খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১০
আনিকা আয়াত
“ কেনো? কি হয়েছে স্যার? কি করেছি? বিশ্বাস করুন আমি আপনার দিকে অসভ্য নজরে তাকাই নি! উল্টাপাল্টা কল্পনাও করিনি। শুধু আপনার ওই ঠোঁট জোড়ার দিকে অজান্তেই চোখ যাচ্ছিল। ক্ষমা করবেন, তবে আমার মস্তিষ্ক এবং দৃষ্টি খারাপ করতে না চাইলে, কাল থেকে আপনি মাস্ক পড়ে ক্লাসে আসবেন। ”
বলেই নিজের কথায় হতবুদ্ধি হয়ে, চোখ খিঁচে নিলো সে। জিহ্বায় কামর মেরে বোকা বোকা মুখে জোরপূর্বক হাঁসলো। পুরো ক্লাস রুম তখন গগন কাপুনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। সমুদ্র, শিহাব স্যারকে তোয়াক্কা করে টেবিলে ঢোলের শব্দ করে হেঁসে যাচ্ছে। অর্পণ বহু কষ্টে হাঁসি আঁটকাতে ব্যর্থ হলো। দাঁত বের করে হেঁসে ফেললো সেও। নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে ওই অসভ্য মেয়ের জন্য চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। মুহুর্তেই রিয়াদ স্যারের রাগ যেনো আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা বেয়াদব এটা জানতো। কিন্তু ভারী অসভ্য এটা তার জানার বাইরে ছিলো। ভরা ক্লাস রুমে কিভাবে বেফাঁস কথা বলে ফেললো। এই মেয়ের জন্য ইদানীং ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে তাকে। আজও যেনো নিজের ইমেজ নষ্ট হয়ে, মাথা কাটা গেলো। ঘনঘন শ্বাস ফেলে তৃধার দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠে বলল,
“ এই মুহুর্তে বেরিয়ে যাও..”
“ ক্লাস থেকে যাচ্ছি ; আপনার মন থেকে নয়!” বিড়বিড় করে বলেই মুখ ফুলিয়ে রাখলো। রিয়াদ স্যার দীর্ঘশ্বাস ফেলে কঠিন চোখে শাসিয়ে ধমকে উঠে,
“ দাঁড়াও মেয়ে। আজ সম্পূর্ণ ক্লাস তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে। বেয়াদবি পিটিয়ে সোজা করতে না পারলেও শাস্তি ভিন্ন রূপে দেখতে পাবে। ”
তৃধা সেই যে মাথা নত করে আছে আর লজ্জায় তার মাথা উঁচু করার শক্তি নেই। সে দাঁড়ালো না৷ বন্ধুদের দিকে ঠোঁট ফুলিয়ে অসহায় চোখে তাকালো। কিন্তু রিয়াদ স্যারের একের পর এক গর্জনে উপায় না পেয়ে দাঁড়াতেই হলো। বেচারী মুখটা কাঁদো কাঁদো করে ফট করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ স্যার! আমি এখনও বাচ্চা নই। আপনি সঠিক বয়সে বিয়ে করলে, আমি দু বাচ্চার জননী হয়ে যেতাম। এটা আপনার জীবনের বড় ব্যর্থতা। আমাকে শাস্তি দিলেই সেই ব্যর্থতা পূরণ হবে না। বরং এখনও সময় থাকতে বিয়ে করে নিন। আমাকে আপনার বাচ্চার জননী হওয়ার সৌভাগ্য হতে দিন। তবুও এভাবে সকলের সামনে আর দাঁড় করিয়ে রাখবেন না। লজ্জা-শরম আছে বৈকি! ”
বলেই ক্ষোভে হাতের কলমটা স্যারের দিকে ছুঁড়ে মারলো। রিয়াদ স্যার এ পর্যায়ে বিষম খায়। হঠাৎ কাশতে কাশতে তিনি লাল হয়ে গেলো। পুরো মুখশ্রী হয়ে উঠলো রক্তিমা। তৃধা তাড়াহুড়ো করে, ব্যাগ থেকে পানির বতল এগিয়ে দেয়। বন্ধুরা সবাই মিটি মিটি হাঁসছে। রিয়াদ স্যার প্রথমে চোখ পাকালেও এক ঝটকায় বোতল হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে গলা ভিজিয়ে দেয়। চোয়াল শক্ত করে রাগান্বিত চোখে সকলের দিকে তাকাতেই, সবার হাঁসি মুখ চুপসে গেলো। কিন্তু ঠোঁট টিপে হাঁসি থামালো না৷ এ কয়েকমাসে সবাই জানে, তৃধা রিয়াদ স্যার বলতে পাগল। অথচ, স্যার চাইলেই প্রিন্সিপালকে জানাতে পারে। তাদের ক্লাসও বাদ দিতে পারে! কিন্তু কেনো এসব করে না? তবে কি স্যারও এসবে এনজয় করে? রিয়াদ স্যার বোর্ডের সামনে গিয়ে শক্ত গলায় বলে,
“ তোমার মুখ থেকে আরেকটা শব্দ বের হলে, আমি কমপ্লেন করবো। দরকার হলে, এই ক্লাস চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবো।”
“ না স্যার। আর দুষ্টুমি হবেনা। তবুও প্লিজ আপনি ক্লাস বাদ দিবেন না।”
উত্তেজিত কণ্ঠে তৃধা বলল। রিয়াদ স্যার সকলের দৃষ্টি লুকিয়ে মৃদু হেঁসে বই নিয়ে আলোচনা শুরু করে। এতক্ষণ ধরে ক্লাসের সকলে যেনো ক্লাস বাদে তাদের বিনোদন এনজয় করছে। অর্পণ বেশ আয়েশ করে, চোখ বন্ধ রেখে, ঘটনা উপভোগ করছিল৷ অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর তৃধা ন্যাকা স্বরে কোমর ব্যথায় মুখ ফুলিয়ে বন্ধুদের দিকে তাকালো। সামনে বসা অর্পণের টি-শার্ট টানতে টানতে গাল ফুলিয়ে বলল,
“ ক্লাসের আর কতক্ষণ দোস্ত? আমার সাথেই স্যার সবসময় এমন করে কেনো?”
