রাজবধূ পর্ব ৬

রাজবধূ পর্ব ৬
রেহানা পুতুল

রাজ সম্মোহিত চোখে চেয়ে আছে শিখার পানে। শিখা বিরক্ত হলো এবার।
গোল গোল চোখে চেয়ে বলল,
“যাইবেন? না চিল্লামু আমি?”
শিখার কথা রাজ শুনতে পেল না। গম্ভীর অথচ মোহনীয় স্বরে বলল ,
“তুমি আমার জীবনে অজস্র কাঁচের গুঁড়ির মাঝে এক টুকরো জ্বলজ্বলে হিরক খন্ড। আমি তোমায় লুকিয়ে রাখবো।”
মাত্র দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া ষোড়শী নবোঢ়ার কাছে রাজের কথা দুর্বোধ্য ঠেকল। এবং সে এখনো মনে করলো অন্য কোন যুবক তার রুমের দরজায়। বিয়ে হওয়ার পূর্বে সে যখন উৎসুক হয়ে তার মা নূরীকে জিজ্ঞেস করলো,
“আম্মা, দুলা দেখতে কেমন?”
নূরী বলল,

“কইতে পারুম না। আমি দেখছি? সুন্দর হোক আর বান্দর হোক। সুস্থ সবল কর্মঠ ছেলে। এটাই বড় কথা। ”
তাই শিখা ধারণাও করতে পারছে না। সামনে থাকা এই যুবকটিই তাকে বিয়ে করেছে। তবে সীমান্তের মতো এই ঘরের নিকটাত্মীয় কেউ হবে,এতটকু বুঝলো। বাইরের কোন ছেলে এসে এভাবে কথা বলবে না তালুকদার ঘরের নববধূর সঙ্গে।
শিখার গলা শুকিয়ে এলো। শুকনো ঢোক গিলল। আদ্রকন্ঠে অনুনয় করে গোমড়া মুখে রাজকে বলল,
“ভাইয়া সরেন। আমি বাইরে যামু।”
রাজ সরছেও না। কিছু বলছেওনা। বিমুগ্ধ চোখে শিখার কাণ্ডকীর্তি ও ভাষার আঞ্চলিকতা উপভোগ করছে। রাজ দেখলো শিখার আঁখিকোণে প্রচণ্ড বিরক্তি খেলা করছে। শিখা রাজকে ডিঙিয়ে বের হয়ে যেতে চেষ্টা করলো। রাজ শিখাকে ছুঁলো না। আটকানোর চেষ্টাটুকু করল না। তবুও শিখা বের হতে পারলো না। ব্যর্থ হলো। কারণ পুরো দরজা দখল করে রাজ দাঁড়িয়ে আছে। অপরদিকে একজন যুবকের পায়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলবে। সেই সাহস ও বাহুশক্তি শিখার মাঝে নেই। শিখা ফের এসে বিছানায় বসলো। এবার শিখার মাঝে বিরক্তি ও ক্রোধ মিশে একাকার হয়ে গেলো।
ক্রোধের তোড়ে তার মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এমন ড্যাবড্যাব কইরা চাইয়া আছেন ক্যান? জীবনে আর কোনদিন মেয়েমানুষ দেখেননাই?”
রাজ সম্বিত ফিরে পেলো। মেলানো ঠোঁট ফাঁক হলো। তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় ধীর কন্ঠে বলল,
” দেখেছি। বহু দেখেছি। তবে তোমার মতো দেখিনি। আমি কি তোমার সঙ্গে একটু গল্প করতে পারি?”
শিখা অদ্ভুত চাহনি নিক্ষেপ করলো রাজের দিকে। অসহিষ্ণু কন্ঠে বলল,
” না পারেন না। আপনি ক্যান আমার সঙ্গে গল্প করবেন? এই ঘরের সবাই ম্যালা কড়া।জানেন না? দেখতে পাইলে আমার বদনাম হইবো। আপনারেও ছাড়বো না। চইলা যান। আল্লাহর দোহাই লাগে।”
রাজ ঠোঁট ভিড়িয়ে মুচকি হাসলো। জানতে চাইলো,

