রাজবধূ পর্ব ১২
রেহানা পুতুল
পড়ন্ত দুপুরে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শিখা আঁৎকে উঠলো। দেখলো সীমান্ত দরজায় দাঁড়িয়ে তার দিকে অবিকল চেয়ে আছে। চাহনি ক্ষুরধার ও ক্রোধান্বিত। সীমান্ত বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আমি তোমাকে একটু ছুঁতে চাই শিখা। আপোষে দিবে? না জোর খাটাবো? তবে এটার জন্য তোমার রাজবর দায়ী। আমি নই একদম।”
“উনিই দায়ী? ক্যামনে? বুঝলাম না?”
ঢুলু ঢুলু চোখে ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো শিখা।
“তোমাদের বৌভাত অনুষ্ঠানের দিন সে আমার গায়ে হাত তুললো। আমি নাকি তোমাকে ছুঁয়েছি। তুমিই বলো আমার আঙ্গুল বা নখের আঁচড় লেগেছে তোমার গায়ে?”
শিখা স্তম্ভিত ও বিমোহিত হয়ে গেলো শুনে। রাজ তাকে এতটা ভালোবাসে। এতটা। কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সে ওই সুদর্শন যুবকের কাছে। আর অন্যদের কাছে খড়কুটোর মতো। আসতে যেতে সবাই পায়ে ঠেলে ছুঁড়ে মারে যেন। একই পরিবারের মানুষের কত বৈরি রূপ।
“কি চিন্তা করছ? বলো ছুঁয়েছি?”
“নাহ। সেইভাবে নয়। কিন্তু একদিন চুল আর সেইদিন আঁচল ধইরা কথা বলছেন।”
“এটার জন্য কি এই শাস্তিটা আমি প্রাপ্য ছিলাম?”
“নাহ। বেশীই করে ফেলছে উনি।”
“ইয়েস। গুড গার্ল। তাহলে যেটা না করেও দোষী হলাম। সেটার পাওনাটা কি এখন আমার মিটিয়ে নেওয়া উচিত নয়?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ক্যামনে?”
“বোকা মেয়ে। তোমার সদ্য প্রষ্ফুটিত পুষ্পপল্লবের ন্যায় অঙ্গ থেকে।”
শিখার গলা শুকিয়ে এলো। ঢোক গিলল বার দুয়েক।
“আমি তো আপনারে কিছু কইনাই সীমান্ত ভাই। যে বলছে তার সঙ্গে প্রতিবাদ করেন গিয়া।”
“তার সঙ্গে ত পারিনা। সে তোমার বর। তুমি তার বধূ। তার খেসারত ত তোমাকেই দিতে হবে। কারণ সেতো আমার গায়ে হাত তুলল তোমার জন্যই। অমন একটা আনন্দমুখর দিনে মহাভোজকে ফেলে ক্ষুধার্ত পেটে নানারবাড়ি থেকে চলে যেতে হলো আমাকে। তাই আজকের এই দিন এখন আমার। কেবল আমার। কেউ নেই। পুরা ঘর খাঁ খাঁ। আমি চলে আসছি তোমার জন্য।”
“এমন অন্যায় কাম কইরেন না। দয়া করে সইরা খাড়ান। আমি একটু অসুস্থ। ক্ষুধাও লাগছে। পাকঘরে যাইতে দেন আমারে। আল্লার দোহাই লাগে।”
“আমি ভালোই ছিলাম। এখন একটু খারাপ হবো। যেহেতু রাজ ভাই আমাকে ভুল বুঝলই। তাহলে ভুল বুঝার মতো কাজ বাকি থাকবে কেন বলো?”
“উনি শুনলে আপনাকে জবাই করে দিবে।”
কম্পিত স্বরে বলল শিখা।
“সেই সুযোগ নেই। আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। উনি সহজে গ্রামে আসে না। যদি স্বইচ্ছায় মন থেকে দাও। তাহলে অল্প দিলেই হবে। এই ধরো তোমার ভয়ে হিম হয়ে আসা অধরযুগলকে ভালো করে উষ্ণ করে দিবো। এইই। আর ছিনিয়ে নিতে হলে আরো অনেক কিছু নিয়ে নিবো। অপশন ওয়ান না টু বলো?”
