Love Triangle part 25

Love Triangle part 25
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

সারাদিন কাটলো ক্লান্তি আর মন খারাপ নিয়ে।ঐশী,মা মুন আর বাবা সব একসাথে হৈ চৈ করছে। আমি এসবে নেই। মাথাব্যথা করছে বলে কেটে পড়েছি।বাবা আজকে স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছে বিধায় তাদের আনন্দ আরও জমে উঠেছে। আমার এসব কিছুই ভালো লাগছে না।সকালের কথাগুলো মনে হচ্ছে শুধু।বুঝতে পারছি না এত খারাপ কেন লাগছে।উনি ঠিক আছেন তারপরও! আল্লাহ আল্লাহ করে শুধু তাড়াতাড়ি ট্রেনিং শেষে ভালো ভাবে বাসায় ফিরলেই হয়।

সন্ধ্যার পর বই খাতা নিয়ে বসলো মুন। আমার রুমে।ঐশী নাকি ওকে পড়াবে। আমি সোয়েটার পরে ওদের পাশে এসে বসলাম। এরপর মুন কে বললাম চলে যেতে।ঐশী জিজ্ঞেস করলো কেন। বললাম আমার কিছু কথা আছে আজ তার সাথে।মুন পড়া থেকে বাঁচতে পারলেই বাঁচে। সেজন্য তড়িঘড়ি করে উঠে পালালো।
মুন যাওয়ার পর ঐশী গিয়ে রুমের দরজা লক করে এরপর আবার এসে বসেছে। দেয়ালে হেলান দিয়ে। আমি আরেকটু উঠে সেইম ভাবে বসলাম। খানিক পরে ঐশী জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি কথা? বল।’
‘ আরে তেমন কিছু না।তোর একটা রিলেশনশিপ ছিলো বলেছিলি। আমাকে তা নিয়েই বল।’
আমি এটা বলার সাথে সাথে ঐশীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কেন?কি হয়েছে?’
আমি বুঝলাম না ও এমন হয়ে গেল কেন। আমি সারাদিন বোর হয়েছি তাই ইন্টারেস্টিং কিছু জানতে,মুড ঠিক করতেই জিজ্ঞেস করলাম।মুখে বললাম,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ ভালো লাগছে না কিছু।বোর হয়েছি সারাদিন। তোর কাহিনি বল।’
ঐশী একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে হাসলো। পরক্ষনেই অন্যমনস্ক হয়ে বলতে লাগলো,
‘ আমার রিলেশনশিপ?এটা তে ইন্টারেস্টিং কিছু নেই।শুনলে শুধু বোর হবি আরও।
জানিস ফারু? আমি আমার রিলেশনশিপ নিয়ে কখনোই রিগ্রেট করিনি এবং ইন ফিউচারে ও করব না। আমার লাইফের বেস্ট মোমেন্ট গুলো আমার রিলেশনশিপে থাকা অবস্থায় কেটেছে। তুই জানিস আমি তোর থেকে দুই বছরের সিনিয়র।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে যখন উঠলাম তখন তার সাথে পরিচয় হলো।সে বিএমএ ক্যাডেট।আমাদের এদিকে ঘুরতে এসেছিল হয়ত।দেখা হলো দুজনের।প্রথম দেখাতেই একে অপরের প্রেমে পড়েছিলাম। তারপরও আমার সেল্ফ রেসপেক্ট অনেক বেশি।সহজে পাত্তা দিইনি।

ও পাস আউট করার ছয় মাস আগে আমাদের রিলেশনশিপ হয়। তখন থেকেই লাইফের বেস্ট সময় টা শুরু।এভরি ফ্রাইডে ওর কলিং টাইম।৪৫ মিনিট এর জন্য ফোন পেতো। আমাদের ওই সময়টা কিভাবে কাটত জানিনা। শুধু জানি প্রতিবার ওকে বাই বলার সময় আমি হু হু করে কাদতাম। এরপর আবার ছয় দিনের অপেক্ষা। এভাবে ওর পাস আউট হয়‌। কমিশন্ড অফিসার হলো। বিএমএ ক্যাডেট থেকে নতুন পরিচয় হলো লেফটেন্যান্ট। আমাদের আর কথা বলতে কোন বাঁধা নেই, অপেক্ষা করতে হবে না।ভাবতেই দু’জন খুব খুশি ছিলাম।ও ছুটি পেলেই ঘুরতে যেতাম। কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ও আসলে চলে যেতাম। পড়াশোনা তে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ও আমাকে পড়াশোনার মাঝে ফিরিয়ে আনলো। এইচএসসি তে একটা খুব ভালো রেজাল্ট করতে হবে। আমিও যেন বিএমএ তে যাই সেজন্য যত রকম অনুপ্রেরণা দেওয়ার সে দিলো আমাকে। তার অনুপ্রেরণা তেই আমার পড়াশোনা দারুণ গতিতে আগাতে লাগলো। পাশাপাশি আমাকে এক্সারসাইজ করতে বলতো।মানে ও আমার ট্রেইনার হয়ে গেছিল। সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের প্রেম কিন্তু দারুণ চলতো। আমাদের বাসায় সবাই জানত আমার রিলেশনশিপ এর ব্যাপারে। ওর বাসায় জানাতে চেয়েছিল কিন্তু আমি না করি। বলেছিলাম একটা ভালো সময় দেখে জানাব। ভাগ্যের কি ফের জানিস?