“ তাহলে কার সাথে করবে? তুই স্যারের সাথে বউয়ের মতো আচরণ করিস কেনো? ”
জবাবে অর্পণ হাত ঘড়ি দেখে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল। পৃথা মিটি মিটি হেঁসে তার কানে ফিসফিস করে বলল,
“ স্যার তোকে চোখে হারাচ্ছে বেইবি! তাই প্রতিদিন দাঁড় করিয়ে চোখের তৃষ্ণা মেটায়। কারণ, দাঁড়িয়ে থাকলে খুব সহজেই দেখা যায়। এতো মানুষের ভীরে খুঁজতে হয়না আলাদা করে। তুই লেগে থাক, চালিয়ে যা। এই মিশনে সফল হবি-ই। স্যারের দশ বাচ্চার জননী একমাত্র তুই-ই হতে পারবি। তখন এসবের সকল ঘটনার প্রতিশোধ অবশ্যই নিতে হবে। বুঝিয়ে দিবি, তৃধা কি জিনিস। ”
তৃধার মুখে লাজুক হাঁসি ফুটে উঠলো। সে বাঁকা হেঁসে সামনে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ স্যারের সাথে চোখাচোখি হতেই টুপ করে চোখ টিপ মারে। ঘটনার আকস্মিকতায় স্যার এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে অন্যপাশে চলে যায়। রিয়াদ স্যারের ভেতরটা হাঁসফাঁস করে উঠে। এই দৃশ্য শুধু তাদের দুজনের মধ্যেই থাকল। স্যারকে জায়গা মতো জব্দ করতে পেরে হেঁসে কুটি কুটি হলো তৃধা। অর্পণের টি-শার্ট টেনে হিসহিসিয়ে বলল,
“ আজ স্যারকে চোখ মেরেছি। কাল দেখিস ওর গলা টিপে দিবো। ”
অর্পণ ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন ঘুরে অবাকের সুরে বলল,
“ কাল একটা সুইট চুমু খেয়ে নিস। হিসেব বরাবর! ”
তৃধা লজ্জা মিশ্রিত হেঁসে ধপ করে কিল বসালো অর্পণের পিঠে। ছেলেটা চোখ গরম করল। কিন্তু বাকি বন্ধুরা তাদের কথা ততক্ষনে শুনে ফেলেছে এবং চোখ বড় বড় করে তাকাশ। তৃধার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে! আশেপাশের চার জোড়া চোখকে উপেক্ষা করে মুখ লুকাতে ভীষণ লজ্জা করলো তার। ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই দৌড়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল! তবুও ভার্সিটির চত্বরে ছেলে-মেয়েদের ভীর। নবীন বরণের উল্লাসে সবার মুখে খুশির। ক্লাস শেষ হওয়ার পরক্ষণেই দলে দলে বেরিয়ে পড়ে খোলা ক্যাম্পাসে! মুহুর্তেই আশেপাশের খালি জায়গায় ভীর জমে উঠল। নিজেদের বন্ধুদের সাথে আলাপনে আজ যেনো মুখ থেকে কথা সরছে না। যার যার মতো প্রত্যেকের মতামত বিনিময়ে গোল মিটিং বসিয়েছে। স্নিগ্ধা নিরবে হেঁসে কাঁধের ব্যাগ কোলে নিয়ে খালি স্থানে বসে রইলো চুপচাপ। এখানেই চৈতীদের আসার কথা। এলেই শুরু করলে, নাচের স্টেপ নিয়ে আলোচনা! কিন্তু মেয়েটা কি রাজি হবে? তার সাথে নাচতে চাইবে?
