প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ২৮

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ২৮
মুসতারিন মুসাররাত

পরম আকাঙ্ক্ষিত রমণীর দর্শনে এক নিমিষেই বুকের ভেতরে বয়ে চলা কাল বৈশাখীর তান্ডব শিথিল হয়। বেপরোয়াভাবে তীব্র গতিতে চলা হৃদযন্ত্রটার ছটফট, অস্থিরতা মিইয়ে আসে। সেখানে শীতল বর্ষণ নামে। ঝমঝমিয়ে অঝোরে বর্ষণ যেমন প্রকৃতিকে ঠান্ডা শীতল করে, অমনি তনুজার সংস্পর্শে ইভানের পুরো পৃথিবী শীতলতায় ছেয়ে যায়। ওদিকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আচমকা ইভানের দর্শনে, স্পর্শে তনুজা স্তব্ধ বিমূঢ় হয়!
খানিকক্ষণ আগেও ইভানের মনে হচ্ছিলো, এই রঙিন পৃথিবীতে, চারিপাশে হাজারো লোকজনের ভিড়ে সবই আছে; তবুও যেন কিছুই নেই। মূহুর্তেই সেই শুণ্য স্থান পূর্ণ হয়। সাথে এক সমুদ্দুর প্রশান্তি পায় হৃদয়। ইভানের দৃঢ় আলিঙ্গনে তনুজার বুকের দুরুদুরু কম্পনের মাত্রা বাড়ছে; সাথে তনুজার ভাবনার নদী নিরবধি ছুটছে,

-” হঠাৎ এখানে ইভান! কীভাবে?”
অবাক বনে যায় মেয়েটা। তনুজা ধীরে ধীরে বুক থেকে মাথাটা উঁচিয়ে তিরতিরিয়ে কাঁপাকাঁপা পল্লব তুলে ইভানের শ্যাম সুন্দর মুখের দিকে তাকায়। ইভানের নিটোল চাহনি নিবদ্ধ হয় মায়াবী বদনখানায়। দু’জন দু’জনের দিকে নির্নিমেষ নিষ্পলক চাউনিতে কিছুপল চেয়ে রয়। দু’দিন দেখা নেই, নেই কোনো যোগাযোগ। এই দুইদিনকেই ইভানের কাছে সপ্তাহ নয়, মাস নয়, বছর ঠেকছে। সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় তনুজার কোমল, স্নিগ্ধ পবিত্র মুখশ্রী ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ইভানের। কাল, স্থান পরখ না করেই আচমকা মনের ইচ্ছেকে প্রায়োরিটি দেয়। ইভান আলগোছে তনুজার গোলগাল মুখটা আঁজলে ধরে; প্রথমে তনুজার মসৃণ কপালে অধরজোড়া ছোঁয়ায়। ইভানের স্পর্শে তনুজার মেরুদন্ডের শিড়দাড়া বেয়ে বরফ স্রোত বয়ে যায়। পায়ের তলা অবধি শিরশির করে ওঠে। পরপর ইভান আলতো করে ছোট ছোট চুম্বনে তনুজার সারা মুখ ভরিয়ে দেয়। আকস্মিক ঘটনা আর অনুভূতির জোয়ারে তনুজা বাকরুদ্ধ। গলা শুকিয়ে চৌচির। জিহ্বার সাথে যেন পাথর বাঁধা, এমন ভারী। কোনো শব্দই উচ্চারিত হচ্ছে না। তনুজার কপালে কপাল ঠেকায় ইভান। চোখদুটো বুঁজে অস্ফুটে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“উফ্! এতটাক্ষণ কী যে কষ্টের মধ্যে ছিলাম আমি! কাউকে বলে বুঝানো যাবে না। আমার বারংবার মনে হচ্ছিলো; এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। থ্যাংকস গড! তুমি ঠিক আছো।”
তনুজা ভ্রু-ট্রু কুঁচকে অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলল,
-” আপনি! এখানে? মানে কীভাবে জা_”
তন্মধ্যে ফুপির গলার স্বর আসায় তনুজার কথা অসম্পূর্ণ রয়। ভেতর থেকে ফুপি হাঁক ছেড়ে শুধালেন,
-” হ্যা রে তনু? কে এসেছে?”
গলার স্বরের শব্দে দু’জনেই অপ্রস্তুত হয়। তনুজা ঝট করে ইভানের হাত দু’টো সরিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে শশব্যস্ত হয়। ইভান কিঞ্চিৎ মাথা নুইয়ে অপ্রস্তুত ভঙিতে মাথার পিছে চুলকায়। তনুজা এড়িয়ে যেতে প্রত্যুত্তরে জোরেশোরে বলল,

