রাজবধূ পর্ব ১৫
রেহানা পুতুল
গোলাপের লম্বা কাঁটাযুক্ত ডাঁটাটি সাদা স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো। শিখা স্কচটেপটি টেনে খুলতেই ভিতর হতে বেরিয়ে এলো একটি সাদা কাগজের ছোট্ট চিরকুট।
“শিখা, বাবার বাড়ি চলে গেলে। আমাকে দেখা দিয়ে গেলে না। অথচ সেদিন ফাটা হাসুর মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করে তোমাকে কত বড় বিপদ থেকে বাঁচালাম। কষ্ট করে তোমার স্কুল খুঁজে বের করলাম। এছাড়া আর কোন পথ নেই তোমাকে কিছু বলার। তোমাকে না দেখতে পেয়ে খুব খারাপ লাগলো। তাই লিখলাম। ভালো থেকো। নিজেকে সুরক্ষিত রেখো।”
**তোমার চেনা শুভাকাঙ্ক্ষী।
শিখা আশ্চর্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলো। গোল গোল চোখে চিরকুটটি আবার পড়লো। ভাবছে, চেনা শুভাকাঙ্ক্ষী হলে সামনে আসতে সমস্যা কোথায়। আড়ালে কেন? তারমানে কি উনি করেছে এসব? নাহ। উনিতো শহরে। ভেবেই শিখা ক্লাসে চলে গেলো। বইয়ের ভাঁজের ভিতর চিরকুটটি যত্ন করে রেখে দিলো।
ক্লাসে শিখার সবচেয়ে ভালো বন্ধু কুসুম। কুসুম আর শিখা সবসময় একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে। একজন আগে গেলে আরেকজনের জন্য জায়গা রাখে। কুসুম শিখার কাছে তার শ্বশুর বাড়ির গল্প শুনতে চাইলো। শিখা তাদের দূর্নাম না করে প্রশংসা করলো কুসুমের কাছে। মা নূরী তাকে এই শিক্ষা দিয়েছে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“অকারণে কারো কাছে কারো বদনাম করবে না। গীবত গাইবে না। গীবতকারীকে আল্লাহতায়ালা খুব অপছন্দ করেন। আর এতে লাভ না হয়ে লসের সম্ভাবনা বেশি। দূর্বলতার গল্প সব সময় লুকিয়ে রাখতে হয়। প্রকাশ্যে আনতে হয় না।”
কুসুম বলে,
“ইসসইরে সই। তোর কথা শুইনা আমারো বিয়া বসতে মন চাইতাছে। দাদীর কাছে সেইদিন শুনলাম আমার বিয়ার প্রস্তাব আসছে। আব্বায় না করে দিছে। তাদের নাকি নিচু বংশ। নিচু কাজ ছেলের। বাস চালক। বাড়ির নামও নাকি সুন্দর নাই। ”
“কি নাম বাড়ির?” বলল শিখা।
“স্প্রিং টাকলার বাড়ি।”
“এইটা আবার কেমন আজগুবি নাম?”
