তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৯
আমেনা আক্তার
হৃদিতা রুদ্রের কাছে এসে বলতে লাগলো।
তোর মাথা ঠিক আছে তো,নাকি আবার আন্কেলের জন্য চিন্তা করতে করতে পাগল টাগল হয়ে গেছিস।
রুদ্র হৃদিতার কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
আমি একদম ঠিক আছি, নাটক করছিস কেনো?
রুদ্রের কথায় হৃদিতা কিছুটা অভিনয়ের ভঙ্গিতে দু কানে হাত চেপে বলল।
না এ আমি কি শুনলাম, রুদ্র একদম সুস্থ স্বাভাবিক থেকে অফিসের দায়িত্ব কিভাবে নিজের কাঁধে নিতে পারে।এটা সম্ভব না এ আমাদের রুদ্র হতেই পারে না। এটা নিশ্চয় কেনো মুখোশধারী লোক যে আমাদের রুদ্রের ভেশ ধরে এসেছে।
কথাগুলো বলে হৃদিতা রুদ্রের জ্যাকেট ধরে তাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে আবার বলল।
বল শয়তান, আমাদের রুদ্র কোথায় তার সাথে তুই কি করেছিস বল শয়তান বল।তুই না বললে তোকে আজ যেতে দিবো না। আমাদের প্রাণ প্রিয় বন্ধুর সাথে কি করেছিস বল শয়তান বল।
রুদ্র হৃদিতার এরুপ অভিনয় দেখে বিরক্ত হয়ে বলল।
রিডিকিউলাস,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কথাটি বলেই হনহন করে কেবিন থেকে বের হয়ে যায় রুদ্র। রুদ্র বের হতেই সকলে একসঙ্গে হাসতে থাকে। সাহানারা মির্জা সিরাতের কাছে এসে তার গালে হাত রেখে রেহানা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল।
আপনি একটা হিরার টুকরো জন্ম দিয়েছেন। যার সাথে আমাদের কেনো সম্পর্কে না থাকার পরেও আমাদের কত সাহায্য করেছে। আমার স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছে। আমার ঘাড় ত্যাড়া ছেলেকে অফিসে যেতে বাধ্য করে ওর বাবাকে চিন্তা থেকে মুক্ত করেছে।আমি জানি আম্মু তুমি রুদ্র কে এই সকল কথা এই জন্যই বলেছ যেনো ও অফিসে যেতে রাজি হয়ে যায়। আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুন মা।
সাহানারা মির্জার কথায় রেহানা বেগমের গর্বে বুকটা ভরে যায়। রেহানা বেগমের এখন মনে হচ্ছে সিরাতকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ করতে পেরেছেন।
এর মধ্যে কেটে গিয়েছে বেশ কিছু দিন। রুবেল মির্জা এখন মোটামুটি সুস্থ হলেও অফিসে যাওয়ার মতো এতটা সুস্থ হয়নি। রুদ্র তাদের অফিসের সকল দায়িত্ব ঠিক ভাবে পূর্ণ করছে। এখন আর রুদ্র সিরাতকে বেশি জ্বালাতন করে না। কারন তাদের অফিসে এত কাজের চাপ সিরাত কে জ্বালাতন করার সুযোগ ও সময় কোনোটা পায়না রুদ্র।
আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে আয়নার কলেজের সামনে। অপেক্ষা করছে আয়না কখন আসবে এখনো কলেজ ছুটি হয়নি।তাই গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কলেজের কিছু মেয়েরা আব্রাহামের আশে পাশে ঘুরঘুর করছে। আব্রাহামের স্টাইল ও লুক দেখে সকলে যেনো ফিদা হয়ে যাচ্ছে।তাই মেয়েরা আব্রাহামের সামনে এক এক রং ঢং করছে তাকে ইমপ্রেস করার জন্য।
কিন্তু আব্রাহামের সকল ধ্যান খেয়াল কলেজ গেইটের দিকে।প্রিয়সীকে দেখার জন্য আব্রাহামের মন ব্যাকুল হয়ে আছে। কিন্তু হায় আব্রাহামের কঠোর হৃদয়ের প্রিয়সী যদি বুঝত আব্রাহামের মনের কথা। আব্রাহাম কতটা কষ্ট পাচ্ছে তার জন্য। কিন্তু কিছু বুঝেও যেনো বুঝতে চাইছে না তার প্রিয়সী।
