খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১১
আনিকা আয়াত
“ আজকের স্নিগ্ধ বিকাল টা-তে আমাকে সঙ্গ দেওয়া যাবে?” বলেই অর্ণব দুহাত পেছনে ঠেলে হালকা ঝুঁকে এলো।
স্নিগ্ধা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বিড়বিড় করে বলল,
“ কিন্তু আপনার কাজ নেই.?”
“ উহু..! বাসায় বোরিং ফিল করছিলাম। তাই বেরিয়ে পড়েছি। কিন্তু এখন আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, এই বিকেল টায় একা ঘুরলে তৃপ্তি আসবে না। আমার পাশে রিকশায় বসে ঘুরার জন্য আপনাকে লাগবে। প্রমিজ! আজকের বিকেলের জন্য শুধু পার্টনার হয়ে যান।”
অতন্ত্য অনুরোধের সুরে কথাটি বলল। স্নিগ্ধা তার কথার মায়ার এতটাই পিছলে পড়েছে যে, মানা করতে পারলো না। উষ্কখুষ্ক করে মাথা চুলকে মৃদু হাঁসলো। বলল,
“ শুধু আজকের জন্যই? এরপর কেনো হয়?”
“ আপনি বললে অন্য একদিন নাহয় আমি আপনার পার্টনার হব। আজ আমার পার্টনার আপনি..”
স্নিগ্ধা লজ্জায় কাঁচুমাচু করে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। অর্ণব ঠোঁট টিপে হেঁসে ফিসফিস করে বলল,
“ মিস..! এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবেন? বিকেলের গোধূলির লগ্ন যে শেষ হতে চললো। জলদি রিকশায় বসুন।”
অর্ণব হাতের ঘড়ি দেখে নিয়ে শার্টের হাতা ফুল্ড করতে করতে রিকশার একপাশে উঠে বসলো। চোখের ইশারা করতেই স্নিগ্ধা ধীর পায়ে উঠে তার পাশে চেপে বসে। মাথা বাঁকিয়ে লজ্জায় মেয়েটি অন্যদিক তাকিয়ে আছে। অর্ণব ব্যাপারটা ধরতে পেরেই অধর বাঁকিয়ে হাঁসলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ম্যান পারফিউমের কড়া ঘ্রাণে ধীরে ধীরে এক ঘোরে মাতাল হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। ঘ্রাণ নাসিকায় পৌঁছাতেই মনে হচ্ছে মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে অদ্ভুত ভাবে। নাক টেনে জোরে শ্বাস নিতেই মন ভরে উঠল। অজান্তেই আড়চোখে দেখলো, যুবকটা সাদা শার্ট – প্যান্ট ইন করে পড়েছে। হাতা ফুল্ড করায় রগ গুলো শিরায় স্পষ্ট চোখে বিঁধে যাচ্ছে। ছেলেটির সুঠাম দেহ থেকে শুরু করে তার নজর, হাত থেকে গলার অ্যাডামস অ্যাপল -এ পড়তেই শুকনো ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে নেয়। অর্ণব ঘাড় বাঁকিয়ে অস্বস্তি ভরা মেয়েটার ক্লান্ত মুখ, শুঁকিয়ে যাওয়া ঠোঁট সুক্ষ্ম নজরে খেয়াল করলো। মাথার অবাধ্য চুলগুলো এলোমেলো হয়ে শীতল বাতাসের তালে সারা মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোলের ব্যাগটা দুহাতে এমন ভাবে চেপে ধরেছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি হারিয়ে গেলো। সবই তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করে, বাঁকা হাঁসলো অর্ণব।
চারপাশ মনোমুগ্ধ পরিবেশ! পিচঢালা রাস্তার দুপাশে সারি সারি বড় গাছ। কোনো এক আর্টিস্ট হয়তো তাদের গায়ে পছন্দ মতো সাদা রঙে আঁকুবাঁকু করেছে। গাছের পাতায় ভরে উঠেছে সেই পথ। হাঁটার তালে তালে মর মর শব্দে ছন্দ তৈরী হয়েই ক্ষণিকেই মিলিয়ে যাচ্ছে। সামনের বিরাট একটা ঝিলে নৌকা ভেসে যাচ্ছে অগণিত! কিছু কিছু নৌকা ঘাটে বেঁধে রাখা। চারপাশের মনোমুগ্ধ পরিবেশ মুহূর্তেই মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট! এই জায়গা টায় প্রতি নিয়ত নানান রকম মানুষ এসে – বিশেষ সময় কাটনোর জন্য ভীর জমায়। নিজের প্রিয় মানুষের সঙ্গে যদি হয়, নৌকা ভ্রমণ সঙ্গে এক কাপ ধোঁয়া উঠা চা কিংবা পাশাপাশি হাঁটা তবে জীবনে আর অপূর্ণতা রইলো কই?
