পারমিতা পর্ব ২৫
Nabila Ahmed
আজ অফিসে যায় নি অরিয়ন। মিতা যখন ঘুম থেকে উঠলো অরিয়ন তখন মিতার দিকে পাশ করে ঘুমিয়ে ছিলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে মিতা। এখন প্রায় পুরোপুরি সুস্থ মিতা। সবার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছে। অরিয়নের নাস্তা রুমে পাঠানো হয়েছে অরিয়নের নির্দেশে।
সকাল ১১ টা করে মিতার টিউশন টিচার চলে এসেছে মিতাকে পড়াতে। ড্রয়িং রুমে পড়তে বসেছে মিতা। মিতার রুম পুড়ে যাওয়ার কারণে এখন এখানেই পড়তে হচ্ছে মিতাকে। টিচার আসার একটু পরেই নাস্তা দিয়ে যায় শায়লা।
অরিয়ন উপরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে মিতা আর টিচারকে দেখছে। এই প্রথম মিতার টিচারকে দেখলো অরিয়ন। ছেলেটি প্রায় অরিয়নের সম-বয়সি হবে,দেখতে শুনতেও খুব সুর্দশন। শায়লা থেকে শুনেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করেছে। মিতা মনোযোগ দিয়ে নিজের পড়া পড়ছে। সিড়ি বেয়ে আনিকা চৌধুরীকে উপরে উঠতে দেখেই নিজের রুমের দিকে হাটা শুরু করে অরিয়ন। অরিয়নকে চলে যেতে দেখে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল আনিকা চৌধুরী। একবার মিতার দিকে ও একবার অরিয়নের দিকে তাকায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রায় ১২:৩০ টা করে মিতার পড়া শেষ হয়। পড়া শেষ হতেই তাড়াতাড়ি করে রুমের দিকে হাটা শুরু করে মিতা, বিকালে সব বন্ধুরা আসবে তাই গোসল,খাওয়া-দাওয়ার পর্ব আগেই শেষ করতে হবে। রুমের দরজা খুলতেই কাশতে শুরু করে মিতা। পুরো ঘর ধোঁয়া দিয়ে ভরে গেছে। ঘোলাটে দেখাচ্ছে রুমের সব কিছু। রুমের বেলকনির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। পেছন থেকে অরিয়নের চেহারা দেখতে না পারলেও মিতা ঠিকি বুঝতে পারছে অরিয়ন স্মো*কিং করছে।
“কতগুলা সিগারেট খেয়েছো? এতো ধোঁয়া?” মনে মনে বলে মিতা।
মিতার কাশি শুনতেই মিতার দিকে ফিরে তাকায় অরিয়ন। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। ওড়না দিকে নাক ঢেকে রেখেছে। চোখের পলক ফালাচ্ছে বার বার। অরিয়ন হেটে গিয়ে রুমের ফ্যান অন করে দেয়, কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমের ধোঁয়ার পরিমাণ কমে আসে। অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে থেকেই খাটের উপরে গিয়ে বসে। হাতে থাকা সি*গারেট ঠোঁটে নিয়ে টানতে থাকে। মিতা কোনো কথা না বলে আলমারি থেকে নিজের কাপড় বের করে গোসল করতে চলে যায়।
গোসল করে মিতা যখন ওয়াশরুম থেকে বের হলো, অরিয়ন খাটের উপর একই ভাবে বসে আছে। হাতে তখন ও সি*গারেট। একটু আগেই নিয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অরিয়ন সি*গারেট খেতো তা সন্দেহ করেছিলো মিতা কিন্তু এতো বেশি পরিমাণে খায় তা ভাবতে পারেনি মিতা।
ড্রেসিং টেবিল থেকে লোশন নিয়ে হাতে মাখতে থাকে মিতা।
–পরী।
হঠাৎ করে ডাক দেয় অরিয়ন।
অরিয়নের দিকে ফিরে তাকায় মিতা। সি*গারেট হাতে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন।
–এদিকে আয়।
সি*গারেট দু ঠোঁটের মাঝখানে নিয়ে বলে অরিয়ন।
মিতা বড় করে শ্বাস নিয়ে নেয়। সিগা*রেটের গন্ধে মাথা ধরেছে মিতার। অরিয়নের কাছাকাছি গেলে এই গন্ধ যে আরও মাথা ব্যাথা বাড়িয়ে দিবে তা ভালোই জানে মিতা। কিছুটা গম বন্ধ করেই অরিয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
–আরও কাছে আয়।
বলে অরিয়ন।
–এখান থেকেই বলো, গন্ধে অস্থির লাগছে আমার।
জবাব দেয় মিতা।
মিতার কথা শোনা মাত্রই সি*গারেট ছুড়ে ফেলে দেয় অরিয়ন। কোথায় গিয়ে পড়লো সেদিকে তাকিয়ে রইল মিতা,বেলকনিতে গিয়ে পড়েছে।
–এখন তো আসতে সমস্যা নেই!