শিখা মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছে। আর মতির মা,ফুলবানু,বরকত, বাদশা,আমেনাকে স্মরণ করছে গভীরভাবে। সীমান্ত রুমে ঢুকে যায়। শিখা বিছানা থেকে নেমে বের হওয়ার জন্য দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পারে না। সীমান্ত রুমের ভিতরে দাঁড়িয়ে শিখার শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে ধরে ডানহাত দিয়ে। কিন্তু গায়ে হাত দেয়না। শিখা দরজার বাইরে এক পা বাড়াতেই তার বুক, পিঠ উদাম হয়ে যায় পুরোপুরি। বাধ্য হয়ে এক পা পিছনে নিতে হয়। সীমান্ত ফিচলে হাসে। চোখ দিয়ে গিলে নেয় শিখার সব। শিখার সরু কোমরে হাত দিতে যাবে। অমনি কারো ভারি ভারি পায়ের আওয়াজ শুনে শিখার আঁচল ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে। শিখা আঁচল টেনে বুক, পিঠ ঢেকে নিলো পূর্বের ন্যায়।
“আরেহ সীমান্ত কখন আইলা? রাজের বউ উঠছে ঘুম থেইকা?”
বলল মতির মা।
সীমান্ত রূপ বদলে ফেলে বলল,
“হ্যাঁ উঠছে দেখলাম। আমি এইতো পাঁচমিনিট হবে আসলাম। মামী মনে হয় থাকবে। বাকিরা চলে আসবে বিকালেই চলে আসবে।”
মতির মা রুমে পা দিয়েই দেখে শিখা বৃষ্টিতে ভেজা পাখির ছানার মতো থরথর করে কাঁপছে। কিছু বলতে পারছে না৷ সীমান্তও পা ঘুরিয়ে আবার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো।
“আরেহ। কি হইছে মাইয়া?”
“ভাবি মনে হয় অসুস্থ। আমার সঙ্গেও ভালো করে কথা বলেনাই। ফাটা মামুর মৃত্যুতে মনে হয় ভয় পাইছে।”
“ঠিক কইছো। অল্পবয়েসী মাইয়া। হজম করতে পারেনাই। তুমি খাড়াও। খেয়াল রাখ বউয়ের দিকে। আমি ভাত নিয়া আসি।”
মতির মা চলে গেলে শিখা ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা নিয়ে সীমান্তের দিকে চাইলো।
“ভাবি প্লিজ মতির মাকে কিছু বলো না। আমাকে সবাই খুব ভালো জানে। দেখো আজও তোমাকে টাচ করিনাই। মাত্র আঁচল ধরলাম। সেটা রাজ ভাইয়ের উপর জেদ করেই। আমার ক্ষোভ কেটে গিয়েছে এতটুকুতেই। প্লিজ। আর কোনদিন ও তোমার সঙ্গে বাজে আচরণ করব না। ক্ষমা করে দাও।”
অনুনয় করে বলল সীমান্ত। ফের বলল,
“আর বললেও কোন লাভ হবে না। কেউই বিলিভ করবে না।”
শিখা নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে রইলো। মতির মা খাবার নিয়ে চলে আসলো। শিখা উঠে গেলো হাতমুখ ধোয়ার জন্য। সীমান্ত তার আগেই অন্যদিকে চলে গেলো ফুরফুরে মেজাজে।
মতির মা বসে রইলো। শিখা আস্তে আস্তে ভাত খেয়ে নিলো বিষাদমাখা মন নিয়ে।
শিখা মতির মাকে বলল,
“খালা এই ঘরে মনে হয় কেউই আমারে পছন্দ করেনাই। না?”
“মনে ত হয় তেমন কিছুই। তবে ভাইসাহেব আর তোমার জামাই,এই দুজন পছন্দ করে। নইলে বিয়া হইলো ক্যামনে?”
“হুম সেটা জানি।”
“আইজ তোমারে একটা কথা কই। কইতাম না। আমি কারো ওয়াদার বরখেলাপ করিনা। দেখলাম কইলেই ভালো হইবো। শুনো তোমার ঠ্যাংগে চোট পাইলা যেদিন। হেই রাইতে তোমার ঠ্যাংগে আমি মলম লাগাইনাই।”
শিখা আশ্চর্য হলো। উৎকন্ঠিত স্বরে বলল,
” তাইলে এতো রাইতে কে আইসা আমার পায়ে যত্ন কইরা মলম লাগাইলো খালা?”