পূর্ব দিকে প্রতিটি কাঠের বেঞ্চেই ক্ষানিক দূরত্ব রেখে পর পর সাজিয়ে রাখা। সেই স্থানেই কপোত-কপোতী নয়তো, ফ্যামিলি মেম্বার আপন মনে বসে আড্ডার ঝুলি খুলে বসে। সময়টা যেনো মুহূর্তেই কেটে যায়। কত শত মানবের হৃদয়ের সুখের কথা! ব্যথার কথা! সব-ই যেনো, এই গাছ, ঝিল এবং বেঞ্চ স্বাক্ষী! কিছু ব্যর্থ প্রেমের গল্পও তাদের-ই জানা। কিন্তু সুখের সময় গুলো এত দ্রুত চলে যায় কেনো? প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে বুঝি এত শীগ্রই সময় ঘনিয়ে যায়? স্নিগ্ধা চোখ বুঁজে ঝিলের পানির কলকল ধ্বনি সঙ্গে আশেপাশের মানুষের খিলখিল হাঁসি অনুভব করতে ব্যস্ত। আজ যেনো প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হওয়ার পালা!
কাঠের সেই বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে আছে অর্ণব এবং স্নিগ্ধা। সামনেই প্রচন্ড পানির স্রোতে পাল তোলা নৌকায় চড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে কিছু প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা বন্ধুমহল।
রিকশায় বসে স্নিগ্ধাকে চুপচাপ থাকতে দেখে অর্ণব দীর্ঘক্ষণ পর জিজ্ঞেস করেছিল,
“ আপনি কোথায় যাবেন মিস? প্রিয় কোনো জায়গা আছে?”
স্নিগ্ধা লাজুক ভঙ্গিতে মাথা দুপাশে নাড়িয়ে প্রতিত্তোরে বলেছিল,
“ যেহেতু আমি আজকের জন্য আপনার পার্টনার ! সেই
হিসেবে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী স্থানে যাওয়া উচিৎ। ”
তৎক্ষনাৎ অণর্বের মাথায় আসে এই জায়গার কথা। নিরিবিলি, শান্তির স্থান। যেখানে স্মৃতি হিসেবে রয়েছে অনেক ঘটনা। সেগুলো কি ভুলা যায়? কলেজ ছুটির পর সব বন্ধুরা দল বেঁধে নৌকায় চড়ে বেড়ানো। বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করে, মাঝিকে বিরক্ত করাও ছিলো নিত্যদিনের রুটিন। আর ওইযে এক নারী! নাম যেনো কি? ওহহ মীরা! কলেজ লাইফের প্রথম ভালো লাগা। প্রথমত বন্ধু থেকে ক্ষনিকের ভালোবাসার মানুষ। স্বপ্নের মতো জীবনে এসে হঠাৎ – ই যেনো এই জীবন থেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলো। তবে এসেছিল কেনো? ভবিষ্যতে একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখানোর জন্য? এরপর সেই স্বপ্ন নিজেই গলা টিপে হ*ত্যা করে চলে গেলো! নিষ্ঠুর রমনী! অথচ এখানে তাদের ভালোবাসার কত মুহুর্ত-ই না স্বাক্ষী আছে! মেয়েটা কি সব ভুলে গেছে? আর্মিতে জয়েন করার পর আর খবর পাওয়া যায়নি। সব বন্ধুরা মীরার কথা হলেই এড়িয়ে যেত। এভাবে একসময় তার প্রিয় সব বন্ধুরাও হারিয়ে গেছে.. এত কিছুর পরেও এই স্থান ভুলা যায়?
