রাজবধূ পর্ব ১৬

রাজবধূ পর্ব ১৬
রেহানা পুতুল

কথাগুলো বলেই ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে বাদশাদের ঘর হতে বেরিয়ে গেলো খায়রুল তালুকদার।
বাদশার মনে তালুকদারকে নিয়ে পূর্বের একদিনের মতো আজো দানা বাঁধলো কিছু প্রশ্ন। সে জুলফার পাশে বসলো। কপালে ভাঁজ ফেলে বিস্ময় ও কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“মা। তালুকদার আইজ হঠাৎ আমাদের বাড়িতে? আর কোনদিন আইছে এর আগে?”
জুলফা নিরুত্তর। ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে বিছানার এককোণে। কি বলবে বা কি বলা যায় ভেবেই তার পাগল পাগল দশা। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিলো গোপনে।
বাদশা আবারো একই প্রশ্ন করলো মাকে। জুলফা টনটনে গলায় বলার চেষ্টা করলো,
“এর আগেও দুই চাইবার আসছে। তুই হেগো বাড়িতে বহুদিন ধইরা আছত। তাই এদিকে আইলে আমারে দেইখা যায়। কিছু টাকাকড়িও দেয়। ক্যান কোন সমস্যা হে আইলে?”
বাদশা মায়ের কথা আংশিক বিশ্বাস করে। তবে পুরোপুরি নয়। ছোট তালুকদার এবার তার নজর বন্দী হয়ে গেলো। মাকে সাবধানী চোখে বলল,

“এরে বেশী প্রশ্রয় দিবা না। তারে আমার বেশি সুবিধার মনে হয় না মানুষ হিসেবে। কয়দিন আগে দেখছি এক নারীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হইছে। সে নারীটার গলা টিপে ধরছে।”
জুলফা হতভম্ব গলায় বলল,
“কি কস? কে সেই নারী?”
বাদশা নূরীর কথা আড়াল করে সচেতনভাবেই। বলে,
“তুমি চিনবানা। তাদের গ্রামের।”
“ওহ। হয়তো কোন বিষয় আশয় নিয়া কোন্দল হইছে সেই বেটির লগে। তালুকদারগো হিসাব নিকাশই অন্যরকম।”
বাদশা নিজেই প্রসঙ্গ বদলে ফেলে। মায়ের শরীরের খবর নেয়। মা জানায় এখন ভালোর দিকে আছে শরীর। বাদশা উঠে গিয়ে পিছনের রুমে যায়। মিটসেফ খুলে এটা সেটা নিয়ে খায়। ফিরে এসে মায়ের পাশে লম্বা হয়ে শোয়। মায়ের গায়ে হাত রেখে ফুলবানুর প্রসঙ্গ তোলে। মাকে বোঝায়। এই শীতেই ফুলবানুকে ঘরে তুলতে চায়। জুলফা ম্যাড়ম্যাড়ে স্বরে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ফুলবানু কামের মাইয়া। তারে করবি বিয়া?”
“মা আমিওতো কাজের ছেলে। গরীবের ছেলে। তার আর আমার পরিচয়ে তফাৎ নাই। আমি ফুলবানুরে নিয়াই সুখী হমু। তুমি শুধু দোয়া কইরো আমগো দুইজনরে।”
জুলফা আর কিছু বলে না। শান্ত দীঘির জলের মতো নিরব থাকে। দীর্ঘস্বাস লুকায় ছেলের অলক্ষ্যে। বাদশা ঘুমিয়ে পড়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।
রাজ অফিসে টাইপ মেশিনে টাইপিংয়ে ব্যস্ত। একজন কর্মচারী এসে তার দিকে একটি খাম এগিয়ে ধরলো বিনয়ের সঙ্গে।
“স্যার আপনার চিঠি আসছে।”
রাজ চমকে তাকালো। চিঠিটি হাতে নিয়ে ভরাট কন্ঠে বলল,
“ঠিক আছে আবুল। রেখে যাও।”
আবুল নিচু মাথায় প্রস্থান নিলো রাজের সম্মুখ হতে। রাজের তর সইছে না। এক্ষুনি তাকে পড়তে হবে। হাতের কাজ রেখে খামের উপরের ঠিকানা দেখলো। শিখা চিঠি দিয়েছে। রাজ আপ্লুত হয়ে উঠলো। যত্ন করে চিঠির মুখ ছিঁড়ে নিলো। বড় একটি কাগজের মাঝখানে অল্প কিছু লিখা। এতটুকুন চিঠি। পুরো কাগজটা ভরে লিখলে কি হতো খুকী? তবুও রাজ আবিষ্ট হয়ে নিবিষ্ট চিত্তে পড়তে লাগলো চিঠিখানা।
আসসালামু আলাইকুম,