“রাজ। তোমার সোয়ামী।”
শিখার চোখ ভরে গেলো অশ্রুজলে।
“খালা এইটা সত্য? উনি এটা কইলো না ক্যান?”
“হ সত্যই। ক্যান কয়নাই। তাতো আর আমি জানিনা। সীমান্তরে যে তোমার লাইগা মারছে। এইটাও কি তোমারে রাজ কইছে? ”
“নাতো। আমি মাত্রই জানলাম। উনি তো দেখি অনেক বেশি ভালো মানুষ।”
“হুম। আগলাইয়া রাইখো। শখের পিঠার মাইজখান কাঁচা থাকে নইলে পুইড়া যায়। খাওন যায়না।”
শিখা এই কথাটার মানে জানে। বাড়িতে মা,চাচীদের মুখে হর হামেসাই এই প্রচলিত কথাটি শুনতে পেতো সে। শিখার আবেগী মন উচাটন হয়ে উঠলো। রাজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইচ্ছে করছে তার। তার কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করছে। রাজ যতক্ষন তার সঙ্গে কথা বলেছে। তার মনে হয়েছে যেনো সিনেমার কোন নায়ক তারসঙ্গে আদরমাখা সুরে কথা বলছে শুদ্ধ ভাষায়। তাদের বাড়িতে গেলেই যোগাযোগ সম্ভব। খাতায় রাজ তার ঠিকানা ও অফিসের টি এণ্ড টি নাম্বার লিখে দিয়েছে।
শিখা ক্লান্ত স্বরে বলল,
“খালা আমার একটা উপকার করতে পারবেন? বিষয়টা খুব গোপনে কইরতে হইবো।”
“কি কও? আমার সাধ্যের ভিতরে থাকলে করমু।”
“খালা আমাদের বাড়িতে কাউকে চুপিচুপি পাঠাইতে পারবেন?”
“জরুরি হইলে ত ব্যবস্থা করতেই হইবো। ক্যান কও?”
“আমার আম্মারে গিয়া কইবো। আমি এইখানে ভালো নাই। আমারে যেন আইসা নিয়া যায়। আমার পড়াশোনারও ক্ষতি হইতাছে। বইখাতা আনছি। কিন্তু পড়া ভালোভালো হইতাছেনা।”
মতির মা চিন্তাগ্রস্ত মনে বলল,
“উমম। কারো পাঠানা যায়। বাদশা তোমারে গিয়া আনলো। সেইতো চিনে তাইলে। তারেই পাঠামু। বাদশা ছেলে ভালো। উপকারি দিল আছে তার।”
“হুম পাঠাইতে পারেন। আমি রিকশা ভাড়া দিয়া দিতাছি খালা। উনি যাইতে আমারে টাকা দিয়া গেছে হাত খরচের।”
শিখার হুট করে মনে হলো খাটের নিচের পেঁপেটার কথা। সে ঝুঁকে পেঁপেটা বের করে আনলো প্যাকেটসহ। বলে উঠলো,
“খালা খাড়ান। আমার খাটের নিচে কে যেন একটা পেঁপে লুকায়া রাখছে পাকার জন্য। আমি আরো আগেই দেখছি। এখন দেখি কেউই পেঁপেটা আইসা নেয়না। তাই আপনারে কইলাম।”
“কি কও? দেখিতো?”
শিখা বের করে দিলো। বলল,
“দেখছেন খালা পঁচন ধরছে।”
মতির মা পেঁপেটি উল্টেপাল্টে দেখলো। সত্যিই পঁচন ধরেছে একপাশ হতে। বেশ নরমও হয়ে গিয়েছে। সে সম্পূর্ণ পাকা ও পচন ধরা পেঁপেটির দিকে তাকিয়ে বিষ্ফোরিত চোখে চাইলো।
স্তম্ভিত গলায় বিড়বিড়িয়ে বলল,
মানুষ কত জালিম আর হারামি হইলে একটা মাইয়ারে মারনের লাইগা এই পেঁপে পড়া কাজে লাফাইতে পারে। এর লাইগাই ত মাইয়া দিনিদিন কাহিল হইতাছে। আল্লাগো রহম করো। খেলা এবার আমিও একটা দেখামু।
“খালা কিছু কইলেন?”