স্নিগ্ধা এই প্রথম তার মাকে ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবে। জীবনটা যেনো হুট করেই রঙিন হয়ে উঠল। এখন থেকে মায়ের প্যারা খুব একটা সহ্য করতে হয়না। ভার্সিটিতে আসার সময়, সাথে বডিগার্ডও থাকেনা। একদল বন্ধু পেয়েছে, ওরাই এখন তার সব। আগে তো মায়ের শাসন – বারণের জন্য বন্ধু দূরে থাক একটা মেয়েও ছিল না মেশার জন্য। সারাক্ষণ এক কঠোর পড়াশোনায় রেখেছে মেয়েকে। এখন ওসবের থেকে সে নিস্তার পেয়েছে। মনে হয়, এই তো জীবন। মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ে, ছুটে বেড়াবে এদেশ-ওদেশ। যেখানে কেউ বাঁধা থাকবে না। স্নিগ্ধা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুখ ফুলিয়ে গালে হাত রেখে বসে রইলো।
চৈতী প্রচন্ড ক্ষিধে-য় অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। সকালে আজ ঠিকমতো খেতে পারেনি। সব ক্লাস কোনোমতে শেষ করেই শ্রাবণের সাথে দৌঁড় ক্যান্টিনে চলে গেছে। জিনিয়া অনলাইনে শাড়ি দেখতে দেখতে মাঠে পা রাখে। কিছুদূরে স্নিগ্ধাকে দেখে হাত উঁচিয়ে ইশারা দিতেই স্নিগ্ধা হাঁক ছেড়ে ডাকলো। জিনিয়াকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ বাকিরা কই?”
“ ক্যান্টিনে। চলে আসবে..! তুই খেয়েছিস?”
স্নিগ্ধা মাথা ঝাঁকিয়ে আড্ডায় মশগুল হয়ে পড়ে। হিমুকে ছোট একটা টেক্সট দিয়ে দ্রুত তাদের আড্ডায় জায়গায় উপস্থিত থাকতে বললো। আজকাল মেয়েটা দূরে দূরে থাকছে। হুট করে কেনো এতো পরিবর্তন?
ক্যান্টিতে মোটামুটি ভীর বলা যায়। প্রতিটি টেবিলেই মানুষে পরিণত! পেছনের কর্ণারে একটা টেবিলে বসে দ্রুত খাচ্ছে চৈতী। ইদানীং হলের খাবারে তৃপ্তি আসেনা। কতদিন মায়ের মজার হাতের রান্না খায়না সে। এসব খেয়ে কি বাঁচা যায়? গ্রামে ছিলো, সব সলিড খাবার। আর এখানে? তেল চর্বি-ই বেশী খেতে হচ্ছে। কিছুদিন যাবত চৈতী পেট ব্যথা অনুভব করছে। অনিয়ম, তেল জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে হয়তো এ রকম!
শ্রাবণ মায়া ভরা দৃষ্টিতে অপলক চৈতীর খাওয়া দেখছে। এই রমনী পাশে থাকলে, সে পলক ফেলতে ভুলে যায় । শুধু পলক কেনো? আশেপাশের সব কিছুই যেনো ভুলতে বসে। অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে চলে যায়। এই ঘড়ির কাঁটার টিং টিং শব্দও বন্ধ হয়। সাধাসিধে মেয়েটার হৃদয় যেমন নরম ঠিক তেমনি রূপবতীর রূপও অপূর্ব! ঝলসে পড়া রূপ থেকে চোখ ফেরানোই মুশকিল। চৈতী হঠাৎ খাওয়ার মাঝে থেমে গেলো। শ্রাবণের বাহুকে কষে চড় দিয়ে ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলল,
“ এ্যাই শ্রাবণ মাস! খাচ্ছিস না কেনো?”
শ্রাবণের ভাবনা ভাটা পড়লো। নড়েচড়ে কফিতে চুমুক দিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,
“ তুই সামনে থাকলে আমার গোছানো জীবনটা এলোমেলো হয়ে তুঙ্গে উঠে। সব তালগোল পাকিয়ে যায়। চোখে ভাসে তোর হাঁসি, অভিমান এবং রাগ! মনের অজান্তেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটে সব। তুই কি জানিস এসব কেনো হচ্ছে? এর থেকে মুক্তি পাবো কিভাবে?”
আবেগ মাখা বাক্য শেষে শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে ক্ষনিকের মুহূর্তেই চৈতীর নাক টেনে দিলো। চৈতী খুব ভালো করেই বুঝেছে, শ্রাবণের মনের কথা! ওর মহিভ্রম ইদানীং বেড়েই যাচ্ছে। বুঝতে পারছে না ভাব সাব! মেয়েটি রেগে নাক কুঁচকে হঠাৎ কিল বসালো ওর বাহুকে। শাসিয়ে বলল,
“ শ্রাবণের বাচ্চা! বর্ষা মৌসুমে কি হয় জানিস? তোর চোখ থেকে সেই ফোঁটা ঝড়ে পড়তে না চাইলে, এই মুহুর্তে বাস্তবে ফিরে আয়। তুই কি চাইছিস? আমাদের মিষ্টি বন্ধুত্ব শেষ করতে চাইছিস?”