আয়না হাসি মুখে কলেজ থেকে বের হয়ে আসছে। আয়নার হাসি মাখা মুখ দেখে আব্রাহামের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু সেই হাসি আবার মূহুর্তের মধ্যে বিলিং হয়ে যায় আয়নার পাশে একটি ছেলেকে দেখে। আব্রাহামের মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে কারণ ছেলেটি মনে হচ্ছে আয়নার একটু বেশিই ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছে।আর আয়না বারবার দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও ছেলেটি বেশরমের মতো আয়নার কাছে ঘেঁষতে চাইছে যা আব্রাহামের একদম পছন্দ হচ্ছে না।
আব্রাহাম নিজের রাগ কন্ট্রোল করার জন্য হাত দুটোকে মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। ছেলেটি বিদায় নিয়ে চলে যায় নিজ গন্তব্যে। ছেলেটি চলে যেতেই আয়না যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে।ছেলেটি প্রচুর পরিমাণ গায়ে পড়া স্বভাবের।
আয়না একটু আগে বাড়তেই প্রচুর স্পিডে একটি গাড়ি এসে আয়নার সামনে এসে থামলো। আয়না কিছুটা ভয় পেয়ে যায় গাড়িটির এভাবে তার সামনে আসার কারনে। আয়না কিছু বলার আগেই আব্রাহাম আয়নাকে টেনে হিচরে গাড়িতে এক প্রকার ছুড়ে মারলো। আয়নার ছিট বেল লাগিয়ে আব্রাহাম গাড়ির অপর পাশে বসে গাড়িটিকে স্টার্ট দেয়।আয়না ছুটার জন্য ছটফট করতে করতে আব্রাহাম কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আব্রাহাম ভাই, তুমি কিন্তু তোমার সীমা অতিক্রম করছো আমাকে গাড়ি থেকে নামাও।আমি বাড়ি যাবো।
আয়নার কথা শুনে আব্রাহাম আয়নার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো আব্রাহামের চোখ লাল হয়ে আছে। আয়না এইটা খুব ভালোভাবে জানে আব্রাহামের যখন প্রচুর পরিমাণে রাগ হয় তখন আব্রাহামের চোখ এমন লাল হয়ে যায়। আয়না আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে এখন কিছু বলা মানে তার জন্য বিপদ আরো বাড়ানো। কিছুক্ষণের মাঝেই গাড়ি এসে থামে একটি নিরিবিলি জায়গায়। গাড়ি থামিয়েই আব্রাহাম আয়না কে প্রশ্ন করলো।
কে ছিলো ওই ছেলেটা?
আয়না আব্রাহামের প্রশ্ন ঠিক বুঝতে পারছে না কোন ছেলের কথা আব্রাহাম বলছে তাই আয়না বলল।
কোন ছেলে?
আয়নার প্রশ্ন আব্রাহামের রাগে ঘি এর মতো কাজ করলো। আব্রাহাম আরো রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
তুই বুঝতে পারছিস না? আমি কোন ছেলের কথা বলছি।
আব্রাহামের এই একটি সমস্যা যখন সে প্রচন্ড রেগে যায় তখন যার উপর তার রাগ তাকে তুই করে বলে। কিন্তু এটি শুধু তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা আব্রাহামের খুব কাছের মানুষ। আব্রাহামের রাগ দেখে আয়না শুকনো ঢোক গিলে বললাম।
না,
আব্রাহাম এইবার যেনো নিজের ধৈর্য্য বাঁধ বোধহয় ভেঙে গেল আব্রাহাম গাড়ি থেকে বের হয়ে আয়নাকে ও গাড়ি থেকে বের করলো। আয়না গাড়ির সাথে লেপ্টে আছে। আব্রাহাম তার দুই হাত দ্বারা আয়নাকে এক প্রকার বন্দী করে রেখেছে। আব্রাহাম রাগান্বিত কন্ঠে বলল।
আমি সেই ছেলেটির কথা বলছি যার সাথে তুই একটু আগে হেসে হেসে কথা বলে কলেজ থেকে বের হয়েছিলি।কে ও তোর কাছে আসার চেষ্টা করছিল ও কু*ত্তার বা** টা তবুও তুই কিছু বলিসনি কেনো।
ধমকে বলে উঠলো কথাটি আব্রাহাম যা শুনে আয়না কিছু ভয়ার্ত কন্ঠে বলল।
ওওও আমার সিনিয়র,আআআমি ওকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি তবুও আমার পিছে পড়ে আছে।
তুই আমাকে বলিস নি কেনো ওই ছেলেটির সম্পর্কে?
এতক্ষণ আয়না আব্রাহাম কে ভয় পেলেও এইবার আব্রাহামের প্রশ্নের উত্তরে আয়না ত্যারা উত্তর দিয়ে বলল।
তুমি কে যে আমি তোমাকে বলব?
