রেড রোজ ২ পর্ব ১৩
ফারহানা নিঝুম
মিস মুনা বেরিয়ে গেছেন সেই কখন ,উৎসা খেয়ে নিয়েছে। ঐশ্বর্য আসলেই তার সমস্যা , না না রকম ফাজলামি করবে।এর থেকে আগেভাগে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়বে উৎসা।আর রাতে উঠে কিছুক্ষণ পড়বে ,যেমন ভাবনা তেমন কাজ।
খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো উৎসা ,বেশ মিনিট দশেক পর ঘুমও চলে এলো তার।
আধঘন্টা পর ফিরলো ঐশ্বর্য , জিসান আরেকটা গাড়ি নিয়ে কেয়া কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। ঐশ্বর্য এসেছে দু তিনবার কলিং বেল বাজায় , কিন্তু কেউ দরজা খুলে না।
ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফুলের টব তুলে নিচ থেকে চাবি বের করে ডোর আনলক করে ভেতরে প্রবেশ করলো।
ভেতর থেকে ডোর লক করে এগিয়ে গেল সে , টেবিলের উপর খাবার রাখা আছে। না আজকে আর ঐশ্বর্য খাবে না , ইতিমধ্যে সে খাওয়া দাওয়া সেরেই এসেছে। ঐশ্বর্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে গেল ,উৎসার বেড রুমে উঁকি দিলো। রুমটা লক করা আছে , ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল।তার মস্তিষ্কে একটা ভাবনাই আছে ,উৎসা কী খেয়েছে? অবশ্য না খেলে নাই , ঐশ্বর্য তুড়িই জোর করবে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঐশ্বর্য রুমের কাছে যেতেই হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেল , আলতো হাতে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল তা। ভেতরে লাইট অফ করা , ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে লাইট অন করে দেয়। মূহূর্তে শীতলতা অনুভব করে সে , ঠোঁট কা’মড়ে ধরলো। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো সামনে শুয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। অত্যাধিক সুন্দর সে , পাগল পাগল লাগছে। ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল , দৃষ্টি তার এখনো উৎসার পানে। এলোমেলো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।পরণে ঢিলাঢালা গেঞ্জি আর প্লাজু পরে আছে , ঐশ্বর্য শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিলো। ধীর গতিতে এগিয়ে গেল , ঐশ্বর্য উৎসার পায়ের কাছে বসে। উৎসা ভীষণ ফর্সা , রূপবতী। কিন্তু ঐশ্বর্যের তুলনায় একটু কম ,তবে এই মূহুর্তে উৎসা কে ঐশ্বর্যের কাছে নে’শা দ্র’ব্য মনে হচ্ছে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নেশা করার আগেই মা’তা’ল হয়ে গেছে সে। ঐশ্বর্য আলতো করে উৎসার পায়ে হাত রাখলো ,প্লাজু কিছুটা উপরে উঠে আছে তার। ফলস্বরূপ ফর্সা পা দুটো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ঐশ্বর্য মুখ এগিয়ে নিয়ে সেই পায়ের পাতায় চুমু খেল , আকস্মিক এমনতর স্পর্শে ঘুম হালকা হয়ে এলো উৎসার। পিটপিট চোখ করে তাকালো সামনের দিকে , ঐশ্বর্য তখনো উৎসার পা ছুঁয়ে আছে। চোখাচোখি হলো দুজনের ,উৎসা বোঝার চেষ্টা করছে ঐশ্বর্য কী করছে? উৎসার পায়ের সবচেয়ে ছোট আঙ্গুল কামড়ে ধরে ঐশ্বর্য , মাঝে মাঝে স্লাইড করে কিছুটা। অতিরিক্ত ভালো লাগায় চাদর খামচে ধরে উৎসা , ঐশ্বর্যের এই অদ্ভুত আচরণ উৎসার সমস্ত কায়া নাড়িয়ে দিচ্ছে।দু মিনিট পর ঐশ্বর্য নিচ থেকেই ছেড়ে উঠে বসলো। উৎসা ছাড়া পেয়ে ঘনঘন নিশ্বাস টেনে নেয় , লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।
ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে।
“রোজ।”
উৎসা তখনো নিজের মধ্যে নেই , সামলাতে খানিকটা হিমসিম খাচ্ছে।
ঐশ্বর্য ফের শুধোয়।
“যদি বলো এর থেকে বেশী ভালো লাগবে আমি স্পর্শ করলে।”
উৎসা নিজেকে ধাতস্থ করলো , অতঃপর নিজের এই এলোমেলো আচরণ কে ধিক্কার জানায়।
“আপনি আবার আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে ছুঁয়েছেন!”
