খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১৩

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১৩
আনিকা আয়াত

আসমানের পরী.!” বলেই শ্রাবণ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুকের বা পাশ চেপে ধরলো।
এহেন ন্যাকামো-য় চৈতী রেগে ধাক্কা দিয়ে সামনে পা বাড়ালো। শ্রাবণ ব্যথিত হয়ে ফের মোহনীয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চৈতীর পেছন যেতে যেতে বলল,
“ চৈত্র মাস..! প্লিজ ব্যথা দিস না। ভালো না বাসলি কিন্তু একটা কথা রাখতে হবে।”
“ কি কথা?”
চৈতী ঘাড় ঘুরিয়ে বলল।
শ্রাবণ ততক্ষনে ওর পাশাপাশি হাঁটছে। বলল,

“ আজ যদি এই শহরের সবচেয়ে সুদর্শন ছেলেও তোর প্রেমে পিছলে প্রপোজ করে বসে, তুই জাস্ট সাফসাফ রিজেক্ট করে দিবি। বিকজ কেউ আমার মতো এত ভালো নয়। একমাত্র আমি-ই বেস্ট। ”
চৈতী মুখ বাঁকাল। তৎক্ষনাৎ জিনিয়া দূর থেকে ডাকলো। মেয়েটি একটু ভেবে বলল,
“ যদি সত্যি এ শহরের সবচেয়ে সুদর্শন আমায় প্রপোজ করে তবে ক্ষতি কি? আমি রিজেক্ট করা তো দূর। ঝটপট হ্যাঁ বলে দিবো। তাছাড়া সেই সুদর্শন তোর দুলাভাই হবে তাই না? এটা তো গর্বের কথা। ”
শ্রাবণ কটমটিয়ে চৈতীর মাথায় চাটি মারলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“ শয়-তান কোথাকার। আমিও দেখে নিবো। কিভাবে তুই অন্যকারো প্রেমিকা হোস। ”
স্নিগ্ধা, জিনিয়া দৌঁড়ে এসে চৈতীকে জরিয়ে ধরল। শ্রাবণ তিনটে কে একসাথে একই শাড়িতে দেখে প্রশংসা করলো বটে। কিন্তু মেয়েগুলো এতই কথা বলায় ব্যস্ত ছিল যে, তার দিকে ফিরেও তাকাল না। হতাশ শ্রাবণ নিজের ম্যাচিং পাঞ্জাবী ঝাঁকিয়ে বলল,
“ তোরা কিপ্টামি করে আমাকে প্রশংসা না করলেও আমি করলাম। হুহহ!”
জিনিয়া হেঁসে ফেললো। শ্রাবণের কাঁধে কনুই ভর করে বলল,
“ আসছে আমাদের প্রশংসা দাতা। শা/লা বদমাশ। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাতে ফোন ধরিয়ে নিজেরা ব্যস্ত হলো ছবি তুলার কাজে। তিনজন খোলা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। ছেলেটার সঙ্গে আনা ক্যামেরা এক ক্লাস মেট নিয়েছে। একটু পরেই দিবে বলায় শ্রাবণ দিয়ে দেয়। তিনজনের একের পর এক ছবি তুলার পর চৈতীর সঙ্গে একা শ্রাবণ ছবি তুলতে চাইল। চৈতী ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে দাঁড়াল ওর সঙ্গে। ক্ষনিকের মাঝেই ভার্সিটি কাঁপিয়ে উপস্থিত ঘটলো, অর্পণ শেখ -এর। গেইট দিয়ে তার দামী বাইকে চড়ে বরাবরের মতোই গম্ভীর ভঙ্গিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তৎক্ষনাৎ চারপাশ থেকে চিৎকার শুনা যায়। মুহূর্তের হৈ-হুল্লোড় অবস্থা লক্ষ্য করে, যে কেউ মনে করবে হয়তো কোনো নেতা এসেছে। অবশ্য সেও বা নেতার থেকে কম কি? এম.পির পুত্র মানে ভবিষ্যত নেতা! অধিকাংশ মেয়ের চোখ-মুখের রঙ পাল্টে গেলো।