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
ধীরে ধীরে হেটে অরিয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মিতা। অরিয়ন নিজের দু হাত দিয়ে মিতার দু হাতের কব্জি ধরে নিজের একদম কাছাকাছি নিয়ে আসে।
–ডিসিশন কি নিবি কিছু ভেবেছিস?
মিতার দু হাত নিজের ঠোঁটের কাছে এনে তালুকে চুমু দিয়ে বলে অরিয়ন।
মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা। মিতার মুখ দিয়ে যেন কথা আসছে না। প্রতিদিন অরিয়নের একেক রূপ আসছে মিতার সামনে। অবাক দৃষ্টিতে শুধু অরিয়নের দিকে তাকিয়েই রইল মিতা।
–ভালো করে দেখ আমাকে…
মিতার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেই একটু থামে অরিয়ন।
–দেখ কি অবস্থা আমার। আই নিড পিস ,আই নিড ইউর হেল্প লাভ। অনলি ইউ ক্যান গিভ মি পিস। হেল্প মি লাভ।
দাঁড়িয়ে থাকা মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে অরিয়ন।
নিজের দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে মিতাকে।
বিপদে পড়ে থাকা মানুষ যেমন অন্য কারো কাছে নিরুপায় হয়ে অনুরোধ করে, হাত বাড়িয়ে দেয়,অরিয়নও যেন ঠিক তেমন ভাবেই মিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সাহায্য চাইছে। যেই অসহ্য যন্ত্রণা অরিয়নের বুকের মধ্যে বাসা বেধেছে তা ভাঙ্গতে মিতাকে অনুরোধ করছে অরিয়ন।
–আমি যদি…আমি যদি হ্যাঁ বলি তাহলে..
কথাটা বলে একটু অপেক্ষা করে মিতা।
মিতার কথা শুনতেই মিতাকে ছেড়ে ভালো করে বসে অরিয়ন। তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে।
–তাহলে কি ২ টা জিনিস প্রমিস করতে পারবে তুমি?
প্রশ্ন করে মিতা।
–কি?
জানতে আগ্রহ প্রকাশ করে অরিয়ন।
–১. আমাদের এই সম্পর্ককে কখনো অসম্মান করবে না!
–কখনো করবো না, আই প্রমিস।
মিতার কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই বলে অরিয়ন।
–২.যদি কোনোদিন এমন হয় যে, আমার মনে হয়েছে আমি এই সম্পর্কে থাকতে চাই না তাহলে তুমি আমাকে যেতে দিবে।
নিজের কথা শেষ করে মিতা।
–ওকে তাই হবে। আমি শুধু চাই তুই আমাকে একটা সুযোগ দে। এরকম সিচুয়েশন কখনো আসার সুযোগ দিবো না আমি।
অনায়াসে বলে ফেলে অরিয়ন।
মিতা অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। কতো সহজেই রাজি হয়ে গেছে তা দেখছে মিতা। একটু শান্তির জন্য কতটা মরিয়া হয়ে গেছে অরিয়ন। শুধু ডেস্পারেশন ছাড়া আর কিছুই দেখছে না মিতা। “ডেস্পারেশন থেকেও তো ভালোবাসা হতে পারে তাই না? সবাই তো একটা সুযোগ ডিসার্ভ করে” মনে মনে ভাবে মিতা।
–ওকে। আমার উত্তর হ্যাঁ।
জবাব দেয় মিতা।
–থ্যাংক ইউ লাভ, থ্যাংক ইউ সো মাচ।
মিতাকে আবারও জড়িয়ে ধরে বলে অরিয়ন। মুখে হাসি ফুটে উঠেছে অরিয়নের।
কতদিন পর অরিয়নের মুখে আবারও এরকম রিয়েল হাসিটা দেখছে। মিতা নিজেও হাসে, অরিয়নের হাসি দেখে। ধীরে ধীরে নিজের হাত রাখে অরিয়নের পিঠে। নিজেও জড়িয়ে ধরে অরিয়নকে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে অরিয়ন অফিসে গিয়েছে একটা ইম্পোর্টান্ট মিটিং এটেন্ড করতে। মিতাও খাওয়া শেষ করে নিজের রুম গুছিয়ে নিয়েছে,একটু পরেই ফ্রেন্ডরা সবাই চলে আসবে।
–কিরে,কোথায় তোরা? আর কতক্ষণ লাগবে?