আজ অনেক বছর পর অর্ণব কিছু না ভেবেই স্নিগ্ধাকে নিয়ে এসেছে। আসার পর থেকেই দুজনে চুপ। মেয়েটা চারপাশের নির্মুল পরিবেশ পেয়ে তাদের মতোই শীতল, নরম হয়ে গেছে। হেঁটে, বসে অনুভব করছে স্নিগ্ধ চারপাশ। অর্ণব মেয়েটার বাচ্চামু দেখে যাচ্ছে নিশ্চুপে। কেনো জানি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। দীর্ঘক্ষণ পর অর্ণব বেঞ্চ থেকে উঠে অল্প দূরের দোকান থেকে দুটি আইসক্রিম নিয়ে আসলো। পাশে বসে স্নিগ্ধার হাতে দিয়ে বলল,
“ আপনি না বললেও আমি শুনব না..! কারণ সব পুরুষ-ই জানে – মেয়েরা এখানেই আটকায়। আই মিন– আইসক্রিম ! ”
মিটিমিটি হাঁসলো স্নিগ্ধা। ছোঁ মেরে হাতে নিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে উত্তর দিলো,
“ অবশ্যই। এমন মজার খাবার আমি জীবনেও দ্বিতীয় টা পাইনি। আপনার কি জানা আছে? আইসক্রিম ব্যতীত অন্য কি জিনিস এত মজার.”
অর্ণব হেঁসে ফেললো। দুজনের অল্প কথা বলার মাঝেই স্নিগ্ধার চোখ গেলো, পাশে একটি ছেলের সঙ্গে থাকা মেয়েটাকে আবেশে গালে চুম্বন করলো! মুহূর্তেই লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। কিন্তু অর্ণবের চোখ এক বিন্দুও সরলো না। বরং জেদ করেই, চুপচাপ সেই কাপল দের খুনসুটি আড়চোখে লক্ষ্য করলো। স্নিগ্ধা চটপট ধরে ফেললো অর্ণবের নজর। মনে মনে বকেও দিলো সে। অন্য কারোও স্পেশাল মোমেন্ট কেনো দেখতে হবে? তারা যদি বুঝতে পারে তখন কি ভাববে? কটমট করে তাকিয়ে আর্ণবের চোখের সামনে তুড়ি বাজালো। তৎক্ষনাৎ নিঃশব্দে হেঁসে ভ্রু নাচিয়ে স্নিগ্ধার পানে গভীর ভাবে তাকালো। আর কথা হলো না দুজনের। মেয়েটি খাওয়া শেষে হাতের ঘড়ি দেখে নিলো।সামনে ঝিলের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ আপনি নৌকায় চড়তে ভয় পান?”
“ এমন উদ্ভব চিন্তা মাথায় আসার কারণ?”
কথার পিঠে প্রশ্ন শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো স্নিগ্ধা৷ ইতস্তত বোধ করে মেকি হেঁসে বলল,
“ না মানে.. কোনো কারণ নেই। অনেক ছেলেই ভয় পায়। ” বলেই হাত ঘঁষতে লাগলো।
অর্ণব সুক্ষ্ম চোখে লক্ষ্য করে হাঁসলো নিঃশব্দে! বেঞ্চ থেকে উঠে ঝিলের দিকে যেতে যেতে বলল,
“ সবার সঙ্গে আমার তুলনা? আপনি একজন আর্মিকে জিজ্ঞেস করছেন সামান্য নৌকায় চড়তে ভয় পাই কিনা? ব্যাপারটা হাস্যকর নয়? তবে শুনুন! প্রথমত আমি কিন্তু ছেলে নই! তাগড়া বলিষ্ঠ দেহের এক যুবক হয়ে গেছি! ”
অল্প থামলো অর্ণব। অতঃপর স্পষ্ট স্বরে বলল,
“ দ্বিতীয়ত! ঝিলে ভাসা নৌকায় উঠে ঘুরতে চাইলে কুইক! আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা বিলাস করবো। ফ্রি-তে আপনার ছোটখাটো ট্যুর হয়ে গেলো! কি বলেন? যাবেন না? বুদ্ধিমান রা এই সুযোগ হাতছাড়া করে না। আমি জানি, আপনি খুব বুদ্ধিমান রমনী সঙ্গে চতুরও! যেহেতু এসেছি তবে নৌকায় না চড়ে ঘরে ফিরলে অনেক কিছু মিস হবে। ” বলেই অর্ণব হনহনিয়ে মাঝির সাথে কথা বলে ভাড়া করলো নৌকা।
