পারমিতা পর্ব ১৯

পারমিতা পর্ব ১৯
Nabila Ahmed

প্লেনের বেডে শুয়ে আছে মিতা। এবার অরিয়ন আর ফার্স্টক্লাস সীটের ব্যবস্থা না করে বেডের ব্যবস্থা করেছে। গতবার প্লেনে মিতার যেই বাজে অবস্থা হয়েছিলো, তা এড়াতেই এই ব্যবস্থা করা।
গতকাল রাতে মিতা যখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলো তখন অরিয়ন রাত জেগে বাংলাদেশে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলে।
–আমাদের উপর এটাক করেছিলো কারা?
বিছানায় শুয়ে থাকা মিতা শক্ত করে বিছানার চাদর ধরে রেখে অরিয়নের উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
বেডের এক পাশে বসে ম্যাগাজিন দেখছিলো অরিয়ন। মিতার কথা শুনে মিতার দিকে তাকাতেই নজর যায় মিতার হাতের দিকে। চাদরটা এমন ভাবে ধরে রেখেছে,যেন ছেড়ে দিলেই পড়ে যাবে।

–আমার বিজনেস রাইভাল।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
–ওদের উদ্দেশ্য তোমাকে মে*রে ফেলা ছিলো।
অবাক হয়ে বলে মিতা।
–হুম।
ম্যাগাজিন রেখে বেডে উঠতে উঠতে বলে অরিয়ন।
–অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম আমরা, তা না হলে কি যে হতো।
আবারও বলে মিতা।
–কিছুই হতো না। আমি কিছু হতেই দিতাম না।
মিতার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থেকে বলে অরিয়ন।
–সামান্য বিজনেসের জ..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিয়ন মিতার হাত থেকে বিছানার চাদর ছাড়িয়ে নেয়। অরিয়ন কি করছে তা দেখছে মিতা। আলতো হাতে অরিয়ন মিতার হাত নিজের হাতে নিয়ে নেয়। মিতার আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের আঙ্গুল দিয়ে মিতার হাত মুঠ করে ধরে অরিয়ন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিতা আর নিজের হাতের দিকে।
মিতার হাত স্পর্শ করার মূহুর্ত থেকেই যেন হার্টবিট দ্রুত চলছে মিতার। ইদানিং অরিয়নের স্পর্শ এক অন্যরকম শিহরণ জাগায় মিতার শরীরে। নিজেকে অরিয়নের কাছে নিরাপদ মনে হয়।

মিতার হাত ধরে রাখা অরিয়ন মিতার দিকে তাকাতেই দেখতে পায়,মিতা আগে থেকেই অরিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। ধরে রাখা মিতার হাত মিতার পেটের উপর এনে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে মিতাকে। মোশন সিকনেসের কারণে মিতা যে কতটা অস্বস্তি অনুভব করছিলো তা অরিয়ন ভালোই বুঝতে পেরেছিলো। গতবার জড়িয়ে ধরাতে একটু শান্ত হয়েছিলো ভেবে এবার ও জড়িয়ে ধরে মিতাকে। অরিয়ন জড়িয়ে ধরতেই মিতার শরীর রিলাক্স হয়ে পড়ে।
একে অপরের এতো কাছাকাছি আসাতে,একে অপরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অরিয়ন মিতাকে দেখতে দেখতেই চোখ গিয়ে আটকায় মিতার ঠোঁটের দিকে। এক দৃষ্টিতে মিতার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকতেই যেন গলা শুকিয়ে আসলো অরিয়নের। মনে হতে লাগলো ঠোঁটগুলো স্পর্শ না করলে হয়তো এই তৃষ্ণা আর মিটাতে পারবে না অরিয়ন। অন্যদিকে, অরিয়নের চাহনি দেখে মিতা ভালোই বুঝতে পারছে কি হতে যাচ্ছে। অরিয়নের চোখ, চেহারা বার বার এটাই বোঝাচ্ছে যে,অরিয়ন কিস করতে চায় মিতাকে।