” আজগুবি নামের শ্যাষ আছে? আমাদের বাড়ির কাছের অনেক পুরানা একটি বাড়ির নাম নতুন বাড়ি। সেই নতুন বাড়ির মানুষজন একটু গরীব টাইপের । তাদের নামগুলা শুন,
হান্ডি,বইন্ডা,হ্যাঞ্জা,হোরা,লটকন,কমলা,আঙুরী, কোরফুলি,কেরাচি,এলাচি,টুনটুনি, আলতা,হুক্কুম আলী,মজলিস,শুক্কুরমিয়া এসব।”
শিখা হেসে ফেলল। বলল,
“আমার ত শুইনা মজাই লাগলো। আনকমন নাম। গতানুগতিক নামের বাইরে।”
“তাইলে তুই গিয়া এদের সবার মা জননীরে একখান ধন্যবাদ দিয়া আইছ, আনকমন ভ্যারাইটিজ নাম রাখার জন্য।”
ক্লাসে স্যার চলে আসাতে শিখা ও কুসুমের অপ্রাসঙ্গিক আলাপচারিতার ইতি ঘটে।
হেমন্তের মধ্যদুপুরের নির্জনতা উপভোগ করছে বাদশা ও ফুলবানু। তারা দুজন মুখোমুখি নয় পাশাপাশি বসে আছে। তাদের প্রণয় অভিসার চলে বাগান পেরিয়ে জংগলের ধারে। চারপাশজুড়ে শুনশান নিরবতা। হাওয়া নেই বলে গাছগাছালীগুলো থমকে আছে৷ দুলছে না তাদের শাখাগুলো। গোলাপজাম গাছে একটি হলদে পাখি বসে আছে চুপটি করে। বাদশা বলল,
“দেখছো ফুল, বাগানের সবকিছু আমাদের প্রেম করা দেখছে মনোযোগ দিয়া। একটুও নড়াচড়া করছেনা ফুল,পাখি,লতাপাতাগুলো। ওই দেখো খালের পানিও স্থির হইয়া আছে।”
বাদশার এক হাত পেঁচিয়ে ধরে আছে ফুলবানু। আরেক হাতে ছোট্ট একটি শুকনো ডালের মাথা দিয়ে মাটি খোঁচাতে লাগলো। কন্ঠকে খাদে নামিয়ে লাজুক স্বরে বলল,
“আপনে যে সকলের অগোচরে আমারে মাঝেসাঝে তুমি বইলা কথা কন, খুব ভালো লাগে।”
“তুমি বলতেই ভালোলাগে। অনেকেরেই দেখি বউরে তুই বইলা সম্বোধন করে। এটা আমার বিরক্ত লাগে। বউরে তুই কইরা বললে মনে হয় অভদ্র ভাষা। আর তুমি কইরা বললে মনে হয় রোমান্টিক ভাষা। ভালোবাসা।”
ফুলবানু মধুর হাসলো ঠোঁট ভিড়িয়ে। বলল,
“শীত আইসা পড়লো। শীতে যে দরগা হয় আমারে নিয়া যাইবেন বাদশা ভাই?”
“আচ্ছা নিয়া যামু।”
উদাস কন্ঠে দূরে দৃষ্টি মেলে ধরে জবাব দেয় বাদশা।
“গতবারও কইছিলেন নিয়া যাইবেন। পরে আর নেননাই।”
অভিমানী কন্ঠে অনুযোগের সুরে বলল ফুলবানু।
“তুমি মেলায় গিয়া কি কিনবা ফুল?”
“আপনে যা কিনা দিবেন। তাই নিমু।”
“আমি তোমারে একটা তালপাতার পাখা কিনে দিমু। আর আলতা। টকটকে লাল জবাফুলের মতো আলতা। বিয়ার পরে আমি বাইরে থেইকা কাজ কইরা আইলে তুমি আমারে বাতাস করবা। তোমার দুই পায়ে রোজ গোসলের পর আলতা দিয়া রাখবা। তুমি যখন ঘরের কাজকর্ম করবা। আমি তোমার আলতা রাঙা পা দুইখান দেখমু মন ভইরা।”
“আপনার কথা শুনলে প্রাণ জুড়ায়া যায় বাদশা ভাই। আপনে আসলেই একজন বাদশা। আমার বাদশা৷ ”
ছলছল চোখে বলল ফুলবানু।
“আচ্ছা কোন মেলায় যাইবা ফুল? শীতে কয়েক জায়গায় মেলা বসে?”
“আন্ধার মানিক ক্ষেতে যে বিরাট মেলা বসে। সেইখানে যামু আমি। এই মেলার কথা সবার মুখে শুনি।”
“আচ্ছা। সমস্যা নাই। বড় চাচীর কাছে বইলা নিলেই যাইতে দিবো। হ্যার যত জ্বালা হইলো নতুন বউয়ের সঙ্গে। কামের মাইনষের লগে নয়।”
হঠাৎ কুকুরের আওয়াজে দুজন উঠে দাঁড়ায়। গোলাপজাম গাছের ডাল টেনে ধরে কিছু আধ পাকা ফিকে হলদে রঙের ফল ছিঁড়ে নেয় বাদশা। ফুলবানুর হাতে দেয়। গ্রামের এই অপ্রচলিত সুমিষ্ট ফলটা পছন্দ ফুলবানুর খুব পছন্দ। ফুলবানু গোলাপ জামের ভিতরের বীজ দুটো ফেলে দিয়ে বাদশার মুখে পুরে দিলো জোর করে। নিজের মুখেও পুরে দিলো একটা।
কচকচ করে খেতে খেতে বলল,
“খান। হালকা মিঠা আছে না?”