কেমন আছেন? আপনার চিঠি পেয়েছি। অনেক ভালো লাগলো। আপনার কথা আমার মাঝে মাঝে মনে পড়ে। আপনাকে টেলিফোন করতে ইচ্ছে করে। আবার দরকারও আছে। কিছু কথা ছিলো। কলমের ভাষায় সব বলা যাবে না। মুখের ভাষায় বলতে হবে। কথাগুলো আপনাদের বাড়ি নিয়ে। কিন্তু দ্বিধার জন্য পারছি না। আপনার চিঠির ভাষা অসম্ভব সুন্দর। খালি পড়তে মন চায়। কিভাবে এত ভাষা শিখলেন? মনে হয় অনেক পড়াশোনা করেছেন আপনি এই বিষয়ে। আমার ক্লোজ বান্ধবীর নাম কুসুম। তাকে আপনার কথা বলেছি। সে দেখতে চেয়েছে আপনাকে। নিয়মিত নামাজ পড়তে চেষ্টা করবেন। আমার নামাজ পড়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই। আম্মা বকে বকে অভ্যাস করিয়েছে। আমার টেস্ট পরিক্ষা সামনে। দোয়া করবেন। আর কিছু লিখার মতো কথা খুঁজে পাচ্ছি না। চিঠি পেলে উত্তর দিবেন।
ইতি,
মধুপুরের শিখা।
রাজ হেসে ফেলল। খালি রুমে শব্দ করেই বলল,

মধুপুর গ্রামে আর কোন শিখা নেই? হাঃহাঃহাঃ। তোমার চিঠিটা বেশ সাদামাটা। বুঝলাম এটাই তোমার প্রথম ভালোবাসার চিঠি। কাঁচা হাতে পাকা লিখা আশা করাও ঠিক না। তবুও ভীষণ আনন্দ পেলাম। চেষ্টা করেছো অন্তত। তবে আমি তোমাকে আগের চেয়েও মাধুর্যময় প্রেমের চিঠি লিখবো। তা পড়ে পড়ে দেখে দেখে তুমি আমার চেয়েও রোমান্টিক মধুমাখা চিঠি লিখতে পারবে একসময়।
কতগুলো বলা শেষেই সে চিঠিটা ভাঁজ করে ঠোঁটে চেপে ধরলো এক মুহূর্তের জন্য। বুকপকেটে রেখে দিলো যত্ন করে সিন্দুকে রাখা গহনার মতো। অবসর হলেই চিঠির জবাব লিখতে বসবে। দেরী করা যাবে না। রেজিষ্ট্রি করে দিলে চিঠি ইমার্জেন্সিভাবে তিন দিনেই পেয়ে যাবে মধুপুরের অগ্নিশিখা। নয়তো সপ্তাহের মতো লেগে যাবে। শিখা কি বলতে চায় শোনা জরুরী।

ছোট তালুকদারের মনে ভয় ঢুকে গেলো। বাদশা কি তাকে সন্দেহ করেছে? করাটাই স্বাভাবিক। তালুকদাররা এভাবে সচরাচর একজন কর্মচারির বাড়িতে পদধূলি দেয়না। বাদশা চতুর ও সাহসী ছেলে। নিগুঢ় সত্য জেনে গেলে তার মৃত্যু অবধারিত। তার পূর্বে বাদশা নয়তো জুলফাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এদিকে নূরীকে একান্তে পাওয়ার লোলুপ বাসনায় সে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফন্দী আঁটছে কিভাবে নূরীকে বশে আনা যায়। তার আগে জুলফার একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। কই মাছের প্রাণ জুলফার। মারার জন্য বহু চেষ্টা করেও মারতে পারল না। তবুও হাল ছাড়ে না সে। যেহেতু বাদশাকে মারা দুরূহ কাজ। তাই জুলফাকে মারার জন্য ফাইনাল প্রস্তুতি নেয় ছোট তালুকদার।
রাজের ফিরতি চিঠি চলে এলো শিখার কাছে। সাথে পাঁচ হাজার টাকাও দিয়ে গেলো পিয়ন। শিখা অধিকারসুলভ হাসি দিয়ে বলল,