-” হ্যা ফুপি। দেখছি।”
পরপর ইভানের দিকে তাকিয়ে মুখাবয়বে গম্ভীরতার ছাপ টেনে নেয় তনুজা। মিছেমিছে বি’র’ক্ত হওয়ার ভণিতা করে ঝটপট সোজাসাপটা বলে উঠল,
-” হঠাৎ আপনি এখানে! না মানে কী মনে করে?”
তনুজার এরুপ প্রশ্নে ইভান হোঁচট খায়। বেচারা আশ্চর্য বনে যায়! সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেওয়ার মতো অসাধ্য সাধন করে বউকে খুঁজে বের করল। আর সেই বউয়ের মুখ নিঃসৃত এহেন প্রশ্ন! যা শুনে ইভান স্তব্ধ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। পরপর নিজেকে স্বাভাবিক করে কপাল কুঁচকে তাকাল ইভান। নির্লিপ্ত ভঙিতে বলল,
-” বউকে মনে করে। এন্ড বউকে নিতে।”
ভেতরে ভেতরে অপ্রস্তুত আর অস্বস্তিতে ঠাসা তনুজা উপরে শক্ত আবরণ ধারণ করে রাখল। চোখেমুখে কৃত্রিম রাগ ফুটিয়ে আওড়ালো,

-” আ-আমি সিরিয়াসলি বলছি। মোটেই আপনার সাথে মজা করছি না। আপনি ফুপির বাসার অ্যাড্রেস কীভাবে পেলেন? আর আমি যে এখানে জানলেনই বা কীভাবে? স্ট্রেইঞ্জ!”
-” তোমার সাথে মজা করার প্রশ্নই আসে না। আমি তো সিরিয়াসলিই বলছি। তার আগে তুমি আমাকে বলো, তুমি তোমার দাদু বাসায় না গিয়ে এখানে?”
তনুজা ছোট করে জবাবে বলে,
-” এমনি।”
ইভান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
-” ওকে, ব্যাপার না।”
দুই সেকেন্ড থেমে কিছু ভেবে ফের বলল,

-” তুমি কী ভেতরে যেতে বলবে না? এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবে। আর যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রেডি হও, তাহলে ভেতরে না ঢুকাই বেটার। আমি বাইরেই ওয়েট করছি; তুমি রেডি হয়ে আসো। ক্যামন?”
তনুজা কপাল গুটিয়ে ঝ’ড়ো বেগে প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে,
-” রেডি হবো মানে? কোথায় যাব?”
-” বাড়ি যাবে।”
নাকমুখ কুঁচকে তনুজা বলল,
-” হ্যা বাড়ি যাবো। আগামীকাল। তবে আপনার সাথে নয়। আমি একাই পারব। আগামীকাল দাদু বাড়িতে যাবো। দাদির কাছে।”
ইভান কিছু বলবে এমন সময় পায়ের শব্দ সাথে গলার স্বর আসলো,

-” তনু বাইরে কী করছিস তুই? কার সাথে কথা বলছিস?”
তনুজা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। ইভানের দিকে তাকিয়ে অগত্যা তনুজা বলল,
-” ভেতরে আসুন। আর শুনুন, আমি কোথাও যাচ্ছি না। এখান থেকে সোজা দাদির কাছে যাবো। বেশ কিছুদিন সেখানে থাকব।”
ইভান ঢের আন্দাজ করল; বউ বেজায় চটে আছে। তার অভিমানের পাল্লা ভারী। সহজেই মন গলবে না। জোর না করে বুদ্ধি দিয়ে কৌশলে কিছু বলে-কয়ে শক্ত পাথুরে মনটা নরম করতে হবে। এরমধ্যে প্রৌঢ়া মহিলাটি এগিয়ে আসতেই ইভান লম্বা করে সালাম দেয়। শাহানাজ বেগমের কপালে রেখার উদয় হয়। তনুজা মুখটা অন্ধকার করেই ইভানকে ফুপির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। শাহানাজ বেগম জামাইকে কোথায় বসতে দিবেন? কী সামনে দিবেন? কীভাবে জামাই আপ্যায়ন করবেন? তাই নিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বসার ঘরে যেতেই অমায়িক আদূরে গলায় ইভানকে বললেন,