অরিয়ন নিজের মুখ মিতার ঠোঁটের কাছাকাছি নিতেই নিজের বুকে মিতার স্পর্শ অনুভব করে। মিতার ঠোঁট থেকে চোখ সরিয়ে বুকের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে মিতা নিজের হাত রেখেছে অরিয়নের বুকে। মিতা ভালোই জানে অরিয়নের এই কিস করা, প্রতিনিয়ত মিতাকে স্পর্শ করা সবটাই শারীরিক আকর্ষণ বা মোহ। যা ক্ষণিকের জন্য আসে আবার ক্ষণিকের মধ্যেই চলে যায়। তাই বাধা দিতেই অরিয়নের বুকে হাত রেখে হালকা করে ধাক্কা দেয় মিতা।
অরিয়ন মিতার ধাক্কা অনুভব করতেই নিজের হাত দিয়ে মিতার হাত ধরে বিছানায় চেপে ধরে। মিতার দূরে সরানোটা কেনো যেন একটু ও ভালো লাগলো না অরিয়নের, উলটো মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। অরিয়ন আর এক মিনিটও অপেক্ষা না করে ঝাপিয়ে পড়ে মিতার ঠোঁটের উপর। মিতার ঠোঁট স্পর্শ করতেই যেন রুহ ফিরে আসলো অরিয়নের আত্নায়। সামান্য কিসের জন্য অরিয়ন একজন ১৭/১৮ বছরের ছেলেদের মতো বিহেভ করবে তা যেন ভাবতেও পারছে না অরিয়ন। তাও মিতার ঠোঁট দেখলেই কেনো যেন মনে হয় এটাই প্রথম কিস অরিয়নের।

–উম্মম্মম…
কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মিতা। অরিয়ন এতো ডেস্পারেটলি কিস করতে ব্যস্ত যে মিতার জন্য শ্বাস নেওয়াও এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।
–ওয়েট, অরিয়ন ভাই…
–আহ..
মিতার নিজের ঠোঁট ছাড়িয়ে কথাটা বলতেই মিতার গলায় স্বজোরে কামড় বসিয়ে দেয় অরিয়ন। এতো জোরেই কামড় বসিয়েছে যে চোখের কোণে পানি চলে এসেছে মিতার।
–অরিয়ন, শুধুই অরিয়ন।
মিতার কপালের সাথে নিজের কপাল স্পর্শ করে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয় মিতা। অরিয়ন? কিছুদিন আগেও অরিয়ন ডাকায় রাগ করেছিলো অরিয়ন আর আজ? আজ নিজেই বলছে শুধু অরিয়ন ডাকতে।

–হোয়াট আর ইউ ডুয়িং টু মি, লাভ?
নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মিতার ঠোঁট ঘোষতে ঘোষতে বলে অরিয়ন।
পরক্ষণেই আবারও মিতাকে কিস করতে থাকে অরিয়ন। নিজের হাত দিয়ে মিতার শার্টের বাটন খুলতে মরিয়া হয়ে পরে। মিতার শার্টের বাটন খুলতে ব্যস্ত অরিয়নের মনোযোগ নষ্ট হয় মোবাইলে রিং বাজতেই।
–ওয়েট।
একপ্রকার বিরক্ত হয়ে কথাটা বলেই মোবাইল নিতে পাশ ঘুরে অরিয়ন।

মোবাইল হাতে নিতেই যেন নিজের জায়গায় পাথর হয়ে রইল অরিয়ন। হুট করে অরিয়ন কেনো নিজের জায়গায় এমন স্থীর হয়ে রইল তা বুঝার জন্য মিতা বিছানা থেকে উঠে অরিয়নের দিকে তাকায়। যেই অরিয়নের মুখে এতোক্ষণ মিতার জন্য এক অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছিলো সেই অরিয়নের মুখে এখন শুধুই অনুশোচনা আর অপরাধবোধ। দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো অবৈধ কাজ করতে গিয়ে ধরা পরে গিয়েছে। অরিয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে। মোবাইলে এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছে তা দেখার জন্য মোবাইলের দিকে তাকাতেই যেন মিতাও পাথর হয়ে রইল। মোবাইলের স্ক্রিনে ভাসছে আফরিনের ছবি। যেই ছবিতে আফরিন খোলা চুলে শুয়ে আছে বিছানায়। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি দিয়েছে আফরিন।