“কে সবচেয়ে বেশী কড়া রাজবধূ?”
“আপনি যার নাম নিলেন। উনি?”
“রাজ?”
“হ্যাঁ।”
“তাকে দেখেছ তুমি?
“না। দেখতে চাইওনা।”
রাজ মর্মাহত হলো শিখার কথায়। মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। ব্যথিত চিত্তে জানতে চাইলো,
“কেন বধূ? কেন চাওনা?”
“উনি সবচেয়ে বদরা*গী। গতকাইল অনুষ্ঠানের মাঝেই উনি নাকি মারামারি করছে শুনলাম।”
“ওহ! তোমার পায়ের ব্যথা কমেছে?”
“হুম। কমছে। মতির মা খালা রাইতে আইসা মলম লাগায়া দিছে।”
রাজ নির্বাক হয়ে গেলো।
“কে বলল মতির মা দিয়েছে মলম?”
“আদুরী আপু বলছে। আপনে এতকথা বলেন ক্যান? চইলা যান না।”
দুর্বল স্বরে বলল শিখা।

রাজ চুপ রইলো। যা বোঝার বুঝে নিলো। শিখাকে বিয়ে করার জন্য সবাই তার বিপক্ষে চলে গিয়েছে।
“যাবো শিখা। এই যে আমাদের গল্প করা হয়ে যাচ্ছে। ভিতরে এসে একটু বসি?”
“নাহ। অন্যের বউর পাশে আপনি ক্যান বসবেন? এতে আমার গুনাহ হইবো। আমি কিন্তু এখন সত্যই চিল্লানি দিমু জোরে। সম্মান হারাইয়েন না কইলাম।”
শিখার চরিত্রের দৃঢ়তা রাজের অতৃপ্ত হৃদয়ে অনাবিল আনন্দ ও প্রশান্তি বইয়ে দিলো। রাজ আপন মনে বলল,
“তুমি হিরের চেয়েও খাঁটি! ফুলের চেয়েও পবিত্র! সবুজের চেয়েও মায়াময়! শরাবের চেয়েও নেশাময়! সোনায় খাদ আছে। কিন্তু তোমার মাঝে কোন খাদ নেই। তুমি নিখুঁত! স্রস্টার অপূর্ব সৃষ্টি! তোমাকে নিয়ে বড্ড ভয় আমার রাজবধূ! ”
“কিছু কইলেন?”
“নাতো।”
“তাইলে যান না। অমন খাম্বার মতন খাড়ায়া আছেন ক্যান? কেউ আইসা পইড়বো। সইরা যান।”
“কেউ আসবে না এখন। বরং আমাকে যে দেখবে, সেই সরে যাবে?”
“আপনার এত পাওয়ার? ”

শিখার এই প্রশ্নের উত্তর রাজ সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেলো। বলল,
” কথার পিঠে কথা বলতে গিয়ে তোমার সঙ্গে কিছু কথা হলো। বেশ লাগলো। আমি বলতে এসেছি বিকেলে তোমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবো। আপত্তি আমার সঙ্গে যেতে?”
“আপনার লগে যামু না। অন্য কারো লগে যামু?
” আমার সঙ্গে নয় কেন?”
“যে অন্যের বউর লগে এতসময় কথা বলে,সে বেশি সুবিধার না।”
রাজ মৃদু হাসলো।
” তাহলে রাজের সঙ্গে যাবে?”
“নাহ। উনাকে ডর লাগে।”

রাজের ব্যাকুল হিয়া আবার বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। সূচনাই হলো যার ভয় দিয়ে। তার সঙ্গে প্রণয় হবে কিভাবে। হৃদয়ের লেনাদেনা করবো কিভাবে। ভেবেই হতাশ রাজ।
“আপনি চইলা যান না। আমার গলা শুকায়া আসছে। পানি খাইতে বাইর হমু।”
রাজ সরে গেল না। দরজায় ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই গম্ভীর স্বরে জোরে ডেকে উঠলো,
“এই কে আছিস? এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় জলদি।”
বরকত দৌড়ে এলো গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে। রাজের হাতে দিয়েই চলে গেলো পা চালিয়ে। রাজ হাত প্রসারিত করে শিখার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। শিখা গ্লাস নিয়ে বিছানায় বসে গলা তুলে সব পানি খেয়ে নিলো। গ্লাস রেখে দিলো চেয়ারের উপরে।

