তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৪

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৪
আমেনা আক্তার

আয়না পিছনে তাকিয়ে দেখে হৃদিতা দাঁড়িয়ে আছে। আয়না মুচকি হাসি দিয়ে বলল।
হৃদিতা আপু তুমি,
হৃদিতা আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।
হুম আমি, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই যদি তোমার অনুমতি থাকে তাহলে।
আমাকে কিছু বলতে আবার তোমার অনুমতির প্রয়োজন পড়ে কবে থেকে।যা বলার বলে ফেলো।
হৃদিতা একটি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো।
পুরোনো কথা আর কতদিন মনের মাঝে গেঁথে রাখবে।কেনো তুমি একটি ঘটনার কে কেন্দ্র করে আব্রাহাম কে কষ্ট দিচ্ছ ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছ।ওই সময় যা ঘটেছে বা আব্রাহাম যাই করেছে শুধু পরিস্থিতির কারণে করেছে।
আয়না হৃদিতার কথায় একটি নিঃশব্দ মলিন হাসি দিয়ে বলল।

পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিই তো মানুষ কে আপন পরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।এই পরিস্থিতির জন্যই মানুষ তার আপন মানুষদের ভয়ংকর রুপ সম্পর্কে অবহিত হয়। পরিস্থিতির কারণে মানুষ বুঝতে পারে তার প্রিয় মানুষের মনের কোথায় তারা বসবাস করে।এই পরিস্থিতি প্রিয় মানুষদের ভয়াবহ সত্য সামনে তুলে ধরে।এই পরিস্থিতি শব্দটি কতটা জঘন্য তাই না।এই পরিস্থিতির জন্য মানুষের মন ভেঙ্গে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়।
হৃদিতা এতক্ষণ এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিল আয়নার দিকে। হৃদিতা বুঝতে পারছে যাই কিছু ঘটেছে তার প্রভাবে আয়নার মন অনেক খারাপ ভাবে ভেঙ্গেছে। তাকে শক্ত মনের অধিকারী করে দিয়েছে।তা না হলে আগের আয়না তো এত কঠোর কথা কখনো বলতো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হৃদিতা আয়নার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেও আয়নাকে বুঝানোর জন্য ।আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।
দেখো আয়না তুমি ঠিকই বলেছ, পরিস্থিতি যেমন আমাদের আপন মানুষ চিনতে সাহায্য করে।ঠিক তেমনি পরিস্থিতি আমাদের বদলাতেও সাহায্য করে। আব্রাহাম যা কিছু করেছে তা ভুল করেছে এটি আমি ভালোভাবে জানি। কিন্তু ওর ভুলের জন্য অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তুমি ওর সাথে কথা বলো না। এমনকি ওর দিকে এখন ফিরেও তাকাও না। একবার ওর দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখো ও তোমার জন্য কি থেকে কি হয়ে গেছে। ও আগের থেকে অনেক…
হৃদিতা তার সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই আয়না বলে উঠলো।
আচ্ছা আপু আমার আত্মসম্মানে ওইদিন যেমন আঘাত করা হয়েছিল। সেইভাবে আপনার আত্মসম্মানে যদি আঘাত করা হতো তাহলে কি আপনি ভুলতে পারতেন সেই কথা।বা মাফ করতে পারতেন তাকে।আমি তো ভুলতে পারিনা।আমি এখনো ভুলতে পারিনা কিভাবে আমার কথা না শুনে আমার উপর মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। একবার তো আমার কথা শুনতে পারতো। কিন্তু আমার কথা না শুনে ও আমার মন ও আমাকে এভাবে ভেঙ্গেছে আমি আজও তা ভুলতে পারিনি।

কি ভুলতে পারিস নি তুই?
রাজ ব্লু কুঁচকে তাকিয়ে আছে হৃদিতা ও আয়নার দিকে।রাজ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদিতা হাসি দিয়ে বলল।
তোর জন্য কি আমরা এখন আমাদের পার্সোনাল কথাও বলতে পারবো না।
রাজ হৃদিতার কথা শুনে মাথা চুলকে বলল।
ও পার্সোনাল,
কথাটি বলেই চলে যায় রাজ,রাজ চলে যেতেই হৃদিতা ও আয়নাকে নিয়ে সকলের সাথে বসে।সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে তাদের স্কুল জীবনের কথা বলছে। তারা ছয় বন্ধু ক্লাস ওয়ান থেকেই একসাথে আছে।কত স্মৃতি তাদের একসাথে। আরশাদ সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