-” বাবা বসো। তোমাদের বাসার সবাই কেমন আছে?”
ইভান স্মিত হেসে নিচু স্বরে বলল,
-” সবাই ভালো আছে।”
শাহানাজ অমায়িক হেসে বললেন,
-” তোমার ফুপা এখনো অফিস থেকে ফেরেনি। চলে আসবে এক্ষুনি। একটা ছেলে আমার। সে অন্য জেলায় থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। বাসায় আমি সারাটা দিন একাই থাকি। তনু আসাতে কী যে ভালো লাগছে না! কখন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে টেরই পাচ্ছি না। মেয়েটাকে অনেকদিন পর দেখলাম। অসুস্থতার জন্য কোথাও তেমন যাওয়া হয়ে ওঠে না।”
আরো কিছু কথাবার্তা শেষে শাহানাজ হাস্যজ্জ্বল মুখে অমায়িক কণ্ঠে বললেন,

-” তোমরা কথাবার্তা বলো আমি না চা-নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর ডিনার রেডি করছি।”
অতঃপর তনুজার দিকে তাকিয়ে ফের বললেন,
-” তুমি আসবে তনু আগে থেকে আমাকে জানাবে না। হ্যা রে তনু তোর কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। আমাকে অন্তত একবার বলবি না।”
তনুজা গুটিসুটি মে’রে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। ফুপির কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খায়। নড়েচড়ে দাঁড়ায়। ইভান আসবে সে নিজেই তো জানতো না। তা জানাবে কী করে? তনুজা মুখ খুলবে তার আগেই ইভান নম্র স্বরে বলল,
-” ফুপি আপনি ব্যস্ত হবেন না, প্লিজ। আর এখন কিছুই করবেন না। এমনিতেই রাত হয়েছে, আমাদের ফিরতে হবে।”
শাহানাজ হইহই করে উঠলেন,

-” এমা সেকি ফিরবে মানে! মাত্র আসলে আর এখুনি যাওয়ার কথা বলছো। তাই হয় নাকি। আজ রাতটা তো অন্তত থাকতে হবে।”
ইভান ভদ্র চিত্তে নাকচ করে বলল,
-” আজ নয় ফুপি। পরে অন্য কোনোদিন থাকব। আর আপনার হাতের রান্নাও খাবো।”
শাহানাজ বেগম নাছোড়বান্দা। সে কোনোমতেই রাজি হলেন না। একমাত্র ভাইঝি জামাই। প্রথম আসছে। এভাবে যেতে দেওয়া যায়। শাহানাজ কিচেনের দিকে পা বাড়ান। তনুজা পায়ের নখ দিয়ে ফ্লোর খুঁটছে। ইভান চোখ তুলে তনুজার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
-” তোমার সেলফোনের সুইচড অফ কেনো?”
‘তারমানে ইভান কল করেছিলো।’ এটা ভাবতে ভাবতেই মুখে বলল তনুজা,
-” ফোনটা আসার দিন হাত ফস্কে রাস্তায় পরে যায়। পিচের রাস্তায় পড়ার সাথে সাথে ডিসপ্লে খুব বাজে ভাবে ফেটে যায়। তারপর থেকে ফোন ওপেন হচ্ছে না।”

-” ওহ্। এখানে আসছো ভালো কথা। তবে তোমার দাদিকে জানাতে পারতে অন্তত। বয়স্ক মানুষ তোমার ফোন বন্ধ পেয়ে, তারপর তোমার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো যাওনি শুনে উনি তো ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন।”
পকেট থেকে ফোন বের করে পিন বসিয়ে আনলক করে তনুজার দিকে বাড়িয়ে আদেশের সুরে বলল,
-” নাও ফোন দিয়ে কথা বলো। উনি চিন্তায় আছেন।”
তনুজা ফোনটা হাতে তুলতে তুলতে বলল,
-” আমি দাদির কাছে যাওয়ার কথা বললেও দাদিকে ফোনে জানাইনি। দাদি জানতো না আমার যাওয়ার কথা। এই রোড দিয়ে গাড়ি করে যাওয়ার সময় গ্রোসারি শপের সামনে ফুপিকে দেখে ড্রাইভারকে থামাতে বলি। অনেকদিন পর ফুপিকে দেখে গাড়ি থেকে নামি। এদিকে ফুপি জোর করলেন। সেইজন্য এখানে আসা।”

