রেড রোজ ২ পর্ব ৭

রেড রোজ ২ পর্ব ৭
ফারহানা নিঝুম

তুষারপাত হচ্ছে বাইরে, রাস্তা ঘাট ঢেকে গিয়েছে , ফায়ারফক্সে আ’গু’ন জ্ব’লছে। সেখানে এক পাশে বসে আছে উৎসা। উঁহু উৎসা নিজ থেকে বসে নেই ঐশ্বর্য ওকে জোরপূর্বক বসিয়ে রেখেছে। কাউচের উপর উৎসা কে বসিয়ে তার কোলে জোরপূর্বক মাথা রেখে শুয়ে আছে ঐশ্বর্য।
এই তো কিছুক্ষণ আগেই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিল উৎসা। আচমকা ঐশ্বর্য সামনে চলে এলো,চোখ দুটো তার লাল হয়ে আছে।

“কী হয়েছে এভাবে সামনে কেন এলেন?”
ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত নিয়ে উৎসার হাত চেপে ধরে।
“আমি ঘুমাবো।”
এই মূহুর্তে উৎসার মনে হচ্ছে ঐশ্বর্য বদ্ধ পা গল,সে ঘুমাবে তাতে উৎসা কী করতে পারে?
“তো ঘুমান আমি কি করব?”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো ,উৎসা কে টেনে সোফায় বসলো।
“আরে কী করছেন?”
ঐশ্বর্য আচমকা শার্ট খুলে উদোম গায়ে উৎসার কোলে মাথা রাখলো। মৃদু চমকে উঠে উৎসা।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী উঠুন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হুস তুমি আমার ওয়াইফ।”
“না মানি না বিয়ে,উঠুন।”
“উঁহু চুপচাপ থাকো, না হলে শরীর যা বলছে সেটাই করব।তখন মনের কথা শুনে ছেড়ে দেব না কিন্তু!”
উৎসা চুপ করে গেল,এই পুরুষ কী?
“দদেখুন সরুন প্লিজ আমার অস্বস্তি লাগছে!”
ঐশ্বর্য মুখ তুলে তাকায়, কিছুটা উঁচিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে রাখে।উৎসা আরেক দফা চমকে উঠে। তৎক্ষণাৎ লাফ দিয়ে সরে গেল , ঐশ্বর্য ওই ভাবেই কাউচের উপর শুয়ে আছে।
“ছিহ্ অস’ভ্য রিক চৌধুরী আমাকে বিনা অনুমতিতে ছোঁয়ার সাহস হলো কী করে?”
ঐশ্বর্য হামি তুলে বেশ আয়েশ করে উঠে বসলো।
“ইউ ষ্টুপিড রোজ, আমার অনেক সাহস আছে।সামনে আরো দেখতে পাবে।”
উৎসা ঐশ্বর্যের ইশারা বুঝতে পারলো না,তবে এটুকু বুঝতে পেরেছে আপাতত তাকে পালাতে হবে।

কেয়া ক্যাফেতে বসে আছে , বিরক্ত লাগছে তার। ফ্লার্টিং বা’জ সে তবে তার কারণ আছে।কেয়া একটা কথা খুব মানে,যে ছেলে মেয়েদের পিছনে এত টাকা নষ্ট করতে পারে তাহলে অনাথ শিশুদের জন্য কেন খরচ করবে না?কেয়া নিজেও অনাথ তাই সে সেই বাচ্চা গুলো কে বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারে।
“ফ্লার্টিং বা’জ।”
নাক মুখ কুঁচকে নেয় কেয়া,পিছন ঘুরেই জিসান কে দেখতে পায়।
“ডেভিল।”
“ডেভিল কুইন।”

জিসানের সাফ জবাব।কেয়া গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। জিসান গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।
“চল কিউট গার্ল এর সঙ্গে দেখা করে আসি।”
কেয়ার কথায় মিহি হেসে ফেললো জিসান।
“এই না তুই ওকে স’হ্য করতে পারিস না!”
কেয়া চোখ বুজে নেয়।
“রিকের জন্য পারফেক্ট আর আমার মনে ধরেছে।”
“আচ্ছা তোর কী ছেলে মনে ধরে না? তোদের বিয়ে হবে কবে?”
কেয়া সেই আগের অবস্থায় বললো।
“কাউকে ভালো লাগে না।”
“লাগবে কী করে?তুই আর রিক দুটোরই ফ্লার্টিং বা’জ।”
“শাট আপ।”

“ইউ শাট আপ, তোদের জন্য আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।শেইম লেস ম্যান অর শেইম লেস গার্ল।”
কেয়া ফিচলে হাসে , কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই উৎসার কলেজের সামনে পৌঁছে যায় কেয়া আর জিসান।সবে কলেজ ছুটি হয়েছে ,উৎসা বের হতেই জিসান আর কেয়া কে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো।
জিসান হাত উঁচিয়ে উৎসা আসতে বলে ,উৎসা ধীর গতিতে এগিয়ে গেল।
“আরে জিসান ভাইয়া আপনি কেয়া আপু তুমিও!”
কেয়া স্বভাব সুলভ উৎসার গাল টেনে বলে।
“হ্যা তোমার সাথে মিট করতে এসেছি।”