বাব্বাহ! এক্কেবারে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে চিঠি। যেন তাড়া কইরা পাই। আবার এত্ত টাকা! দরকার কি ছিলো। দেখিতো কি লিখলো এবার কবি সাহেব।
“মধুপুরের অগ্নিশিখা,
কেমন আছো? নিশ্চয়ই এক মাতাল প্রেমিকের অতল ভালোবাসায় ভালো আছো। আমি একদম ভালো নেই তোমাকে ছাড়া। তুমিহীনা এই হৃদয় শূন্য মরুভূমি। আজকাল ম্যাজিক শিখতে ইচ্ছে করে। তাহলে দুই বছরকে এক মাসেই শেষ করে দিতাম। সুনয়না আমার,ঘড়ির কাঁটা রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা শেষে এখন তোমাকে লিখতে বসলাম। আমার একলা বারান্দায় লুটোপুটি খাচ্ছে ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলো। সেই ঝকঝকে আলো আমার কাছে মিয়ম্রাণ। জগতের সমস্ত আলো আমার কাছে ফিকে! ধূসর! আমার সব আলো তোমায় ঘিরে। ও হ্যাঁ প্রিয়া,তোমার চিঠি পেয়েছি। তুমি তোমার মতো করে লিখেছো। আমি আমার মতো করে বুঝে নিয়েছি। নির্ভুল বানানে তোমার হ্যান্ড রাইটিং চমৎকার। চিঠির ভাষার মতো তোমার মুখের ভাষা শুদ্ধ হলে মনে হয় দারুণ হতো। যাইহোক সেটা সামনের দিকে ঠিক হয়ে যাবে। আমার আদালতে তোমার সাজা হবে। কারণ তুমি বলেছে মাঝে মাঝে মনে পড়ে আমার কথা। তাই। আমিতো এক সেকেন্ডের জন্যও তোমায় ভুলতে পারিনা। মন মন্দিরে দীপশিখা হয়ে জ্বলছো অহর্নিশ!

আরেকটা সাজা হলো তুমি পুরো পাতা জুড়ে লিখনি কেন? দুষ্ট কোথাকার।
আমি ভাষা নিয়ে পড়িনি। তবে অনেক পড়েছি। এম ও পাশ আমি। শহরেই পড়াশোনা করেছি। ধীরে ধীরে সব জানবে।
চিঠির সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা দিলাম। আম্মাকে দিও আর তুমি খরচ করো। আমার চিঠি পাওয়া মাত্রই সময় করে টেলিফোন করবে ফোন ফ্যাক্সের দোকানে গিয়ে। আমাদের বাড়ির বিষয়টা জানতে চাই। কি হয়েছে? তোমার সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহার করেছে? আমাদের পরিবারের কাউকে ত আমি কখনো এমন দেখিনি। আর যদিও টুকটাক কিছু করে থাকে তার বড় একটা কারণ রয়েছে। আম্মা আমাকে তার ভাতিজিকে বিয়ে করাতে চেয়েছে। তাই। হাসু মামার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি। অতিরিক্ত মদ্যপান। তাই মৃত্যু স্বাভাবিক। বড় ভাইয়া টেলিগ্রাফ করে আমাদের তিন ভাইকে জানিয়েছে। তোমার কিন্নরকন্ঠী শোনার অধীর অপেক্ষায় আছি।

ইতি,
পল্লী কিশোরীর এক দিশেহারা প্রেমিক।
শিখা মন ভরা অবধি চিঠিটা বারবার পড়ে নিলো। পড়া শেষে চিঠিটা তুলতুলে গালের একপাশে চেপে ধরলো মিটমিটিয়ে হেসে।
নূরীর কাছে গিয়ে বলল,
“আম্মা উনি টেলিফোন করতে বলছে। পরিক্ষা শ্যাষ হইলেই একবারে ফোন করমু। অপেক্ষায় দিন গুনুক। বেচারা! কি কও?”
” তা পারবি। টাকা কিছু তোর কাছে রাখবি?”
“এখন তোমার কাছে রাখো। ঘরের কোন দরকারে খরচ কইরো।”
“সেটাতো করমুই। দুইটা কাঠের চেয়ার কিনতে হইবো। তোর স্বশুরবাড়ি থেকে কেউ আইলে পুরানা চেয়ারে বসতে দিতে শরম করে। আল্লাহ গো! বাঁচাইয়া রাইখো আমার জামাইটারে।”