মনমানসিকতা স্বাভাবিক না থাকায় দু’দিনে কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করেনি তনুজা। ফুপির সামনে স্বাভাবিক খোলসে থাকলেও ভিতরে নীরবে নিভৃতে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে। আড়ালেই রেখেছে নিজের যাতনা।
কিছু মনে করে ইভান বলল,
-” ড্রাইভার কেনো তোমার সঠিক অ্যাড্রেস দেয়নি। ও মিথ্যে বলল কেনো?”
-” ড্রাইভারের দোষ নেই। আমি গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথ ফুপির সাথেই রিকশায় আসি। ড্রাইভার একা ছাড়তে চাইছিলো না। বারবার বলছিলো, স্যার একেবারে বাসায় ড্রপ করে দিতে বলেছে। আমি উনাকে অভয় দিতে বলি, আপনার স্যার জিজ্ঞেস করলে পৌঁছে দিয়েছি বলেন। তাই হয়তো।”

তনুজা কিচেনে গিয়ে দেখে শাহনাজ বেগম আঁচল কোমড়ে গুঁজে ফ্রিজ খুলে গোশ বের করে ভিজিয়ে রাখছেন। তনুজাকে দেখেই একগাল হেসে ওর হাতে ফলমূল, মিষ্টান্ন খাবার ধরিয়ে ইভানের সামনে দিতে বলে। তনুজা আলতো পায়ে হেঁটে বসার ঘরে আসতেই আড়চোখে ইভানের দিকে চায়। ইভান বসে উসখুশ করছিলো, আর তনুজাকে কনভিন্স করার উপায় খুঁজছিলো। তনুজা হাতের ট্রে শব্দ করে টি-টেবিলে নামায়। সম্বিত ফিরে পেয়ে ইভান তনুজার দিকে চায়। তনুজা রোবটের মতোন বলল,
-” আপনার নাস্তা।”
আর কথা না বলে পা চালিয়ে প্রস্থান করতে নেয় তনুজা। দু’পা ফেলতেই হাতে টান পড়ল। মাথা ঘুরিয়ে দেখে ইভান হাতের কব্জি ধরে। পরপর দু’কদম এগিয়ে আসে ইভান। ইন্নোসেন্ট ফেস করে মৃদুস্বরে বলল,

-” স্যরি তনুজা। প্লিজ রাগটা একটু কমাও। আর বাসায় চলো, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।”
একদম বাচ্চাদের মতো আবদার করে আদুরে গলায় বলে ইভান। তনুজা মেকি অভিমান পুষে রাখে। কাটকাট গলায় বলে,
-” স্যরি! সম্ভব নয়। ভেবেছি কিছুদিন বাড়িতে থাকব।”
নেগেটিভ উত্তর শুনে ইভানের রাগ হলো। আচমকা তনুজার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে একহাতে। দু’জনের মাঝের দূরত্ব ঘুচায়। তনুজা ভড়কায় এদিক-ওদিক চায়। ফিসফিসিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আওড়ায়,
-” ইভান! ছাড়ুন। কী হচ্ছে কী? ফুপি চলে আসতে পারে।”
তনুজার মুখের উপর থাকা বেবি হেয়ার এক আঙুল দিয়ে কানের পিঠে ঠেলে দেয় ইভান। তনুজা মুখটা গম্ভীর করেই রাখে। ইভান দৃষ্টি সরু করে অসহায় চোখে চাইল। অপরাধ বোধে জর্জরিত হয়ে নিম্নস্বরে বলল,

-” স্যরি মাই লাভ! প্রাডোন মি। প্লিজ আর রাগ করে থেকো না। ফিরে চলো। তুমি ছাড়া আমি বড্ড বেশিই শুণ্য। তুমিহীনা আমি ইভান মূল্যহীন। আমার উপর তোমার অনেক অভিযোগ জমেছে জানি। তারজন্য অবশ্য আমিই দায়ী। একটিবারের জন্য অভিমান-অভিযোগের পাহাড় দূরে সরিয়ে দাও। আই প্রমিজ দ্বিতীয়বার আর আমার প্রতি অভিযোগ হওয়ার সুযোগ পাবে না।”
তনুজা তাচ্ছিল্য করে বলল,
-” কারো প্রতি অভিযোগ করে কী লাভ! যার ভাগ্যটাই খা’রা’প। তার কারো উপর অভিযোগ রাখা বেমানান।”
ইভান কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে বলল,
-” তুমি কিন্তু ইন্ডিরেকটলি আমাকে মিন করে কথাটা বললে। তোমার ভাগ্যে আমি ছিলাম। তার মানে এই আমিটাই খা’রা’প। একচুয়েলি তুমি এটাই বলতে চাইছো, রাইট?”