“আচ্ছা রাজবধূ গেলাম। তুমিতো আরামে বসে বসে কথা বলছ। আমার পা ব্যথা হয়ে গেলো দাঁড়িয়ে থেকে গল্প করতে করতে।”
“ওমা! আপনারে আমি কইছি আমার লগে গল্প করেন?”
“তুমি বলনি। আমার প্রয়োজনে আমিই বলেছি। বিকালে রেডি থেকো। আমি ছাড়া আর কেউ নেই তোমাকে নিয়ে যাওয়ার।”
রাজ হনহন পায়ে দোতলায় নিজের রুমে চলে গেলো। ধপাস করে উপুড় হয়ে বিছানার উপর পড়লো। মাথার ঘন কালো চুলগুলো খামচি দিয়ে ধরলো। ভাবলো,
“প্রকৃতি ও স্রস্টার নিয়মগুলো বড় সুনিপুণ! দূর্লভ ও আকর্ষণীয় জিনিসগুলো থেকে মানুষকে অনেক দূরে রাখে। সহজে পেতে দেয়না। যেনো মানুষ তার কদর বোঝে ও সঠিক মূল্যায়ন দিতে পারে। সহজলভ্য জিনিসগুলো সহজেই মূল্য হারায়।”
সামান্য একটা কিশোরীর সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজের পরিচয় দিতে পারল না। ভেবেই তার কুন্ঠাবোধ হচ্ছে। গ্যাসলাইট দিয়ে দামী একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিলো। সুখটান দিয়ে লম্বা করে ধোঁয়া ছাড়লো সিলিং ফ্যান বরাবর। ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।

রাজ চলে গেলে শিখা নিজে নিজে বকলো রাজকে। অসভ্য,বেয়াদব,বেহায়া ছেলে কোথাকার। শিখা বেরিয়ে গেলো রুম হতে। নিজে নিজেই এদিক সেদিক হেঁটে হেঁটে সব দেখতে লাগলো। ঘরের সামনে গিয়ে উঠানে পা রাখলো। দেখলো দ্বিতল বিশিষ্ট বিশাল পাকা ঘর রাজদের। আঙিনার এককোনে বড় একটি বাগান বিলাস ফুল গাছ। তার বহু শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে রয়েছে ছাদের একাংশ জুড়ে। আঙিনার একপাশ ভরে রয়েছে গোলাপি আভার বাগান বিলাসে। ফুলের এত শোভা এত সমারোহ সে ইতঃপূর্বে আর দেখেনি।
বাড়ি হলে এতক্ষণে এ ফুলগুলো কুড়িয়ে নিতো সে। কিন্তু এটা তার স্বশুর বাড়ি। এমন করা যাবে না। শিখা ঘরের ভিতর চলে গেলো। রাজ উপর থেকে শিখাকে দেখছিলো। দৃষ্টির সমস্ত গভীরতা দিয়ে দিয়ে নিংড়ে নিলো তার কিশোরী বধূর রূপ-সুধা।

শিখা উঁকি মেরে মেরে প্রতিটি রুম দেখলো। কিন্তু কোনরুম কার বা কিসের স্পষ্টত বুঝে উঠল না। ঘরের ভিতর মাঝখান দিয়ে ভাগ করা দেয়ালের সাহায্যে। শিখা বিপরীত পাশে গেলো। আস্তে করে একটা রুমের চাপানো দরজা মেলে ধরলো। ভিতর থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো।
“কে? ভিতরে আসো।”
শিখা কিঞ্চিৎ সাহস করে রুমের ভিতরে গেলো গুটিসুটি পায়ে। সারল্য মাখা চোখে তাদের দিকে চাইলো।
তার চাচী শাশুড়ী আমেনা বেগম বসে বসে সুপারি কাটছেন। শিখাকে বলল,
“আসো বউ। এইটা আমার মায়ের রুম। উনি এইখানেই থাকে। তোমার নানু হইবো। ”
শিখা সালাম দিলো জুবায়েরের নানি হারিছা খাতুনকে। তিনি বললেন,