শুকরিয়া আদায় করে উচ্চারণ করলো নূরী।
রাশেদের অপেক্ষার অবসান ঘটে ধরণীর কোলে সন্ধ্যা নেমে এলে। সে চোরাচোখে দেখে নিলো কে কোথায় আছে। সবাই সবার রুমে। দুই তালুকদার মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়েছে। এশার নামাজ শেষ করে তারা বাড়ি ফেরে। ঘরে আর কোন পুরুষ নেই। কাচারি ঘরে থাকে বাদশা ও বরকত। তারা সেখানে আছে। মতির মা ও ফুলবানু ঘুমায় রান্নাঘরের বড় চৌকিতে।
একই ছাদের নিচে তালুকদার পরিবারের সদস্য এ তাদের দাস,দাসীরা ঘুমাতে পারবে না। এতে তাদের জাত যাবে। এমন অহংবোধ থেকেই ফুলবানু ও মতির মায়ের শোয়ার ব্যবস্থা রান্নাঘরে। নয়তো বড় ঘরেই পড়ে আছে অবশিষ্ট রুম। যদিও হাফটিনের বেড়ার রান্নাঘরটিও থাকার মতই বড়।
রাশেদ রান্নাঘরের চাপানো দরজা সামান্য ফাঁক করলো। দেখলো মতির মা বিপরীতমুখী কাত হয়ে শুয়ে আছে। ফুলবানু ফ্রেমেবন্ধী একটি ছোট্ট রুমালে রঙিন সূতার কারুকাজ করে যাচ্ছে। আপন মনে গীত গাইছে।
“আইছে দামান সাহেব হইয়া/বইছে মুখে রুমাল দিয়া/আইজ বুঝি নয়া দামান ফুলেরে যাইবো নিয়া/ ঘোমটা মুখে বউ সাজাইয়া..”

দরজার বাইরে কারো উপস্থিতি টের পেয়েই সে চকিতে চাইলো। রাশেদ চোখের পাতা ঝাপটিয়ে ইশারা দিলো বাইরে আসার জন্য। ফুলবানুও ইশারায় বোঝালো,
“যান আইতাছি।”
রাশেদ বাগানের প্রবেশমুখে আবছায়ায় মাঝে চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ফুলবানু সন্তপর্ণে নিঃশব্দ পায়ে বেরিয়ে এলো। ধীর পায়ে চোরের মতো এদিক ওদিক চেয়ে এগিয়ে গেলো। তাকে দেখেই রাশেদ চাপাস্বরে ডাক দিলো।
“এই ফুলবানু এইদিকে আমি।”
“ওমাগো। এহনইতো ডরাইলাম।”
বলে বুকের মাঝে থু থু ছিটে মারে ফুলবানু। রাশেদ ফুলবানুর হাত ধরে। নিস্তব্ধ বাগানের সরু পথ ধরে এগিয়ে যায় কিছুটা ভিতরে। রাশেদ ফুলবানুকে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি নিদিষ্ট স্থান দেখিয়ে বলে,

“আয় এইখানে বসি।”
“মাটির উপরে বসমু? বুঝলাম মা ভাইজান? ব্যাপার টা কি?”
হতচকিত স্বরে হিসহিসিয়ে বলল ফুলবানু।
“আরেহ না। আমি কিছুক্ষন আগে আইসা পরিষ্কার কয়টা কলাপাতা কাইটা বিছায়া রাখছি। দাঁড়ায়া কতক্ষন কথা বলা যায়। তোর পা ব্যথা করব। তোর প্রতি আমার আলাদা একটা টান আছে। সেই অধিকারেই তোরে কিছু বলমু। সুন্দর একটা বিছানা হইছে। আয়।”
ফুলবানু ও বাদশা পায়ের স্যান্ডেল খুলে কলাপাতার শয্যায় উঠে বসে। রাশেদ ফুলবানুর হাতে কচকচে চারটি পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে দেয়। ফুলবানু খুশী হয়।
” হাতে রাখলে হারাইয়া যাইবো। বক্ষ বন্ধনীর ভিতরে রাইখা দে। পড়ার চান্স নাই। যতকিছুই হোক।”