তনুজা মনেমনে পণ করেছে সে ইচ্ছে করেই ইভানকে একটু জ্বা’লা’বে, কষ্ট দিবে। বুঝাবে ইগনোর যে কতটা যাতনার। অবহেলা সহ্য করা কতটা য’ন্ত্র’ণার তা একটু হলেও বুঝুক, জানুক ইভান। তনুজা জবাব দেয় না। প্রসঙ্গ এড়াতে নিজেকে ছাড়াতে মুচড়ামুচড়ি করতে থাকে। বলল,
-” ইভান ছাড়ুন তো। ফুপি চলে আসলে বি/শ্রী হবে।”
আজকের কঠোর তনুজাকে ইভানের কাছে অচেনা ঠেকছে। তার নরম-সরম, কোমলমতি বউয়ের মনটা কবে থেকে পাথুরে হলো? সে ভেবে উত্তর পায় না। কিচ্ছুতেই যে বউয়ের মন গলছে না। বিরহে কাতর হৃদয় তনুজা একটুও অনুভব করতে পারছে না। ইভানের আকুতি-মিনতি তনুজার মন ছুঁতে পারছে না। ইভানের এবার নিজেকে ব্যর্থ মনে হলো।

এখানে নতুন জায়গায় রাত কাটানো ইভানের কাছে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মতোন। আবার তনুজাকে কীভাবে রাজি করাবে? অনেকক্ষণ একা বসে বসে জল্পনা-কল্পনা করে ইভান এক বুদ্ধি আঁটে। সে সিদ্ধান্ত নেয় আজ নাহয় বউকে বাড়ি ফেরাতে মিথ্যে বলবে। মনকে প্রবোধ দেয় ইভান হঠাৎ প্রয়োজনে মাঝে-সাঝে, একটু-আকটু হোয়াইট লাই বলা ব্যাপার না। তনুজাকে ডেকে মিছে বলে,
-” দিদুন অসুস্থ। তোমাকে আজকেই নিয়ে যেতে বলেছে। আমার তো খেয়ালই ছিলো না এটা বলার কথা।”
তনুজা চিন্তিত বদনে চায়। উদ্বিগ্ন হয়ে শুধায়,

-” কী হয়েছে দিদুনের? দিদুন কোথায় এখন?”
ইভান জড়তা নিয়ে বলে,
-” বেশি কিছু নয়। বার্ধক্য তো আছেই। সাথে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার সবসময়কার সঙ্গী। সবসময় তো অসুস্থই থাকে।”
তনুজা বিরক্ত হলো। ভ্রুযুগল গুছিয়ে বলল,
-” এগুলো তো আমিও জানি। অসুস্থ বললেন যে; নতুন করে কিছু হয়েছে কী?”
ইভান এটাসেটা বলে বোঝায় দিদুন তনুজাকে দেখতে চেয়েছে। আজ যেতেই বলেছেন। অগত্যা তনুজা রাজি হয়। তবে শাহানাজ বেগম ডিনার না করিয়ে ছাড়েন না।

ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে যায়। এসে দিদুনের কক্ষে প্রথমে যায়। দিদুন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তনুজাকে দেখে বৃদ্ধা যারপরনাই বিস্মিত হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে বুঝল দিদুন মোটেই ইভানকে আজ আনতে বলেনি। উনি তো বলে ফেললেন,
-” আজই আসলে নাতবউ। আমি তো ভেবেছিলাম যাওনা অনেকদিন, তাই এবারে কটা দিন থাক। তারপর দাদুভাইকে আনতে বলবো। তবে এসেছো ভালোই করেছো।”
ইভান তো এটা শুনে খালি গলায়ই বেষম খায়। খুকখুক করে কেশে ওঠে। তনুজা বৃদ্ধার অলক্ষ্যে ইভানের দিকে বিস্ময়ে ঠাসা বড়বড় নেত্রে চায়।

শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে তনুজা বিছানা ঝাড়ছে। দু’দিনেই রুমের কী হাল হয়েছে! বালিশ এলোমেলো, কমফোর্টার দু’দিনে আর ভাঁজ হয়নি। সোফায় টিশার্ট, প্যান্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আহা! দু’টো দিনেই রুমটার কী অগোছালো বেহাল দশা! ইভান ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোয়। টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে তনুজাকে পরখ করে। মনে মনে ভাবে,

-” বউ রুমের এলোমেলো দশা দেখল। রুমের প্রাণহীন জড়বস্তু গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অথচ রুমের অনুভূতি সম্পন্ন, রুমের মালিকের এলোমেলো দশা তার মনের দরজায় কড়া নাড়ল না। একটুও হৃদয়ে সাড়া দিলো না। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়া তো দূর; এতটুকু সহানুভূতি প্রকাশ করলো না।”
বিছানা গুছিয়ে বিছানার মাঝখানে বড় কোলবালিশটা রাখে তনুজা। এটা দেখে ইভানের হার্ট ফেল করার জোগাড় হয়। চক্ষুতারা বিস্ময়ে কোটর থেকে বেরোনোর জো। ইভান দফায় দফায় বিস্মিত হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। কণ্ঠে তীব্র অসহায়ত্ব ঢেলে শুধিয়ে বলল,
-” মাঝখানে চীনের মহাপ্রাচীর দেওয়া খুব কী জরুরী ছিলো?”