শ্রাবণ হতাশ হলো। চোখ-মুখে আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ জমিয়ে মাথা দোলাল। সে চায় না, ভালোবাসার জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট হোক! চৈতী বন্ধু হিসেবেই নাহয়, আজীবন তার পাশে থাকবে। এতেই চলবে.!
“ ছাগল.! সব কথা সিরিয়াস নিতে নেই। তোকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম। কোনো ছেলে প্রপ্রোজ করলে, তোর ভাব ভঙ্গি কিরূপ হয় বুঝার জন্য! এখন আমি বুঝে গেছি, তোর মতো আনরোমান্টিক মেয়েকে দিয়ে ওসব প্রেমের ব্যাপার স্যাপার হবে না। অসম্ভব কল্পনা ব্যতিত কিছুই নয়। ”
বলেই জোরপূর্বক হেঁসে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে যায় টেবিল হতে। চৈতী ভেংচি কেটে বিড়বিড় করলো,
“ তুখোড় অভিনেতা! ”
ছেলেটা দ্রুত এগিয়ে খাবারের বিল পে করে চৈতীর মাথায় গাট্টি মেরে বলল,
“ পেটুক! অনেক হয়েছে এবার উঠ। হল-এ ফিরবি না?”
চৈতী ঝটপট মুখ বাঁকিয়ে অবশিষ্ট নাস্তা খাওয়া শেষ করলো৷ পরিশেষে, ওয়ান টাইম কাপে কফি নিয়ে শ্রাবণের আগে আগে ছটফটে পায়ে স্নিগ্ধার নিকট যাওয়ার পায়তারা করল। চৈতীর ঘন লম্বা বিনুনি হাঁটের তালে তালে দোল খাচ্ছে। তীব্র বাতাসের তালে কপালের অবাধ্য বেবি হেয়ার গুলো বার বার নাকে, মুখে পৌঁছাচ্ছে। মেয়েটি বিরক্তে বাম হাতে সরিয়ে দিলেও, পরক্ষণেই আবারোও ফিরে আসছে তার মুখে। হয়তো, মেয়েটির সাথে লুকোচুরি খেলার আয়োজন। শ্রাবণ হঠাৎ থমকে গেলো। সামনের মেয়েটার দিকে নজর রেখেই ঘোরের মধ্যে চলে যায়। এই দৃশ্য তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুন্দর দৃশ্যের মধ্যে একটি মনে হলো।
হঠাৎ মেয়েটির হাঁটা থেমে যেতেই সেও হতভম্ব হয়ে থমকে দাঁড়ায়।
সামনে অর্পণ শেখ ভ্রু কিঞ্চিৎ করে তাকিয়ে আছে। পেছনে গম্ভীর-শীতল চোখে তাকে দেখছে বাকি রা! চৈতী তাড়াহুড়ো করে ওদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আকস্মিক পায়ের কাছে এক টুকরো ইটের সাথে হুঁচট খেয়ে হুড়মুড় করে পড়ে যেতে নিলো। শ্রাবণ দ্রুত মেয়েটির হাত ধরার আগেই ঝড়ের বেগে অর্পণ খপ করে কোমর জরিয়ে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে চৈতীর হাতে থাকা কফির কাপটি ছিটকে পড়লো শার্টে। মেয়েটি তৎক্ষনাৎ পড়ে যাওয়ার ভয়ে দুহাতে শার্ট খামচে ধরল। অর্পণ তার ভয়ার্ত মুখ, হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিক কম্পন যেনো দূর থেকেও অনুভব করছে। বুকের ভেতর তারও অচেনা এক অনুভূতি হলো। কিন্তু পরক্ষণেই গরম কফির যন্ত্রণায় অর্পণ চোখ বন্ধ করে নেয়।
ঘটে যাওয়া আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সকলের চোখ-মুখ অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায়। চৈতী বিস্মিত! মেয়েটি ভয়ে, জড়তায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। বুকের ভেতর কাঁপছে অনবরত। এটা কি হলো? এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হলো চৈতী? বাকিরাও স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। অর্পণের রাগান্বিত চোখ তাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে উত্তাপে। চৈতী হালকা ঢোক গিলে নড়াচড়া করলো বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। অর্পণের চোখ দিয়ে ভয়ানক আ/গুন ফুল্কি বের হচ্ছে। তীব্র লজ্জা, জড়তা, অস্বস্তিতে ছেলেটার কোমরে রাখা হাতে খামচে ধরে ছুটাছুটি করলো। কিন্তু তার ছুটন্তপনায় অর্পণের রাগ বেরে যায়। তার শার্টের সাথে মেয়েটা তাকেও পুড়িয়ে দিয়েছে। রেগে আগের তুলনায় আরোও ঘনিষ্ঠ হয়ে শক্ত করে কোমর চেপে ধরলো। এরপর হিসহিসিয়ে বলল,
“ তোকে বাঁচানোর প্রতিদান তুই আমার বুকে গরম কফি ঢেলে দিলি? এতই পড়ে যাওয়ার শখ তাই না? ওকে ওয়েট!”