কতই না সুন্দর লাগছে ছবিতে আফরিনকে।
অরিয়ন তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠেই ওয়াশরুমে চলে যায়। হঠাৎ করেই মিতার মাথা যেন প্রচন্ড ঘুরতে শুরু করেছে, বমি আসবে মনে হতেই শুয়ে পরে মিতা। এই খারাপ লাগা মোশন সিকনেসের কারণে নয়, এই খারাপ লাগা এটা বুঝতে পেরে যে আফরিন আর অরিয়নের ভালোবাসা কতটা গভীর ছিলো। এটা ভেবে যে আফরিন ধোকা দিয়ে গেলেও কেনো অরিয়ন আফরিনকে ভুলতে পারছে না, কেনো ৬ মাস হয়ে গেলেও অরিয়ন মুভ অন করতে চাইছে না। মিতার কি খুশি হওয়া দরকার? এটা ভেবে যে, অরিয়নের মতো লয়াল মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। নাকি দুঃখ পাওয়া উচিৎ? যে এরকম একজন মানুষ মিতার স্বামী হয়েও মিতার না। “কেনো চলে গেলে তুমি আপু? না তুমি চলে যেতে, না আমি তোমার আফনানকে ভালোবাসতাম আর না আমার এতো কষ্ট হতো। তার সবকিছুতেই যখন তুমি তাহলে কেনো তাকে ফেলে চলে গেলে?” মনে মনে ভাবতে ভাবতেই কাঁদতে থাকে মিতা।

অরিয়ন যখন ওয়াশরুম থেকে বের হলো মিতা তখন একপাশ হয়ে শুয়ে আছে। অরিয়ন এক পাশে রাখা সোফায় বসে টিভি অন করে টিভি দেখার চেষ্টা করে।
” লাভ? অরিয়ন, শুধুই অরিয়ন” কথাগুলো বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে অরিয়নের মাথায়। “কি হচ্ছে এসব আমার সাথে? মিতার প্রতি এরকম আকর্ষণ?” মনে মনে ভাবে অরিয়ন।
মিতার জন্য অরিয়ন যা অনুভব করছে তা আর কখনো কারো জন্যই করেনি অরিয়ন। না করলেও এটা ভালোই বুঝতে পারছে এই অনুভূতিটা ভালো না, মিতা বা অরিয়ন কারো জন্যই ভালো না।

আড় চোখে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। মিতার চোখ বন্ধ। চোখ বন্ধ হলেও মিতা যে ঘুমায়নি তা অরিয়ন জানে।
হাতে থাকা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আফরিনের ছবিটা দেখে অরিয়ন। “কি সব হচ্ছে আমার সাথে আফরিন? কেনো পরীর জন্য আমার এমন লাগছে? আমি কি পরীর মধ্যে তোমাকে খুজছি?” মনে মনে ভাবে অরিয়ন।
হ্যাঁ, তাই হবে। আফরিন আর মিতার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তাই হয়তো মিতার মধ্যে আফরিনকে খুজে নিচ্ছে অরিয়ন। কিন্তু তা যে ঠিক নয় সেটাও বুঝতে পারছে অরিয়ন। একজনের শূন্যস্থান অন্যজনকে দিয়ে বিশেষ করে পরীকে দিয়ে পূরণ করিয়ে নেওয়া ঠিক নয়।