“তোমার নরম হাতে তিতাও আমার মুখে মিষ্টি লাগবে ফুল।”
দুজন আলাদা পথ ধরে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। আদুরী রান্নাঘরের সামনে উঠানে দাঁড়ানো ছিলো। ফুলবানুকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখলো দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। কিন্তু কিছু বলল না। সবাই সবার মতো করে ব্যস্ত থাকে বলে বাদশা ও ফুলবানুর মেলামেশা আঁচ করতে পারেনি কেউ। কিন্তু আদুরী বেশ কিছুদিন ধরেই অনুসন্ধিৎসু চোখে দেখছে এই দুজনকে।
বাগানে যখন বাদশা যায়। তখন কাজের ছুতোয় ফুলবানুও যায়। কারণ হলো সুপারি,তাল,নারকেল,ফল পাকলো কিনা। ঝরে পড়লো কিনা। শুকনো ডালপালা কি পরিমাণ পড়লো। এগুলোকে পুঁজি করে দুজন ফিরে আসে বহু সময় অতিক্রম করে।
তারা দুই একদিন পরপর নয়। রোজই যায়। তবে আলাদা ভাবে যায়। ফিরেও দুজন আলাদা ভাবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। ফুলবানু চলে আসার পর বাড়ির অন্য পথ ঘুরে আসে বাদশা। হাতে থাকে কাজ করে আসার নমুনা।
আদুরীর বিরহী মন বিদ্রোহী হয়ে উঠলো তড়িতেই। নিজের রুমে চলে গেলো। তার অন্তর ফুঁসে উঠলো। তালুকদারের মেয়ে হয়ে সে প্রেম করতে পারছে না। অথচ তাদের আশ্রয়ে বেঁচে থাকা দুজন ছেলেমেয়ে দিব্যি মনের সুখে চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে। সেতো তাদের চেয়েও অসহায় তাহলে। কি অর্থ, তার এত চাকচিক্যময় আরামদায়ক জীবনের। কি হলো তালুকদারের একমাত্র কন্যা হয়ে। ভালোবাসার মানুষকে ভুলে, অন্য একজনের সঙ্গে একই রুমে,একই বিছানায় তার ঘুমাতে হবে। এটা অসহনীয়!
আদুরীর মনে তীব্র ঈর্ষাবোধ কাজ করছে। আদুরী হিংস্র হয়ে উঠে। বালিশ খামচে ধরে। জীবনের সমাধান খুঁজতে থাকে বিক্ষুব্ধ মন নিয়ে।
শিখা রাতে টেবিলে বসে খাতার একটি ধবধবে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নিলো। স্কুল থেকে আসার সময় পাঁচটা খাম কিনে আনলো। তাও সেটা নূরীকে বলে দিতে হলো মেয়েকে। শিখা চিঠি লিখতে বসলো রাজের কাছে। কিন্তু লিখতেই পারছে না। ব্যাকরণ বইয়ের আবেদন পত্র ও চিঠির চ্যাপ্টারে চলে গেলো। সবগুলো পড়ে নিলো। তবুও গুছিয়ে নিতে পারছে না। অতঃপর কয়েক ঘন্টা ব্যয় করে এলোমেলো হাতে বাঁকা বাঁকা শব্দে লিখে ফেলল একটা প্রণয় চিঠি।
এক দুই কথায় রাশেদ ও রানীর মাঝে পাল্টা তর্ক শুরু হলো। এক পর্যায়ে তা তুমুল আকার ধারণ করলো। রুমের দরজা বন্ধ থাকায় দালানের অন্যরুম গুলো থেকে তাদের ঝগড়া কারো কর্ণগোচর হলো না। রানী তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠলো,