আয়নার কথায় আব্রাহাম আয়নার থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। আয়নার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আব্রাহাম বলল।
গাড়িতে বস,
আয়না ভাবলো হয়তো আব্রাহাম তাকে বাড়ি ছেড়ে দিবে তাই গাড়িতে বসতে বলছে।তাই আয়না কিছু না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু আয়নাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে আব্রাহাম গাড়িতে উঠেই আয়নার একদম কাছে চলে আসে। আব্রাহামের নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে আয়নার মুখে কিছু আয়নার শরীরের সাথে আব্রাহামের শরীরের একটুও স্পর্শ লাগেনি। আব্রাহাম এমন ভাবেই আয়নার কাছে এসেছে যেনো তার স্পর্শ আয়নার না লাগে। আব্রাহাম আয়নার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।
তুই কি আমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাসনা। তুই অনুভব করতে পারিস না আমি তোকে কতটা ভালোবাসি। একবার আমাকে মাফ কর আই প্রমিজ আমি এমন ভুল আর কখনো করবো না।
আব্রাহামের কথার কেনো প্রতি উত্তর না দিয়ে আয়না নিজের চোখ সরিয়ে নেই অন্যদিকে।
আব্রাহাম আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আয়নাকে বলল।
ওই ছেলে আর কখনো তোমাকে জ্বালাবে না।
সাইরা ও রাজ বসে আছে একটি রেস্টুরেন্টে।তারা একটি টেবিল বুক করে বসেছে ও তাদের পাশের টেবিল বুক করে বসে আছে হৃদিতা ও আরশাদ।সাইরা মূলত আজ নাস্তা করে বাড়ি থেকে বের হয়নি। কথাটি জানার পরেই সাইরার সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও তাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে রাজ। সাইরাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য।
হৃদিতা ও আরশাদ দুজনকে প্রাইভেসি দেওয়ার জন্য অন্য টেবিলে বসেছে।রাজ সাইরার উদ্দেশ্যে বলল।
কিছু খাচ্ছে না কেনো?
সাইরা নিজের হাত কচলাচ্ছে রাজের সামনে সাইরার খেতেই কেমন যেনো লজ্জা লাগছে।তাই সাইরা বলল।
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না,
তুমি যেই পর্যন্ত এই খাবার গুলো শেষ না করবে সেই পর্যন্ত এখান থেকে উঠতে পারবে না। তাই আজ সারাদিন যদি এখানে বসে থাকতে মন চায় তাহলে খেও না।
রাজের কথায় সাইরা নিরুপায় দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। লজ্জা লাগলেও সাইরা আস্তে আস্তে খাবার খাওয়া শুরু করে।
এদিকে আরশাদ কিছু অর্ডার না করলেও হৃদিতা নিজের জন্য বার্গার অর্ডার করে। হৃদিতা বার্গারে একটি কামড় দিয়ে খেতেই আরশাদ তার হাত থেকে বার্গারটি এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করে।হৃদিতার মুখের ভিতরে বার্গার থাকায় সে কিছু বলতে পারছে না শুধু অপেক্ষা করছে কখন তার খাবার শেষ হবে।আর আরশাদ কে তার বার্গার খাওয়ার জন্য শাস্তি দিবে। আরশাদ ও চালাক কম না হৃদিতার মুখের বার্গার শেষ হওয়ার আগেই আরশাদ তার হাতে থাকা বার্গার নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়। আরশাদের পিছে তাকে ধরার জন্য বের হয় হৃদিতা।
রুদ্র নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে।সে এখন প্রচুর ব্যস্ত নিজের কাজের জন্য। হঠাৎ কেউ নক করে রুদ্রের কেবিনে। রুদ্র ভিতরে আসার অনুমতি দিতেই সিরাত ভিতরে প্রবেশ করে। রুদ্র চোখ তুলে উপরে তাকাতেই সিরাত কে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
কি চাই,
তুমি যেই ডিজাইন রেডি করতে বলেছিলে তা রেডি হয়ে গেছে। তুমি কাল সূর্যধারি গ্রামে গিয়ে কালই আমাদের নতুন প্রজেক্ট সাইন করতে পারবে।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৮
সিরাতের কথার প্রতি উত্তরে রুদ্র কিছু বলার আগেই রুদ্রের কেবিনে আবার নক করে কেউ। রুদ্র ভিতরে আসার অনুমতি দিলেই ম্যানেজার প্রবেশ করে সেখানে। ম্যানেজার রুদ্রকে যা বললো তা শুনে রুদ্র ও সিরাত দুজনের মাথা যেনো ঘুরে গেল।দুজনেই চেঁচিয়ে বলল।
অসম্ভব…