রাজবধূ পর্ব ১৮

রাজবধূ পর্ব ১৮
রেহানা পুতুল

বাদশা অবাক কন্ঠে জানতে চাইলো,
“মা কে আনলো গরিবের জন্য এত দামী ছানা?”
“ক্যান? গরিবের কি সব কুটুমেরাই গরিব? আমার এক ভাই বিদাশ থেইকা আইছে। আমারে দেখতে আইলো। সে আনলো।”
জড়ানো কন্ঠে বলল বাদশার মা জুলফা।
“আর কিছু আনছে?”
“নাতো। আমি একলার মানুষ। আর কিছু আনলে খাওন যাইবো?”
“এই বাড়িতে আর লোকজন নাই। দেওয়া যাইতনা আনলে? কেমন কৃপণ ভাই তোমার? সামান্য হাফকেজি ছানার সন্দেশ নিয়া বোনরে দেখতে আসলো? কোন টাকা দিছে তোমারে?”

“নাহ। এত ছোট একটা বিষয়রে এমন প্যাঁচাছ ক্যান তুই জিলাফির লাহান?”
“আচ্ছা বাদ দিলাম। খাইছো এইটা?”
“না। নামাজ আদায় কইরা মুখে দিমু।”
তখন তাদের বাড়ির একটি বিড়াল ঘরে এসে লাফ দিয়ে টেবিলে উঠে গেলো। বারবার প্যাকেটটির উপরে সে নাক দিয়ে শুঁকতেছে৷ জুলফা ছেলেকে আদেশ দিলো।বলল,
“দুধের জিনিসের গন্ধ পাইলেই হইছে বিলাইর। ওরে একটা দিয়া তুইলা রাখ মিটসেফের ভিতরে। নইলে খাইয়া আবার আইবো প্যাকেটের কাছে। নজর লাগবো। আর তুই খাস না একটা। ”
“পরে খামু। আগে বিলাইর উদরপূর্তি করি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাদশা প্যাকেট খুলে আস্ত একটি ছানা ঘরের সামনের দাওয়ার উপরে রাখলো। বিড়ালটি নিমিষেই খেয়ে আবার খাওয়ার জন্য মিউ মিউ স্বরে ডাকতে লাগলো। বাদশা আরেকটি ছানা ছুঁড়ে দিলো বিড়ালটিকে। এবং বলল,
“তুই মন ভইরা খা। নইলে তোর নজরে আমাগো পেট ব্যথা আরম্ভ হইবে।”
জুলফা অজু করে নামাজ পড়তে পিছনের রুমে চলে গেলো। প্যাকেটটি মিটসেফে নিয়ে রেখে দিলো বাদশা। দেখলো মা কি রান্না করলো। হেলেঞ্চা শাক ভাজা শুকনো মরিচ দিয়ে,ও সামান্য মলা শুটকি ভুনা বেগুন দিয়ে। বাদশা এক থালায় সব নিয়ে নিলো। টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসে খেলো তৃপ্তি ভরে। মায়ের হাতের রান্না তার কাছে অমৃত! যে কোন সময়ে ভাত খেতে পারে মায়ের রান্না দিয়ে। নিদিষ্ট সময় লাগে না। বাদশা ভাত খেয়ে পানির মগ নিয়ে ঘরের বাইরে গেলো। উঠানের একপাশে গিয়ে হাত ধুয়ে নিলো।

তখনই দেখতে পেলো বিড়ালটি কাত হয়ে পড়ে আছে। বাদশা ব্যতিব্যস্ত হয়ে একহাত দিয়ে বিড়ালটিকে নেড়েচেড়ে দেখলো। একি! ক্ষণসময় পূর্বের প্রাণচঞ্চল বিড়ালটি এখন প্রাণহীন হয়ে গেলো? বাদশা বিড়ালটির দুই পা ধরে ঝুলিয়ে ঘরের ভিতর নিয়ে এলো। জুলফা নামাজের পাটিতে বসে তসবিহ পড়ছে। বাদশা জুলফার সামনে মাটিতে মৃত অবলা প্রাণীটিকে রাখলো। উঠে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। মায়ের সামনে গিয়ে একটি জলচৌকি নিয়ে বসলো।
বাদশার চাহনি গভীর! স্থির! তবে ধারালো। জুলফা হতভম্ব হয়ে গেলো। ক্ষীণকায় কন্ঠে ছেলের দিকে চেয়ে বলল,