ঝকঝকে হলো! ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো সুদর্শন পুরুষটার দিকে। আজ যে প্রতিদিনের থেকে সম্পূর্ণ উল্টো! পরিপাটি! চাকচিক্য, গুছানো পুরুষ। যার দেহের প্রতিটি কোণার স্নিগ্ধতায় ছড়িয়ে পড়েছে। সবাইকে সুনিপুণ ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার বংশের পূর্বপুরুষদের আভিজাত্য জীবন যাপন! আজ গায়ে সি/গারেট, ঘাম এবং ধুলোমাখা নেই। বরং সুবাসিত মিষ্টি সুঘ্রাণ! যার সুগন্ধি অনেক দূর পর্যন্ত অনুভব করা যায়। গায়ে অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী তার উপর জরানো ব্লেজার। এত কিছুর মাঝেও ছেলেটার ভাব ভঙ্গির চেঞ্জ নেই। বরাবরের মতোই কঠিন! বাইক বটগাছের নিচে রেখে, চোখের কালো সানগ্লাস বুকে গুঁজে নামলো। তুষিব দৌঁড়ে এসে দাঁড়ায় তার পাশে। মেয়েদের মাঝে শুরু হয় কানাঘুষা! সবার মুখে চলে একটা বাক্য-ই!

“ মাশাল্লাহ! ”
অর্পণের কঠিন দৃষ্টির মোহ-তে ডুবে গেলো প্রতিটি রমনী। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামের সরল মেয়েটির মস্তিষ্কও আজ প্রথমবারের মতো কাউকে দেখে এলোমেলো হয়ে গেলো। চৈতী ঠাই দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলো। অজান্তেই তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।
অনুষ্ঠানে শুরু হওয়ার বেশী সময় নেই। শিহাব নীল পাঞ্জাবী পড়ে গিটার কাঁধে নিয়েই ছুঁটে এলো বন্ধুর কাছে। তাড়াহুড়ো স্বরে বলল,
“ স্টেজে উঠ শালা! আজও তুই লেইট করলি?”
“ বিশেষ দিনে সাজুগুজু করে আসবো না?”
শিহাব মুখ বাঁকালো। অর্পণের পিঠে চাপ্পড় মে/রে বলল,

“ চারপাশ ঘুরে দেখ! রঙিন ফুলের মতো রমনীগণ সুবাস ছড়াচ্ছে। আজ যেদিকে তাকাবি, ওদিকেই ডানাকাটা পরী! চোখে আমি সর্ষে ফুল দেখছি। দোস্ত! সাবধানে পা ফেলিস। আবার কেউ যেনো, যাদু টাদু করে না। ”
অর্পণ বাইকের চাবি ডান হাতের তর্জনী তে ঘুরাতে ঘুরাতে বাঁকা হাঁসলো। রাশিভারী কণ্ঠে বলল,
“ আশেপাশে ছাগল মেয়েদের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সবগুলো এক! কারোর ভেতর আলাদা কোনো ব্যাপার-স্যাপার নেই। যে টানে আমি তার জালে ধরা দিবো। সো কেস ডিশমিশ!” বলেই অর্পণ একবার আশপাশ তাকাল। এরপর নাক-মুখ কুঁচকে বলল,

“ আমার হৃদয় হরণকারী হওয়া এত সহজ হয়। তার এই পা/ষণ্ড মানুষের অন্তরে জায়গা নিতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে।আজকাল ভালোবাসা গুলো সস্তা। সেকেন্ডেই লাভ ইউ বলে। সেকেন্ডেই হেইট ইউ.! ওই ভালোবাসার আমি গুল্লি মারি। আমার ভালোবাসা হয়তো এ জীবনে আসবে না।”
শিহাব দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সাহস করে বলল,
“ আসতেও পারে। ভাগ্যের লেখা কে খণ্ডাতে পারে?”
“ মামা..!এত দ্রুত আসতে পারবে না। ”
অর্পণ ঠোঁট এলিয়ে হাঁসলো। হতাশার শ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে,