বলার সঙ্গে সঙ্গে সকলকে আরেক দমা চমকে দিয়ে অর্পণ চট করে চৈতীর কোমর ছেড়ে দেয়। তৎক্ষনাৎ চৈতী হাত বাড়িয়ে অর্পণের শার্ট ধরতে গেলে এক ঝটকায় দূরে সরে দাঁড়ায়। যার ফলে, মেয়েটা ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো। আকস্মিক কান্ডে কোমরের ব্যথায় “ ওহহ” শব্দ তুলে। শ্রাবণের বিস্মিত ভাব মেয়েটার আর্তনাদে পালিয়ে যায়। তড়িৎ গতিতে ছুটে গিয়ে চৈতীর দুই বাহু ধরে টেনে উঠিয়ে অস্থির কণ্ঠে বলল,
“ খুব ব্যথা পেয়েছিস? একটু সাবধানে নামতে পারলি না?”
চৈতীর চোয়াল শক্ত। সে রাগি চোখে সামনে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“ কে জানতো এই গোবর গণেশের সঙ্গে দেখা হবে। তাহলে দেরীতেই আসতাম।”
বলেই চৈতী গায়ের ময়লা ঝেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। আশেপাশে মানুষের দৃষ্টি তাদের দিকেই নিবদ্ধ! অর্পণ গরম চোখে শাষিয়ে এক টানে গায়ের চেক শার্ট খুলে ফেললো। শুধু স্যান্ডু গেঞ্জিতে দেখে লজ্জায় চোখ ঘুরিয়ে নিলো মেয়েটা। এভাবে কখনও সে খালি গায়ে দেখেনি কাউকে। শক্তপোক্ত দেহের মাঝে গলিয়ে রেখেছে শুধু পাতলা গেঞ্জি। আশেপাশের মেয়েগুলো কিভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। যেনো, এমন ছেলেকে আগে কখনও দেখেনি। লজ্জায় আড়ষ্ট হলো চৈতী। মাথা নুইয়ে চিবুক গলায় ঠেকিয়ে, চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অর্পণ গর্জে উঠে বলল,
“ চুমকির বাচ্চা..! আমার শার্ট নষ্ট করে তুই পালিয়ে যাচ্ছিস! ওখানেই দাঁড়া। এক পা-ও নড়বি না!”
বেচারী ভয়ে থমকে তাকায়। শ্রাবণও সাহস পেল না আগ বাড়িয়ে কথা বলার। শুধু ছোট করে জিনিয়াকে একটা মেসেজ করলো। সমুদ্র এবং শিহাব ক্যান্টিন থেকে পানি নিয়ে অর্পণের বুকে, পেটে কিছুটা ঢেলে দিতেই অর্পণ হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয়। চেক শার্ট চৈতীর মুখের কাছে ছুঁড়ে মেরে হাস্কি স্বরে বলল,
“ নষ্ট করেছিস তুই। ভদ্র মেয়ের মতো ঘঁষে, ধুয়ে এবং শুঁকিয়ে কাল সকালে এই জায়গায় নিয়ে আসবি! আমি অপেক্ষায় থাকবি। মনে রাখিস এটা আমার প্রিয় মানুষের দেওয়া শার্ট। ভুলেও নষ্ট করার চেষ্টা করবি না। তাহলে, জানে মেরে দিবো। ”
চৈতীর চোখ-মুখ কুঁচকে গেলো। শার্টের মাঝ থেকে সারাদিনের যত ময়লা, ঘাম এবং সিগারেটের গন্ধে পেট মুচড়ে গা গুলিয়ে আসলো তার। ইতর মানুষটার শার্ট এত বাজে কেনো? ছি! কখনও কি পরিষ্কার করে না? আবার কি বললো? প্রিয় মানুষের দেওয়া গিফট? এহহ! যদি তাই হয় তাহলে এমন অযত্নে রাখে কেনো? যত্ন করে রাখতে পারে না?খচ্চর লোক। নাক কুঁচকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“ এই শার্ট পড়ে কেউ ভার্সিটি আসে? ইয়াক!”
