তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২১
আমেনা আক্তার
সিরাত ডাইনিং টেবিলে এসে বসে সকলের সাথে খাওয়া শুরু করে। রেহানা বেগম,সাইরা,সিরাত, মহিমা তিনজনই খাবার খেতে ব্যস্ত তখনি সিরাত খাবারের মাঝে বলে উঠলো।
কাল আমি কিছু অফিসিয়াল কাজের জন্য সূর্যধারি গ্রামে যাবো।
সিরাতের কথাটি বলার সাথে সাথে সকলের হাত থেমে গেল।সবাই সিরাতের দিকে অবাকতার দৃষ্টিতে তাকায়। রেহানা বেগম স্বাভাবিক ভাবেই বললেন।
কতদিনে জন্য যাবে,আর একা যাবি নাকি সাথে কেউ সাথে যাবে তোর।
রুদ্র যাবে আমার সাথে।দুই তিনদিন সময় লাগবে হয়তো।
সব প্রয়োজনীয় জিনিস গুছানো হয়ে গেছে?
হ্যাঁ,
সিয়ামের কথা শুনে রেহানা বেগম আর কিছু বলে না।উনি আবার নিজের খাবারে মনোযোগ প্রধান করেন।এতক্ষণ মহিমা ও সাইরা রেহানা বেগম ও সিরাতের কথা শুনছিলো। মহিমা মায়ের কথায় অবাক হয়ে বলল।
মা সিরাত একটি ছেলের সাথে একা এতদূরে যাবে। কিন্তু তুমি কিছুই বলছো না।ওর কি একা রুদ্রের সাথে কোথাও যাওয়া ঠিক হবে।
মহিমার কথায় রেহানা বেগম চোখমুখ শক্ত করে মহিমা কে বলল।
তুই কি সিরাতকে বিশ্বাস করিস না?
হ্যাঁ মা আমার সিরারতের উপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কিন্তু রুদ্র ওকে তো আমরা ঠিক ভাবে চিনিও না। তাহলে কিভাবে তার সাথে আমরা সিরাত কে একা যেতে দিবো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সিরাত যখন রুদ্রের সাথে যেতে রাজি হয়েছে যখন তখন নিশ্চয়ই ভালোভাবে ভেবে,চিন্তা করে রাজি হয়েছে।আমি ভালোভাবে জানি সিরাত কখনো না ভেবে কেনো সিদ্ধান্ত নেই না।তাই আমাদের ও বেশি কিছু ভাবনার প্রয়োজন নেই।
মায়ের কথায় দমে যায় মহিমা। কিন্তু তবুও তার মনে খচখচ করছে মনে হচ্ছে সিরাতের যাওয়া ঠিক হবে না।কেনো বিপদ ঘটতে পারে তার সাথে।সিরাত হয়তো মহিমার মুখ দেখে তার মনের কথা বুঝতে পারলো।তাই সিরাত সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আমাদের সাথে নূর ও যাবে।
কথাটি বলেই সিরাত খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়।সিরাতের কথা শুনে মহিমা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
সূর্য অস্তমিত হয়েছে বেশ অনেক সময় আগে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে এখন ১টা বেজে ৪৫ মিনিট। বাড়িতে সকলে নিজের ঘুমে বিভোর হয়ে আছে । কিন্তু এখনো জেগে আসে সাইরা। রাজের ফোনের অপেক্ষা করছে সে।সাইরার ও এখন ভালোলাগে না যদি রাজ একদিন ও তাকে ফোন না করে। প্রতি মূহুর্ত অস্থিরতায় কাটাতে হয় তাকে। যতই সাইরা চাইছে রাজ থেকে দূরে থাকতে ততোই রাজের সাথে জুড়ে যাচ্ছে সে।সাইরার ভাবনার মাঝেই সাইরার মোবাইলটি সশব্দে বেজে উঠলো।
সাইরা তাড়াতাড়ি করে ফোনটি সাইলেন্ট করে ফেললো। বাড়ির কেউ যদি এত রাতে তার ফোন বাজার শব্দ শুনতে পায় তাহলে নিশ্চয়ই তাকে সন্দেহ করবে।সাইরা তরিগড়ি করে ফোনটি রিসিভ করেই তার কোমল কন্ঠে বলল।
হ্যালো,
সাইরার কোমল কন্ঠ শুনে রাজ নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। রাজের কেনো সারা শব্দ না পেয়ে সাইরা বলল।
আপনি কথা বলছেন না কেনো?
রাজ সাইরার কথার প্রতি উত্তরে মুচকি হেসে বলল।
তোমার কন্ঠ শুনেইতো আমার অবস্থা বেহাল হয়ে গিয়েছে। তোমার কথার জবাব কিভাবে দিবো।
রাজের কথায় সাইরা কিছুটা লজ্জাবোধ করে।রাজ তা বুঝতে পেরে বলল।
লজ্জা পাচ্ছ তোমার লজ্জা মাখা মুখ আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। দেখাবে তোমার লজ্জা মাখা মুখ আমাকে?