“আপনার সাত জনমের কপাল আমি নিজের ভবিষ্যৎতের কথা বাদ বিয়া পইড়া আছি এই সংসারে। বিয়া হইছে দশ বছর। একটা সন্তানের মুখ দেখলাম না। মা ডাক শুনতে পাই না। সুমনার দুই পোলাপান কি সুন্দর মায়ের বুকে বুকে থাকে মুরগির ছানার মতোন।”
রাশেদ এগিয়ে যায়। রানীর মুখ খিঁচিয়ে ধরে হাত দিয়ে। রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,
” এইই আটখুইড়া নারী। তোর চৌদ্দগুষ্টির ভাগ্য। আমি তোরে ছাইড়া দেইনাই। দ্বিতীয় বিয়া করিনাই। নামেই রানী তুই। কামে ঠনঠনা। এই থলথলা দেহের কি মূল্য? সন্তান জন্ম দিতে পারস না। তালুকদার বংশের মান মর্যাদার কথা ভেবে আমরা না স্ত্রী ছাড়তে পারি। না দশটা বিয়া করতে পারি।”
রানী চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে,
“মিথ্যা অপবাদ দিলে আল্লার আরশ কাইঁপা উঠবো কইলাম। সন্তান হয়না আপনের দোষে। আমার নয়। ডাক্তার ত এটা কইলোই ঘুইরা ফিরা। আমি নিঃসন্তান আপনার জন্য। আমার জন্য না। আইজকার পর আর আমারে অপবাদ দিলে পরিণাম ভালো হইব না কইলাম।”
“তোর লগে এই এক বিষয় নিয়া আর লাগতে রাজী নই আমি। আমি প্রমাণ দিতে চাই যে আমি সন্তান জন্মদানে সক্ষম।”
“আপনে পারবেন এইটা। পুরুষ মানুষ।বিয়া করতে পারবেন। কিন্তু আমি ক্যামনে প্রমাণ দিমু যে আমিও সন্তান জন্ম দানে অক্ষম নয়? সক্ষম।”
“আমি কইলে রাজী হবি।”
“কিই?”
“তুই কারো সঙ্গে থাকবি কিছুদিন। আমিও আরেকজনের সঙ্গে থাকবো। এটা মাত্র কার দোষ সেইটা সিউর হওনের জন্য। তাও তোর লগের অশান্তির চাইতে ভালো।”
ঘৃণায় রি রি করে উঠলো রানীর মন। মুখ বিকৃতি করে বলল,
“ছিহ! আপনার যা ইচ্ছা করেন। আমি এসবে নাই। আমার চিন্তা আমি করতাছি।”
রাশেদের মাথা বিশ্রী রকমের উগ্র হয়ে আছে। পুরুষ হয়ে সে সন্তান জন্মদানে অক্ষম এটা নিতে পারছে না। রোজ তাকে কটাক্ষ সুরে হেয় করে কথা শোনায় রানী। এটার জবাব সে যেকোন মূল্যে দিতে চায়। সে প্রমাণে বিশ্বাসী।
তার দু চারদিন পর এক সন্ধ্যায় রাশেদ বাড়ি আসে বাইরের কাজ শেষে। সুযোগ বুঝে ফুলবানুকে ডাক দেয়।
ফুলবানু এগিয়ে এসে,
“ভাইজান কি কন?”
“ফুলবানু তোর সঙ্গে আমার জরুরী একটা কাজ আছে। তুই আমাকে কাজটা করতে সাহায্য করলে বিনিময়ে যা চাইবি তাই পাবি। তবে মুখ বন্ধ রাখতে হবে তোর। কাজটা খুব গোপন। তবে করতে তুইও অনেক আনন্দ পাবি।”
ফ্যাসফ্যাসে গলায় মধুমাখা স্বরে বলল রাশেদ।
অবোধ ফুলবানু মনে মনে ভাবলো, এতবড় একজন পুরুষ মানুষ না জানি কত বড় বিপদে পড়ছে। এই প্রথম কামের মাইয়ার কাছে সাহায্য চাইলো। এইটা আমার জন্য গর্বের। সে বিনাপ্রশ্নে,বিনাবাক্যে রাজী হয়ে গেলো।
ফিসফিসিয়ে বলল,
“বিনিময় চাইনা বড় ভাইজান। আপনারে খুব মান্য করি। আপনার উপকার হইলেই আমি খুশী। আপনাগো খাই পরি। নইলে নিমকহারামি হয়। কন ক্যামনে কি কইরতে হয়বো? কখন কই যাইতে হইবো?”