“ কি বললি?” বলেই অর্পণ ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বাম হাতে কব্জি চেপে ধরলো। মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে শিউরে ওঠে। শার্ট হাতে রেখে শ্রাবণকে নিয়ে হনহনিয়ে যেতে যেতে বলল,
“ আপনার মাথা। ওই ম্যান্টাল / আধ পা-গল, শয়-তান ছেলেরও প্রেমিকা আছে ভাবতেই আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। ”
তৃধা আর পৃথা একটু আগেই প্রাকটিস রুমে গিয়েছে। শিহাব, সমুদ্রকে নিয়ে একটু আড্ডা দেওয়ার জন্য এসে অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হলো তারা। অর্পণ তাগড়া যুবক হলেও অসভ্যের ন্যায় সেভাবেই ক্যান্টিনে বসে রইল। এখনও বুক, পেট জ্বলে যাচ্ছে। ফ্যানের বাতাসেও মস্তিষ্ক দাউদাউ করে জ্বলছে..! মেয়েটা কাছে আসলেই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটায়। শিহাব আইস কিউব এনে অর্পণের পুঁড়ে যাওয়া স্থানে রেখে ফিসফিস করে বলল,
“ মেয়েটি প্রেমের আগেই বুক পুঁড়িয়ে জ্বালিয়ে দিলো? ”
“ আমার চৈতী সোনা কে তুই কেনো ধরতে গেলি? ইশশ! এই চান্স টা আমিই নিতাম। সুযোগে কাছে আসা যেতো! তারপর.. তারপর ভালোবাসা-বাসিও হয়ে যেতো!”
সমুদ্র মুখ ফুলিয়ে বলল। অর্পণ কটমট করে তাকিয়ে বলল,
“ জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আরেকবার সোনা বললে! সব মেয়ে-ই তোর বউ? ”
লজ্জায় মাথা ঝাঁকালো সমুদ্র। বলল,
“ তুই বেশী বেশী করলি অর্পণ। ওই কোমল মেয়েটাকে ধমকাতে পারলি? নিচে আছাড় খাওয়ালি! শয়-তান! শার্ট কি আমি ধুয়ে দিতে পারতাম না? ওর হাত ব্যথা হবে। তোর এজন্যই প্রেমিকা জুটে না। আমি থাকলে কি করতাম জানিস? চৈতীকে জরিয়ে ধরে কল্পনায় ডুবে যেতাম। আহা! কি রোমান্টিক মুহুর্ত!”
“ থাপরিয়ে গাল লাল করে দেবো। এই মুহুর্তে দূর হ। ন্যাকামি করবি না আমার সামনে।”
বলেই অর্পণ রেগে তেড়ে গেলো। শিহাব হেঁসে বাঁধা দিলো তাকে। তুষিব তৎক্ষনাৎ কোথা থেকে দৌড়ে এসে অর্পণের সামনে দাঁড়াল। হাতের শপিং টেবিলে রেখে অনবরত হাঁপিয়ে বলল,
“ শার্ট আনছি ভাইজান। পইরা নেন। সব মাইয়া আপনারেই দেখতাছে। আমরা কি পোলা না? একটু আমাগোর দিকে তাকাইলে কি হয়? ”
শিহাব, সমুদ্র উচ্চস্বরে ক্যান্টিন কাঁপিয়ে হাঁসলো। দ্রুত গায়ে শার্ট গলিয়ে অর্পণ চেয়ারে ঠাস মেরে বসে বলল,
“ তুই হচ্ছিল সব মেয়ের লাভগুরু! মেয়েদের চোখে যাকে বলে রোমিও! ”
জিনিয়ার পাশে মুখ ভার করে বসে পড়লো চৈতী। রাগে মাথা ধপধপ করছে! শ্রাবণের চিন্তিত মুখ!চৈতীর অসহায় চোখ এছাড়া হাতে নোংরা শার্ট দেখে স্নিগ্ধা কৌতুহল বশত বলল,
“ কি হয়েছে? শার্ট টা চেনা চেনা লাগছে!”
চৈতী দাঁতে দাঁত চেপে হাতের শার্ট ছুঁড়ে মারলো মাঠে। পরক্ষণেই অর্পণের কথা মনে হলেই তড়িঘড়ি করে হাতে নিল। অসহায় কণ্ঠে বলল,
“ ভাগ্য খারাপ হলে, সবাই সুযোগ নেয় স্নিগ্ধু! ওসব কথা বাদ দে। প্ল্যান বল। মুড ভালো নেই হল-এ ফিরবো।”
“ উহু! একটু আগেই খুশিতে লাফাচ্ছিলি। এখন কি হলো। বলতেই হবে। ”
জিনিয়ার কথার জবাবে শ্রাবণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সংক্ষেপে বলল। স্নিগ্ধার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রেগে বেফাঁস একটা গালি দিতেই শ্রাবণ ওর মুখ চেপে ধরে বলল,
“ আস্তে..! অর্পণ ভাই শুনলে জানে মেরে দিবে। ”
“ ছেলেটা কি মাস্তান?” বলেই চৈতী ভেংচি কাটলো।
শ্রাবণ ঢোক গিলে। উষ্কখুষ্ক করে বিড়বিড় করে,
“ তার থেকে কম কি? জানিস তার কথার আগে হাত চলে! তোর কি চড়ের কথা মনে নেই!”