“ যদি সেই রমনী আসেও তাহলে, সে হবে আমার বিপরীত ধর্মী! তার চাহনী, মুখশ্রী হতে হবে নিষ্প্রভ – শান্তশিষ্ট। যাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে আবার যত্নে গড়া যাবে। আমি-ই মাত্রাতিরিক্ত কষ্টে তার হৃদয় ভাঙবো। আমিই আদর-ভালোবাসায় এই কলিজার টুকরোয় জায়গা দিবো। কখনও অভিমানে দূরে সরে যাবে। কেঁদে- কেটে এক করবে। পরক্ষণে সেই অল্প সময়ের ব্যবধানেই ঝড়ের বেগে লুটিয়ে পড়বে আমার এই কঠিন বুকের মধ্যখানে!”
শিহাব আশ্চর্য হয়ে সামনে হনহনিয়ে হেঁটে চলা ছেলেটাকে দেখতে লাগলো। আজ যেনো, নতুন এক অর্পণ। অথচ ছেলেটা আশেপাশের সবাইকে ইগনোর করে, বামহাতে চুলগুলো পেছনে ঠেলে ব্যস্ত পায়ে প্যান্ডেলের নিকট গেলো। প্রথম সারির স্যার-ম্যাম তার স্টাইল-কে প্রশংসা করলেও গুটি কয়েক টিচার্স দৈনন্দিনের মতো মুখ কালো করলো। মনে হচ্ছে তাদের মুখে অসন্তুষ্টের ছায়া ঘিরে ধরেছে। এই ছেলে এবং তার বন্ধুবান্ধব – ছানাপোনা দের একদম পছন্দ নয়। অথচ, প্রিন্সিপাল খুশিতে মঞ্চমুখ। হবেই না কেনো? এম.পি জামিল শেখ এই ভার্সিটি, এলাকার জন্য কম তো করেনি। শুধু এই ছেলেটাই একটু বেয়ারা- অভদ্র। তাছাড়া ভদ্রলোক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের। মানুষের সেবার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।

গুটি কয়েক কঠোর স্যার গলায় যেমন কাটা আটকে থাকলে খুব কষ্টে সহ্য করতে হয়। ঠিক তেমনি তারাও অর্পণকে সহ্য করছে। শুধু সময় এবং সুনামধন্য ছেলের বাপের জন্য কিছু বলতে পারে না। পাবলিক ভার্সিটির ভেতর মা/রা মা/রি সহ্য করার ক্ষমতা তাদের না থাকলেও হজম না করা ছাড়া উপায় নেই। ছেলেটা বেয়াদব ও মাত্রাতিরিক্ত অভদ্র!
অর্পণ চশমা এক টানে খুলে ফেললো। পাঞ্জাবী-তে গুঁজে সোজা স্টেজে উঠে স্যার-ম্যাম এবং নবীন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কিছু বক্তব্য পেশ করে। তার পাশে আছে শিহাব, হামিম এবং সমুদ্র। চারজন ফাইনাল ইয়ার থেকে দ্বায়িত্ব পালন করবে।