“তুমি নয়া বউ?”
শিখা চুপ রইলো লজ্জাবনত মুখে।
আমেনা বেগম বলল,
” হ মা। এইটা আমগো রাজের বউ। ”
” তোর ভাসুরের নজর বালাই।
মাশাল্লাহ। আল্লাহ মানিক জোড়রে বাঁচাইয়া রাখুক সকল অশুভ শক্তির হাত থেইকা।”
“বউ তুমি আবার কিসে পড়ো?” জিজ্ঞেস আমেনা।
“চাচী আম্মা সামনের বছর ম্যাট্রিক দিমু।”
“বছর ত শ্যাষই। আইসা পড়লো নতুন বছর।”
শিখা নরম গলায় বলল,
“চাচী আম্মার কয় ছেলেমেয়ে?”
আমেনা বেগম দুঃখের স্বাস ছাড়লেন। বললেন,

“আমার বিয়ার ম্যালা বছর পোলাপান হয়নাই। অনেক পরে জুবায়ের হইছে। মাত্র একটা সন্তান আমার। জুবায়ের ব্যবসা করে এখানেই। তোমার স্বশুর আর চাচাশ্বশুর দু’জনে হেগো তালুকদারি নিয়া রাইতদিন পার কইরা দেয়। ঘরের দিকে খেয়াল করনের সময় হেগো অয়না। আমি একলা। কাজ করনের ত মানুষ কত আছে। আবার বেরামেও ধরে মাঝে সাঝে। কি করুম। তাই আমার মায়েরে আমার কাছে নিয়া আসছি। উনিও বাড়িতে একলা। কেউ নাই তিনকূলে আমি ছাড়া।”
“আপনি একলা ক্যামনে? বুঝলাম না। ঘর ভরা এত মানুষ?”
মায়াভরে কন্ঠে শুধালো শিখা।
“তোমার শাশুড়ীগো লগে আমার বনেনা। এমনিতে একলগেই সব। এক হাঁড়ির রান্ধনই খাই সবাই। ”
“এই মাইয়া মুখে কুলুপ আঁট। কাউরে পাইলেই হইছে। নাত বউরে এডি কি কস?”
হালকা মেজাজ দেখিয়ে আমেনা বেগমকে থামিয়ে দিলো তার মা।
শিখারে বলল,
“বইন তুমি চইলা যাও। তোমার হড়ি,ননদ দেখলে কইবো আমরা মা মাইয়া তোমারে কানপড়া দিই ডাইকা আইনা। এর লাইগা হেগো সাইডে যাওইনা আমরা তেমন। নইলে তোমার লগে আমি কত রঙ রসের গপপো৷ জুড়ায়া দিতাম।”

শিখা অবোধের মতো তাদের কথা শুনলো। কিন্তু মর্ম আঁচ করতে পারল না। সে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।
বিকেলে শিখা গোসল করে রেডি হয়ে নিলো। জোছনা তাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। রাজের সঙ্গে তার সারাদিন আর দেখা ও কথা হয়নি। বিকালে একটা বেবিট্যাক্সি চলে এলো তালুকদার বাড়ির উঠানে। রাজ রেডি হয়ে ভিতরে গিয়ে বসলো। শিখা বোরকা পরে বড়দের সালাম দিয়ে নিলো।
আদুরীকে যেতে বলল শিখা। কিন্তু অপমানিত হতে হলো তাকে। কি আছে তাদের বাড়িতে বেড়াবার মতো। শিখা চুপচাপ গিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসলো। পাশাপাশি দুজন বসে আছে। কেউ কিছু বলছে না। পথে বাজারে ট্যাক্সি থামিয়ে রাজ শ্বশুর বাড়ির জন্য অনেক কিছু কিনে নিলো। শিখা আপ্লুত হয়ে গেলো দেখে।
বদ ছেলেটা ত দেখি বড় মনের। নাকি চাচামিয়া শিখাইদিছে। আল্লায় জানে।