তনুজা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। ইভান হাতের টাওয়েল সোফায় ছু’ড়ে ধপাস করে বিছানার একপাশে বসল। দুই হাতের তালু ঘঁষে মুখটা অবলা নিরীহ বানিয়ে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
-” আজকে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ছে। উফ্! খুব শীত করছে।”
তনুজা পূর্ণ দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকায়। ত্যাড়া উত্তর দেয়,
-” শীত করছে হিটার অন করে দিন।”
বিড়বিড় করে বলে ইভান,
-” বউ থাকতে হিটার! এটা মোটেই শোভনীয় নয়।”
তনুজা ডান ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় বোঝায়,
-” কিছু বললেন?”
ইভান তড়িৎ দু’দিকে ঘাড় নাড়ালো। অতঃপর মৃদু আওয়াজে বলল,
-” এই শীতের জন্য মহাপ্রাচীরটা কী সরানো যায় না? এই অধমের উপর ম্যাডামের কী একটুও দয়া-মায়া হয় না। আমার জন্য না হলেও শীতের জন্য কনসিডার ক_”
ইভানের কথায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে তনুজা ঠোঁট উল্টে বলল,

-” কেউ একজন বলেছিলো ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।’ আমার মনেহয় তার এই কথাটা আমার অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত। আমি শুধু সেটাই করার চেষ্টা করছি আরকি।”
তনুজা আড়ালে মুচকি হেসে কমফোর্টার গায়ে টেনে শুয়ে পরে। ইভান লাইট নিভিয়ে সবুজ ডিম আলো জ্বালিয়ে অলস ভঙ্গিতে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। পরপর মাঝে থাকা বর্ডার সরাতে কোলবালিশে হাত রাখতেই তনুজা তাকিয়ে চোখের কালোমণি ঘুরিয়ে শাসায়। ইভান তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বুকের উপর দুইহাত রেখে শুণ্য দৃষ্টিতে ছাদের দিকে চায়। বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরোয়।

চারিদিকে কুয়াশার চাদরে মুড়ানো বসুন্ধরা। ভোরের আলো সবে ফুটছে। বাড়ির সদস্যরা এখনো তেমন কেউ রুম থেকে বেরোয়নি। কিচেনে বড় প্যানে গরম পানি টগবগ করছে। তনুজা পরপর চা-পাতি, চিনি, দুধ মেশাতে থাকে। এমন সময় কারো গলার ‘এহেম এহেম’ শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইতেই দুইহাত ট্রাউজারের পকেটে গুঁজে দরজায় এক পা ঠেস দিয়ে ইভানকে দাঁড়িয়ে দেখতে পায়। দু’জনের চোখে চোখ পড়তেই ইভান বিনিময় স্মিত হাসে। প্রত্যুত্তরে একটা মিষ্টি হাসির প্রত্যাশায় ছিলো ইভান। কিন্তু বিধিবাম! তনুজা মুখটা গম্ভীর করেই ঘাড় ফিরিয়ে হাতের কাজে মনোযোগ দেয়। ইভান হতাশ হয়। সন্তর্পণে এগোয়। পিছন থেকে তনুজার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আহত স্বরে বলল,

