তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৭
আমেনা আক্তার
নূর ফোনটি তুলতেই সিরাত নূরকে ডাইরেক্ট বলল। ফোনটি রুদ্রকে দিতে নূর সিরাতের কথায় বেশ অবাক হলো তবুও কিছু না বলে পাশে দাঁড়ানো রুদ্রকে বলল কথা বলতে রুদ্র ব্লু কুঁচকে নূরকে জিজ্ঞেস করলো ।
কে?
সিরাত তোর সাথে কথা বলবে।
সিরাতের নাম শুনে রুদ্রের চেহারা রাগে লাল হয়ে উঠলো।আর ভাবতে লাগলো এই মেয়ে ফোনে ওর সাথে কি কথা বলবে। রুদ্র ফোন কানে ধরে কিছু বলার আগেই সিরাত বলে উঠলো।
তোমার সাথে ফালতু কথা বা ঝগড়া করতে ফোন করিনি।
রুদ্র সিরাতের কথায় বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
তাহলে কেনো ফোন করেছ?
সেটা অবশ্যই বলব কিন্তু তার আগে তুমি বলো,আন্কেলের রক্তের গ্রুপ কি।
বাবার রক্তের গ্রুপ দিয়ে তুমি কি করবে?
তুমি আগে আমার কথার জবাব দাও।
O পজিটিভ,
রুবেল মির্জার রক্তের গ্রুপ O পজিটিভ কথাটি শুনে সিরাত কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেল। কারন এই রক্তের গ্রুপ তো জোগাড় করা খুব মুশকিল।যেই হারে রুবেল মির্জার রক্ত গিয়েছে সিরাত আন্দাজ করতে পারছে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।সিরাত কিছু একটা চিন্তা করে বলল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তোমার রক্তের গ্রুপ কি?
রুদ্র এখন চরম বিরক্ত সিরাত তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। রুদ্র বিরক্ত ভঙ্গিতেই বলল।
আমার ও বাবার রক্তের গ্রুপ এক। আমারও O পজিটিভ এখন তো বলো কি হয়েছে?
তোমার বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে।আমি উনাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। নূরের ফোনে আমি এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব তুমি হসপিটালে চলে আসো। উনার যেই হারে রক্ত যাচ্ছে রক্তের প্রয়োজন পড়তে পারে তাই তাড়াতাড়ি আসো।
রুদ্র হসপিটালের করিডোরে মাথা নিচু করে কাঠের তৈরি চেয়ারে বসে আছে।তার সাথে বসে আছে নূর, আরশাদ, হৃদিতা ও আব্রাহাম।সিরাত একপাশে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। রুবেল মির্জার অপারেশন চলছে সিরাত যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। রুবেল মির্জার রক্ত লেগেছে যা রুদ্র দিয়ে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। হসপিটালে আসার পর পরই রক্ত দিতে হয়েছে রুদ্র কে।সব ফর্মালিটিজ সিরাত শেষ করে রেখেছিল তাই রুদ্র ও তার বন্ধুদের বেশি কিছু করতে হয় নি।
একজন মহিলা আর্তনাদ করতে করতে হসপিটালে প্রবেশ করলো। মহিলাটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার আপন মানুষদের হয়তো বিরাট বড়ো কেনো ক্ষতি হয়েছে। এলোমেলো পায়ে মহিলাটি এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
রুদ্র এতক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেও মায়ের আর্তনাদ ভরা কন্ঠ শুনে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো সাহানারা মির্জা কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে আসছে। রুদ্র মাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যায় মায়ের কাছে। রুদ্র সাহানারা মির্জার কাছে যেতেই সাহানারা মির্জা রুদ্র কে জাপটে ধরে শব্দ করে কেঁদে ফেলে। এবং কাঁদতে কাঁদতে বলল।
তোর বাবা কেমন আছেন এখন?উনার বেশি আঘাত লাগেনি তো? তোর বাবা কোথায় আমি উনাকে দেখব?