“পরী ডিসার্ভ করে এমন একজনকে, যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব জায়গায় পরী থাকবে, যার মন আমার মতো ভাঙ্গা হবে না,যে পরীকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসবে,যে পরীকে মাথায় তুলে রাখবে” নিজের মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হাতে থাকা মোবাইল অরিয়ন কখন শক্ত করে চেপে ধরেছে বলতেও পারেনা। শুধু জানে কিছু ভাঙ্গার শব্দে চোখ হাতের দিকে যেতেই লক্ষ্য করে মোবাইলের স্ক্রিন ফেটে গেছে।
স্ক্রিনে থাকা আফরিনের ছবিটা এখন আর স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে শুয়ে থাকা মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন।
চাদর দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রেখেছে মিতা, হয়তো ঘুমিয়েও গেছে। মিতার দিক থেকে নজর সরিয়ে সোফার সাথে হেলান দেয় অরিয়ন।
“আমার পরী” বিরবির করে বলে অরিয়ন।

এয়ারপোর্টে যখন অরিয়ন আর মিতা ল্যান্ড করলো মিতার অবস্থা তখন দুই কারণেই খারাপ। একে তো মোশন সিকনেস তার উপর যা প্লেনের মধ্যে হয়েছে তা। মিতার অবস্থা খারাপ জেনেও এবার আর অরিয়ন মিতাকে ধরলো না। প্লেনে যা হয়েছে তার জন্য নিজের উপর ই রেগে আছে অরিয়ন। মিতার সামনে কেনো যেন ইদানীং নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না অরিয়ন। তাই মিতাকে না ধরেই আগে আগে হাটতে থাকে অরিয়ন। মিতা কোনোমতে নিজেকে স্থির রেখে অরিয়নের পিছন পিছন হাটছে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবরারকে।
ড্রাইভার সহ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আবরার। দূর থেকে মিতাকে দেখে দৌড়ে চলে যায় মিতার কাছে। নিজের ভাই অরিয়নকে যেন দেখলোই না আবরার।

–আরিয়ান ভাইয়া।
আবরারকে দেখে খুশি হয়ে বলে মিতা।
–মিতা।
বলেই মিতাকে জড়িয়ে ধরে আবরার।
–এই অবস্থা কেনো তোর? মোশন সিকনেস এখনো ঠিক হয়নি তোর? চেনাও যাচ্ছে না।
একের পর এক বলেই যাচ্ছে আবরার।
মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা।
–আয় আর টেনশন নেই, তোর আরিয়ান আছে। কথাটা বলেই মিতাকে আবারও জড়িয়ে ধরে আবরার। মিতাও আবরারকে জড়িয়ে ধরে। নিজের শক্তি ছেড়ে দেয় আবরারের উপর।
অরিয়ন একটু দূর থেকে সবই দেখে যাচ্ছে। কিন্তু অরিয়ন যেন মিনিটের জন্যও ওদের থেকে নজর সরাতে পারছে না। অরিয়নের নজর গিয়ে আটকায় যেখানে আবরারের হাত মিতাকে স্পর্শ করেছে সেখানে। নিজের অজান্তেই ব্রিফকেস শক্ত করে ধরে অরিয়ন।

–স্যার ব্যাগ।
হঠাৎ করে ড্রাইভার বলে উঠে।
ড্রাইভারকে ব্যাগ দিয়ে আবারও তাকায় আবরার আর মিতার দিকে। এখনো দু জন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। দু জনের মুখেই প্রকৃত হাসি ফুটে আছে।
–এখানে তোর বড় ভাই অপেক্ষা করছে আর তুই কাজিন নিয়ে পরে আছিস।
কেমন ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে কথাটা বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় মিতা আর আবরার। অরিয়ন এভাবে কথাটা বলবে তা যেন বিশ্বাস করছে পারছে না দু জনের একজনও।
–এমন ভাব করছিস যেন এই পৃথিবীতে আর কেউ কোনোদিন প্লেনে উঠেনি আর অন্যকারো মোশন সিকনেস হয় না।
কথাটা বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে গাড়ির দিকে হাটা শুরু করে অরিয়ন।