ঐশ্বর্য বেশ ভাব নিয়ে বললো।
“জাস্ট ট্রেইলার দেখিয়েছি , পিকচার তো এখনো বাকি। কিন্তু তার আগেই এই অবস্থা! ইস্! সামথিং নিডস্।”
উৎসা কোনো কথা বললো না , ঐশ্বর্যের সঙ্গে কথা বলা মানে কথায় কথা বাড়বে।
উৎসা বিছানা থেকে নেমে বাইরে চলে গেল , ঐশ্বর্য ওর পিছু পিছু গেল।তবে সিঁড়ি থেকে নামলো না ,উৎসা নিচে গিয়ে দেখলো খাবার গুলো এভাবেই পড়ে আছে। সেগুলো কে ফ্রিজে তুলে রাখলো ,আড় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে।সে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ,উৎসা টেবিলের উপর থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে বড়সড় কমফোর্টজোন আছে, পর্দা সরিয়ে দিতেই বাইরেটা দেখতে পেলো।তবে কিছুটা অন্ধকার ,এই যা বাইরের লাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে। কাঁচের দেয়াল কেমন ঝাঁপসা হয়ে আছে ,উৎসা হাত দিয়ে কিছুটা মুছে নেয়।আগে নিজের বাড়িতে থাকা কালীন উৎসা দুষ্টুমি করে এক গাদা লিপস্টিক মেখে কাঁচের গ্লাস বা আয়নায় ঠোঁটের ছাপ বসিয়ে দিতো। আজকেও এই ছোট্ট বেলার ইচ্ছেটা চনমনে হয়ে উঠেছে , টুক করে গ্লাসে ঠোঁট ছুঁইয়ে ছাপ বসিয়ে দেয়।
অতঃপর সেটা দেখে নিজেই হেসে কুটিকুটি অবস্থা। তৎক্ষণাৎ সে ভুলেই বসেছে ঐশ্বর্যের কথা ,হাতে কোমল স্পর্শ পেতেই আঁতকে উঠে। ঐশ্বর্য নিচে চলে এসেছে , একদম উৎসার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে , ঐশ্বর্য আরো একটি অবাক করে দেওয়ার মতো কান্ড ঘটালো।উৎসার ঠোঁটের ছাপ বরাবর ঠোঁট ছোঁয়ায়।শিউরে উঠে উৎসা , লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। ঐশ্বর্য গ্লাসে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
“উফ্ রেড রোজ এখানে কিস ওয়েস্ট না করে এখানেও দিলে পারতে।”
ঐশ্বর্য নিজের ঠোঁটে ইশারা করে। উৎসা গর্জে উঠে।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী ভালো হয়ে যান।”
“উঁহু অস’ভ্যতামো এখনো করিনি ,আইনি ভাবে তো তুমি আমার লিগ্যাল ওয়াইফ তাই না রোজ!”
উৎসা কিছুটা বিব্রত বোধ করলো।
“আমি আমার ঐশ্বর্য ভাইয়া ছিলেন আর অলওয়েজ থাকবেন।”
ঐশ্বর্য নিজের পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে হাসলো।
“ছাইয়া হতে বেশী সময় লাগবে না বেইবি।”
উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নিল। অস’ভ্য রিক চৌধুরী কখনও ভালো হবে না।
আজ শুক্রবার উৎসার কলেজ ছুটি,সেই সুবাদে বাড়িতেই আছে সে। ঐশ্বর্যও আজ বাড়িতে আছে ,কাল অনেক কাজ করেছে। শরীর টা ম্যাচ ম্যাচ করছে তার , বাড়িতে বসেই কাজ করবে।
নাড়ে নয়টার দিকে মিস মুনা এলেন , কলিং বেল বাজাতেই উৎসা গিয়ে ডোর ওপেন করে। মিস মুনা স্বভাব সুলভ হাসলেন।
“গুড মর্নিং ম্যাম।”
“গুড মর্নিং , ভেতরে আসুন।”
মিস মুনা ভেতরে গেলেন , ইতিমধ্যেই উৎসা অনেক কাজ গুছিয়ে রেখেছে।মিস মুনা ব্যাগ রেখে ভেতরে প্রবেশ করলো।
ঐশ্বর্য এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে , ঘন্টাখানেক পর উঠে এলো সে। বাইরে আসতেই চোখ গেল উৎসার পানে য়,অফ হোয়াইট টপস্ তার সাথে লেডিস জিন্স পড়েছে।পায়ে মোজা পরা , এমনিতেই অনেক ঠান্ডা। তবে এই ঠান্ডায় পাতলা ট্রি শার্ট পরে বেরিয়ে এসেছে ঐশ্বর্য। দুজনের চোখাচোখি হয় ,তবে উৎসা পর মূহুর্তে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণ উৎসার দিকে তাকিয়ে রইল , কেমন মুখের ভাবান্তর বদলে গিয়েছে তার। চোখের কার্নিশ হয়ে উঠেছে লালচে , ঐশ্বর্য ড্রায়ারের দিকে এগিয়ে গেল। এলোমেলো ভাবে কিছু খুঁজতে লাগলো ,উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এভাবে কী খুঁজছে? প্রশ্ন টা আর করলো না , এমনিতেই যখন তখন ঐশ্বর্যের মুড চেঞ্জ হয়।
কিন্তু এদিকে ঐশ্বর্যের থামার নাম নেই , রাগ উঠে গেছে মাথায়।যার দরুন ড্রয়ারে রাখা জিনিস পত্র নিচে ফেলছে।
উৎসা এবার ভীষণ বিরক্ত নিয়ে শুধোয়।
“আপনি কি কিছু খুঁজছেন?”