” নাহ! কিছুনা মা। ”
শিখা বুঝেও যেন কিছু বুঝতে পারল না। তামস যুগের আলো আঁধারির মতো ধোঁয়াসা ঠেকলো তার কাছে বিষয়টা। মতির মা পেঁপেটি হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো। সুফিয়া বিবির খাটের তলায় লুকিয়ে পেঁপেটি একই অবস্থায় রেখে দিলো। পরক্ষণেই বাদশাকে ডেকে সব বুঝিয়ে বলল। বাদশা রাজি হলো শিখাদের বাড়িতে যেতে।
“তাইলে বেলা করিস না। এক্ষুনি পথ ধর। সুযোগ আছে। ভাবি আইজ আইবোনা। বাপের বাড়ি থাকবো। বাকিগোরে একটা কিছু কওন যাইবো।”
গোধূলি ঝরা বিকেল। আকাশে সজ্জিত থরে থরে রঙ বেরঙের মেঘ। খোলা প্রান্তরে একদল কিশোর আপন খেলায় মত্ত। বাদশা হুড তোলা রিকশায় করে একা যাচ্ছে উজানপুর থেকে মধুপুর গ্রাম। মাঝখানে পার হতে হলো কৃষ্ণনগর গ্রাম। খেলায় মেতে থাকা কিশোর দলকে দেখে বাদশার মন ভার হয়ে এলো।
এমন পাড়ার বন্ধু তারও ছিলো কতো। তার নাম বাদশা। কিন্তু সেই নামের কোন গুন নেই। মহিমা নেই। সে আজন্ম গরিব। ভাগ্য তাকে উপহার দিলো দাসত্বের জীবন। তালুকদার বাড়ির দাস সে। এটাই তার পরিচয়। এই নাম বদলানোর ক্ষমতা তার হাতে নেই বলে বাদশা প্রতিটিসময় এক টুকরো আক্ষেপ বয়ে বেড়ায়। এত বড় হয়েছে সে। তবুও রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে এই নাম নিয়ে আজো তাকে মাঝেসাঝে ব্যঙ্গ কথা শুনতে হয়। সে পারলে সারাদেশে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিতো। দরিদ্র ঘরে জন্মানো কোন ছেলের নাম বাদশা হতে পারবে না। বাদশা খোলা আকাশপানে মুখ তুলে চায়। জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ে। একসময় পৌঁছে গেলো মধুপুর গ্রামের মন্ডল বাড়ি।
নূরী ঘরের দাওয়ার সামনে বসে চাটাই বুনছে। পাশে দুজন নারী বসা। বাদশাকে দেখেই তারা উঠে চলে গেলো। বাদশা নূরীকে সালাম দিলো। নূরী বাদশাকে দেখেই কিঞ্চিৎ অবাক হলো। হতচকিত কন্ঠে বলল,
“আরেহ বাদশা মিয়া। কেমন আছো? ঘরে গিয়া বসো। আমি আইতাছি।”
বাদশা নম্রপায়ে হেঁটে গিয়ে ঘরের সামনের রুমে বসল। নূরী হাতের কাজ গুটিয়ে ঘরে চলে যায়। বাদশাকে পিঠা, শরবত খেতে দেয়। বাদশা পিঠা খেতে খেতে নূরীকে বলল,
“খালাম্মা ভাবি কইছে উনারে আনতে যাইতেন। উনার শরীর একটু খারাপ।”
“আল্লাহ! কি হইছে আমার শিখার?”
বাদশা যতটুকু জানে সব জানালো নূরীকে।
“কবে যাইতে কইছে?”
“দিনক্ষণ ত বলেনাই। যাইয়েন কাইল,পরশু।”
” তুমি যাইয়া বইলো, আমি আলোর জামাইরে পাঠামু। সেই যাইতে না পারলে আমি নিজেই গিয়া নিয়া আসুম।”
“আপনে চিনেন? আমি বাড়ির ঠিকানা কমু খালাম্মা?”