–তুই ঠিক ই বলিস, ও একটা পেঁয়াজ। মানুষকে শুধু কান্না করাতেই পারে আর কিছুই পারেনা।
মন খারাপ করে থাকা মিতার দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।
–আয় মন খারাপ করিস না। বাসায় গিয়ে পেঁয়াজ আলীকে বাবা থেকে বকা খাওয়াবো দেখিস।
আবরার কথাটা বলতেই ফিক করে হেসে দেয় মিতা।
–চলো।
বলে মিতা।

গাড়ির পেছনের সিটে মিতা আর অরিয়ন বসেছে। মিতার সামনা সামনি ড্রাইভিং সিটের পাশে বসেছে আবরার। অরিয়ন চুপ করে থাকলেও মিতা আর আবরার এক মিনিটের জন্যও চুপ হচ্ছে না। প্যারিসে কি কি দেখেছে, কি কি খেয়েছে, কোনটা দেখতে কেমন সব কিছু খুলে বলছে আবরারকে।
–জানো, লুভর মিউজিয়াম অনেক সুন্দর। আরিয়ান ভাইয়া, তুমি কি জানতে? আইফেল টাওয়ারের উপরে উঠা যায়?
প্রশ্ন করে মিতা।
–তাই নাকি? আমি তো জানতাম ই না।
বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে যেন আরও রাগ হচ্ছে অরিয়নের। কি দরকার মিথ্যা বলার তা বুঝে না অরিয়ন। আবরার আরও অনেক আগেই বন্ধুদের সাথে প্যারিস ঘুরে গেছে, তাও জানেনা বলছে।
–তুমি সাথে থাকলে অনেক ভালো হতো। আর সব কিছু দেখাও হলো না, চলে আসতে হলো।
মন খারাপ করে বলে মিতা।
–নেক্সট বার তোকে নিয়ে আমি যাবো, সব ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো।
বলে আবরার।

–তাই নাকি? খুব মজ…
–চুপ, একদম চুপ। আরিয়ান কি তোর ছোট? নাকি তোর সমান? বড়দের সামনে কথা কম বলতে হয় জানিস না? সেই কখন থেকে দেখছি বকবক করে যাচ্ছিস।
রাগান্বিত অরিয়ন চেচিয়ে উঠে মিতাকে উদ্দেশ্য করে। মিতা ভয়ে নিজের জায়গায় লাফিয়ে উঠে।
–কিন্তু…
–আর একটা কথা বলবি তো দুই গালে দুইটা চর মারবো।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ম ভাইয়া, কি হয়েছে তোর? ওর সাথে এমন করছিস কেন?
অরিয়নের রিয়েকশন বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে আবরার।
–চুপচাপ গাড়িতে বস, না হয় এখন গাড়ি থেকে বের করে দিবো।
কড়া কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–আজব।
বলেই রাস্তায় দিকে তাকায় আবরার।

পারমিতা পর্ব ১৮

মিতার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে। অরিয়ন কোনোদিন মিতাকে বকাও দেয়নি আর আজ বললো চর মারবে। চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে কেঁদে যাচ্ছে মিতা। মিতা যে কাঁদছে তা ঠিকি বুঝতে পেরেছে অরিয়ন। মিতার চোখের পানি দেখে অরিয়নেরও মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু অতোটাও মন খারাপ হয়নি যতোটা মিতাকে আবরারের সাথে হাসি-খুশি ভাবে কথা বলতে দেখে হয়েছিলো।
কি এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে মিতার জন্য তা বুঝতে পারছে না অরিয়ন কিন্তু তার ফলাফল যে মিতার জন্য ভালো হবে না তা ঠিকি বুঝতে পারছে অরিয়ন। নাকি অরিয়নের পরীর জন্য?

পারমিতা পর্ব ২০