“ক্যামনে মরলো এই বিলাই?”
“এর জবাব তো তুমি দিবা মা। আমি নই। ঘরে কে আইছে আইজ?”
“বিলাই মরণের লগে ঘরে কে আইছের সম্পর্ক কি? বুঝলাম না?”
“আমি বুঝাইতাছি তোমারে। যে আইছে সে তোমারে মারতে আইছে। সব ছানার মধ্যে বিষ মিশানো। তাই বিলাই মইরা গেলো। আমি খাইলে আমিও মইরা যাইতাম এখন। তুমিও মরতা। তার মানে যে আইলো যে আমাগো শত্রু। বন্ধু না। আমাগোরে মারতে চায়। তুমি স্বীকার করলে আমার ছুটাছুটি করতে হইবো না ছানায় বিষ প্রমাণের জন্য। তার হিসাব পাক্কা। তুমিতো মইরাই যাইবা। টাকা নষ্ট কইরা সে আর কিছু ক্যান আনবো। আবার হাফকেজির কমে আনতেও খারাপ দেখা যায়। কও মা। মাথায় খুন চাইপা আছে আমার। নিজের গলায় চাক্কু চালাইতেও এখন আমার হাত কাঁপবো না।”

জুলফা ঠকঠক করে কাঁপছে অশীতিপর বৃদ্ধার ন্যায়। সারামুখ,ঠোঁট মরা মাছের মতো ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করলো। দুর্বল দুটি চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরতে লাগলো পাটির উপরে। মনে মনে বলছে,
“আল্লাগো আমি মিঠাই খাইয়া মইরা গ্যালেই ভালো হইতো। ক্যামনে পোলারে কই নিজের কলংকের কথা। আইজ বুঝি আর রক্ষা নাইগো মাওলা।”
আজ হতে সাতাশ বছর আগের কথা। জুলফা তখন বিবাহিতা তরুণী। মোবারক নামের এক দরিদ্র স্বামীর প্রিয়তমা। মোবারক ছিলো শহরের এক জুটমিলের নাইট গার্ড। ছুটি পেতনা বাড়ি আসতে। জুলফা স্বামীর ঘরে অন্যদের সঙ্গে থাকতো। এলো রমজান মাস। বাড়ির অন্য গরিব মহিলারা এসে তাকে বলল,
“বাজারে কোন ধনী লোক আইসা নাকি ইফতার,চাইল,ডাল বিলি করতাছে রোজা উপলক্ষে। ল যাই। তোর কয়দিন চইলা যাইবো।”

জুলফা খুশী হয়ে তাদের সঙ্গে যায়। সিরিয়ালে দাঁড়ায় মাথায় আঁচল টেনে। জুলফাকে দেখে খায়রুল তালুকদারের চোখ আটকে যায়। সে ব্যাগভর্তি দ্রব্যাদি জুলফার হাতে দেয় এবং কোন বাড়ির বউ জুলফা, সেটাও জেনে নেয়। সেও তখন বিবাহিত নওজোয়ান পুরুষ। স্বভাবে কামুক ও তেজী।
তার দুইদিন পর এক দুপুরে সে জুলফার শ্বশুর বাড়িতে আসে। সবার ঘরে গিয়ে খোঁজ খবর নেয়। জুলফা উঠানে বসে কাজ করছে। তালুকদার দেখলো জুলফার সারা অঙ্গজুড়ে জোছনার মতো থই থই করা যৌবন। তার চোখে জ্বালা ধরে। জুলফার উদাম কোমরে তার নখের ও দাঁতের দাগ বসাতে শখ জাগে। বিরামহীনভাবে দংশন করতে আশা জাগে মনে। সে গলা খাঁকারি দিয়ে জুলফার সামনে এগিয়ে আসে। বলে,
“জুলফা শোন, আমরা যাকাতে অনেক কিছুই দেই। তুমি সবাইর লগে সিরিয়ালে যাওই না। আমার গদিতে আইসো। কাউরে বলবা না। পরে সবাই গদিতে সিরিয়াল ধরবো। তুমি চাইলে আমাদের ধান,চাইলের আড়তেও আসতে পারো। আইচ্ছা না থাক। গদিতেই আইসো। তোমারে ভালো দেইখা শাড়ি ও তোমার স্বামীর জন্যও পাঞ্জাবি, লুঙি দিমু। পরশু আইসা পইড়ো এই সময়ে।”

