রেড রোজ ২ পর্ব ১৮
ফারহানা নিঝুম
ঠান্ডায় শরীর জমে যাচ্ছে রিতিমত , কাঁদা লেগে যাওয়ার জন্য নিকি ওকে গোসল করতে বলে। নিজের একটা ড্রেসও দিয়ে দিল।
উৎসা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে একে বারে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। চোখাচোখি হয় আফসানা পাটোয়ারীর সঙ্গে , তবে রুদ্র ততটা পাত্তা দিতে না বললো।
উৎসা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না ঐশ্বর্য এসেছে?
চুল মুছে টাওয়াল টা দড়িতে মেলে দিয়ে ড্রয়িং রুমে গেলাম। টেবিলে ইতিমধ্যেই খাবার দিয়ে দিয়েছে কাজের মাসী, নিকি কিচেনে আছে।উৎসাও সেদিকে যাবে ভাবছে,তার মধ্যে দৃষ্টি গেল সোফার দিকে। ঐশ্বর্য কানে হেডফোন লাগিয়ে আই প্যাডে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। জিসান রুদ্রর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে , ঐশ্বর্য মুখ তুলে তাকায় সামনে ,উৎসা আর ঐশ্বর্যের চোখাচোখি হয় তৎকালীন। উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়,হুউ কেমনে তাকিয়ে আছে দেখো? মনে হচ্ছে ভাজা মাছ টা উল্টিয়ে খেতে জানে না!
উৎসা বড় বড় পা ফেলে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল। জিসান ফিসফিসিয়ে বললো।
“ব্রো এটাই সুযোগ যা মিস বাংলাদেশীর সঙ্গে কথা বলে নে।”
ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো , হেডফোন আর আই প্যাড দুটোই জিসানের কাছে দিয়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল। জিসান সবে আই প্যাডে চোখ রেখেছিল, কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মূহূর্তের দৃশ্য দেখে চক্ষু চড়কগাছ তার। হাত থেকে ফিচলে আই প্যাড নিচে পড়ে গেল , এদিকে নিকি মাত্র এসেছিল।আই প্যাড পড়ে থাকতে দেখে তুলতে গিয়ে সেও সেই দৃশ্য দেখে ফেলে। ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার ,চোখ দুটো গেল জিসানের দিকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ছিহ্ বেশরম!”
জিসান আহা’ম্মক বনে গেল। ব্যস্ত কন্ঠে আওড়াল।
“অ্যাংরি বার্ড তুমি যা ভাবছো তা কিন্তু নয়….
জিসান উঠে নিকির দিকে এগিয়ে আসতে গেলে নিকি ছিটকে সরে গেল।
“ইয়াক ইয়াক, আপনি এমন! দূরে থাকুন ছিহ্।”
নিকি বড় বড় পা ফেলে ভেতরের উদ্দেশ্যে চলে গেল। এদিকে জিসান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে , ঐশ্বর্যের জন্য এই জিসান নামক শুদ্ধ পুরুষ অশুদ্ধ হয়ে গেল!
“রিক শেইম লেস ম্যান তোর জন্য এবার আমার অ্যাংরি বার্ড আরো অ্যাংরি হয়ে গেছে!
কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য কফি বানাচ্ছে।যদি ঠান্ডাটা একটু কম হয়!
ঐশ্বর্য এসেছে,জিসানও এসেছে তবে কেয়া আপু আসেনি। মেয়েটা বড্ড ভালো, সবসময় দেখা হলেই তার গাল টেনে দিতো। ইস্ কত ভালো লাগতো!
আনমনে ভাবতে ভাবতে কফি বানিয়ে নিল উৎসা , পিছন ঘুরতেই ধাক্কা খেল। আকস্মিক ধাক্কায় গরম কফি গিয়ে ছিটকে পড়ে ঐশ্বর্যের গায়ে। উৎসা আঁ’তকে উঠে।
“ও গড পু’ড়ে যাবে।”
উৎসা দ্রুত হাত চালায় ঐশ্বর্যের বুকে ,হাত স্পর্শ করতেই ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে। বিড়বিড় করে আওড়াল।
“রোজ ইউ আর ফিনিশ!”
উৎসা উদগ্রীব হয়ে দৌড়ে ফ্রিজ থেকে আইস কিউব নিয়ে ঐশ্বর্যের বুকে স্পর্শ করে।
ঐশ্বর্য আচমকা উৎসা কে কিচেন শেলফের সাথে চেপে ধরে।
“হোয়াটস গোয়িং অন সুইটহার্ট?”
উৎসা থমকালো , এতক্ষণে সে হু’শে ফিরেছে।গলা শুকিয়ে আসছে তার!
“ছাড়ুন অস’ভ্য রিক চৌধুরী লিভ মি!”
