পারমিতা পর্ব ২০

পারমিতা পর্ব ২০
Nabila Ahmed

অরিয়ন আর মিতার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বাড়িতে অপেক্ষা করছে সবাই। আজ সকালেই ওয়াহিদ চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী ও চলে এসেছে এই বাড়িতে। গতকাল রাতে অরিয়ন থেকে গাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা শোনার পর থেকে কেউ এক মিনিটের জন্যও নিশ্চিন্তে থাকতে পারেনি।
বাড়ির গেটের সামনে কালো গাড়িটা এসে দাঁড়াতেই দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় মায়া চৌধুরী ও আনিকা চৌধুরী।
আবরার গাড়ি থেকে নামতেই তাড়াহুড়ো করে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় আনিকা চৌধুরী। অরিয়ন আর মিতাও নেমে আসে এরপর।
–কি অবস্থা তোর বাবা? কোথাও আঘাত লাগেনি তো?
অরিয়নকে জড়িয়ে ধরে বলে আনিকা চৌধুরী।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মায়া চৌধুরী মিতাকে দেখতেই স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ছাড়ে।
মিতাও মায়া চৌধুরীকে দেখতেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

–মা।
–কেমন আছে আমার মেয়েটা? কোথাও ব্যাথা পায়নি তো?
মিতাকে জড়িয়ে ধরতেই কেঁদে ফেলেন মায়া চৌধুরী।
–না মা, কিছুই হয়নি আমার। কান্না করছো কেনো?
মায়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–কই না তো, কান্না করছি না আমি। তোমার কি অবস্থা অরিয়ন? ওদের সম্পর্কে কোনো খোজ পেলে?
মিতাকে জড়িয়ে ধরে অরিয়নের উদ্দেশ্যে বলে মায়া চৌধুরী।
–না চাচি।
জবাব দেয় অরিয়ন।
–এই ঠান্ডায় কি সব কথা বাইরেই করবে নাকি ভিতরেও যাবে?
সবার উদ্দেশ্যে বলে আবরার।
–হ্যাঁ বাবা, ভিতরে চল।
আনিকা চৌধুরী বলে।
সবাই মিলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
ড্রয়িং রুমেই বসে আছে হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী। দু জনে মিলে গভীর আলোচনায় মগ্ন। সবাইকে আসতে দেখেই চুপ হয়ে গেলো দুজনে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–বাবা।
দৌড়ে গিয়ে ওয়াহিদ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলে মিতা।
–কেমন আছে আমার মিতা মামুনি?
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমি ভালো আছি বাবা। বাবা প্যারিস অনেক সুন্দর, আমরা অনেক কিছু দেখেছি। আর তোমাদের জন্যও অনেক কিছু এনেছি আমি।
–উহু উহু উহু।
মিতার কথা শুনেই একটু কাশি দিয়ে উঠে অরিয়ন। কাশি শুনতে পেয়ে অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা।
–না মানে আমরা এনেছি বাবা।
বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে সবার মুখেই হাসি ফুটে উঠে, শুধুমাত্র আনিকা চৌধুরী ছাড়া। আনিকা চৌধুরী যেন কথাটা শুনে আরও বিরক্ত হলো। ভ্রু কুচকে রইল।

–এখানে কিন্তু আমিও আছি।
হাবিব চৌধুরী বলে উঠে।
–কেমন আছো বড় চাচ্চু?
হাবিব চৌধুরীর কাছে গিয়ে হেসে বলে মিতা।
–ভালো, তুই কেমন আছিস? প্যারিস সুন্দর তাই না?
বলে হাবিব চৌধুরী।
–হ্যাঁ অনেক সুন্দর।
জবাব দেয় মিতা।
–তোমাদের হাসি তামাশা শেষ হলে আসল কথায় আসবে?
বলে উঠে আনিকা চৌধুরী।
–আমার ছেলেটা মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে, কীভাবে সবাইকে ধরবে তা নিয়ে কথা না বলে তোমরা আছো আনন্দে।
সোফায় বসতে বসতে বলে আনিকা চৌধুরী।