তোদের মনে আছে,আমরা সকলে কলেজ শেষ করে একসাথে পড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু হৃদিতার মা বাবা চাইছিল।ও যেনো abroad পাঠাতে।যেনো ও ওইখানে গিয়ে নিজের স্টাডি শেষ করে।তাই পেশারাইজ করছিল তখন ওর উপর।আমরা কত কষ্ট করে রাজি করিয়েছিলাম যাতে ওকে abroad না পাঠাই।
সকলের মাঝে আব্রাহাম বলল।
হ্যা কিন্তু এটা তোদের মনে আছে।আয়না যখন ইন্টারে কিছুটা খারাপ রেজাল্ট করেছিল।তখন আমরা কত কষ্ট করে ওকে আমাদের কলেজে এডমিশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কারন ও কলেজে থাকা কালীনই আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছিল ও আমার ভার্সিটিতে ভর্তি হবে।নাহলে কোথাও ভর্তি হবে না। কিন্তু সকল ব্যবস্থা করার পর ও আর ওইখানে ভর্তি না হয়ে আবার বাবা মায়ের কাছে জেদ ধরে।ও ওই ভার্সিটি বাঁধে যেকোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হতে রাজি।

রাজের কথার সাথে সকলে সম্মতি প্রকাশ করে নূর বলল।
হুম আমাদের অনেক খাটতে হয়েছিল ওর ভর্তির জন্য।
নূরের কথা শেষ হতেই রাজ বলল।
কিন্তু আমি এখানো বুঝতে পারিনি, আয়না হঠাৎ এত খারাপ রেজাল্ট করেছিল কিভাবে।সব সময়ই ও একজন ভালো স্টুডেন্ট ও ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল।সেই নাকি এমন রেজাল্ট করেছিল আমার ওর রেজাল্ট দেখে ওইদিন মাথা ঘুরছিল।ওই সময় ওর কি হয়েছিল আমি আজ ও জানতে পারিনি হঠাৎ করেই অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল ও।
রাজ কথাগুলো বলে আয়নার দিকে তাকায় এবং তার মাথায় টোকা দিয়ে বলল।
কিরে ওই সময় তোর কি হয়েছিল?
আয়না ও ঠাট্টার স্বরে বলল।

তখন আমি শুধু ভাবিকে স্বপ্ন দেখতাম।
আয়নার কথা শুনে রাজ আয়নার দিকে ঘুরে বসে বলল।
কি তুই আমার হবু স্ত্রী কে স্বপ্ন দেখেছিলি আর এই কথা তুই আমাকে এখন বলছিস। আচ্ছা এখন বল ও তোকে কি বলেছিলো আমার কথা?
রাজ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে। তখনি আয়ান রাজের কানের সামনে মুখ বলল।
ভাবি আমাকে বলেছে, তোমার বজ্জাদ ভাইয়াকে আমি বিয়ে করতে চাই নননননা।
আয়না শেষের কথাটি খুব জোরে চিল্লিয়ে বলে একটি দৌড় দেয়।রাজ কথাটি শুনে আয়নার পিছে দৌড় দিতে দিতে বলল।

থাম তুই আজ তোকে আমি দেখাচ্ছি, আমার বউ তোকে কি বলেছে।
ভাই বোনের খুনসুটি সবাই দেখছে আর হাসছে। কিন্তু আব্রাহাম মাথা নিচু করে বসে আছে। আব্রাহামর মনে অপরাধ বোধের আগুন জ্বলছে। কারন আয়নার পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করার কারণ তো ছিল ও নিজে।
আব্রাহাম নিজের অপরাধ বোধের জন্য প্রতিনিয়ত জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম এর কথার আঘাত যতটা না আয়না কষ্ট পেয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট এখন আব্রাহাম পাচ্ছে। একদিকে আব্রাহামের মনে অপরাধ বোধ আর অন্য দিকে আয়নার অবহেলা যা এক সময় সেও আয়নাকে করেছে।
আরশাদ আব্রাহামের কাঁধে হাত রেখে বলল।
অতীতের কথা ভেবে আর নিজেকে কষ্ট দিস না। বর্তমানের কথা ভাব কিভাবে ওর অভিমান ভাঙ্গানো যায়।