কাউচে বসে মোবাইলে কল দিয়ে বলে মিতা।
–আচ্ছা আমি আসছি। ওয়েট কর।
কথাটা বলেই রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে যায় মিতা।
মিতা ড্রয়িং রুমে আসার একটু পরেই সাদা রঙের গাড়ি এসে দাঁড়ায় দরজার সামনে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে সুমাইয়া ও ফয়সাল। গাড়ি থেকে ওদের বের হতে দেখেই দৌড়ে গিয়ে সুমাইকে জড়িয়ে ধরে মিতা।
–কেমন আছিস? কতদিন হলো দেখিনা তোদের।
সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরেই বলে মিতা।
–তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে না তুই অসুস্থ।
ভ্রু কুচকে বলে সুমাইয়া।
–ধুর, কিছুই হয়নি আমার। একদম সুস্থ আমি।
হেসে বলে মিতা।
–এখানে আমিও আছি।
পেছন থেকে বলে ফয়সাল।
–হেহেহেহে, তুই ও এসেছিস? আমি তো খেয়ালই করিনি।
ফিক করে হেসে দিয়ে বলে মিতা।
–হ্যাঁ,হ্যাঁ। এখন তো খেয়াল করবি ই না। নিজের দেবদাস পেয়েছিস তো তাই।
রাগ করার অভিনয় করে বলে ফয়সাল।
–তুই ওকে সব বলে দিয়েছিস।
ভ্রু কুচকে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–হ্যাঁ।
দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে সুমাইয়া।
–তোকে তো…
–এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবি?
মিতা সুমাইকে মারতে তেড়ে যেতেই বলে উঠে সুমাইয়া।
–তোকে আমি পরে দেখে নিবো। এখন ভিতরে চল।
সুমাইয়া আর ফয়সালের উদ্দেশ্যে বলে মিতা।
–ফাহমিদা আসেনি কেনো? আমার এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট হলো শুনেও আসলো না।
সোফায় বসে থাকা মিতা বলে।
–ওর আম্মু আজ বাসায় নেই, তাই আসেনি। কাল কলেজে দেখা করবে বলেছে।
চা খেতে খেতে বলে সুমাইয়া।
–আর তুই সাল্লু ভাই, এতো চুপ করে আছিস কেনো?
ফয়সাল কোনো কথা বলছে না দেখে প্রশ্ন করে মিতা।
–নাস্তাগুলো অনেক মজা হয়েছে, আগে খেয়ে নেই এরপর কথা বলবো।
জবাব দেয় ফয়সাল।
–খা, সব খা। এই পৃথিবীটাও খেয়ে ফেল।
ফয়সালের মাথায় একটা থাপ্পড় মেরে বলে সুমাইয়া।
সুমাইয়া থাপ্পড় দিতেই ফয়সাল ও সুমাইয়ার চুল ধরে টান দেয়।
–তোরা আবারও মারামারি শুরু করেছিস? এবার আমার হাতে খা।
কথাটা বলে মিতাও ঝাপিয়ে পড়ে দুজনের উপর।
ঠাস ঠাস করে দু জনের পিঠে থাপ্পড় মারে মিতা।
–উফফফফ…ভাইরে ভাই, তুই চিকন হলে কি হবে। তোর থাপ্পড়ে অনেক ব্যাথা পাওয়া যায়। আর মারবি না বলে দিলাম।
হাত দিয়ে পিঠ ডলতে ডলতে বলে ফয়সাল।
–আমি ও সাল্লু ভাইয়ের সাথে একমত।
বলে সুমাইয়া।
ওদের কথা শুনে মিতা শুধু হাসতে থাকে।
বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে গিয়েছে। সবাই মিলে ভিডিও গেমস খেলেছে, বাগানে একসাথে ছবি তুলেছে। ফাহমিদার সাথে ভিডিও কলে কথা বলে ওকে জেলাস ফিল করিয়েছে। রাতের খাবার খেয়ে সুমাইয়া আর ফয়সালকে বিদায় জানাতে এগিয়ে দিতে এসেছে মিতা।
–কাল কলেজে দেখা হবে।
গাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে সুমাইয়া।
–বাড়িতে আবার আসিস, আসলে অনেক মজা হয়।
বলে মিতা।
–আসবো। যাই।
কথাটা বলেই গাড়িতে ঢুকে সুমাইয়া। ফয়সাল দরজা খুলে দাঁড়ায়।
–তোর ভুবন চৌধুরীকে দেখা হলো না।
বলে ফয়সাল।
–ভুবন চৌধুরী? সে আবার কে?
বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে মিতা।
–পারুর স্বামী।
কথাটা বলেই হাসতে শুরু করে ফয়সাল।
এতোক্ষণে মিতার মাথায় সব ঢুকেছে। দেবদাস উপন্যাসে পারুর স্বামীর নাম ভুবন চৌধুরী ছিলো তাই ব্যঙ্গ করে মিতাকেও সেটা বলেছে ফয়সাল।
–তোকে তো..
কথাটা বলেই আবারও ফয়সালের পিঠে থাপ্পড় মারে মিতা।
–উফফফ…শেষ, শেষ আমি।
কুজো হয়ে বলে ফয়সাল।
অরিয়নের গাড়ি এসে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। প্রবেশ করতেই মিতাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের অজান্তেই হাসি ফুঁটে অরিয়নের মুখে। ভালো করে তাকাতেই লক্ষ্য করে মিতা কোনো ছেলের সাথে কথা বলছে। প্রথমে কিছু একটা শুনে মিতা বুঝতে পারেনি, কিন্তু ছেলেটা কিছু বলার পরেই হেসে গায়ে হাত তুলে মিতা। ছেলেটাও হাসতে হাসতে মিতার চুল ধরে টান দিয়েই গাড়িতে উঠে যায়। ছেলেটা মিতার বয়সি হবে। মিতার মতো প্রাণবন্ত লাগছে। অরিয়নের গাড়ি দরজার সামনে দাঁড়াতে দাঁড়াতে অন্য গাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে।
সুমাইয়ার গাড়ি ছেড়ে দিতেই মিতা চলে যায় মায়া চৌধুরীর রুমে। মার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলবে ঠিক করেছে। অন্যদিকে, অরিয়ন গাড়ি থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে গিয়েছে। হাতে আজ সাদা রজনীগন্ধা ফুলের তোড়া। মিতার যে রজনীগন্ধা ফুল খুব পছন্দ তা অরিয়ন জানে। তাই আসার পথে ফুল নিয়ে এসেছে অরিয়ন। হাতে ফুল নিয়ে রুমে প্রবেশ করে অরিয়ন।
কিছুক্ষণ আগে গাড়িতেও হাসিখুশি ছিলো অরিয়ন। কিন্তু মিতাকে ঐ ছেলের সাথে দেখার পর থেকেই কেমন জানি লাগছে। “দু জনেই কম বয়সি, একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করবে না তো?” কিসব খেয়াল আসছে অরিয়নের মাথায় অরিয়ন নিজেও বুঝতে পারছে না। ফুলের তোড়া টেবিলের উপর রাখতে গিয়েই লক্ষ্য করে মিতার মোবাইলে আলো জ্বলছে। নোটিফিকেশন এসেছে। ফয়সাল থেকে মেসেজ এসেছে। কিছু বুঝার আগেই মোবাইল হাতে তুলে নেয় অরিয়ন। অন করতেই বুঝতে পারে মোবাইল লক করা।
“লক করা কেনো? লুকানোর মতো কিছু কি আছে?” মনে মনে ভাবে অরিয়ন।
মায়া চৌধুরীর সাথে কথা শেষ করে রুমে আসতেই যেন মন ভালো হয়ে গেলো মিতার। পুরো রুম রজনীগন্ধার সুঘ্রাণে ভরে গেছে। টেবিলের উপর ফুল দেখেই দৌড়ে যায় মিতা।
–রজনীগন্ধা।
ঘ্রাণ নিতে নিতে বলে মিতা।
–তোর খুব পছন্দ তাই নিয়ে এসেছি।
পেছন থেকে অরিয়নের কণ্ঠ ভেসে আসতেই একটু চমকে যায় মিতা। পরক্ষণেই স্বাভাবিক হয়ে অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা।
–ধন্যবাদ।
মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–ছেলেটা কে?