তৎক্ষনাৎ চুপসে গেলো চৈতী। হতাশ শ্বাস ফেলে মাথা উপর নিচ করলো। জিনিয়া ঠোঁট উল্টে বলল,
“ এমপির ছেলের ওসব অল্পস্বল্প পাওয়ার থাকেই। ”
“ এলাকা গরম কার জন্য? অর্পণ শেখ এর জন্যই। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই ছেলেপুলে ইচ্ছে মতো পিটিয়ে হসপিটালে পাঠিয়ে দেয়। ”
চৈতী শুকনো ঢোক গিলে শ্রাবণের কথার জবাবে বলল,
“সত্যি? এত খারাপ উনি? আমার ভয় করছে শ্রাবণ! ”
“ আমি বেঁচে থাকতে ভয় কিসের?”
ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো চৈতী। স্নিগ্ধা ভেংচি কেটে বলল,
“ ওই অসভ্য কে ভয় পাওয়ার কি আছে? ওকে জাস্ট টিপে মেরে ফেলবো। ব্রেকিং নিউজ হবে, একটি বাচ্চা মেয়ের হাতে মারা পড়ল, কুখ্যাত মাস্তান অর্পণ শেখ! তাছাড়া ওর মা কিন্তু মুটেও মাস্তানি সহ্য করতে পারেনা। সারাক্ষণ ছেলেকে বকাঝকা করে। কিন্তু ওই বেহায়া অর্পণের কি লজ্জা আছে? কানেই তুলে না। পাত্তা তো দূরের কথা। নিজের মতো গা ঝাড়া দিয়ে ঘুরে মাস্তানি করে। ”
অজানা ভয়ে জিনিয়া খপ করে চৈতীর হাত ধরে ভয়ার্ত মুখে তাকাল। শ্রাবণ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তুড়ি মেরে টপিক চেঞ্জ করে।
অর্পণের কথা সমাপ্তি করে ওদের সাথে পাঞ্জাবি ম্যাচিং করে অনলাইনে অর্ডার দিলো। আড্ডার তালে তালে চৈতীর মুখেও হাঁসি ফুটে উঠে। কিন্তু হাতের শার্টে চোখ যেতেই অজানা ভয়ে বুক কাঁপে তার। এমপির ছেলের সাথে ভুলেও দ্বিতীয় বার লাগা যাবে না। দূরে দূরে থাকতে হবে। তাদের শালিক পাখির ন্যায় কিচিরমিচির শব্দে দূর থেকে অর্পণ একপলক তাকায়। স্নিগ্ধার সাথে চৈতীকে দেখে হনহনিয়ে ক্লাসে গেলো।
চৈতী বন্ধুদের বিদায় দিয়ে হলের দিকে পা বাড়ালো। আজ দীর্ঘ সময় আড্ডার ফলে, বিকেল হয়ে গেছে। চারপাশের মিষ্টি বাতাসে মনটাও ফুরফুরে। তাড়াহুড়ো পায়ে হলের সামনে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে তুষিব দাঁত কেলিয়ে নিকটে দাঁড়াল। লম্বা একটা সালাম দিয়ে বলল,
“ ভাইজান খাইতে বইছে আপা। আপনি পাঁচ মিনিট দাঁড়ান। ”
হকচকিয়ে উঠে চৈতী। আমতা আমতা করে বলল,
“ মানে?”
“ মানে আমার গার্লফ্রেন্ড হবেন?”
রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ বয়স কত তোমার?”
“ ইয়ে মানে! সিনিয়র আপাদের প্রতি আমি জন্মগত ক্রাশ। আম্মাই কইছিল, ছোট বেলা থেকেই আমি আপা দের খুব ভালোবাসি। ”
চৈতী কিছু শক্ত এবং তিক্ত কথা বলার জন্য হাত উঠাতেই মনে পড়ল, অর্পণের চ্যালা আর কেমন হবে? তাছাড়া ছেলেটা যদি নালিশ জানায় ওর নামে? তখন তো কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। এই অচেনা শহরে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য এসব অসভ্য ছেলেদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। যদি ভুলেও তার ক্ষতি করে দেয়? সম্মান এবং চরিত্র যে চৈতীর কাছে ভীষণ মূল্যবান। রেগে যদি অর্পণ উল্টোপাল্টা কিছু করেও তবুও এমপির ছেলে বিধায়, জে/ল ফাঁ/সি হবে না। কিন্তু চৈতীর জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। সাথে, বাবা-মায়ের স্বপ্ন!
তাছাড়া এই পুঁচকে ছেলেও নিশ্চয়ই ওনার মতো চরম অভদ্র! তাই ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হলো অর্পণ। মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করতেই দৌঁড়ে পালালো তুষিব। চৈতী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্পণ গলা ঝেড়ে সোজাসাপটা বলল,
“ তুই এই হলে থাকস?”