আমি এইচএসসি শুরু হওয়ার আগের দিন এক্সিডেন্ট করি। এক্সাম দিবো না এই অবস্থায়। কিন্তু ও বুঝালো অন্তত পাশ করতে পারব এমনভাবে যেন দিই। এক্সাম দিলাম। রেজাল্ট হলো ৩.৫৩ ! পুরোপুরি হোপলেস। এদিকে এত বাজেভাবে এক্সিডেন্ট করেছি।ভারী কিছু করা আমার সাধ্যে নেই। বিএমএ শেষ। কষ্ট পেয়েছিলাম খুব।ও আমাকে শান্তনা দিলো।ও আছে।আমি আছি। বিএমএ তো খুব বড় ব্যাপার না।এই সেই। এদিকে এক্সিডেন্ট এর জন্য তো অসুবিধা হচ্ছিলো।ইয়ার গ্যাপ দিলাম।টানা এক বছর বসা। পড়াশোনা নেই। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটি।ও বাইক নিয়ে আসে। আমাকে ঘুরতে নিয়ে যায়।আমরা ঘুরি, কতকিছু ঘুরে ঘুরে দেখি আর স্বপ্ন সাজাই ভবিষ্যৎ জীবনের।’
ঐশী এটুকু বলে চুপ করে গেল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ এরপর?’
‘ আর বলতে ইচ্ছে করছে না বিস্তারিত। আমাদের ব্রেকআপ হয় ও যেদিন ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পায় সেদিন সন্ধ্যায়। আমাদের দুজনের কেউই কাউকে ছাড়তে চাইনি। কিন্তু ছেড়ে দিতে হয়েছে। ঝামেলা চলছিল দু মাস ধরে। সেদিন সন্ধ্যায় সব হিসেব চুকে গেল। এরপর থেকে ও ওর মত।আর আমি আমার জীবন নিয়ে।’
আমি চুপ করে রইলাম।কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ও নিজেই বলতে লাগলো,

‘ আমি আর ও একে অপরকে খুব ভালোবাসতাম। ভেবেছিলাম আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। পায়নি। জানিস ফারু?ও বিয়ে করেছে। আমি জানতাম না।পরে জেনেছি।ছেলে মানুষ।মুভ অন করা অনেক সহজ। কিন্তু আমি পারিনি রে। আমি এখনও সেই দুরন্ত ছেলেটাকে ভালোবাসি।জানি পাপ।অন্যের স্বামী কে নিয়ে স্বপ্ন দেখা উচিত না কিন্তু তারপরেও! তবে আমি একটা কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।আমি যদি ওকে চাই,আর ওর যদি আগের ভালোবাসা আমার প্রতি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আমি এখনও ওকে আমার করে পাবো।’
‘ তাহলে পাচ্ছিস না কেন?’
‘ আমাদের দেখা হয় না যে।দেখা হোক।’

আমার মনে এখন অসংখ্য প্রশ্ন জমেছে।ওর কথাগুলো বেশিরভাগই আমি বুঝিনি। কেমন ছাড়া ছাড়া ভাবে বলেছে। কিন্তু প্রশ্ন করতেও ভয় হচ্ছে। পুরোনো ক্ষতকে তাজা করে তুলে ফেলেছি এমনিই। তারপরও প্রশ্ন করে বসলাম,
‘ আচ্ছা ঐশী?তোর প্রাক্তন প্রেমিকের নাম কি? কোন ক্যান্টনমেন্টে থাকে? ক্যাপ্টেন সাহেবের পরিচিত হলে তো তার থেকে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারব। দরকার হলে ক্যাপ্টেন সাহেব হেল্প করবে তোকে।’
ঐশী আমার দিকে তাকালো। এরপর একটা সুন্দর হাসি দিলো। পরক্ষনেই চোখ সামনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
‘ আমি এখন একটু ঘুমাই।ডাকিস না।রাতে খাবো না। গুড নাইট।’
কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়লো ঐশী। আমি পাশেই বসে রইলাম ধ্যান ধরে। আমার এখন ঘুমালে চলবে না। ক্যাপ্টেন সাহেব কল করবেন।তার সাথে কথা বলতে হবে।

Love Triangle part 24

ঐশীর কথাগুলো সব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তখন থেকে।দু ঘন্টা ধরে আমি ওর কথাগুলো আউড়ে যাচ্ছি আর খারাপ লাগছে।বেচারি! কি এমন হলো যে এত ভালোবেসে ও কেউ কাউকে পেলো না?ছেলেটার উপর রাগ হচ্ছে।সে চাইলেই তো সবকিছুর সাথে লড়ে ঐশী কে বিয়ে করতে পারতো। করলো না কেন?নিজে ঢ্যাং ঢ্যাং করে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হয়েছে কিন্তু ঐশী!ও তো এখনও ওকে চায়।
মন খারাপ কমাতে ওর রিলেশনশিপ স্টোরি শুনতে চেয়েছিলাম। এখন দেখছি আরও বেশি মন খারাপ হয়ে গেল আমার।

Love Triangle part 26