-” ভেবেছিলাম দিনটা শুরু করবো বউয়ের মিষ্টি মুখটা দেখে। ব্যাড লাক! ঘুম থেকে জেগে বউকে পাশে তো দূর রুমে অবধি পাইনি। এখন ইচ্ছেটা পূরণ করতে কিচেনে আসা। তবুও তুমি মুখটা গোমড়া করেই আছো। প্লিজ মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রেখো না। তোমাকে গোমড়া মুখে মানায় না। তোমার মুখের একফালি হাসি, আমার জন্য আকাশসম প্রশান্তি! ইউর স্মাইল মেকস মি স্মাইল।”
তনুজা বাঁকা চোখে তাকায়। ত্যাড়া জবাব দেয়,
-” বাহবা! আমার হাসি যে ছোঁয়াছুঁয়ে রোগের মতোন জানতাম না তো। আমি হাসলে সেটা বাতাসের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে অন্যকেউ হাসায়।”
ইভান বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে। বলে,
-” তুমি তো দেখছি খুব আনরোমান্টিক। আমার কথার গভীরতা উপলব্ধি না করে, উপহাস করছো।”
ইভানের ঠান্ডা হাতটা তনুজার গায়ের শাল চাদর গলিয়ে শাড়ির আঁচল ভেদ ধরে মেদহীন পেট স্পর্শ করতেই; তনুজা মৃদু কেঁপে ওঠে। ঘাড় ঘুরিয়ে ইভানের দিকে বড়বড় নেত্রে চায় তনুজা। ইভান তনুজার ঘাড়ে নাক ঘষে আলতো স্বরে বলল,

-” তোমার এই দূরত্বে আমি দু’দিনেই শুকিয়ে গিয়েছি। ইতিহাস সাক্ষী ছেলেদের ভালোবাসা প্রখর। ছেলেদের ভালোবাসার গভীরতা বেশি হয়; মেয়েদের তুলনায়। আমার প্রগাঢ় ভালোবাসা তোমার মনকে জয় করতে পারছে না। এটা দেখে আমি হতাশ! ভ’য়া’ব’হ হতাশ হচ্ছি।”
তনুজা ঠোঁট উল্টে চাইল। বলল,
-” হুম। আপনাদের ছেলেদের ভালোবাসা এত প্রখর আর গভীরতা এত বেশি যে থাকতে কদর ঠিকঠাক করেন না। না থাকলে উথলে পড়ে ভালোবাসা। তখন নিদর্শন দেখান। এইযে দেখুন না, ভালোবাসার অমর নিদর্শন হিসেবে সম্রাট শাহজাহান তার বেগমের সমাধির উপর তাজমহল গড়েছেন। ভালোবাসার এই নিদর্শন কিন্তু মমতাজ দেখেননি।”
থেমে তনুজা ব্যঙ্গ করে বলল,

-” আর ছেলেদের ভালোবাসা এত প্রগাঢ় যে রেগে যেতে এক মূহুর্তও দেরি হয় না। আর বউয়ের থেকে অন্যদের কথা তারা বেদবাক্য মনে করে। বেশি প্রায়োরিটি দেয় তৃতীয় পক্ষকে।”
ইভান তনুজাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তনুজার কাঁধের উপর দিয়ে দুহাত রাখে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে শান্ত শীতল গলায় বলল,
-” চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রাখতে পারো। মৃ’ত্যু’র আগ পর্যন্ত তোমার-আমার মাঝে কক্ষনো তৃতীয় ব্যক্তি আসবে না।”

বড় করে হামি দিতে দিতে এলোমেলো পা ফেলে ঢুলতে-ঢুলতে নিতি আসতে থাকে। চোখের পাতা ভারী, টেনে তুলে টুলতে টুলতে আসছে। আর বিড়বিড় করছে,
-” ইয়া মাবুদ! মানুষ এত সকাল-সকাল ঘুম থেকে জাগে কী করে! আমি তো চোখ মেলে ঠিকঠাক চাইতেই পারছি না। ধ্যাত কেনো যে স্ব-ইচ্ছায় বিয়ে নামক প্যারা লাইফে নিলাম। বেশ বিন্দাস ছিলাম। বিবাহিত জীবনের ব টাও এখন অবধি হয়নি। ওদিকে নানুআপু তো সংসারের কাজ ধরিয়ে দিলেন।”

গতকাল নুরজাহান নিতিকে বলেন,-” এখন আর বাড়ির মেহমান নও তুমি। বাড়ির ছোটো বউ। বউ হিসেবে দায়দায়িত্ব থাকে। তনুজার সাথে সেও যেন হাতে-হাতে কাজ করে। আগের মতো চললে হবে না।”
নানুআপুর হুকুম জারি হয়। বেচারি নিতি ফোনে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো। এলার্ম কে’টে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়েও চোখ থেকে ঘুম সরছে না।