স্নিগ্ধা তো খুশিতে আত্মহারা! একদিকে সন্ধ্যায় ঘুরে বেড়ানোর খুশি! অপরদিকে বাসায় ফিরার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কঠিন জবাবদিহি। তবে, এই সুন্দর একটি দিনের জন্য মনে মনে কঠোর বকাঝকা শুনার প্রস্তুতিও নিয়ে নিলো। যা হবার হবে, কিন্তু এই দিন, এই সময় পাওয়া যাবেনা। তার থেকে বড় কথা! পাশের মানুষ টাকে পরেও কি পাওয়া যাবে? যদি ভুলেও হারিয়ে যায়? তখন আফসোস করতে হবে আজকের দিনটার জন্য। কেনো মানুষটার আবদার ফিরিয়ে দিয়েছিল? প্রতিনিয়ত সেই বি-ষাক্ত আফসোসের থেকে এই সুন্দর মুহূর্ত কাটানোই শ্রেয়! এর বিপরীতে মায়ের বকুনি গ্রহণযোগ্য।
নৌকায় পাশাপাশি বসে আছে দুটি মানব-মানবী। তাদের হৃদয়ের প্রশান্তির শব্দ এতই গভীর! মনে হচ্ছে এই বুঝি মাঝি শুনে ফেললো। অর্ণব বহুদিন পর প্রকৃতির কলকল ধ্বনি শুনে চোখ বন্ধ করলো। স্নিগ্ধা আশেপাশের দৃশ্য ক্যাপচার করতে ব্যস্ত। চঞ্চল রমনীর ন্যায় ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে। সে মানতে বাধ্য পাশের মানুষটা কতটা রুচিশীল! অত্যন্ত সুন্দর মনের মানুষ! মেয়েটি খুশিতে অর্ণবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল,
“ আপনি জোর না করলে এত সুন্দর, মনোরম স্থানের দর্শন পেতাম না। কখন অনুভব করা হতো না এই প্রকৃতি। জীবনে রঙিন কিছু মুহূর্ত বুঝি হুট করেই চলে আসে? আজকের এই বিকেল! আশেপাশের স্নিগ্ধ পরিবেশ আমার জীবনে বেস্ট স্মৃতির মধ্যে একটি। কখনও ভুলবো না এই সময়। মনে হচ্ছে, সব থেমে যাক। আমি এখানেই থেকে যাই। প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হই।”
বলেই স্নিগ্ধা দুইহাত দুপাশে মেলে খুশিতে চিৎকার করে উঠলো। অর্ণব তা তীক্ষ্ণ নয়নে লক্ষ্য করে বুকের বা পাশে ডান হাত চেপে ধীর কণ্ঠে বলে উঠল,
“ আপনার হাঁসির ঝংকারে কেউ একজন খু/ন হয়ে যাবে অতি শীগ্রই । প্লিজ আস্তে হাঁসুন মিস! ”
অর্ণব হেঁসে উঠে। পাশের সুন্দরী রমনীর হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলো। সে কি ভেবেছিল আজকের বিকলটা এমন হবে? হুট করে দেখা হওয়ার পর মেয়েটার সাথে এত সুন্দর মুহূর্ত কাটাবে? আসলে প্রতিটি মানুষের জীবন-ই অদ্ভুত! আমরা আগে থেকে যা পরিকল্পনা করি আল্লাহ তায়ালা তার থেকে তিনগুণ বেশি দেয়। আমাদের অজান্তেই তিনি দারুণ কিছু কল্পনা করে রাখেন।
স্নিগ্ধা শুধু সেলফি তুলছে দেখে অর্ণব বিড়বিড় করলো,
“ সুন্দরী রমনীর সাথে এই বিকেলে সময় কাটিয়ে নিজেকে আজ ধণ্য মনে হচ্ছে। ”
স্নিগ্ধা ছবি তুলার কাজে ব্যস্ত। কানে পৌঁছায়নি সেই কথা। অর্ণব কিছুসময় পর হঠাৎ আগ্রহী স্বরে বলল,
“ স্নিগ্ধা..যদি কিছু মনে না করেন। আমি কি ছবি তুলে দিতে পারি?”