–শায়লা, পরীকে ওর রুমে নিয়ে যাও। ও অনেক ক্লান্ত।
বলে অরিয়ন।
–আমিও এখানে থাকবো।
বলে মিতা।
–যা বলেছি তা করো শায়লা।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে অরিয়ন।
শায়লা আর কোনো কথা না বলে মিতাকে ধরে উপরে নিজের রুমের নিয়ে যায়। মিতা মন খারাপ করে শায়লার সাথে চলে যায়।

–তুই শিউর গাড়িটা ওদের ই ছিলো?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–হ্যাঁ চাচ্চু।
জবাব দেয় অরিয়ন।
–আমি সবার জন্য বডিগার্ড এর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিশেষ করে আরিয়ান আর পরীর জন্য।
আবারও বলে অরিয়ন।
–আমার কেনো লাগছে বডিগার্ড?
বলে আবরার।
–কারণ তুই বাইরে যাস।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–ওরা যেহেতু প্যারিস যেতে পেরেছে তার মানে ওরা প্রতিনিয়ত আমাদের ফলো করছে। আমি আইজিপি এর সাথে কথা বলবো।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–আমিও বাড়ি,অফিস আর কলেজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–মিতাকে কিছুদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে নি..
–না।

মায়া চৌধুরী তার কথা শেষ করার আগেই অরিয়ন বলে উঠে।
অরিয়নের হঠাৎ এমন জবাবে সবাই অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল।
–মানে বলছিলাম যে, এই বাড়িটা কখনো খালি থাকে না। কেউ না কেউ থাকেই। ঐ বাড়িতে তো ও একা থাকবে, সেইফটি নিশ্চিত করা না পর্যন্ত ও এখানে থাকলে ভালো হতো।
বলে অরিয়ন।
–কিন্তু..
–আমার মনে হয় অরিয়ন ঠিক বলছে মায়া। এখন আমাদের ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমি ও একমত ওয়াহিদের সাথে।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–মিতাকে তাহলে এখন থেকে আমি কলেজ নিয়ে যাবো আর আসবো।
হুট করে বলে উঠে আবরার।

–ঠিক আছে। তাই হবে।
অরিয়ন কিছু বলার আগেই হাবিব চৌধুরী সম্মতি দেয়।
–এসব কথা পরেও বলা যাবে, তুই বাবা রেস্ট করে নে একটু।
বলে আনিকা চৌধুরী।
–আনিকা আপা ঠিক বলেছে। অনেকটা পথ জার্নি করেছো, তুমি রেস্ট নেও অরিয়ন।
বলে মায়া চৌধুরী।
–ওকে।
বলে অরিয়ন।