এখন আমার মুখ আপনাকে কিভাবে দেখাবো? আপনি তো আমার থেকে অনেক দূরে।
এটা তুমি ঠিক বলেছ, কিন্তু এখন দেখতে না পারলে কি হয়েছে একদিন তোমাকে আমিই লজ্জা দিতে দিতে লাল করে ফেলবো।
সাইরা রাজের কথা শুনে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
কিভাবে,
রাজ সাইরার কথায় মুখ টিপে হেসে বলল।
তা সময় হলেই জানতে পারবে।
এভাবেই চলতে থাকে রাজ ও সাইরার কথা। কতক্ষন এই কথা চলবে তা তারা নিজেও জানে না।
আবার একটি নতুন সকালের দেখা মিলল। নতুন সকাল আমাদের জীবনকে নতুন করে দেখার ও নতুন করে উপলব্ধি করার ও নতুন করে কিছু সুখ দুঃখ নিয়ে আসে। কেউ জীবনের সাথে পরাজিত হয়ে হার মেনে নেয়। আবার কেউ এ নতুন সকালে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। প্রত্যেক জনের কাছে নতুন সকালের অনুমতি আলাদা আলাদা হয় ।কারও কাছে বেঁচে থাকার নতুন উদ্যেগ বা কারও কাছে যন্ত্রণাময় জীবনের দিকে পা বাড়াবার আরেকটি দিন।
রাজিব বসে আছে শামসুজ্জামানের বাড়িতে। সকাল হতেই সে বেড়িয়ে পরেছিল মহিমা নিজের বাড়িতে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাড়িতে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী ব্যতীত আর কেউ নেই। রাজিব হাসি মুখে কথা বলছে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে রাজিব ভেবেছে হয়তো সকলে মিলে কোথাও গিয়েছে। কিন্তু পরের মুহূর্তে চকটু রাগ ও লাগলো। মহিমা এই অবস্থায় কোথায় গিয়েছে তার বাচ্চার যদি।চুল পরিমান ও ক্ষতি হয় তাহলে সে মহিমা কে এমন শিক্ষা দিবে। রাজিব যখনি মহিমার কথা জিজ্ঞেস করবে তখনি বাড়িতে প্রবেশ করলো শামসুজ্জামান।
শামসুজ্জামান কে দেখেই রাজিব হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো।
আসসালামুয়ালাইকুম, আব্বা কেমন আছেন?
রাজিবকে দেখে যেনো শামসুজ্জামানের ভিতরে যেনো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজিবকে দেখে শামসুজ্জামানের মাথায় আগুন ধরে গেল। কারণ শামসুজ্জামানের মনে হয় রেহানা বেগম তার মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ছাড়ার বেশিরভাগ হাতই রাজিবের। রাজিব যদি তার দেখা দেখি দ্বিতীয় বিয়ে না করতো তাহলে হয়তো রেহানা বেগম কিছুতেই তার মেয়েকে রেখে চলে যেতে পারতেন না। মানুষ নিজের দোষ ঢাকতে অন্য জনের উপর দোষ চাপাতে বেশি পছন্দ করে তা এখন শামসুজ্জামানের ভিতর পরিলক্ষিত। শামসুজ্জামান রাগে গজগজ করতে করতে রাজিবের সামনে গিয়ে বলল।
তুই আমার বাড়িতে কি করছিস? কেনো এসেছিস তুই এখানে?