উৎসার প্রশ্নে ঐশ্বর্য তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি!
“কী হলো বলুন? কিছু কী খুঁজছেন?”
ঐশ্বর্য বললো না , অতঃপর যখন কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুঁজে পেল অধর দুটো প্রসারিত হয় তার। বিজয়ী হাসি টেনে আওড়াল।
“পেয়ে গেছি।”
উৎসা বোঝার চেষ্টা করলো ঐশ্বর্যের হাতে ওটা কী?
কিন্তু ঠিক ভাবে দেখতে পেলো না। ঐশ্বর্য রুমের দিকে এগিয়ে গেল ,উৎসাও পিছু পিছু গেল। ঐশ্বর্য সিরিঞ্জ বলিষ্ঠ হাতে পুশ করে , মৃদু কেঁপে উঠলো তার শরীর টা। অবশেষে ডিভানে গা এলিয়ে দেয় ,চোখ দুটো আবেশে বুজে নিল।
নিজ মনে বিড়বিড় করে আওড়াল।
“এত প্রতীক্ষা কেন রোজ?বিয়ে হয়েছে তো একটু কাছে আসলে কী হয়? এত বছর সামলেছি আর কত সামলাব?”
উৎসা বাইরে থেকে ঐশ্বর্যের এমন আর ভেতরে যাওয়ার সাহস পেলো না।
তৎক্ষণাৎ কলিং বেল ফের বেজে উঠলো।উৎসা নিচে গেল , মিস মুনা দরজা খুলে দিয়েছেন। জিসান আর কেয়া ভেতরে প্রবেশ করে।
“হাই মিস বাংলাদেশী।”
“হাই জিসান ভাইয়া।”
কেয়া গিয়ে উৎসার গাল টেনে দেয়।
“সো কিউট।”
উৎসা মুচকি হাসে। জিসান আশেপাশে তাকিয়ে শুধোয়।
“রিক কোথায়?”
উৎসা মলিন মুখে আওড়াল।
“মাত্র উপরে রুমে গিয়েছে।”
কেয়া গিয়ে কাউচের উপর বসলো ,টিভি অন করে দেয়।জিসানও বসলো ,উৎসা ওদের জন্য জুস নিয়ে আসে। ওদের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা হয় , জিসান কেয়ার কন্ঠস্বর শুনে নিচে নেমে এলো ঐশ্বর্য।এর মধ্যে চেঞ্জও করে নিয়েছে সে , শুধু কিছুটা মা তাল মনে হচ্ছে। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাকের নিচ ঘষে নেয়।
“ব্রো,,,কাম।”
ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল।কেয়া দুষ্টুমি করে বলে।
“আচ্ছা তুই কী সারাদিন ঘুমাস রিক?”
ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে ,সেও অভ’দ্রর ন্যায় বলে।
“সুইটহার্ট রাতে ঘুমাতে দেয় না,তাই দিনে ঘুমাই।”
উৎসা চমকে উঠে ,এ কেমন কথা? চোখ দুটো তার বাইরে বেরিয়ে আসার উপক্রম।সে না কি এই লোকটাকে ঘুমাতে দেয় না!
উৎসা প্রতিবাদী স্বরে বলে।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী একদম মিথ্যা কথা বলবেন না।”
ঐশ্বর্য বুকে হাত দিয়ে বললো।
“উফ্ ইটস্ হার্ট।”
জিসান আর কেয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ,উৎসা দ্রুত কিচেনে মিস মুনার কাছে চলে গেল।
এই লোকটা খুব বাজে , ভীষণ বাজে। নিজের স্বামী ভাবতেও ভয় করে উৎসার।
কিচেনে যেতেই ফোন বেজে উঠল তার। সাবিনা পাটোয়ারী কল করেছে।
“হ্যা মা বলো , কেমন আছো তুমি?”
সাবিনা পাটোয়ারী চাপা স্বরে বললেন।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,তুই কেমন আছিস?”
উৎসা থমকালো,তার মায়ের কন্ঠ কেমন জানি লাগছে!
“কী হইছে তোমার মা?এমন লাগছে কেন গলা?”
সাবিনা পাটোয়ারী মিথ্যে হাসি টেনে বলে।
“কই কিছু হয়নি তো!তুই বল কেমন আছিস? ঐশ্বর্য তোকে ঠিক করে রাখে তো?”
উৎসা কিছু বলতে যাবে তৎক্ষণাৎ মিহি চেঁচিয়ে উঠলো।
রেড রোজ ২ পর্ব ১২
“মা শুনো….
সাবিনা পাটোয়ারী চট করে ফোন কে টে দিলো। উৎসা অবাক হয়।
“মিহি আপুর কন্ঠস্বর শুনলাম ,আপু ফিরেছে! অথচ মা একবারও বললো না।”
উৎসা বেশ চিন্তায় পড়ে গেল ,বার কয়েক ফোন করা সত্বেও কেউ ধরলো না। এবার চিন্তা আরেকটু গাঢ় হলো উৎসার।