বিছানায় শুয়ে আছে অরিয়ন। মাঝরাতে সব কিছু অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। এই অন্ধকারটা যেন শুধু ঘরকেই ঘিরে রাখেনি, অরিয়নের জীবনটাও ঘিরে রেখেছে। শরীর এতোই ক্লান্ত যে হাত পা প্রচুর ব্যাথা করছে অরিয়নের তাও দু চোখের পাতায় ঘুম নেই। চোখ বার বার শুধু বেডের অপর পাশে যাচ্ছে। একদিন আগেও অরিয়নের সাথেই একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলো মিতা। কিন্তু আজ? অরিয়নের কেনো অস্থিরতা কাটছে না বুঝতে পারছে না অরিয়ন।
নিজের অজান্তেই হাত চলে যায় ঠোঁটে। মনে হচ্ছে এই ঠোঁটে এখনো মিতার স্পর্শ অনুভব করছে অরিয়ন। “এসব কি ভাবছি আমি?” কথাটা ভাবতেই লাফিয়ে উঠে অরিয়ন। লাইট অন করেই তাকিয়ে থাকে আফরিনের বিশাল ছবিটার দিকে। আগে যতোবার বিজনেস বা অন্যকোনো সমস্যায় অরিয়নের অস্থিরতা অনুভব হতো তখন আফরিনকে বা আফরিনের ছবিটার দিকে তাকালেই মনটা ভালো হয়ে যেত অরিয়নের, কিন্তুএখন যখন আফরিনের ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল তখন যেন অস্থিরতা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে অরিয়নের।
কিছু বুঝে উঠে আগেই যেন নিজে নিজে রুম থেকে বের হয়ে মিতার রুমের দিকে হাটা শুরু করলো অরিয়ন। মিতার রুমের কাছাকাছি যেতেই থেমে যায় অরিয়ন। দরজা খোলার শব্দ পেতেই ঘাবড়ে যায় অরিয়ন। মিতার উপর অজানা কোনো বিপদ নয় তো? কথাটা ভাবতেই যেন হাত পা কাঁপতে শুরু করলো অরিয়নের। তাড়াহুড়ো করে দরজার সামনে যেতেই দেখে আবরার রুম থেকে বের হচ্ছে। এতো রাতে আবরারকে মিতার রুমে দেখে চমকে যায় অরিয়ন।
–তুই এতো রাতে এখানে?
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–ফা*..তুই?
হঠাৎ করে অরিয়নের শব্দ পেয়ে ভয়ে লাফিয়ে উঠে আবরার।
–ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
বড় করে শ্বাস ছেড়ে বলে আবরার।
–এখানে কি করছিস তুই?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–এসেছিলাম মিতাকে দেখতে। সব ঠিক আছে নাকি তাই। তুই এখানে কেনো?
প্রশ্ন করে আবরার।
–অস্থির লাগছিলো তাই বের হয়েছিলাম।
জবাব দেয় অরিয়ন।
–ওহ, আচ্ছা গুড নাইট।
কথাটা বলেই নিজের রুমের দিকে হাটা শুরু করে আবরার।
–আরিয়ান!
ডাক দেয় অরিয়ন।
–জ্বি?
–পরী এখন আর ছোট না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের রুমে যখন তখন প্রবেশ করা ঠিক না। আশা করি নেক্সট টাইম কথাটা মাথায় থাকবে।
অরিয়ন কথাটা যে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো না তা আবরারের বুঝতে বিশেষ কোনো জ্ঞানী মানুষ হতে হয়নি। মুখে গম্ভীরতা প্রকাশ পাচ্ছে, কণ্ঠে নেই কোনো কোমলতা। আবছা আলোয় সবটা ভালো করে বুঝতে না পারলেও অরিয়নের কথাটা একদম ভুলও মনে করলো না আবরার।
–মনে থাকবে।
কথাটা বলেই নিজের রুমে চলে যায় আবরার।
অরিয়ন নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। দু হাত মুঠ করে ধরেছে। হাতের রগগুলো স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরেছে। দাঁতে দাঁত চাপতেই স্পষ্ট শব্দ শোনা যাচ্ছে। আবরার নিজের রুমের দরজা লক করতেই অরিয়ন মিতার রুমের দিকে হাটা শুরু করে।

দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে অরিয়ন। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আজ রুমের ডীম লাইটটাও অফ করা। দরজায় দাঁড়িয়েই পাশে থাকা সুইচ অন করতেই পুরো ঘর আলোকিত হয়ে যায়। বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মিতা। কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে রেখেছে। পরণে টপস আর স্কার্ট। কিন্তু যা অরিয়নের মাথা খারাপ করে দিলো তা হলো স্কার্টটা অনেকটা উপরে উঠে আছে। ঘুমন্ত মিতা নড়াচড়া করায় কখন স্কার্ট উপরে উঠেছে বুঝতে পারেনি। স্কার্ট দিয়ে হাটু পর্যন্ত ঢাকা কিন্তু তার নিচের পা বের হয়ে আছে।
“স্কার্ট উপরে,আবরার, রুমে” কথাটা ভাবতেই কি হলো জানা নেই অরিয়নের। নিজের গায়ের স্বমস্ত শক্তি দিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে লাগায় অরিয়ন।
–কে? কে? কে? কে?
বিকট শব্দে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে মিতা।
হার্টবিট যেন বিদ্যুতের গতিতে চলছে মিতার।
ঘুম ঘুম চোখে অরিয়নকে নিজের রুমে দেখে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না মিতার। স্বপ্ন ভেবে চোখ ডলে আবারও তাকায় অরিয়নের দিকে।