রাজিব শামসুজ্জামানের ব্যবহারে কিছুটা ধাক্কা খায়। কারণ এর আগে রাজিব যখনি এই বাড়িতে এসেছে শামসুজ্জামান তার সাথে বাবা ছাড়া কথা বলে নি।আর জামাই আদরের কথা তো বাদই দিলাম। শামসুজ্জামানের ব্যবহারে রাজিবের ও মনে রাগের সঞ্চার হয়। কিন্তু এখন রাগ দেখালে তো আর হবে না ভুল যখন করেছে তখন এমন একটু আকটু কথা তার শুনা লাগবে।তাই রাজিব শান্ত ভাবেই বলল।
আব্বা আমি মহিমাকে নিতে এসেছি।ওকে একটু ডেকে দিন আমি ওর কাছে মাফ চাইতে চাই।
শামসুজ্জামান রাজিবের উদ্দেশ্যে বলল।
মহিমা আর তোমার সাথে ওই বাড়িতে ফিরে যাবে না কখনো।
আব্বা আপনি এই কথা বলছেন,আপনি তো খুব ভালো ভাবে জানেন পুরুষ মানুষের মন একটু আকটু অন্য নারীর উপর যেতেই পারে। আপনার উচিত ছিল মহিমা কে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া।
শামসুজ্জামান কে রাজিব কথাটি যে খোঁচা মেরে বলেছে তা শামসুজ্জামান খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। শামসুজ্জামান ও কম যায়না তিনি ও রাজিবের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি দ্বিতীয় বিয়ে করে ভালোভাবে বুঝতে পারছি যে কত বড় ভুল করেছি। নিশ্চয়ই তুমিও এটা উপলব্ধি করেই এখানে মহিমা কে নিতে এসেছ। আচ্ছা তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী আবার তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়নি তো।তাই এখন মহিমা কে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছো। নাহলে তো এই কদিন মহিমার খোঁজ খবর নেওয়ার ও প্রয়োজন বোধ করোনি।
রাজিব এতক্ষণ নিজেকে সংযত করে রেখেছিল কিন্তু এখন আর কিছুতেই যেনো নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারলো না।
আপনাকে ভালোই ভালোই জিজ্ঞেস করছি মহিমা কোথায় কিন্তু আপনি কথা পেচাচ্ছেন। আপনাদের উপর দয়া দেখিয়ে আমি মহিমা কে নিয়ে যেতে এসেছে। আপনাদের তো আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু আপনি তা না করে আমার অপমান করছেন।আমি যদি মহিমা কে না নিয়ে যায় তাহলে কি সারাজীবন ওকে ও ওর সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে। সমাজের মানুষ যখন আপনার মেয়ের দিকে আঙ্গুল তুলবে তখন কি করবেন আপনি।
রাজিবের কথায় শামসুজ্জামান হেসে বলল।
সমাজের লোক তো তখন আঙ্গুল তুলবে যখন মহিমা এখানে থাকবে?
শামসুজ্জামানের কথা শুনে রাজিব ব্লু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
থাকবে, মহিমা এখানে নেই?
না নেই তোমাদের বাড়ি থেকে ও যেদিন এখানে এসেছে। তার পরের দিনই রেহানা মহিমা,সিরাত,সাইরা কে সাথে নিয়ে চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে এটি আমি জানি না।তাই আমাকে আর কেনো প্রশ্ন করে লাভ নেই।
কথাটি বলেই নিজের ঘরে চলে যায় শামসুজ্জামান। রাজিব দাঁড়িয়ে আছে একই স্থানে তার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। মহিমা এই অবস্থায় অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। তবুও রাজিবের ভিতরে কেনো আফসোস দেখা যাচ্ছে না।তার ভিতরের ক্রোধ যেনো আরও বেড়ে গেল।সেও দেখতে চায় মহিমা তার সন্তান কে নিয়ে কতদিন দূরে থাকতে পারে।ওর কাছে যদি ফিরে না আসে তাহলে ওর সন্তান কে কার পরিচয় দিয়ে বড় করবে বাবার পরিচয় ছাড়া কি সন্তান বড় করা সম্ভব। কথাটি ভেবেই রাজিব শয়তানি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। কিন্তু রাজিব যানেনা তার জন্য বাড়িতে কি অপেক্ষা করছে।এখান থেকেই হয়তো শুরু হবে রাজিবের কর্মের শাস্তি।
সিরাত বাড়ির সকলের থেকে বিদায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রের গাড়ির অপেক্ষায়। রুদ্র ওকে নিতে আসবে কারণ দুজনের তো একই সাথে যেতে হবে। অবশ্য নূর ও থাকবে রুদ্রের সাথে। সত্যি বলতে সিরাতের ও কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হচ্ছিলো রুদ্রের সাথে একা যেতে কিন্তু যখনি ও শুনেছে নূর তাদের সাথে যাবে সকল অস্বস্তি দূর হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই রুদ্রের গাড়ি এসে থামে সিরাতের সামনে। রুদ্র ড্রাইভারের সাথে বসে আছে ও নূর বসে আছে ব্যাক সিটে।নূর রুদ্রকে আগেই বলে দিয়েছে সে সিরাতের সাথে বসবে রুদ্র ও নূরের কথা বিনা বাক্যে মেনে নেই।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২০
সিরাত নূরের সাথে কুশল বিনিময় করে নূরের সাথে বসে পড়ে। গাড়ি চলতে থাকে নিজ গন্তব্যে কিন্তু তারা কেউ যানে এই গন্তব্য তাদের জীবনের অনেক কিছুই বদলে দিবে। তাদের তিনজনের জীবনের আসতে চলেছে নতুন এক মোড়।এই মোড়ের কারণে হয়তো তাদের জীবনে বয়ে যাবে নতুন এক ঝড়।