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–কোন ছেলে?
অরিয়নের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মিতা।
–গাড়ির ওখানে যার গায়ে হাত তুললি।
বলে অরিয়ন।
–ওহ, ফয়সাল। আমার বন্ধু। আমাকে দেখতে এসেছিলো।
জবাব দেয় মিতা।
–একাই এসেছিলো?
মিতার হাত ধরে খাটে নিয়ে বসিয়ে বলে অরিয়ন।
–না। আমার বান্ধুবী সুমাইয়াও এসেছিলো।
–তুই কি ঐ ছেলেকে পছন্দ করিস?
মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে হুট করে বলে উঠে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয় মিতা। অরিয়নের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। কি আজেবাজে বলছে অরিয়ন? কিছুদিন আগেও মিতা অরিয়নকে ভালোবাসে তা স্বীকার করেছে, নিজেদের বিয়ের সম্পর্ককে একটা সুযোগ দিবে বলেছে তাহলে অন্য কাউকে পছন্দ করার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? তা যেন মাথায় ঢুকছে না মিতার।
–কি সব বলছো তুমি?
অবাক হয়ে বলে মিতা।
–হ্যাঁ কি না?
আবারও বলে অরিয়ন।
–না।
সাফ জানিয়ে দেয় মিতা।
–আমার পছন্দ না ওর সাথে তোর এতো মেলামেশা করা। কোনো ছেলের সাথেই পছন্দ না।
–কিন্তু ও আমার বন্ধু, আমার ক্লাসমেট..
–বন্ধু,ক্লাসমেট থেকেই ভালোবাসার সম্পর্ক শুরু হতে পারে। এভাবেই সব হয়।
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।
একটু আগেও ভালো থাকা অরিয়ন ক্ষণিকের মধ্যে রেগে গিয়েছে। এই রাগের কারণ বুঝতেও মিতার সময় লাগেনি। “ভয়” অরিয়ন ভয় পাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে আফরিনের মতো মিতাও যদি ক্লাসমেট কারো প্রেমে পড়ে যায়। মিতাও যদি আফরিনের মতো অরিয়নকে একা করে রেখে যায়, সেই ভয়।
–অরিয়ন।
ডাক দেয় মিতা।
অরিয়নের নাম ধরে ডাকতেই মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। মিতা নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের হাত স্পর্শ করে। স্পর্শ করতেই অরিয়ন কিছুটা রিলাক্স হয়।
–আমি ওকে পছন্দ করিনা। ও শুধুই আমার বন্ধু।
আলতো এক হাসি দিয়ে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
অরিয়ন অপলক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
–আমি তোমাকে অন্য কারো জন্য কোনোদিনও ছেড়ে যাবোনা।
মিতার কথাটা শুনতেই মিতার হাত শক্ত করে ধরে অরিয়ন। মিতার চোখে তাকিয়ে কোনো মিথ্যে বা ছলনা খুজতে থাকে কিন্তু কিছুই পায় না।
–আমি আফরিন আপুর মতো কিছুই করবো ন..
–সে দ্যাট ইউ লাভ মি।
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই হুট করে মিতার একদম কাছাকাছি এসে বলে অরিয়ন।
এতোটাই কাছে এসেছে যে অরিয়নের নিশ্বাস নেওয়া অনুভব করতে পারছে মিতা।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি।
অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
–এগেইন।
বলে অরিয়ন।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি রিয়ন।
মিতার মুখে নিজের জন্য আলাদা নাম শুনতেই নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনি অরিয়ন।
অরিয়নের ঠোঁট গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে মিতার ঠোঁটে। অরিয়নের ঠোঁট নড়তে শুরু করলে মিতাও তার সাথে তাল মিলায়। নিজের দু হাত দিয়ে অরিয়নের গলা জড়িয়ে ধরে। মিতাকে চুমু খেতে খেতেই মিতার গলার ওড়না ধরে অরিয়ন।
পারমিতা পর্ব ২৪
–ক্যান আই?
মিতার দিকে তাকিয়ে অনুমতি চায় অরিয়ন।
মিতার চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। চোখের ইশারায় নিজের অনুমতি দিতেই ওড়না সরিয়ে নেয় অরিয়ন।
–ইউ আর মাইন,ওয়াইফ। অনলি মাইন।
কথাটা বলেই আবারও মিতার ঠোঁটে চুমু খায় অরিয়ন।