বিরক্তে চোখ-মুখ কুঁচকে গেলো মেয়েটার। এই ছেলেটার মুখ থেকে তুই-তুকারি বিদঘুটে ঠেকছে। তবুও অস্ফুটে বলে,
“ হু। ”
“ আমার শার্টে এক ইঞ্চিও যেনো দাগ না থাকে। মনে থাকবে.”
“ হু।”
“ যদি ভুলেও আমার রাগ এই অবলা, অসহায় শার্টের উপর ঝাড়িস তাহলে তোর অবস্থা কি করবো জানিস? ” বলেই অর্পণ গাঢ় চোখে তাকাল।
চৈতী ধৈর্য্য ধরে বলল,
“ জানি। যে গাল বাকি আছে, ওই গালেও কষিয়ে চড় মেরে লাল করে দেবেন। এবার যেতে দিন।”
অর্পণ তৎক্ষনাৎ উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে। মাথার চুলগুলো পেছনে ঠেলে ঠোঁট কামড়ে মৃদু স্বরে বলল,
“ গুড! ভেরী গুড চুমকি! খাবে নাকি আমার হাতের চড়? ”
চৈতী উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। এই বিপদ থেকে মুক্তি পেলেই সে রক্ষা পায়। উটকো ঝামেলা কেনো যে তার সাথেই বাঁধে! অসহ্য!
মেয়েটা তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, চুপচাপ পাশ কেটে চলে গেলো। অর্পণ থুতনিতে হাত বুলিয়ে বাম হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দামী সিগারেট বের করে। পুড়ে যাওয়া শুষ্ক ঠোঁটের ভাঁজে গুঁজে কপাল কুঁচকে লাইটার দিয়ে আ/গুন ধরালো। লম্বা একটা টান দিয়ে সেভাবেই নাক-মুখ দিয়ে গোলকার ধুঁয়া ছাড়তে থাকে। আকাশের পানে ফু দিয়ে সব ধুঁয়া বের করে দিয়ে হাতের সিগারেট আঙুলে গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়াল। হঠাৎ ওষ্ঠে বাঁকা হাঁসি ফুটিয়ে চৈতীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষণেই কি মনে করে চৈতী পেছন ঘুরে ভেংচি কাটতেই অর্পণ কপাল কুঁচকে তাকায়। মেয়েটি ফিক করে হেঁসে ভেতরে চলে গেলো।
নির্মল বাতাসে কিছুক্ষণ ধরে স্নিগ্ধা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। আশেপাশের একটা রিকশাও তাদের বাসার দিকে যেতে রাজি নয়। কি এক ঝামেলা। শ্রাবণ, জিনিয়া দুজনেই একসাথে চলে গেছে। স্নিগ্ধা উপায় না পেয়ে রাস্তার এপাশ-ওপাশ হাঁটা ধরলো। পরক্ষণেই ভাবলো, অপেক্ষা করার থেকে বাকি পথ হেঁটে যাওয়াই শ্রেয়! তৎক্ষনাৎ সে পেছন ঘুরে কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে চেপে, বাসার পথে হাঁটা শুরু করলো। প্রায় কিছু পথ হেঁটে যেতেই হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখল, অর্ণব যাচ্ছে। স্নিগ্ধার মুখে অজান্তেই হাঁসি ফুটে উঠে। আনন্দে হাত উঁচিয়ে ডাকার সময় মনে হলো, হয়তো জরুরি প্রয়োজনে ছেলেটা কোথাও যাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়।
“ স্নিগ্ধা..! আপনি হেঁটে যাচ্ছেন কেনো? ”
ভরাট গম্ভীর কণ্ঠ কানে বারি খেতেই স্নিগ্ধা থমকে যায়। অর্ণব রিকশা থেকে নেমে ঝড়ের গতিতে ওপাশ থেকে স্নিগ্ধার পাশে এসে দাঁড়াল। কৌতুহল বশত বলল,
“ রিকশা পাচ্ছিলেন না?”
স্নিগ্ধা পূর্বদৃষ্টি মেললো তার দিকে। মাথা বামে-ডানে দিয়ে বুঝালো পায় নি। ছেলেটা হাঁসলো কিঞ্চিৎ! মুহুর্তেই চোখ যেনো সেই হাঁসিতেই আটকে গেলো স্নিগ্ধার৷ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো সে। অর্ণব ওপাশের রিকশা মামাকে হাঁক ছেড়ে ডেকে আনলো। স্নিগ্ধার উদ্দেশ্যে মিষ্টি করে বলল,
খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৯
“ আপনার কি আজ বাড়ি ফেরার ভীষণ তাড়া? ”
মেয়েটি চটপট জবাব দেয়,
“ না তো..! কেনো?”
“ আজকের স্নিগ্ধ বিকাল টায় আমার মতো অধমকে সঙ্গ দেওয়া যাবে?”