উৎসার কী যেনো হলো সে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে যেনো খুঁজে চলেছে।
জিসান অনেকক্ষণ ধরে উৎসা কে লক্ষ্য করছে ,এমন মনে হচ্ছে সে কাউকে খুঁজে চলেছে।
“মিস বাংলাদেশী কী কাউকে খুঁজছো?”
আশ্চর্য ভাবে চমকে উঠে উৎসা ,সে কী সত্যি কাউকে খুঁজছে?
“আমাকে খুঁজছো ডার্লিং।”
চিরচেনা কন্ঠস্বর শুনে পিছন ঘুরে তাকাতেই গিয়ে পা স্লিপ করে উৎসার, তৎক্ষণাৎ বলিষ্ঠ এক জোড়া হাত ঝাপটে ধরে উৎসা কে।
“সামলে সুইটহার্ট, উফ্ এভাবে স্লিপ করলে আমি কী করে সামলাব?”
ঐশ্বর্যের কথায় ভড়কে গেল উৎসা , ঐশ্বর্য চোখ টিপে। জিসান শব্দ করে হেসে উঠলো।কেয়া উৎসা কে দাঁড় করিয়ে ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে বলে।

“রিক একদম ফান করবি না।”
“আহ্।”
উৎসা দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো।
“দেখুন আপনারা যান তো আমার কাজ আছে।”
ঐশ্বর্য দু হাত ভাঁজ করে বুকে রাখলো , খানিকটা গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
“তোমারও কাজ আছে?”
উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“তো কী আমার কাজ থাকতে পারে না?”
ঐশ্বর্য এগিয়ে এলো,উৎসার কানে ফিসফিসিয়ে বললো।

“আমাকে সামলানোর থেকে বড় কাজ নেই তোমার।এর থেকে বেটার হবে এখন থেকেই প্র্যাকটিস করো।”
উৎসা নির্বাক,ছিহ্ এই পুরুষ এত নির্লজ্জ কেন?
কিছুটা দূরেই উৎসা সিরাত আর বেনজন কে দেখতে পেলো।
“আমি চললাম আমার ফ্রেন্ড রা অপেক্ষা করছে।”
উৎসা দৌড়ে সেদিকে চলে গেল। ঐশ্বর্য বেনজন কে দেখে কপালে ভাঁজ পড়লো।
“ব্রো তোকে ইগনোর করলো তাও আবার তোর ওয়াইফ!”
ঐশ্বর্য গাম্ভীর্য টেনে নিল মূহুর্তে ,ওয়াইফ তার। এক্সুয়েলি রাইট রিক চৌধুরীর ওয়াইফ তাহলে কিছুটা অধিকার বোধ তো খা’টানো যায়!

প্রথম বার ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে উৎসা ,পরণে তার লাল রঙের গাউন। এটা সিরাতের দেওয়া,সে বলেছে বেশ লাগবে তাতে।বেনজন,সিরাত,উৎসা তিনজনে মিলে একটি ক্লাবে গেল।বেশ বড়সড় ক্লাব , ওদের সাথে আরো কিছু ফ্রেন্ডও আছে।সফট টুন বাজছে মিউজিক বক্সে ,তার মাঝে কিছু কাপল ডান্স করছে।এক পাশে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা ।সিরাত উৎসার জন্য সফট ড্রিংক আনতে , মেয়েটা আসার পর থেকে কিছুই খায়নি।
ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে ড্রাইভিং করে সেই ক্লাবেই পৌঁছেছে ,তবে আশ্চর্যের ব্যাপার ঐশ্বর্য জানতো না উৎসা এখানে আছে।সে বলেছিল ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে। ঐশ্বর্য অনেক দিন হলো ক্লাবে আসে না সেই সুবাদে আজ এসেছে। বরাবরের মতো জিসান কে কল করে ডেকেছে , কেয়া আসবে না বলেছে।গ্রেমার সাথে বেরিয়েছে সে।
জিসান আর ঐশ্বর্য ড্রিংক করছে , বরাবরই ঐশ্বর্য হার্ড ড্রিংক নিলো। জিসান সফট ড্রিংকে চুমুক বসায়।