–অরিয়ন ভাইয়া তু…
–ঠাসসসসসসসস।
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই দু কদমে মিতার সামনা-সামনি এসে মিতার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অরিয়ন।
কি হলো মিতা যেন কিছুই বুঝে উঠার সময় পেলো না। অরিয়ন এতো জোরে থাপ্পড় মেরেছে মনে হচ্ছে কেউ গাল থেকে খাবলে মাংস তুলে নিয়েছে। ২ মিনিটের জন্য যেন চোখেমুখে অন্ধকার দেখলো মিতা।
–অরিয়ন ভা..
–আহহ।
মিতা আবারও কথা বলার আগেই অরিয়ন নিজের বাম হাত দিয়ে মিতার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে, ব্যাথায় শব্দ করে উঠে মিতা।
কি হচ্ছে মিতা কিছুই বুঝতে পারছে না। গালের ব্যাথা অনুভব করার আগেই যেন মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে। এতো জোরে চুল টেনে ধরেছে মনে হচ্ছে চামড়াসহ ছিড়ে আসবে চুল। অরিয়ন চুল ধরেই মিতার মুখ নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে।

–হো*র হতে মন চাচ্ছে তোর,তাই না?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন ভাইয়া।
অরিয়নের কথা শুনেই রাগ উঠে যায় মিতার। একে তো কোনো কথা ছাড়াই গায়ে হাত তুলেছে তার উপর কি সব আজেবাজে কথা বলছে।
–কি? গায়ে লাগছে? হো*রদের মতো দরজা খুলেই ঘুমাস, যেন যে কেউ এসে একবার তোকে দেখে যেতে পারে?
মিতার চুল আরও জোরে টেনে ধরে বলে অরিয়ন।
–কথা সাবধানে বলবে।
অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে রেগে গিয়ে বলে মিতা। দু চোখে যেন আগুন ঝরছে মিতার।
–শরীর দেখানোর অনেক শখ হয়েছে তোর তাই না?
–কি সব আজেবাজে বলছো তুমি।
মিতার চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে। নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের হাত ধরে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
–ছাড়ো, লাগছে আমার।
বলে উঠে মিতা।

–আমার এটেনশন না পেয়ে এখন আরিয়ানের পিছনে লেগেছিস?
কথাটা ভাবতেই যেন অরিয়নের মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে। মাথা ঠিক মতো কাজ করছে না। বার বার শুধু মিতাকে শাস্তি দিতে মন চাচ্ছে।
–কিহ? আহ, ব্যাথা পাচ্ছি আমি অরিয়ন ভাইয়া। তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না। ছাড়ো আমাকে।
চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে মিতার।
–তুই কবে থেকে এমন হয়ে গেলি পরী?
মিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–আমি আবার কেমন হয়ে গেলাম? আরিয়ান ভা..
–চুপ। তোর মুখ দিয়ে আরিয়ানের নাম নিবি না।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–কি করেছি আমি? এরকম করছো কেনো?
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
–কি করেছিস তুই? ইউ আর বিহেভিং লাইক এ ফা*কং হো*র।
চেচিয়ে বলে উঠে অরিয়ন।
–শরীর দেখাবি তাই তো? দেখি, দেখা আমাকে..
কথাটা বলেই মিতার চুল ছেড়ে দেয় অরিয়ন।

অরিয়ন চুল থেকে হাত সরাতেই মিতা নিজের হাত নিয়ে মাথায় ঘসতে থাকে, ব্যাথা কিছুটা কমানোর জন্য। কি সব হচ্ছে মিতার সাথে কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা। একটু আগেই তো আবরারের সাথে কথা বলছিলো মিতা। আবরার রুম থেকে বের হতেই শুয়ে পরে মিতা। বার বার ঝিমাচ্ছিলো বলেই আবরার চলে যায়। বিছানায় শুতেই চোখ লেগে যায় মিতার। এতো জার্নি করায় প্রচুর ক্লান্ত ছিলো।
মিতার রুহ কেঁপে উঠলো যখন অরিয়নের হাত মিতার স্কার্ট গিয়ে স্পর্শ করলো। নিমিষেই মিতা নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের হাত ধরে ফেলে।

–কি করছো তুমি এসব।
চোখ বড় বড় করে বলে মিতা।
–শরীর দেখছি।
মিতার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে অরিয়ন।
কথাটা বলেই স্কার্ট উপরে তুলতে নিতেই মিতা তা টেনে ধরে।
–তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? ছাড়ো বলছি।
স্কার্ট ধরে টানতে টানতে বলে মিতা।
–তোর ইচ্ছেটা পূরণ করছি, আমার এটেনশন পাচ্ছিস।
মিতার স্কার্ট টানতে টানতে বলে অরিয়ন।
–কি সব আজেবাজে বলছো তুমি। ছাড়ো বলছি অরিয়ন ভাইয়া।
অনুরোধের সুরে বলে মিতা।

