তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৬
তানিশা সুলতানা
এক বালতি বরফ ভেজানো পানিতে হাত চুবিয়ে রেখেছে আদ্রিতা।
বরফ ভেজানো বালতিটা আবরারই এনে দিয়েছে। বাথরুমে বালতি রেখে আদ্রিতাকে টেনে নিয়ে এসেছে। আঘাতপ্রাপ্ত হাত খানা পানিতে রেখে কঠোর স্বরে বলেছে
“আমি না বলা ওবদি হাত তুলবে না।
আদ্রিতার সাহসও নেই সাইকো লোকটার কথা অমান্য করার। অগত্য বালতিতে হাত চুবিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। কান্নার স্বর কমে এসেছে৷ এখন একটু ভালো লাগছে। যন্ত্রণা কমেছে। তবে হাতের পানে তাকালেই হৃদয় পুরে যাচ্ছে। কি করে দিলো লোকটা। সুন্দর হাত খানা ঝলসে দিলো। কেনো করলো?
আবরার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। দাঁড়ি বড় হয়েছে কি না? চুল ঠিকঠাক আঋে কি না? মুখে ব্রণ উঠলো কি না? দাঁত জিহ্বা সব দেখে নেয়। নাকের ওপর কয়েকটা কালো দাগ বসেছে। সেগুলোতে হাত বুলায় অতি যত্নে।
শার্ট খুলে ফেলেছে বহু আগেই। ফুলো ফুলো মার্সেল ভাজ পড়া পাঁজর, দুই পাশের দুটো কয়লা, এবং মধ্য বিন্দু সবটাই দৃশ্য মান। বড্ড আকর্ষণীয় লোকটা।
আদ্রিতা বাঁকা নয়নে এক পলক দেখে নেয়। অবাধ্য মনে নিষিদ্ধ ইচ্ছে জাগছে। লোকটার ফুলো মার্সেল খানা একটু টিপে দেখতে শক্ত কি না। পরপরই নজর ফেরায়। মনকে ভেংচি কেটে বলে
” এই হাতির পানে তাকাস না তুই। এ একটা বেয়াদব হাতি। তোকে আঘাত করেছে”
কিন্তু নির্লজ্জ আদ্রিতার নির্লজ্জ নয়ন জোড়া আবরার তাসনিন এর মধ্য বিন্দুর পানে চলে যাচ্ছে। গলায় অবস্থিত উঁচু অ্যাডমস এ্যপেলের পানেও তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
তবে কি আদ্রি নির্লজ্জের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেলো?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবরার তাসনিন ফেইস ওয়াশের বোলতের ন্যায় দেখতে একটা বোতল তুলে নেয়। হালকা চাপ প্রয়োগ করে তা থেকে কালো রংয়ের ক্রিম বের করে এবং তা লাগায় নাকের ওপর। তারপর হাতে ব্রাশের মতো কিছু একটা নেয়। তাতে একটু পেস্ট মাখিয়ে দাঁতে রাখে।
আদ্রিতা ভ্রু কুচকে ফেলে “এটা আবার কেমন মডেলের ব্রাশ?
আবার ইলেকট্রনিক তারও যুক্ত।
আবরার সেই ব্রাশ দ্বারা ধীরে ধীরে দাঁত ঘষতে থাকে।
তারপর সেটা রেখে কুলকুচি করে নেয়।
পরপরই লম্বা চম্বুকের মতো হাতা ওয়ালা কিছু একটা নিয়ে নেয়। সেটা দ্বারা জিহ্বা ঘষতে থাকে।
পরবর্তীতে নাকের ওপরের কালো মাক্স তুলে নেয় এক টানে। আবারও ফেইশ ওয়াশের মতো সাদা রংয়ের একটা বোতল তুলে নেয়। তা থেকে ক্রিম বের করে মুখে লাগায়। দীর্ঘক্ষণ ম্যাসাজ করে মুখ ধুঁয়ে ফেলে।
সবশেষে টিস্যু দ্বারা মুখ মুছে স্কিন কেয়ার সম্পূর্ণ করে।
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে। হাতের ব্যাথার কথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছে সে। এটা কি দেখলো?
ছেলে মানুষ এভাবে স্কিন কেয়ার করে?
তাই তো বলি বেটা এতো স্মার্ট কেনো?
হাহহ
এভাবে যদি আদ্রিতাও স্কিন কেয়ার করতো। তাহলে আজকে বিশ্ব সুন্দরীর এওয়ার্ড পেয়ে যেতো।
” ব্যাথা কমেছে?