ঐশ্বর্য উৎসার দু হাত উপরে তুলে চেপে ধরে,পাশে থাকা আইস কিউব তুলে নিল।এবারে চোখে চোখ রাখে উৎসার ,উৎসা ভয়ে বলে উঠে।
“ক,,, কী করছেন এটা?”
ঐশ্বর্য মুখ এগিয়ে এনে উৎসার ওড়না কামড়ে ধরে ,মুখ দিয়ে টেনে কিছুটা সরিয়ে দেয়। উৎসা কেঁপে উঠে ,এবারে তার প্রচুর কান্না পাচ্ছে!
ঐশ্বর্য তৎক্ষণাৎ এক হাতের মুঠোয় উৎসার দু’টো হাত চেপে ধরে অন্য হাতে আইস কিউবের টুকরো গলায় স্পর্শ করায়। উৎসা এক প্রকার চিৎকার করে ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে,এই বুঝি বাড়ির সবাই ছুটে আসবে।
“সুইটহার্ট ফিলিংস কেমন?আমারো এতটা ফিলিংস আসে , সামথিং নিডস্ পি’চ পি’চ!”
উৎসা পারে না চিৎকার করে কেঁদে দেয় , প্রথম ঐশ্বর্য ঠিক তার গলার নিচে বরফ ছুঁয়ে রেখেছে। স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করছে বারংবার! হাত দুটো তার মুঠোবন্দী করা,উৎসা ছটপট করছে!
উৎসার চিৎকার শুনে নিকি এক প্রকার ছুটে এলো।
“উৎসা!”
ঐশ্বর্য উৎসা কে ছেড়ে দিল , নিজের মতো করে বেরিয়ে যেতে লাগে। এদিকে নিকি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের যাওয়ার পানে। এটা কী দেখলো সে? ঐশ্বর্য আর উৎসা এতটা কাছাকাছি?
নিকি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো উৎসার পানে , ততক্ষণে উৎসা নিজেকে সামলে দ্রুত পায়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেল।
এদিকে নিকি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,কী বলবে বুঝতে পারছে না জিসান ফিরে এলো ,ঘাড়ে হাত রাখতেই ঘাবড়ে গেল নিকি।
“এটা কী হলো বলুন তো জিসান?”
“টিট ফর টেট হলো।”
“হুঁ?”
“রোমান্টিক সিনে কাবাব মে হাড্ডি কেনো হতে গেল অ্যাংরি বার্ড?”
রোমান্টিক সিন? নিকির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব কিছু। কিন্তু সে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়,উৎসা কে চেপে ধরলেই সব কিছু জানা যাবে।
স্নিগ্ধ সকাল, রাস্তায় ভিড় জমেছে। মানুষেরা বেরিয়ে পড়েছে যে যার কাজে।কেউ বা কাজের খুঁজে,ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুল পথে রওনা দিয়েছে। অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে রুদ্র।এই তো ট্রাফিকে আটকে আছে , মিনিট দশেক পর ট্রাফিক ছেড়ে দিল। রুদ্র এগিয়ে চলেছে, আচমকা কেউ একজন সামনে চলে এলো।উঃ
রুদ্র ত্বরিতে গাড়ির ব্রেক কষে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটি মেয়ে মাটিতে বসে আছে।
“ও মাই গড আমার পা? উফ্!”
“আর ইউ ওকে মিস…
মেয়েটি তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি তুলে তাকায় রুদ্রর পানে।
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস মিস্টার? চোখে কী দেখতে পান না?”
রুদ্র মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল ক্ষণকাল। অসম্ভব সুন্দর সে ,পরণে ব্ল্যাক স্কার্ট আর সাদা রঙের শার্ট ইন করা।চোখ দুটো গোল গোল, ফর্সা চেহারা।
কেয়া রুদ্র কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়।তুড়ি মে’রে বলে।
“ও হ্যালো!”
“নাইস।”
রুদ্র আনমনে বলে উঠে “নাইস” শব্দটি। কেয়া কিছুই বুঝলো না, বাংলাদেশের সব মানুষ কি এমনি? কিছুক্ষণ আগেও দুটো লোক কে দেখতে পেলো, অদ্ভুত ভাবে কেয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল!
“হোয়াট?”
রুদ্র ঠোঁট টিপে হাসলো, মেয়েটাকে তার কাছে বাচ্চা মনে হচ্ছে। কিন্তু কিউট।
“ঠিক আছো?”
কেয়া রিতিমত তেতে গেল, এমনিতেই এখানের কিছুই সে চিনে না তার উপর এই লোকটা তাকে ব্যথা দিয়ে জিজ্ঞেস করছে ঠিক আছে কী না!”
“নো, অ্যাম নট ওয়েল। আপনাদের দেশের সব মানুষ কী ম্যাড?টেল মি দ্যা ট্রুথ!”
রুদ্র এবারে শব্দ করে হেসে উঠলো ,কেয়া কথা বলার সময় ভ্রু যোগল এদিক সেদিক বাকায়। বেশ লাগছে রুদ্রর কাছে। এবারে কেয়া চরম পর্যায়ে রেগে, মন চাচ্ছে রুদ্রর মাথায় ভারি দিতে!