ফুলবানু রেখে দিলো রাশেদের বলা স্থানেই। রাশেদ প্রথমে ফুলবানুকে তার সন্তান জন্মদান নিয়া বিষয়টা খুলে বলে। ফুলবানু ব্যথিত স্বরে আক্ষেপ করলো শুনে। রাশেদ তার পরক্ষণেই ফুলবানুর হাত চেপে ধরে বলল,
“তুই আমার এই উপকারটা কর ফুলবানু। আমি সারাজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ থাকুম। আমি তোর শরীরের কোথাও হাত দিমুনা। কারণ আমার বাজে মতলব নাই। শুধু তোর সঙ্গে আপোষে আমারে একমাস মেলামেশা করতে দে। আমি এই কাজটা কইরাই চইলা যামু। চিল্লাইসনা আল্লারওয়াস্তে। মন দিয়া বোঝার চেষ্টা কর। আমি রানীরে বুঝাইতে চাই আমি সন্তান জন্মদানে অক্ষম নয় সক্ষম। তোর প্যাটে বাচ্চা আইসা গ্যালে তখন নষ্ট কইরা ফালাইলে হইবো। আমি সেই ঔষধ আইনা দিমু তোরে। তুই শুইয়া পড়। আমি বালিশের ব্যবস্থা করতাছি।”

ফুলবানুর কলিজা মোচড় মেরে উঠে কলার মোচার মতন। ভয়ার্ত ও ঘৃণাভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“আমি মইরা গ্যালেও এইটা পারুম না। আমার দেহমন একজনরে সপে দিছি। আরেকটা বিয়া করলেই ত হয়। ধরেন আপনের টাকা নিয়া যান।”
“এখানেই যত গণ্ডগোল রে ফুলবানু। তালুকদার পরিবারের একটা ঐতিহ্য ও রেওয়াজ আছে। বাইরে দশজন নারীর সঙ্গে রাইত কাটাও। সমস্যা নাই। কিন্তু ঘরে বিবি থাকবে একটাই। এবং সারাজীবন সেই থাকবো। ছাড়াও যাইব না তারে। নিয়মের কমতি নাই। শত নিয়ম। এইখানেই সাধারণ পরিবারের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। বুঝলি। নইলে কবেই করতাম বিয়া।”
এভাবে নানাকথায় ফুলবানুরে নরম করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলো রাশেদ।

“আমারে যাইতে দেন কইলাম। নইলে চিল্লায়া সবাইরে ডাকমু।”
শাসানো গলায় বলল ফুলবানু।
“দেখ। আমি চাইলে তোরে জোর কইরা করতে পারি। তুই যাইবি কই? পালাবি কই? কেউই নাই তোর। আর তোর কথা দশজন বিশ্বাস ও করবে না।”
ফুলবানু প্রত্যুত্তরে কিছুই বলে না। উঠে দাঁড়াতে গেলে রাশেদ তাকে হ্যাঁচকা টানে বসিয়ে চিৎ করে শুইয়ে দেয়। ফুলবানু যেন না উঠে যেতে পারে, তাই ফুলবানুর গায়ের উপর উঠে দুই পা দুইদিকে দিয়ে বসে পড়ে রাশেদ। যেন চিৎকার না দিতে পারে। সেজন্য বুকের ওড়না নিয়ে ফুলবানুর মুখ বেঁধে ফেলে শক্ত করে। নিজের গায়ের হাফহাতার গেঞ্জি ও লুঙিটা খুলে নেয়। ফুলবানুর পরনের সেলোয়ার খুলে নেয়। সব পেঁচিয়ে বালিশের মতো বানিয়ে ফুলবানুর মাথার নিচে দেয়। ফুলবানু শব্দ করতে পারছে না। কেবল অস্ফুট স্বরে গোঙানির মতো শব্দ হচ্ছে।

রাশেদ জোরালো ও দ্রুতগতিতে তার কাজ শুরু করে দিয়েছে মাত্রই। ঠিক সেইক্ষণেই পিছন হতে তার মাথায় ইটের আঘাত পড়লো। রাশেদ প্রচন্ড যন্ত্রণায় মাথায় হাত দিয়ে লুটিয়ে পড়লো। দ্বিতীয়বারের মতো আবারো একই ইটের আঘাত পড়লো মাথায়। দীর্ঘসময় রক্তক্ষরণ হয়ে রাশেদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। পরেরদিন রাশেদের লা*শ পাওয়া গেলো বাড়ির সামনে। বাজারে যাওয়ার পথের পাশে।

রাজবধূ পর্ব ১৫

খু*নী নির্বিঘ্নে সবার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাজ করছে। কেউ কস্মিনকালেও তাকে সন্দেহ করছে না। তালুকদার পরিবারের একেকজনের সন্দেহের বীজ একেকদিকে ছুটতে লাগলো তীরের ফলার ন্যায়।
তবে রানী কিছু একটা আঁচ করতে পারলো স্বামীর মৃত্যু নিয়ে। তবুও সে নিজের ভাবনায় অবিচল রইলো।

রাজবধূ পর্ব ১৭