যার দুইবেলার আহার যোগাড় করতে তিনদিন চিন্তা করতে হয়। তার মাথায় তালুকদারের মতো ইজ্জতওয়ালা ধনবান ব্যক্তিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কিছু না আসাটাই শ্রেয়। তাই জুলফা সাতপাঁচ ভাবে না। মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানায় যাবে বলে। খায়রুল তালুকদার তাকে উজানপুর গ্রামে তার গদির ঠিকানা দেয়। জুলফার চোখের কোণ ঝিলিক মেরে উঠে। ঠোঁটের কোণে উদ্ভাসিত হয় হাসির রেখা। খুশিতে আপ্লুত হয়ে উঠে জুলফা।
পল্লীগ্রামে দুপুরবেলায় স্থানীয় দোকানপাট বন্ধ থাকে। রাস্তাঘাট থাকে প্রায় জনশূন্য। পরিবেশ জুড়ে চলে এক ধরনের নিরবতা।জুলফা রিকশা থেকে নামে। ঠিকানা অনুযায়ী চলে যায় খায়রুল তালুকদারের গদিতে।
“আরে জুলফা আসো। বোরকার নেকাব সরাও। নইলে চিনমু কিভাবে তুমি জুলফা না কুলফা?”
গদির মেঝেতে পাতানো নরম সিটে বসা থেকে বলল খায়রুল তালুকদার। জুলফা এগিয়ে যায় তার কাছে। সে পাশ থেকে বড় একটি ব্যাগ জুলফাকে দেখায়। জুলফা মুচকি হাসে। মুখ থেকে নেকাব উল্টিয়ে কপালের পিছনে নিয়ে যায়। বলে,

“তালুকদার সাহেব এত বড় গদি আপনে একলাই চালান? আর কাউরে দেখতাছিনা যে?”
“আরো কর্মচারী আছে আমাদের। রোজার মাস। তাই দুপুরেই সবাইরে ছুটি দিয়া দিই। ”
তালুকদার উঠে দাঁড়ায়। বলে,
“এদিকে আসো। দেইখা নাও কি কি দিলাম তোমারে।”
জুলফা তার পায়ে পায়ে এগোয়। গদির পিছনের একটি রুমে প্রবেশ করে দুজনে। মেঝেতে শয্যা পাতানো। তালুকদার বিছানার উপরে ব্যাগটা রেখে বলল,
“ধরো। বইসা দেখো। সমস্যা নাই।”
জুলফা বসে দেখতে লাগলো।
তালুকদার গিয়ে গদির মুল দরজা বন্ধ করে দিলো ভিতর থেকে। বাকিগুলো আগেই বন্ধ করে রেখেছে। সে এসে জুলফার পাশে বসলো।

“পছন্দ হইছে?”
“খুব হইছে। আপনে অনেক ভালো। ”
“আমি তোমারে সাহায্য কইরা খুশি কইরা দিলাম। তুমিও আমারে খুশী কইরা দাও।”
জুলফা লজ্জিত ও বিব্রত
চোখে তাকায় তালুকদারের দিকে। নম্রস্বরে বলল,
“কি কন? বুঝলাম না।”
“আসো তোমারে একটু আদর সোহাগ করি। কি ব্যাটা, তোমার স্বামী? ঘরে যৌবনাবতী বিবি রাইখা শহরে পইড়া থাকলে হয়?বয়সের লগে দেহের একটা চাহিদা আছে না। ওইটা মিটাইতে হয়।”
“আল্লাগো! আমারে বাঁচান। আপনে এত জঘন্য লোক। এমন জানলে আমি এইখানে পা দিতাম না। আপনার দুইটা পায়ে ধরি আমারে যাইতে দেন।”