স্নিগ্ধা খুশিতে গদগদ হয়ে উত্তর দিলো,
“ অবশ্যই। ”
কথা বলতে দেরী কিন্তু ফোন হাতে ধরিয়ে দেওয়া দেরী নয়। চট করে ফোন অর্ণবকে দিলো। এতক্ষণ মেয়েটা যেনো মনে মনে এটাই চাইছিল। শুধু ইতস্তত বোধ এবং লজ্জায় গলায় আটকে ছিলো কথাটা। স্নিগ্ধা নৌকার একদম মাথায় বসে নানান রকম ভঙ্গি করতে লাগলো। অর্ণব চুপচাপ প্রতিটি ছবি তুলে দেয়। দুজনের অল্প সুইট মুহূর্ত কেটে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে জমিনে তখন অর্ণব তারাহুরো করলো বাসায় ফেরার জন্য। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বাদসাদে স্নিগ্ধা। গাল ফুলিয়ে মেকি অভিমান করে বলল,
“ আর একটু থাকি প্লিজ। আম্মু এমনিতেও জেনে যাবে। এখন গেলেও বকাবকি করবে, একটু পড়ে গেলেও। তাহলে, দেরীতেই গেলেই কি ভালো নয়?”
“ কিন্তু! ”
অতন্ত্য চিন্তিত মুখে বলল অর্ণব। মেয়েটি মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ কোনো কিন্তু নয়। আপনি চুপচাপ বসুন তো। ছবি তুলবেন? আসুন ছবি তুলে দেই। তবুও মেয়েদের মতো ঘ্যানঘ্যান করবেন না।”
“ কি আশ্চর্য! আপনার প্রবলেমের কথা ভেবেই তো ঘ্যানঘ্যান করলাম!”
অর্ণবের কণ্ঠে ছিলো মাত্রারূপ অবাকের সুর! তা শুনে স্নিগ্ধা বুঝিয়ে বলল,
“ নিশ্চিন্তে থাকুন। কিছু হবেনা।”
সেই কথা মতোই চারপাশে আবছা আবছা আলোয় তারা ভেসে যেতে লাগলো ঝিলের ভাটি দিকে। মেয়েটির খুশিতে ইচ্ছে করছে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করতে। পানিতে হাত ডুবিয়ে দুষ্টুমির তালে মেটে উঠলো। অর্ণবের দিকে পানি ছুঁড়ে খিলখিল করে হেঁসে উঠে। অর্ণব কটমটি তাকিয়ে বলল,
“ স্নিগ্ধা! থামবেন? নাকি ভরসন্ধ্যা বেলা এই ঝিলেই চুবিয়ে মারবো। চুপচাপ শান্ত হোন বলছি। আমিও কিন্তু দুষ্টুমি জানি!”
“ তাই নাকি? দেখি তাহলে।”
“ বুঝে বলছেন? আবার ভয়ে জরিয়ে ধরবেন না তো.”
বলেই অর্ণব ভ্রু নাচিয়ে বাঁকা হাঁসলো।
খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১০
ছেলেটার কথায় তৎক্ষনাৎ বুক ধ্বক করে উঠে তার। ঝিলের পানিতে নাড়ানো হাত তৎক্ষনাৎ থেমে গেলো। সে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির দুই নয়নে অতিরিক্ত হতভম্ব ভঙ্গি লক্ষ্য করে, অর্ণব মনে মনে হাঁসলো। তার টেকনিক কাজে দিয়েছে। সে পেরেছে, স্নিগ্ধাকে থামাতে। হোক সেটা, একটু বেঁফাস কথাবার্তা! নাহলে যে, মেয়েটা থামতই না। মাঝে মাঝে এসব ট্রিক্স খাটানো যায়। সে ঠোঁট বাঁকিয়ে ভ্রু উপর- নিচ করতেই হুঁশ ফিরতেই স্নিগ্ধা লজ্জায় মরি মরি অবস্থা! সে চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাঁকিয়ে চুপ করে রয়। আড়চোখে অর্ণব খুবই সুক্ষ্ম নজরে পরং করল। ভাবলো, এই চঞ্চল রমনীও লজ্জায় আড়ষ্ট হতে পারে? কি অবিশ্বাস্য কথা..!