রুদ্র আজ পুরো স্টাইলে অফিসে প্রবেশ করেছে। রুদ্রকে দেখে এখন যে কেউ বলবে সে একজন পূর্ণ বিজনেস ম্যান।রুদ্রের এভাবে পরিপাটি হয়ে অফিসে আসার মূল কারণ হলো সিরাত।সিরাত যেনো আর কেনো ক্রুটি খুঁজে বের করতে না পারে। রুদ্র অফিসে ঢুকতেই সকলে তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে মেয়েরা। রুদ্র সকলের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে বাঁকা হাসে আর মনে মনে ভাবে যদি।এই মেয়ে গুলো তাকে দেখে এই অবস্থা হয় তাহলে সিরাতের কি অবস্থা হতে পারে তাকে দেখে।সিরাত তো ওর সাথে চিপকে থাকার চেষ্টা করবে।যা প্রায় সময় মেয়েরা করে থাকে তার সাথে।কত সুন্দরী মেয়েরাও রুদ্রের সান্নিধ্য চায় কিন্তু রুদ্র তাদের কে পাত্তা দেয় না।এত সুন্দরী মেয়েরা যদি তাকে দেখে পাগল হতে পারে। তাহলে এই সিরাত আবার কি জিনিস।এত হ্যান্ডসাম ছেলে সিরাত আগে কখনো দেখেছে। একবার শুধু ওর বুনা জালে পা দিলেই।তারপর রুদ্র দেখাবে সিরাত কে মজা।
রুদ্র এখন তার কেবিনে বসে আছে আর অপেক্ষা করছে সিরাতের আসার।সিরাতকে ডেকে পাঠিয়েছে সে। কিছুক্ষণের মাঝেই সিরাত রুদ্রের কেবিনের দরজা নক করে। রুদ্র কিছুটা ভাব নিয়ে সিরাত কে রুমে আসতে বলল।
সিরাত কেবিনে প্রবেশ করে রুদ্রের দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকায়। রুদ্রের মনে এখন ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে সিরাতের যেই মুখে সে গালি শুনেছিল সেই মুখেই প্রশংসা শুনবে।তাই রুদ্র সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।

আজ আমাকে কেমন লাগছে?
কেমন লাগবে আবার মানুষের বাচ্চার মতোই তো দেখা যাচ্ছে।
রুদ্র সিরাতের কথা শুনে রাগি গলায় বলল।
শুধু মানুষের বাচ্চা,
শুধু মানুষের বাচ্চা নয় তো তাহলে কি তুমি আমার মুখ থেকে নিজেকে গরুর বাচ্চা ও শুনতে চাও।তবে শুনে রাখো আমি তোমাকে গরুর বাচ্চা বলতে পারব না। কারন তুমি যেমনই হও তোমার বাবা একজন ভালো মানুষ।তাই তুমি চাইলে আমি শুধু তোমাকে গরু বলতে পারি।
সেট আপ স্টুপিট, তোমার মাঝে কি মন বলতে কিছু নেই।এত হ্যান্ডসাম একটি ছেলে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর তুমি কিনা তার প্রশংসা করার বদলে স্টুপিট কথা বলছো।
সিরাত রুদ্রের কথা শুনে ব্লু কুঁচকে বলল।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৩

হ্যান্ডসাম,কে হ্যান্ডসাম আমি তো কেনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখছি না।আমার আশে পাশে।
তুমি কি বলতে চাও আমি হ্যান্ডসাম না।
দিনের বেলা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো ও ভালোভাবে নিজের চেহারা আয়নায় দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করতে এসে।
কথাটি বলেই সিরাত কেবিন থেকে বেড়িয়ে নিজের কাজে চলে যায়।আর এদিকে সত্যি একটি আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে নিজেকেই প্রশ্ন করলো।
আমি কি সত্যি হ্যান্ডসাম না?

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৫