–কি দরকার এতো অভিনয় করার পরী? তোর এটেনশন পাওয়ার জন্য আরিয়ানের প্রয়োজন নেই, আমি আছি তো। আমি তোর সব ইচ্ছা পূরণ করে দিবো।
তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বলে স্কার্ট ধরে টান দিতেই হাটুর একটু উপরে উঠে যায় স্কার্ট।
মিতা অবাক হয়ে নিজের হাটু আর স্কার্টের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন যখন মিতার হাটু বের হয়ে আছে তখন যেন অরিয়নও নিজের জায়গায় পাথর হয়ে রইল। কি করছিলো তা যেন মাথায় এতোক্ষণে ঢুকলো।
–প..
–ঠাসসসসসস।
অরিয়ন কথা বলার আগেই থাপ্পড় মারে মিতা।

যদিও মিতার ছোট্ট হাতে থাপ্পড়টা অরিয়নের কাছে কিছুর মতোই লাগলো না তাও রাগে ফুসতে লাগলো অরিয়ন। মিতার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকাতেই মিতা ভয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে হাত দিয়ে। বিছানার এক কোণায় চলে যায়। গুটি মেরে বসে থাকে। অরিয়নের গায়ে হাত তুলেছে তা যেন নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না মিতা।
–সরি, সরি, আমি..মারতে চাই নি…তুমি….তুমি কাপড়…হাটু….উপরে…সরি, সরি।
মিতা ভয়ে ভয়ে আবল তাবল বলতে লাগলো।
অরিয়নকে দেখে মনে হচ্ছে এখুনি আবারও এসে চর মারবে মিতাকে। তখনের চরে এতোই ব্যাথা পেয়েছে যে ভয়ে কাঁপছে মিতা। এখন তো অরিয়নের গায়েই হাত তুলেছে এখন কি হবে তা ভাবতেই আরও বেশি কাঁপছে মিতা।
–সরি, সরি, সরি।

বার বার বলে যাচ্ছে মিতা।
অরিয়ন নিজের জায়গায় তাকিয়ে কাঁপতে থাকা মিতাকে দেখছে। অরিয়নের পরী, অরিয়নকে দেখে এভাবে কাঁপতে থাকবে তা যেন কল্পনাও করেনি অরিয়ন। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। মিতার গায়ে কোনোদিন একটা টোকাও দিতে দেয়নি অরিয়ন আর সেই অরিয়ন নিজেই মিতার গায়ে হাত তুলেছে। কারণ? কারণ এক অজানা ভয়। ভয় পরী অন্যকারো হয়ে গেলে?

সব সময় আফরিনকে ছাড় দেওয়া, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে দেওয়া অরিয়ন কবে থেকে এমন হয়ে গেলো? ওয়েস্টার্ন ড্রেস আফরিন সব সময় পরে এসেছে, অরিয়নের তো তখন এমন লাগেনি। তাহলে সামান্য একটু পা অন্য কেউ দেখেছে ভাবতেই কেনো সবকিছু চুরমার হয়ে গেলো অরিয়নের?

পারমিতা পর্ব ১৯

অরিয়ন আর কিছু না বলেই মিতার রুম থেকে বেরিয়ে পরে। বিছানায় বসে থাকা মিতা, অরিয়নকে রুম থেকে বের হতে দেখেই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। কাঁপা কাঁপা শরীরে দৌড়ে গিয়ে দরজা লক করে। দরজা লক করতেই মাটিতে বসে পড়ে মিতা। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কি হয়েছে,কি জন্য অরিয়ন এমন করলো তা কিছুই জানেনা মিতা। কিন্তু যা মিতা জানে তা হলো অরিয়নের এই ভয়ানক রূপ।
যেই ভয়ানক রূপ মিতা কখনো আগে দেখেনি। যে রূপ দেখলে মিতা কখনোই অরিয়নকে ভালোবাসলো না।

পারমিতা পর্ব ২১