” হ চিনি। বিয়ার সময় ঘটক ছেরু মিয়ার লগে উজানপুর গ্রামে গিয়া তালুকদারগো খবর নিছি না।”
বাদশা চলে যায় ব্যস্তসমেত হয়ে। পৌঁছাতে ভর সন্ধ্যা হয়ে গেলো তার। মতির মাকে খবর বলল। মতির মা গিয়ে শিখাকে জানালো। শিখা কৃতার্থ চোখে মতির মায়ের মুখপানে চায়। আপ্লুত স্বরে বলল,
“আমার যদি ক্ষমতা থাকতো খালা, আপনারে এই পরের গোলামির থেইকা মুক্তি দিতাম। আপনে রক্তের মাইনষের চেয়েও অনেক ভালো। আপনার কাছে ঋণী হইয়া গেলাম। আইজ যেই উপকার আপনে আমার করছেন, আমি জীবনেও ভুলমু না খালা। এই বাড়িতে আমার এখন একদিনও থাকতে মন চায়না। আমার আম্মা দু’চারদিন বাদেই চইলা আইবো। আমি জানি।”
মতির মা শিখাকে বুকে লেপ্টে ধরে ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। বলে,
“আমার মাইয়া জোছনা তোমার বয়েসী। আমি তারে আর তোমারে আলাদা চোখে দেহিনা মা।”
কাপড়ের আঁচল দিয়ে আঁখিকোণ মুছতে মুছতে মতির মা চলে যায়। কিছুক্ষণ আগে মৃতের বাড়ি শেষে সবাই চলে এসেছে সুফিয়া বিবি ছাড়া। সীমান্তও নেই। চলে গিয়েছে নিজেদের বাড়ি। শিখা শান্ত পায়ে চাচী শাশুড়ী আমেনার রুমের দিকে গেলো। উদ্দেশ্যে এই ঘরের কেউ কথা বলেনা তার সঙ্গে। গিয়ে তাদের মা মেয়ের সঙ্গে একটু গল্প গুজব করবে।
শিখা চাপানো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আমেনার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো। সে দরজার ফাঁক দিয়ে গলা উঁচিয়ে দেখলো নামাজের বিছানায় বসে মোনাজাতে আমেনা কাঁদছে। শিখা হতবিহ্বল হয়ে গেলো। আরো দু’দিন দেখেছে আমেনাকে কাঁদতে সে। কিসের এত দুঃখ এই নারীটির অন্তরে তা শিখার বোধগম্য হলো না। শিখা আর ভিতরে গেলনা। পা ঘুরিয়ে নিজের নিজের রুমে চলে গেলো। দরজা চাপিয়ে পড়তে বসে গেলো।
তার ঠিক তিনদিন পর এক সকালে নূরী মধুপুর গ্রামের তালুকদার বাড়িতে চলে গেলো। তাকে দেখেই বাদশা চিনলো। সে শিখার রুমের সামনে তাকে নিয়ে দিলো। শিখা মাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে কেঁদে ফেলল। মাকে বোরকা খুলে বসতে বলল।
নূরী বোরকা খুলে শাড়ির আঁচল টেনে বড় করে মাথার উপর দিয়ে নিলো।
মেয়ের সঙ্গে সামান্যক্ষণ কথা বলেই বলল,
“আয় তোর শাশুড়ীর লগে দেখা করি। নইলে কেমন দেখায় মা। আমরা গরিব। তারা নিজ থেইকা দেখা করতে আইব না। এইটাই স্বাভাবিক। ”
কিন্তু নূরী কল্পনাও করতে পারছেনা,তারজন্য কতবড় নিষ্ঠুর সারপ্রাইজড় অপেক্ষা করছে তালুকদার পরিবারে। কিসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সে আজ।
রাজবধূ পর্ব ১১
“আরেহ আম্মা বসো। তারা কিছুই মনে করব না। অনেক কাহিনী। অনেক কথা৷ সব তোমারে কমু।”
“হইছে তুই থাক। আমি জেলের আসামী নাকি বাইর হওন যাইব না? আমি যাই। এদের এতবড় ঘরদুয়ার, বাড়ি,আশপাশ, সব একটু দেখিনা। আল্লায় আমার মাইয়ার কিসমতে এত আনন্দ রাখছে।”
নূরী মেয়ের রুম হতে বের হয়ে কয়েক কদম এগিয়ে গেলো। হঠাৎ একজন পুরুষকে দেখেই পা থামিয়ে নিলো। পুরুষটি কিয়ৎক্ষণ নূরীর মুখপানে চেয়ে রইলো অচেনা দৃষ্টিতে। পরক্ষনেই অগ্নিঝরা চাহনি ফেলে পলকহীনভাবে
চেয়ে রইলো। তার চোখদুটো ইট ভাটার মতো দাউদাউ করে জ্বলছে। কারণ সে এবার নূরীকে চিনতে পেরেছে।
কিন্তু…