বিষ্পোরিত চোখে অনুনয় করে বলল জুলফা।
খায়রুল তালুকদারের লালায়িত দুটি চোখ জুলফাকে দেখছে। জুলফা ব্যাগ রেখে দরজার কাছে ছুটে যায়। বড় লোহার তালা ঝুলছে। সে জোরে জোরে তালা ধরে নাড়লো। ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলো তালুকদারের সামনে। বহু কাকুতি মিনতি করেও মুক্তি মেলেনি জুলফার। তালুকদার এগিয়ে এসে জুলফাকে বলে,
“যত দেরী করবা। তত তোমার যাইতে লেট হইবো। মনের খায়েশ না মিটায়া তোমারে ছাড়ুম না আইজ।”
জুলফা করুণ গলায় কেঁদে ফেলল।তালুকদার এগিয়ে যায়। একে একে জুলফার শরীর থেকে সব পোশাক খুলে নেয়। শক্তিশালী পুরুষের সঙ্গে দুর্বল নারী বাহুবলে পরাজিত হলো। বিবস্র জুলফাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় খায়রুল। নিজেও বিবস্র হয়ে যায়। দীর্ঘসময় সময় পরে ক্লান্ত মাঝির মতো হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,
” বাইরে বাথরুম আছে। উইঠা যাও। ব্যাগ নিয়া যাইবা। আর কাউরে কিছু কইলে আমার নয় তোমার ক্ষতি হইবো। এবং তুমি মাঝে মাঝে এসময় এইখানে আইসা পড়বা। না আসলে আমি তোমারে কলংকীনি বানায়া দিমু। তুমি একটা ফকির। আর আমি তালুকদার। মাথায় রাইখো। তালুকদাররা যা চায় তাই হইতে হয়। তোমারে তুলতুলা শরীরটা আমার অনেক পছন্দ হইছে।”

জুলফা ভড়কে যায়। শরীরের তীব্র ব্যথা নিয়ে বাড়ি যায়। রাত দিন কেঁদে বুক ভাসায়। জুলফা না এলে তালুকদার লোক মারফতে তাকে ডেকে আনায়। নানান কথা বলে ফাঁসিয়ে দিতে যায়। জুলফা সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে মাঝে মাঝে খায়রুল তালুকদাদের বিছানায় আসে। এভাবে জুলফা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তালুকদারকে বলে নষ্ট করার ব্যবস্থা করতে। তালুকদার তাকে শান্তনা দেয়,
“নষ্ট করবি ক্যান? তোর স্বামী আছে। এখনো মা হসনাই। তুই গর্ভবতী হইতেই পারস। বেলুনের মতো তোর নগ্ন ফুলা পেট, স্তন দেখা আমার খুব শখ। ঘরের বিবির কাছেও এত সুখ পাইনাই। তোরে দিয়া যত পাইছি। প্যানপ্যান করিস না আর।”

জুলফা একুল অকুল ভাবতে ভাবতে সময় অতিক্রম হয়ে যায়। কিছুই করতে পারে না। সে কিছুই চেনেনা জানেনা। মোবারক বাড়ি এলে স্তম্ভিত হয়ে যায় স্ত্রী গর্ভবতী শুনে। তবে সে ছাড়া দ্বিতীয় কেউই এ নিয়ে জুলফাকে সন্দেহ করেনি। কারণ সে এই ভিতরেও বাড়ি এসেছে। তবে জুলফার পিরিয়ড চলছিলো বলে শারিরীক মেলামেশা তাদের বন্ধ ছিলো। গর্ভবতী অবস্থায়ও জুলফা তালুকদারের বিছানায় যেতে হয়েছে। একসময় জুলফা পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। নাম রাখে বাদশা। কারণ বাদশার শরীরে তালুকদারের রক্ত।