” কাজটা রাতের আঁধারে করতে হইবো।তোর রুমেই হইতো। কিন্তু সেখানে ত মতির মা চাচীও থাকে। তাই বাগানের ভিতরে যাইতে হবে তোর আমার সঙ্গে।”
“সমস্যা নাই ভাইজান। যাইতে পারুম।”
“শোন কাজটা অন্তত দুইদিন পরপর করতে হবে। এভাবে একমাস করলেই হবে।”
“কাজটা করতে কতক্ষন লাগতে পারে ভাইজান?”
“এই আধঘন্টার একটু বেশী। আমি যাই। কাইল আমি তোরে সংকেত দিলেই পিছনের জংলার বাগানে চলে যাইস। কাউকে বলবি না। খবরদার।”
ফুলবানু ঘাড় হেলিয়ে চলে যায়।
নূরী যখন একা থাকে তখনই তার মাথায় ঝেঁকে বসে তালুকদার বাড়ির ঘটনাটা। বাদশা ও শিখা তার কাছে বর্ণনা শুনে বলল সেইলোক খায়রুল তালুকদার। তাহলে সে কিভাবে জানে এই বিষয়। এটা প্রথমে তার বের করতে হবে। নানাভাবে ফন্দী আঁটতে থাকে নূরী। বাদশাকে তার হাত করতে হবে এই মিশনে সফল হতে হলে। ওই বাড়িতে একমাত্র বাদশাকেই পেলো সে আপনের মতো। তার ফন্দী আঁটা শেষ। কঠিন ফন্দী! এখন কেবল বাদশাকে হাত করার অপেক্ষা। কিন্তু এখন বাদশাকে কিভাবে খবর দিবে? কিভাবে দেখা করবে? কোথায় দেখা করবে? এটাও ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো নূরীর কাছে।
এই ভিতরে একদিন বিকালে বাদশা নিজের গ্রামে গেলো। বিছানায় পড়া মা জুলফাকে দেখতে ইচ্ছে করছে তার। তিনকূলে নিজের বলতে তার মা ছাড়া আর কেউই নেই। এক বছর ধরে জীবনে এলো ফুলবানু। আজ ফুলবানুকে বিয়ে করার বিষয়টা আলাপ করবে মায়ের সঙ্গে। অবশ্য এর আগেও বার কয়েক মাকে ফুলবানুর কথা বলেছে আকারে ইঙ্গিতে। কিন্তু জুলফা নিমরাজি হয়েছে। তার কথা নাম পরিচয়হীন ফুলবানু তার ছেলের অযোগ্য। তার পুত্র বাদশা। তালুকদার বাড়ির সব দায়িত্ব বাদশার হাতে। সে গৃহস্থ ঘরের মেয়েকে বাদশার বউ বানাবে। বাদশা সেদিন মনে আঘাত পেলো। তবুও মাকে কিছু বলেনি। পিতৃহারা বাদশা মায়ের ছায়াতলে বড় হয়েছে। সেই মায়ের অন্তরে সে ব্যথা দিতে নারাজ। মায়ের হাতে পায়ে ধরে ম্যানেজ করে নিতে হবে। আজ রাতে মায়ের কাছে থেকেই পরেরদিন চলে যাবে সে উজানপুর গ্রামে।
বাদশা তাদের ঢুলীর বেড়ার ঘরে পা রাখতেই থমকে দাঁড়ালো। এ সে কাকে দেখছে। বিদুৎ শক খাওয়ার মতো তার সমস্ত শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। অসময়ে ছেলেকে দেখে জুলফা ভয়ানকনভাবে ঘাবড়ে গেলো।
“তালুকদার চাচা আপনে?”
“আমি এইদিকে এক কাজে আসছিলাম। তুমি সেদিন কইলা তোমার মা অসুস্থ। তাই ভাবলাম তোমার মায়েরে একটু দেইখা যাই। হাতে কিছু পয়সাকড়িও দিয়া যাই।”
রাজবধূ পর্ব ১৪
কথাগুলো বলেই ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে বাদশাদের ঘর হতে বেরিয়ে গেলো খায়রুল তালুকদার।
বাদশার মনে তালুকদারকে নিয়ে পূর্বের একদিনের মতো আজো দানা বাঁধলো কিছু প্রশ্ন।