“ব্রো কেয়া টা থাকলে ভালো হতো।”
“ইয়া।”
জিসান পিছনে ঘুরে তাকাতেই কিঞ্চিৎ চমকে উঠে।
“ব্রো দেখ ওইটা মিস বাংলাদেশী না?”
জিসানের কথায় সেদিক পানে তাকায় ঐশ্বর্য ,লাল গাউনে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। ঐশ্বর্য চমকালো , থমকে গেল তার হৃদয় স্পন্দন।এ কী সেই উৎসা?লাল গাউনের সাথে নরমাল জুয়েলারি , হাঁটু লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া।খুব শান্ত ভাবে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে , কাউকে খোঁজার ন্যায় আশেপাশে বারংবার দৃষ্টি ফেলছে।
ঐশ্বর্য অনুভব করলো তার শ্বাস প্রশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, মনের মধ্যে এক নিষিদ্ধ ইচ্ছে জেগে উঠেছে। স্বভাব সুলভ শুকনো ঠোঁট দুটো আলতো করে ভিজিয়ে নিলো , আবারো পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উৎসার দিকে।

“কী রে রিক মিস বাংলাদেশী এখানে আসবে বলিস নি তো!”
“জানি না,ও তো বলেনি আমায়!”
জিসান কপাল কুঁচকে নেয়,কী আশ্চর্য উৎসা এখানে আর ওদের জানায়নি পর্যন্ত?
“ওকে আমি এখুনি ডাকছি।”
“নো ওয়ে ,দেখি কী করে!”
ঐশ্বর্য অপেক্ষা করছে উৎসা কী করবে তা দেখার জন্য!একটা ছেলে এগিয়ে গেল উৎসার দিকে।
“হ্যালো বিউটিফুল লেডি।”
উৎসা মলিন হাসলো।
“হ্যালো।”
“ক্যান আই?”

ছেলেটা উৎসার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় ,উৎসা কিছুটা বিব্রত বোধ করে। ঐশ্বর্য দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে নেয়।
উৎসা ইতস্তত বোধ করে।
“নো প্লিজ।”
ছেলেটি শুনলো না, জোরপূর্বক উৎসার হাত টেনে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে আসে। উৎসা বিরক্ত হলো , নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
“প্লিজ লিভ মি।”
উৎসা জোরপূর্বক নিজেকে ছাড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ আবারও হাত টেনে ধরে উৎসার।
উৎসা পিছন ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠে,এবার হাতের মালিক অন্য কেউ। ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে ,চোখে মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।
“আপনি?”

হেঁচকা টানে নিজের বুকের কাছে এনে ফেলল উৎসা কে ঐশ্বর্য।উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো ,এক কী করছে ঐশ্বর্য?
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে আওড়ালো।
“অ্যা রেড রোজ।”
উৎসা থমকালো, তবে প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে পারলো না।
“বেইবি ইউ আর লুকিং সো প্রীটি।”
উৎসা আবারো চমকে উঠে, ঐশ্বর্যের মুখশ্রী জুড়ে অদ্ভুত অনূভুতির আনাগোনা। তবে কী লোকটা তার প্রেমে পড়েছে?
নিজের ভাবনায় চমকে উঠে উৎসা।
“আমার ওয়াইফ কিন্তু তবুও স্বামী কে রেখে একা একা ক্লাবে চলে এলে?”
উৎসা কে অবাক করে দিয়ে হাত চেপে ধরে ঐশ্বর্য , ব্যাথায় মৃদু কঁ’কিয়ে উঠলো উৎসা।
এবার আর চুপ থাকতে পারলো না উৎসা ,চাপা স্বরে বলল।
“আমার লাগছে!”
“লাগার জনেই ধরেছি।”
“প্লিজ…

“কাম উইথ মি।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে নিয়ে উপরে ক্লাব রুমে গেল।
ভেতর থেকে দরজা লক করে দিল ঐশ্বর্য।
“কী সমস্যা আপনার?”
“ইউ।”
“কী?”
“তুমি আমার প্রবলেম!”
“কী করেছি আমি?”
“কী করোনি আমায় বলো? টেল মি রাইট নাউ!”

উৎসা ঐশ্বর্যের কথার মানে বুঝতে পারছে না , আকস্মিক ভাবে ঐশ্বর্য দেয়ালের সাথে চেপে ধরে উৎসা কে।
“ইউ নো হোয়াট পাগল হয়ে গেছি আমি।আর এখন তো আরো বেশী।”
“ঐশ্বর্য প্লিজ ছাড়ুন আমায়।”
“হুস জাষ্ট কিপ ইওর মাউথ শাট।”
উৎসার ঠোঁট উল্টে কান্না পাচ্ছে,কী করবে সে? ঐশ্বর্যের বুকে হাত রাখতেই উৎসা অনুভব করে তার, হৃদয় স্পন্দন।
“ঐশ্বর্য আমাকে ছেড়ে দিন আমি বাড়ি চলে যাবো।”

রেড রোজ ২ পর্ব ৬

“কন্ট্রোলে আছি কন্ট্রোলে থাকতে দাও।আই সয়ার কন্ট্রোললেস হলে কী হবে সত্যি বলছি জানি না!”
উৎসা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো , ঐশ্বর্য তা দেখলো। উৎসার গাল দুটো একদম তুলার মতো,নরম তুলতুলে।
“মে আই হ্যাভ অ্যা বাইট প্লিজ?”

রেড রোজ ২ পর্ব ৮