“হোয়াই ইউ লাফিং ম্যান? আমাকে কী আপনার হাসির পাত্র মনে হচ্ছে?”
“না।”
“তাহলে হাসছেন কেন?”
“কারণ তুমি খুব কিউট।”
কেয়া তম্বা খেয়ে গেল, ছেলেটা বলে কী?তবে ছেলেটা কিন্তু হ্যান্ডসাম,নাইস এন্ড এট্রেক্টিভ বলতে গেলে। কিন্তু না কেয়া মোটেও ফ্লার্টিং করবে না!
“ব্যাড বয়।”
“গুড গার্ল।”
কেয়া হা হয়ে গেল , রুদ্র তার গাল টেনে দেয়। একজন অপরিচিত কী না তার গাল টানছে?
রুদ্র গিয়ে গাড়িতে বসে,দক্ষ হাতে ড্রাইভ করে এগিয়ে গেল। কেয়া ফুঁসে উঠলো, অভ’দ্র ছেলে একটা। হ্যান্ডসামও বটে, কিন্তু একটুও ম্যানার্স নেই। তাই তো স্যরি ট্যরি কিছু না বলেই কেমন চলে গেল!
হাত পা কেমন শিরশির করছে উৎসার। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনার কথা মনে পড়লেই ভেতর শুকিয়ে আসছে উৎসার। অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে জানেই মে রে ফেলতো আজ!
উৎসা গলায় স্পর্শ করলো,ঠিক এখানটায় ঐশ্বর্য বরফ ছুঁয়ে রেখেছিল। উফ্ ভাবতেই আবারও গা শিউরে উঠলো তার। উৎসা বিকেলের দিকেই বাড়িতে ফিরে এসেছে , সে ওখানে থাকলেই ঐশ্বর্য আবারো কিছু না কিছু করতো! আকাশ পাতাল ভাবছে ,নিকি তাকে পাক্কা কিছু না কিছু জিজ্ঞাস করবেই।কারণ নিকি তাকে ঐশ্বর্যের সঙ্গে দেখেছে।
“উৎসা!”
“জ্বি আপু।”
মিহি সবে রুমে যাচ্ছিল, কিন্তু উৎসার রুমের আলো জ্বলতে দেখে আবারো এদিকে এলো।
“কী রে এখনো জেগে আছিস যে?”
উৎসা কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে।
“এই তো ঘুমাব আপু।তুমি ঘুমাবে না?”
“হ্যা যাচ্ছি।তুই লেইট করিস না শুয়ে পড়।”
মিহি বেরিয়ে যেতেই উৎসা শুয়ে পড়ল।
এদিকে ঐশ্বর্য বিছানার এক পাশে শুয়ে আছে ,রাগে শরীরের প্রতিটি লোমকূপ জেগে উঠছে তার।রেড রোজ কী করে চলে গেল? ঐশ্বর্যের তাকে প্রয়োজন! সামথিং নিডস্। স্বভাব সুলভ পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে,সে কন্ট্রোললেস হচ্ছে।
“রেড রোজ ইউ নো ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর থেকে খারাপ আর কেউ হতে পারে না। কাল তোমাকে দেখে নেব।আই সয়ার আমি যা ফিল করছি প্রতিটা জিনিস তোমাকেও ফিল করাবো। আফটার অল ইউ আর মাই ওয়াইফ।”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো , তবে তা কিয়ৎক্ষণের জন্য। আচমকা সেই হাসি মিলিয়ে গেল ,সে উঠে বসলো। এগিয়ে গিয়ে ল্যাকেজ থেকে কিছু খুঁজতে লাগল। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পেয়ে বিজয়ী হাসি মুখে টেনে আবারও গিয়ে বিছানায় বসলো। সিরিঞ্জ বের করে পেশিবহুল হাতে পুশ করে নেয় , বলিষ্ঠ দেহখান মৃদু কেঁপে উঠলো তার। ঐশ্বর্য একপেশে হেসে হেডফোন কানে লাগিয়ে আই প্যাড নিয়ে বসলো।
রেড রোজ ২ পর্ব ১৭
এখন রাত দেড়টা ছুঁই ছুঁই, অথচ তার চোখে ঘুম নেই।ঘুম কী করে আসবে? তাগড়া পুরুষ তার মনে শান্তি নেই। ঐশ্বর্য রেগে গেল , দাঁতে দাঁত পিষে হিসহিসিয়ে বলে।
“রোজ তাকে মানসিক শান্তি দিচ্ছে না ।এই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী শান্তি না পেলে কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবে না।এই মানসিক অশান্তি কে উৎসার সঙ্গে শারীরিক ভাবে শান্তি করে নেবে।কজ সে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।”
অবশেষে ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করলো ঐশ্বর্য।