রুদ্র সাহানারা মির্জা কে শান্ত করতে বললেন।
মা তুমি চিন্তা করো না, বাবার অপারেশন হচ্ছে ভিতরে।আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো।
রুদ্রের কথায় সাহানারা মির্জা শান্ত হতে পারলেন না। তিনি আবার কাঁদতে কাঁদতে বলল।
না আমি তোর বাবাকে দেখতে চাই, না জানি কি অবস্থায় আছে। উনাকে এই অবস্থায় রেখে আমি শান্ত হয়ে কিভাবে বসতে পারি।
সাহানারা মির্জার কথা শেষ হতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তার কে বের হতে দেখে রুদ্র সাহানারা মির্জা কে নিয়ে চলে গেল ডাক্তারের কাছে এবং জিজ্ঞেস করলো।
বাবা এখন কেমন আছে?
ডাক্তার প্রতি উত্তরে বলল।
এখন মি.মির্জা ভালো আছে,একটু পরেই মি.মির্জাকে কেবিনে সিফ্ট করা হবে তখন আপনারা উনার সাথে দেখা করতে পারবেন।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
রুবেল মির্জাকে কেবিনে সিফ্ট করা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। সবাই রুবেল মির্জার সাথে দেখা করেছে এক এক করে। কিন্তু সিরাত এখনো এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। এখনো সে রুবেল মির্জার সাথে দেখা করতে যায় নি।সকলের কথা শেষ হয়ে গেলে ও দেখা করে বাড়ি চলে যাবে। রুদ্র সিরাতের পাশে এসে দাঁড়ায়।রুদ্র সিরাতের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তের উপরে বলল।
ধন্যবাদ,
সিরাত ব্লু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।
ধন্যবাদ কেনো?
আমার বাবাকে হসপিটালে আনার জন্য।
তোমার ধন্যবাদের জন্য আমি আন্কেল কে হসপিটালে নিয়ে আসিনি।
রুদ্র সিরাতের কথায় এইবার আর রাগ করলো না।সিরাতের উদ্দেশ্যে রুদ্র বলল।
ভিতরে চলো বাবার সাথে দেখা করবে। আয়াত রুদ্রের কথার প্রতি উত্তর না করে রুদ্রের সাথে কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজা নক করে। সাহানারা মির্জা স্বামীর বুকে মাথা রেখে এতক্ষণ কান্না করছিল। দরজায় টোকা পড়তেই তিনি মাথা উঠিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেন। রুদ্র সিরাত কে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। সাহানারা মির্জা প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিরাত ও রুদ্রের দিকে। কারন তিনি সিরাত কে চিনেন না। রুবেল মির্জা ও সিরাত কে এখানে আশা করেননি কারণ উনি জানেন না রুবেল মির্জাকে হসপিটালে সিরাত নিয়ে এসেছে। সাহানারা মির্জা রুদ্র কে প্রশ্ন করলো।
ও কে?
ও আমাদের অফিসে কাজ করে,ওর নাম সিরাত নূর তোমাকে ওর যেই ফ্রেন্ডের কথা বলেছিলো, যার জন্য আমরা বন্ধুরা সবাই বাড়ি খুঁজে তা ডেকোরেশন করেছিলাম।আর তার থেকে বড় কথা বাবাকে রাস্তা থেকে সিরাত হসপিটালে নিয়ে এসেছে।আমরা আসার আগে সিরাতই সকল ফর্মালিটিজ পূর্ণ করেছে।
রুদ্রের কথা শুনে সাহানারা মির্জা এগিয়ে এসে সিরাতের দু হাত ধরে অশ্রু সিক্ত নয়নে বলল।
তুমি জানো না তুমি শুধু রুদ্রের বাবার প্রাণ বাঁচাও নি আমার ও প্রাণ বাচিয়েছ। কথাটি বলেই সিরাতের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দেয় সাহানারা মির্জা।
শামসুজ্জামানের বাড়িতে আজ আবার অশান্তি হচ্ছে।যেই দিন থেকে শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন সেই দিন থেকেই যেনো তার দ্বিতীয় স্ত্রী কে একদম সহ্য করতে পারেন না।এর মধ্যে আরো দুই তিনবার অন্য পুরুষ মানুষের সাথে ধরা খেয়েছে উনার দ্বিতীয় স্ত্রী। এখন লজ্জায় গ্রামে মুখ দেখাতে পারেন না উনি। শামসুজ্জামান বাজার করে বাড়িতে ফিরেছেন মাত্র। শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে বাজারের ব্যাগটি ছুড়ে মারলেন তার দিকে। শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী বাজার দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন। কারণ তিন দিন ধরে শামসুজ্জামান বাজার করে নিয়ে এসেছেন। তিনদিন আগে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে ছিলেন আর আজ একদম বাজার করে ঘরে ফিরেছেন।
শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী রান্না শেষ করে নিজের ও ছেলের জন্য খাবার বেড়ে যেই খেতে বসবেন তখনি শামসুজ্জামান রাগে গজগজ করতে করতে এসে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে বলল।
ছেলের জন্য ও নিজের জন্য তো ঠিকই গিলতে ভাত বেড়েছিস প্লেট ভরে।আর আমার কথা ভুলে গেছিস।ভুলে জাবি তো আমি যখন না ছিলাম তখন তো তোর নাগর এসে খাবার দিয়ে গেছে।ন*ষ্টা কোথাকার।
শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী আর সহ্য করতে না পেরে শামসুজ্জামানের হাত ছাড়িয়ে রাগের মাথায় বলল।
হ্যা আমি ন*ষ্টা একদম ঠিক বলেছেন,আমি ন*টা হলে কি আপনি দুধের দোয়া তুলশি পাতা আপনিও তো জঘন্য চরিত্রের। আপনি ও তো আপনার স্ত্রী সন্তান কে ধোঁকা দিয়ে আমার সাথে পরকীয়ায় জরিয়ে দিনের পর দিন আমার সাথে অবৈধ সম্পর্ক করেছেন।আমি আপনার কাছে শুধু টাইম পাস ছিলাম আপনার ভো*গেল বস্তু আপনার আর আমার অবৈধ সম্পর্কের জন্য যখন আমি গর্ভবতী হলাম তখন আপনি আমার খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দিলেন। তখন আমাকে এই না*ষ্টামি করেই নিজেকে ও নিজের সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু যখনি আপনি জানতে পারলেন আমার ছেলে হবে তখনি আপনি আবার আমার কাছে আসতেন। শুধু মাত্র এই ছেলের জন্য আমাকে বিয়ে করেছিলেন। আপনার স্ত্রী আপনাকে এত ভালোবাসার পরেও আপনার একবারও বুক কাঁপেনি তাকে ধোঁকা দিতে।যে নিজেকে নিঃস্ব করে আপনাকে ভালোবেসে।যে আপনার জন্য নিজের সকল শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছে। আমার থেকে বড় প্রতারক আপনি।আমার থেকে বড় জোচ্চর আপনি। আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার মেয়েদের ও ধোঁকা দিয়েছেন।
শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী কথাগুলো বলেই হাঁপাতে থাকে। শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কথাগুলো শুনে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রেহানা বেগম বাড়ি ছাড়ার পরে যেনো সকলে শামসুজ্জামানের চোখে আঙুল দিয়ে তার ভুল গুলো দেখিয়ে দিচ্ছে।
শামসুজ্জামান এখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন রেহানা বেগম তার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।প্রতি মুহূর্তে শামসুজ্জামান তার মেয়েদের এখন মিস করেন। শামসুজ্জামান সিরাত কে কখনো আদর না করলেও সাইরা ও মহিমা কে তিনি কম আদর করেননি। তিনি ওই দুজনকে খুব ভালোবেসেছেন। কিন্তু যৌবন কালে কিছু ভুলের জন্য এখন তাকে জ্বলতে হচ্ছে। শামসুজ্জামান এই তিনদিন রেহানা বেগম ও তার মেয়েদের অনেক খুঁজেছেন কিন্তু তাদের খোঁজ কোথাও না পেয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে। এখন তিনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৬
শামসুজ্জামানের মাথায় শুধু একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে তিনি ভালো নেই তার ভালো থাকতে হলে নিজের স্ত্রী সন্তানদের প্রয়োজন। তাদের ছাড়া শামসুজ্জামান নিঃস্ব নিজের অহংকার ও চরিত্রের কারনে তাদের হাড়িয়েছে কিন্তু এখন শামসুজ্জামান নিজের ভুলের শিকার করে তাদের আবার ফিরত চায়। কিন্তু এখন কি তা আর সম্ভব আবার কি শামসুজ্জামান ফিরে পাবে তার সেই পরিবার যা শুধু মাত্র নিজের ভুলের জন্য হাড়িয়েছে।