প্রধান অতিথি সহ আরোও কিছু নামকরা রাজনীতির ব্যক্তি, ভার্সিটির ভি.সি এবং তার বাবাও উপস্থিত আজকের আয়জনে। স্টেজেই ব্যবস্থা করা হয়েছে তাদের বসার জন্য। মাইকের শব্দ সকলের কানে যেতেই, মাঠে, ক্যান্টিনে এলোমেলো হয়ে ঘুরা ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ জায়গায় এসে বসলো। চৈতীর ধ্যাণ ভেঙেছিল স্নিগ্ধার ডাকে। সে দ্রুত ওদের সঙ্গে এসে শক্ত হয়ে নিজের চেয়ারে বসে আছে। এই কয়েকদিনের সকল প্রস্তুতি এক নিমেষেই ভুলে যাচ্ছে সে। ভয়ে স্কিপের লেখাগুলো সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ভেবেই পাচ্ছে না এত লোকের মাঝে স্টেজে উঠে পারফর্ম করবে কিভাবে? বিশেষ করে ওই অর্পণের সামনে? অন্যান্য ছেলেদের মতো অর্পণও তো সাদামাটা। আলাদা অথবা বিশেষ কোনো ব্যাপার নেই। তবুও কেনো নার্ভাস লাগছে। ভয়ে বুক কাঁপছে নাকি অন্য অনুভূতির জোয়ারে? জানা নেই তার। চৈতী বড় বড় নিশ্বাস ফেললো। শ্রাবণের হাতের পানির বোতল ছিনিয়ে নিয়ে ঢকঢক করে শেষ করে ফেলে। কিন্তু গলা ভিজে না! এ কি মহা ঝামেলা! এই অসভ্য অনুভূতি, হাঁসফাঁসে আর বিরক্ত লাগছে। পানি খেয়েও আজ তৃষ্ণা মিটছে না। কিন্তু কেনো? তাহলে কি করলে মনে শান্তি ফিরবে? জানা নেই তার। চৈতী অসহ্য হয়ে স্নিগ্ধার কাঁধে মাথা রেখে মেয়েটির হাত জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো। স্নিগ্ধা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

“ এ্যাই চৈতী..! ছেলেটার বকবক কখন শেষ হবে? ”
চৈতী উত্তর দিলো না। শ্রাবণ নিজ থেকে জানাল,
“ এই মুহুর্তেই শুরু হবে। ”
স্নিগ্ধা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মাঝে মেয়েটি চোখ খুললো। স্টেজে মাইকের সামনে বুক ফুলিয়ে কথা বলা অর্পণের পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

তৃধা ভার্সিটি তে পা দেওয়ার পর থেকেই একটি মানুষকে খুঁজে চলছে হন্যে হয়ে। অথচ ওই বাজখাঁই গলায় প্রতিনিয়ত খ্যাকখ্যাক করা লোকটির দেখা নেই। দিনদুপুরে হাওয়া হয়ে গেলো নাকি? চিন্তায় তৃধার মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। মনে অস্থিরতায় তিক্ত অনুভূতি গ্রাস করলো। এ রোগ যে গত কয়েক মাস ধরেই হানা দিয়েছে তার দেহে। ভার্সিটিতে আসার পরে এক পলক না দেখলে বেহায়া মনকে শাসানো যায় না। উল্টোপাল্টা কাজ করে বসে। কষ্টে মাঝে মাঝে মরে যেতেও ইচ্ছে করে তার। এ কেমন রোগ বাসা বাঁধলো তার হৃদয়ে? নাম কি দেওয়া যায়? রিয়াদ স্যারের বিটকেল ভালোবাসা? সে যত এটিটিউটে দূরে সরানোর চেষ্টা করে তৃধা ততই আরোও কাছে চলে যাচ্ছে। আজকাল রাত-দিন সারাক্ষণ রিয়াদ স্যারকে নিয়ে কল্পনায় ডুবে থাকে। ভালোবেসে বিয়ে করে সংসার করছে তাদের গুনে গুনে সাতটা ছানাপোনা হয়েছে এটাও স্বপ্ন দেখা শেষ। রিয়াদ স্যার বড্ড জ্বালাচ্ছে তাকে। পৃথাকে বললে সে খিকখিক করে শয়/তানের মতো হাঁসে। ফিসফিস করে অশালীন কথা বলে,

