে বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো অদিতির দিকে! ওর কানকে যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে; বিস্ময় নিয়ে হতবাক গলায় বলল——‘সরি?’
অদিতি এবার ধীরে-ধীরে চোখ খুলে তাকাল; ওর চোখ-গুলো টলমলে; দীঘির জলের ন্যায় শান্ত আজ! অদিতি ধ্রুবর হাতটা চেপে ধরে; এলোমেলো শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল——‘ভালোবাসি; ভা…ভালোবাসি!’
ধ্রুব মনে হচ্ছে; অদিতি হয়তো ঘোরের মধ্যে কথাটা বলে ফেলেছে। ও আবার শিউর হতে জিজ্ঞেস করলো——‘ কাকে?’
অদিতি ধ্রুবর চোখে চোখ রাখল; স্পষ্ট গলায় বলল ——-‘আপনাকে!’
ধ্রুব ওর হাতটা ছেড়ে দিল আচমকা। অদিতি কান্নায় ভেঙে পরে বলল ———‘আমি নিজেকে ধরে কেন রাখতে পারলাম না ধ্রুব! কেন আমাকে এতটা পাগল করে দিলেন?’
ধ্রুবর হা হয়ে থাকা মুখ হঠাৎ করেই হাসি দিয়ে ভরে উঠল। ঠোঁটে হাসি রেখেই ও বুকের বা পাশে নিজের হাতটা চেপে চোখ বুজে বেডে হেলান দিয়ে বসে গেল! ওর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে। এলোমেলো হয়ে আছে সর্বস্ব! অদিতি… অদিতি এটা কি বলে ফেলল! অদিতি এখনও জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে; ও পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গেছে আজ! ধ্রুব একপর্যায়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাল! চোখ খুলে স্থির চোখে অদিতির এলোমেলো, অস্থির আচরণ দেখতে থাকল।
অনেকক্ষণ পর যখন দুজনেই শান্ত হয়ে এল; ধ্রুবর ক্লান্ত হাতজোড়া আলতো করে অদিতির গাল স্পর্শ করলো. অদিতির চোখ উপচে এবার যেন ঝরঝরিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। ধ্রুব চোখের পানি আঙুল দিয়ে মুছে দিল যত্নে। ওর নরম-কোমল গাল আঙুল দিয়ে ছুঁতে ছুঁতে বলল——‘অ্যাম আই এ উইনার অর লুজার, অদিতি?’
অদিতি ধ্রুবর গালে ছোঁয়া হাতটা চেপে ধরল শক্ত করে; দু’চোখ বুজে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল——‘জিতে গেছেন আপনি; আপনার কাছে তোফাজ্জল হায়াতের মেয়ে আজ হেরে গেছে ধ্রুব।’
ধ্রুব চেয়ে রইল অদিতির কান্নাভেজা মুখটার দিকে। চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ ও হেসে ফেলল। ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ঝুলিয়ে আসোয়াস দেখতে দেখতে আবারো অদিতির দিকে তাকাল! ওর কান্নাও আজ কয়টা মধুর লাগছে ওর কাছে! অদিতিকে দেখতে দেখতে একটাসময় ধ্রুব কিছুটা দোনোমনা করে হঠাৎ বলে উঠলো—-—‘ক্যা-ক্যান আই হ্যাভ মাই ফার্স্ট উইনার হাগ, অদিতি?’
আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২৪
অদিতি চোখ খুলে তাকাল। ওর ভয় হচ্ছিল। কিন্তু ধ্রুবর এত কষ্টের বিপরীতে ওর এই চাওয়াটুকু ফেরাতে পারল না কেন যেন। অদিতি চোখ নামিয়ে নিল; হালকা করে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে দিল।
ধ্রুব এরপর আর এক সেকেন্ডও দেরি করল না। অদিতির হাতটা টেনে ধরে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে ওর পিঠ আঁকড়ে ধরল। অদিতির কাঁধে মুখ গুঁজে লম্বা একটা শ্বাস টানল। অদিতির সারা গা তখন জমে আছে। কাঁধে ধ্রুবর ছোঁয়া, শরীর মিশে আছে তার সঙ্গে! এই প্রথম কোনও পুরুষের ছোঁয়া অদিতির গায়ে ফুল হয়ে ঝরে পড়ল। অদিতি নাক টেনে ধ্রুবর পিঠ আঁকড়ে ধরল।