শান্ত গলায় প্রশ্ন করে আবরার। হঠাৎ করেই যেনো আদ্রিতার ব্যাথা বেড়ে গেলো। মনে পড়লো যে। বরফ পানি থেকে হাত তুলে একটু দেখে নেয় ফোসকা পড়ে গিয়েছে গোটা হাত জুড়ে। বেহাল দশা।
পূণরায় কান্না পায় আদ্রিতার। নাক টেনে কান্নার প্রস্তুতি নেবে সেই মুহুর্তেই আবরার হাঁটু মুরে বসে পড়ে। আদ্রিতার গালে হাত রেখে কর্কশ স্বরে বলে
“স্টপ ইউওর ফা*কিং ক্রাইং
কেঁপে ওঠে আদ্রিতা। আপনাআপনি থেমে যায় কান্না। চোখের পানি গুলো যেনো হাওয়া হয়ে উড়ে গেলো। বড় বড় নয়ন মেলে তাকায় আবরারের মুখ পানে।
আবরার বাঁকা হাসে। গাল থেকে হাত সরিয়ে ওষ্ঠের ওপর রাখে। একটু পিছিয়ে যেতে চায় আদ্রিতা তবে পারে না। পেছনে দেয়াল।
আবরার পূণরায় হাসে। ওষ্ঠে হালকা চাপ প্রয়োগ করে হাঙ্কি স্বরে বলে
” গুড জব
আমি যা বলবো তাই শুনবে।
আই প্রমিজ মাথায় তুলে রাখবো।
আর অবাধ্য হলে মে*রে পুতে রেখে দিবো।
শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। হাত পা মৃদু কাঁপছে। মনে মনে বলে
“মা আসুক শুধু আমি চলে যাবো এখান থেকে৷ অনেক দূরে চলে যাবো। আপনার সাথে কিছুতেই থাকবো না। কখনোই থাকবো না। একদমই ভালো মানুষ নন আপনি। প্রচন্ড খারাপ মানুষ।
ভাবনার মাঝেই আদ্রিতা অনুভব করে শূন্যে ভাসছে সে। আবরার কোলে তুলে নিয়েছে তাকে। ভয়ার্তক আদ্রিতা চেপে ধরে আবরার এর গলা। এই বুঝি লোকটা তাকে ফেলে দিলো কোল থেকে।
মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে বলে
” ফেলে দিয়েন না প্লিজজজ।
ধবধবে সাদা বিছানায় এনে আদ্রিতাকে শুয়িয়ে দেয় এবং সেও শুয়ে পড়ে আদ্রিতার ওপরে। বুকে মুখ গুঁজে আয়েশ করে চোখ বন্ধ করে নেয়।
ছটফট করে ওঠে আদ্রিতা। মনে হচ্ছে বুকের ওপর পাথর চেপে ধরেছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলো সুরসুরি দিচ্ছে। শ্বাস আটকে আসছে অস্বস্তিতে। বুক খানা কাঁপছে পাল্লা দিয়ে। দুই হাতে আবরারের বাহু ধরে সরানোর চেষ্টা চালায় আদ্রিতা তবে ব্যর্থ হয়। এক চুলও নরাতে পারে না। শেষে হতাশ ভঙ্গিমায় বলে
” ভা…ইয়া প্লিজ সরুন। আমার ভালো লাগছে না।
আবরার সত্যিই সরে যায়। আদ্রিতার পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। মাথার ওপরে অবস্থিত সাদা রংয়ের দেয়ালের পানে তাকিয়ে বলে
“ভালো লাগাতে হবে। আমার যেভাবে ভালো লাগবে সেভাবেই থাকবো।
আদ্রিতা মনে মনে ভেঙ্গায়। মুখে বলে
” আমি তো আপনার বউ ন
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার জবাব দেয়
“কাগজ ছিঁড়ে গিয়েছে লেখা মুছে যায় নি।
আদ্রিতা নিজের আঘাতপ্রাপ্ত হাতের পানে তাকিয়ে বলে
“আপনি আমা
আবরার উঠে বসে।
” ঘুমাও
আবরার চলে যেতে নেয়। আদ্রিতা চটজলদি বলে ওঠে
“আমার কথা ছিল
“কথা বলার মুড নেই আমার। রোমাঞ্চ করার মুড। এখানে থাকলে স*** করতে ইচ্ছে হবে।
বলেই বড় বড় পা ফেলে প্রস্থান করে আবরার। আদ্রিতা বাম হাতে নিজের চুল টেনে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বিরবির করে বলে
” এই পাগলের বউ যে হবে তাকে রোমাঞ্চ করতে করতেই মে/রে ফেলবে। বেয়াদব হাতি।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে সিয়াম, আমান, আহাদ এবং ইভান। সকলের মুখশ্রী থমথমে। ভীষণ চিন্তিত তারা।
আবরাকে আসতে দেখেই সিয়াম দাঁড়িয়ে পড়ে। আঙুল তুলে বলে
“আবরার তুই একটা সাইকো
তোকে আমার ভয় করছে।
আদ্রিতা কি করে থাকবে তোর সাথে?
তুই তো
হাত উঁচু করে সিয়ামকে থামিয়ে দেয় আবরার
” আমি সাইকো, মাফিয়া,
প্রচন্ড লেভেল এর ব্যাড বয়
তবুও ওকে আমার সাথেই থাকতে হবে।
আর কোনো অপশন নেই
আমান বলে ওঠে
“কেনো থাকবে হবে?
ভালেবাসিস ওকে?
চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে আবরার।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৫
“আই হেইটস ফাকিং লাভ।
এসব ভালোবাসা টাসা বুঝি না আমি।
শুধু এইটুকুই বুঝি
সী ইজ মাই প্রোপার্টি।
আহাদ এক লাফে আবরারের সামনে এসে দাঁড়ায়। গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে
” কবে থেকে মনে হলো সে তো প্রোপার্টি?
আবরার চট করেই জবাব দিতে পারে না।