“ এই মুহুর্তে আমি ইমাজিন করছি বেইব! একটি নির্জন শুনশান নীরব রুমে তুই উনার সঙ্গে বাসর ঘরে বসে আছিস। রুমে জুড়ে ফুলের সুবাসে তোর গা শিউরে উঠছে। অজানা অনুভূতি এবং লজ্জায় তুই ম/রা ম/রা অবস্থা। কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে স্যার চুপিচুপি তোর ঠোঁটের নিকট যাচ্ছে এরপর… এরপর জোরে টুপ করে..! ”
সিনেমাটিক অথচ রোমান্টিক কল্পনায় বিভোর হওয়া পৃথার কথা শেষ হওয়ার আগেই তৃধার শক্ত হাতের কিল ঘুষি পড়ে মেয়েটার দেহের উপর। লজ্জায় তৃধা কথা পর্যন্ত ভুলে যায়। রিয়াদ স্যার সামনে পড়লেই এখন পৃথার কথাগুলো মনে পড়ে লজ্জায় ইচ্ছে করে নর্দমায় ভেসে যেতে। মনে হয়, এই বুঝি স্যার তার মনের কথা ধরে ফেললো। চো/রের মতো এখন রক্তিম গালে চুপচাপ বসে থাকতে হয়। কি এক মহা ঝামেলা! কিন্তু সে দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। এসবের হিসেব গুনে গুনে সুদে আসলে ফেরত নিবে।

চারপাশে তন্নতন্ন করে খুঁজেও আজ রিয়াদ স্যারের মুখশ্রী দেখতে না পেয়ে তৃধার গভীর চোখ যেনো এবার ক্লান্ত হয়ে গেলো। মুখ ফুলিয়ে পৃথা কে ইশারা করলো কিছু। মেয়ে টা না সূচক মাথা নাড়াল। সেও দেখেনি। ওমনি মুখটা অন্ধকার হয়ে যায় তৃধার। এত শখ করে নিজেকে আজ যত্নে সাজিয়ে এসেছে। একমাত্র রিয়াদ স্যারের চোখে তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। লোকটা যেনো প্রথম নজরেই বেসামাল হয়ে পড়ে। তৃধার রূপে পাগ-ল হয়ে যায়। সারাক্ষণ বেয়ারা -র মতো দুষ্টু চোখে তাকায়। মাঝে মাঝে দুষ্টু ইঙ্গিত দেয়। অথচ কিছুই হলো না। কিন্তু কি হলো? সেই যে নেই। দুঃখে তৃধার সব আনন্দ মাটি হয়ে গেলো।

প্রধান অতিথি সহ প্রিন্সিপাল এবং এম.পি থেকে শুরু করে প্রতিটি স্যার – ম্যাম আগে নিজেদের বক্তব্য শেষ করলেন। কিছু সংখ্যক ছাত্র- ছাত্রদের পালা শুরু হলো। প্রতিবারের মতো অর্পণের কণ্ঠে মুখরিত ভার্সিটির চারপাশ। সেই সাথে কিছু নারীর হৃদয়ের তীক্ষ্ণ ব্যথা। ছেলেটা যে আজ মধু মেখে এসেছে তার মুখে। বোরিং অথবা বিরক্তমূলক কথা! যাই বলছে, মধুর মতো মিষ্টি শুনাচ্ছে। ইচ্ছে করছে, সারাক্ষণ এই অর্পণের দিকে তাকিয়ে রই।
যত সময় এগিয়ে আসছে ততই চৈতী ঘেমে নেয়ে একাকার। বারবার ইতি-উতি ভঙ্গিতে টিস্যু দিয়ে কপাল, থুতনী এবং গলা মুছে যাচ্ছে। হৃদয়ে চলছে ভয়ংকর ঝড়ের আভাস। মনে হচ্ছে, এই ঝড়েই সব লন্ডভন্ড হয়ে যাবে.! কিন্তু এই ঝড় কিসের? এত মানুষের ভীরে স্টেজে দাঁড়াবে তাই? নাকি অন্য কারণ? বুঝতে পারছে না ভীতু মেয়েটি।

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১২

মিনিট পাঁচেক পরেই হঠাৎ মাইকে অর্পণের বাজখাঁই গলায় ভেসে আসে। নিজের নাম শুনে চমকে উঠে চৈতী। ভয়ে থতমত খেয়ে বিস্মিত নয়নে ছেলেটার হতভম্ব মুখের দিকে তাকাল।
“ আমাদের মাঝে এখন উপস্থাপন করবে প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী তাফসীর চৈ..·চৈতী?”
বলেই অর্পণ হাতে থাকা লিস্টের কাগজে চোখ কুঁচকে গভীর নয়নে কিছু চিন্তা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ১৪