হঠাৎ কারো আসার শব্দে ইভানের কথা থেমে যায়। তৎক্ষণাৎ ঝট করে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। পরপর দরজার দিকে চাইতেই হাতের উল্টোপাশ দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে নিতিকে আসতে দেখতে পায়। ইভান অপ্রস্তুত বিব্রত হয়। আগে কবে কিচেনে ঢুকেছে ইভান মনে করতে পারবে না। কাকডাকা ভোরে এখন কিচেনে দেখে সবাই কী ভাববে! এইভেবে অস্বস্তিতে গাঁট হয় ইভান। গলা খাঁকারি দিয়ে তনুজাকে উদ্দেশ্য করে তাগাদা দিয়ে বলল,
-” তনুজা, আমার গ্রীন-টি তাড়াতাড়ি উপরে পাঠিয়ে দিও।”
তনুজাও নিতিকে দেখে লজ্জায় পরে। কোনরকমে মাথা নাড়িয়ে -” হু” বলে। নিতি বেচারি ঘুমে ঢুলুঢুলু। পরপর কথা শুনে দুইহাতে চোখ কচলায়। ইভানকে দেখে একগাল হেসে বলল,

-” গুড মর্নিং ভাইয়া।”
-” গুড মর্নিং।”
বাড়তি বাক্যব্যয় না করে ইভান লম্বা কদম ফেলে প্রস্থান করে। তনুজা ডানে-বামে না তাকিয়ে কাপে চা ঢালতে থাকে। হঠাৎ নিতি সম্বিত ফিরে পায়। ঘুমের রেশ কে’টে হুঁশে ফেরে। নিতির হঠাৎ আফসোস হয়। অবচেতনে আওড়ায়,
-” ফাটা কপাল আমার। বান্ধবীদের বর দেখি ফেভিকলের মতো চিপকে থাকে। কোনোদিন যে ভাইয়াকে কিচেন মুখো হতে দেখিনি আজ সেও বউয়ের পিছুপিছু। আর আমার রা’গি মহারাজা এই কোল্ড ওয়েদারেও সে এক ঘরে আমি আরেক ঘরে।”
একহাত কপালে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হা-হুতাশ করে আরো বিড়বিড়ায় নিতি,
-” ইয়া আল্লাহ! সবার বর। আর আমারটা আস্ত এক অজগর! কিছু বললেই ফোঁসফোঁস করে। চিনি ছাড়া চায়ের মতো বিবাহিত জীবন আমার!”

সকাল দশটার ঘর পেরিয়েছে ঘড়ির কাঁ’টা। দিব্য ডায়নিংয়ে বসে সবে ব্রেডে কা’মু’ড় বসিয়েছে। এরমধ্যে নুরজাহানের মোটা কর্কশ স্বর আসলো। সোফায় বসে ফলস নেইলগুলো ঠিক করতে ব্যস্ত নিতি। সকালে একটু কাজ করতে গিয়ে নখগুলোর বেহাল দশা হয়েছে। নুরজাহান নিতির দিকে অসন্তোষ বদনে চেয়ে হইহই করে উঠলেন,
-” আমরা স্বামী না খাওয়া অবধি পানিটুকু মুখে দিতাম না। আর এখনকার মেয়েরা স্বামী খেলো না খেলো সেসবে কোনো বালাই নেই। কোনোদিকে নজর নেই। থাকে রুপচর্চা আর একখানা যন্ত্র পাইছে তাই নিয়ে।”

বি’র’ক্তিতে জিভ দিয়ে ‘চ’ শব্দ কা’টে নিতি। সেই মান্ধাতার আমলের ধ্যান-ধারণায় ঠাসা নানুআপু। একজন যদি বেলা বারোটা অধবি ঘুম পারে। তারজন্য কী এখন না খেয়ে বসে থাকতে হবে! আ’জ’ব! নিতি কথাটা না শোনার ভান করে নিজের কাজে মশগুল থাকে। দিব্য নিজের মতো খাবার খেতে থাকে। নুরজাহান ডায়নিংয়ে গিয়ে গ্লাসে থাকা পানি নিয়ে হাতে থাকা দু’টো বড়ি গপাগপ গিলে নেয়। এতে যেন মুখে আর শরীরের বল কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দিব্যর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ২৭

-” তা ছোট কর্তা। বিয়ে করার জন্য তো তাড়াহুড়া লাগিয়ে দিলে। তর সইলো না। কারো কথা মান্য করলে না। মর্জি মতো একাই বিয়ে সারলে। তা দু’জনে এখনো যে আলাদা ঘরেই থাকো। বুঝিনা বাপু এখনকার ছেলেমেয়েদের প্রেম-ভালোবাসা।”
দিদুনের কথায় দিব্যর গলায় খাবার আঁ’ট’কে যায়। বেচারা খুকখুক করে কাঁশতে থাকে। নিতি বড়বড় চোখ করে থ মে’রে তাকিয়ে থাকে।

প্রণয়ের বাঁধন পর্ব ২৯