জুলফার স্বামী মোবারক দেখতে পেলো শিশু বাদশার সঙ্গে তার কোন মিল নেই। তার সন্দেহ ঘনীভূত হয়। এই ভিতরে কেউ তার কানে দিয়েছে তালুকদারের সঙ্গে জুলফার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তুমুল ঝগড়া বাঁধে জুলফার সঙ্গে মোবারকের। তারপর ঢাকায় একদিন কর্মরত অবস্থায় হার্ট স্ট্রোক করে জুলফার স্বামী মোবারক মারা যায়। জুলফা তালুকদারকে সব জানায়। তালুকদার বাদশার খরচ বহন করে। জুলফা বাদশাকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখে। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করায়। তারপর এক চায়ের দোকানে বাদশার চাকরি হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে ঢাকায় জুতার কারখানায় তার চাকরি হয়। কিন্তু মালিক বেতন দেয়না সময়েমতো। খাটুনি বেশী।
জুলফা তালুকদারকে অনুরোধ করে একটা ভালো কাজ দিতে বাদশাকে। বাদশা তারই সন্তান। তারপর বাদশার আশ্রয় হয় তালুকদার বাড়িতে। জুলফার বয়স বাড়ে। তালুকদার তাকে পায়না। বাদশা বড় হতে থাকে। বাদশার বুদ্ধি ও চতুরতায় তালুকদার নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বাদশাকে মারা দুঃসাধ্য! কিন্তু জুলফাকে মারা যায়। তালুকদার সেই প্রচেষ্টায় জুলফার কাছে যায় তাকে দেখার অজুহাতে।

জুলফা টলতে টলতে নামাজের পাটি থেকে চৌকির উপরে উঠে আসে। সারারাত্রি নির্ঘুম কাটে বাদশার। মায়ের সঙ্গে কথা বলে না। উদভ্রান্ত সে। যখনই শখের মানুষটাকে নিয়ে সে রঙ্ধনু হয়ে আকাশে ভেসে বেড়াবার স্বপ্ন বুনছিলো। তখনই সে জানতে পারলো এক নিষ্ঠুর, বিধ্বংসী সত্য। সকালে বাদশা কিছু না খেয়ে চলে যেতে পা বাড়ায়।
জুলফা নিরীহ সুরে ছেলেকে ডেকে বলে,
“বাপরে! মারে ক্ষমা কইরা দিস। মাতো তোরে হত্যা করিনাই। এই দুনিয়ার আলো বাতাস দেখাইছি। কিছু মুখে দে বাপ। খালি মুখে যাইসনা বাপ।”
বাদশা এক পা পিছিয়ে মায়ের সামনে যায়। তরল গলায় বলল,
“কে কইছে আমারে এই দুনিয়ায় আনতে? সেটাই ছিলো তোমার বড় ভুল। আমার পরিচয় আমি জা* র *জ সন্তান তোমার। দেই বর্বর স্বীকৃতি দিলনা ক্যান আমাকে?এর জবাব তার থেইকা আমি নিমু। আমার শরীরেত তালুকদার বংশের গরম র*ক্ত। তাইনা? টগবগ কইরা ফুটতাছে। গেলাম। সে আইলে দুয়ার খুলবা না। অবশ্য সেই সুযোগ তার খতম।”

বাদশা তালুকদার বাড়িতে ফিরে যায়। খায়রুল তালুকদারের সঙ্গে আগের মতই প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক মেনে চলে। তালুকদার তাকে কোন ফরমায়েশ দিলে বাদশা নিচু মাথায় শুনে নেয়। তবে আড়ালে গিয়ে শ্লেষের হাসি হাসে।
বাদশা গোপনে হিংস্র হয়ে উঠে। তার শরীরের রক্ত অবৈধ থাকতে পারবে না। বৈধ করতে হবে। তালুকদার পরিবারে নতুন ইতিহাস রচনা করতে চায় সে। মধুপুর যেতে হবে। নূরী কেন তাকে ডেকেছে? শুনতে হবে। নূরীর সঙ্গে হাত মিলাতে হবে।

রাজবধূ পর্ব ১৭

এদিকে শিখার জীবনে আসা বন্ধু নামক সেই অদৃশ্য মানব শিখাকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। তালুকদার পরিবারে শিখার ভবিষ্যৎ মজবুত করার জন্য সে যত যা কিছুর প্রয়োজন সবকিছু করতে সদা প্রস্তুত। কারণ…

রাজবধূ পর্ব ১৯