বাড়িতে পৌঁছালে শিখা মায়ের গলা জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো। বোন আলোকে কোমর পেঁচিয়ে ধরে অবিরাম কাঁদতে লাগলো। তারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে খেলো। বেবিট্যাক্সি চালক রাজের নির্দেশে সব শিখাদের ঘরের ভিতর নিয়ে রাখলো। ভাড়া নিয়ে সে চলে গেলো। রাজ ঘরে এসে নূরী ও আলোকে সালাম দিলো।
“বাইঁচা থাকো বাবা। বিশ্রাম নাও রুমে গিয়া।”
শিখা তার মাকে ফিসফিসিয়ে বলছে,
“আম্মা দূর! এ দুলা নয়। অন্য ছেলে।”
” কস কি? ”
রাজ শুনতে পেয়ে দুষ্টমিষ্ট হেসে সামনের রুমে চেয়ার টেনে বসলো। যেকোন সময় মেয়ে,জামাই আসবে। তাই আগে থেকে তারা নতুন চাদর বিছিয়ে শিখার রুম গুছিয়ে রেখেছে। শিখা এক ছুটে বাড়ির অন্যঘরে চলে গেলো দেখা করার জন্য।

আলো রাজকে ট্রেতে করে শরবত,পিঠা নিয়ে
দিলো।
” নেন খান।”
নূরী এসে রাজকে বলল,
“আমার জামাই আইল না ক্যান? তুমি শিখার কি হও বাবা?”
“আম্মা আমি রাজ। শিখার হাজব্যান্ড। ওকে এখনো আমার পরিচয় দেইনি। প্লিজ আপনারা ওকে বলে দিবেন না। দুষ্টমি করে কিছুক্ষন পর আমি বলে দিব। আর আমি রাতেই চলে যাবো। আপনি যেমনটি চেয়েছেন।”
নূরী ও আলো প্রাণোচ্ছল হেসে দিলো।
নূরী বলল,
“মাশাল্লাহ! আমার রাজপুত্র জামাই। হ তুমি চইলা যাইবা।”
আলো বলল,
“বাহ। মজাতো বিষয়টা। আমি আর আম্মা শুনে ত বেকুব হইয়া গেলাম। না বলব না আমরা।”
শিখা বেশ সময় অতিক্রম হলে

চঞ্চল চড়ুইয়ের মতো তিড়িংতিড়িং করতে করতে নিজেদের ঘরে এলো। রাজ এতক্ষণ সামনের রুমে খাটে শোয়া ছিলো। সন্ধ্যার পর শিখা তার রুমে পড়ার টেবিলে বসলো। রাজ শিখার রুমে ঢুকে পড়লো। সোজা হয়ে খাটের উপর পা তুলে শুয়ে পড়লো।
শিখা তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। ভয়ংকর চাহনি ফেলে বলল,
“কি ব্যাপার। আপনে আমার পার্সোনাল রুমে আইসা শুইয়া পড়লেন ক্যান? এত অভদ্র আপনি? বাইর হন। চইলা যান কইলাম।”
“তোমার পার্সোনাল রুম আর আমার পার্সোনাল রুম একই রাজবধূ। আমি কোথায় যাবো?”
শিহরিত কন্ঠে বলল রাজ।
“মানে?”
“তোমার বরের নাম কি?”
“রাজ।”
“আমিই রাজ । তোমার রাজবর। আর তুমি আমার রাজবধূ। ”

শিখার গোটা পৃথিবী দুলে উঠলো। প্রবল ভূমিকম্পের ন্যায় পেলব অঙ্গখানি কেঁপে উঠলো এক লহমায়। এক অচেনা অনুভূতির তাণ্ডললীলায় সে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। নিজের কান ও চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
এদিকে সেদিন বিকেলে মতির মা সব কাজের লোককে জড়ো করলো। বলল,
“তোগো সবাইর লগে জরুরি কথা আছে। খাড়া।”
সেই সন্ধ্যার পরেই জয়নুল তালুকদার পরিবারের সবাইকে খবর দিলো নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। জরুরী আলাপ আছে।

রাজবধূ পর্ব ৫

সুফিয়া বিবিও আদুরীকে দিয়ে সবাইকে তার রুমে ডাকলো। গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আছে বলে।
সবাই নিজে নিজে চিন্তা করলো,
কার সভা আগে বসবে। বাবার না মায়ের?
অবশেষে সুফিয়া বিবির সভা আগে বসলো। সে তার পালংকের মাঝখানে রাজকীয় স্টাইলে বসলো। তার সারামুখে ফুটে উঠেছে দম্ভ ও প্রতিহিংসার ছাপ।

রাজবধূ পর্ব ৭